ইসলামের দৃষ্টিতে গণতন্ত্র ও ভোটাভুটি

ইসলামের দৃষ্টিতে গণতন্ত্র ও ভোটাভুটি

শায়খ আবু কাতাদা আল ফিলিস্তিন (হাফিজাহুল্লাহ)

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং ভোটাভুটি

ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

শাইখ আবু কাতাদাহ আল ফিলিস্তিনি

[এটি শাইখের একটি খুতবাহ থেকে নেয়া হয়েছে। আত তিবয়ানকে দেয়া বিশেষ প্রশ্নের জবাব।]

দারুল ইরফান

১৪৩৮ হিজরী

অনুবাদকের কথা

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার জন্য, দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক শেষ নবী মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ উপর এবং তাঁর পরিবার, তাঁর সাহাবীগণ এবং কেয়ামত পর্যন্ত তাঁর সকল অনুসারীর উপর।

অতঃপরঃ

আমরা, তিবয়ান প্রকাশনী, অত্যন্ত আনন্দের সাথে পরিবেশন করছি শাইখ আবু কাতাদাহ উমার ইবনে মাহমুদ আবু উমার আল ফিলিস্তিনের সাথে রেকর্ডকৃত একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা শাইখকে কারামুক্ত করুন। এই পরিবেশনায় প্রায় চল্লিশটি প্রশ্ন-উত্তর গুছানো হয়েছিল, যেগুলো অনেকগুলো পর্বে পরিবেশন করার কথা ছিল। শাইখ প্রথম পর্বটি সম্পন্ন করার পর আর বাকিগুলো করতে পারেননি, কারণ তিনি গ্রেফতার হন এবং এখন পর্যন্ত বন্দী আছেন। অনুবাদ এর সাথে রেকর্ডিংও পাওয়া যাচ্ছে, যা দ্বারা সকল আরবী ভাষাভাষী পাঠকরা অডিও উত্তরগুলো দিয়ে উপকৃত হবেন।

রেকর্ডিং এর অনুবাদের পাশাপাশি আমরা টিকা যোগ করেছি যা অনুঃটিকা আকারে আসবে, যেহেতু এটি কোন রচনা নয় বরং একটি অডিও রেকর্ডিং এর অনুবাদ; তাই অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাবে যে শাইখ একটি শব্দ বলেছেন অথবা একটি বাক্য শুরু করেছেন, তারপর অন্য বাক্যে চলে যাচ্ছেন। আমাদের সামর্থ্যরে সর্বোত্তম চেষ্টা করেছি এর শাব্দিক অনুবাদ করার।  এর ফলে এই গ্রন্থের অনেক অংশ, বিশেষ করে বাক্যের শুরুগুলো মনে হতে পারে অপ্রাসঙ্গিক।

আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার কাছে দো‘আ করি যেন, তিনি শাইখ এবং তাঁর সাথে সকল কারারুদ্ধ মুসলিম মুসলিমীনদের মুক্ত করেন এবং তাঁকে পুরস্কৃত করেন, এই প্রশ্নের উত্তরগুলো দিতে সময় ব্যয় করার এবং চেষ্টার জন্য আর সেই সাথে পুরস্কৃত করেন সকলকে যারা এই কাজ প্রচার করে আল্লাহর দ্বীন আহবানের দিকে নিয়োজিত।

বিতাড়িত শয়তান থেকে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)-

সকল প্রশংসা আল্লাহর, তাঁর প্রশংসা অঢেল, পবিত্র এবং মহান। শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক সৃষ্টির সেরা মুহাম্মদ, তাঁর সুন্দর, পবিত্র পরিবার, তাঁর সাথীগণ এবং আল-গুর আল মায়ামিন[1], কেয়ামত পর্যন্ত তাদের ভালো পথনির্দেশনার অনুসারীদের প্রতি।

অতঃপরঃ

দার-আত-তিবয়ানের আমাদের ভাইয়েরা আমার কাছে কিছু প্রশ্ন নিয়ে আসেন এবং এই গরীব বান্দাকে অনুরোধ করেন সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে। অতঃপর সেগুলো লিপিবদ্ধ করে আমার নিকট হস্তান্তর করেন। আমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার কাছে প্রার্থণা করি যেন, তিনি আমাকে বিষয়গুলোর সত্যতাকে পরিস্কার করতে সাহায্য করেন এবং সক্ষম করেন তা অর্জনের জন্য, যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা পছন্দ করেন এবং সন্তুষ্ট হন।

আমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার কাছে প্রার্থণা করি যেন, তিনি ভাইদের উত্তম পুরস্কারে পুরস্কৃত করেন এবং এই ভাই থেকে তাদের যে আশা ও তাঁর সম্পর্কে যে উচ্চ ধারণা পোষণ করেন, সেজন্য আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন।

প্রথম প্রশ্নটি ছিল, সম্মানিত শাইখ, যারা সংসদীয় নির্বাচন ব্যবস্থা এবং এর বৈধতা প্রচার করে, তারা নতুন একটি সংশয় নিয়ে এসেছে যার উপর তাদের ধারণার ভিত্তি স্থাপন করছে।

এবং এই সংশয় একটি হাদিসের উপর ভিত্তি করে, যার উদ্ধৃতি নিম্নে উল্লেখিত করছিঃ

রসূল এর স্ত্রী উম্মে সালামা বিনতে আবি উমাইয়া ইবনে আল-মুগাহিবাহ বলেনঃ “আমরা যখন আল-হাবসার যমীনে এসে পৌঁছলাম আমাদের নিরাপত্তা দিলেন সর্বোত্তম প্রতিবেশী, আল নাজাসি। এরপর তিনি বলেন, আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা এরূপই ছিলাম (শান্তি এবং নিরাপত্তায়), যতক্ষণ না একজন তার সামনে এসে দাঁড়াল-অর্থাৎ, তার রাজত্বের বিষয়ে বিরোধিতা করল। আল্লাহ সাক্ষী, কখনও এত শোকাহত হইনি যা হয়েছিলাম সেই মুহুর্তে, ভয়ে যে সে কি নাজ্জাসিকে পরাজিত করবে, কারণ কোন লোক নাজ্জাসির মত আমাদের অধিকার প্রদান করবে না। তিনি বলেন, মাঝখানে ছিল নীল নদের প্রশস্ততা।

আল্লাহর রসূল এর সাথীরা বললেন, কে হবে সেই ব্যক্তি যে ঘটনাগুলো প্রত্যক্ষ করবে এবং আমাদের জন্য সংবাদ নিয়ে আসবে? জুবায়ের বিন আওয়াম বললেন, আমি যাবো। তিনি ছিলেন স্বল্প বয়স্কদের একজন। তাঁর জন্য একটি ঢালা প্রস্তুত করা হল। সেটিকে বুকের নিচে দিয়ে তিনি সাঁতরাতে লাগলেন, যতক্ষণ না নীল নদের সেখানে পৌঁছলেন যেখানে লোকেরা জড়ো হয়েছিল। তিনি ততদূর ভিতরে গেলেন, যেখান থেকে তিনি তাদের দেখতে পাচ্ছিলেন। উম্মু সালামা বলেন, আমরা আল্লাহর কাছে নাজ্জাসির জন্য দু‘য়া করতে লাগলাম, যাতে তিনি শত্রুর উপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারেন এবং শত্রুর উপর বিজয়ী হতে পারেন। আমরা তার সাথে উত্তম পরিবেশে ছিলাম, যতক্ষণ না আমরা রসূল এর কাছে ফিরে এলাম, রসূল তখন মক্কাতে ছিলেন।”

প্রশ্নকারী বলেন, আহমেদ এবং আল-বায়হাকী হাদিসটি বর্ণনা করেন। এই বর্ণনাটি আহমেদ থেকে, ইবনে ইসহাক হতে যিনি বলেন, আস জুহরি আমাদের বর্ননা করেন (হাদ্দসানা)  উম্মু সালামা থেকে আবি বকর ইবনে আব্দির রহমান ইবনে আল হারিব ইবনে হিসাম হতে।[2]

তাদের মতে এটিকে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করার কারণ হচ্ছে, নাজ্জাসি তখন কাফের থাকার পরও তাঁরা আল্লাহর কাছে দুয়া করেছিলেন, যাতে সে যমীনের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায় আর যদি দুয়া হয়ে থাকে সর্বোচ্চ সমর্থন, তাহলে ভোটদানের মত আরও অনুরূপ বিষয়গুলো আরও বেশী গ্রহণযোগ্যতার দাবি রাখে। অতঃপর তারা বলে, যদি তোমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষেধ কর, তাহলে কি কোন ব্যক্তিকে ভোট দেয়ার বদলে তার জন্য এই দুয়া করা বৈধ যে এই সংসদে আসন পায়? প্রথমদিকে এরূপ ভাবে ব্যবহার করার বিষয়ে আপনার মতামত চাচ্ছি এবং এই সংসদীয় নির্বাচনে ভোটদান যারা অনুমোদিত মনে করেছেন, তাদের সাথে আমাদের সঠিক অবস্থান কি হবে?

