শায়খ আসিম বিন তাহির
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
গণতন্ত্রঃ
একটি জীবন ব্যবস্থা (দ্বীন)!
আবূ মুহাম্মদ আসিম আল-মাকদিসী
[আল্লাহ তাঁকে মুক্তির ব্যবস্থা করে দিন]
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلٰمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِى الْءَاخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِينَ
الديمقراطية دين
لأبي محمد المقدسي
গণতন্ত্রঃ একটি জীবন ব্যবস্থা (দ্বীন)!
আবূ মুহাম্মাদ আসিম আল– মাকদিসী
“আর যে কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন তালাশ করে, তা কখনও গ্রহণ করা হবে না এবং সে হবে পরলোকে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।”
সূচিপত্র
স্বর্গীয় সৃষ্টি, নাযিলকৃত কিতাবসমূহ, ইব্রাহীম (আ.) এর দাওয়াহ্ এবং সবচেয়ে.. 7
মজবুত হাতল-এগুলোর সূত্রপাত এবং উদ্দেশ্য.. 7
গণতন্ত্রের প্রচারক ও সমর্থকদের ভ্রান্ত ও প্রতারণামূলক কতিপয় যুক্তির খন্ডন. 16
সংসদীয় বিষয়ঃ বিবেচনা করুন, চিন্তা করুন ওহে জ্ঞানবান সমঝদার মানুষেরা.. 34
অনুবাদকের কথা
“পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ তা‘আলার নামে”
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেছেন-
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلٰمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِى الْءَاخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِينَ
“আর যে কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন তালাশ করে, তা কখনও গ্রহণ করা হবে না এবং সে হবে পরলোকে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা আলি ‘ইমরান ৩: ৮৫)
সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি চিরঞ্জীব, সৃষ্টিকর্তা, একক এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কেউ নাই। তিনিই সেই সত্ত্বা, যিনি তাঁর নিজের সাথে অন্য কাউকে অংশীদার করাকে কখনও মাফ করেন না। এবং তিনি কখনও ঐ ব্যক্তির আমল গ্রহণ করেন না যে আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্য কারও ইবাদত করে। তিনিই একক, তিনি একত্ববাদকে তাঁর বিশ্বাসী বান্দাদের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য বানিয়ে দিয়েছেন। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের নেতা এবং আদর্শ হচ্ছেন মুহাম্মদ ﷺ, সর্বশেষ নবী ও রাসূল, আল্লাহ তাঁর উপর, তাঁর পরিবারের উপর, তাঁর সাহাবাদের উপর এবং কেয়ামত পযর্ন্ত যারা তাঁকে অনুসরণ করবে তাঁদের সবার উপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন। (আমীন)
অতঃপর, আমি যা বলতে চাই, আমাদের দ্বীনি ভাই, আবূ মুহাম্মদ আল-মাকদিসীর ‘গণতন্ত্রঃ একটি জীবন ব্যবস্থা (দ্বীন)’ নামক আরবীতে লিখিত বইটি পড়ে আরবী ভাষা বোঝে না এমন মুসলিমদের এই মহাবিপর্যয় সর্ম্পকে জানানোর প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করলাম। এই মহাবিপর্যয় মানুষের চিন্তাধারা, তাওহীদের আদর্শ এবং সর্বোপরী ঈমানদারদের দ্বীনি চেতনাকে কুলষিত করেছে। অনেক অবিশ্বাসী-কাফের মিথ্যা দাবীর মাধ্যমে প্রমাণ করতে চায় যে গণতন্ত্র কোন জীবন ব্যবস্থা (দ্বীন) নয়। আমি খুবই আনন্দিত যে, আবূ মুহাম্মদ আল-মাক্দিসী এই বাতিল সংবিধান এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাসীদের মিথ্যা দাবীকে পরিষ্কারভাবে খন্ডন করে দিয়েছেন। তিনি তার বক্তব্যকে প্রমাণের জন্য কুর’আন এবং সুন্নাহ্র সঠিক দলিলের পাশাপাশি বুদ্বিবৃত্তিক যৌক্তিক প্রমাণপত্র উপস্থাপন করেছেন। এভাবে তিনি এমন একটি প্রবন্ধ লিখেছেন যা অসঙ্গতি ও অসার বক্তব্য বর্জিত এবং সহজে বোধগম্য। আমি অনেকদিন ধরেই কাফেরদের নব উদ্ভাবিত গণতন্ত্রের যুক্তি খন্ডন এবং শিরকী সংসদীয় পরিষদের বিরূদ্ধে যুক্তি খন্ডনের পূর্ণাঙ্গ দলিল খুঁজছিলাম। এই মহৎ কাজটি আমাদের প্রাণ প্রিয় শাইখ সূচারুরূপে সম্পন্ন করেছেন। আমি এই বইটি পেয়ে ভীষণ আনন্দিত কারণ ‘ত্বাগুত’ ও তাগুতের পৃষ্ঠপোষক, সহযোগী এবং ভন্ড আলেমরা তাদের কুফরী সংবিধান ও সংসদের পক্ষে যে সব মিথ্যা ও প্রতারণাপূর্ণ যুক্তি দাঁড় করায় তাাদের সকলের জবাবে কুর’আন ও সুন্নাহর আলোকে পূর্ণাঙ্গ দলিল পেশ করা হয়েছে। আমি সমস্ত কিছুই এই মূল্যবান বইতে পেয়েছি। তাই আমি বইটি অনুবাদের সিদ্বান্ত নিয়েছি যাতে যারা আরবীতে পড়তে পারেন না তারা যেন মিথ্যা থেকে সত্যের পার্থক্য করতে পারেন, পথভ্রষ্টতা থেকে নিজেদের বাচাঁতে পারেন, পথভ্রষ্টতা থেকে বাঁচার নির্দেশনা পান এবং যারা গণতন্ত্রের উপর বিশ্বাস করে তাদের বিরূদ্ধে যেন দলিল পেশ করতে পারেন। আমি আশা করি আল্লাহ্ তা‘আলা আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে গ্রহণ করবেন এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্যেই যিনি প্রথম (আল-আওওয়াল) এবং শেষ (আল-আখির)।
–অনুবাদক
লেখকের কথা
“পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ তা‘আলার নামে”
সকল প্রশংসা আল্লাহর। আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর কাছে আশ্রয় চাই, তাঁরই কাছে ক্ষমা চাই এবং আমরা তাঁর কাছে পানাহ চাই নফসের প্রতারণা হতে এবং আমাদের খারাপ কাজ হতে। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন তাকে কেউ গোমরাহ করতে পারে না, আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন তাকে কেউ হেদায়েত দিতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কেউ নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ ﷺ তাঁর বান্দা এবং শেষ রাসূল। তিনি আমাদের নেতা এবং তিনি আমাদের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ। মহানবী মুহাম্মদ ﷺ, তাঁর পরিবার, তাঁর সাহাবাগণ এবং যারা তাঁকে কেয়ামত পযর্ন্ত অনুসরণ করবে তাঁদের সকলের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন। (আমীন)
অতঃপর, শিরকী শাসন ব্যবস্থার সংসদীয় নির্বাচনের ঠিক পূর্বে এই বইটি লিখার দায়িত্ব আমাকে দেয়া হয়েছিল এবং এটা এমন একটা সময় যখন মানুষ গণতন্ত্রের দ্বারা মোহগ্রস্থ হয়ে আছে। কখনও তারা গণতন্ত্রকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা অথবা ‘শূরা কাউন্সিল’ (পরামর্শসভা) বলে থাকে। আবার কখনও তারা এমন যুক্তি উপস্থাপন করে যেন, আপাত দৃষ্টিতে, গণতন্ত্রকে একটি বৈধ মতবাদ বলে মনে হয়। তারা ইউসূফ (আ.) এর সাথে রাজার শাসনব্যবস্থার ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে পেশ করে। আবার অন্য সময়ে তারা নাজ্জাসীর শাসনব্যবস্থাকে উদাহরণ হিসাবে পেশ করে শুধু তাদের স্বার্থসিদ্ধি ও ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। তারা সত্যের সাথে মিথ্যার এবং আলোর সাথে অন্ধকারের এবং ইসলামের একত্ববাদের সাথে গণতন্ত্রের শিরকী ব্যবস্থার মিশ্রণ ঘটায়। আমরা, আল্লাহর সাহায্যে, এই সব মিথ্যা যুক্তি খন্ডন করেছি এবং প্রমাণ করেছি যে গণতন্ত্রঃ একটি জীবন ব্যবস্থা (দ্বীন); তবে এটি আল্লাহ প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা (দ্বীন) নয়।
এটি আল্লাহ প্রদত্ত একত্ববাদদের দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) নয়। সংসদ ভবন হচ্ছে এই শিরকের কেন্দ্রস্থল এবং শিরকী বিশ্বাসের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। আমাদের জীবনে তাওহীদ বাস্তবায়ন করতে হলে এই সমস্ত কিছুুুকে অবশ্যই বর্জন করতে হবে আর এটাই হচ্ছে বান্দার উপর আল্লাহর হক। যারা গণতন্ত্রের অনুসারী, আমাদের অবশ্যই তাদেরকে শত্রু হিসেবে গণ্য করা উচিত এবং আমরা অবশ্যই তাদের ঘৃণা করবো এবং তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ অব্যাহত রাখবো এবং তাদেরকে পর্যদস্ত করবো। গণতন্ত্র একটি সুস্পষ্ট শিরকী মতাদর্শ এবং নির্ভেজাল কুফরী যে ব্যাপারে আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর কিতাবে সতর্ক করেছেন। এবং তাঁর রাসূল ﷺ সারা জীবন এই সব ত্বাগুতের (মিথ্যা উপাস্যদের) বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ছিলেন। তাই, হে আমার একত্ববাদী ভাইয়েরা, অটল থাক নবীর প্রকৃত অনুসারীরূপে এবং যারা গণতন্ত্র ও এর অনুসারীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছেন তাদের সাহায্যকারী হও। নিজের জীবনকে সাজাও তাদেরকে অনুসরণ করার জন্যে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিধানকে প্রয়োগ করে থাকে। রাসুল ﷺ এই পথ সর্ম্পকে বলেছেন, “আমার উম্মাহর মধ্যে একদল লোক থাকবে যারা আল্লাহর আদেশ পালন করতে থাকবে এবং যারা তাদেরকে ত্যাগ করবে অথবা তাদের বিরুদ্ধাচরণ করবে কেউই তাদের ক্ষতি করতে পারবে না যতক্ষণ না পূর্বনির্ধারিত সময় উপস্থিত হয়
(কিয়ামত হয়)।”
আমি আল্লাহর নিকট দোয়া করি যাতে আল্লাহ আমাকে এবং আপনাকে ঐ লোকদের অন্তর্ভুক্ত করেন এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, যিনি প্রথম (আল-আও্ওয়াল) এবং যিনিই শেষ (আল-আখির)।
– আবূ মুহাম্মদ আল-মাক্দিসী।
স্বর্গীয় সৃষ্টি, নাযিলকৃত কিতাবসমূহ, ইব্রাহীম (আ.) এর দাওয়াহ্ এবং সবচেয়ে
মজবুত হাতল-এগুলোর সূত্রপাত এবং উদ্দেশ্য
প্রত্যেকের জানা উচিত যে, আল্লাহই সমস্ত বস্তু ও প্রাণীর সৃষ্টিকর্তা। আল্লাহ আদম সন্তানকে সালাত, যাকাত বা অন্য যে কোন ইবাদত জানার ও পালন করার পূর্বে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টির আদেশ দিয়েছিলেন, তা হচ্ছে- কেবল এক আল্লাহর উপর ঈমান আনা এবং তাঁকে ছাড়া যাদের ইবাদত করা হয় তাদের বর্জন করা। এ কারণেই আল্লাহ সমস্ত জীব সৃষ্টি করেছেন, নবীদের পাঠিয়েছেন, কিতাব নাযিল করেছেন এবং জিহাদ ও শাহাদাতের আদেশ দিয়েছেন। আর এ কারণেই আর-রহমানের অনুসারী এবং শয়তানের অনুসারীদের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়েছে এবং এ কারণেই দারুল ইসলাম এবং খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
“আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এই জন্য যে তারা আমারই ইবাদত করবে” [সূরা আয-যারিয়াত ৫১: ৫৬]
যার অর্থ- আমাদের সৃষ্টি ও অস্তিত্বের একমাত্র উদ্দেশ্যই হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত করা।
তিনি আরো বলেছেনঃ
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِى كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطّٰغُوتَ ۖ فَمِنْهُم مَّنْ هَدَى اللَّهُ وَمِنْهُم مَّنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلٰلَةُ ۚ فَسِيرُوا فِى الْأَرْضِ فَانظُرُوا كَيْفَ كَانَ عٰقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ
“আর নিশ্চয়ই, আমি প্রত্যেক জাতির কাছে রাসূল পাঠিয়েছি এই নির্দেশ দেয়ার জন্য যে, আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত (অন্য সকল বাতিল ইলাহ) থেকে নিরাপদ থাকো (বর্জন কর)।” [সূরা আন-নাহল ১৬: ৩৬]
“লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহ্ – আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নাই”- এই বিশ্বাসই হচ্ছে ইসলামের মূল ভিত্তি। এটা ছাড়া কোন দোয়া, সালাত, সওম, যাকাত, হজ্জ্ব, জিহাদ, অথবা অন্য কোন ইবাদতই আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। এ বাণীতে ঈমান আনা ব্যতীত কেউই নিজেকে জাহান্নামের আগুন হতে বাঁচাতে পারবে না। কারণ এটাই হচ্ছে একমাত্র হাতল যার প্রতিশ্রুতি আল্লাহ দিয়েছেন তাঁর অনুসারীদের, যা তাদের জান্নাতে নিয়ে যাবে। অন্য কোন হাতল জাহান্নামের আগুন হতে বাঁচাতে সক্ষম নয়। আল্লাহ বলেনঃ
لَآ إِكْرَاهَ فِى الدِّينِ ۖ قَد تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَىِّ ۚ فَمَن يَكْفُرْ بِالطّٰغُوتِ وَيُؤْمِنۢ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰى لَا انفِصَامَ لَهَا ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
“নিশ্চয়ই, সঠিক পথ ভ্রান্ত পথ থেকে আলাদা। যে ত্বাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহতে বিশ্বাস করবে, সে এমন এক মযবুত হাতল ধরবে যা কখনও ভাঙ্গবে না।” [সূরা বাকারাহ্ ২: ২৫৬]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেনঃ
إِنَّمَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ أَوْثٰنًا وَتَخْلُقُونَ إِفْكًا ۚ إِنَّ الَّذِينَ تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ لَا يَمْلِكُونَ لَكُمْ رِزْقًا فَابْتَغُوا عِندَ اللَّهِ الرِّزْقَ وَاعْبُدُوهُ وَاشْكُرُوا لَهُۥٓ ۖ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
“যারা ত্বাগুতকে বর্জন করে তার (ত্বাগুতের) ইবাদত থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে, এবং আল্লাহর অভিমুখী হয় (তওবাহর মাধ্যমে), তাদের জন্য আছে সু-সংবাদ। অতএব সু-সংবাদ দাও আমার বান্দাদেরকে।” [সূরা আয-যুমার ৩৯: ১৭]
লক্ষ্য করুন, আল্লাহ্ তাঁর প্রতি ঈমান আনার পূর্বে সকল মিথ্যা উপাস্যদের (বা ত্বাগুত-দের) অস্বীকার করার কথা বলেছেন। এই আয়াত আমাদের দেখাচ্ছে, কিভাবে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর প্রতি ঈমান আনার পূর্বে, সমস্ত বাতিল ইলাহ্-(উপাস্য)কে পরিত্যাগ করার কথা বলেছেন। (লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহ্ – কোন উপাস্য নেই, আল্লাহ্ ব্যতীত) এই বাণীর মাধ্যমে আল্লাহ্ তা‘আলা একত্ববাদের আদেশ দিয়েছেন, যা নির্দেশ করে মজবুত হাতলের সবচেয়ে বড় নীতি সর্ম্পকে; সুতরাং কেউই সত্যিকার ঈমানদার হতে পারবে না যত পর্যন্ত না সে অন্য সকল বাতিল উপাস্যকে চূড়ান্ত ও পুরোপুরি ভাবে প্রত্যাখ্যান করে। সেই উপাস্যগুলো, যাদের সাথে কুফরী (বিশ্বাস না করা) করতে হবে এবং যাদের ইবাদত থেকে দূরে থাকতে হবে, সেগুলো কেবল পাথর, মূর্তি, গাছ বা কবর নয় (সিজদা বা দোয়ার মাধ্যমে যাদের ইবাদত করা হয়)- বস্তুত মিথ্যা ইলাহর আওতা আরও অনেক বেশি! এই উপাস্যগুলোর আওতার মধ্যে পড়ে প্রত্যেক জীব বা জড় যেগুলোর ইবাদত করা হয় আল্লাহ তা‘আলা-কে বাদ দিয়ে এবং তারা এই ইবাদত গ্রহণ করে বা সন্তুষ্ট থাকে। [1]
যখন কোন সৃষ্টি নিজের আত্মার উপর যুলুম করে, তখন সে আল্লাহর বেঁধে দেয়া সীমা অতিক্রম করে। আল্লাহ ছাড়া অন্য ইলাহ-এর ইবাদত করা এরূপ যুলমের অন্তর্ভুক্ত। এই ইবাদতের মধ্যে আছে সেজদা, মস্তক অবনতকরণ, দোয়া প্রার্থনা, শপথ করা এবং বলি দেওয়া। আইন প্রণয়ন করার ক্ষেত্রে মান্য করাও এক ধরনের ইবাদত। আল্লাহ আহলে কিতাব (ইহুদী ও নাসারা) সম্প্রদায় সর্ম্পকে বলেন,
اتَّخَذُوٓا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبٰنَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَآ أُمِرُوٓا إِلَّا لِيَعْبُدُوٓا إِلٰهًا وٰحِدًا ۖ لَّآ إِلٰهَ إِلَّا هُوَ ۚ سُبْحٰنَهُۥ عَمَّا يُشْرِكُونَ
“তারা আল্লাহ ব্যতীত তাদের পন্ডিতগণ ও সংসার-বিরাগীগণকে তাদের আরবাব (প্রভু) রূপে গ্রহণ করেছে …।” [2]
যদিও তারা তাদের পন্ডিতগণ ও সংসার-বিরাগীগণদের সেজদা করে নাই বা তাদের ধর্ম যাজকদের সামনে মাথা নত করে নাই, কিন্তু তারা হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল করা সংক্রান্ত তাদের বিধান মেনে নিয়েছে এবং অনুসরণ করেছে। সেজন্যেই আল্লাহ তাদের এই কাজকে অর্থাৎ পন্ডিত ও ধর্মযাজকদের প্রভু বা উপাস্যরূপে গ্রহণ করার শামিল বলে গণ্য করেছেন। কারণ বিধানের ক্ষেত্রে আনুগত্য এক ধরনের ইবাদত এবং তা একমাত্র আল্লাহর জন্যে নির্দিষ্ট, যেহেতু আল্লাহই একমাত্র স্বত্তা যিনি বিধান দিতে পারেন। সুতরাং, যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো আইন বাস্তবায়ন করার প্রচেষ্টা চালায়, সে বস্তুত একজন মুশরিক। প্রমাণ স্বরূপ মুহাম্মদ ﷺ-এর সময়ের ঐ ঘটনাকে উল্লেখ করা যায়, যখন একটি মরা ছাগল নিয়ে আর-রাহমান (আল্লাহর) বান্দা ও শয়তানের অনুসারীদের মধ্যে বিবাধ হয়। মুশরিকরা যুক্তি দ্বারা মুসলিমদের বোঝাতে চাচ্ছিল যে, ছাগলটি প্রাকৃতিক ভাবে বা নিজে নিজেই মারা যায়, তার মধ্যে ও মুসলিমদের যবেহ্ করা ছাগলের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তারা দাবী করছিল যে, মৃত ছাগলটিকে আল্লাহই যবেহ করেছেন। কিন্তু এই ঘটনার প্রেক্ষিতে, আল্লাহ তাঁর হুকুম জারি করে দিলেন এবং বললেন,
وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُۥ لَفِسْقٌ ۗ وَإِنَّ الشَّيٰطِينَ لَيُوحُونَ إِلٰىٓ أَوْلِيَآئِهِمْ لِيُجٰدِلُوكُمْ ۖ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ
“… যদি তোমরা তাদের কথামত চল (আনুগত্য বা অনুসরণ কর) তবে অবশ্যই মুশরিক হবে।” [সূরা আনআম ৬: ১২১]
সুতরাং ‘ইলাহ্’ বা ‘উপাস্য’ শব্দটি দ্বারা এমন সব লোকদেরও বোঝায় যারা আল্লাহর পাশাপাশি নিজেকে বিধানদাতা, আইনপ্রণেতা অথবা সংসদ প্রতিনিধি রূপে স্থান করে নেয় (কারণ এসকল পদে তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার নাযিলকৃত বিধানের পরিপন্থী বিধান প্রতিষ্ঠা করার ক্ষমতা দেয়া হয়); আর যারা তাদেরকে এসকল পদে নির্বাচিত করে (ভোট দেয়া বা অন্য কোন রূপে সমর্থন করার মাধ্যমে) তারা হয় মুশরিক- কারণ তারা সীমালংঘন করেছে (অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার পাশে আরেক বিধানদাতা মেনে নেয়ার মাধ্যমে শরীক করেছে)। মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর দাস হিসেবে এবং আল্লাহ তাকে আদেশ করেছেন তাঁর বিধানের কাছে আত্মসমর্পন করার জন্য; কিন্তু কিছু কিছু মানুষ তা প্রত্যাখান করেছে এবং নির্ধারিত সীমা লংঘন করেছে। আইনপ্রণেতারা নিজেদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ বানাতে চায় এবং তারা বিধান প্রণয়নে অংশগ্রহণ করতে চায় যা কারো জন্যে বৈধ নয় শুধুমাত্র আল্লাহ ছাড়া। যদি কেউ, নিজেকে বিধানদাতা হিসেবে অধিষ্ঠিত করার মাধ্যমে, সীমা অতিক্রম করে, তবে সে একজন উপাস্যের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তার ইসলাম এবং তার একত্ববাদ গ্রহণ যোগ্য হবে না, যতক্ষণ না সে যা করেছে তা অস্বীকারপূর্বক বর্জন করবে এবং সেই ভ্রান্ত জীবন ব্যবস্থার কর্মী ও সমর্থনকারীদের থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যে জিহাদ করবে; অর্থাৎ যতক্ষণ না সে নিশ্চিতভাবে জানবে যে, গণতন্ত্র একটি ভ্রান্ত মতবাদ এবং এই ব্যবস্থার বিরোধিতা করবে। আল্লাহ বলেন,
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ ءَامَنُوا بِمَآ أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوٓا إِلَى الطّٰغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوٓا أَن يَكْفُرُوا بِهِۦ وَيُرِيدُ الشَّيْطٰنُ أَن يُضِلَّهُمْ ضَلٰلًۢا بَعِيدًا
