১৯৩৮ সালে মিশরে জন্মগ্রহন করা শায়খুল মাশায়েখ উমার আবদুল রহমান ছিলেন আমাদের সময়কার অন্যতম কিংবদন্তী।
যখন থেকে উম্মাহ আল্লাহর শরিয়াহ, এর উপর আমল করা ছেড়ে দিয়েছের উম্মাহর শত্রুরা ইসলামের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে। উম্মাহ নানা অত্যাচার অবমাননার স্বীকার হওয়া শুরু করেছে। উম্মাহর এই ক্ষত আরো গভীর হয়েছে যখন এর সর্বোত্তম সন্তানদের এই উম্মাহ ত্যাগ করেছে। উম্মাহর এমনি এক ভুলে যাওয়া গুরাবা ছিলেন তাগুতের কাছে বন্দী সিংহ, ধৈর্যশীল শাইখ উমর আব্দুর রহমান রহঃ
উনার সম্পর্কে শাইখ উসামা রহ: বলেন:
” এই যুগের আলেমদের মধ্যে যাদের উপর আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেছেন, যারা হকের পক্ষে স্পষ্ট ও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর উপস্থাপন করেন এবং যারা ঘরে বসে থাকেন নি বা আল্লাহর দ্বীনকে ত্যাগ করেন নি তাদের মধ্যে শাইখ উমর আব্দুর রহমানকে একজন উচূ মানের আলেম হিসেবে মান্য করা হয় । এবং আমরা শুনেছি শাইখ অসুস্থ , তার বয়স ৬০ বছর অতিক্রম করেছে এবং উনি একজন অন্ধ মানুষ “
তিনি ১১ বছর বয়সে কুরআনের হিফয শেষ করেন, যদিও জন্মের ১০ মাস বয়সে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারান।
তিনি সাফল্যের সাথে কায়রোর উসুল আদ দীন কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। শায়খ পরবর্তীতে আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাফসীরের উপর ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন। শায়খ কায়রোর কলেজই অধ্যাপনা শুরু করেন। অধ্যাপনা চালিয়ে যান ১৯৬৯ সালে বরখাস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত। তারপর তার উপর অবিরত জুলুম অত্যাচার চালানো শুরু হয়।
জামাল আব্দুন নাসেরর পাশবিক সরকারের বিরুদ্ধাচারণে তিনি ছিলেন অন্যতম। নাসেরের মৃত্যুর পর তিনি নির্ভয়ে মুসলিমদেরকে বলেছিলেন এই অত্যাচারী মুরতাদের মৃত্যুর পর তার জানাযা না পড়তে। সেখান থেকেই উনাকে গ্রেফতার করা হয় ।এভাবে প্রথমবারের মতো তিনি বন্দী হন। ৮ মাস আল-কালা জেলে কারাভোগ করেন।
৭০ এর শেষ দিকে একদল সালাফি যুবক মিসরে আল জামা’ আল ইসলামিয়্যাহ নামের একটা দল তৈরি করেন আর ঐ দলের আমীর ছিলেন শাইখ উমর আব্দুর রহমান রহঃ। তখনই উনার নাম ওয়ান্টেড লিস্টে দিয়ে দেয় তাগুত বাহিনী।
প্রথমবার বন্দীত্ব থেকে মুক্তি পাবার পর তার দেওয়া ফতোয়ায় ইসলামের তৎকালীন শত্রু মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতকে, মুজাহিদ খালিদ ইসলাম্বুলী (রহঃ) হত্যা করেন।
মিসর থেকে পালানোর চেষ্টা করতে যেয়ে ১৯৮১ সালে শাইখ উমার আবদুর রাহমান বন্দী হন। যেটা ছিল তখনকার মিসরে চলা কেস গুলার মধ্যে সবচেয়ে বড়। বিচারকালীন সময়ে তিনি বজ্রকন্ঠে সত্যের ঘোষণা দেন এবং শারিয়াহ কায়েমের জন্য কোর্টে সরাসরি আহ্বান জানান।
তিনি স্পষ্ট ভাবে প্রকাশ্যে শারিয়াহ কায়েমের ডাক দেন এবং আরো বলেন এই কেসের বিচারক এর মধ্যে ঘটে যাওয়া সমস্ত জুলুমের জন্য দায়ী থাকবে এবং তাকে আল্লাহর আযাবের ব্যাপারে সতর্ক করেন। তিনি যা বলেছিলেন তার কিছু অংশ এমন ঃ
আমার দ্বীনের কারনেই আমি সকল প্রকার জুলুম অত্যাচারের বিরোধিতা করতে বাধ্য। আমার উপর আরো বাধ্যতামূলক সব অজ্ঞতা ও গুনাহকে পরিষ্কার করে দেয়া ও সমস্ত বাতিল আর বিদআতের চেহারা উন্মুক্ত করে দেয়া এবং মানুষের চোখের সামনে অন্যায়গুলোকে তুলে ধরা – যদি সেটা আমার জান মালের বিনিময়েও হয়।