জাযাকাল্লাহু খায়ের।

সাফল্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার পক্ষ হতে আর আমার বক্তব্য হচ্ছে নির্বাচনের বিষয়টা হচ্ছে একটি নতুন উদ্ভাবিত বিষয়, আধুনিক এবং নতুন ঘটনা থেকে উদ্ভুত হওয়া একটি বিষয়।

কোন বিষয় ফাতওয়া দেওয়ার পূর্বে সেটিকে প্রণিধান করা আবশ্যক এবং বিষয়টির সঠিক মূলে  ফিরে যাওয়া এবং মুফতি অথবা বক্তার কল্পনা অনুযায়ী নয়; বরং  (যে এটি উদ্ভাবন করেছে এবং ব্যবহার করেছে)  তার পরিভাষা অনুযায়ী বিহিত করা জরুরী। তাই প্রথমেই আমাদের জানা প্রয়োজন যারা এই বিষয়টি উদ্ভাবন করেছে এবং যারা এটি ব্যবহার করছে তাদের কাছে নির্বাচনের বিষয়টি কিরূপ? তারপর আমাদের জানতে হবে এই বিষয়ের উপর মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার বিধান কি, আলিমগণ যা জানেন সেই অনুযায়ী ইজতিহাদের পদ্ধতি কি অথবা আলিমদের মতামতই বা কি?

আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, নির্বাচনের বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তির জন্য প্রতিদিন সংশয় সৃষ্টি করছে এবং এটি জানা কথা যে, এই সংশয় বাস্তবে কখনও শেষ হবে না।[3]

 মানুষ এটি নিয়ে অনেক কথা বলেছে এবং সুদৃষ্টি সম্পন্ন প্রতিটি ব্যক্তির নিকট এটা স্পষ্ট যে, এই নির্বাচনের বিষয়টিকে একটি যন্ত্র অথবা মাধ্যম হিসেবে দেখা হয় না, বরং এটিকে দেখা হয় সেই ভিত্তির উপর যা হতে তা উৎসারিত। যার অর্থ হচ্ছে, একটি আক্বীদাহ অথবা মূলনীতির বাস্তবিক প্রতিফলন অথবা যেভাবে তারা আজকে বলছে যে, এটি একটি ভাবাদর্শ।

সুতরাং এটিই হচ্ছে বিষয়। তাই আমরা যদি ভিত্তিটা বুঝতে পারি তাহলে সেই সময়ে এর শাখা-প্রশাখাকেই বুঝতে আমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে। কিছু আলোচনা আমি প্রায়ই শুনে থাকি শুধু নির্বাচনের বিষয়ে, অন্য কথায়, এটিকে আলাদা করে, বাস্তবতা হতে অনেক দূরে রেখে এবং এর মূল থেকে অনেক দূরে রেখে কিছু আলোচনা।  এটি হচ্ছে গোপন করা এবং তা মন্দের মধ্যে শামিল । আরো যথাযথভাবে বলা যায় যে, এটা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুতি।

নির্বাচন হচ্ছে একটি মাধ্যম। কিন্তু তা কিসের মাধ্যম?  কি হতে উৎসারিত এই মাধ্যম?

যা জানা যায় তা হচ্ছে ব্যবস্থা সম্পর্কে, ব্যবস্থা যাদেরকে বলা হয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং যেগুলো অধিকার দেয় সিয়াদাহ (সার্বভৌম কর্তৃত্ব, হুকুম, নিয়ন্ত্রণ, প্রভুত্ব, আধিপত্য, বিধান নির্ধারণ) মানুষকে শাসনতন্ত্র বিজ্ঞান এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে জানা যায় যে, সিয়াদাহ হচ্ছে সর্বোচ্চ পরিপূর্ণ কর্তৃত্ব যার উপর কোন কর্তৃত্ব নেই। যার অধিকার আছে আইন প্রণয়নের – এটিই হচ্ছে সিয়াদাহ। তারা বলে সিয়াদাহ হচ্ছে মানুষের জন্য, সিয়াদাহ জাতির জন্য।

তাই এই সিয়াদাহ যা হতে উৎসারিত হয় আইন প্রণয়নের অধিকার, আইন প্রণয়নের কর্তৃত্ব, বিচারের কর্তৃত্ব, অতঃপর কার্যকরণের কর্তৃত্ব- তাহলে এগুলো মানুষের ইচ্ছের ভিত্তিতে হতে হবে এবং তার উপর ভিত্তি করে, যা মানুষ চায় এবং সমর্থন করে।

 গণতন্ত্র  দুটি বুনিয়াদের উপর প্রতিষ্ঠিত। সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সংখ্যালঘুর উপর ভিত্তি এবং সংখ্যালঘুর অধিকার লড়াই এবং বিতর্কের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠে পৌঁছানো। সংখ্যাগরিষ্ঠের অধিকার হচ্ছে শাসন করা, আইন প্রণয়ন করা এবং বিষয়গুলো কার্যকরী করা এবং সিদ্ধান্তগুলো পরিচালনা করা। এটিই হচ্ছে গণতন্ত্রের ভিত্তি। তাই আমরা যেভাবে দেখি এটি সিয়াদাহ -এর অর্থকেই বোঝানো হয়ে থাকে।

সেক্ষেত্রে নির্বাচন হচ্ছে মানুষের ইচ্ছের প্রতিফলন। কিভাবে আমরা জানবো মানুষের কি ইচ্ছে? তারা বলে নির্বাচন এবং ভোটদানের মাধ্যমে।

সুতরাং ভোটদান হচ্ছে মানুষের ইচ্ছের কথা জানানোর একটি মাধ্যম, যেখানে তাদের নিজেদের  অধিকার থাকবে আইন প্রণয়নের তথা সিয়াদাহর, যে সংসদীয় ব্যবস্থায় বর্তমানে আমরা আছি। তাই সংসদ হচ্ছে সেই কেন্দ্র যেখান থেকে অনেক বিষয় আসে, যার মধ্যে সর্বপ্রথম হচ্ছে আইন প্রণয়ন। অন্য কথায় বলতে গেলে, কোন কিছুকে হালাল মোড়ক দেয়া অথবা কোন কিছুর নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া। এটিই হচ্ছে আইন প্রণয়নের (তাসরি) অর্থ। আইন প্রণয়নের মানে কোন কিছুকে হালাল ঘোষণা করা এবং  তার উপর নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার আইন অথবা কোন কিছুকে হারাম ঘোষণা করা এবং তার অনুমতি ছিনিয়ে নেয়া।

মানুষের দ্বারা নির্বাচিত এই কেন্দ্রের অধিকারের মধ্যে পড়ে আইন প্রণয়ন। এটি এমন একটি বিষয় যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার অধিকার, তাঁর প্রভুত্বের (উল্যুহিয়্যাত) সাথে সাংঘর্ষিক। কারণ, উল্যুহিয়্যাহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার  এই হুকুমের অর্থ ব্যতীত সম্পূর্র্ণ নয়।

নিশ্চিতভাবেই সৃষ্টি তাঁর

এটিই হচ্ছে তাঁর কর্তৃত্ব (রুবুবিয়্যাত)।

সার্বভৌম ক্ষমতা তাঁর।[4]