“… এবং তারা ত্বাগুতের কাছে বিচার প্রার্থী হতে চায়, যদিও তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” [সূরা নিসা ৪: ৬০]
মুজাহিদ (রহ.) বলেন, “‘ত্বাগুত’ (উপাস্য) হচ্ছে মানুষরূপী শয়তান যার কাছে মানুষ বিচার ফয়সালার জন্যে যায় এবং তারা তাকে অনুসরণ করে।”
শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ্ (রহ.) বলেন, “… আর এ কারণেই, যে কুর’আনের নির্দেশিত বিধান ছাড়া বিচার ফয়সাল করে না সে হচ্ছে ‘ত্বাগুত’।” [3]
ইব্ন আল-কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, “প্রত্যেক ব্যক্তি, যে তার সীমা অতিক্রম করে, হয় ইবাদত, অনুসরণ অথবা আনুগত্যের মাধ্যমে – সুতরাং কোন মানুষের উপাস্য হয় সেই ব্যক্তি যাকে তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পাশাপাশি বিচারক সাব্যস্ত কর হয়, অথবা আল্লাহর পাশাপাশি যার ইবাদত করা হয়, অথবা যার অনুসরণ করা হয় আল্লাহকে অগ্রাহ্য করে, অথবা যাকে মান্য করা হয় এমন বিষয়ে যার মাধ্যমে আল্লাহকে অমান্য করা হয়”।
তিনি আরো বলেন, “আল্লাহর রাসূল যে বিধান নিয়ে এসেছেন, যদি কেউ তা দিয়ে বিচার-ফয়সালা না করে বা তার দিকে প্রত্যাবর্তন না করে, সে মূলতঃ অন্য কোন উপাস্যের অনুসরণ করছে।” [4]
বর্তমান সময়ে যে সব উপাস্যের ইবাদত করা হয়, অর্থাৎ তথাকথিত আইনপ্রণয়নকারী পরিষদের মানুষের তৈরী দেবদেবী, উপাস্য ও তাদের ভ্রান্ত অনুসারীদেরকে প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্যই বর্জন করতে হবে, যেন সবচেয়ে মজবুত রজ্জু (ইসলাম বা আল্লাহর একত্ববাদ) শক্তভাবে ধারণ করা যায় এবং জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, তা হলো তথা কথিত আইন প্রণয়নকারী পরিষদের মানুষের তৈরী ক্ষণস্থায়ী উপাস্য বা দেব-দেবীগুলোকে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
أَمْ لَهُمْ شُرَكٰٓؤُا شَرَعُوا لَهُم مِّنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنۢ بِهِ اللَّهُ ۚ وَلَوْلَا كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِىَ بَيْنَهُمْ ۗ وَإِنَّ الظّٰلِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
“তাদের কি এমন কতগুলো ইলাহ্ (উপাস্য) আছে যারা তাদের জন্য বিধান দিয়েছে এমন দ্বীনের, যার অনুমতি আল্লাহ দেন নাই? ফয়সালার ঘোষণা না থাকলে তাদের বিষয়ে তো সিদ্ধান্ত হয়ে যেতো…” [সূরা আশ-শুরা ৪২: ২১]
মানুষ এই সব ‘আইন প্রণয়নকারী’-দের অনুসরণ করে আসছে এবং বিধান দেয়া বা আইন প্রণয়ন করাকে তাদের, তাদের সংসদের এবং স্থানীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শাসন ব্যবস্থার অধিকার ও বৈশিষ্ট্য বলে মেনে নিয়েছে। তারা তাদের সংবিধানের মাধ্যমে প্রমাণ করে যে, জনগণই প্রকৃতপক্ষে বিধান দেয়। [5]
এ কারণেই, আইন প্রণয়নকারীরা তাদের অনুসারীদের ইলাহ হয়ে যায়। অনুসারীগণ তাদেরকে এই কুফরী মতবাদ ও শিরকের ব্যাপারে মেনে নিয়েছে যে রূপ আল্লাহ খ্রিস্টানদের ব্যাপারে বলেছেন যখন, তারা আনুগত্য করেছিল তাদের ধর্মযাজক ও সন্ন্যসীদের। আজকের গণতন্ত্রের অনুসারীরা ঐসব সংসার বিরাগী ও ধর্মযাজকদের থেকে বেশি নিকৃষ্ট ও অপবিত্র; কারণ যদিও তারা হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করত কিন্তু তারা নিজেদেরকে আইন প্রণয়নকারী বলে দাবী করত না এবং তারা নিজেরা সংবিধান তৈরী করত না। কেউ যদি তাদের কথা গ্রহণ না করত অথবা অনুসরণ না করত তাহলে তারা তাদের শাস্তি প্রদান করত না; আর না তারা তাদের মিথ্যা উপাস্যগুলোর পক্ষে প্রমাণ দেয়ার জন্য আল্লাহর কিতাব ব্যবহার করত। এই বিষয়টি যদি আপনার কাছে স্পষ্ট হয় তবে আপনার জানা উচিত, ইসলামের মজবুত হাতলকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা এবং মানুষের তৈরি উপাস্যকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করা হলো ইসলামের চূড়া। আর এর দ্বারা আমি ‘জিহাদ’-কে বুঝাতে চাচ্ছি। জিহাদ করতে হবে ত্বাগুত, তার অনুসারী এবং সাহায্যকারীর বিরুদ্ধে, এই মানব রচিত সংবিধানকে ধ্বংস করার জন্যে এবং চেষ্টা করতে হবে যেন মানুষ এদের ইবাদত থেকে ফিরে আসে এবং একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের দিকে প্রত্যাবর্তন করে। অবশ্যই এই পদক্ষেপের সাথে থাকতে হবে একটি ঘোষণা এবং প্রকাশ্য বক্তব্য, ঠিক যেমনটি নবীগণ করেছিলেন এবং আমারা অবশ্যই তা করব একই পদ্ধতিতে এবং একই পথ অবলম্বন করে – যে পথটি আল্লাহ স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন, ইব্রাহীম (আ.) মিল্লাত (আদর্শ) এবং তাঁর দাওয়াহ্কে আমাদের আর্দশ হিসাবে নেয়ার আদেশ প্রদানের মাধ্যমে।
তিনি (আল্লাহ্ তা‘আলা) বলেন,
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِىٓ إِبْرٰهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُۥٓ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَءٰٓؤُا مِنكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدٰوَةُ وَالْبَغْضَآءُ أَبَدًا حَتّٰى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُۥٓ إِلَّا قَوْلَ إِبْرٰهِيمَ لِأَبِيهِ لَأَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ وَمَآ أَمْلِكُ لَكَ مِنَ اللَّهِ مِن شَىْءٍ ۖ رَّبَّنَا عَلَيْكَ تَوَكَّلْنَا وَإِلَيْكَ أَنَبْنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ
“তোমাদের জন্য ইব্রাহীম ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে ([6])রয়েছে উত্তম আর্দশ। যখন সে তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত কর তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নাই। আমরা তোমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করি। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হল শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য; যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহতে ঈমান আনবে’।” [সূরা মুমতাহিনা ৬০: ৪]
কাজেই এই বক্তব্যের অর্থ স্পষ্ট হয়েছে। ভেবে দেখুন, কিভাবে আল্লাহ বিদ্বেষের পূর্বে শত্রুতার কথা দিয়ে শুরু করেছেন। বিদ্বেষের চেয়ে শত্রুতা বেশী গুরুত্বপূর্ণ কারণ একজন ব্যক্তি ত্বাগুতের অনুসারীদেরকে ঘৃণা করতে পারে কিন্তু তাদের শত্রু হিসাবে নাও ভাবতে পারে। তাই কোন ব্যক্তি (মুসলিম হিসেবে) তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তাদের ঘৃণা করবে এবং শত্রু হিসেবে গণ্য করবে। ভেবে দেখুন, কিভাবে আল্লাহ মিথ্যা উপাস্যগুলোর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পূর্বে সেগুলোর অনুসারীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন, কারণ দ্বিতীয়টির চেয়ে প্রথমটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক মানুষই পাথর, মূর্তি, দেবতা, সংবিধান, আইন এবং বাতিল জীবন ব্যবস্থার (দ্বীন) প্রত্যাখান করে কিন্তু তারা এই সব উপাস্য ও বাতিল দ্বীনের অনুসারীদের ও সাহায্যকারীদের প্রতাখ্যান করতে অস্বীকার করে। এই কারণেই, এ ধরনের লোক তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে পারবে না। যদি সে এইসব উপাস্যগুলোর দাসদের প্রত্যাখান করে তবে বুঝা যায় যে, সে তাদের ভ্রান্ত ব্যবস্থা এবং তারা যাদের ইবাদত করে সেগুলাকেও প্রত্যাখান করে। প্রত্যেকের কমপক্ষে অবশ্যই পালনীয় কর্তব্য, যা ছাড়া কেউ নিজেকে (জাহান্নাম হতে) বাঁচাতে পারবে না, তা হলো মিথ্যা উপাস্যগুলো বর্জন করা এবং তাদের শির্কী ও মিথ্যা মতাদর্শনের অনুসারী না হওয়া। আল্লাহ বলেন,
ولقد بعثنا في كلِّ أمةٍ رسولاً أنِ اعبدوا االله واجتنبوا الطاغوت
“আল্লাহর ইবাদত করার ও ত্বাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেয়ার জন্য আমি প্রত্যেক জাতির কাছেই রাসূল পাঠিয়েছি।” [সূরা নাহল ১৬: ৩৬]
এবং তিনি আরো বলেন,
واجتنبوا الرجس من الأوثان
“… সুতরাং তোমরা বর্জন কর মূর্তি পূজার অপবিত্রতা এবং দূরে থাক মিথ্যা কথন হতে”। [সূরা হজ্জ্ব ২২: ৩০]
এবং তিনি ইব্রাহীম (আ.) এর দোয়া সম্পর্কে বলেন,
واجْنُبْنِي وبنيّ أن نعبد الأصنام
“আমাকে ও আমার পুত্রগণকে প্রতিমা পূজা হতে দূরে রেখ।” [সূরা ইব্রাহীম ১৪: ৩৫]
ত্বাগুতের আনুগত্য, গোলামী ও সমর্থনকে অস্বীকার করার মাধ্যমে যদি কেউ এই পৃথিবীতে ত্বাগুতকে বর্জন না করে, তাহলে আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে। কোন ভাল আমলই তার কাজে আসবে না এবং এজন্য সে অনুতপ্ত হবে এমন এক সময়ে যখন কোন অনুতাপই কাজে আসবে না। অতঃপর তারা পৃথিবীতে ফিরে আসতে চাইবে এবং তারা বলবে যে তারা ত্বাগুতকে প্রত্যাখান করবে এবং মজবুত হাতলের (ইসলামের বিধান) অনুসরণ করবে এবং এই মহান দ্বীনের (ইসলামী জীবন ব্যবস্থার) অনুসরণ করবে। আল্লাহ বলেন,
إِذْ تَبَرَّأَ الَّذِينَ اتُّبِعُوا مِنَ الَّذِينَ اتَّبَعُوا وَرَأَوُا الْعَذَابَ وَتَقَطَّعَتْ بِهِمُ الْأَسْبَابُ ★ وَقَالَ الَّذِينَ اتَّبَعُوا لَوْ أَنَّ لَنَا كَرَّةً فَنَتَبَرَّأَ مِنْهُمْ كَمَا تَبَرَّءُوا مِنَّا ۗ كَذٰلِكَ يُرِيهِمُ اللَّهُ أَعْمٰلَهُمْ حَسَرٰتٍ عَلَيْهِمْ ۖ وَمَا هُم بِخٰرِجِينَ مِنَ النَّارِ
“যখন অনুসৃতগণ অনুসরণকারীদের দ্বায়িত্ব অস্বীকার করবে এবং তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে ও তাদের মধ্যকার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে, আর যারা অনুসরণ করেছিল তারা বলবে, ‘হায়! যদি একবার আমাদের প্রত্যাবর্তন ঘটত তবে আমরাও তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতাম যেমন তারা আজ আমাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল।’ এইভাবে আল্লাহ তাদের কার্যাবলীকে পরিতাপরূপে তাদেরকে দেখিয়ে দিবেন আর তারা কখনও অগ্নি হতে বের হতে পারবে না।” [সূরা বাকারা ২: ১৬৬-১৬৭]
কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যাবে; এই দুনিয়াতে ফিরবার কোন পথ থাকবে না। তাই যদি আপনি নিরাপত্তা চান এবং আল্লাহর দয়ার আশা করেন যা আল্লাহ সৎ কর্মশীল ব্যক্তিদের দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই এইসব ত্বাওয়াগীত (ত্বাগুতের বহু বচন)-দের বর্জন করতে হবে। প্রত্যাখ্যান করুন তাদের শিরকী মতাদর্শকে (গণতন্ত্র) এখনই! এই মুহূর্তে!!। কেউ আখেরাতে এদেরকে প্রত্যাখান করতে পারবে না যদি সে দুনিয়াতে এদেরকে প্রত্যাখান না করে। কিন্তু যারা তাদের (ত্বাগুতের) বাতিল জীবন ব্যবস্থাকে সাহায্য করবে এবং তার অনুসরণ করবে, তাদেরকে কেয়ামতের দিন এক আহ্বানকারী বলবে, “সে তারই অনুসরণ করবে যার ইবাদত সে করতো। যে সূর্যের ইবাদত করত, সে সূর্যের অনুসরণ করবে। যে চন্দ্রের ইবাদত করত, সে চন্দ্রের অনুসরণ করবে। যারা মিথ্যা উপাস্যদের ইবাদত করত, তারা তাদের অনুসরণ করবে। কিন্তু যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছিল তাদেরকে বলা হবে, “তোমরা কিসের জন্য অপেক্ষা করছো?।” তোমরা কেন তাদের অনুসরণ করছো না? এবং তারা উত্তর দিবে, “আমরা আমাদের রবের জন্য অপেক্ষা করছি। আমরা তাদের অনুসরণ করছি না কারণ দুনিয়াতে আমরা তাদের অনুসরণ করিনি, যখন আমাদের টাকা পয়সা ও কর্তৃত্বের খুবই প্রয়োজন ছিল। তাহলে কিভাবে তুমি এখন আমাদেরকে তাদের অনুসরণ করতে বলছ? [7]
এ ব্যাপারে আল্লাহ্ আরও বলেছেনঃ
احشروا الذین ظلموا وأزواجھم وما كانوا یعبدون
(ফিরিশতাদের বলা হবে) “একত্র কর জালিম ও তাদের সহচরদের এবং তারা যাদের ইবাদত করতো তাদের।” [সূরা সাফফাত ৩৭: ২২]
এখানে সহচর বলতে তাদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা তাদের পছন্দ করে, তাদের মিথ্যা আদর্শের সমর্থক কিংবা সাহায্যকারী। এরপর আল্লাহ্ বলেছেনঃ
فَإِنَّهُمْ يَوْمَئِذٍ فِى الْعَذَابِ مُشْتَرِكُونَ ★ إِنَّا كَذٰلِكَ نَفْعَلُ بِالْمُجْرِمِينَ ★ إِنَّهُمْ كَانُوٓا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لَآ إِلٰهَ إِلَّا اللَّهُ يَسْتَكْبِرُونَ
তাদের সকলকেই সেই দিন শাস্তির জন্য শরীক করা হবে। অপরাধীদের প্রতি আমি এইরূপই করে থাকি। তাদের নিকট “আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই” বলা হলে তারা অহংকার করতো।” [সূরা সাফফাত ৩৭: ৩৩-৩৫]
সাবধান হও! একত্ববাদের কালেমাকে প্রত্যাখান কর না ও এড়িয়ে চলো না। এই কালেমা দ্বারা যা বোঝানো হয়েছে তার ব্যাপারে উদাসীন থেকো না। সর্বদা এর জন্য গর্ববোধ কর। এটা হচ্ছে আল্লাহর একত্ববাদ। সত্য অনুসরণের ব্যাপারে অবজ্ঞা কর না, ত্বাগুতের সাহায্যকারী হয়ো না। কারণ তাহলে তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। শেষ বিচারের দিন তোমাকে তাদের (যালেমদের) সাথে উঠানো হবে, তাদের (যালেমদের) শাস্তির অংশীদার হতে হবে। তোমার অবশ্যই জানা উচিত যে, আল্লাহ আমাদের এই সত্য দ্বীন দিয়েছেন আর এই দ্বীন তথা জীবন ব্যবস্থা হচ্ছে ‘ইসলাম’ অর্থাৎ আল্লাহর হুকুমের কাছে আত্মসমর্পন করা এবং আল্লাহ এই দ্বীনকে তাঁর একাত্ববাদী বান্দাদের জন্য মনোনীত করেছেন। কাজেই যারা এর অনুসরণ করবে, তাদের আমল গ্রহণ যোগ্য হবে, আর যে কেউ অন্য কোন জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, তা প্রত্যাখ্যান করা হবে এবং সে হবে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলছেনঃ
وَوَصّٰى بِهَآ إِبْرٰهِۦمُ بَنِيهِ وَيَعْقُوبُ يٰبَنِىَّ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفٰى لَكُمُ الدِّينَ فَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ
“এবং ইব্রাহীম ও ইয়াকুব এই প্রসঙ্গে তাদের পুত্রগণকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, হে পুত্রগণ! আল্লহ্ই তোমাদের জন্য এই দ্বীনকে মনোনীত করেছেন। সুতরাং আত্মসমর্পনকারী না হয়ে তোমরা কখনও মৃত্যুবরণ কর না।” [সূরা বাকারা ২: আয়াত ১৩২]
তিনি বলছেনঃ
إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ الْإِسْلٰمُ ۗ وَمَا اخْتَلَفَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتٰبَ إِلَّا مِنۢ بَعْدِ مَا جَآءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًۢا بَيْنَهُمْ ۗ وَمَن يَكْفُرْ بِـَٔايٰتِ اللَّهِ فَإِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ
“নিঃসন্দেহে ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র (গ্রহণযোগ্য) দ্বীন।” [সূরা আল-ইমরান ৩: ১৯]
এবং তিনি আরও বলছেনঃ
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلٰمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِى الْءَاخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِينَ
“আর যে কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) গ্রহণ করতে চায় তা কখনও কবুল করা হবে না এবং আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত।” [সূরা আল-ইমরান ৩: ৮৫]
‘দ্বীন’ (ধর্ম) শব্দটিকে শুধুমাত্র খ্রিষ্টান, ইহুদী এবং এমন অন্যান্য ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা থেকে সতর্ক থাকা উচিৎ, কারণ এতে হতে পারে যে কেউ অন্য কোন বাতিল জীবন ব্যবস্থার অনুসরণ করবে এবং বিপথগামী হবে। ‘দ্বীন’ বলতে বোঝায় প্রত্যেক ধর্ম, জীবন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা এবং বিধান যা মানুষ অনুসরণ করে ও মেনে চলে। এই সকল বাতিল জীবন ব্যবস্থা ও মতাদর্শকে আমাদের অবশ্যই বর্জন ও পরিত্যাগ করতে হবে। আমাদের অবশ্যই এগুলোকে অস্বীকার করতে হবে, এর সাহায্যকারী এবং সমর্থকদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে এবং শুধুমাত্র একত্ববাদের জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে হবে; এই জীবন ব্যবস্থা হচ্ছে ইসলাম। সকল কাফের, যারা ভিন্ন জীবন ব্যবস্থার অনুসারী, তাদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ্ আমাদেরকে এটাই বলার জন্য হুকুম দিয়েছেন,
قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡكَٰفِرُونَ (١) لَآ أَعۡبُدُ مَا تَعۡبُدُونَ (٢) وَلَآ أَنتُمۡ عَٰبِدُونَ مَآ أَعۡبُدُ (٣) وَلَآ أَنَا۠ عَابِدٞ مَّا عَبَدتُّمۡ (٤) وَلَآ أَنتُمۡ عَٰبِدُونَ مَآ أَعۡبُدُ (٥) لَكُمۡ دِينُكُمۡ وَلِيَ دِينِ (٦)
“বল, ‘হে কাফিররা আমি তার ইবাদত করি না যার ইবাদত তোমরা কর এবং তোমরাও তাঁর ইবাদতকারী নও, যাঁর ইবাদত আমি করি এবং আমি তার ইবাদতকারী না যার ইবাদত তোমরা করে আসছো। এবং তোমরাও তাঁর ইবাদতকারী নও, যাঁর ইবাদত আমি করি। তোমাদের দ্বীন তোমাদের, আমার দ্বীন আমার।” [সূরা কাফিরূন ১০৯: ১-৬]
তাই যখন কোন সমাজের মুসলিমদের অবশ্যই উচিৎ নয় কাফেরদের সাথে এমন একটি সমাজ ব্যবস্থার ব্যাপারে ঐক্যমত হওয়া, মিলিত হওয়া অথবা সংগঠিত হওয়া যা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। তারা যদি সমাজ ব্যবস্থার ব্যাপারে একমত হয় তবে তাই তাদের দ্বীন (জীবন বিধান) হয়ে যাবে। রাসূল ﷺ বলেছেনঃ
“(মুসলিমদের থেকে) যে কেউ কোন মুশরিকের সাথে দেখা করে, একসাথে থাকে, বসবাস ও অবস্থান করে (চিরস্থায়ী রূপে) এবং তার (মুশরিক) জীবন পদ্ধতি, তার মত, ইত্যাদির সাথে একমত পোষণ করে এবং তার (মুশরিক) সাথে বসবাস উপভোগ করে, তাহলে সে তাদেরই একজন।” [8]
এই সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে সাম্যবাদ (Communism), সমাজতন্ত্র (Socialism), ইহবাদ (ধর্ম ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে যারা আলাদা ভাবে দেখে) বা ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ (Secularism) এবং অন্যান্য যত মতবাদ ও রীতিনীতি যা মানুষ নিজে উদ্ভাবন করেছে অতঃপর এসব মতবাদকে নিজের দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) হিসেবে মেনে নিয়ে সন্তুষ্ট। এই সব দ্বীনের একটি হচ্ছে ‘গণতন্ত্র’। এটা এমন একটি জীবন ব্যবস্থা যা আল্লাহর মনোনীত জীবন ব্যবস্থার সাথে সাংঘর্ষিক। এ লেখনীর মাধ্যমে, এই নবোদ্ভাবিত জীবন ব্যবস্থা – যার দ্বারা অনেক লোক মোহাচ্ছন্ন হয়ে আছে, তার কিছু ভুল তুলে ধরা হয়েছে। যদিও তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে যারা নিজের দ্বীনকে ইসলাম বলে দাবী করে (অর্থাৎ তারা দাবী করে যে তারা মুসলিম)। তারা জানে গণতন্ত্র এমন একটি দ্বীন যা ইসলাম থেকে আলাদা এবং তারা এও জানে এটি একটি ভ্রান্ত পথ, এবং এর প্রতিটি দরজায় শয়তান বসে মানুষকে জাহান্নামের দিকে ডাকছে।
ইহা বিশ্বাসীদের জন্যে স্মারকপত্র (মনে করিয়ে দেয়া) এবং
যারা জানে না তাদের জন্যে সতর্কবাণী,
এবং উদ্ধতের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট দলিল।
এবং ইহা আল্লাহর নিকট একটি ক্ষমা প্রার্থনা।
