পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
(প্রায় ত্রিশ বছর আগের এ লেখাটি আজো প্রাসঙ্গিক। প্রকৃতপক্ষে গভীর অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে যে সত্য দৃষ্টিগোচর হয়, শব্দের গাঁথুনিতে তার প্রকাশ যুগে যুগে প্রাসঙ্গিক রয়ে যায়। ইউনুস খালিস রহঃ যে কলম ও লেখকদের কথা বলেছেন তারা আজো আছে, কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে কিন্তু সেই পুরনো বিষ আকড়ে ধরে। তাওহিদের পথের পথিকরা ইনশা আল্লাহ এ লেখা থেকে উপকৃত হবেন।)
এটা সর্বজন স্বীকৃত বিষয়, যা আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারবো না যে, সমাজের বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটার পিছনে জবান খুব প্রভাবশালী ভূমিকা রাখে। এ জন্যই মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর মহান কিতাবে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে-
وَقُلْ لِعِبَادِي يَقُولُوا الَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْ ۚ
“আপনি আমার বান্দাদের বলে দিন, তারা যেন উত্তম কথাবার্তা বলে। কেননা শয়তান (খারাপ কথাবার্তার দ্বারা) তাদের মাঝে ঝগড়া সৃষ্টি করে”। (সুরা বনী ইসরাইল-৫৩)
কেননা শয়তান এই চক্রান্ত ও এই ক্ষমতার মাধ্যমে মুসলিমদের মাঝে বিবেদের অনাচার ছড়ায়, যখন সে মন্দ শব্দ ব্যবহার করে।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
وهل يكب الناس على وجوههم يوم القيامة الا حصائد السنتهم
“মানুষ কেয়ামতের দিন জবানের ফসলের কারনেই মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবে”।
যেহেতু জবানের এই বিশাল প্রভাব মানুষের সম্পৃক্ততায় সামাজিক কর্মকান্ডে পড়ে। সুতরাং যে কলম জবানের নাড়াচাড়াকে ভিন্ন এক আকৃতিতে ব্যক্ত করে, তা গুরুত্ব ও প্রভাবের ক্ষেত্রে জবানের চাইতেও কম কিছু নয়। তাইতো আল্লাহ সুব. বলেন-
وَلَا يَأْبَ كَاتِبٌ أَنْ يَكْتُبَ كَمَا عَلَّمَهُ اللَّهُ ۚ
“কোন লেখক যেন লিখতে অস্বীকার না করে, যেভাবে আল্লাহ তাকে শিখিয়েছেন”। (সুরা বাকারা-২৮২)
আল্লাহ জাল্লা জালালুহু আমাদের ব্যক্ত করার বিভিন্ন পন্থার মধ্যে লেখার নেয়ামত প্রদান করেছেন। অন্যান্য প্রায় সকল মাখলুক এই নেয়ামত থেকে বঞ্চিত। তিনি আমাদের এই নেয়ামতকে একমাত্র সঠিক পন্থায় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং আমরা যেন দোষত্রুটি অনুসন্ধান করি এবং উত্তম ও সুন্দর বিষয়গুলো এড়িয়ে না যাই ও বাড়াবাড়ি না করি। এমনিভাবে আমরা অযোগ্য ব্যক্তির অবয়বকে সৌন্দর্যমন্ডিত করতে কলম না চালাই। অথবা আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের থেকে যে বান্দা নিজের দোষত্রুটি গোপন করে না তার দোষত্রুটি লুকাতে চেষ্টা না করি। নিরাপদ ও সুরক্ষিত জবানের চাহিদা হলো যে, ব্যক্তিটি অশ্লীল বাক্য উচ্চারণ করবে না। এমনিভাবে মার্জিত কলমের অর্থ হলো, তা সত্য ব্যতীত অন্য কোন ক্ষেত্রে নড়াচড়া করবে না। যখন নতুন ফেতনা মাথাচাড়া দেওয়ার কারণে উৎকৃষ্টকে সর্বনিকৃষ্ট এবং নিকৃষ্টকে সর্বোৎকৃষ্ট আকৃতি প্রদান করা হয়, তখন সে হকের খেদমতের জন্যই লিখতে থাকবে।
আর একজন দক্ষ লেখকের জন্য উত্তম বিষয়কে মন্দ এবং মন্দ বিষয়কে উত্তম হিসেবে রঙ লাগানো সম্ভব। এক্ষেত্রে তার উপমা হলো ঐ ব্যক্তির মত যে তার এক হাত অন্যের পকেটে চুরির উদ্দেশ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে এবং অপর হাতে কিতাবুল্লাহ রেখে আয়াতসমুহ শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে তেলাওয়াত করছে।
