শায়খ হারিস আন-নাজ্জারি
ডাউনলোড
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন –
وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
অর্থ: তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিৎ যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎ কাজের নির্দেশ দিবে ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে; তারাই সফলকাম। (সূরা আলে-ইমরান – ১০৪)
এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কল্যাণকামী দল সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন। তারা হল সৎ কাজের নির্দেশকারী ও অসৎ কাজ থেকে বাধাদানকারী।
এ উম্মতের সর্বোত্তম হওয়ার কারণ হিসাবেও আল্লাহ তায়ালা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করাকে-ই উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন –
{كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ
অর্থ: তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করবে। (সূরা আলে-ইমরান-১১০)
এ উম্মতের সর্বোত্তম হওয়ার কারণ হিসাবে আল্লাহ তায়ালা যে মহান ইবাদতকে উল্লেখ করেছেন তা হল সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা।
সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, “সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ” এর বিধানটি গোটা উম্মতের জন্য প্রযোজ্য। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকে আসা ঘোষণা – “সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ” এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কি ই বা হতে পারে?
সহিহ মুসলিমে এসেছে – নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন –
من رأى منكم منكرًا فليغيره بيده، فإن لم يستطع فبلسانه، فإن لم يستطع فبقلبه وذلك أضعفُ الإيمان
অর্থ:“তোমাদের যে কেউ কোন অপরাধ হতে দেখে সে যেন তা হাত দ্বারা প্রতিহত করে (সকল মুসলিমের জন্য এটা ব্যাপক হুকুম) তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কোন গর্হিত (বা শরিয়ত বিরোধী)কাজ দেখবে সে যেন তা হাত দ্বারা প্রতিহত করে, যদি না পারে তবে মুখ দ্বারা, আর যদি তাও না পারে তবে অন্তর দ্বারা প্রতিহত করবে আর এটা হল ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর”। (মুসলিম)
সুতরাং এ ঘোষণা সকল মুসলমানদের ব্যাপকভাবে উদ্ভুদ্ব করার জন্য যে, তোমরা অপরাধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। তোমরা অপরাধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর তোমার হাত দ্বারা, জিহ্বা দ্বারা, অন্তর দ্বারা। এই যুদ্ধ অপরাধসমূহের বিরুদ্ধে এমন ব্যাপকভাবে হবে, যাতে গর্হিত কোন কাজ আর অবশিষ্ট থাকতে না পারে।
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ ছেড়ে দেয়া অথবা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও জমিনে অপরাধ প্রতিহত না করা উম্মতের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত নেসে আসার কারণ। আমরা এর থেকে আল্লাহ তায়ালার আশ্রয় ও নিরাপত্তা কামনা করছি।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُواْ مِن بَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَى لِسَانِ دَاوُودَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ذَلِكَ بِمَا عَصَوا وَّكَانُواْ يَعْتَدُونَ
বনী ইসরাঈলের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল তারা দাউদ ও মারইয়াম তনয় কর্তৃক অভিশপ্ত হয়েছিল – তা এজন্য যে, তারা ছিল অবাধ্য ও সীমালংঘনকারী। তারা যেসব গর্হিত কাজ করত তা হতে তারা একে অন্যকে বারণ করতো না। তারা যা করতো তা কতইনা নিকৃষ্ট। (সূরা মায়িদা-৭৮)