গণতন্ত্র একটি নব উদ্ভাবিত দ্বীন, যেখানে এর উদ্ভাবকরা হল মিথ্যা উপাস্য এবং অনুসারীরা হলো তাদের দাস
প্রথমতঃ আমাদের গণতন্ত্র (Democracy) শব্দটির উৎস সর্ম্পকে সচেতন হতে হবে। আমাদের সবার জানা থাকা উচিত যে এটা আরবী শব্দ নয়, এটি একটি গ্রীক শব্দ। দু’টি শব্দের সমন্বয়ে তা গঠিত হয়েছেঃ ‘গণ’ (Demos) অর্থ জনগণ এবং ‘তন্ত্র’ (Cracy) অর্থ হলো বিধান, কর্তৃত্ব বা আইন। গণতন্ত্রের শাব্দিক অর্থ হলো মানুষের দেয়া বিধান, মানুষের কর্তৃত্ব, বা মানুয়ের তৈরী আইন। গণতন্ত্রের সমর্থকদের মতে, এটিই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় সম্পদ এবং এ কারণেই তারা এ ব্যবস্থার প্রশংসা করে এবং সমাজ ব্যবস্থা হিসেবে গণতন্ত্রকে অনেক উচ্চ মর্যাদা দেয়া হয়। একই সাথে, তা কুফর, শিরক, এবং মিথ্যা মতবাদের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য যা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক; কারণ আপনি জানেন, যে প্রধান কারণে আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে এবং যে কারণে কিতাবসমূহ নাযিল করা হয়েছে এবং নবী-রাসূলগণ প্ররণ করা হয়েছে, আর যে ঘোষণা দেয়া আমাদের প্রত্যেকের জন্য আবশ্যক, তা হলো আল্লাহর একাত্ববাদের ঘোষণা। প্রতিটি ইবাদত একমাত্র তাঁরই দিকে নিবদ্ধ করা এবং তাঁকে ছাড়া অন্য সকল কিছুর ইবাদত করা হতে দূরে থাকা। বিধানের অর্থাৎ আইন, বিচার বা শাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আনুগত্য যা এক ধরনের ইবাদত তা একমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য; আর এই আনুগত্য যদি অন্য কাউকে করা হয় তবে মানুষ মুশরিক হয়ে যাবে এবং ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
গণতন্ত্র বলে থাকে আইন জনগণের দ্বারা বা অধিকাংশ লোকের দ্বারা প্রবর্তিত হয় যা গণতন্ত্র পন্থীদের সবচেয়ে বড় দাবী। কিন্তু বর্তমানে আইন প্রবর্তনের অধিকার চলে গেছে বিচারকদের হাতে বা বড় নেতা, বড় ব্যবসায়ী ও ধনীদের হাতে, যারা তাদের টাকা ও মিডিয়ার মাধ্যমে সংসদে স্থান করে নেয় এবং তাদের প্রধান উপাস্যরা (রাজা, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, ইত্যাদি) ক্ষমতা রাখে যে কোন সময় ও যে কোন ভাবে সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার। সুতরাং, বহু ঈশ্বরবাদের (polytheism) এক পাশে হচ্ছে গণতন্ত্র এবং অন্য পাশে হলো আল্লাহর সাথে কুফরী করা যা অনেক কারণেই ইসলামের একত্ববাদের, নবী ও রাসূলদের দ্বীনের বিরোধী। আমরা এ গুলোর কিছু এখানে উল্লেখ করবো।
প্রথমতঃ এখানে আইন হচ্ছে মানুষের বা ত্বাগুতের, আল্লাহর আইন নয়। আল্লাহ তাঁর রাসূলকে ﷺ হুকুম দিয়েছেন আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুসারে বিচার ফয়সালা করার জন্যে এবং মানুষের ইচ্ছা দ্বারা প্রভাবিত না হতে এবং আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা থেকে সরে যেতে যেন প্রলুব্ধ না হন। আল্লাহ বলছেনঃ
وَأَنِ احْكُم بَيْنَهُم بِمَآ أَنزَلَ اللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَآءَهُمْ وَاحْذَرْهُمْ أَن يَفْتِنُوكَ عَنۢ بَعْضِ مَآ أَنزَلَ اللَّهُ إِلَيْكَ ۖ
“কিতাব অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেছেন তদানুয়ায়ী তাদের বিচার নিষ্পত্তি কর, তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ না কর এবং তাদের সম্বন্ধে সর্তক হও যাতে আল্লাহ্ যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছেন তারা তার কিছু হতে তোমাকে বিচ্যুত না করে” [সূরা মায়িদা ৫: ৪৯]।
এটাই ইসলামের একত্ববাদ। অথচ গণতন্ত্রে, যা একটি শিরকী জীবন ব্যবস্থা, তার দাসেরা বলে, “তাদের মাঝে বিচার কর যা মানুষের দ্বারা গ্রহীত হয়েছে এবং তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ কর এবং ওদের ব্যাপারে সতর্ক হও যেন ওরা তোমাদের পথভ্রষ্ট করতে না করে ওদের ইচ্ছা ও বিধানের দিকে।” তারা এ কথাটি বলে থাকে এবং গণতন্ত্রও তাই বলে থাকে। তারা নিজেরাই বিধান দিয়ে থাকে। এটি একটি স্পষ্ট কুফরী, বহু ঈশ্বরবাদ তথা শিরক, যদি তারা বিধান দেয়ার ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকে। তারা তাদের বক্তব্যকে আকর্ষণীয় করে সাজায়, তাদের কার্যকলাপ আরও নিকৃষ্ট; যদি কেউ তাদের নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বা তাদের নীতির সাথে এক মত না পোষণ করে বা বিরোধিতা করে তখন তারা বলে, “তাদের মাঝে ফয়সালা কর যেভাবে সংবিধান এবং তাদের বিশেষ শ্রেণীর লোকেরা চায় এবং ঐসব লোকেদের ঐক্যমত ছাড়া কোন বিধান, কোন আইন ব্যবহার করা যাবে না।”
দ্বিতীয়তঃ তাদের সংবিধানের মতে, আইন বা বিধান দিবে সংসদে নির্বাচিত কতিপয় মানুষ বা ত্বাগুতেরা যারা নিজেদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ করছে। এটা তাদের সংবিধানের কথা, যেই সংবিধানকে তারা আল-কুর’আন থেকেও পবিত্র বলে মনে করে থাকে। [9]
তারা এইসব মানব-রচিত সংবিধান বা আইনকে আল্লাহ্ তা‘আলার নাযিলকৃত আল-কুর’আনের দেয়া বিধান বা আইনের উপর প্রাধান্য দেয়। সে জন্যে গণতন্ত্রে কোন শাসন ব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থা ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য হবে না যদি তা তাদের সংবিধান দ্বারা অনুমোদিত না হয় কারণ তাদের আইনের উৎস হচ্ছে এই সংবিধান। গণতন্ত্রে আল কুর’আনের আয়াত, রাসূল ﷺ এর সুন্নাহ্ ও তাঁর হাদীসের কোন দাম নেই। এটা তাদের জন্যে সম্ভব নয় যে, আল কুর’আন ও রাসূল ﷺ এর সুন্নাহ্ অনুসারে কোন আইন প্রণয়ন করবে যদি তা তাদের ‘পবিত্র’ সংবিধনের সাথে না মিলে। আপনি যদি বিশ্বাস না করেন তাহলে তাদের আইন বিশেষজ্ঞের কাছে জিজ্ঞাস করতে পারেন। আল্লাহ বলেছেনঃ
يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوٓا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِى الْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ فَإِن تَنٰزَعْتُمْ فِى شَىْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْءَاخِرِ ۚ ذٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا
“… অতঃপর তোমাদের মধ্যে যদি কোন ব্যাপারে মতবৈষম্যের সৃষ্টি হয় তবে সেটি আল্লাহ্ ও রাসূল ﷺ-এর দিকে ফিরিয়ে দাও, যদি তোমরা প্রকৃতই আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমানদার হয়ে থাক। এটি সঠিক কর্মনীতি ও পরিণতির দিক দিয়ে এটিই উত্তম।” [সূরা আন্-নিসা ৪: ৫৯]
কিন্তু গণতন্ত্র বলেঃ “যদি তোমাদের মাঝে কোন বিষয়ে মত বিরোধ দেখা দেয় তবে তা সংবিধান, সংসদ, রাষ্ট্রপ্রধান বা তাদের আইনের কাছে নিয়ে যাও।”
আল্লাহ্ বলেছেন,
أُفٍّ لكم ولما تعبدون من دون ا الله أفلا تعقلون
“অভিশাপ তোমাদের উপর এবং তাদের উপর যাদের তোমরা আল্লাহর পাশাপাশি ইবাদত কর। তারপরও কি তোমরা বুঝবে না?” [সূরা আম্বিয়া ২১: ৬৭] [10]
জনসাধারণ যদি আল্লাহর শরীয়ত গণতন্ত্রের মাধ্যমে বা ক্ষমতাসীন মুশরিকদের আইনসভার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তবে কখনও তারা তা করতে সক্ষম হবে না যদি ত্বাগুতেরা (রাজা, প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট) অনুমতি না দেয়, যদি তাদের সংবিধান অনুমোদন না দেয় – কারণ এটিই গণতন্ত্রের ‘পবিত্র’ গ্রন্থ। অথবা বলা যায় যে, এটা গণতন্ত্রের বাইবেল বা তাওরাত যা তারা নিজেদের খারাপ ইচ্ছা ও খেয়াল-খুশি দ্বারা কুলষিত করেছে।
তৃতীয়তঃ গণতন্ত্র হচ্ছে সেকিউলারিজম-এর [11]নিকৃষ্ট ফল এবং এর অবৈধ সন্তান, কারণ সেকিউলারিজম হচ্ছে একটি ভ্রান্ত মতবাদ যার উদ্দেশ্য হচ্ছে শাসন-কতৃত্ব থেকে ধর্মকে আলাদা করা। গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণ বা ত্বাগুতের শাসন; আল্লাহর শাসন নয় কারণ গণতন্ত্রে আল্লাহ আদেশ কোন বিবেচ্য বিষয়ই নয়, যতক্ষণ না তা তাদের সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। এভাবে অধিকাংশ জনগণ যা চায়, অধিকন্তু—তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই সমস্ত ত্বাগুতেরা যা চায় তা তাদের সংবিধানের অংশ হয়ে যায়। সুতরাং সমস্ত জনগণ যদি একসাথে হয়ে ত্বাগুতদের ও গণতন্ত্রের উপাস্যদের বলেঃ “আমরা আল্লাহর শাসন চাই, আমরা কোন মানুষকে, সাংসদদেরকে এবং শাসকদেরকে বিধানদাতা হতে দিব না। আমরা মুরতাদ, ব্যভিচারী, চোর, মদ্যপায়ীদের ক্ষেত্রে আল্লাহর শাস্তি জারি করতে চাই। আমরা মহিলাদেরকে হিজাব পরতে বাধ্য করতে চাই। আমরা পুরুষ ও মহিলাদেরকে তাদের সতীত্ব রক্ষা করতে বাধ্য করতে চাই। আমরা অনৈতিক অশ্লীলতা, ব্যভিচার, নীতি বহির্ভূত কাজ, সমকামিতা এবং এই ধরনের যত খারাপ কাজ আছে তা প্রতিরোধ করতে চাই।” সে মুহূর্তে, তাদের
উপাস্যরা বলবেঃ “এটা গণতান্ত্রিক জীবন ব্যবস্থার ও ‘ব্যক্তি স্বাধীনতা’ নীতির বিরোধী!” সুতরাং গণতন্ত্রের স্বাধীনতা হচ্ছেঃ আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ও বিধান থেকে মুক্ত হওয়া এবং তাঁর বেধে দেয়া সীমা লংঙ্ঘন করা। নৈতিক বিধানগুলো বিধিবদ্ধ করা হয় না এবং প্রত্যেকে যারা তাদের সাথে একমত হবে না অথবা তাদের দেয়া সীমা রেখা মানবে না, তাহলে তাদের শাস্তি দেয়া হবে। [12]
এ কারণেই, গণতন্ত্র এমন একটা দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা যা আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থা থেকে আলাদা। এটা হচ্ছে ত্বাগুতের শাসন, আল্লাহর শাসন নয়। এটা হচ্ছে অন্য উপাস্যদের আইন; আল্লাহর আইন নয়, যিনি একক এবং সকল কিছুর নিয়ন্ত্রক। যে কেউ গণতন্ত্রকে গ্রহণ করল, সে এমন আইনের শাসন মেনে নিলো যা মানব-রচিত সংবিধানের অনুসারে লেখা এবং সে সর্বশক্তিমান আল্লাহর দেয়া শাসন ব্যবস্থার চেয়ে ঐ শাসন ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিলো। সুতরাং, কোন ব্যক্তি আইন প্রণয়ন করুক বা নাই করুক, বহুঈশ্বরবাদীয় নির্বাচনে জয়ী হোক বা নাই হোক, কেউ যদি মুশরিকদের সাথে গণতন্ত্রের নীতির বিষয়ে, আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে, বিচার ফয়সালা করার ক্ষেত্রে তাদের সাথে একমত হয় এবং আল্লাহর কিতাব, বিধান ও কর্তৃত্বের চেয়ে তাদের কিতাব, বিধান ও কর্তৃত্বকে বেশি গুরুত্ব দেয়, তাহলে সে নিজে একজন অবিশ্বাসী রূপে পরিগণিত হবে। একারণেই, গণতন্ত্র অবশ্যই একটি স্পষ্ট ভ্রান্ত পথ; একটি শিরক ব্যবস্থা। গণতন্ত্রে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে এবং প্রতিটি দল বা গোত্র বিভিন্ন উপাস্য থেকে তাদের উপাস্যকে নির্বাচন করে থাকে যে তার খেয়াল ও ইচ্ছা মতো বিধান দিবে কিন্তু তা হতে হবে সংবিধানের নীতি মোতাবেক। কেউ কেউ তাদের উপাস্যদের (বিধান দাতা) নির্বাচিত করে নিজস্ব মতবাদ বা চিন্তাধারা মোতাবেক; সুতরাং প্রত্যেক দলের নিজস্ব উপাস্য থাকে – কখনও গোত্রভিত্তিকভাবে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়, যেন প্রত্যেক গোত্রের একেকজন উপাস্য থাকে। কেউ আবার দাবি করে তারা ‘ধার্মিক উপাস্য’ নির্বাচিত করে, যার দাড়ি আছে [13]অথবা দাড়ি বিহীন উপাস্য বা ইলাহ এবং এমন আরও অনেক রকম। আল্লাহ বলেন:
أَمْ لَهُمْ شُرَكٰٓؤُا شَرَعُوا لَهُم مِّنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنۢ بِهِ اللَّهُ ۚ وَلَوْلَا كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِىَ بَيْنَهُمْ ۗ وَإِنَّ الظّٰلِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
“তাদের কি এমন কতগুলো ইলাহ (উপাস্য) আছে যারা তাদের জন্য বিধান দিয়েছে এমন দ্বীনের, যার অনুমতি আল্লাহ দেন নাই? ফয়সালার (বিচার দিবসের) ঘোষণা না থাকলে তাদের বিষয়ে তো সিদ্ধান্ত হয়ে যেত। নিশ্চয়ই যালিমদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।” [সূরা আস-শূরা ৪২: ২১]
এই এম.পি. রা বাস্তবেই অংকিত, খোদাই করে দাঁড় করানো মূর্তিদের মত উপাস্য যাদেরকে তাদের উপাসনালয়ে (সংসদ ভবন বা দলীয় অফিসে) স্থাপন করা হয়। এই সব প্রতিনিধিরা বা সাংসদরা গণতন্ত্র এবং সংসদীয় শাসন ব্যবস্থাকে তাদের দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা রূপে গ্রহণ করে থাকে। তারা সংবিধান অনুসারে দেশ শাসন করে থাকে, আইন দেয় এবং এর পূর্বে তারা তাদের সবচেয়ে বড় উপাস্য, সবচেয়ে বড় মুশরিক থেকে অনুমতি নিয়ে থাকে, যে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয় তা গ্রহণ বা বর্জনের। এই সবচেয়ে বড় উপাস্য হলো রাজপুত্র বা রাজা বা দেশের রাষ্ট্রপতি। এটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের বাস্তবতা এবং এই জীবন ব্যবস্থার প্রকৃত রূপ। এটাই হচ্ছে মুশরিকদের দ্বীন, আল্লাহর দেয়া দ্বীন নয়, আল্লাহর রাসূলের ﷺ দ্বীন নয়। এটাই হচ্ছে বহু উপাস্যদের দ্বীন, এক আল্লাহর দ্বীন নয়। আল্লাহ বলেনঃ
يٰصٰىحِبَىِ السِّجْنِ ءَأَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُونَ خَيْرٌ أَمِ اللَّهُ الْوٰحِدُ الْقَهَّارُ ★ مَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِهِۦٓ إِلَّآ أَسْمَآءً سَمَّيْتُمُوهَآ أَنتُمْ وَءَابَآؤُكُم مَّآ أَنزَلَ اللَّهُ بِهَا مِن سُلْطٰنٍ ۚ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ۚ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوٓا إِلَّآ إِيَّاهُ ۚ ذٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
“… ভিন্ন ভিন্ন বহু উপাস্য শ্রেয়, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ? তাঁকে ছেড়ে তোমরা কেবল কতকগুলি নামের ইবাদত কর, যেই নামগুলি তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরা রেখেছ, এইগুলির কোন প্রমাণ আল্লাহ্ পাঠান নাই।…” [সূরা ইউসুফ ১২: ৩৯-৪০]
তিনি আরো বলেনঃ
ۗأَءِلٰهٌ مَّعَ اللَّهِ ۚ تَعٰلَى اللَّهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ
“… আল্লাহর সহিত অন্য ইলাহ আছে কি? ওরা যাকে শরীক করে আল্লাহ তা হতে বহু ঊর্ধ্বে।” [সূরা আন্ নামল ২৭: ৬৩]
কাজেই আপনাকে বেছে নিতে হবে ‘আল্লাহ্ প্রদত্ত দ্বীন, তাঁর বিশুদ্ধ বিধান, তাঁর দীপ্তিময় আলো ও তাঁর সীরাতুল মুসতাকিম (সরল পথ)’ অথবা ‘গণতন্ত্রের দ্বীন এবং এর বহু ঈশ্বরবাদ, কুফরী, এবং এর ভ্রান্ত পথের’ মধ্যে যেকোন একটিকে। আপনাকে অবশ্যই এক আল্লাহর বিধান অথবা মানব রচিত বিধানের মধ্যে থেকে যে কোন একটিকে গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ্ বলেনঃ
قَد تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَىِّ ۚ فَمَن يَكْفُرْ بِالطّٰغُوتِ وَيُؤْمِنۢ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰى لَا انفِصَامَ لَهَا ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
“… সত্য পথ ভ্রান্ত পথ হতে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। যে ত্বাগুতকে অস্বীকার করবে ও আল্লাহ্তে ঈমান আনবে সে এমন এক মযবুত হাতল ধরবে যা কখনও ভাঙ্গবে না।” [সূরা বাকারা ২: ২৫৬]
আরও বলেনঃ
وَقُلِ الْحَقُّ مِن رَّبِّكُمْ ۖ فَمَن شَآءَ فَلْيُؤْمِن وَمَن شَآءَ فَلْيَكْفُرْ ۚ إِنَّآ أَعْتَدْنَا لِلظّٰلِمِينَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا ۚ وَإِن يَسْتَغِيثُوا يُغَاثُوا بِمَآءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِى الْوُجُوهَ ۚ بِئْسَ الشَّرَابُ وَسَآءَتْ مُرْتَفَقًا
“বল, সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে; সুতরাং যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক আর যার ইচ্ছা সত্য প্রত্যাখ্যান করুক।’ আমি যালিমদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি অগ্নি…।” [সূরা কাহ্ফ ১৮: ২৯]
তিনি আরও বলেন,
أَفَغَيْرَ دِينِ اللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُۥٓ أَسْلَمَ مَن فِى السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ ★ قُلْ ءَامَنَّا بِاللَّهِ وَمَآ أُنزِلَ عَلَيْنَا وَمَآ أُنزِلَ عَلٰىٓ إِبْرٰهِيمَ وَإِسْمٰعِيلَ وَإِسْحٰقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَآ أُوتِىَ مُوسٰى وَعِيسٰى وَالنَّبِيُّونَ مِن رَّبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُۥ مُسْلِمُونَ ★ وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلٰمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِى الْءَاخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِينَ
“তারা কি চায় আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন? যখন আকাশে ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে সমস্তই স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করেছে! আর তাঁর দিকেই তারা প্রত্যাবর্তন করবে। বল, আমরা আল্লাহর প্রতি এবং আমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তার বংশধরগণের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল এবং যা মুসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে প্রদান করা হয়েছে তাতে ঈমান এনেছি। আমরা তাঁদের মধ্যে কোন তারতম্য করি না এবং আমরা তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণকারী। কেউ যদি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চায় তাহলে তা কখনও কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত।” [সূরা আলে ইমরান ৩: ৮৩-৮৫]
গণতন্ত্রের প্রচারক ও সমর্থকদের ভ্রান্ত ও প্রতারণামূলক কতিপয় যুক্তির খন্ডন
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেনঃ
هُوَ الَّذِىٓ أَنزَلَ عَلَيْكَ الْكِتٰبَ مِنْهُ ءَايٰتٌ مُّحْكَمٰتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتٰبِ وَأُخَرُ مُتَشٰبِهٰتٌ ۖ فَأَمَّا الَّذِينَ فِى قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشٰبَهَ مِنْهُ ابْتِغَآءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَآءَ تَأْوِيلِهِۦ ۗ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُۥٓ إِلَّا اللَّهُ ۗ وَالرّٰسِخُونَ فِى الْعِلْمِ يَقُولُونَ ءَامَنَّا بِهِۦ كُلٌّ مِّنْ عِندِ رَبِّنَا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّآ أُولُوا الْأَلْبٰبِ ★ رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً ۚ إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ
