শায়খ আবু কাতাদা আল ফিলিস্তিনি
ডাউনলোড
আল-আলবানীঃ
…শাইখ মুহাম্মাদ নাসির উদ্দিন আলবানী (রহিমাহুল্লাহ)-এর ব্যাপারে বলা যায়, এই মানুষটি হলেন এক ভিত্তি স্বরূপ – কিংবা এমন বলা ভালো যে তিনি ছিলেন আধুনিক সময়ে ইসলামী ইলম অর্জনের পুনর্জাগরনের দুর্গসমূহের একটি দুর্গ বিশেষ করে হাদীসশাস্ত্র, এবং ফিকহ ও মানহাজের আন্দোলনে। তাঁকে নিয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে, এবং অন্যান্য অনেকের সাথে তাঁর নাম উল্লেখ করেছে।
শাইখের ইন্তেকালের পর আমি দুইটি লেকচার দিয়েছিলাম যেখানে আমি শাইখের বৈশিষ্ট্যগুলো স্পষ্ট করেছি – কোন বিষয়গুলো উনার মধ্যে উত্তম ছিল আর কোন বিষয়ের জন্য উনার বিরুদ্ধে প্রশ্ন আনা যেতে পারে।
আমি তাদের মত না যারা তাঁর থেকে একেবারেই মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং আমি তাদেরও মত না যারা অন্ধভাবে তাঁর অনুসরণ করে। বরং শাইখ এর ব্যাপারে আমি এটাই বলি যা আয-যাহাবি বলেছিলেন ইবনে হায্মকে নিয়েঃ
“এবং আমার মধ্যে আবু মুহাম্মাদের প্রতি প্রীতি রয়েছে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) – এর হাদীসের প্রতি তার ভালবাসার কারণে এবং আমি তাকে একজন কাফির অথবা গোমরাহ বলিনা”।
শাইখ আল-আলবানী একজন ব্যাপক ব্যক্তিত্ব। তাঁর মধ্যে এমন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহ ছিল যা সকল তলিবুল ‘ইলমের অর্জন করা উচিত, যেমন, ‘ইলম অর্জনে তাঁর ধৈর্য্য, পঠনে তাঁর প্রচেষ্টা, কাজের প্রতি তাঁর আত্মোৎসর্গ ও আন্তরিকতা, সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়া থেকে নিজেকে হেফাজত রাখা, তিনি যা বিশ্বাস করতেন সেদিকে আহ্বান করার সাহসিকতা।
এসব কয়টি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে মন্তব্যের করতে হলে অনেক পৃষ্ঠার প্রয়োজন। তিনি একজন স্ব-প্রতিষ্ঠ ব্যক্তি যিনি নিজেই নিজের মর্যাদা তৈরি করে নিয়েছেন নিজস্ব প্রচেষ্টা এবং শ্রম দ্বারা। কোনো রকম সরকারী দল অথবা অঙ্গসংগঠনের সাহায্য ছাড়াই তিনি নিজেকে স্থাপন করেছেন আলিমদের সারিতে কিংবা বলা ভালো তাদের সম্মুখ সারিতে।
যে কেউ ভালোভাবে তার কিতাবগুলো লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবে যে এই অবস্থানে পৌছানোর জন্য নিজের কাজের প্রতি কোন পর্যায়ের মেধা এবং শ্রম তিনি দিয়েছেন। আপনি তাঁর জীবনী পড়লে বুঝতে পারবেন দাওয়াহ এর ব্যাপারে তাঁর ধৈর্য এবং সাহসিকতা। আপনি দেখবেন কিভাবে তিনি দাওয়াহ কে সাধারন জনগন এবং যুবকদের সামনে উপস্থাপন করেছেন।