আর এটিই হচ্ছে উলুহিয়্যাত।

এবং যিনি ইলাহ, তিনিই হুকুম দেন। তাই আমরা যদি তর্ক করি, স্বতন্ত্রভাবে একজনকে হুকুম দেয়ার অধিকার আছে বলেই বর্ণনা করি, তবে সেটিই হবে আস-সাইয়্যিদ, যাকে আনুগত্য করা হয়। যেমনটি ইবনে আব্বাস বলেন (মহান আল্লাহ তাঁর উপর সন্তুষ্ট হন) যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা বলেনঃ

বলঃ তিনিই আল্লাহ, তিনি এক, একক।[5]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা বলেন, আস-সাইয়্যিদ আল-মুতা (যাকে আনুগত্য করা হয়)। আস-সাইয়্যিদ, যার কোন হুকুমকে অবহেলা করা যায় না, আল-মুতা, যার আদেশ কেউ অমান্য করতে পারে না।[6]

তাই এখন আমরা সংসদকে আস-সাইয়্যিদ হিসেবে বুঝি, অন্য কথায় ইলাহ হিসেবে। এবং এই নির্বাচন প্রতিনিধিত্ব করে সাইয়্যেদকে নির্বাচিত করার জন্য। এটাই যা তারা বুঝে, ইলাহ নির্বাচন।

গণতন্ত্রের পুত্ররা এভাবেই ব্যাপারটাকে বুঝেছে এবং এর অনুসারীরা এভাবেই এতে সম্মতি জানিয়েছে। যেমনটি কিছু লোক কল্পনা করে যে, এটি সুবিধার অর্জন অথবা এরই প্রতিফলন অথবা একটি মাধ্যম একজন শাসককে নির্বাচিত করার যে, শরীয়াহ দিয়ে শাসন করবে তাদের উপর যারা তর্ক করছে কিভাবে এরূপ একটি মূলতন্ত্রকে বাস্তবায়ন করা যায়।

না, আইন প্রণয়ন, সংসদ একটি আইন প্রণয়নের কেন্দ্র এবং একটি তত্বাবধায়নের সংস্থা এবং এর আছে প্রভুত্বব্যঞ্জক দায়িত্ব। উদাহরণস্বরুপ, কিছু ব্যবস্থায় দেখা যায়, যাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে, অধিকার থাকে মন্ত্রীদের  নিয়োগের এবং সেখান থেকে কর্তৃত্ব প্রয়োগের।

এগুলো হচ্ছে প্রথম বিষয় হতে মধ্যম বিষয় যা হলো আইন প্রণয়নের অধিকার, যাদের এই অধিকার রয়েছে এবং যে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

তাহলে নির্বাচন কি?  নির্বাচনের অর্থ হচ্ছে যে কোন কিছুকে হালাল এবং হারাম ঘোষণার ক্ষেত্রে আইন প্রণয়নের জন্য আমার ইচ্ছের প্রতিফলনে একজন ব্যক্তিকে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়ে আমি তার উপর সন্তুষ্ট। এবং এটি সুস্পষ্ট যে, তা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র” সাথে সাংঘর্ষিক এবং সাংঘর্ষিক সেই মুসলিমের ইচ্ছের সাথে যে বলে, আমি নিজেকে আল্লাহর আনুগত্যে উপস্থাপন করছি উল্যুহিয়্যার মধ্য দিয়ে। অন্য কথায়, আইন প্রণয়নের ব্যাপারে আমি অন্য কাউকে গ্রহণ করি না, আমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা ব্যতীত অন্য কাউকে আইনদাতা হিসেবে গ্রহণ করি না। আমি আমার উপর কোন শাসককে গ্রহণ করি না, এই অর্থে শাসক বলতে সে নয় যে শাসন করে বরং আল্লাহ ব্যতীত যে হুকুম প্রণয়নের অধিকার রাখে। সমসাময়িক অনেকেই এটাকে সঠিক বলে আখ্যায়িত করে থাকেন হাকিমিয়্যাহ হিসেবে।

অতঃপর তারা কেন এই বিষয়ে বিতর্ক করে? কোন্ দৃষ্টিকোণ থেকে এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক করা হয়?

আমরা কি এখন কাফিরকে সাহায্য করার বিষয়ে অনুমতি দেয়ার ব্যাপারে কথা বলছি?

আমরা কি এখন একজন কাফিরের পতাকার নিচে থেকে আরেকজন কাফিরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অনুমতি প্রদানের বিষয়ে কথা বলছি?

তাহলে কেন আলোচ্য বিষয় থেকে সরে যাওয়া হচ্ছে?

যে বিষয়টি আমাদের সামনে আছে তা হলো, একজন ব্যক্তি তার রব (ইলাহ), প্রভু (সাইয়্যেদ), আইনদাতা (মুশারি) বেছে নিচ্ছে। যেই এই বিষয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত হবার অনুমতি দেয়, সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার এ দ্বীনে অনেক বড় কিছু নিয়ে এসেছে।

কারণ, যে কোন প্রয়োজনের উপর দ্বীনের প্রয়োজনকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে, যেহেতু এই ব্যাপারে ঐকমত আছে। দ্বীন প্রয়োজনীয়তার উপর অন্য কোন প্রয়োজনকেই অগ্রাধিকার দেয়া যাবে না, যেমন বলেছেন আশ-শাতিবি[7] (রহ.)। কারণ, প্রয়োজন বিভিন্ন পর্যায়ের হয়, এবং দ্বীন প্রয়োজনকেই প্রাধান্য দিতে হয়, যেকোন প্রয়োজনের আগে এটাকে স্থান দিতে হয় আগে, নিজের স্বকীয়তা (নাফ্স) থেকে, ধন-সম্পদ (মাল) থেকে, সম্মান (আল-ইরদাহ), সন্তান-সন্ততি থেকে, এই সবকিছুর শেষ পর্যন্ত থেকে।[8]

আমাদের সামনে এখন যে প্রশ্ন, যা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা হলো সাহায্য করার বিষয়ে আলোচনা; একজন কাফিরের বিরুদ্ধে আরেকজন কাফিরকে সাহায্য করার অনুমতির ব্যাপারে।

 এ ক্ষেত্রে রায় হলো যে, কাফিরকে সহযোগিতা করা যাবে না। যদি কতিপয় আলিমগণ এক কাফিরের বিরুদ্ধে আরেক কাফিরকে সহযোগিতা করা অনুমতিযোগ্য দেখে এজন্য যে, এর মাধ্যমে মুসলিমদের জন্য কোন সুফল রয়েছে। তাহলে সেই বিষয়টি ফিকহার গন্ডির অন্তর্ভুক্ত। কারণ তা রায়কে বাতিল করে দেয় না। অন্যদিকে, যারা একজন মুসলিমের বিরুদ্ধে কাফিরকে সহযোগিতা করা অনুমতিযোগ্য এরূপ ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে, আমি তাদের  সেই সকল ফুকাহাদের অন্তর্ভুক্ত করব, যারা এই ফতোয়া দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহকে অবিশ্বাস করেছে। উদাহরনস্বরূপ, যারা আমেরিকাকে সহযোগিতা করার জন্য তালেবানদের বিরুদ্ধে অনুমতি দিয়েছে।

 এটি অবশ্যই অনুমদনযোগ্য নয়। কারণ সহযোগিতা মৌলিকভাবে আনুগত্যের অন্তর্ভুক্ত এবং আনুগত্য কেবলই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার, তাঁর রসূল এবং ঈমানদারদের জন্য। কাফিরদের প্রত্যাখ্যান করা আবশ্যক।[9]

তাহলে আমাদের সামনে এমন একটি বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে, ফিকহর কিছু কিতাবে যার উল্লেখ রয়েছে। যেমনটি বলা যায় আল-হায়ছামি[10]  উল্লেখ করেছেন, আশ-শাফি থেকে, তাঁর আল ফতোয়া আল হাদিছিয়া তে। তিনি এই কিতাবে কোন সুফল অর্জনের উদ্দেশ্যে এক কাফিরের বিরুদ্ধে আরেক কাফিরকে সাহায্য করা  অনুমতিযোগ্য কি না এই বিষয় তুলে ধরেছেন এবং এই সম্পর্কিত আলিমগণের কিছু উক্তিও উল্লেখ করেছেন। সুতরাং এই বিষয়টি হলো ফিকহার বিষয়।

