হাসান আব্দুস সালাম
ইসলামী রাষ্ট্রের মূলভিত্তি হচ্ছে শরীয়াহ আইন প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ ইসলামী রাষ্ট্রে বিধি বিধান হবে কেবলমাত্র কুরআন সুন্নাহ হতে আহরিত।
প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকেই এই রাষ্ট্র জানান দেবে যে, হুকুম আহকাম একমাত্র আল্লাহ্র। আর যে সমস্ত আইন শরীয়াহর বিপরীত, তার সবই স্থান পায়ের তলায়। শর্তহীন পরিপূর্ণ কর্তৃত্ব ও সার্বভৌমত্ব থাকবে শুধু শরীয়াহর নিয়ন্ত্রণে।
শরীয়াহর সমকক্ষ কর্তৃত্ব অন্য কারও থাকবে না। অধিকাংশ মানুষ রায়, পশ্চিমা মূল্যবোধ কিংবা সামাজিক সাংস্কৃতিক কোন কিছুই শরীয়াহর ঊর্ধ্বে দূরে থাক, সমকক্ষও হতে পারবে না।
যে বিষয়টি বর্তমানের অধিকাংশ ইসলামপন্থীগণ এড়িয়ে যাচ্ছেন বা আলোচনায় আনছেন না, তা হচ্ছে রাষ্ট্র একটি জাগতিক বিষয়। দ্বীন বা মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রের প্রকৃতি নির্ধারিত হয়। একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত থাকে ইসলামী মূল্যবোধের উপর, কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত থাকে কমিউনিজমের উপর কিংবা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত থাকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপর।
একটি রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য উপাদান ৩টি, অর্থাৎ ভূমি, জনগণ ও কাঠামো প্রয়োজন।
ইসলামী রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই হোক অথবা বাথিস্ট রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই হোক, এই মৌলিক উপাদানাবলীর অস্তিত্ব জরুরী। যে কারণে রেড ইন্ডিয়ানদের ভূমি ও জনগণ থাকা সত্তেও রাষ্ট্রীয় পরিচালনা কাঠামো না থাকায় তারা পরাধীন। আবার ফিলিস্তিনের জনগণ ও সরকার কাঠামো থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব না, যেহেতু তাদের ভূমি নেই।
যেমনিভাবে, রাষ্ট্র একটি জাগতিক বিষয়, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উপায় উপকরণাদিও তদ্রূপ জাগতিক বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। এবিষয়ে আরও বলার পূর্বে জাগতিক বিষয় বলতে কি বোঝানো হচ্ছে তা স্পষ্ট করে নেয়া কাম্য।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,
إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْأَرْضِ زِينَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا
নিশ্চয় আমি (তাকেই), পৃথিবীর শোভা করেছি যা কিছু সেটার উপর রয়েছে, যাতে তাদেরকে এ পরীক্ষা করি যে, তাদের মধ্যে কার কর্ম উত্তম।
(১৮:০৭)
قَالُوا أُوذِينَا مِن قَبْلِ أَن تَأْتِيَنَا وَمِن بَعْدِ مَا جِئْتَنَا ۚ قَالَ عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَن يُهْلِكَ عَدُوَّكُمْ وَيَسْتَخْلِفَكُمْ فِي الْأَرْضِ فَيَنظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ
(তারা) বললো, ‘আমরা নির্যাতিত হয়েছি আপনি আসার পূর্বে এবং আপনার শুভাগমনের পরে’ বললো, ‘শীঘ্রই তোমাদের রব তোমাদের শত্রুদেরকে ধ্বংস করবেন এবং তার স্থলে যমীনের মালিক তোমাদেরকে করবেন। অতঃপর দেখবেন (তোমরা) কেমন কাজ করো’।
(০৭:১২৯)
وَخَلَقَ اللَّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ وَلِتُجْزَىٰ كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