“তিনিই তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যার কতক আয়াত ‘মুহ্কাম’ (সুস্পষ্ট), এগুলো কিতাবের মূল; আর অন্যগুলো ‘মুতাশাবিহাত’ (অস্পষ্ট/রূপক); যাদের অন্তরে সত্য-লংঘন প্রবণতা রয়েছে শুধু তারাই ফিত্না এবং ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে মুতাশাবিহাতের অনুসরণ করে। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর তারা বলে, আমরা এতে বিশ্বাস করি, সমস্তই আমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে আগত; এবং বোধশক্তি সম্পন্নরা ব্যতীত অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না। হে আমাদের রব! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা।” [সূরা আলি ‘ইমরান ৩: ৭-৮]
এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ্ আমাদের জানিয়ে দিচ্ছেন যে তাঁর নীতি অনুযায়ী মানুষকে দু’ভাগে ভাগ করেছেনঃ
♦ ঐ সমস্ত মানুষ যারা বিজ্ঞ এবং দৃঢ় বিশ্বাসীঃ
তারা ইহাকে (আল-কুর’আন) গ্রহণ করে এবং এর সব কিছুতে পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে। তারা সমন্বয় সাধন করে সাধারণের সাথে অসাধারণের, সসীমের সাথে অসীমের, এবং বিস্তারিতের সাথে সংক্ষিপ্তের। যদি তারা কোন বিষয়ে না জানে তাহলে তারা তা আল্লাহ্ প্রদত্ত সুদৃঢ় মূলনীতির দিকে ফিরে আসে।
♦ ঐ সমস্ত মানুষ যারা পথভ্রষ্ট ও ভুলের মধ্যে আছেঃ
এইসব মানুষ আল-কুর’আনের যে সব আয়াত অস্পষ্ট তার অনুসরণ করে থাকে। এরা এ কাজ করে ফিত্না ছড়ানোর উদ্দেশ্যে। এরা যা স্পষ্ট ও বোধগম্য তার অনুসরণ করে না। এদের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো ওরা যারা গণতন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে এবং সংসদ বা আইনসভা প্রতিষ্ঠা করেছে। এর সমথর্করা ভ্রান্ত পথের অনুসরণ করে থাকে এবং এরাই অধিক ভুল করে। ওরা কিছু আয়াত নেয় এবং তা সুস্পষ্ট আয়াত, মূলনীতি ও ব্যাখ্যার সাথে সম্বনয় না করে গ্রহণ করে সত্যের সাথে মিথ্যার; আর আলোর সাথে অন্ধকারের সংমিশ্রণ ঘটানোর জন্যে।
অতঃপর, এখন আমরা ওদের কিছু ভ্রান্ত যুক্তি নিয়ে আলোচনা করব আল্লাহর সাহায্যে, যিনি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, স্রষ্টা, পুনরুত্থানকারী ও অবাধ্য জনগোষ্টিকে পরাভ‚তকারী, তাদের যুক্তিগুলো খন্ডন করে সেগুলোর জবাব দেয়ার চেষ্টা করবো।
প্রথম অযৌক্তিক অজুহাতঃ
ইউসুফ (আ.) মিশরের রাজার পক্ষে কাজ করেছিলেন বা তার মন্ত্রী ছিলেন এই যুক্তিটি ঐসব গোঁড়ামিপূর্ণ লোকেরা দিয়েছিল যাদের গণতন্ত্রের পক্ষে অন্য কোন দলিল ছিল না। তারা বলতঃ ইউসুফ (আ.) কি ঐ রাজার পক্ষে কাজ করেনি যে আল্লাহর শরীয়ত অনুযায়ী শাসনকার্য পচিালনা করত না? সুতরাং, তাদের মতে, কাফির সরকারের সাথে যোগ দেয়া এবং সংসদে বা আইনসভায় যোগ দেয়া এবং এই ধরনের লোকদের ভোট দেয়া বৈধ। ([14]) তাদের এই যুক্তির জবাবে যা কিছু বলব, তার সব ভাল আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং সব মন্দ আমার ও শয়তানের পক্ষ থেকে।
প্রথমতঃ ঐসমস্ত লোকেরা আইন সভায় বা সংসদে যোগদানকে বৈধ করার জন্যে যে যুক্তি দেয় তা অসত্য এবং ভ্রান্ত কারণ এই সংসদ এমন সংবিধানের উপর নির্ভরশীল যা আল্লাহর দেয়া বিধান বা সংবিধান নয়; অধিকন্তু—তা গণতন্ত্রের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত যা মানুষের খেয়াল-খুশি অনুযায়ী কোন কিছুকে হালাল (বৈধ) বা হারাম (অবৈধ) করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে, মহান আল্লাহর নির্দেশের কোন পরোয়া করেনা। আল্লাহ্ বলছেনঃ
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلٰمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِى الْءَاخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِينَ
“কেউ যদি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চায় তবে তা কখনও কবুল করা হবে না এবং সে হবে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।” [সূরা আলি ইমরান ৩: ৮৫]
সুতরাং, কেউ কি এমন দাবী করতে পারবে যে ইউসুফ (আ.) এমন কোন দ্বীন বা বিধানের অনুসরণ করেছিলেন যা আল্লাহ প্রদত্ত নয়? অথবা এমন কোন দ্বীনের অনুসরণ করেছিলেন যা তাঁর একত্ববাদী পূর্বপুরুষদের দ্বীন নয়? অথবা তিনি কি অন্য কোন জীবন ব্যবস্থাকে সম্মান করার জন্যে শপথ নিয়েছিলেন অথবা সেই অনুসারে কি দেশ পরিচালনা বা শাসন করেছেন-যে রূপ, আজ যারা সংসদ দ্বারা বিমোহিত, যেরূপে বর্তমানে তারা শাসন পরিচালনা করছে? তিনি তাঁর দুর্বলতার সময়ে বলেছিলেনঃ
قَالَ لَا يَأْتِيكُمَا طَعَامٌ تُرْزَقَانِهِۦٓ إِلَّا نَبَّأْتُكُمَا بِتَأْوِيلِهِۦ قَبْلَ أَن يَأْتِيَكُمَا ۚ ذٰلِكُمَا مِمَّا عَلَّمَنِى رَبِّىٓ ۚ إِنِّى تَرَكْتُ مِلَّةَ قَوْمٍ لَّا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَهُم بِالْءَاخِرَةِ هُمْ كٰفِرُونَ ★ وَاتَّبَعْتُ مِلَّةَ ءَابَآءِىٓ إِبْرٰهِيمَ وَإِسْحٰقَ وَيَعْقُوبَ ۚ مَا كَانَ لَنَآ أَن نُّشْرِكَ بِاللَّهِ مِن شَىْءٍ ۚ ذٰلِكَ مِن فَضْلِ اللَّهِ عَلَيْنَا وَعَلَى النَّاسِ وَلٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُونَ
“যে সম্প্রদায় আলাহ্কে বিশ্বাস করে না ও আখিরাতে অবিশ্বাসী, আমি তাদের মতবাদ বর্জন করছি। আমি আমার পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম, ইসহাক এবং ইয়াকুবের মতবাদের অনুসরণ করি। আল্লাহর সাথে কোন বস্তুকে শরীক করা আমাদের কাজ নয়। এটা আমাদের ও সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। [সূরা ইউসুফ ১২: ৩৭-৩৮]
এবং তিনি আরও বলেছিলেনঃ
يٰصٰىحِبَىِ السِّجْنِ ءَأَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُونَ خَيْرٌ أَمِ اللَّهُ الْوٰحِدُ الْقَهَّارُ ★ مَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِهِۦٓ إِلَّآ أَسْمَآءً سَمَّيْتُمُوهَآ أَنتُمْ وَءَابَآؤُكُم مَّآ أَنزَلَ اللَّهُ بِهَا مِن سُلْطٰنٍ ۚ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ۚ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوٓا إِلَّآ إِيَّاهُ ۚ ذٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
“হে কারা সঙ্গীরা ভিন্ন ভিন্ন বহু প্রতিপালক শ্রেয় না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ্? তাঁকে ছেড়ে তোমরা কেবল কতগুলো নামের ইবাদত করছো, যেই নাম তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরা রেখেছো, এইগুলোর কোন প্রমাণ আল্লাহ পাঠান নাই। বিধান দেবার অধিকার কেবল আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন তাঁকে ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত না করতে, এটাই হলো সরল দ্বীন কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এই ব্যাপারে অবগত নয়।” [সূরা ইউসুফ ১২: ৩৯-৪০]
কিভাবে এটা সম্ভব যে তিনি যখন শক্তিহীন ছিলেন তখন প্রকাশ্যে এই কথাটি বলেছিলেন আর যখন তিনি ক্ষমতা পেলেন তা গোপন করে ছিলেন বা তার বিপরীত কাজ করেছিলেন? এর জবাব কি দিবে, হে! যারা এই মিথ্যা দাবীতে
বিশ্বাসী। হে রাজনৈতিক নেতারা, আপনি কি জানেন না, যে মন্ত্রণালয় (যেখানে প্রধানমন্ত্রী এবং অন্য মন্ত্রীদের মন্ত্রীপরিষদ রয়েছে) হলো একটি কার্য নির্বাহী কর্তৃপক্ষ (যারা কর্ম সম্পাদনের জন্যে ক্ষমতা প্রাপ্ত) এবং সংসদ হলো একটি আইন প্রণয়নকারী কর্তৃপক্ষ (যাদের কাজ আইন প্রণয়ন করা) এবং এই দু’য়ের মাঝে অনেক পার্থক্য রয়েছে? এই দু’য়ের মধ্যে আদৌ কোন তুলনা সম্ভব নয়।
এখন, আপনি অবশ্যই নিশ্চিত যে ইউসুফ (আ.) ঘটনা সংসদে যোগদান করার জন্যে কোন বৈধ যুক্তি হতে পারে না। অধিকন্তু, এই বিষয়টি আরো একটু আলোচনা করা যাক এবং আমরা এটাও বলতে পারি যে, এই ঘটনাকে মন্ত্রণালয়ে যোগদানের জন্যে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না কারণ, সংসদ ও মন্ত্রণালয়ে যোগ দেয়া উভয়ই কুফরীতে লিপ্ত হওয়ার শামিল।
দ্বিতীয়তঃ ইউসুফ (আ.) এর কাজের সাথে গণতন্ত্রের সেবকব বাতিল রাষ্ট্রের, মন্ত্রীসভায় অংশগ্রহণকারীদের তুলনা করা যায় না যারা আল্লাহর পাশাপাশি বিধান দেয় এবং আল্লাহর দ্বীনের অনুসারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং তাঁর শত্রুদের সাহায্য করে। এটা বাতিল এবং অযৌক্তিক তুলনা, এর কারণ হচ্ছেঃ
(১)- যে কেউ ঐ সমস্ত সরকারের মন্ত্রিপরিষদে অংশগ্রহণ করে, যেখানে আল্লাহর বিধান বা শরীয়তকে প্রয়োগ করা হয় না, তাদেরকে অবশ্যই মানুষের তৈরী সংবিধানকে গ্রহণ করতে হয় এবং আনুগত্য ও একনিষ্ঠতা প্রর্দশন করতে হয় সেই সব ত্বাগুতের প্রতি যাদের সাথে কুফরী (অস্বীকার) করার আদেশ আল্লাহ একেবারে প্রথমেই দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ ءَامَنُوا بِمَآ أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوٓا إِلَى الطّٰغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوٓا أَن يَكْفُرُوا بِهِۦ وَيُرِيدُ الشَّيْطٰنُ أَن يُضِلَّهُمْ ضَلٰلًۢا بَعِيدًا
“… তারা ত্বাগুতের কাছে বিচার প্রার্থী হতে চায়, যদিও ওদেরকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” [সূরা নিসা ৪: ৬০]
তাদেরকে অবশ্যই মন্ত্রিপরিষদে ঢোকার পূর্বেই এই কুফরী সংবিধানকে সমুন্নত রাখার জন্যে সরাসরি শপথ করতে হয় যে রূপ সংসদে অংশ গ্রহণের সময় বলতে হয়। [15]
যে এই দাবী করবে যে ইউসুফ (আ.) যিনি ছিলেন বিশ্বাসযোগ্য, মহান এক ব্যক্তির সন্তান, ঐরকম করেছেন (কুফরী করেছে) যদিও আল্লাহ তাঁকে পরিশুদ্ধ করেছিলেন এবং তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, “আমি তাঁকে মন্দ কর্ম ও অশ্লীলতা হতে বিরত রাখার জন্য এইভাবে নিদর্শন দেখিয়ে ছিলাম। সে তো ছিল আমার বিশুদ্ধ চিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।” [16]
ইউসুফ (আ.) সম্পর্কে জেনে বুঝে কেউ মিথ্যা আরোপ করলে সেই ব্যক্তি একজন কাফির হয়ে যাবে, সে হবে নিকৃষ্ট লোকদের একজন এবং সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। সে ইবলিসের চেয়েও বেশি নিকৃষ্ট হয়ে যাবে, যখন আল্লাহর সম্মতি নিয়ে সে শপথ করে এই বলেছিল,
قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ ★ إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ
“আপনার ক্ষমতার শপথ! আমি ওদের সকলকেই পথভ্রষ্ট করব, তবে তাদের মধ্যে আপনার একনিষ্ঠ বান্দাদের ব্যতীত।” [সূরা সাদ ৩৮: ৮২-৮৩]
ইউসুফ (আ.) প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ তা‘আলার একজন মনোনীত বান্দা ও মানব জাতির একজন মহান নেতা।
(২)- যে এই সমস্ত সরকারের মন্ত্রীসভায় যোগ দেয়, সে সাংবিধানিক ভাবে শপথ গ্রহণ করুক বা না করুক, সে মানুষের তৈরী বিধানের আনুগত্য করতে এবং পরিপূর্ণ ভাবে তা মেনে নিতে বাধ্য। সে তখন ঐ মতবাদের একজন আন্তরিক দাস ও একান্ত বাধ্যগত সেবকে পরিণত হয় যে মতবাদ মিথ্যা, অধর্ম, অন্যায়, নাস্তিকতা এবং কুফরী দ্বারা মিশ্রিত।
ইউসুফ (আ.) যিনি আল্লাহর প্রেরিত নবী ছিলেন, তিনি কি সেরূপ হতে পারেন? তার কাজকে কি আমরা কাফিরদের মধ্যে যোগ দানের সাথে তুলনা করব? যে কেউ আল্লাহর নবী ইউসুফ (আ.); যিনি আল্লাহর নবীর ছেলে ও আল্লাহর নবীর দৌহিত্র; তাকে এমন কোন ব্যাপারে অভিযুক্ত করবে যে, তার কার্যক্রম ছিল আজকের এই কুফরী মতবাদ- গণতন্ত্রের দাসদের মত তাহলে সেই ব্যক্তির কুফরী সম্পর্কে আমাদের কোন সন্দেহই থাকবে না এবং সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। সে একজন অবিশ্বাসী হয়ে যাবে কারণ আল্লাহ বলেনঃ “প্রত্যেক জাতির কাছে আমি একজন নবী পাঠিয়ে ছিলাম এই কথা বলার জন্যে, ‘আল্লাহর ইবাদত কর এবং সমস্ত ত্বাগুত থেকে দূরে থাক’।” [17]
এটাই ছিল ইউসুফ (আ.) এবং সমস্ত নবীদের (আ.) সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। তাহলে, এটা কি আদৌ সম্ভব যে তিনি মানুষকে আল্লাহর হুকুমের দিকে ডেকেছেন দু’সময়েই – যখন তিনি ক্ষমতাশীল ছিলেন এবং যখন তিনি দুর্বল ছিলেন; তারপর তিনি আল্লাহর হুকুমের বিরোধিতা করে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হলেন অথচ আল্লাহ তার ব্যাপারে বর্ণনা করেছেন তার একজন পরিশুদ্ধ, একনিষ্ঠ বান্দা হিসেবে? কিছু মুফাস্সিরীন ([18]) বলেছেন এই আয়াত ([19]) হচ্ছে একটি দলিল যে, ইউসুফ (আ.) রাজার আইন ও নিয়ম-কানুন প্রয়োগ করেননি এবং তাকে তা মানতে বা প্রয়োগ করতে বাধ্য করা হয়নি। বর্তমানে ত্বাগুতের মন্ত্রীপরিষদ বা তাদের সংসদ কি ঐভাবে পরিচালিত যেভাবে ইউসুফ (আ.)-এর সময় পরিচালিত হত? একজন মন্ত্রী কি ঐভাবে দেশের প্রচলিত আইনের বিরোধী কাজ করতে স্বাধীন? যদি তা না হয়, তাহলে এই দু’য়ের মধ্যে কোন তুলনা চলে না।
(৩)- ইউসুফ (আ.) মন্ত্রীসভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন আল্লাহর সাহায্যে। আল্লাহ বলেনঃ
وَكَذٰلِكَ مَكَّنَّا لِيُوسُفَ فِى الْأَرْضِ يَتَبَوَّأُ مِنْهَا حَيْثُ يَشَآءُ ۚ نُصِيبُ بِرَحْمَتِنَا مَن نَّشَآءُ ۖ وَلَا نُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ
“এইভাবেই ইউসুফকে আমি সেই দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম।” [সূরা ইউসুফ ১২: আয়াত ৫৬]
সুতরাং, এটাই হচ্ছে আল্লাহর দেয়া কর্তৃত্ব, কোন ব্যক্তি বা রাজার ক্ষমতা ছিল না তাকে আঘাত করার বা তাকে সেই কর্তৃত্ব থেকে অপসারণ করার, যদিও তিনি রাজা এবং তার বিধান ও বিচার ব্যবস্থার বিরূদ্ধাচরণ করেছিলেন। ইউসুফ (আ.)-কে ক্ষমতা এবং কর্তৃত্ব দেয়া হলেও, কিভাবে এই সব নিকৃষ্ট ও মন্দ লোকগুলোকে, যারা ত্বাগুতের সরকারের বড় বড় পদে আসীন, তাঁর সাথে তুলনা করা যায়, যিনি একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করতেন?
(৪)- ইউসুফ (আ.) রাজার কাছ থেকে সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব নিয়েই মন্ত্রী পরিষদে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আল্লাহ বলছেনঃ
وَقَالَ الْمَلِكُ ائْتُونِى بِهِۦٓ أَسْتَخْلِصْهُ لِنَفْسِى ۖ فَلَمَّا كَلَّمَهُۥ قَالَ إِنَّكَ الْيَوْمَ لَدَيْنَا مَكِينٌ أَمِينٌ
“অতঃপর রাজা যখন তাঁর সাথে কথা বলল, তখন রাজা বলল, ‘নিশ্চয়ই, আজ তুমি আমাদের নিকট বিশ্বস্ত হিসাবে মর্যাদার স্থান লাভ করেছ’।” [সূরা ইউসুফ ১২: ৫৪]।
তাকে কোন প্রকার শর্ত বা সীমাবদ্ধতা ছাড়াই মন্ত্রী পরিষদ পরিচালনা করার জন্যে সম্পূর্ণ ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল।
وَكَذٰلِكَ مَكَّنَّا لِيُوسُفَ فِى الْأَرْضِ يَتَبَوَّأُ مِنْهَا حَيْثُ يَشَآءُ ۚ نُصِيبُ بِرَحْمَتِنَا مَن نَّشَآءُ ۖ وَلَا نُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ
“এইভাবেই ইউসুফকে আমি সে দেশে প্রতিষ্ঠত করেছিলাম; তিনি সেই দেশে যথা ইচ্ছা স্থান করে নিতে পারতেন”। [সূরা ইফসুফ ১২: ৫৬]
তার কোন প্রতিপক্ষ ছিল না, কেউ তাকে তার কাজের জন্যে প্রশ্ন করার ছিল না।
এখনকার ত্বাগুতের মন্ত্রীদের কি এমন কোন কিছু আছে যা এক্ষেত্রে তুলনা যোগ্য? যদি মন্ত্রী এমন কিছু করেন যা রাষ্ট্রপ্রধান, রাজা বা রাজপুত্রের দ্বীন বা দেশের সংবিধানের বিরোধী, তাহলে তাকে মন্ত্রণালয় থেকে বরখাস্ত করা হবে।
তাদের মতে মন্ত্রী হলেন রাষ্ট্রপ্রধান, রাজা বা রাজপুত্রের ইচ্ছা, তাদের নীতি বা প্রজাতন্ত্রের দাস এবং তাকে তা অবশ্যই মানতে হবে। সে কখনই রাষ্ট্রপ্রধান বা রাজার হুকুমকে অথবা সংবিধানকে অমান্য করতে বা এর অবাধ্য হতে পারবে না, যদিও তা আল্লাহর হুকুমের এবং তাঁর দ্বীনের (ইসলামের) বিরোধী হয়। যে কেউ বর্তমান অবস্থাকে ইউসুফ (আ.) এর অবস্থার মতই বলে দাবী করবে, সে নিজের অপরিসীম ক্ষতি করবে। সে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে একজন কাফির বলে বিবেচিত হবে এবং ইউসুফ (আ.)-কে আল্লাহ যে পরিশুদ্ধ করেছেন তাতে অবিশ্বাসী বলে বিবেচিত হবে। যেহেতু বর্তমান অবস্থা ইউসুফ (আ.) এর মত নয়, তাই এই দু’য়ের মধ্যে তুলনা করা উচিৎ নয়। সুতরাং ত্বাগুতদেরকে তাদের নির্বোধ কথাবার্তা এবং কূটতর্ক এখানেই ত্যাগ করতে হবে।
তৃতীয়তঃ এই মিথ্যা যুক্তিকে খন্ডন করার আরেকটি মারাত্মক অস্ত্র হচ্ছে, যে কোন কোন মুফাস্সিরীনের মতে সেই রাজা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। ইবন আব্বাস (রা.)-এর ছাত্র মুজাহীদ (রহ.) তা বর্ণনা করেছেন। সুতরাং এই প্রমাণই এ ঘটনাকে ব্যবহার করার সকল যুক্তিকে বাতিল করে দেয়। আমরা আল্লাহতে বিশ্বাস রাখি এবং বিশ্বাস করি যে, তাঁর কোন সৃষ্টির কথা অথবা ব্যাখ্যা, যার কোন দলিল ও প্রমাণ নেই, তার চেয়ে আল্লাহর কিতাবের আক্ষরিক অর্থের আনুগত্য করা আরও বেশী যথার্থ। ইউসুফ (আ.) সম্পর্কে আল্লাহর কথাই আমাদের জন্যে সুদৃঢ় প্রমাণঃ
وكذلك مكنا لیوسف في الأرض
“সুতরাং এইভাবেই ইউসুফকে আমি সেই দেশে প্রতিষ্ঠিত করিলাম”। [সূরা ইউসুফ ১২: ২১]
আল্লাহ্ আল-কুর’আনে অন্য এক জায়গায় এই বিষয়ের সারমর্ম বর্ণনা করেছেন। তিনি ঈমানদারদের অবস্থান বর্ণনা করছেন যখন তাদেরকে তিনি কোন ভূমিতে কর্তৃত্ব দেনঃ
الَّذِينَ إِن مَّكَّنّٰهُمْ فِى الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَءَاتَوُا الزَّكٰوةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ ۗ وَلِلَّهِ عٰقِبَةُ الْأُمُورِ
“আমি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে এবং সৎকার্যের নির্দেশ দিবে ও অসৎকার্যের নিষেধ করবে; আর সকল কাজের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে”। [সূরা হাজ্জ ২২: ৪১]
আমাদের এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ইউসুফ (আ.) তাদের মধ্যে একজন। শুধু তাই নয় তিনি তাদের মধ্যেও একজন মহান নেতা, যাদেরকে আল্লাহ পৃথিবীতে ক্ষমতা দিলে তারা সৎকাজের আদেশ করে এবং অসৎ কাজের নিষেধ করে। যারাই ইসলাম সম্পর্কে জানে তাদের কারও কোন সন্দেহ নেই যে ইসলামের সর্বোৎকৃষ্ট বিষয় হল তাওহীদ (আল্লাহর একত্ববাদ), যা ছিল ইউসুফ (আ.)-এর দাওয়াতের মূল বাণী এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ হচ্ছে আল্লাহর সাথে অংশীদারীত্ব (শিরক) যেই ব্যাপারে ইউসুফ (আ.) সতর্ক করেছিলেন, ঘৃণা করেছিলেন এবং অংশীদারীত্ববাদের মিথ্যা প্রভুদের ও দেবতাদের আঘাত করেছিলেন। অবশ্যই সুনিশ্চিত নিদর্শন আছে যে, আল্লাহ যখন ইউসুফ (আ.)-কে ক্ষমতা দান করেছিলেন, তিনি তাঁর পিতৃপুরুষ, ইয়াকুব (আ.) ও ইবরাহিম (আ.)-এর দ্বীনের অনুসরণ করেছিলেন এবং মানুষকে সেদিকে আহ্বান করেছিলেন এবং যারা এই দাওয়াতের বিরুদ্ধাচরণ করত বা অসম্মতি প্রকাশ করত তাদের প্রত্যেককেই আক্রমন করেছিলেন। তিনি আল্লাহর শরীয়ত পরিত্যাগ করেননি। তিনি আল্লাহর শরীয়ত বা বিধান প্রতিষ্ঠিত না করার ক্ষেত্রে কাউকে সাহায্য করেননি। তিনি কোন বিধানদাতা (যারা আল্লাহর আইন বিরোধী বিধান প্রতিষ্ঠা করে) বা কোন ত্বাগুতদের সাহায্য করেননি। তিনি তাদেরকে এরূপ সাহায্য করেননি যে রূপ বর্তমান সময়ের ক্ষমতার দাসে পরিণত হওয়া মানুষেরা করছে। তিনি তাদের সাথে আইন প্রণয়নে অংশ গ্রহণ করেননি যে রূপ আজকের মোহগ্রস্থ লোকগুলো সংসদে করছে। তিনি তাদের আচার-আচারণ এবং কর্মপন্থা অস্বীকার ও বর্জন করেছিলেন। তিনি তাদের খারাপ কাজগুলোকে পরিবর্তন করেছিলেন। তিনি আল্লাহর একত্ববাদের দিকে মানুষকে ডেকেছিলেন এবং তাদেরকে আক্রমন করেছিলেন যারা এর বিরোধিতা করেছিল, যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন। যে কেউ এমন বিশ্বাসযোগ্য, সম্মানজনক, মহৎ ব্যক্তিদের সন্তানের নামে এমন কিছু বর্ণনা দেয় যা আল্লাহর দেয়া বর্ণনা থেকে ভিন্ন, তাহলে সে পবিত্র ইসলাম থেকে বের হয়ে একজন অপবিত্র কাফিরে পরিণত হবে। এই ব্যাপারে অপর একটি দলিল হচ্ছে আল্লাহর এই কথার ব্যাখ্যাঃ