অনেকে বলতে পারে “আমি তার আনুগত্য স্বীকার করলাম।” না, বরং প্রকৃতপক্ষে সে তার আনুগত্য স্বীকার করছে না, বরং শুধু নিজেরই আনুগত্য করছে …।

সুতরাং এটিকে …… প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা, কারও বক্তব্য বা কোন প্রশ্ন হিসেবে ব্যবহার করাতে কিছু সমস্যা প্রতীয়মান হয়। বাস্তবিকতায়, উক্ত প্রশ্নতেও কিছু ভুল লক্ষণীয়। যেমনটি তার বক্তব্য যে, দু‘য়া হলো সমর্থনের সর্বোচ্চ স্তর, এটি মোটেও সঠিক নয়। কারণ, রসূল দু‘য়া করেছিলেন উমার (রাঃ) এর জন্য যখন তিনি বলেছেন, “হে আল্লাহ! ইসলামকে ইজ্জাত দাও দুই উমারের যে কোন একজনকে দিয়ে,  হে আল্লাহ! ইসলামকে ইজ্জাত দাও দুই উমারের মাধ্যমে।” আরেক রেওয়াতে যার ভিত্তি সহীহ, যদিও বা শব্দসমষ্টি ভিন্ন।[11]

সুতরাং তার জন্য দু‘য়া করা কি ইসলামে সমর্থিত? এই বক্তব্য যে, দু‘য়া যে কোন দৃষ্টিতে হলো সমর্থনের সর্বোচ্চ স্তর, একটি মিথ্যে (বাতিল) বক্তব্য। যখন আমরা দু‘য়া করি কাফির পথপ্রদর্শনের জন্য, তখন আমরা আসলে ইসলামেরই আনুগত্য স্বীকার করি। ঠিক তেমনি, তারা সেই কাফিরের (নাজ্জাসি) তার কাফির শত্রুদের উপর বিজয়ের জন্য দু‘য়া করেছিলেন, এই জন্য যে, তারা বিশ্বাস করত যে, এই সমর্থনে মুসলিমদের সুফল হবে।

এই বিষয় হলো কর্মের সাথে সম্পর্কিত এবং একটি আক্বীদাহ সম্পর্কিত বিষয়ের সামনে তা একটি গৌণ বিষয়। সুতরাং আমরা এর উপর অটল থাকার আশা করি।

এখন আরেকটি প্রশ্নঃ যদি আপনি নির্বাচনকে নিষেধ করেন, সেক্ষেত্রে আপনার জন্য কি অনুমোদিত হবে যে, আপনি কোন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করার পরিবর্তে তার জন্য আল্লাহর কাছে দু‘য়া করবেন, যেন সে সংসদে আসন লাভ করে?

এটা স্পষ্টই একটি ভ্রান্ত ধারণা। এই আকাঙ্খা কোন মুসলিমের মনে আসতেই পারে, সে ইচ্ছা পোষণ করল যেন অমুক অমুকের উপর বিজয়ী হোক মুসলিমের শত্রুর পরাজয়ের মধ্য দিয়ে, যাতে যা উত্তম তা থাকে তার জন্য। এই বিষয়টি দু‘য়া সম্পর্কিত বিষয় থেকে ভিন্ন।

প্রকৃতপক্ষে, এই সবকিছু আমাদের এই সিদ্ধান্তে উপনীত হবার পথে দাঁড়ায় না যে, ব্যক্তিকে নির্বাচন করা, তার জন্য ভোট দেয়ার অর্থই তাকে মনোনীত করা। যাকে বলা যায় যে, ভোট প্রদান মানেই মনোনয়ন প্রক্রিয়া, তুমি কাউকে মনোনয়ন করলে স্রষ্টার প্রতিরূপ হিসেবে।

সুতরাং তুমি এই একজনের জন্য ইচ্ছা পোষণ করেছ, তোমার জন্য এই একজনকে উলুহিয়্যাতের মধ্যে প্রতিনিধিত্ব করার ইচ্ছা পোষণ করার কারণ হলো যে সে মুসলিমদের মধ্যে কম অনিষ্টকর, এটা একটা বিষয় এবং অন্য আরেকজনকে তোমার জন্য একজন রব হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করার ইচ্ছা পোষণ করা, সেটা আরেকটা বিষয়। আমি এই বিষয়টা আবার আলোচনা করছি , যাতে করে এটা সকলের নিকট সুস্পষ্ট হয়ে যায়। যখন তুমি কারো জন্য দু‘য়া কর, যদি আমরা বলি যে তুমি তার জন্য দু‘য়া করতে পার,  তখন তুমি আল্লাহর নিকট দু‘য়া করেছ এই সাংসদকে অপর সাংসদের উপর বিজয়ী হবার জন্য, তুমি বেছে নিয়েছো সেই উপাস্য যে এই অন্যন্য (মিথ্যা) উপাস্যের চেয়ে কম খারাপ। সে একজন আইন প্রণেতা তবে তাদের জন্য অন্যদের থেকে কম খারাপ; এই বক্তব্য তাদের জন্য, তোমার জন্য নয়। কিন্তু সাংঘর্ষিক হবে যদি তুমি তাকে আইনপ্রণেতা হিসেবে মেনে নাও।

এর মানে এই যে, আমি দু‘য়া করতে পারি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার কাছে যে, “হে আল্লাহ! অমুককে প্রতিষ্ঠিত করো, কারণ সে তাদের জন্য তার পথভ্রষ্টতায় এবং তার কুফরীতে অপেক্ষাকৃত কম অনিষ্টকর ।” তবে তাকে তোমার ইলাহ হওয়ার জন্য ভোট দেয়া, সেটা আরেকটি বিষয়। এটা দেখা যাচ্ছে, পূর্বোক্ত বিষয় থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

তোমার জন্য অনুমোদিত নয় যে, তুমি শাসিত হবে বা তুমি তোমার উপর একজন কাফিরের শাসক মেনে নেবে অথবা তুমি একজন কাফিরের শাসনকে স্বীকার করবে। কিন্তু এটা কি অনুমোদিত তোমার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার  কাছে সেই কাফিরের জন্য দু‘য়া করা, যে মুসলিমদের ও মুসলিমদের নিকটবর্তীদের জন্য কম অনিষ্টকর এবং যে মুসলিমদের ক্ষতি করে না? উত্তর হলো, হ্যাঁ। কিন্তু, তুমি এই দু‘য়াতে তাকে তোমার জন্য শাসক হিসেবে পছন্দ করবে না। কারণ যদি তুমি তাকে (কাফিরকে) পছন্দ করো তোমার জন্য শাসক হিসেবে, তাহলে তুমি কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হলে। যে ব্যক্তি মুসলিমদের উপর একজন কাফিরের শাসক স্বীকার করে, সেও কিছুক্ষণের জন্য অবিশ্বাস করল, যা আলিমগণের কিতাবগুলোতে স্পষ্টত উদ্ধৃত রয়েছে। “আল-আক্বিদাহ আত-তাওয়াবিয়্যাহ,[12]  শার আল আক্বিদাহ আত-তাওয়াবিয়্যাহ” -ইবনে আবি আল ইজ্জ আল হানাফী।[13]

 যদি তুমি বলো, “হে আল্লাহ! তুমি ওই কাফিরকে শক্তিশালী কর, যেন সে মুসলিমদের ক্ষতি না করে এবং তার লোকদের প্রতি উত্তমরূপে সাব্যস্ত হয়। ফলে তার লোকেরাও মুসলিমদের জন্য উত্তমরূপে সাব্যস্ত হয়” – এটা সম্পূর্র্ণ আরেকটি বিষয়।

তোমার জন্য একটি ইলাহ পছন্দ করে নেয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয় তোমার জন্য তাদের মধ্য থেকে কাউকে নিকটবর্তী হিসেবে আশা করার বিষয় থেকে। কারণ মিথ্যে ইলাহরা হল কুফর এবং তারা তাদের কুফরী, মিথ্যাচার, তাদের ফিস্ক, তাদের যুজুরে বিভিন্ন স্তরে বিন্যস্ত।