এবং আল্লাহ আসমানসমূহ ও যমীনকে সত্য সহকারে সৃষ্টি করেছেন আর এ জন্য যে, প্রত্যেক সত্তা আপন কৃতকর্মের ফল পাবে এবং তাদের প্রতি যুলম হবে না।
(৪৫:২২)
অর্থাৎ, দুনিয়ার সকল উপকরণাদি এবং যা মানুষের আয়ত্তাধীন তার সবই আল্লাহ্ তা’আলার সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার অন্তর্গত।
মানুষ এসকল উপায় উপকরণ অবলম্বন করে আল্লাহ্র ইবাদত কায়েম করবে। না দুনিয়া তার লক্ষ্য হবে আবার না দুনিয়ার বাস্তবতা অস্বীকারকারী হবে।
যেমন, মানুষের জীবনধারনের জন্য খাদ্যগ্রহণ অপরিহার্য কিংবা পারস্পারিক লেনদেনের জন্য মুদ্রা অপরিহার্য ইত্যাদি। এসবই জাগতিক বস্তু, কিন্তু মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী কোনো খাবার, পোশাক বা লেনদেন ইসলামী হয় আবার, কখনো তা গাইরে ইসলামী হয়।
অর্থাৎ, শরীয়াতের আহকাম সবই জাগতিক বিষয়ের উপর আপতিত হয়। শরীয়াতের আহকামের অনুগমনের মাধ্যমেই জাগতিক বিষয়াবলী ইসলামী/শরয়ী বিষয়ে পরিণত হয় এবং এসবের সৃষ্টির প্রকৃত উদ্দেশ্য পরিপূর্ণতা লাভ করে। অর্থাৎ, সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ্ তা’আলার হুকুম বাস্তবায়নই হচ্ছে মূলত আল্লাহ্র তা’আলার পরিপূর্ণ ইবাদত।
অতএব, রাষ্ট্র একটি জাগতিক বিষয়। আর রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ব্যতিত ইসলামের পূর্ণাঙ্গ প্রতিপালন সম্ভব না হওয়ার কারনেই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামের নিয়ন্ত্রণ জরুরী। আর ইসলাম পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নিয়োজিত প্রতিটি জামাত ও তাদের সদস্যবৃন্দ এবিষয়ে একমত।
কিন্তু খাদ্য, পানীয়, পোশাক এর বন্দোবস্ত করার ক্ষেত্রে মুমিন কাফির নির্বিশেষে সকলকে নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অগ্রাহ্য না করলেও, জমীনে তামকিন লাভের ক্ষেত্রে অধিকাংশ ইসলামপন্থীরা দ্বিধান্বিত হয়ে আছে।
গনতন্ত্র, মিটিং-মিছিল আর আলোচনার টেবিলকে ইসলাম পুনঃপ্রতিষ্ঠার উপায় হিসেবে গ্রহণ করা সংগ্রামীরা ক্ষুধা নিবারনের জন্য সময় বা খরচ কমাতে গাছের পাতা বা মাটি খাওয়া শুরু করে না। শরীর আবৃত করতে চটের বস্তা গায়ে জড়িয়ে তাওয়াক্কুলের কথা বলেন না।
অথচ, তারাই আবার তামকীন লাভ বা রাজনৈতিক প্রভাব পুনরুদ্ধারের জন্য বাস্তবতা ও জাগতিক উপায় উপকরনের ক্ষেত্রে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রচেষ্টা গ্রহণ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থান করছেন।
যার ফলে শত বছর/অর্ধশত বছর ব্যাপী কার্যক্রম পরিচালিত করা সত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন তো দূরের বিষয়, ব্যর্থতার চোরাবালিতে সম্পূর্ণ ডুবে যাওয়া থেকে বাচতেই হিমশিম খাচ্ছেন।
বছরের পর বছর একই গর্তে বার বার পতিত হয়ে ‘তাওয়াক্কুল’ আর ‘নিকটবর্তী বিজয়’ এর বয়ানকে আঁকড়ে ধরে আল্লাহ্ তা’আলার নিজামের/ব্যবস্থাপনার সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত ইসলামী আন্দোলনগুলো কখনই তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে না। টিকে থাকা আর সদস্য সংগ্রহ এক বিষয়, উদ্দেশ্য অর্জনে সফলতা ভিন্ন বিষয়।
তামকীন লাভ কিংবা রাজনৈতিক প্রভাব পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে মৌলিকভাবে একথা বলা যায়, যখন একটি আদর্শকে হটিয়ে ভিন্ন আদর্শ প্রতিস্থাপিত করতে হয় তখন সমগ্র সংঘাত অনিবার্য বিশেষ করে যখন হক্ক বাহ্যিকভাবে দুর্বল ও সংখ্যায় কম হয়, তখন এটাই বাস্তবতা যে, সংঘাত অনিবার্য।