আমি বিশ্বাস করি যে, এই ধরনের লেখক ও কলামিষ্ট, যারা স্বীয় কলমকে ইসলামের কটুক্তি করতে ও জিহাদের মাহাত্মকে খাট করার জন্য পরিচালিত করে – আমাদের শত্রুরা ট্যাঙ্ক কামান বিমান গোলাবারুদের চেয়ে তাদের থেকে অনেক বেশি উপকৃত হয়।
এই লেখকগুলো হয়তো কখনো লড়াইয়ের বিভীষিকা স্বচক্ষে দেখেনি অথবা তারা জিহাদের নামে গদি দখলের চেষ্টা করে। যখন তারা ব্যর্থ হলো তখন আমাদের জিহাদের বিরুদ্ধে লেখার জন্য এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ব্যাপারে মুজাহিদদের বিভ্রান্ত করার জন্য কলমকে বৈধতা দিয়ে দিয়েছে। তারা তাদের এই কর্মের দ্বারা মানুষকে জিহাদ থেকে বিরত রাখে। অধিকাংশের হিম্মত চূর্ণ করা, মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করা, তাদের মনোবল বিক্ষিপ্ত করার চেষ্টা চালায়।
তুমি যেখানেই কোন পত্রিকা বা পুস্তিকা পড়বে যেটি জহির শাহের যুগে ছাপানো হয়েছে তাহলে তোমার কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, কত খেয়ানতকারী লেখক সেখানে থেকে রিযিক লাভ করতো, ইসলাম ও জাতির বিরুদ্ধে লেখালেখি করে নিজের আহার যোগাতো। অতপর এখন তারা নতুন করে নিজেদের বিষাক্ত লেখালেখির দ্বারা মুজাহিদদেরকে হকের পথ থেকে বের করে নিতে পূণরায় এসেছে। আর তা (জিহাদের) আকর্ষনীয় নিদর্শনগুলো গোপন করে। আর তারা (কথিত) নিরপেক্ষ শাসকদের কাছে প্রার্থনা করে। কমিউনিস্টদের সাথে শরীক দফতরকে আহবান করে। এবং মুজাহিদদের মাঝে ছড়াতে চায় যে, “যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। আর সামরিক সমাধান ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে। আর উত্তম রাজনীতি হচ্ছে (যুদ্ধ) আফগান জনগণ কেন্দ্রিক হওয়া উম্মাহ কেন্দ্রিক নয়”।
আফগানিস্তানে প্রবাহিত হওয়া এক বা অর্ধ মিলিয়ন শহীদের রক্ত এবং অতিবাহিত হওয়া বছরগুলোর জিহাদ এবং বিভিন্ন দলের পূর্ণ ত্যাগ ও কুরবানি প্রদান। কেউ কলমের খোঁচায় এই সব কিছু মিটিয়ে দিতে পারবে না। এবং আমরা আমাদের লাগাতার জিহাদের সাথে খেল তামাশা করার অনুমোদন দিবো না।
মুনাফিক লেখক ও চাটুকার শাসকদের জেনে রাখা উচিৎ যে, মুজাহিদগণ তাদের ভালো করেই চিনে। তাঁরা তাদের ও তাদের কাজকর্ম ও মন্দ নির্দেশাবলীর বিরুদ্ধে ওৎ পেতে থাকবে। তাদের ব্যবস্থাপনার ন্যায্য প্রতিদান পাবে যদি তারা বিরত না হয় ও তওবা না করে। মুজাহিদদের উচিৎ তাঁরাও সর্বোচ্চ সচেতন থাকবেন। বিক্রিত কলমগুলো তাদের কাজ করবেই। বিষাক্ত লেখাগুলো কখনো লেখা বন্ধ হবে না। মুমিনদের উচিৎ তাঁরা বিচক্ষণ হবেন। শয়তানের ধোকার মাঝে মন লাগাবেন না। মুনাফিকদের জন্য নিজের আনুগত্যের কান বাড়িয়ে দিবেন না। উদ্দেশ্যপ্রনোদীতদের আহবানে ভরসা রাখবেন না। বেতনভুগীদের কথায় মনোযোগ দিবেন না। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا
“হে মুমিনগণ! তোমাদের কাছে যদি কোন ফাসেক সংবাদ নিয়ে আসে তাহলে তাহলে তা যাচাই করে দেখ!”
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
كفى بالمرء إثما أن يحدث بكل ما سمع
“মানুষের গুনাহের জন্য শোনা কথা বর্ণনা করা-ই যথেষ্ঠ”।
এবং সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্যই।
মূল
মৌলভি মুহাম্মাদ ইউনুস খালেস রহ.
অনুবাদ
মাওলানা আহমাদ লাবীব দাঃবাঃ
(মূল প্রবন্ধটি ‘কুল্লিয়াহ মানবাউল উলুম’ থেকে প্রকাশিত শাইখ জালালুদ্দিন হাক্কানী হাফিজাহুল্লাহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও সম্পাদিত “মাজাল্লাহ মানবাউল জিহাদ” ম্যাগাজিনের চতুর্থ সংখ্যায়, নভেম্বর ১৯৯০ ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়েছিল।)