এখানে অবশ্যই পার্থক্য আছে এটা বলার মধ্যে যে, কোন ব্যক্তি বলল, “আমার ইলাহ মহান এবং তিনি আকাশে বিরাজমান”। এবং ওই ব্যক্তি তাকে কল্পনা করল  শ্রশ্রুমন্ডিত এক পুরুষ রূপে। এর সাথে পার্থক্য রয়েছে যদি একই ব্যক্তি বলে, আমার ইলাহ হলো গরু”। দুইটি ইলাহ এখানে মিথ্যে। কিন্তু পুর্বোক্তের সাথে পরবর্তীর পার্থক্য বিদ্যমান।

আলিমগণ ওয়াহদাত আল উজুদ এর লোকদের সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন যে, খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্মের ব্যাপারে ওয়াহদাত আল উজুদের লোকদের  থেকে অপেক্ষাকৃত উত্তম। কেননা ওয়াহদাত আল উজুদের লোকেরা জমিতে দেয়া সারকে তাদের ইলাহ হিসেবে বিশ্বাস করে এবং হতে পারে  তা নাজাসাহ (অপবিত্র)।  অপরদিকে খ্রিষ্টানরা তাদের ইলাহ হিসেবে বিশ্বাস করে ঈসা আলাইহিস সালামকে, যা পুর্বোক্ত বিশ্বাস অপেক্ষা উত্তম।

তাহলে এর মানে কি এই যে, কাফিরদের মধ্যে কে উত্তম, সেজন্য এক ইলাহকে অন্য ইলাহ থেকে উত্তম ঘোষণা করব? আমার নিজের জন্য কাউকে ইলাহ হিসেবে ঠিক করা কি আদৌ বৈধ হবে? এ ব্যাপারে বলা যায়, এই বিষয়ে প্রয়োজন উপস্থাপনায় সততা।

আমাদের সঠিক অবস্থান কি হবে তাদের প্রতি যারা এমন মতামত পোষণ করে যে, সাধারণ আইন পরিষদের নির্বাচনে ভোট প্রদান বৈধ?

লক্ষ্যনীয় যে, আইন পরিষদের নির্বাচনের বিষয়টি ফিকহের বিষয়ের সাথে নয় বরং তাওহীদের সাথে সম্পর্কিত। যারা এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে, তারা তা করে থাকে বেশ কয়েকটি কারণবশতঃ। এরূপ দ্বিমত পোষণকারীরা বিভিন্ন স্তরের ।

তাদের মধ্যে রয়েছে এমন সকল লোক যারা নির্বাচনকে অনুমোদিত মনে করে, কারণ তারা মনে করে না যে হুকুম হলো আল্লাহর জন্য বরং তারা মনে করে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আইনদাতা হিসেবে মেনে নেয়া যাবে, যদি তা মানুষের সম্মতিক্রমে হয়। এই বিষয়ে লক্ষ্য করা যায়, এমন কিছু জামা‘আতের যারা ইসলামের দাবি করে। তারা বলে, আমরা স্বীকার করলাম শাসক আমাদের, যাদের মানুষ স্বীকার করেছে। তারা হলো কাফির যদিও তারা ইসলামের দাবি করে।

আরো কিছু লোক আছে যারা নির্বাচনের সত্যতা জানে না এবং যেরূপ আলোচনা করেছি, তারা এটাকে একটি মাধ্যম হিসেবে দেখে। এরূপ অন্যদের সাথে পার্থক্য ক্ষীণ, কারণ সত্যকে উপলব্ধি করেনি। তাই তাদের উসুল সঠিক কিন্তু তারা নির্বাচনের সত্যতা জানতে ভিন্নতা অবলম্বন করে। তাই তারা ভেবে নেয় যে রাষ্ট্র চালানোর জন্য অপেক্ষাকৃত ভালোকে বেছে নেয়ার এটি একটি মাধ্যম। এবং তারা এটি দেখতে পায় আব্দুর রহমান ইবন আওফের কর্মে যখন তিনি উসমানের সমর্থনে বলেন, “হে আলী! আমি উসমানের সমমাপের কাউকেও পাইনি, তুমি নও, অন্য কেউ নয়।”[14]

অতঃপর সে এটিকে একরকমের ভোটদান হিসেবে দেখে। তাই সে ভিন্নতা প্রকাশ করে। এটি ছাড়াও অনেকে এটাকে বৈধ মনে করে। সে এটিকে একটি দরজা হিসেবে দেখে ইসলামের আইন প্রণয়নের জন্য প্রবেশ করা যায়। ইসলামকে তুলে ধরার জন্য, আল্লাহর দিকে আহবানের জন্য, ইসলামকে সাহায্য করার জন্য। তাই এরা প্রথম লোকেদের চেয়ে একধাপ নিচে যারা সংসদকে আইন প্রণয়ন করতে দেয়ার যোগ্যতা খুঁজে পায়। এবং সংসদ দ্বারা প্রণীত আইনকে বৈধ মনে করে। কিন্তু এরা তৃতীয় স্তরেও নেই। তাই এরা মধ্যম।

বিষয়টি হচ্ছে আমরা এক একটি অবস্থানকে তার স্তর অনুযায়ী দেখি। কিন্তু এখানে একটি বিষয় চলে আসে, কেউ বলতে পারে আপনারা কেন তাকফীর করেন এবং তাদেরকে অজ্ঞতার অজুহাত দেন না?

আমি বলি, না। আমি প্রথমেই তাদের উপর তাকফীর করি না। আমরা তাদের উপর তাকফীর করি না যারা একে বৈধ বলেছেন, আমরা তাকফীর করি না এই ফতোয়ার উপর ভিত্তি করে যে বলে, আমি আল্লাহর আইনের উপর ভরসা করি, অতঃপর ভুল করে। কারণ, বিদাআতী লোকেদের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে হচ্ছে যে তারা বলে, তোমরা অবিশ্বাস করেছো, যদি সে তাদের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করে। বরঞ্চ, এই বিষয়ে সঠিক ব্যাপার হচ্ছে তাকে বলা, তুমি ভুল করেছো। আমরা দেখি একটি বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ যারা এই বিষয়ে ফাতওয়া দেয় (যে ভোটদানের বৈধতা ইত্যাদি) এই কারণে যে তারা (গণতন্ত্রের) সত্যতার বিষয়ে অজ্ঞ, আরো অনেকে আছে  যারা বলে যে, এটি বৈধ যদি তোমার অভিপ্রায় আন্তরিক হয়। তাই মনে হয় যে সে এমন একটি বিষয়ে কথা বলছে, যা মূলত, বৈধ কিন্তু অভিপ্রায়ের সংশোধনের দরকার আছে। কারণ অভিসন্ধির সংশোধনী আলোচিত হয় বৈধ বিষয়ে, যেমন আপনি যদি বলেনঃ সঠিক উদ্দেশ্যের সাথে সালাত আদায় করেন।

তাই আমরা বলি না যে তারা অবিশ্বাস করেছে এবং তাদের অজ্ঞতার অজুহাত দেই, কারণ সত্যিকার অথের্, যারা বৈধতার ফাতওয়া দিয়েছে তারা কুফফারের ফাতওয়া দেননি। কিন্তু তারা প্রকৃত সত্যকে বুঝতে একটি ভুল করেছেন।

 এটি ইতিহাসে অনেকবার ঘটেছে। এটি আমাদের জন্য বলা বৈধ যে যারা কিছু দ্রব্যের ভোগকে বৈধতা দিয়েছেন, অর্থাৎ যখন লোকেরা ক্বাত[15]  নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন, কিছু লোক বলেছিলেন এটি হালাল এবং কিছু লোক বলেছিল এটি হারাম। যারা এটিকে হালাল বলেছিলেন (এই জন্য বলেছিলেন) যে তারা এটিকে মাদক হিসেবে দেখেননি, আর যারা এটিকে হারাম বলেছিলেন তারা এটিকে নেশাদ্রব্য হিসেবে দেখেছিলেন। নিশ্চয়ই, যে কোন একদল সঠিক।

এটা কি কারো জন্য বলা বৈধ যে“ তুমি অবিশ্বাস করেছ, কারণ তুমি সেটা নিষেধ করেছ যা আল্লাহ হালাল করেছেন?” এবং অপরজনে এটা বলা যে“ তুমি অবিশ্বাস করেছ কারণ তুমি মাদককে বৈধ করেছ?” এখানে বিষয় হচ্ছে যে সত্যটাকে বোঝার পার্থক্য, অথচ তারা মূলে একমত।

আমি আশা করি আমি বিষয়টি পরিস্কার করতে পেরেছি, যদিও আমার মনে হয় পরিস্থিতির সীমাবদ্ধতার কারণে আলোচনাটি অনেক সংক্ষিপ্ত।

তিনি বলেনঃ দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে; আপনি সহৃদয় যা আমাদের সামনে উপস্থাপন করলেন শ্রদ্ধেয় শাইখ, এর উপর ভিত্তি করে সে ব্যক্তির পিছনে সালাত পড়ার রায় কি হবে যে এটিকে বৈধ মনে করে? এক্ষেত্রে যিনি পিছনে সালাত আদায় করছেন তাকে কি পুনরায় সালাত আদায় করতে হবে, নাকি তা মাকরুহ, নাকি তাতে কোন অসুবিধা নেই?