وَقَالَ الْمَلِكُ ائْتُونِى بِهِۦٓ أَسْتَخْلِصْهُ لِنَفْسِى ۖ فَلَمَّا كَلَّمَهُۥ قَالَ إِنَّكَ الْيَوْمَ لَدَيْنَا مَكِينٌ أَمِينٌ
“রাজা (যখন এই ব্যাপারটি শুনল সে) বলল, ‘ইউসুফকে আমার নিকট নিয়ে আসো, আমি তাকে আমার একান্ত সহচর নিযুক্ত করব’, যখন সে (রাজা) তাঁর [ইউসুফ (আ.)] সাথে কথা বলল, সে বলল, ‘নিশ্চয়ই, আজ তুমি আমাদের নিকট বিশ্বস্ত হিসাবে মর্যাদার স্থান লাভ করেছ’।” [সূরা ইউসুফ ১২: ৫৪]
কেউ কি চিন্তা করতে পারে রাজার সাথে ইউসুফ (আ.) কি বিষয়ে কথা বলেছিলেন; তিনি কি রাজাকে তাকে ভালবাসার জন্যে, তাকে ক্ষমতা দেয়ার জন্যে, তাকে বিশ্বাস করার এবং তার প্রতি আস্থা রাখার ব্যাপারে কথা বলেছিলেন? তিনি কি মন্ত্রী, আল-আজিজ, এর স্ত্রীর ঘটনার ব্যাপারে কথা বলেছিলেন, যেই ঘটনার সমাপ্তি হয়েছিল সকলের কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার মাধ্যমে? অথবা তিনি কি জাতীয় ঐক্য এবং অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে কথা বলেছিলেন? বা অন্য কোন ব্যাপার নিয়ে? কেউই এমন দাবী করতে পারবে না যে তার অদৃশ্যের জ্ঞান আছে অথবা কেউ প্রমাণ ছাড়া কোন কথা বলতে পারেন না। যদি সে তা করে, সে একজন মিথ্যাবাদী হয়ে যাবে। কিন্তু এই আয়াত “যখন সে তাঁর সাথে কথা বলেছিল …” এর ব্যাখ্যা নিম্নোক্ত আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, “আল্লাহ্ ইবাদত করার ও ত্বাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেয়ার জন্য আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি।” [সূরা নাহল ১৬: ৩৬]
এবং আল্লাহ্ বলেন,
وَلَقَدْ أُوحِىَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخٰسِرِينَ
“তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবশ্যই এই প্রত্যাদেশ হচ্ছে যে, তুমি আল্লাহর সাথে শরীক স্থির করলে তোমার সমস্ত আমল নিস্ফল হবে এবং অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে” [সূরা-যুমার ৩৯: ৬৫]।
এবং তাঁর কথার মাধ্যমে ইউসুফ (আ.)-এর দাওয়াত সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজের বর্ণনা পাওয়া যায়, “যে সম্প্রদায় আলাহ্কে বিশ্বাস করে না এবং আখিরাতে অবিশ্বাসী আমি তাদের মতবাদ বর্জন করেছি। আমি আমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসহাক এবং ইয়াকুবের মতবাদ অনুসরণ করি, কোন বস্তুকে আল্লাহর সাথে শরীক করা আমাদের কাজ নয়।” [সূরা-ইউসুফ ১২: ৩৭-৩৮]
এবং তাঁর বক্তব্য, “হে কারা সঙ্গীরা ভিন্ন ভিন্ন বহু প্রতিপালক শ্রেয় না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ্? তাঁকে ছেড়ে তোমরা কেবল কতগুলো নামের ইবাদত করছো, যেই নাম তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরা রেখেছো, এইগুলোর কোন প্রমাণ আল্লাহ্ পাঠান নাই। বিধান দেবার অধিকার কেবল আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন তাঁকে ব্যাতীত অন্য কারও ইবাদত না করতে, এটাই সরল দ্বীন কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এই ব্যাপারে অবগত নয়”। [সূরা-ইউসুফ ১২: ৩৯-৪০]
অতএব, এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এটাই ইউসুফ (আ.)-এর মহান বক্তব্য কারণ, এটি তাঁর মহামূল্যবান জীবন ব্যবস্থা (দ্বীন) এবং এটিই তাঁর দাওয়াতের, তাঁর দ্বীন এবং তাঁর পিতৃপুরুষদের দ্বীনের ভিত্তি। যদি তিনি কোন অসৎ কাজের নিষেধ করে থাকেন, তাহলে তার মধ্যে শিরকের চেয়েও অধিক কোন খারাবি হতে পারেনা যা তা এই মূলনীতির (তাওহীদের) বিরোধিতা করে থাকে। যদি এটা সত্য বলে গৃহীত হয় এবং তাঁর প্রতি রাজার উত্তর হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই, আজ তুমি আমাদের নিকট বিশ্বস্ত হিসাবে মর্যাদার স্থান লাভ করেছ’, তাহলে এটা সুস্পষ্ট প্রমাণ যে, রাজা তাকে অনুসরণ করেছিল, তার সাথে এক মত হয়েছিল, শিরকী জীবন ব্যবস্থা (দ্বীন) পরিত্যাগ করেছিল এবং ইবরাহীম, ইসহাক, ইয়াকুব ও ইউসুফ (আ.)-এর দ্বীনের অনুসরণ করেছিল। ধরে নেই যে, অন্তত রাজা ইউসুফ (আ.) ও তার পিতার তাওহীদ ও দ্বীন যে সঠিক সে ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছিল। সে তাকে বলার স্বাধীনতা, তার দ্বীনের দিকে আহ্বান করার অনুমতি এবং যারা এর বিরোধী তাদের আক্রমন করার অনুমতি দিয়েছিল। এবং রাজা তাকে কোন বাধা দেয়নি এই কাজগুলো করার জন্যে, না তাকে তার দ্বীনের বিপরীত কোন কিছু করার জন্যে আদেশ করেছিল। তাহলে ইউসুফ (আ.)-এর অবস্থা ও আজকে যারা ত্বাগুতের প্রতি মোহগ্রস্থ হয়ে আছে, আর যারা তাদের সাহায্য করছে সংসদে আইন প্রণয়নে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে, তাদের অবস্থার মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে।
চতুর্থতঃ যদি আপনি উপরোক্ত সব কিছু জানেন, তাহলে আপনি নিশ্চিত যে, ইউসুফ (আ.)-এর মন্ত্রনালয়ে অংশগ্রহণ একত্ববাদের সাথে সাংঘর্ষিক ছিল না এবং ইবরাহীম (আ.)-এর দ্বীনের সাথেও সাংঘর্ষিক ছিল না। কিন্তু বর্তমান সময়ের ত্বাগুতের মন্ত্রনালয়ে অংশগ্রহণ তাওহীদের সাথে সাংঘর্ষিক। ধরে নেই, রাজা ইসলাম গ্রহণ করেনি এবং কাফেরই ছিল। তারপরও ইউসুফ (আ.)-এর শাসন ভার গ্রহণ করা একটা ছোট বিষয়, এটা প্রধান বিষয় হতে পারে না কারণ এটা হয়তোবা দ্বীনের উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক ছিল না। কারণ ইউসুফ (আ.) কোন প্রকার কুফরী বা শিরক করেননি। তিনি কাফেরদের অনুসরণ করেননি অথবা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারও বিধান মেনে নেননি। তিনি মানুষকে তাওহীদের দিকে ডেকে ছিলেন। শরীয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহ্ বলছেনঃ
لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنكُمْ شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا ۚ
“আমি তোমাদের প্রত্যেককে একটি শরী’আত ও একটি স্পষ্ট পথ এবং একটি জীবন পদ্ধতি দিযেছি।” [সূরা মায়িদা ৫: ৪৮]
এমন কি নবীদের শরীয়াহ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে কিন্তু তারা সবাই তাওহীদের ক্ষেত্রে এক। রাসূল মুহাম্মদ ﷺ বলেন,
نحن معاشرَ الأنبیاء إخوةٌ لعلات دیننا واحد
“আমরা (নবীরা) একে অপরের ভাই যাদের পিতা একজনই কিন্তু মাতা ভিন্ন ভিন্ন, আমাদের দ্বীনও একই।” ([20])
তিনি বুঝিয়েছেন যে তাদের সকলেই তাওহীদের ক্ষেত্রে এক ছিলেন এবং দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ে এবং শরীয়ার ক্ষেত্রে ভিন্নতা ছিল। সুতরাং কোন একটা জিনিস আমাদের জন্যে পূর্বের কোন আইন অনুসারে অবৈধ হতে পারে কিন্তু আমাদের শরীয়ায় তা বৈধ হতে পারে যেমন গণীমতের মাল অথবা বিপরীতটাও সত্য হতে পারে অথবা তা পূর্বে জাতিদের জন্যে নিষিদ্ধ ছিল কিন্তু আমাদের জন্যে বৈধ। সুতরাং অতীতের সমস্ত আইনই আমাদের আইন নয়, বিশেষত যখন তা আমাদের শরীয়ার সাথে সাংঘর্ষিক (পরস্পরবিরোধী) হয়। এরূপ একটি সাংঘর্ষিকতার নিদর্শনস্বরূপ বলা যায়, যা ইউসুফ (আ.)-এর জন্য বৈধ ছিল, তা আমাদের জন্য
অবৈধ। ইবন হিব্বান তার বইতে এবং আবূ ইয়ালা এবং আত্-তাবারানীতে বর্ণনা করেন যে রাসূল মুহাম্মদ ﷺ বলেছেন,
لیأتین علیكم أُمراء سفھاء یقربون شرار النّاس، ویُؤخرون الصلاة عن مواقیتھا، فمن
أدرك ذلك منكم فلا یكونن عریفًا، ولا شرطیاً، ولا جابیاً، ولاخازنا
“অপরিণতমনস্ক ব্যক্তি শাসক হিসেবে তোমদের কাছে আসবে এবং সবচেয়ে খারাপ কাজটি করবে, খারাপ লোকেরা হবে তার সঙ্গী এবং তারা সালাত বিলম্বে আদায় করবে। তোমাদের মধ্যে যারাই তা অনুধাবন করবে, তারা যেন তাদের উচ্চ পদে আসীন না হয় বা তাদের কর্মচারী না হয় অথবা তাদের সংগ্রহকারী অথবা কোষাধ্যক্ষ না হয়।”
এখানে যা বোঝানো হয়েছে তা হচ্ছে এই শাসক কাফের নয় কিন্তু তারা হবে অসৎ চরিত্রের এবং নির্বোধ। একজন সতর্ককারী সাধারণত সবচেয়ে বড় অন্যায় এবং গর্হিত কাজ সম্পর্কে সতর্ক করে। তাই, যদি তারা কাফের হতো, তাহলে রাসূল ﷺ তা উল্লেখ করতেন। কিন্তু তাদের সবচেয়ে খারাপ কাজ যা রাসূল ﷺ এখানে
উলেখ করেছেন তা হচ্ছে তারা সবচেয়ে খারাপ লোকদেরকে বন্ধু বানাবে এবং সালাতে শৈথিলতা প্রকাশ করবে। এরই কারণে নবী মুহাম্মদ ﷺ আমাদের কাউকে তাদের কোষাধ্যক্ষ বা মন্ত্রী হতে অনুমতি দেননি। সুতরাং যদি আমাদের আইনে অত্যাচারী শাসকের কোষাধ্যক্ষ বা মন্ত্রী হিসেবে কাজ করা নিষিদ্ধ এবং অবৈধ, তবে কিভাবে একজন কাফের রাজা এবং মুশরিক শাসকের মন্ত্রী হিসাবে কাজ করা বৈধ হবে?
قال اجعلني على خزائن الأرض إني حفیظٌ علیم
“আমাকে দেশের ধনভান্ডারের উপর কর্তৃত্ব প্রদান করুন, আমি তো উত্তম রক্ষক, সুবিজ্ঞ।” [সূরা ইউসুফ ১২: ৫৫]
এটা সত্য এবং সুনিশ্চিত ভাবে প্রমাণিত যে এটা পূর্ববতী লোকদের দ্বীনের সাথে সংশিষ্ট এবং এটাকে আমাদের আইনে বাতিল করা হয়েছে এবং আল্লাহই ভাল জানেন। এটাই পর্যাপ্ত হওয়া উচিত তার জন্যে যে হেদায়াত চায় কিন্তু যে তার নিজের চিন্তাভাবনা, মানুষের মতামত এবং কথাকে দলিল এবং প্রমাণ থেকে বেশি প্রাধান্য দেয়- সে সুনিশ্চিতভাবে হেদায়াত পাবে না।
ومن یرد الله فتنته فلن تملك له من االله شیئاً…
“আল্লাহ্ যাকে পথ দেখান না তার জন্য আল্লাহর নিকট তোমার কিছুই করার নেই।” [সূরা মায়িদা ৫: ৪১]
পরিশেষে, এই অসার, অমূলক যুক্তি সম্পর্কে কথা শেষ করার আগে আমরা কিছু মোহগ্রস্থ ব্যক্তিদের ভ্রান্তি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দিতে চাই যারা শিরক ও কুফরে নিমজ্জিত প্রমানিত হয় তাদের কুফরী মন্ত্রনালয়ে এবং শিরকী সংসদে যোগ দেয়ার মাধ্যমে। তারা ইউসুফ (আ.) এর রাজার মন্ত্রনালয়ে যোগদেয়ার ব্যাপারে শাইখ-উল-ইসলাম ইবন তাইমিয়ার উক্তিকে তাদের যুক্তি ও অজুহাতের সাথে গুলিয়ে ফেলেছে। এটা প্রকৃত পক্ষে মিথ্যার সাথে সত্যের সংমিশ্রণ। এটা শাইখ-এর উপর মিথ্যা অপবাদ এবং তার সম্পর্কে খারাপ বক্তব্য দেয়া ছাড়া কিছুই না। তিনি এই কাহিনী উলেখ করে সংসদে অংশগ্রহণ এবং কুফরী করার অথবা আল্লাহর বিধান প্রয়োগ না করার দলিল হিসেবে তা ব্যবহার করেননি। না, আমরা বিশ্বাস করি যে, এই মুসলিম শাইখ এবং তার দ্বীন এবং তার কলব এই খারাপ দাবী থেকে মুক্ত। পরবর্তীকালে ভন্ড লোকেরা ছাড়া আর কেউই তা দাবী করতে পারে না। আমরা এটা বলছি কারণ কোন জ্ঞানবুদ্ধি সম্পন্ন মুসলমান এই ধরনের বক্তব্য দিতে পারে না। কাজেই, শাইখের মতো একজন আলেম কিভাবে এটা বলতে পারে, যদিও এ ব্যাপারে তার বক্তব্য পরিষ্কার এবং পুরোপুরিভাবে আপোষহীন। তার সমস্ত বক্তব্যের মূল লক্ষ্য ছিল দু’টি কাজের মধ্যে জঘন্যতমটি প্রতিরোধ করা এবং দু’টি পরস্পর বিরোধী বিষয়ের মধ্যে থেকে যেটা উত্তম বিষয়টি গ্রহণ করা। আপনি জানেন যে, দুনিয়াতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তাওহীদ এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন বা শিরক করা। ‘আল-হিসবা’এ বর্ণিত আছে যে, ইউসুফ (আ.) ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ভাল কাজে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। ([21])
অর্থাৎ বিবিধ সম্পাদিত কাজের উত্তম তদারকি বা তত্ত্বাবধান করা। ইউসুফ (আ.)-এর কাজের বর্ণনায় তিনি (ইবনে তাইমিয়া) বলেছেন- “তিনি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ভাল কাজে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। তিনি তাদেরকে ঈমানের দিকে ডেকেছেন যতটুকু তারপক্ষে সম্ভব।” তিনি আরো বলেছেন, কিন্তু তার পক্ষে যতটুকু সম্ভব তিনি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ভাল কাজ সম্পাদন করেছিলেন।” ([22])
নিঃসন্দেহে আল্লাহ উল্লেখ করেননি যে, ইউসুফ (আ.) আল্লাহর পাশাপাশি বিধান দিয়েছিলেন বা আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে অন্য কোন বিধান দ্বারা বিচার কার্য সম্পাদন করেছিলেন বা তিনি গণতন্ত্রের অথবা এমন দ্বীনের (জীবন ব্যবস্থা) অনুসরণ করেছেন যা আল্লাহর দ্বীনের সাথে সাংঘর্ষিক। বর্তমানে মোহগ্রস্থ ব্যক্তিরা তার কথার সাথে তাদের কুৎসিত প্রমাণের মিশ্রণ ঘটায় এবং সাধারণ মানুষদেরকে বিপথে নেওয়ার জন্যে মিথ্যা যুক্তি দাঁড় করায়। তারা মিথ্যার সাথে সত্যকে এবং অন্ধকারের সাথে আলোর সংমিশ্রণ ঘটায়। আমাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে যে দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে তা হল, আল্লাহর বাণী এবং তাঁর রাসূল ﷺ যিনি আমাদের নেতা ও পথ প্রদর্শক। আল্লাহর রাসূলের ﷺ কথার পর অন্য কারও কথা গ্রহণ করা হতে পারে বা নাও হতে পারে। একারণেই যদি এই কথা শেখ ইবনে তাইমিয়ার হয়ও- তারা যে রূপ দাবী করছে বা তার চেয়েও বড় কোন আলেমেরও হয়, আমরা তা গ্রহণ করবো না যতক্ষণ না তারা প্রমাণ দিতে পারে যে রূপ আল্লাহ বলেছেনঃ
قلْ ھاتوا برھانكم إن كنتم صادقین
“বলঃ যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে তোমাদের প্রমাণ পেশ কর।” [সূরা বাকারা ২: ১১১]
কাজেই এসব ব্যাপারে সতর্ক থাকুন, তাওহীদকে আঁকড়ে থাকুন। মুশরিকদের এবং তাওহীদের শত্রুদের পথভ্রষ্ঠকারী এবং মিথ্যা গুজবে কর্ণপাত করবেন না। তাদের অসঙ্গতিপূর্ণ কূটতর্কে কর্ণপাত করবেন না। তাই নিজের তওহীদকে শক্ত হাতে ধরে রাখুন। শিরকের অনুসারীদের এবং তাওহীদের শত্র“দের বিপথগামী মিথ্যা প্রচারণার দিকে মনোনিবেশ করবেন না। আল্লাহর দ্বীনের অনুসরণ করে এমন লোকের মতো হয়ে যান, যে সব লোকদের সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে নবী মুহাম্মদ ﷺ বলেন,
لا یضرّھم من خالفھم ولا من خذلھم حتى یأتيَ أمرُ االله وھم كذلك
“তারা তাদের দিকে ঝুঁকে পড়বে না যারা দ্বিমত পোষণকরবে এবং তাদেরকে ত্যাগ করবে যতক্ষণ না আল্লাহর নির্ধারিত দিবস আসে, যে সময় পর্যন্ত তারা ঐ পথেই থাকবে।” ([23])
দ্বিতীয় অযৌক্তিক অজুহাতঃ
যদিও নাজ্জাসী আল্লাহর শারীআহ্ প্রয়োগ করেনি, তথাপি সে মুসলিম ছিল।রাজনৈতিক দলগুলো, হোক না তারা ক্ষমতাসীন শাষক গোষ্ঠী বা বিরোধীদল, নাজ্জাসীর ঘটনাকে ব্যবহার করে ত্বাগুতের কার্যাবলীকে বৈধ করার জন্যে। তারা বলেঃ “নাজ্জাসী ইসলাম গ্রহণের পর তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহর বিধান প্রয়োগ করেন নাই এবং এরপরও রাসূল ﷺ তাকে আল্লাহর ন্যায়নিষ্ঠ দাস বলেছেন, তার জন্যে জানাযার সালাত পড়ে ছিলেন এবং সাহাবীদের তাই করতে আদেশ করেছিলেন।” সফলতা আসে একমাত্র আল্লাহর কাছ থেকে; এই ব্যাপারে আমাদের কথা হলোঃ
প্রথমতঃ যারা এই প্রতারণামূলক যুক্তিটি দেখান, সবার প্রথমে তাদেরকে যাচাই যোগ্য ও সঠিক দলিল দ্বারা প্রমাণ করতে হবে যে, নাজ্জাসী ইসলাম গ্রহণের পরও আল্লাহর দেয়া বিধান প্রয়োগ করেননি। আমি তাদের যুক্তিটি বিচার বিশ্লেষণ করার পর যা পেলাম তা হলো, অসত্য বিবৃতি ও ভিত্তিহীন আবিষ্কার যা কিনা সত্যিকারের বা যাচাই যোগ্য কোন দলিল দ্বারা প্রমানিত নয়। আল্লাহ বলছেনঃ
قل ھاتوا بُرھانكم إن كنتم صادقین
“বলঃ যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে তোমাদের প্রমাণ পেশ কর।” [সূরা বাকারা ২: ১১১]
দ্বিতীয়তঃ আমাদের মতে এবং যারা আমাদের বিরোধিতা করেন তাদেরও মতে সত্য হচ্ছে যে, নাজ্জাসী মারা গিয়েছিলেন ইসলামের হুকুম পরিপূর্ণ হওয়ার পূর্বে; তিনি মারা গিয়েছিলেন এই আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্বে
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِى وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلٰمَ دِينًا ۚ فَمَنِ اضْطُرَّ فِى مَخْمَصَةٍ غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِّإِثْمٍ ۙ فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
“আজ তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করিলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করিলাম।” [সূরা মায়িদা ৫: ৩]
এই আয়াতটি নাযিল হয়েছিল বিদায় হজ্জের সময় কিন্তু নাজ্জাসী মারা গিয়েছিলেন তার পূর্বে যে রূপ হাফিজ ইবনে কাসির (রহ.) এবং অন্য আলেমগণ বর্ণনা করেছেন। ([24])
সুতরাং সেই সময় তার জন্য কর্তব্য ছিলো আল্লাহর বিধান যতটুকু জানা ছিল ততটুকু অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করা, আনুগত্য করা এবং কার্য সম্পাদন করা। এই ক্ষেত্রে প্রধান বিষয় ছিল আল-কুর’আনের বাণী মানুষের কাছে পৌঁছানো।
আল্লাহ্ বলছেনঃ
وَأُوحِىَ إِلَىَّ هٰذَا الْقُرْءَانُ لِأُنذِرَكُم بِهِۦ وَمَنۢ بَلَغَ ۚ
“এই কুর’আন আমার নিকট প্রেরিত হয়েছে যেন তোমাদেরকে এবং যাদের নিকট এটা পৌঁছাবে তাদেরকে এর দ্বারা আমি সর্তক করি।” [সূরা আন‘আম ৬: ১৯]
সেই সময় যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা এ রকম ছিল না যা আমরা আজকে দেখতে পাচ্ছি। কিছু হুকুম কারও কাছে পৌঁছাতে কয়েক বছর লেগে যেত এবং কোন কোন সময় এমনও হতো যে, রাসূল ﷺ এর কাছে না আসা পর্যন্ত কোন কোন হুকুম জানাও যেত না। সুতরাং সেই সময় দ্বীন ছিল নতুন এবং আল-কুর’আন তখনও নাযিল হচ্ছিল। সেই কারণেই দ্বীন তখনও পরিপূর্ণ হয়নি। এই ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে যায় বুখারী শরীফের বর্ণনা মতে; আব্দুলাহ ইবনে মাসুদ বলেছিলেনঃ “আমরা রাসূল ﷺ কে সালাতের মধ্যে সালাম দিতাম এবং তিনি তার উত্তর দিতেন। কিন্তু নাজ্জাসীর কাছ থেকে ফিরে আসার পর আমরা তাকে সালাম দিলাম কিন্তু তিনি সালামের উত্তর দিলেন না। তিনি বললেনঃ “সালাতের একটি উদ্দেশ্য আছে।” যে সমস্ত সাহাবীরা ইথোপিয়ায় ছিল, যা ছিল নাজ্জাসীর পাশে, রাসূল (ﷺ) এর হুকুমের অনুসরণ করে আসছিল কিন্তু তারা জানতো না যে সালাতের মধ্যে কথা বলা এবং সালাম দেয়া নিষেধ হয়ে গিয়েছিল, যদিও সালাত একটি ফরজ হুকুম এবং রাসূল ﷺ প্রতিদিন দিনে রাতে পাঁচ বার করে সালাতের ইমামতি করেছিলেন। আজ যারা শির্কী মতবাদ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন তারা কি এমন দাবী করতে পারবেন যে, আল-কুর’আনের, ইসলামের হুকুম তাদের কাছে পৌঁছায়নি? তারা কি ভাবে তাদের এই অবস্থানকে নাজ্জাসীর ঐ অবস্থানের সঙ্গে তুলনা করবেন যখন ইসলাম পরিপূর্ণ ছিল না?