আল্লাহ্ তা’আলা তাই ইসলাম কায়েম জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহকে মুসলিমদের জন্য ফরয করেছেন। কেননা জমীনে দ্বীনের প্রতিষ্ঠা লাভ কেবলমাত্র জিহাদের মাধ্যমেই সম্ভব আর আল্লাহ্ তা’আলার শরীয়ত নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম ও সবচেয়ে সঠিক পথের দিকেই মানুষকে পরিচালিত করে।
যখন উসমানী খিলাফাহ বিলুপ্ত হলো; উম্মাহ বিভিন্ন জাতিরাষ্ট্রে বিভক্ত হলো এবং একই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হলো লেনিনের নেতৃত্বে অক্টোবর বিপ্লবের পর, তখন মুসলিমদের ভূমিগুলোতে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের বিষাক্ত বীজ বপন শুরু হলো।
ক্রমান্বয়ে এমন অল্প কিছু ব্যক্তিবর্গের হাতে বিপুল সংখ্যক মুসলিমদের কর্তৃত্ব চলে গেল যাদের ইতিপূর্বে শান্তিতে মৃত্যুবরণ করার জায়গাটুকুও ছিল না। বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে মুসলিম উম্মাহ নিজেদের স্থান করে নেয়ার পরই বিভিন্ন ইসলামী আন্দোলনের আবির্ভাব ঘটে।
ক্রমান্বয়ে জন্ম নেয় অসংখ্য ইসলামী দল-উপদলের যাদের প্রায় প্রতিটির নেতৃবর্গই ইসলামী রাষ্ট্র বা খিলাফাহ ফিরিয়ে আনার দাওয়াতকে সামনে রেখে কর্মসূচী প্রণয়ন করেছে। এদের কোন কোনটি অঙ্কুরেই ঝরে গেছে আবার কোন কোনটির বয়স ৫০/৬০ বছর কিংবা ১০০ বছরের কাছাকাছি।
এই দীর্ঘ সময়ে অন্তত অল্প পরিমান সফলতা তো কাম্য ছিল; কিন্তু আল্লাহ্ তা’আলার সৃষ্টিগত নিজামের বিপরীতে হাটার ফলে কেমন যেন এসকল দল, সংগঠন বা মাসলাক ব্যর্থতাকে নিজেদের জন্য অবশ্যক করে নিয়েছে। কেউ যদি উত্তপ্ত বালিতে গড়াগড়ি খেয়ে শরীর ঠাণ্ডা করার চেষ্টা হাজার বছরও করে, তবুও কি তার পক্ষে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব?! পশ্চিম দিকে রওনা হওয়ার পর কি পূর্বে পৌঁছানো সম্ভব?!
যদি তাকে বলা হয় যে, সে উল্টো পথে হাটছে, আর সে যদি উত্তর দেয়, অধ্যবসায়, সবর, ইয়াকিন, ইখলাস ও তাওয়াক্কুল তাকে সফলতা এনে দিবে; তবুও কি আমরা বলব যে, তার সফলতা অর্জন সম্ভব?!
হ্যাঁ, কেউ যদি বাস্তবিকই ইখলাস ও তাওয়াক্কুল অবলম্বন করেন, দুনিয়াতে ক্ষতি পৌঁছালেও তিনি আখিরাতে সফলতা পাবেন।
কিন্তু আসবাবের জগতকে সামনে রেখে বলা যায় তা ব্যর্থতাই বয়ে আনবে।
এটি স্বতঃসিদ্ধ স্বীকৃত বিষয় যে- গণতান্ত্রিক, জাতীয়তাবাদী, সমাজতান্ত্রিক বা বাথিস্ট কোন রাষ্ট্রকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করতে সশস্ত্র সংঘাত অনিবার্য।
অধিকাংশ ইসলামপন্থীরা স্বেচ্ছায়প্রণোদিত অবস্থায় এসকল বাতিল শক্তির সাথে আপোসকামি হয়ে, তাদের দেয়া সীমারেখা মেনে রাজনৈতিক পরিবর্তনের কথা বলেন। তাদের প্রতি এবং তাদের ত্যাগ তিতিক্ষা ও প্রচেষ্টাসমূহের যথাযথ মূল্যায়নপূর্বক ন্যূনত্বম যা না বললেই নয়-
‘এসকল রাজনীতি চর্চাকারীগণ হয় ইসলাম পরিপূর্ণভাবে বোঝেন নি, অথবা এসকল রাষ্ট্রব্যবস্থার বাস্তবতা বোঝেন নি। অথবা উভয়টির ক্ষেত্রেই রয়েছে ত্রুটিপূর্ণ, খণ্ডিত বা অসম্পূর্ণ বুঝ।’
পৃথিবীর লাইব্রেরীসমূহ থেকে অমৃত্যু চেষ্টা করেও কি প্রমাণ করা সম্ভব- কোনো আদর্শকে অন্য আদর্শ দ্বারা প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়েছে তীব্র সংঘাত ছাড়া?
কোন আদর্শই কি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে এবং স্থায়ী হয়েছে পূর্বোক্ত আদর্শের অনুসারীদের অনুগত করা ব্যাতিত!?