এই সবকিছুই নির্ভর করে অবস্থা জানার উপর। সে যদি ভুল করে থাকে, ভুল করে থাকে নির্বাচনকে বুঝতে, তবে এর পেছনে আমরা সালাত পড়ব এবং এই বিষয়ে কোন অসুবিধা নেই, কোন অপছন্দনীয়তাও নেই, এমনকি কোন বিশেষ অগ্রাধিকারও নেই। মানে তার ছাড়া অন্য কাউকে আমরা সামনে ঠেলে দিব না, অন্য কোন কারণ ব্যতীত যা এই কারণ নয়।

সেসকল লোকদের ক্ষেত্রে যারা এটিকে বৈধ মনে করে কারণ তারা বিশ্বাস করে মানুষের নিজের আইন প্রণয়নের বৈধতা আছে এবং সংসদ যা বলে আমরা তা মেনে নেয়, তবে এদের পেছনে আমরা একেবারেই সালাত পড়বো না। এবং এই সালাত অপছন্দ নয়, বরং  নিষিদ্ধ (বাতিল)। আমরা এদের পিছনে সালাত পড়ি না।

সেই ব্যক্তির জন্য যে বলে যে আমরা সংশোধনের জন্য এর মধ্যে প্রবেশ করতে চাই এবং আমরা জানি যে তা কুফর। আর তাতে আমরা বিশ্বাস করি না, তবে এরূপ ব্যক্তির জন্য আমরা নির্বাচনের বিষয়ে ফিরে যাবো না এবং সেই সাথে তার সাথে সংশ্লিষ্ট সাংসদ যা প্রণয়ন করছে সে বিষয়ে যাবো না; বরং আমরা দেখবো যে সে কিসে বিশ্বাস করে, সেটি নয় যা সংবিধান বলছে। আমরা এরূপ ব্যক্তিদের পিছনে সালাত আদায় করবো  যদিও ইমামার জন্য অন্যরা তাদের চেয়ে বেশী যোগ্য।

***************

আমাদের প্রকাশিত (বাংলা) অন্যান্য কিতাবসমূহঃ 

তাওহিদ: সকল মূলনীতির চূড়ান্ত মূলনীতি

–শাইখ আসিম বিন তাহির হাফিজাহুল্লাহ্

 

তাওহীদের কালিমা

শাইখ হারেস আন নাযযারী রহ.

 

বন্ধুত্ব ও শত্রুতা

শায়খ আতিয়াতুল্লাহ রহঃ

 

তাফসির নীতি

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ্

 

আকীদা সংক্রান্ত দশটি মাসআলা

যা না জানলেই নয়

আবনাউত তাওহীদ

 

কা‘ব বিন মালেক রাযি. এর

ঘটনা থেকে শিক্ষা

শায়খ আবু আব্দুল্লাহ উসামা রহ.

 

শিরকঃ চারটি মূলনীতি

শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ ইবন আবদুল ওয়াহহাব রহ.

 

দৈনন্দিনের

সহস্রাধিক সুন্নাহ

শহীদ শাইখ খালেদ আল হুসাইনান রহ.

 

পরীক্ষা ও সবর: নির্বাচিত আয়াত ও হাদীস

 

কাশ্‌ফুশ্‌ শুবহাত (সংশয় নিরসন)

শাইখ মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহ্‌হাব রহ.

 

গণতন্ত্রঃ একটি জীবন ব্যবস্থা (দ্বীন)!

আবূ মুহাম্মদ আসিম আল-মাকদিসী

 

ইসলামী গণতন্ত্রের সংশয় নিরসন

দার আত-তিবইয়ান

 

ইসলাম বিনষ্টকারী বিষয়

শাইখ মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহ্‌হাব রহ.

**********

[1] আলগুর আলমায়ামিনঃ এই বাক্যাংশের আক্ষরিক অর্থ, “রহমতপ্রাপ্ত সাদা একজন”। …সাদা একজন… এটা আবু হুরাইরার একটা হাদীসের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে [মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার উপর সন্তুষ্ট হন], রসূল বলেনঃ “বস্তুত পুনরুত্থান দিবসে অজুর কারণে আমার উম্মাহকে গুররান মুহাজ্জালিন হিসেবে ডাকা হবে”- বুখারী, মুসলিম এবং অন্যগুলো হতে বর্ণিত। গুররান মানে হচ্ছে এমন যা ঔজ্জল্যের কারণে ঘোড়ার কপালে জ্বলতে থাকে এবং ‍মুহাজ্জিলিন মানে হচ্ছে এমন ঔজ্জল্য বা সাদা যা ঘোড়ার খুরে জ্বলতে থাকে।

[2] এই হাদীসটি ইমাম আহমদ তার মুসনাদে বর্ণনা করেন এবং হাসান হিসেবে স্বীকৃতি মিলেছে আল-ওয়াদীর “আস-সহীহ আল-মুসনাদ” এ #১৬৭২ এবং অনুরূপ স্বীকৃতি মিলেছে “সহীহ” হিসেবে আহমেদ শাকির এর তাখরীজ এর “মুসনাদে আহমদ” এ। খন্ড ৩/১৮০

[3] গণতন্ত্রের অগ্রগতির বিষয়ে বিদ্যমান সবচেয়ে প্রচলিত, সমন্বিত এবং যুক্তিখন্ডনের জন্য, সন্দেহ নিয়ে আলোচনার জন্য, দারুল ইরফান পাবলিকেশন্স- এর “The Doubts Regarding The Rulings of Democracy in Islam” বা ইসলামী গণতন্ত্রের সংশয় নিরসন নামক বইটি দেখতে পারেন।