তৃতীয়তঃ এটা জানা কথা যে নাজ্জাসী আল্লাহর হুকুমের যতটুকু জানতেন ততটুকু প্রয়োগ করতেন, আর যে কেউ এর বিপরীত কথা বলবে, তাকে প্রমাণ ছাড়া কিছুতেই বিশ্বাস করা যাবে না কারণ ইতিহাসের প্রমাণাদি আমাদেরকে জানিয়ে দেয় যে, তিনি সেই সময় আল্লাহর আইন সম্পর্কে যতটুকু জানতেন, ততটুকু প্রয়োগ করতেন।
(১) সেই সময় তাকে আল্লাহর যে সব হুকুম মানতে হতো তার একটি হলোঃ “আল্লাহর একত্ববাদেকে স্বীকার করা এবং মুহাম্মদ ﷺ-কে আল্লাহর রাসূল হিসেবে মানা এবং ঈসা (আ.)-কে আল্লাহর দাস ও রাসূল বলে বিশ্বাস করা।” তিনি তা করে ছিলেন কিন্তু আপনি কি তা দেখতে পান তাদের প্রমাণে? নাজ্জাসীর যে চিঠিটি তিনি রাসূল ﷺ-কে দিয়েছিলেন তা তারা প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। ওমর সোলায়মান আল-আসকর তার পুস্তিকা “The Council’s Judgement of the Participation in the Ministry and the parliament”-পুস্তকে তা উলেখ করেছেন।
(২) তার রাসূল ﷺ-এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ এবং হিজরত করার জন্যে অঙ্গীকারঃ পূর্বের চিঠিটিতে সেই বিষয়ের প্রতি ঈঙ্গিত করা হয়েছে, নাজ্জাসী বলেছিলেনঃ “আমি রাসূলের প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করছি” এবং তার ছেলে জাফর (রা.) এবং তার সঙ্গীদের কাছে আনুগত্যের অঙ্গীকার করেছিলেন এবং তিনি জাফর (রা.) এর সাহায্যে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এই চিঠিতে উল্লেখ ছিল যে, নাজ্জসী তার ছেলেকে (আরিয়া বিন আল-আসরাম ইবন আবজার) রাসূল ﷺ-এর কাছে প্রেরণ করেছিলেন। এতে আরও উল্লেখ ছিল যে, “ও আল্লাহর রাসূল ﷺ যদি আপনি চান আমি আপনার কাছে চলে আসি, আমি অবশ্যই তা করবো। কারণ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনার কথা সত্য।” তারপরই সে মারা যায় অথবা রাসূল ﷺ সেই সময় চাচ্ছিলেন না যে তিনি তা করুক। এই সমস্ত ব্যাপারগুলো পরিষ্কার নয় এবং এই ঘটনার কোন সঠিক দলিল নেই। সুতরাং এই ধরনের কোন রায় এবং একে একটি দলিল হিসেবে ব্যবহার করা গ্রহণ যোগ্য নয়। অধিকন্তু, তা তাওহীদ ও ইসলামের মূলনীতির বিরোধী হয়ে যাবে।
(৩) রাসূল ﷺ ও তাঁর দ্বীনকে সাহায্য করা এবং তার আনুগত্য করাঃ নাজ্জাসীর কাছে যারা হিজরত করে গিয়েছিল, তিনি তাদের সাহায্য করেছিলেন এবং তাদেরকে মেহমান হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি তাদের নিরাপত্তা দিয়েছিলেন। তিনি তাদের পরিত্যাগ করেননি। তিনি তাদেরকে কোরআইশদের হাতেও তুলে দেননি। তিনি ইথোপিয়ান খ্রিষ্টানদের তাদের ক্ষতি করতে দেননি, যদিও ঈসা (আ.) সম্পর্কে তাদের আক্বিদা সঠিক ছিল। আরও একটি চিঠি ছিল যা নাজ্জাসী রাসূল ﷺ কে প্রেরণ করেছিলেন (ওমর আল-আসকর এই চিঠিটির কথাও উক্ত পুস্তিকাতে উলেখ করেছেন) যাতে উলেখ ছিল যে তিনি তার ছেলেকে ৬০ জন ইথোপিয়ান লোক সহ রাসূল ﷺ এর কাছে প্রেরণ করে ছিলেন তাকে সাহায্য, তার আনুগত্য এবং তার সঙ্গে কাজ করার জন্যে। তথাপিও ওমর আল-আসকর সহসা তার উক্ত পুস্তিকাতে বলে যে নাজ্জাসী আল্লাহর দেয়া বিধান প্রয়োগ করেনি যা কিনা একটা মিথ্যা এবং একজন মুওয়াহীদের উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়া। কিন্তু সত্য হচ্ছে যে, সেই সময় তিনি যতটুকু আল্লাহর হুকুম জেনেছিলেন ততটুকু প্রয়োগ করেছিলেন। এবং যে এটা ছাড়া অন্য কিছু বলবেন, আমরা তা কখনও বিশ্বাস করবো না যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি সুনিশ্চিত দলিল দিতে পারেন। অন্যথায় সে মিথ্যাবাদী হয়ে যাবেঃ “বল, যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে তোমাদের প্রমাণ পেশ কর।” তিনি (ওমর আল-আসকর) তার দাবীর পক্ষে কোন সুনিশ্চিত দলিল দেননি। কিন্তু তিনি তার প্রমাণের জন্যে কিছু ইতিহাস গ্রন্থের অনুসরণ করেছেন এবং আমরা সকলেই জানি এইসব ইতিহাস গ্রন্থের অবস্থা আর তা নিঃসন্দেহে ঘোলাটে বা অনিশ্চিত তথ্য সম্বলিত।
চতুর্থতঃ নাজ্জাসীর অবস্থা এরূপ ছিল যে তিনি যখন দেশের শাসক, তিনি কাফের ছিলেন এবং তারপর ইসলাম গ্রহণ করে তার রাজত্ব চলাকালে। তিনি তার স্বাক্ষর রেখেছিলেন পরিপূর্ণ ভাবে রাসূল (ﷺ) এর হুকুমের আনুগত্যের মাধ্যমে, যার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত ছিল তার পুত্রকে প্রেরণ করা, রাসূল (ﷺ) এর কাছে কিছু লোকবল প্রেরণ এবং হিজরত করার জন্যে রাসূল (ﷺ) এর কাছে অনুমতি চাওয়া। রাসূল (ﷺ)-কে এবং তার দ্বীনকে সাহায্য করার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো
তার অনুসারীদের সাহায্য করা। আপাত দৃষ্টিতে তিনি সব ত্যাগ করেছিলেন যা ছিল ইসলাম বিরোধী। তিনি সত্যকে জানার এবং দ্বীনকে শেখার চেষ্টা করেছিলেন মৃত্যু পর্যন্ত যা ঘটেছিল দ্বীনের বিধান পরিপূর্ণ হওযার পূর্বে এবং তার
কাছে পরিপূর্ণ রূপে পৌঁছানোর পূর্বে। এই ব্যাপারটি রাসূল (ﷺ) এর বাণী থেকে এবং এ সম্পর্কিত সঠিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত। যারা এ ব্যাপারে একমত নন তাদের প্রত্যেককে আমরা চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি তারা যা বলছেন তা প্রমাণ করার জন্যে সঠিক দলিল দিয়ে কারণ শুধু মাত্র ইতিহাস গ্রন্থ কোন দলিল হতে পারে না।
যে পরিস্থিতির সঙ্গে তারা বর্তমান পরিস্থিতিকে তুলনা করছেন তা সম্পূর্ণ ভুল এবং ভিন্ন। এটা হচ্ছে এমন এক দল লোকের ব্যাখ্যা যারা নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবী করছে আবার তারা ত্যাগ করছে না যা ইসলামের বিপরীত বা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। তারা ইসলামের ওপর আছে বলে দাবী করছে আবার একই সময়ে তারা ধরে রেখেছে যা ইসলামের বিপরীত এবং এটা নিয়ে তারা গর্বও বোধ করে। তারা নাজ্জাসী যেভাবে খৃষ্টধর্ম প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, সেভাবে গণতন্ত্রের দ্বীনকে প্রত্যাখ্যান করেনি, বরং, তারা গণতন্ত্রের পক্ষে দেয়া বক্তব্যসমূহ ও প্রচারণায় মোহগ্রস্থ হয়ে মানুষেকেও এই মিথ্যা দ্বীনের প্রতি আহবান করছে। তারা নিজেদেরকে ‘আলিহা’-তে পরিণত করে, মানুষের জন্য আইন প্রণয়ন করে, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোন দিনও অনুমতি দেননি, তারা মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সাথে তাদের এই দ্বীনের ব্যাপারে একমত হয়ে তাদের কাজে যোগদান করে, তারা কাফিরদের সাথে তাদের তৈরী সংবিধান অনুসারে দেশ পরিচালনা করছে। তারা এই সংবিধানকে অনুসরণ করছে এবং তাদেরকে ঘৃণা করে যারা এই সংবিধানকে আক্রমন বা প্রত্যাখ্যান করে। তারা দ্বীন পরিপূর্ণ হওয়ার পরে এবং তাদের কাছে আল-কুর’আনের বাণী এবং রাসূল (ﷺ) এর সুন্নাহ্ পৌঁছানোর পরেও এই সব কিছু করছে। আপনি যেই হোন না কেন আমি আপনাকে শপথ করে বলছি, এটা কি ন্যায় সঙ্গত যে এই মিথ্যা, অন্ধকারময়, দুর্গন্ধময় পরিস্থিতিকে এমন একজন মানুষের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করা, যে কিনা ইসলামের সঙ্গে বেশী দিন ধরে পরিচিত নয়, যে কিনা সত্যের সন্ধান করছিলেন এবং সাহায্য করেছিলেন দ্বীনকে তা পরিপূর্ণ হওয়ার এবং তার কাছে পৌঁছানোর পূর্বে? কতই না ব্যবধান এই দুই পরিস্থিতির মানুষগুলোর মধ্যে! হ্যাঁ, তারা হয়তো বুঝাতে চায় দু’টি পরিস্থিতি একই কিন্তু তা সত্যের মাপকাঠিতে নয়! এই দুই অবস্থা সমান হতে পারে বাতিলের মানদন্ডে, যাদের উপর থেকে আল্লাহ্তাঁর হেদায়েত বোঝার বোধশক্তি উঠিয়ে নিয়েছেন তাদের ইসলাম বিরোধী গণতন্ত্র নামক দ্বীনে বিশ্বাসের কারণে।
وَيْلٌ لِّلْمُطَفِّفِينَ ★ الَّذِينَ إِذَا اكْتَالُوا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُونَ ★ وَإِذَا كَالُوهُمْ أَو وَّزَنُوهُمْ يُخْسِرُونَ ★ أَلَا يَظُنُّ أُولٰٓئِكَ أَنَّهُم مَّبْعُوثُونَ ★ لِيَوْمٍ عَظِيمٍ
“দুর্ভোগ তাহাদের জন্যে যাহারা মাপে কম দেয়, যাহারা লোকের নিকট হইতে মাপিয়া লইবার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে এবং যখন তাহাদের জন্যে মাপিয়া অথবা ওজন করিয়া দেয়, তখন কম দেয়। উহারা কি চিন্তা করে না যে, উহারা পুনরুথিত হইবে মহাদিবসে?” [সূরা মুতাফফিফীন ৮৩: ১-৫]
তৃতীয় অযৌক্তিক অজুহাতঃ
গণতন্ত্রকে বৈধ করার জন্যে তাকে পরামর্শসভা বা শুরা কমিটি নাম দেয়া বা তার সাথে তুলনা করা। কিছু অজ্ঞ লোক মুওয়াহীদদের ব্যাপারে আল্লাহর বক্তব্যকেঃ
وأمرھم شورى بینھم
“… যাহারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শের মাধ্যমে নিজেদের কর্ম সম্পাদন করে।” ([25])
এবং রাসূল (ﷺ) এর কথাকে –الأمـر في وشاورھم “… এবং তারা সকল বিষয়ে পরামর্শ করে” ব্যবহার করে তাদের ভ্রান্ত দ্বীন গণতন্ত্রের পক্ষে দলিল দেয়ার জন্যে। তারা গণতন্ত্রকে শুরা (তারা বলে যে গণতন্ত্র আর ইসলামিক শুরা বোর্ড একই) বলে অভিহিত করে এই ভ্রান্ত দ্বীনকে ধর্মীয় রংয়ে-রাঙ্গাতে চায় এটাকে বৈধ করার জন্যে। এই ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য নিম্নে দেয়া হলো এবং আমরা আল্লাহর সাহায্য কামনা করছিঃ
প্রথমতঃ নাম পরিবর্তন করার কোন প্রয়োজন নেই, কারণ নাম পরিবর্তন করার মাধ্যমে মূল বিষয়টি পরিবর্তিত হয়ে যায় না। কিছু ধর্মীয় দল কাফেরদের এই দ্বীনে বিশ্বাস করে এবং বলেঃ আমরা গণতন্ত্র বলতে বুঝাতে চাচ্ছি (আমরা যখন এর দিকে আহ্বান করি, উৎসাহ দেই, এর পক্ষে কাজ করি) বাক স্বাধীনতা এবং মানুষকে ইসলামের দিকে ডাকার স্বাধীনতা এবং এই ধরনের আরো অনেক কিছু। আমরা তাদেরকে বলিঃ তুমি এর দ্বারা কি বুঝাতে চাচ্ছ বা কি কল্পনা করছো তাতে কিছু যায় আসেনা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গণতন্ত্র আসলেই কী ত্বাগুতেরা যেটিকে প্রয়োগ করছে এবং তারা যেই মতবাদের দিকে মানুষকে ডাকছে এবং যার নামে নির্বাচন করা হচ্ছে। শাসন ও বিচার ব্যবস্থা যেখানে আপনারা অংশ গ্রহণ করছেন কার দেয়া বিধান অনুসারে চলবে? আপনারা হয়তো মানুষকে প্রতারিত করতে পারবেন কিন্তু কখনই আল্লাহ্কে প্রতারিত করতে পারবেন না।
إنّ المنافقین یُخادعون االله وھو خادعھم
“নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহ্কে প্রতারিত করতে চায় কিন্তু আল্লাহ্ই তাদেরকে প্রতারিত করবেন।” [সূরা নিসা ৪: ১৪২]
এবং
یُخادعون االله والذین آمنوا وما یخدعون إلا أنفسھم وما یشعرون
“আল্লাহ্ এবং মুমিনগণকে তারা প্রতারিত করতে চায়। অথচ তারা যে নিজেদেরকে ভিন্ন কাউকেও প্রতারিত করে না, এটি তারা বুঝতে পারে না”। [সূরা-বাকারা ২: ৯]
সুতরাং কোন জিনিসের নাম পরিবর্তন করে দিলেই ঐ জিনিসের রীতি-নীতির পরিবর্তন হয়ে যায় না। নাম পরিবর্তনরে মাধ্যমে হারাম কখনও হালাল হবে না এবং হালাল কখনও হারাম হয়ে যাবে না। রাসূল (ﷺ) বলেছেনঃ
لَیَسْتَحِلَّنَ طائفةٌ مِنْ أُمّتي الخمرَ باسمٍ یُسَمُّونَھا إِیَّاه
“আমার উম্মতের এক দল লোক মদকে বৈধ করবে একে ভিন্ন একটি নাম দিয়ে।”
আলেম এবং বিচারকগণ যারা ইসলামের তাওহীদকে অপমান বা আক্রমন করে, তাদের প্রত্যেককেই কাফের বলে গণ্য করেন। তারা গণ্য করেন তাদের প্রত্যেকেই কাফের হিসেবে যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ হয়ে যায় যে, তারা কোন র্শিকী কাজের নাম বদলে দিয়ে সেই কাজে লিপ্ত হয়; ঠিক তাদের মত যারা এই র্শিকী মতবাদ, কুফর তথা গণতন্ত্রকে “শুরা” বলে তা বৈধ করতে চায় এবং মানুষকে এদিকে ডাকে।
দ্বিতীয়তঃ মুশরিকদের গণতন্ত্রের সাথে মুওয়াহীদদের পরামর্শকে (শুরা) তুলনা করা এবং শুরা পরিষদ এর সাথে পাপিষ্ঠ, অবাধ্য কাফেরদের পরামর্শ পরিষদ একই রকম বলা একটা নিকৃষ্ট তুলনা। আপনি জানেন যে, সংসদীয় পরিষদ হলো মূর্তি পূজার একটি মন্দিরের ন্যায় এবং শিরক-এর প্রানকেন্দ্র যেখানে থাকে গণতন্ত্রের উপাস্যগুলো এবং তাদের প্রভু ও সহযোগীরা, যারা দেশ শাসন করে তাদের সংবিধান এবং আইন অনুসারে যার অনুমতি আল্লাহ্ তা‘আলা দেননি। আল্লাহ্ বলছেনঃ
“হে কারা সঙ্গীরা ভিন্ন ভিন্ন বহু প্রতিপালক শ্রেয় না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ্ ? তাঁকে ছেড়ে তোমরা কেবল কতগুলো নামের ইবাদত করছো, যেই নাম তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরা রেখেছো, এইগুলোর কোন প্রমাণ আল্লাহ্ পাঠান নাই। বিধান দেবার অধিকার কেবল আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন অন্য কারও ইবাদত না করতে, কেবল তাঁর ব্যতীত, এটাই সরল দ্বীন কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ইহা আবগত নয়।” [সূরা ইউসুফ ১২: ৩৯-৪০]
এবং তিনি আরও বলছেনঃ “তাদের কি অন্য অংশীদার/ইলাহ আছে যারা তাদের জন্যে বিধান দিয়েছে এমন দ্বীনের যার অনুমতি আল্লাহ্ দেন নাই?” [সূরা শূরা ৪২: ২১]
সুতরাং এই তুলনাটি শিরক-এর সঙ্গে তাওহীদের, অবিশ্বাস এর সঙ্গে বিশ্বাস (আল্লাহ্তে) এর তুলনা করার মত। এটা হচ্ছে আল্লাহর ও তার দ্বীনের উপর মিথ্যা আরোপ করা। এটি হচ্ছে সত্যের সাথে মিথ্যার, অন্ধকারের সঙ্গে আলোর সংমিশ্রণ করা। এক জন মুসলিমকে অবশ্যই জানতে হবে যে আল্লাহর দেয়া শুরা এর সঙ্গে নোংরা গণতন্ত্রের পার্থক্য হচ্ছে আকাশের সঙ্গে পাতালের যে রূপ পার্থক্য বা স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে যে পার্থক্য সে রূপ। শুরা বা পরামর্শ করা হচ্ছে একটি স্বর্গীয় পদ্ধতি বা নিয়ম এবং গণতন্ত্র হচ্ছে মানুষের তৈরী যা দুর্নীতিগ্রস্থ এবং কুরুচীপূর্ণ।পরামর্শ করা হলো আল্লাহর দেয়া একটি বিধান, আল্লাহর দ্বীনের অংশ কিন্তু গণতন্ত্র হলো আল্লাহর বিধান, আল্লাহর দ্বীনের সাথে কুফরী করা, আল্লাহর দ্বীনকে অস্বীকার করা। পরামর্শ বা শুরা হবে সেই বিষয়ে যেই বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কোন পূর্ব সিদ্ধান্ত নেই কিন্তু যখনই আমাদের কাছে আল-কুর’আনের আয়াত থাকবে, দলিল বা রায় থাকবে, তখন কোন পরামর্শ হবে না। আল্লাহ বলছেনঃ
وما كان لمؤمنٍ ولا مؤمنةٍ إذا قضى االله ورسولُھ أمراً أن یكون لھم الخیرة من أمرھم
“যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে নির্দেশ দেন, তখন সে বিষয়ে কোন মুমিন পুরুষ বা মুমিন নারীর ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার নেই”। [সূরা আহযাব ৩৩: ৩৬]
গণতন্ত্রের দুই দিকই ঝুঁকিপূর্ণ। এক দিকে আল্লাহর বিধান নিয়ে পরামর্শের কোন সুযোগ নেই। এবং অন্য পাশে গণতন্ত্রে মানুষের বিধান, মানুষের দেয়া আইনকে গুরুত্ব দেয়া হয়। তারা এটা তাদের সংবিধান থেকে পেয়েছেঃ
জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। গণতন্ত্রে মানুষই সর্বময় কর্তৃত্ব বা ক্ষমতার মালিক। গণতন্ত্র হচ্ছে অধিকাংশ লোকের দেয়া আইন, অধিকাংশ লোকের শাসন, এবং অধিকাংশ লোকের দেয়া দ্বীন। অধিকাংশই নির্ধারণ করে কোনটি হালাল, কোনটি হারাম। এভাবে গণতন্ত্রে মানুষ সৃষ্টিকর্তার স্থানে নিজেকে বসিয়ে দিয়েছে। কিন্তু শুরায়, মানুষ বা অধিকাংশ লোক আল্লাহর হুকুম, আল্লাহর রাসূলের হুকুম এবং তারপর মুসলিম নেতার আনুগত্য করতে বাধ্য। এবং নেতা অধিকাংশের মতামত বা রায় গ্রহণ করতে বাধ্য নয়। এমন কি অধিকাংশ লোক নেতার আনুগত্য করতে বাধ্য যদিও নেতা কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেয় যতক্ষণ না তা আল্লাহর অবাধ্যতা হয়। গণতন্ত্র এবং এর দিকে আহবানকারীরা আল্লাহর আইনের, আল্লাহর বিধানের কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করে। তারা আত্মসমর্পণ করতে নাকট করে এই বলে যেঃ আইন হবে অধিকাংশের মতের অনুসারে, …। এই পৃথিবীতে এই কথা শোনা অনেক ভাল মহান বিচার দিবসে শোনার চেয়ে যে দিন মানুষ তার বিচারের সম্মুখীন হবে, যখন তারা হাউজে কাওসারের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করবে এবং ফেরেশতারা তাদেরকে প্রতিরোধ করবে। বলা হবে “তারা পরিবর্তন করে ছিল”, তখন রাসূল (ﷺ) বলবেনঃ
سُحقاً سُحقاً لمن بدّل بعدي
“তারা জাহান্নামে, তারা জাহান্নামে, যারা আমার পরে পরিবর্তন সাধন করেছে।”
গণতন্ত্রের উৎপত্তি কুফরী এবং নাস্তিকতার ভূমি থেকে, এটি ইউরোপের কুফরী এবং দুর্নীতির কেন্দ্রস্থলগুলো হতে উদ্ভূত হয়, যেখানে দৈনন্দিন জীবনের রীতি-নীতি ও ধর্ম ছিল আলাদা। এই মতবাদের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল এমনই এক পরিবেশের যেখানে এই মতবাদের সমস্ত বিষ ও ত্রুটি বিদ্যমান ছিল। সম্ভবত পশ্চিমা বিশ্বে সেকুলারিজম (ধর্ম থেকে জীবনের আলাদা করার রীতি) চর্চা শুরুর পূর্বে থেকেই গণতন্ত্রের চর্চা ছিল, আর সে কারণেই সমকামিতা, মদ্যপান ও অন্যান্য গর্হিত কাজ সেখানে বৈধ ছিল। তাই যে কেউ এই মতবাদের প্রশংসা করে বা এটিকে ‘শুরা’র সাথে এক করে সে অবশ্যই একজন কাফের-অবিশ্বাসী, না হয় মূর্খ এবং নির্বোধ। বর্তমানে এখানেই ঘটেছে দুইটি বিপরীত জিনিসের সংমিশ্রণ। শয়তানের অনুসারীরা যে কাফেরদের মতবাদে মোহগ্রস্থ হয়ে পড়েছে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু অবাক হয়ে যাই তাদের কথা শুনলে যারা নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবী করে আবার মানুষকে গণতন্ত্রের প্রতি উৎসাহ দেয় এবং একে বৈধতার রং দিতে চায়। পূর্বে যখন মানুষ সমাজতন্ত্রের প্রতি মোহগ্রস্থ হয়ে পড়েছিল, তখন কিছু লোক ইসলামি সমাজতন্ত্রের কথা বলা শুরু করেছিল এবং তারও পূর্বে ছিল জাতীয়তাবাদ, আরব জাতীয়তাবাদ এর কথা। আজকাল তাদের অনেকেই গর্ববোধ করছে এবং মোহাবিষ্ট হয়ে পড়েছে এই সংবিধানের প্রতি… তারা লজ্জাও বোধ করে না ইসলামিক ফুকাহাদের বাদ দিয়ে এই সংবিধানের দাসদের ফুকাহা নাম দিতে এবং তাদেরকে এই নামে ডাকতে। তারা একই অভিব্যক্তিগুলো ব্যবহার করে যেরূপ ইসলামিক আইনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় যেমন আইনদাতা, বৈধ, অবৈধ, অনুমোদন যোগ্য, নিষিদ্ধ, এবং তারপরও তারা ভাবে তারা সকলেই সঠিক পথে আছে, তারাই হেদায়েত প্রাপ্ত। কোন শক্তি, কোন ক্ষমতা নেই শুধু মাত্র আল্লাহর ছাড়া। এটি জ্ঞানী ও বিবেকবানদের হারানো ছাড়া কিছুই নয় এবং সঠিক ও যোগ্য লোকদের বাদ দিয়ে অযোগ্য লোকদেরকে কঠিন কাজের দায়িত্ব অর্পন করা। তারা সমস্ত— কিছু অযোগ্য, কুচক্রের অধিকারী লোকদের কাছে দিয়ে দিয়েছে। কি করুনাই করা হয়েছে বিজ্ঞজন ও জ্ঞানীদের প্রতি, দ্বীন এবং এর প্রকৃত আহবানকারীদের প্রতি। আমি আল্লাহর নামে কসম করে বলছি, এটা খুবই আজব ব্যাপার যে, অনেক মানুষই নিজেকে মুসলিম দাবী করে কিন্তু তারা ‘লা ইলাহা ইলালাহ’-এর অর্থ জানে না। তারা জানে না এর শর্তগুলো কী, এর দাবীগুলো কী। তাদের অনেকই সব সময় এর (আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই) বিরোধিতা করে এবং বর্তমানের র্শিকী মতবাদে জড়িয়ে পড়েছে। তারা নিজেদেরকে মুওয়াহীদ এবং এর দিকে মানুষকে আহবানকারী বলে দাবী করে। তাদের অবশ্যই এই কালেমার অর্থ ও এর প্রকৃত দাবী সম্পর্কে জানতে আলেমদের কাছে যেতে হবে, কারণ আল্লাহ বনী আদমকে প্রথম যে হুকুমটি দিয়েছেন তা হলো এই কালেমা সম্পর্কে জানা। এই কালেমার শর্তগুলো কী কী এবং কী কী এর সাথে সাংঘর্ষিক তা অজু বা সালাত ভঙ্গের কারণ জানার পূর্বে জানতে হবে কারণ কোন অজু বা কোন সালাতই কবুল হবে না যদি কারও মধ্যে তাওহীদের বিপরীত কিছু থাকে। যদি তারা উদ্ধত হয় ও সত্য গ্রহণ না করে, তাহলে তারা ক্ষতি গ্রস্থদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে।