এমনকি সাম্প্রতিক ইতিহাসও যদি এসকল ইসলামপন্থীদের সঠিকভাবে কিছু উপলব্ধি করতে সক্ষম হতো, তবে তারা নিঃসন্দেহে গণতন্ত্র, দাওয়াত, তাবলীগ বা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার অলিক অলীক স্বপ্ন দেখা থেকে বিরত থাকতেন।
বিংশ শতাব্দীর ২য় দশক থেকে বামপন্থীরা শুন্য হাতে অথর্ব, চরিত্রহীন কার্ল মার্ক্স আর ফেডরিক এঙ্গেলস এর অন্তঃসারশূন্য, বিকৃত মতবাদ কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার সংকল্প করে। পৃথিবীর কোণায় কোণায় কমিউনিজম কায়েমের আন্দোলন শুরু হয়। আর ওই আন্দোলনের সফলতা অর্জনের পথে তাদের কারোরই এই ক্ষেত্রে দ্বিমত করতে হয়নি সশস্ত্র সংগ্রামের পরিকল্পনার ব্যাপারে।
এমনকি মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে তো বটেই, ইসলামের প্রাণকেন্দ্রেও ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে ফেললো। অথচ, এদেশগুলোর কতজন কমিউনিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের সংজ্ঞাটুকু জানে!?
অথচ, দুঃখজনক বাস্তবতা হলো মুসলিমরা দলে দলে বিভক্ত হলো ইসলামী রাষ্ট্র ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার ব্যাপারে। ঠিক একই সময়ে এমনকি অনেকে এখনো সংশয়ে ভুগছেন দ্বীন পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ ও পন্থা কীভাবে হবে সে বিষয়ে!
আমাদের দেশে মাওলানা ভাসানী, মোজাফফর আহমেদ, শেখ মুজিবুর রহমানদের মতো ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলো; অথচ কতজন তাদের মতাদর্শে বিশ্বাসী। বিপরীতে হাফেজ্জি হুজুর রহঃ কোটি কোটি অনুসারী, হাজার হাজার বাইয়াত মুরীদ (যারা এক কথায় জীবন দিতে প্রস্তুত) থাকা সত্ত্বেও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে দূরে থাক নির্বাচনে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা পেতেই হিমশিম খেয়ে থাকেন।
আরবে বাথিস্টরা কয়েকটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ফেলতে সক্ষম হয়, অথচ তারা শুরুর দিকে নিজেদের নামের আগে আলহাজ্জ/হাজী না লাগিয়ে শ্রোতাদের আকৃষ্ট পর্যন্ত করতে পারতো না। বিপরীতে, আল্লামা আলী তানতাভী রাহঃ এর এক বয়ানে গোটা দামেস্কবাসী আন্দোলিত হতো।
সারকথা, রাষ্ট্র একটি জাগতিক বিষয়। পার্থক্য শুধু মূল্যবোধের। একটি ইসলামী রাষ্ট্র ইসলামী শরিয়াতের ভিত্তিতে পরিচালিত, কমিউনিস্ট রাষ্ট্র কমিউনিজমের উপর প্রতিষ্ঠিত। একইভাবে, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথও সুনির্দিষ্ট।
আর শরিয়ত সেদিকেই আহবান করে যাতে আছে দুনিয়া আখিরাত উভয় জগতের কল্যাণ ও মর্যাদা।
তাই, বাস্তবতা উপলব্ধিকরত শরীয়তের পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান অন্যদের তুলনায় সহজ ও দ্রুততমভাবে আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাবে। কেননা, মুসলিমদের সাথে রয়েছে আল্লাহ্ তা’আলার তাওফিক, ওয়াদা ও সাহায্য। আরও রয়েছে সর্বোত্তম পথনির্দেশ, কুরআন ও সুন্নাহ ।
যারা দীর্ঘ সময় মেহনত, প্রচুর কুরবানী সত্ত্বেও সাফল্য না পাওয়াকে শাখাগত সমস্যা মনে করেন বা কোনো সমস্যাই মনে করেন না; কেমন যেন তারা বোঝাতে চাইলেন শরীয়ত আমাদের ভূল পথের দিকে পরিচালিত করছে। বরং না! আমরাই ভূলের উপর আছি।
নিঃসন্দেহে জিহাদি ও অজিহাদি আন্দোলন উভয়ের ক্ষেত্রেই ঢালাও ও অস্পষ্ট চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসা আবশ্যক। সমন্বিত ও সুসংগঠিত ইসলামী কর্মধারার হাকিকত ও প্রয়োগের ব্যাপারে গভীর উপলব্ধি হচ্ছে নূন্যতম দাবী, যা ইসলামের স্বার্থে বাস্তবিক ফলাফল অর্জনে ভূমিকা রাখবে।
আর আল্লাহ তা আলাই ভালো জানেন।