[4] সূরা আল-আরাফ ৫৪

[5] সূরা ইখলাস-১

[6] এই সূরার তাফসীরে বর্ণিত এই বাক্যাংশটি বর্ণনা করেছেন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আবু ওয়াইল, শাকিক ইবনে সালামাহ, এবং আবু জাফর যা উল্লিখিত হয়েছে ইবনে জারির আত-তাবারীতে এবং ইবনে কাসীর (রহ.) ও এটাকে উল্লেখ করেছেন যায়িদ ইবনে আসলাম হতে। আল-কুরতুবী (রহ.) ও সুফিয়ান হতে এটাকে উল্লেখ করেন। ইবনে তাইমিয়্যাহ তার “মজমুয়ায়ে আলÑফাতওয়া” এর খন্ড ৮/১৫০ তে ইবনে আব্বাসের এই উদ্বৃতিটাকে দূর্বল বলে অভিহিত করেছেন, কিন্তু এরপরই তিনি বলেছেন যে সালাফরা এই বাক্যাংশের মতই উদ্ধৃতি নিশ্চিত করেছেন। আশ-শাওকানি (রহ.)ও তাঁর ফাত আল-কাদির” গ্রন্থের খন্ড ৫/৭৫৪  এটাকে দূর্বল বলে অভিহিত করেছেন। আল-আলবানী তার তাখরীজ এর “কিতাব আস-সুন্নাহ” গ্রন্থের # ৬৬৬ এ ইবনে মাসউদের এই উদ্ধৃতিটাকে ইবনে অসীম এর দ্বারা দূর্বল বলেছেন  আলী ইবনে আবী তালিব হতে আল-আলবানী তার “তাশিহি আল-আকাইদ” এর ১১৯ এ একই ধরনের একটি বাক্যাংশ উদ্ধৃতি করেছেন, কিন্তু এটা উল্লেখ করেছেন যে, এখানে একটি দূর্বলতা আছে এবং সনদে একটি ত্রুটি আছে। যাহোক, আবু ওয়াইল এর বর্ণনাকে সহীহ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন আল-আলবানী তার তাখরীজ এর “কিতাব আস-সুন্নাহ” গ্রন্থের # ৬৭১ এ। এখন পর্যন্ত এর চেয়ে শক্তিশালী রাসুলের ﷺ যে হাদীসটি আস-সাইয়্যিদ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দিকে আরোপ করেছেন তা হলো যেমনঃ আব্দুল্লাহ ইবনে আশ-শাকির হতে যিনি বলেনঃ আমি বনু আমীর এর একটি প্রতিনিধিদলের সাথে রাসুল ﷺ এর নিকট গমন করি, সুতরাং আমরা বলিঃ “আপনি হচ্ছেন আমাদের সাইয়্যেদ”, কিন্তু তিনি বললেন, “আল্লাহই হচ্ছেন আস-সাইয়্যেদ……” হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে আবু দাউদ, আহমেদ, বুখারীর “আল-আদাবুল মুফরাদ” সহ অন্যগুলোতে। হাদিসটি সহীহ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন আশ-শাওকানিও তার ফাত আল-কাদির” গ্রন্থের ১/৩৩৬ এবং ১১/৫৬৪৬এ। এটাকে আরো সহীহ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন আল-আলবানী তার “সহীহ আবি দাউদ” এর #৪৮০৬এ, সহীহ আল-আদাবুল মুফরাদ এ #১৫৫ এ, “মিশকাত আল-মাসাবিহ” #৪৮২৬ এ, “ইসলাহ আল-মাসাজিদ” ১৩৯ এ। এটাকে আরো সহীহ বলে স্বীকৃতি মিলেছে “সহীহ মুসলিমের শর্তের উপর ভিত্তি করে” আল-ওয়াদী’র “আস-সহীহ আল-মুসনাদ” #৫৭৮ এ। আবু ওয়ালী’র উক্তিটি সহীহ বলে স্বীকৃত, আরো বলেছে আল-আলবানী তার তাখরীজ এর “কিতাব আস-সুন্নাহ” গ্রন্থের # ৬৭১ এ।

[7]  তিনি হচ্ছেন আবু ইসহাক ইবরাহীম ইবন মুসা ইবন মুহাম্মদ আল-গিরানতি আল-আন্দালুসি, যিনি আশ-শাতিবি নামে পরিচিত। তিনি মালিক্যিয়্যাহদের ইমাম থেকে এসেছেন। তিনি ৭৯০ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি“আল-ইতিশাম” এবং “আল-মুওয়াফাত ফি উসুল আশ-শারীআহ” গ্রন্থের প্রণেতা।

[8]  আশ-শাতিবি বলেনঃ “যেহেতু উম্মাহ, বরং অবশিষ্ট মিল্লাত, পাঁচটি প্রয়োজনীয়তাকে সংরক্ষণ করার জন্য শারীআহকে রাখা হয় সেগুলো হচ্ছেঃ ধর্ম (আদ-দ্বীন), স্বকীয়তা (নাফ্স), সন্তান-সন্ততি (নাসল), ধন-সম্পদ (মাল), এবং জ্ঞান (আকল)।”“আল-মুওয়াফাত ফি উসুল আশ-শারীআহ খন্ড১/৩৮। এছাড়াও, মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ আল-হানাফী আল-হালাবি, যিনি ইবনে আমীর আল-হাজ্জ নামে পরিচিত (যিনি ৮৭৯ হিজরীতে মৃত্যু বরণ করেন) বলেনঃ এবং সকল প্রয়োজনীয়তার মধ্যে দ্বীনের সংরক্ষণকে অন্যগুলোর উপর প্রাধান্য দিতে হবে, যেখানে সংঘর্ষ আছে, কারণ এটাই হচ্ছে সর্বোত্তম লক্ষ্য। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ

“আমি জ্বিন এবং মানুষকে আমার ইবাদাত ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি”। [সুরা আয যারিয়াত-৫৬]

এবং এছাড়াও এটা একটা লক্ষ্য এই কারণে যে (অন্য সক লক্ষ্যের লক্ষ্য থাকে শুধু দ্বীনের স্বার্থে)। এবং এর সুফল হচ্ছে সকল সুফলের পরিপূর্ণতা, এবং এই সুফল সারা জাহানের রবের চিরস্থায়ী সুখ অর্জনের সবচেয়ে নিকটবর্তী হবার। এরপর নিজের বংশ (আন-নাসব) সংরক্ষণ, মান, ধন-সম্পদ এর চেয়ে স্বকীয়তা সংরক্ষণের অগ্রাধিকার দিতে হবে বেশী, দ্বীনের সুবিধাবাদির অন্তর্ভুক্তির কারণে, কারণ ধর্মীয় সুবিধাগুলো ইবাদাতের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব এবং তাদের অর্জন (ইবাদাতের কর্মকান্ড) স্বকীয়তার অস্তিত্বের উপর নির্ভরশীল। এরপর বংশধারা সংরক্ষণকে বেশী অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে, কারণ এটা শিশুর স্বকীয়তার অস্তিত্ব। কারণ, যেনার নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে বংশানুক্রম মিশে যাবার কোন সম্ভাবনা নেই, তাই শিশুটি শুধু একজনের দিকেই ধাবিত হয়, ফলে তার পিতাকে সন্তানের দেখা শোনা ও তার স্বকীয়তার সংরক্ষণে অধিক মনোনিবেশ করে। অন্যথায়, শিশুটি অবহেলিত হতো এবং তার নিজের সংরক্ষণের অসামর্থ্যতার দরুন তার স্বকীয়তাও হারিয়ে যেতো। এরপর ধন-সম্পদের সংরক্ষণের চেয়ে জ্ঞানের সংরক্ষণকে বেশী অগ্রাধিকার দেয়া হয়, স্বকীয়তা হারানোর কারণে ( চেতনা হারানোর সাথে সাথে স্বকীয়তাও স্বাভাবিকভাবে হারিয়ে যায়) মানুষ প্রাণীদের সাথে যোগ দেয় ( তার মানে হল, যদি মানুষ তার চেতনা বা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, কর্মে অদক্ষতা, সত্য ও মিথ্যের প্রভেদ তৈরি করতে না পারার দরুন সে তখন পশু হয়ে যায়) এবং এর হারানোর সাথে তার দায়িত্বও পতিত হয়ে যায়। এবং সেখান থেকে স্বকীয়তা হারানোর আবশ্যকতার সাথে এটা হারানোও আবশ্যক হয়ে যায় এবং এটা হলো পরিপূর্র্ণ রক্তপণ (যদি কোন ব্যাক্তি অন্য কারও ক্ষতি করে এবং তার চেতনার ক্ষতি সাধন করে এবং যদি সে তাকে হত্যা করে তাহলে এর ক্ষতিপূরণ হিসেবে রক্তপণ দেওয়ার জন্য সে দায়ী থাকবে)। এর পর সবার শেষে আসে ধন-সম্পদ সংরক্ষণের বিষয়টি।” “আত-তাকরীর ওয়াত-তাহবীর ফি শারহ কিতাব আত-তাহরীর,” খন্ড ৩/২৩১।

[9] মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদের সাহায্য করার বিষয় সংক্রান্ত সমন্বিত আলোচনার জন্য, আত-তিবয়ান কর্তৃক প্রকাশিত “Ad-Dalail Fi Hukum Muwalat Ahl Al-Ishrak”, “The Evidences For The Ruling Regarding Allainces With The Infidels” By Imam Sulayman Ibn Abdullah Ibn Muhammad Ibn Abdil Wahhab and “At-Tibyan Fi Kufri Man Aan Al-Amrican”, “The Exposition Regarding The Disbelief of The One That Assists The Americans” By Shykh Nasir Ibn Hamad Al-Fahd – এই বইগুলো পড়ে দেখতে পারেন।