ইসলামী আইনবীদ এবং আলেম আহমেদ শাকির (রহ.)-এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে আমি শেষ করবো, যিনি ঐ সব কাফেরদের কথার উত্তর দিয়েছেন যারা আল্লাহর বাণীর বিকৃতি ঘটায় এবং “যাহাদের বিষয়গুলো পারস্পরিক
আলোচনার মাধ্যমে স্থিরকৃত হয়” এই আয়াতের অপব্যবহারকরে তাঁর নামে মিথ্যার উদ্ভাবন করে গণতন্ত্রকে সাহায্য করে এবং যারা কাফেরদের দ্বীন বাস্তবায়নে সদা তৎপর। “এবং তারা সকল বিষয়ে পরামর্শ করে” এবং “যাহারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শের মাধ্যমে নিজেদের কর্ম সম্পাদন করে” এই আয়াতগুলোর ব্যাখ্যায় আহমেদ শাকির উমদাদ-আত-তাফসীর-গ্রন্থে বলেছেনঃ বর্তমান সময়ে যারা এই দ্বীনকে নিয়ে উপহাস করে- তারা এই আয়াতগুলোর রূপক অর্থে ব্যাখ্যা দেয় ইউরোপীয় সাংবিধানিক পদ্ধতিকে; তারা তাদের মতের বৈধতা প্রমানের জন্য ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতি’ নাম দিয়ে মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করছে।” এই সব উপহাসকারীরা এই আয়াতগুলিকে আদর্শবাণী বা তাদের শ্লোগান হিসেবে ব্যবহার করছে এবং এভাবে মুসলিম জাতিকে, মানুষকে এবং যারা ইসলামের দিকে ফিরে আসছেন তাদের প্রত্যেককে প্রতারিত করছে। তারা একটি সঠিক বাক্য ব্যবহার করছে কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য খারাপ। তারা বলে ইসলাম পরামর্শের দিকে ডাকে এবং এই ধরনের আরো অনেক কথা।
সত্যিই! ইসলাম পরামর্শের দিকে ডাকে কিন্তু ইসলাম কোন ধরনের পরামর্শের দিকে ডাকে? আল্লাহহ্ বলেছেনঃ
“এবং সকল বিষয়ে পরামর্শ কর। এবং যখন তোমরা কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাও, তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর।”। এই আয়াতের অর্থ খুবই পরিষ্কার এবং সুনিশ্চিত। এই আয়াতের কোন ব্যাখ্যা অথবা রূপক ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। এটা রাসূল (ﷺ)-এর উপর আল্লাহর একটি হুকুম ছিল এবং তারপর খলিফাদের উপর। অর্থাৎ সাহাবাদের যারা ছিলেন জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান মতামত ব্যক্ত করতেন সেসব বিষয়ের উপর যেসবের ব্যাপারে মতামত বা যুক্তি দেয়া যায়। তারপর তিনি সিদ্ধান্ত নিতেন যেটা তিনি সবচেয়ে সঠিক, সবচেয়ে ভাল, সবচেয়ে উপকারী মনে করতেন কোন বিষয়ের সমাধান করার জন্যে এবং তা কোন দল ইচ্ছা বা মতামতের উপর নির্ভর করত না অথবা কোন সংখ্যা বা সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু ইত্যাদি সংখ্যানীতির উপর নির্ভর করতো না। যখন তিনি কোন সমস্যার সমাধান করতেন তখন তিনি আল্লাহর উপর নির্র্ভর করতেন এবং যা যা করণীয় তা করতেন। এজন্যে কোন দলিল বা প্রমাণের প্রয়োজন নেই যে, ঐসব মানুষেরা যাদেরকে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) পরামর্শ করার জন্যে হুকুম দিয়েছিলেন তারা ছিলেন আদর্শ খলিফা তার মৃত্যুর পরে, ছিল সবচেয়ে ন্যায়নিষ্ঠ এবং যারা আল্লাহর বিধান প্রয়োগ করেছিলেন, সালাত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং যাকাত আদায় করেছিলেন। তারা ছিলেন আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধরত মুজাহিদ যাদের সম্পর্কে রাসূল (ﷺ) বলেছেনঃ
لِیلني منكم أولو الأحلام والنھى
“আমার পরে তোমাদের মধ্য হতে ভদ্র ও বুদ্ধিমান লোকেরা আসবে।”
তারা নাস্তিক ছিল না, অথবা তারা আল্লাহর দ্বীন ও হুকুমের বিরুদ্ধাচরণ করেননি। তারা সেই সব অসৎ লোকদের মত ছিলেন না যারা এখনকার সময়ে সমস্ত খারাপ কাজে লিপ্ত । তারা এরূপ ছিলা যে ক্ষমতা দাবী করতেন না অথবা
এমন কোন আইন তৈরী করতেন না যা আল্লাহর আইনের বিরোধী এবং আল্লাহর আইনকে ধ্বংস করে দেয়। এই সব কাফেরদের স্থান হচ্ছে তলোয়ারের অথবা চাবুকের নিচে, পরামর্শ সভায় নয়। আরেকটি আয়াত আছে সূরা আস-শুরায় যার অর্থ পরিষ্কার ও সুনিশ্চিতঃ “যারা তাদের প্রভুর হুকুমের আনুগত্য করে এবং তারা তাদের স্বর্গীয় দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করে, তাদের বিষয়গুলো তারা পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে, তারা ব্যয় করে যা আমি তাদের দিয়েছি।”
চতুর্থ অযৌক্তিক অজুহাতঃ
রাসূল (ﷺ) আল-ফুজুল সংগঠনে যোগ দিয়ে ছিলেন। কিছু বোকা লোক নবুয়্যতের পূর্বে রাসূল (ﷺ)-এর আল-ফুজুল সংগঠনে যোগ দেয়াকে তাদের শিরকি শাসন ব্যবস্থার সংসদে যোগ দেয়াকে বৈধ করার জন্যে ব্যবহার করতে চায়। এই ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য নিচে দেয়া হলো এবং আমরা আল্লাহর সাহায্য কামনা করছিঃ যে ব্যক্তি এই প্রতারণামূলক অজুহাত ব্যবহার করতে চায়, হয় তারা বুঝে না আল-ফুজুল সংগঠনটি আসলে কি ছিল এবং সে এমন বিষয়ে কথা বলছে যে বিষয়ে তার জ্ঞান নেই অথবা সে মূল ব্যাপারটা জানে এবং সে সত্যের সঙ্গে মিথ্যার, আলোর সঙ্গে অন্ধকারের এবং শিরক এর সঙ্গে ইসলামের সংমিশ্রণ করতে চাচ্ছে। ইবনে ইসহাক, ইবনে কাসির, এবং আল-কুরতুবি (রহ.) উলেখ করেছেন-আল-ফুজুল সংগঠনটি তখনই গঠন করা হয়েছিল যখন কুরাইশের কিছু গোত্র আব্দুলাহ বিন জাদান-এর সম্মানার্থে তার বাড়িতে একত্রিত হয়েছিলেন। তারা সকলে এতে একমত হয়েছিলেন যে যখনই মক্কায় তারা কোন নির্যাতিত লোক দেখবে, তারা তাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সাহায্য করবে যতক্ষণ পর্যন্ত অত্যাচারী অত্যাচার বন্ধ না করে। কুরাইশরা তখন এই সংগঠনটির নাম দিল ‘আল-ফুজুল’ সংগঠন যার অর্থ ‘নৈতিক উৎকর্ষতার’ একটি সংঘ। ইবনে কাসির (রহ.) আরও বলেছেনঃ “আল-ফুজুল সংগঠনটি ছিল আরবদের জানা সবচেয়ে পবিত্র এবং সবচেয়ে সম্মানজনক সংগঠন। প্রথম যে ব্যক্তি এই ব্যাপারে কথা বলেছিলেন এবং এর দিকে আহবান করেছিলেন তিনি হলেন আল-যুবাইর বিন আব্দাল-মুত্তালিব। এই সংগঠনটি সংগঠিত হয়ে ছিল যুবাইদ গোত্রের এক লোকের কারণে। সে কিছু ব্যবসায়িক পণ্য নিয়ে মক্কায় এসেছিল। আল-আস ইবনে ওয়ায়িল তাকে আক্রমন করে তার পণ্য সামগ্রী ছিনিয়ে নেয়। তখন আল-যুবাইদী আল-আহলাফ গোত্রের কিছু লোককে সাহায্যের জন্যে আহবান করে কিন্তু তারা আল-আস বিন ওয়ায়িল-এর বিপক্ষে তাকে সাহায্য করতে অস্বীকার করে এবং আল-যুবাইদীকে অপমান করে। আল-যুবাইদী তার ক্ষতিপূরণের জন্যে পরের দিন সূর্য উদয়ের সময় আবূ-কুবায়স পাহাড়ের কাছে গেলেন যখন কুরাইশরা কাবার প্রাঙ্গনে সভা করছিল। তিনি তাদেরকে সাহায্যের জন্যে আহবান করলেন এবং কিছু কবিতা আবৃত্তি করলেন। তখন আল-যুবাইর বিন আব্দাল-মুত্তালিব দাড়িয়ে গেলেন এবং বললেনঃ তার জন্যে কি কোন সমতা বিধানকারী নেই? এর পরই হাশিম, যুহরাহ এবং তাইম ইবনে বিন মুর্রা আব্দুল্লাহ ইবনে জাদ’আনের বাড়িতে একত্রিত হলেন। আবদুল্লাহ ইবনে জাদ’আন তাদের জন্যে কিছু খাবার তৈরী করলেন। তারপর তারা নিষিদ্ধ মাসে যুলকা’দায় একত্রিত হয়ে আল্লাহর নামে শপথ করে এই মর্মে অঙ্গীকারবদ্ধ হন যে, তারা অত্যাচারিতের পক্ষে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করবেন যাতে করে জালিম মজলুমের পাওনা আদায় করতে বাধ্য হয়। যতদিন পর্যন্ত সমুদ্রে ঢেউ উত্থিত হবে, যতদিন পর্যন্ত হেরা ও ছাবীর পর্বতদ্বয় আপন স্থানে স্থির থাকবে, ততদিন পর্যন্ত তাদের এই অঙ্গীকার অব্যাহত থাকবে। আর জীবন যাত্রায় তারা একে অপরের সাহায্য করবে। তারপর তারা আস ইবনে ওয়ায়িল-এর নিকট গিয়ে তার থেকে যুবাইদীর পণ্য উদ্ধার করে তাকে ফেরত দেন। একটি গরীব পর্যায়ের হাদীসে কাসিম ইবনে ছাবিত উলেখ করেন, কাছ’আম গোত্রের এক ব্যক্তি হজ্জ কিংবা উমরাহ উপলক্ষে মক্কায় আগমন করে। তার একটি কন্যা তার সঙ্গে ছিল। মেয়েটি ছিল অত্যন্ত রূপসী এবং তার নাম ছিল আল-কাতুল। নাবীহ ইব্ন হাজ্জাজ মেয়েটিকে পিতার নিকট হতে অপহরণ করে নিয়ে লুকিয়ে রাখে। ফলে কাছ’আমী লোকটি তার মেয়েকে উদ্ধারের ফরিয়াদ জানায়। তাকে তখন বলা লো, তুমি “হিলফুল ফুজুল” সংগঠনের শরণাপন্ন হও। লোকটি কা’বার নিকটে দাঁড়িয়ে হাঁক দিল, হিলফুল ফুজুলের সদস্যগণ কোথায়? সঙ্গে সঙ্গে হিলফুল ফুজুল-এর কর্মীগণ কোষমুক্ত তরবারি হাতে ছুটে আসে এবং বলে, তোমার সাহায্যকারীরা হাজির; তোমার কি হয়েছে? লোকটি বলল, নাবীয়াহ আমার কন্যাকে ধর্ষন করেছে এবং তাকে জোর করে আটকে রেখেছে। অভিযোগ শুনে তারা লোকটিকে নিয়ে নাবীয়াহ-এর গৃহের দরজায় গিয়ে উপস্থিত হন। নাবীয়াহ বেরিয়ে আসলে তারা বলেন, “মেয়েটিকে নিয়ে আয়। তুই তো জানিস আমরা কারা, কি কাজের শপথ নিয়েছি আমরা!” নাবীয়াহ বলল, “ঠিক আছে, তাই করছি, তবে আমাকে একটি মাত্র রাতের জন্য মেয়েটিকে রাখতে দাও!” তারা উত্তরে বলেছিল- “না কক্ষণো না, একটি উটের দুগ্ধ দোহন করার সময়ের জন্য নয়।” তারপর সেই মুহূর্তেই নাবীয়াহ মেয়েটিকে ফিরিয়ে দিয়েছিল।”
আল-যুবাইর আল-ফুজুল সম্পর্কে নিম্নের কবিতা লিখেছিলেনঃ
আল-ফুজুল অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং সংগঠিত
থাকতে দেয়া হবে না কোন অত্যাচারীকে মক্কায়
তারা অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং ঐক্যবদ্ধ এ ব্যাপারে
সুতরাং প্রতিবেশী এবং দুর্বলরা ছিল নিরাপদ তাদের দ্বারা।
এই সংগঠনটি এবং তাদের উদ্দেশ্যকে আজকের মানুষ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করছে। আল-বায়হাকী এবং আল হামিদী বর্ণনা করেন যে রাসূল (ﷺ) বলেছেনঃ “আমি আব্দুলাহ ইবনে জাদ’আনের ঘরে আল-ফুজুল এর অঙ্গীকার সভায় উপস্থিত ছিলাম। সেই অঙ্গীকার ভঙ্গকরার বিনিময়ে যদি আমাকে লাল উটও দেয়া হয় তবু আমি তাতে সম্মত হব না। আর ইসলামের আমলেও যদি তার প্রতি আহবান করা হতো আমি তাতে সাড়া দিতাম।” এবং আল-হামিদী আরও যুক্ত করেন, তারা সংগঠিত হয়ে ছিল মানুষকে তার ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং অত্যাচারীর দ্বারা কেউ যেন অত্যাচারিত না হয়- এই মহৎ উদ্দেশ্যে। এখন আমরা এই সব মানুষদের জিজ্ঞাসা করছি বলুনঃ “কি মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে আপনাদের এই সংঘে যার জন্য আপনারা যোগদান করেছেন তাদের সাথে যারা আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করে শয়তানের সংবিধান অনুসারে দেশ শাসন করছে?” এবং আমরা জানি যে এই পরিষদের কার্যক্রম শুরু হয় কুফরী সংবিধানকে, এর আইনকে, এর দাস এবং ত্বাগুতের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যমে অথচ তারা আল্লাহ দ্বীন এবং তার অনুসারীদেরকে আক্রমন ও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, এবং তারা আল্লাহর শত্রুদের, তাদের দ্বীনের সাহায্য ও তাদের দ্বীন অনুসরণ করে যাচ্ছে। আল-ফুজুল সংগঠনটি কি আল্লাহর সাথে কুফরী বা শির্ক করেছিল, আল্লাহর পাশাপাশি অন্য কোন আইন দিয়েছিল এবং আল্লাহর দ্বীনকে বাদ দিয়ে কি অন্য কোন দ্বীনকে সম্মান দেখিয়েছিল? যদি আপনি হ্যাঁ বলেন তাহলে আপনি দাবী করছেন যে, রাসূল (ﷺ) কুফরীতে অংশ নিয়েছিলেন, আল্লাহর বিধানের পাশাপাশি বিধান দিয়েছিলেন, তিনি এমন দ্বীনের অনুসরণ করেছিলেন যা আল্লাহর দ্বীন নয় এবং যদি ইসলাম আসার পরও তাকে তাতে যোগ দেয়ার জন্যে ডাকা হত তাহলে তিনি যোগ দিতেন! (নাউযুবিলাহ!) যে কেউ যদি এমন দাবী করেন, তাহলে তিনি তার নিজের কুফরী, পথভ্রষ্টতা, নাস্তিকতাকে মানুষ ও জ্বীনদের কাছে প্রকাশ করে দিবেন।
যদি আপনি বলেনঃ এতে কোন কুফরী ছিল না, না তারা আল্লাহর পাশাপাশি আইন দিয়ে ছিল অথবা এতে কোন খারাপ ছিল না। এটার কাজ ছিল শুধু মাত্র অত্যাচারিত ও বিপদ গ্রস্থদের সাহায্য করা। তাহলে কি ভাবে আপনি এর সাথে একটা কুফরী, পথভ্রষ্ট, আল্লাহ্কে অমান্যকারী পরিষদের তুলনা করেন? এখন, আমরা আপনাদের একটি স্পষ্ট ও সাবলীল প্রশ্ন করছি এবং আমরা এর উত্তরের মাধ্যমে রাসূল (ﷺ)-এর সম্পর্কে আপনাদের একটি বিশুদ্ধ, সুস্পষ্ট সাক্ষ্য চাচ্ছি যা হবে লিখিত। প্রশ্নটি হলো : যদি পরিস্থিতি এরূপ হয় যে অত্যাচারিত ও বিপদগ্রস্থ লোকদের সাহায্য করার জন্যে আল-ফুজুল সদস্যদেরকে প্রথমে কুরয়াইশদের দেবতা লাত, উজ্জা ও মানাত-এর নামে এবং কুরাইশের কাফেরদের দ্বীনের, এর মূর্তি, ছবির প্রতি আনুগত্যের শপথ করতে হতো, তাহলে কি রাসূল (ﷺ) এতে অংশ গ্রহণ করতেন অথবা তিনি কি এর সাথে এক মত হতেন যদি ইসলাম আসার পর তাকে এ ধরনের কাজে ডাকা হত?
যদি তারা বলেঃ “হ্যাঁ, তিনি রাজি হতেন এবং এতে অংশ নিতেন … এবং তাই হয়ে ছিল”, তাহলে মুসলিম জাতি তার থেকে মুক্ত এবং তিনি তাদের থেকে মুক্ত এবং তিনি তার কুফরকে আল্লাহর সমস্ত সৃষ্টির সামনে প্রকাশ করে দিলেন। কিন্তু যদি তারা বলেঃ “না তিনি তা করতেন না”, তাহলে আমরা বলিঃ “এই সব ভ্রান্ত অজুহাত, অযৌক্তিক চিন্তা ভাবনা এবং মূর্খতাকে ত্যাগ করুন এবং শিক্ষা গ্রহণ করুন যুক্তি কি রূপ হওয়া উচিত।”
পঞ্চম অযৌক্তিক অজুহাতঃ
তাদের এই যোগদানের পেছনে রয়েছে মহৎ উদ্দেশ্য
তারা বলে এই পরিষদে যোগ দেয়ার পিছনে অনেকগুলো ভালো উদ্দেশ্য আছে। এবং তাদের অনেকই এমনও দাবী করেন যে পরিষদ ভাল উদ্দেশ্যে করা হয়েছে, তারা বলেঃ “এটা হচ্ছে আল্লাহর দিকে ডাকা, সঠিক কথা বলা।”
এবং তারা আরও বলেঃ “এর মাধ্যমে কিছু খারাপ দূর হয়, আল্লাহর দিকে ডাকার উপর এবং যারা ডাকছে তাদের উপর চাপ কিছুটা লাঘব হয়।” তারা বলেঃ “আমরা এই স্থান ও পরিষদ খ্রিষ্টান, কমিউনিষ্ট এবং অন্যদের জন্যে ছেড়ে দিতে পারি না।” এবং কেউ কেউ আরও বাড়িয়ে বলেঃ “আমরা এ কাজ করছি আলাপ আলোচনা বা পরামর্শের মাধ্যমে আল্লাহর বিধান প্রয়োগ করার জন্যে।” এবং তাদের আরো অনেক স্বপ্ন ও ইচ্ছা এই উদ্দেশ্যকে ঘিরে আছে।
এর উত্তরে আমাদের বক্তব্য নিম্নে দেয়া হলো এবং আমরা আল্লাহর সাহায্য কামনা করছি। আমরা প্রথমে জিজ্ঞাসা করতে চাইঃ “কে তার দাসদের উদ্দেশ্যকে নির্দিষ্ট করে দেন এবং কে তা সম্পূর্ণ রূপে জানেন? আল্লাহ! যিনি সব কিছু জানেন, তিঁনি না আপনি? যদি আপনারা বলেনঃ “আমরা জানি …”। আমরা বলিঃ “তোমরা তোমাদের দ্বীনে, এবং আমরা আমাদের দ্বীনে, তোমরা যাদের ইবাদত কর আমরা তাদের ইবাদত করি না এবং আমরা যাঁর ইবাদত করি তোমরা তাঁর ইবাদত কর না” কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “এমন কিছু নেই যা আমি লিখে রাখিনি।” এবং এই সব গণতন্ত্র পন্থীদের প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহ্ বলছেনঃ
أفحسبتم أنما خلقناكم عبثاً
“তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টিনকরেছি …” [সূরা মু’মিনূন ২৩: ১১৫]
তিনি আরও বলেছেনঃ “তোমরা কি মনে কর যে আমি কোন কারণ ছাড়াই তোমাদের সৃষ্টি করেছে?” এটাই আমাদের দ্বীন কিন্তু গণতন্ত্র নামক দ্বীনে, এই শক্তিশালী সুস্পষ্ট আয়াতগুলোকে বিবেচনা করা হয় না কারণ তাদের মতে মানুষ নিজেই নিজের বিধান দাতা। গনতন্ত্র মতবাদে বিশ্বাসীরা বলেঃ “হ্যাঁ, মানুষকে কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই সৃষ্টি করা হয়েছে। সে যা ইচ্ছা তাই পছন্দ করতে পারে এবং যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং সে যে কোন বিধান ও দ্বীন ইচ্ছা হলে গ্রহণ করতে পারে বা বর্জন করতে পারে। এটা এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না যে নব উদ্ভাবিত বিধান আল্লাহর বিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তা সংবিধান ও তাদের আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা এবং তার সাথে সাংঘর্ষিক নয়। তোমাদের উপর ও আল্লাহর পাশাপাশি তোমরা যাদের ইবাদত কর তাদের উপর অভিশাপ।”
যদি তারা বলেঃ “আল্লাহই সীমা রেখা নির্দিষ্ট করে দেন এবং তিনি সব কিছু বিবেচনা করে উদ্দেশ্য নির্ধারণ করেন কারণ তিনি সব কিছুর সৃষ্টি কর্তা এবং তিনি জানেন তাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পূর্ণরূপে।”
أفٍّ لكم ولما تعبدون من دون االله أفلا تعقلون
“এবং তিনি জানেন সমস্ত কিছুর রহস্য, তিনি সব কিছু জানেন।” [সূরা আম্বিয়া ২১: ৬৭]
আমরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করছিঃ “আল্লাহ্ কিতাবে সবচেয়ে বড় কোন উদ্দেশ্যের কথা বলেছেন এবং তাঁর রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন ইসলামের দিকে ডাকার জন্যে এবং কোন উদ্দেশ্যে আল্লাহ কিতাব নাযিল করেছেন এবং হুকুম করেছেন জিহাদের এবং শহীদ হওয়ার জন্যে ? ইসলামিক রাষ্ট্র যে উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়, সেই উদ্দেশ্যে কি ? ওহে, খিলাফার প্রচারকরা ? যদি তারা গৌন উদ্দেশ্যগুলোর কথা বলে এবং দ্বীনের মূল ভিত্তিকে পরিবর্তন করে ফেলে, আমরা বলিঃ এই সব পাগলামী, মোহ ছাড়েন এবং দ্বীনের প্রকৃত উৎস সম্পর্কে জানেন। ‘লা ইলাহা’র অর্থ ও তাৎপর্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করুন কারণ এই জ্ঞান অর্জন ও এর উপর আমল করা ছাড়া কোন ইবাদত, কোন জিহাদ, কোন শাহাদাতই গ্রহণ যোগ্য হবে না। যদি তারা বলেঃ “সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হলো তাওহীদের উপর থাকা এবং ঐসব কিছু থেকে দূরে থাকা যা এর বিপরীত যেমন র্শিক।” আমরা বলিঃ “এটা কি তাহলে যুক্তি সংঙ্গত যে, সবচেয়ে বড় এই উদ্দেশ্যকে ধ্বংস করা এবং ত্বাগুতের দ্বীন গণতন্ত্রকে গ্রহণ করার জন্যে রাজী হওয়া এবং এমন বিধানকে সম্মান করা যা আল্লাহর বিধান নয় এবং ঐসব বিধান দাতাকে অনুসরণ করা যারা আল্লাহর পাশাপাশি বিধান দেয়? সুতরাং যদি তা করেন তাহলে আপনি সৃষ্টির সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হলো তাওহীদ (ত্বাগুতকে অস্বীকার করা এবং আল্লাহর একাত্ববাদে বিশ্বাস করা), সেই তাওহীদকে ধ্বংস করে দিবেন, কিছু গৌন উদ্দেশ্যের জন্যে।” কোন্ নীতি, কোন বিধান, কোন দ্বীন আপনাদের এই পন্থার সাথে একমত হতে পারে, শুধু কাফেরদের দ্বীন গণতন্ত্র ছাড়া? মুশরিকদের পরিষদে আপনারা কোন দ্বীনের দিকে ডাকছেন, কোন অধিকারের কথা বলছেন যখন আপনারা ইসলামের মূলনীতি এবং এর দিকে আহবানের মূল উৎসকে মাটির নিচে কবর দিয়েছেন ? ইসলামের গৌন ও ক্ষুদ্র বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্যে এর উৎস এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যকে কি কবর দেয়া উচিৎ? আপনারা ইসলামের ছোট ও গৌন উদ্দেশ্য যেমনঃ ‘মদ নিষিদ্ধ করা, কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণা দেয়ার জন্যে ত্বাগুতের কাছে যাচ্ছেন, যদিও তাদেরকে কাফের হিসেবে ঘোষণা না দিলেও তারা কাফের। ইসলামের মূল উদ্দেশ্য বিসর্জন দিয়ে আপনারা তাদের সাথে কী আলোচনা করছেন? আপনাদের এই বিষয়ে কোন দলিল আছে কি? যদি আপনি বলেনঃ “আল্লাহ্ বলেছেন… , আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন …”, আপনি মিথ্যা বলছেন কারণ গণতন্ত্র নামক দ্বীনে তাঁদের কোন গুরুত্ব নেই, তাদের হুকুমকে তারা মানে না। তাদের নিজেদের সংবিধান অনুসারে যা বলা বা অনুমোদন করা হয়েছে, তারা তারই অনুসরণ করে। যদি বলেন সংবিধানের দ্বিতীয় ধারা অনুসারে … এবং ধারা (২৪) …, ধারা (২৫) অনুসারে এবং অন্যান্য কুফরী আইন অনুসারে … ,” তাহলে এর চেয়ে অধিক কুফরী, র্শিক ও নাস্তিকতা আর কারও মধ্যে আছে কি? যারা গণতন্ত্রের পথ অবলম্বন করছে এরপরও কি তাদের কোন ভিত্তি বা তাওহীদ আছে?