সুতরাং অবাধ্যতা এবং সীমালঙ্ঘন বলতে এখানে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা ছেড়ে দেয়াকে বুঝানো হয়েছে। তারা যেসব গর্হিত কাজ করতো তা হতে তারা একে অন্যকে বারণ করত না। তারা যা করত তা কতইনা নিকৃষ্ট। কতইনা নিকৃষ্ট কাজ “সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা” ছেড়ে দেয়া।
অর্থাৎ সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা ছেড়ে দেয়া উম্মতের জন্য অপদস্ততার কারণ। মোটকথা আল্লাহ তায়ালা এ কারণে বান্দাকে অপদস্ত করবেন। (লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ)।
ইমাম আহমাদ ও ইমাম তিরমিজী রহ. হযরত হুযাইফাতুল ইয়ামান রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন –
والذي نفسي بيده، لتأمُرُنّ بالمعروف ولتَنهوُنّ عن المنكر، أو ليُوشِكنّ الله أن يبعث عليكم عقابًا من عنده، ثم لتدعوُنهُ فلا يستجيب لكم
“ঐ সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, হয়তো তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে – অন্যথায় আল্লাহ তা’আলা তোমাদের উপর তার শাস্তি প্রেরণ করবেন। তারপর তোমরা আল্লাহ তা’আলার নিকট দোয়া করবে কিন্তু তিনি তোমাদের দোয়া কবুল করবেন না”
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা আমরা ছেড়ে দিলে শাস্তি স্বরূপ আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে অপদস্ততা আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। এরপর আমাদের দোয়াও আমাদেরকে এই অপদস্ততা থেকে রক্ষা করতে পারবেনা।
এ হাদীসটি কয়েক সূত্রে হাসান অথবা হাসান লিগাইরিহি বলা হয়েছে। (আহমাদ, তিরমিজী)।
উস্তাদ আব্দুল্লাহ আ’দম রহ. বলেন: যে ব্যক্তি সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে, তার জন্য উচিৎ হল, সে যে বিষয়ে আদেশ করবে এবং যে বিষয়ের নিষেধ করবে সে সম্পর্কে জানা বা বিচক্ষণ আলেম হওয়া। সুতরাং অজ্ঞ ব্যক্তির জন্য উচিৎ নয় যে, সে না জেনে দ্বীন সম্পর্কে কথা বলবে।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন –
قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ
“বলে দিনঃ এই আমার পথ। আল্লাহর দিকে বুঝে সুঝে দাওয়াত দেই আমি এবং আমার অনুসারীরা। আল্লাহ পবিত্র। আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই।”(সুরা ইউসুফ ১২:১০৮)
সুতরাং যার দিকে আহ্বান করা হবে এবং যার থেকে নিষেধ করা হবে তার ব্যাপারে সম্যক জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধকারীর জন্য আরও যা আবশ্যক তা হল – এই ইবাদত পালনে ইখলাস ঠিক রাখা। এটা আল্লাহ তা’আলার দাওয়াত, আর আল্লাহর দাওয়াত আল্লাহর রাস্তাই হয়ে থাকে। এটা কোন ব্যক্তি সত্ত্বার দিকে দাওয়াত নয় যে, সে বলবে – ‘আমি বিদ্যমান আছি! আমাকে চিনে রেখ! আমি অমুক ব্যক্তি’! أعوذ بالله (আল্লাহর পানাহ)। এটাই কি ইখলাস?
আমরা আল্লাহ তা’আলার কাছে রিয়া (লোক দেখানো ইবাদত) থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এবং তাঁর নিকট ইখলাস প্রার্থনা করছি।
তিনি আরও বলেন: “এ ইবাদাতে ইখলাস কামনা করা এবং প্রচার ও লোক দেখানোর মধ্যে দূরত্ব থাকতে হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি খোদা-প্রদত্ত এ দায়িত্ব পালন করবে সে যেন এ বিষয়টা খেয়াল রাখে এবং নিজের ব্যাপারে সতর্ক থাকে। সে যেন উদ্দেশ্যকে ঠিক করে নেয়, নিয়্যাতকে পরিশুদ্ধ করে নেয় এবং নিজ আমল দ্বারা মহান রবের সস্তুষ্টি কামনা করে।” কেননা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ দ্বারা কখনো মানুষের কাছে আস্থাভাজন হয় আবার কখনো উল্টো হয়। কখনো দেখা যাবে “সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ” তোমার উপর মানুষের ক্রোধ নিয়ে আসবে। তাই “সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ” এর ক্ষেত্রে আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। আল্লাহর জন্যই করতে হবে, কোন মানুষের সন্তুষ্টি বা ক্রোধের কারণে নয়। কেননা এ কাজের দ্বারা যেমনি ভাবে অনেক মানুষ সন্তুষ্ট হয় তেমনি অনেক মানুষ আবার অসন্তুষ্টও হয়।