[10] তিনি হচ্ছেন আহমেদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে হাজর আল-হায়তামি আল-মাক্কী আশ-শাফী । তিনি ৯০৯ হিজরীতে মিসরে জম্নগ্রহণ করেন। তিনি আল-আযহার এ পড়িয়েছেন এবং ৯৭৪ হিজরীতে মৃত্যু বরণ করেন। তার রচিত বইগুলোর মধ্যে এগুলো অন্যতম – Al-Badr At-Tāli’ Bi-Mahāsin Man Ba’d Al-Qarn As-Sābi’” by Ash-Shawkānī, Vol. 1/109.“Al-Fatāwā Al-Hadīthiyyah”, “Al-Ināfah Fī Mā Jā’a Fī As-Sadaqati Wadh- Dhiyāfah”, “Al-I’lām Bi-Qawāti’ Al-Islām”, and “As-Sawā’iq Al-Muhriqah ‘Alā Ahl Ar-Rafdhi Waz-Zandaqah”

[11] এই হাদীসটি তিরমিযী শরীফে, আহমেদ এবং অন্যগুলোতে একইভাবে বর্ণিত হয়েছে। ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত যে রাসুল ﷺ বলেনঃ “হে আল্লাহ! আবু জাহল ইবনে হিশাম অথবা উমর এর মধ্যে থেকে যাকে আপনার পছন্দ হয় তাকে দিয়ে আপনি ইসলামকে ইজ্জাত দান করুন।” তিনি বলেনঃ “এবং তাঁর নিকট সবচেয়ে পছন্দের ছিলেন উমার।” এই হাদীসটি “হাসান সহীহ গারীব” বলে স্বীকৃতি পেয়েছে তিরিমিযীতে #৩৬৮১ এ। এটাকে সহীহ বলে আরো স্বীকৃতি মিলেছে আল-আলবানীর সহীহ আত-তিরমিযীতে #৩৬৮১ এ। “….. ইবনে আল-খাত্তাব …..” বাক্যাংশটুকু যোগ করে আহমেদ শাকির এটাকে সহীহ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তার তাখরীজ এর মুসনাদে আহমেদ এর খন্ড ৮/৬০, আশ-শাওয়াভিকি এটাকে সহীহ বলেছেন এবং ইবনে হিব্বান এটাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন তার দুআ আল মাকাসিদ আল-হাসানাহ এর ১১৩ এতে।

[12] লেখক আবু জাফর আহমেদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে সালামাহ ইবনে আব্দিল মালিক আল-আজদি আল-হাজারি আল-মিশরী আত-তাহাবী। তিনি ২৩৯ হিজরীতে জম্নগ্রহণ করেন এবং ৩২১ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। তার কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে – “Al-‘Aqīdah At-Tahāwiyyah”, are “Sharh Ma’ānī Al-Āthār”,“Sharh Mushkil Al-Āthār”, and “Mukhtasir At-Tahāwī Fī Al-Fiqh Al-Hanafī”।

[13] তিনি সাদর আদ দ্বীন আবুল হাসান আলী ইবনে আলী ইবনে মুহাম্মদ আল-আশারী আদ-দিমাস্কি আস-সালেহী আল-হানাফী, ইবনে আবী আল-ইজ্জ নামে পরিচিত। জম্ন ৭৩১ হিজরী, মৃত্যু ৭৯২ হিজরী। তার কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম – Sharh of “Al-‘Aqīdah At-Tahāwiyyah”, are “Al-Itbā’”,  “At-Tanbīh ‘Alā Mushkilāt Al-Hidāyah” and “An-Nūr Al-Lāmi’ ‘Alā Mā Yu’mal Bihi Fī Al-Jāmi’”   এই দুটো এখন আর পাওয়া যায় না।

[14] কাহিনীটি হলো এরকমঃ “সাহাবাদের গুণাবলীর বই” – আল-বুখারী বর্ণনা করেন, অধ্যায়ঃ “ বাইয়্যাতের ঘটনা এবং উসমান ইবনে আফফানের উপর সবাই একমত হওয়া” এবং একই অধ্যায়ে, উমার (রাঃ) তাঁর পরে খিলাফাহ ত্যাগ করার পর, ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি শুরা গঠন করেছিলেন। আব্দুর রহমান ইবনে আওফ, উসমান এবং আলী ছাড়া আর তিনজন খিলাফাহকে প্রত্যাখ্যান করেন। হাদীসটির বর্ণনাকারী আমর ইবন মায়মুন বলেনঃ সুতরাং আব্দুর রহমান বললেন, তাই তোমাদের দুজনের মধ্যে কে প্রার্থী তাকে সমর্থনের জন্য তার রায় দিবে যাতে করে আমরা তাকে মনোনীত করতে পারি এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এবং ইসলামের দিকে সে রুজু হয় এবং যাতে করে সে দেখতে পাবে যে তার চেয়ে আর কে বেশী ভালো হবে। সুতরায় উভয় সাবাহীই (উসমান এবং আলী) চুপ থাকলেন। সুতরাং আব্দুর রহমান বললেন, তোমরা দুজনেই এই ব্যাপারটা আমার উপর ছেড়ে দেবে এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমার উপর সাক্ষ্য থাকুন যে, আমি তোমাদের দুজনের মধ্যে ভালো জনকেই বেছে নিবো। তারা দুজনেই সম্মতি প্রদান করলেন। তাই আব্দুর রহমান তাদের দুজনের একজনের হাত ধরে তুলে নিয়ে বললেন, আপনি আল্লাহর রাসুল ﷺ এর আত্নীয় এবং সবার জানামতে প্রথমদিকে ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম। সুতরাং আপনি আল্লাহর নিকট প্রতিজ্ঞা করুন এই মর্মে যে, যদি আমি আপনাকে মনোনীত করি তাহলে আপনি ন্যায় বিচার করবেন এবং যদি আমি উসমানকে মনোনীত করি তাহলে আপনি উসমানের আনুগত্য করবেন। এরপর তিনি উসমানের একটি হাত তুলে নিলেন এবং তাকেও একই কথা বললেন। এরপর যখন তিনি তার অঙ্গীকারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেন, তিনি বললেন, হে উসমান! আপনার হাতটি বাড়িয়ে দিন। তখন আব্দুর রহমান তার হাতে বাইয়্যাত নিলেন এবং এরপর আলী তার হাতে বাইয়্যাত নিলেন এবং এরপর পর্যায়ক্রমে সর্বসাধারণ সেই ঘরে প্রবেশ করলো এবং উসমান ইবন আফফান (রাঃ) এর হাতে আনুগত্যের বাইয়্যাত নিলেন।” হাদীস #২৭০০

[15] ক্কাত, আরো পরিচিত খাট, ঘাট, চাট এবং মিররা নামে। উত্তর আফ্রিকার গরম আবহাওয়ায় জম্ন নেয়া এটি একটি পুস্পময় গাছ। শতাব্দীকাল যাবৎ আরব উপদ্বীপ এবং সোমালিয়াতে খাট মাদকদ্রব্যের উপকরণ হিসেবে উৎপাদন করা হয়ে থাকে। এর তাজা পাতা এবং শীর্ষ চিবানো হয় এবং মাঝে মাঝে শুকিয়ে চা করা হয়। আনন্দাদায়ক এবং সতেজতা পাবার জন্য এটা ব্যবহার করা হয়। যারা ক্কাত এর নিষিদ্ধতার কথা বলেছেন, তারা হলেনঃ Ahmad Ibn Hajr Al-Haytamī in his book“Tahthīr Ath-Thuqāt Min Akl Al-Kaftata Wal-Qāt”, Abū Bakr Ibn Ibrāhīm Al-Muqrī Al-Harāzī Ash-Shāfi’ī in his book “Tahrīm Al-Qāt”, Shaykh Muhammad Ibn Ibrāhīm Ibn ‘Abdil-Latīf Āl Ash-Shaykh, Shaykh ‘Abdil-‘Azīz Ibn ‘Abdillāh Ibn Bāz, Shaykh Abul-Hasan Mustafā Ibn Ismā’īl As-Sulaymānī, Shaykh Muqbil Ibn Hādī Al-Wādi’ī, and Shaykh Abū Nasr Muhammad Ibn ‘AbdillāhAl-Imām।

(Visited 196 times, 1 visits today)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − 4 =