আমার জেল বা মৃত্যুর কোন ভয় নেই। আর যদি তারা আমাকে নির্দোষ হিসেবে ছেড়ে দেয় বা ক্ষমা করে দেয় তাতে আমি খুশি হব না এবং তারা আমাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলে আমার কষ্টও লাগবে না। কারণ সেটা হবে আমার জন্য শাহাদাত আর আমি বলব কাবার রবের শপথ আমি জয়ী হয়েছি। আমি আরো বলবঃ আমার কোন পরোয়া নেই যতক্ষন আমি মুসলমান হিসেবে মারা যাচ্ছি।
অতঃপর তাকে কারারুদ্ধ করে তার উপর কঠিন নির্যাতন চালায় মিশরের সরকার। এভাবেই শাইখের জীবন কাটছিল নজরদারী, অন্যায় আচরণ আর বন্দিত্বের মধ্যে দিয়ে। তিনি মুরতাদ হোসনি মোবারকের জেলারদের হাতে নির্যাতন এর স্বীকার হন কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি দান ত্যাগ দাওয়াহ, ‘ইলম অর্জন আর জিহাদের উপর দৃঢ় ছিলেন। রাষ্ট্র আর তরুণদের আহবান করছিলেন তাওহিদ আর জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ এর দিকে।।
১৯৯০ সালের জুলাই মাসে শাইখ উমর আব্দুর রহমান রহঃ আমেরিকায় আসেন এবং ইমাম এবং দায়ি হিসেবে পার্মানেন্ট ভিসা পান।
শাইখের দাওয়াহের ফলাফল খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে লাগুলো এবং ১৯৯৩ সালে তিনি গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। সেখানে তিনি এমন বিচারের আওতায় বিচারাধীন হন যেমনটা অ্যামেরিকার সিভিল ওয়ারের পর আর ব্যবহার করা হয় নি। তার ফলাফলস্বরূপ এক ইহুদী বিচারক আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় দেয়। যে ৪ টা অভিযোগের কারণে শাইখের এই দন্ড দেয়া হয় সেগুলো হলঃ
১। অ্যামেরিকান বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও তার উৎখাতের পরিকল্পনা
২। মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনী মোবারাকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও তাকে উৎখাতের পরিকল্পনা।
৩। সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করার পরিকল্পনা
৪। আমেরিকার বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধের পরিকল্পনা
এ রায়ের পর শাইখকে মৃত্যু পর্যন্ত অ্যামেরিকার সরকার বন্দী করে রাখে। তাকে সলিটারি কনফাইনমেন্টে রাখা হয়। বিভিন্নভাবে তাকে হয়রানী করা হয়। যেমন তাকে সিয়াম পালন করতগে না দেওয়া। তার সেলে ক্বুর’আনের কোন মুসহাফ না রাখতে দেওয়া। কোন দর্শনার্থী আসলে কষ্টকর ও অপমানজনক শাইখের দেহ তল্লাশী করা।
শাইখ একাকী কারাবাসে প্রায় ১৮ বছর ছিলেন এই সময়ে উনি আর কোন কয়েদির সাথে কথা বলার সু্যোগ পাননি কারাবরনের সময় উনার ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং শ্বাস কস্ট ছিল। শেষ দিকে উনি উনার পা ব্যবহার করতে পারেননি এবং হুইল চেয়ার ব্যবহার করেছেন।
এ মহান শাইখ ১৪৩৮ হিজরির ২০ই জুমাদিউল আওয়াল (১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ খ্রিঃ) কারাবন্দী অবস্থায়। আল্লাহ তাওহিদের এ মহান শাইখ কবুল করুন, এবং তাকে জান্নাত দান করুন। আমীন।
শাইখের স্মরণিয় মন্তব্যঃ
“যদি কেউ তাদের ন্যায্য দাবি প্রাপ্তির অধিকার রেখে হয় জঙ্গি, তাহলে আমরা জঙ্গিই, আর আমরা জঙ্গি হওয়াকে স্বাগত জানাই। কুরআনই এই জঙ্গিবাদ তৈরী করে।
আল্লাহর পথে জিহাদ করার অন্যতম মাধ্যম হল আল্লাহর শত্রুদের মনে ত্রাস সৃষ্টি করা”