কখনো কখনো মানুষ সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে ভয় পায়, কেননা মানুষ অনেক ক্ষেত্রে সৎ কাজ গ্রহণ করেনা অথবা অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকেনা। বরং উল্টো যে আহবান জানাচ্ছে তার বিরুদ্ধে সমালোচনা করে। তার উপর অন্যায়ভাবে চাপ সৃষ্টি করে বা পরিস্থিতি ঘোলাটে করে ফেলে। যেমনটি আলেমগণের কারও কারও ক্ষেত্রে ঘটে থাকে। তাদের সামনে সমস্যা হল বাদশা ও তার প্রভাব-প্রতিপত্তির ভয়। ফলে সে আলেম সত্য কথা বলতে ভয় পায়, সে বাদশার হুমকির ভয় করে। কখনো দেখা যায় হক্ব কথা বলতেই পারেনা, একেবারে দুর্বল হয়ে যায়। কখনো দেখা যায় সে বাদশাহকে না বরং মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে ভয় করে। আর ভাবতে থাকে যে, ‘তাদেরকে আমি কি বলব? তারা কি আমার এই হক্ব কথা গ্রহণ করবে? নাকি এর জন্য কিছু পরিবর্তন করে ফেলব’? ইত্যাদি। এক পর্যায়ে এ হক্ব কথা গোপন হয়ে যায়। এমনটি কিছুতেই উচিৎ নয়। কারণ ইখলাস তো একমাত্র আল্লাহর জন্য। সে ইখলাসের সাথে কাজ করতে থাকবে, এদিকেও তাকাবে না, ওদিকেও তাকাবে না।
উস্তাদ আরও বলেন: হে সৎ কাজের আদেশকারী ও অসৎ কাজের নিষেধকারীগণ! জেনে রাখ – সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ এমন একটি বিষয় যা অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত। এর কোন বিরোধী দলীল নেই। হ্যাঁ, এর কিছু মাসায়েলে মতবিরোধ রয়েছে। তাও অত্যন্ত দুর্বল কিংবা বিরল মতবিরোধের ভিত্তিতে হয়েছে।
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ কোন বিষয়ে প্রযোজ্য হবে? যে সকল বিষয়ে সুস্পষ্ট নস তথা আয়াত বা হাদীস রয়েছে সে ক্ষেত্রে? নাকি যে ক্ষেত্রে বিরল মতানৈক্যপূর্ণ মাসআলা রয়েছে সে ক্ষেত্রে? বিরল মতানৈক্যপূর্ণ মাসআলা যেমন: খেল তামাসার যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে মতানৈক্য রয়েছে, তবে তা বিরল মতানৈক্য। আর দুর্লভ বা বিরল মতানৈক্য গ্রহণযোগ্য নয়।
আর উলামাদের উক্তি: “لا إنكار في مسائل الخلاف” (“মতবিরোধপূর্ণ মাসআলার ক্ষেত্রে অস্বীকৃতি গ্রহণযোগ্য নয় অর্থাৎ তা মানতে কোন সমস্যা নেই”) এর অর্থ হল গ্রহণযোগ্য মতানৈক্য দুর্লভ মতানৈক্য নয়, যেমনটা কোন এক কবির কবিতা থেকে বুঝা যায়:
فليس كلُ خلافٍ جاء مُعتبرًا ** إلا خلافٌ له حظُ من النظر
কবিতার মর্ম হচ্ছে: প্রত্যেক মতানৈক্য গ্রহণযোগ্য নয়-তবে এমন মতানৈক্য যাতে রয়েছে চিন্তাযোগ্য বিষয়।
অন্যথায় এমন অনেক মাসআলা রয়েছে, যাতে প্রচুর পরিমাণে মতানৈক্য রয়েছে। তবে গ্রহণযোগ্য মতানৈক্য হল – যাতে কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাহর (কুরআন ও হাদীসের) কোন দলিল থাকে।
তিনি আরও বলেন: “অধিকাংশ মুহাক্কিকগণ(তাত্ত্বিকগণ) শাখাগত মাসআলা তথা ইজতিহাদি মাসআলায় মতানৈক্যকে অস্বীকার করেন না। যেমন ইমাম নববী রহ. বলেন, “মতানৈক্যের ক্ষেত্রে মূলনীতি হল, তাতে পরামর্শ ও বিবৃতি থাকবে”। তোমার কাছে যেটা গ্রহণযোগ্য তা আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য, আমার কাছে যেটা গ্রহণযোগ্য তা তোমার কাছে অগ্রহণযোগ্য। গ্রহণযোগ্যতা – অগ্রহণযোগ্যতা এমন বিষয় যাতে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ নেই, বরং তাতে রয়েছে পরামর্শ ও বিবৃতি দান। এভাবে পরামর্শ দেয়া হয় যে, আমরা বলি এটা উত্তম বা ওটা উত্তম। হাদীসটি এর দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে, সুতরাং এটা আমার কাছে দুর্বল কিন্তু আপনার কাছে সহীহ। মূলত এসকল ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য বিষয়টিই প্রাধান্য পাবে, কিয়াস বা যুক্তিও তাই বলে।