এসব কিছু শাইখকে হাদিস শাস্ত্র এবং কট্টরভাবে মাজহাব অনুসরণের ত্যাগ করার বিষয়ে তাঁকে একজন নেতায় পরিণত করেছে। বিশেষ ভাবে এই দুই বিষয়ে সমগ্র ইসালামি বিশ্ব শায়েখের কাছে ঋণী তা কেউ তাঁর মতের সাথে এক মত হোক বা না হোক, যেহেতু আসলে এই দুই বিষয়ই উনাকে কেন্দ্র করে আলোচিত হতে থাকে, উনার সাথেই অধিক লেগে থাকে —
এবং একথার পর শাইখ আবু কাতাদা ঈমানের কিছু ব্যাপারে আল-আলবানীর অবস্থান সম্পর্কে সমালোচনা এবং পাশাপাশি তাঁর কিছু বিতর্কিত ফিক্হি মতামতের সমালোচনা উত্থাপন করেছেন।
(এ ব্যাপারে দেখুন – মুরজিয়া ও ইরজায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য)
ইবনে বাযঃ
… সত্য কথা হচ্ছে, শাইখ ‘আব্দুল ‘আযিয বিন বায আমার অন্তরে সম্মানের জায়গায় রয়েছেন ইসলাম এবং মুসলিমদের নুসরতে তাঁর প্রভাব এবং প্রচেষ্টার কারণে। আমি সবসময় বলি, এটাও যদি বলা হত যে, সকল তলিবুল ‘ইলমদের উপর শাইখের প্রভাব আছে, আমি মনে করিনা এটি সত্য থেকে খুব বেশি দূরে হবে।
শাইখ ‘আব্দুল‘আযিয সন্দেহাতীতভাবে একজন ফিক্হের ঈমাম, এবং তাঁর সময়কালে তাঁর সমপর্যায়ের কেউ ছিলেন বলে আমি মনে করি না। বিশেষ করে ইবাদাত সম্পর্কিত ধর্মীয় আচার-আচরণের বিষয়সমূহে। তিনি ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি যার আদর্শ এবং প্রধান চিন্তা ছিল কিভাবে কোন ধরনের বৈষম্য ছাড়াই প্রত্যেক দা’য়ী, প্রতিটি জিহাদ এবং প্রতিটি ইসলামি দলের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া যায়। দুঃখজনকভাবে, কিছু কিছু দল তাঁর এ বিষয়টির সুযোগ নিতো এবং তিনি এ বিষয়ে অবগত ছিলেন। তথাপি এই সাহায্যের ব্যাপারে তিনি ইতস্ততকারী ছিলেন না।
শাইখের সুবিদিত ভাল কর্মকান্ডের অন্তর্ভুক্ত হল, মদীনাতে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করা। দুঃখজনকভাবে যা আজ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে । প্রতি দেশে ইসলামের আহবান পৌঁছে দেয়ার পিছনে এই ইউনিভার্সিটির অবদান ছিলো।
শাইখের অত্যন্ত গুরুতর ভুল ছিল আলে-সৌদের প্রতি অনুগত হওয়া এবং তাদের অবস্থানের ব্যাপারে প্রতারিত হওয়া। অপরাধীদের ব্যবহৃত কূটকৌশলের ব্যাপারে অন্তর্দৃষ্টির অভাবের ফলে উনাকে এই ভুলের মধ্যে পড়তে হয় যা পুরা উম্মাহকে উদ্বিগ্ন করেছে।
শিক্ষাদান, দাওয়াতে সাহায্য সহযোগীতা, ইসলামিক গ্রন্থপ্রণয়ন এবং জিহাদ, এসব ক্ষেত্রে শাইখের সাহায্যের ঋণ অস্বীকার করা যাবে না। অজ্ঞ অথবা পরশ্রীকাতর ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ তা অস্বীকারও করবে না। তবে সৌদির জালিম শাসকের প্রতি তাঁর আনুগত্য এসব সৎকর্মকান্ডের অনেকটুকুই বিনষ্ট করে ফেলেছে। মানুষটি আজ আর-রাহমানো কাছে চলে গেছেন, এবং তাঁর পর্বতসম সৎকাজ রয়েছে নিজেকে রক্ষা করার জন্য, এবং তাঁর প্রতিরক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য তাঁর আমাদের প্রয়োজন নেই।