ألمْ تَرَ إِلَى الَّذِینَ یَزْعُمُونَ أنَّھُمْ ءَامَنُواْ بِمَا أنْزِلَ إلَیْكَ وَمَا أنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ یُرِیدُونَ أن یَتَحَاكَمُواْ إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أمِرُواْ أن یَكْفُرُواْ بِه وِیُرِیدُ الشَّیْطَانُ أَن یُضِلَّھُمْ ضَلاَلاً بَعِیداً
“তুমি কি তাদেরকে দেখ নাই যারা দাবি করে যে, তোমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তারা বিশ্বাস করে, অথচ তারা ত্বাগুতের কাছে বিচার ফয়সালার জন্যে যেতে চায়, যদিও তা প্রত্যাখ্যান করার জন্যে তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কিন্তু শয়তান চায় তাদেরকে সঠিক পথ থেকে বহু দূরে নিয়ে যেতে?” [সূরা নিসা ৪: ৬০]
উত্তর দিন, হে সংশোধনের পথ অবলম্বনকারীগণ, যারা এই শিক্ষা দিচ্ছেন কুফরীর কেন্দ্রস্থলগুলোতে শিরক ও কুফর অবলম্বন না করে কি কোন আইনের বাস্তবায়ন সম্ভব? যেই আল্লাহ্ শরীআতের বাস্তবায়নের জন্য আপনারা যে এত উদ্বিগ্ন, সেই শরীআকে কি আপনারা এই পথে প্রয়োগ করবেন? আপনারা কি জানেন না এটি একটি রুদ্ধ কাফিরদের পথ? শুধু যুক্তির কারণেই যদি ধরে নেই আপনাদের এই কর্মপন্থা সফল হবে, তবুও এটি আল্লাহর বিধান হবে না; তা হবে মানুষের তৈরী সংবিধানের আইন। তা হবে অধিকাংশ লোকের আইন। তা কখনও আল্লাহর বিধান হবে না যতক্ষণ না আপনারা আল্লাহর হুকুম ও বিধানের কাছে আত্মসমর্পন করবেন এবং যতক্ষণ না আপনারা বিনয়ের সাথে আল্লাহর আনুগত্য করবেন। কিন্তু এই আত্ম সমর্পন যখন গণতন্ত্র এবং মানুষের তৈরী সংবিধানের বিধান ও হুকুমের কাছে হবে, তা হবে ত্বাগুতের বিধানের কাছে আত্ম সমর্পন যদিও তা অনেক ব্যাপারে আল্লাহর হুকুমের সাথে একমত হয়। আল্লাহ বলছেনঃ
إن الحكم ِإلا الله
“কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর”। তিনি বলেননিঃ “বিধান দেয়ার ক্ষমতা মানুষের”। তিনি বলেছেনঃ
وأن احكم بینھم بما أنز ل االله
“সুতরাং তাদের মাঝে ফয়সালা কর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দ্বারা”।
তিনি বলেননিঃ “সুতরাং তাদের মাঝে ফয়সালা কর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার মধ্যে থেকে যা তোমাদের পছন্দ হয়” অথবা “তাদের মাঝে ফয়সালা কর সংবিধান ও এর আইন দ্বারা”। এটা বলে গণতন্ত্র ও মানুষের তৈরী সংবিধানের গোলামেরা। তুমি কোন পক্ষে? তুমি কি এখনও তোমার ভ্রান্ত এবং পুরানো মতবাদের পক্ষে? তুমি কি তোমার বিবেক খুইয়েছ? তুমি কি দেখ না তোমার আশে পাশে কি ঘটেছে যারা গণতন্ত্রের পথ ধরে ছিল? আমাদের জন্যে উদাহরণ হয়ে আছে আলজেরিয়া, কুয়েত, মিশর এবং আরও অনেকে। তুমি কি এখনও নিশ্চিত নও যে গণতন্ত্র কাফেরদের খেলা? গণতন্ত্র কাফেরদের নিখুঁত ভাবে তৈরী একটি হাস্য নাট্য? তুমি কি এখনও নিশ্চিত নও যে, এই পরামর্শ পরিষদ ত্বাগুতের একটি খেলা? সে যখন চায় তখন তা শুরু করে আবার যখন চায় তা বন্ধ করে দেয়? ত্বাগুতের অনুমতি ছাড়া কোন আইনই বাস্তবায়ন করা যায় না। তবে কেন এই সুনিশ্চিত কুফরের ব্যাপারে এত যুক্তি-অজুহাত? এটা পরিষ্কার হীনমন্যতা। এত কিছুর পরও তাদের বলতে শোনা যায়ঃ “কিভাবে আমরা এই সংসদ কমিউনিষ্ট, খ্রিষ্টান এবং অন্য সব নাস্তিকদের কাছে ছেড়ে দিব?”। তাহলে যাও তাদের সাথে জাহান্নামে যাও! আল্লাহ বলছেনঃ
وَلَا يَحْزُنكَ الَّذِينَ يُسٰرِعُونَ فِى الْكُفْرِ ۚ إِنَّهُمْ لَن يَضُرُّوا اللَّهَ شَيْـًٔا ۗ يُرِيدُ اللَّهُ أَلَّا يَجْعَلَ لَهُمْ حَظًّا فِى الْءَاخِرَةِ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
“এবং তাদের দিকে ঝুঁকে যেও না যারা কুফরীর দিকে দৌড়ে যায়। তারা আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারে না এবং আল্লাহ পরকালে তাদের কিছুই দেবেন না, এবং তাদের শাস্তি হবে অত্যন্ত কঠোর।” [সূরা আলি ‘ইমরান ৩: ১৭৬]
যদি আপনি এই সব নাস্তিকদের সাথে যোগদেন তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি আপনি তাদের সাথে শিরক-এ অংশ গ্রহণ করাকে উপভোগ করছেন। যদি আপনি চান তাহলে তাদের কুফরী ও শিরক-এ আপনি অংশ নিতে পারেন;
তবে জেনে রাখুন, তাদের সাথে এই অংশ গ্রহণ এই পৃথিবীতে শেষ হয়ে যাবে না। এটা আখিরাতেও অটুট থাকবে, যে রূপ আল্লাহ্ সূরা নিসায় বলেছেন। তিনি প্রথমে সর্তক করেছেন এই সব পরিষদে যোগ দেয়ার ব্যাপারে এবং মানুষকে এই সব পরামর্শ পরিষদ এড়িয়ে চলতে আদেশ করেছেন এবং তাদের সাথে বসতে নিষেধ করেছেন। যদি কেউ বসে, সে তাদেরই একজন বলে বিবেচিত হবে। আল্লাহ্ বলেনঃ
“কিতাবে তোমাদের প্রতি তিনি তো অবতীর্ণ করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে, আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে এবং তাকে বিদ্রুপ করা হচ্ছে, তখন যে পর্যন্ত তারা অন্য প্রসংগে লিপ্ত না হবে তোমরা তাদের সাথে বসিও না, অন্যথায় তোমরাও তাদের মত হবে। মুনাফিক এবং কাফির সকলকেই আল্লাহ তো জাহান্নামে একত্র করবেন।” [সূরা নিসা ৪: ১৪০]
- বাংলাদেশের সংবিধানের ধারা ৭-এর ২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছেঃ “জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে।”
- তৃতীয় তফসিল-শপথ ও ঘোষণা অনুচ্ছেদের ২(ক )এ বলা হয়েছে “আমি ………….. সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ করিতেছি যে, আমি আইন অনুযায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী (বা মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী) পদের কর্তব্য বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিব;
-আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব;
-আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তাবিধান করিব;
-এবং আমি ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হইয়া সকলের প্রতি আইন অনুযায়ী যথাবিহীত আচরণ করিব।”
তৃতীয় তফসিল- শপথ ও ঘোষণা অনুচ্ছেদের ৫-এ বলা হয়েছে, “আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইয়া সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ করিতেছি যে, আমি যে কর্তব্যভার গ্রহণ করিতে যাইতেছি, তাহা আইন-অনুযায়ী ও বিশ্বস্তার সহিত পালন করিব;
-আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব;
-আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তাবিধান করিব; এবং সংসদ সদস্যরূপে আমার কর্তব্য পালনকে ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত হইতে দিব না।”
এখানে শুধু আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের (ﷺ) সুন্নাহ্কে প্রত্যাখ্যান করা হয়নি বরং সংসদ সদস্যরা আল্লাহর ও রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্যের পরিবর্তে এই সংবিধানের রক্ষা, সমর্থন এবং একে টিকিয়ে রাখতে শপথ করছেন। এরপরও কি আপনি নিশ্চিত নন যে, এটা শিরক, এটা পরিষ্কার কুফর? আপনি কি জানেন না এটি আল্লাহর দ্বীন নয় এবং এটি একত্ববাদের দ্বীন নয় ? তাহলে কেন আপনি তা গ্রহণ করছেন? এটা তাদের জন্যে ছেড়ে দিন, এটাকে পরিত্যাগ করুন এবং একে এড়িয়ে চলুন। এটা যাদের দ্বীন তাদের কাছে ছেড়ে দিন এবং ইব্রাহীম (আ.)-এর দ্বীনের অনুসরণ করুন। ইউসুফ (আ.) তার দুর্বলতার সময়ে, জেলে থাকার সময়ে যে রূপ বলেছেন, আপনিও সে রূপ বলুনঃ
“যে সম্প্রদায় আল্লাহতে ও আখিরাতে বিশ্বাস করে না, আমি তাদের মতবাদ বর্জন করছি। আমি আমার পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম, ইসহাক এবং ইয়াকুবের মতবাদের অনুসরণ করি। আল্লাহর সহিত কোন বস্তুকে শরীক করা আমাদের কাজ নয়। ইহা আমাদের ও সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।” [সূরা ইউসুফ ১২: ৩৭-৩৮]
হে মানুষেরা! ত্বাগুতকে এবং তার পরামর্শসভাকে বর্জন করুন, তাদেরকে ত্যাগ করুন এবং তাদেরকে অস্বীকার করুন যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের দ্বীনকে (মানুষের তৈরী যে কোন ধরনের জীবন ব্যবস্থা) ছেড়ে ইসলামকে গ্রহণ না করে। এটাই হচ্ছে সুস্পষ্ট পথ, স্বচ্ছ আলোর মত কিন্তু অধিকাংশ লোকই জানে না।
“আল্লাহর ইবাদত করবার ও ত্বাগুতকে বর্জন করবার নির্দেশ দিবার জন্য আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি। অতঃপর তাদের কতককে আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেন এবং কতকের উপর পথভ্রান্তি সাব্যস্ত হয়েছিল” [সূরা নাহল ১৬: ৩৬]।
আল্লাহ আরও বলেনঃ “হে কারা সঙ্গীরা ভিন্ন ভিন্ন বহু প্রতিপালক শ্রেয় না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ ? তাঁকে ছেড়ে তোমরা কেবল কতগুলো নামের ইবাদত করছো, যেই নাম তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরা রেখেছো, এইগুলোর কোন প্রমাণ আল্লাহ পাঠান নাই। বিধান দেবার অধিকার কেবল আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন অন্য কারও ইবাদত না করতে, কেবল তাঁর ব্যতীত, এটাই সরল দ্বীন কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ইহা আবগত নয়”। [সূরা ইউসুফঃ ৩৯-৪০]
তাদেরকে এড়িয়ে চলুন, তাদেরকে ত্যাগ করুন, তাদের লোকদেরকে এবং তাদের র্শিকী মতবাদ ত্যাগ করুন খুব বেশী দেরী হয়ে যাওয়ার পূর্বে অর্থাৎ মহান বিচার দিবস আসার পূর্বেই। আপনার ইচ্ছা, সাধনা, পরিতাপ সেই দিন কোন কাজেই আসবে না। আল্লাহ্ বলছেনঃ “আর যারা অনুসরণ করেছিল তারা বলবে, ‘হায়! যদি একবার আমাদের প্রত্যাবর্তন ঘটত তবে আমরাও তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতাম যেমন তারা আমাদের সম্পর্ক ছিন্ন করল।’ এইভাবে আল্লাহ্ তাদের কার্যাবলীকে পরিতাপরূপে তাদেরকে দেখাবেন আর তারা কখনও অগ্নি হতে বের হতে পারবে না”। [সূরা বাকারা ২: ১৬৭]
এখনই তাদের পরিহার করুন এবং তাদেরকে বলুনঃ “তোমরা ইব্রাহীম (আ.) দ্বীনের ও নবীদের পথের অনুসরণ কর”,
যে রূপ আমরা বলছিঃ
ওহে, মানুষের তৈরী আইনের দাসেরা… এবং সংবিধানের দাসেরা …
ওহে, গণতন্ত্র নামক দ্বীনের সেবকেরা …
ওহে, আইনদাতারা …
আমরা তোমাদের এবং তোমাদের দ্বীনকে বর্জন করছি …
আমরা তোমাদেরকে অস্বীকার করছি
এবং আরও অস্বীকার করছি তোমাদের র্শিকী সংবিধানকে
এবং তোমাদের মুশরিকদের পরামর্শসভাকে
এবং তোমাদের সাথে আমাদের শত্রুতা ও ঘৃণা শুরু হলো
চিরদিনের জন্যে যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহ্তে ঈমান আন।
সংসদীয় বিষয়ঃ বিবেচনা করুন, চিন্তা করুন ওহে জ্ঞানবান সমঝদার মানুষেরা
“আমি ভাবতে পারতাম না যে আল্লাহ তাঁর কিতাব ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর মাধ্যমে যেই শরীয়াহ দিয়েছেন, তার জন্য তাঁর বান্দাদের অনুমোদন প্রয়োজন। কোন প্রকৃত মু’মিন মনে করে না যে, আল্লাহ্ যে বিধান নাযিল করেছেন তাঁর কিতাব ও রাসূল (ﷺ)-এর মাধ্যমে, তা মানার ক্ষেত্রে তাঁর বান্দার অনুমোদনের প্রয়োজন আছে। কারণ আল্লাহ বলেছেনঃ
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ ۗ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدْ ضَلَّ ضَلٰلًا مُّبِينًا
“আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোন মু’মিন পুরুষ বা মু’মিন নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে না। কেউ আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সে তো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে” [সূরা আহযাব ৩৩: ৩৬]
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتّٰى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِىٓ أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
“কিন্তু না, তোমার রবের শপথ! তারা মু’মিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচার ভার তোমাদের উপর অর্পণ না করে; অতঃপর তোমার সিন্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেয়।” [সূরা নিসা ৪: ৬৫]
এবং তিনি আরও বলেছেনঃ
“তারা কি জানে না যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে তার জন্যে তো আছে জাহান্নামের অগ্নি, যেখানে সে স্থায়ী হবে? উহাই চরম লাঞ্ছনা।” [সূরা তওবা ৯: ৬৩]
কিন্তু দেখা যাচ্ছে আল্লাহর বিধান তার পূর্ণ পবিত্রতা নিয়ে আল-কুর’আনে আজও বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর কতিপয় বান্দারা সংসদের মাধ্যমে একে আইন হিসেবে পাশ করতে চাইছে! আল্লাহর বান্দার সিদ্ধান্ত যদি আল্লাহর দেয়া বিধান থেকে ভিন্ন হয়, তাঁর বান্দার সিদ্ধান্তই আইন হয়ে যাবে এবং তা আইন সভা বা সংসদের মাধ্যমে পাশ হয়ে সরকারের কার্যনির্বাহী পরিষদ দ্বারা তা বাস্তবায়িত হবে যদিও তা কুর’আন-সুন্নাহর বিরোধী। এর প্রমাণ হচ্ছে, আল্লাহ মদ নিষিদ্ধ করেছেন কিন্তু সংসদ তা বৈধ করেছে, আল্লাহ তাঁর দেয়া সীমানা রক্ষা করতে বলেছেন কিন্তু সংসদ তা ভঙ্গ করেছে। মূল কথা হচ্ছে, সংসদের সিদ্ধান্তই আইন হয়ে যাবে যদিও তা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক।”
أَوْ تَقُولُوا لَوْ أَنَّآ أُنزِلَ عَلَيْنَا الْكِتٰبُ لَكُنَّآ أَهْدٰى مِنْهُمْ ۚ فَقَدْ جَآءَكُم بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ ۚ فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن كَذَّبَ بِـَٔايٰتِ اللَّهِ وَصَدَفَ عَنْهَا ۗ سَنَجْزِى الَّذِينَ يَصْدِفُونَ عَنْ ءَايٰتِنَا سُوٓءَ الْعَذَابِ بِمَا كَانُوا يَصْدِفُونَ
“এখন তো তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এক সুস্পষ্ট দলীল, হিদায়াত ও রহমত এসেছে। অতঃপর যে কেউ আল্লাহর নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং তা হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে? যারা আমার নিদর্শনসমূহ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় সত্যবিমুখতার জন্যে আমি তাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিব।” [সূরা আন‘আম ৬: ১৫৭]
وَمَن يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنۢ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدٰى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِۦ مَا تَوَلّٰى وَنُصْلِهِۦ جَهَنَّمَ ۖ وَسَآءَتْ مَصِيرًا
“কারও নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মু’মিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দিব এবং জাহান্নামে তাহাকে দগ্ধ করব, আর উহা কত মন্দ আবাস।” [সূরা নিসা ৪: ১১৫]
***********
[1] এর মধ্যে ফেরেশতা, নবী বা ধার্মিক লোকরা অন্তর্ভূক্ত নয় যাদের ইবাদাত মানুষ করছে কিন্তু তারা তাদের তাদের ইবাদাত করতে বা তাদের ইলাহ হিসেবে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।[উদাহরণ স্বরূপ-ঈসা(আঃ)
[2] সূরা তাওবাহ ৯ : আয়াত ৩১
[3] মাজমু আল-ফাতাওয়া ২৮তম খন্ড,পৃষ্ঠা ২০১
[4] ই‘লাম আল-মুওয়াকক্বি‘য়ীন ১ম খন্ড, পৃষ্ট-৫০
[5] বাংলাদেশের সংবিধানের মূল ধারা নং ৭(১)ও ৭(২):
৭(১) প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কতৃত্বে কার্যকর হইবে।
[6] قال بعض المفسرين الذين معه: اتباعه اوالانبياء الذين علي طريقته
[7] হাদীসটি সহীহ-বিচার দিবসে বিশ্বাসীদের আল্লাহর সাক্ষাৎ পাওয়ার হাদিসটির অংশ বিশেষ।
[8] আবূ দাউদঃ কিতাবুল জিহাদ
[9] বাংলাদেশের সংবিধানের মূল ধারা নং ৭(২):
৭(২) জনগণের অভিপ্রায়ে পরম অভিব্যক্তিকরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্য পূর্ণ হয় তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ততখানি বাতিল হইবে।
একই কথা বলা হয়েছে ৩য় ভাগের ২৬ ধারায়। এবং সংবিধানের ৫ম ভাগের সংসদ নামক পরিচ্ছেদে সংসদ প্রতিষ্ঠা নামক ধারায় বলা হয়েছে:
৭(১) ‘জাতীয় সংসদ’ নামে বাংলাদেশের একটি সংসদ থাকিবে এবং এই সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে প্রজাতন্ত্রের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংসদের উপর ন্যস্ত হইবে।
[10] আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআনে বলেছেন যে, ইবরাহীম(আঃ) এই কথাটি তাঁর কওমের (জাতি) কাছে বলেছিলেন তাদের দেব-দেবীর অক্ষমতা প্রকাশ করার পর।
[11] সেক্যুলারিজমঃ সমাজ ও রাজনীতিকে ধর্ম থেকে আলাদা করা হয় যে মতবাদে তাই সেক্যুলামিজম , অর্থাৎ সমাজ ব্যবস্তা, রাষ্ট্র ব্যবস্থার রাজনীতি চলবে তার নিজস্ব নীতি অনুসারে। এতে ধর্মকে আনা যাবে না বা তা হবে ধর্মীয় অনুশাসন মুক্ত।
[12] সুতরাং আপনি যদি আপোষহীনভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চান, তবে আপনি হবেন একজন দেশদ্রোহী ও গণতন্ত্রের শত্রু।
[13] দুঃখজনক ব্যাপার, এই বিষয়টি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, কুয়েত, জর্ডান, সৌদি আরব, মিশর – এমন দেশে বিদ্যমান।
[14] উদাহরণ স্বরূপ আমাদের দেশের তথাকথিত ইসলামিক দলগুলো, যারা গণতন্ত্রকে ইসলামের একটি অংশ বানিয়ে নাম দিয়েছে – ইসলামী গণতন্ত্র। আমরা তাদের এই কুচক্রান্ত ও পথভ্রষ্টতা থেকে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট আশ্রয় চাই।
[15] বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় তফসিল- ‘শপথ ও ঘোষনা’ অনুচ্ছেদের ২(ক) বলা হয়েছেঃ “আমি সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ করিতেছি যে, আমি আইন অনুযায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী( বা মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, বা উপমন্ত্রী)পদের কতৃব্য বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিব;
-আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব।
-আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করিব।
-এবং আমি ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হইয়া সকলের প্রতি আইন অনুযায়ী যথাবিহীত আচরণ করিব।”
-এবং তৃতীয় তফসীল-‘শপথ ও ঘোষনা’ অনুচ্ছেদের ৫- এ বলা হয়েছে, আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইয়া সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ করিতেছি যে, আমি যে কতৃব্যভার গ্রহণ করিতে যাইতেছি, তাহা আইন -অনুযায়ী ও বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিব;
-আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব;
এবং সংসদ সদস্যরূপে আমার কতৃব্য পালনকে ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত হইতে দিব না।”
[16] সূরা ইউসূফ ১২: আয়াত ২৪
[17] সূরা নাহল ১৬:৩৬
[18] মুফাসসীরিনঃ যারা আল-কুরআনের তাফসীর বা ব্যাখ্যা করেন।
[19] ما كان لياخذ اخاه في دين الملك .. “রাজার আইনে তিনি তাঁর ভাইকে আটক করতে পারতেন না। সূরা ইউসূফ….. [১২:৭৬]
[20] বুখারী শরীফ : আবূ হুরাইরাহ রা: থেকে বর্ণিত।
[21] মাজমু আল-ফাতাওয়া খন্ড ২৮ : পৃষ্ঠা ৬৮
[22] মাজমু আল-ফাতাওয়া খন্ড ২০: পৃষ্ঠা ৫৬
[23] সহীহ মুসলিম
[24] আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া: খন্ড ৩য় : পৃষ্ঠা ২৭৭
[25] সূরা শূরা ৪২ : ৩৮।