তিনি আরও বলেন: “মতানৈক্যের ক্ষেত্রে মূলনীতি হল – আলেমদের মধ্যে যারা যোগ্য তারা পরামর্শ ও বিবৃতি দিবেন। ইমাম গাজালী রহ. ‘ইহইয়ায়ে উলুমিদ-দ্বীন’ কিতাবে الحسبة“আল-হাসাবাহ”(হাসাবাহ বলা হয় সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধকে) এর শর্তসমূহের ক্ষেত্রে বলেছেন – হাসাবাহ বলা হয় সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধকে। আর সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধকারীদেরকে বলা হয় মুহতাসিবীন। হাসাবাহ এর শর্ত হল – মুনকার তথা অসৎ কাজটা জ্ঞাত হতে হবে, কোন প্রকার ইজতিহাদী নয়। সুতরাং প্রত্যেক এমন স্থান যাতে ইজতিহাদ করা হয়েছে তাতে হাসাবাহ নেই। অর্থাৎ ইজতিহাদকৃত (আবিষ্কৃত) বিষয়ে হাসাবাহ(সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ) নেই”।
উস্তাদ আ’দমের এখানে একটি সূক্ষ্ম কথা রয়েছে, তিনি বলেন: “হে মুহাজির! এ বিষয়ে তুমি সতর্ক হও এবং তোমার বিষয়টিকে দলিলের উপর প্রতিষ্ঠিত কর। তুমি যা জেনেছ তা মজবুত ভাবে আঁকড়ে ধর”।
এদিকে লক্ষ্য করে তিনি এ গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছেন। কখনো কখনো তাকদির তোমাকে এমন জাতির নিকট নিয়ে যাবে – যাদের ফিকহী মাযহাব তোমার মাযহাব থেকে ভিন্ন হবে। এটা এই মাযহাব, আর ওটা ঐ মাযহাব। আর এটাই হল বর্তমান জামানায় অধিকাংশ জিহাদি ভূমির অবস্থা। সুতরাং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের জন্য কদম ফেলার পূর্বে চিন্তা ভাবনা করে দৃঢ়তা গ্রহণ কর।
লোকদের মাযহাব সম্পর্কে অবগত হয়ে নিও, যাতে গ্রহণযোগ্য মাসায়েল ও অভিমতের মধ্যে পার্থক্য করতে পারো। এমনিভাবে মতানৈক্যপূর্ণ বিষয় ও মতানৈক্য নেই এমন বিষয়েরও পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করে নিও। যাতে বুঝা যায় যে, এই মাসআলাতে মতানৈক্য গ্রহণযোগ্য কিনা? এবং সে মাসআলা বুঝার জন্য ফিকহ, ইলম এবং জ্ঞানের প্রয়োজন আছে কি না?
তুমি দাওয়াতের ক্ষেত্রে নরম ও হেকমতপূর্ণ কথা ব্যবহার কর। কঠোর হবে না, তাহলে তোমার থেকে সকলে দূরে চলে যাবে। ফলে তুমি নিজেকে ছাড়া আর কাউকে পাবে না। এই কঠোরতার ফলে তাদের নিকটবর্তী ও দূরবর্তীরা তোমার উপর অত্যাচার করবে। সর্বদা এ কথা স্মরণ রাখবে যে, আলেমগণ যে সকল অপরাধগুলো নিয়ে বারবার আলোচনা করেছেন, তা হল – সে সকল অপরাধ যার উল্লেখ কুরআন ও হাদীসে রয়েছে। যেসকল বিষয় নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে সেগুলো নিয়ে তারা বারবার আলোচনা করেনি।
যেমন আবু নুয়াইম, সুফিয়ান সাওরী রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন – “যদি তুমি কাউকে এমন বিষয়ে আমল করতে দেখ, যার ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে, আর তা তোমার মতের ভিন্ন হয়, তাহলে তুমি তাকে নিষেধ করোনা”।
এমনি ভাবে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. বলেন “মানুষ সৎ কাজের আদেশের ক্ষেত্রে কৈৗশল ও নম্রতার মুখাপেক্ষী। কোন কঠোরতা করতে পারবে না। তবে যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে ও ঘোষনা দিয়ে গুনাহ করে, এমন ব্যক্তিকে নিষেধ করা, অবগত করানো তোমার জন্য আবশ্যক। কেননা বলা হয়ে থাকে ফাসেকের কোন হুরমত নেই। সুতরাং এটা তার জন্য হুরমত নয়”।
উস্তাদ বলেন: যারা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে, তাদের জন্য আবশ্যক হল, তারা লোকদেরকে সম্বোধন করে এমনভাবে কথা বলবে, যাতে তারা বুঝতে পারে এবং এতটুকু বলবে যতটুকু তারা গ্রহণ করতে পারবে। তাদেরকে এমন কিছুর জন্য বাধ্য করবেনা যা তারা বুঝতে ও আ’মল করতে অক্ষম। নিরাপদ হালতে তাদের ইচ্ছা ও আগ্রহ অনুযায়ী দাওয়াতের জন্য উপযুক্ত সময়-সুযোগ নির্ধারণ করে নিবে। অন্যথায় কঠিন বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে। আল্লাহ তা’আলাই তাওফিক দাতা ও সঠিক পথের দিশারী।
আমরা আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর আনুগত্যের তাওফিক দান করেন এবং তার নাফরমানি থেকে দূরে রাখেন। আমীন!
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহি ওয়া বারাকাতুহ।