সৌদি সরকার সম্পর্কে শারিয়াহ’র ফয়সালা

পিদিএফ ডাউনলোড করুন

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

উত্তর প্রদানে -শায়খ আবু বাসির মুস্তফা আত-তারতুসি (হাফিজাহুল্লাহ)

প্রশ্নঃ

আমি মনে করি, সৌদি সরকারের অধীনে সৌদি আরবে যা ঘটেছে এবং এখনো ঘটছে, তা আপনার মত মানুষদের কাছে গোপন নয়। যদি আপনি (আল্লাহ আপনাকে রক্ষা করুন) যুবকদের আবশ্যক করণীয়গুলোর ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দিতেন, বিশেষকরে সরকার যেহেতু ঈমান ও জিহাদের অনুসারীদের বন্দি অথবা হত্যা করার মাধ্যমে টার্গেট করা শুরু করেছে ।

এবং শায়খ ইয়ুসুফ আল উয়ায়রির ক্ষেত্রে কি ঘটেছিল তাও আমাদের থেকে দূরে নয়। একারনে যুবকদের দলগুলো, সৌদি সরকার ইতিমধ্যে যা করেছে এবং ভবিষ্যতে যা করতে পারে তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য কিছু সংখ্যক যুবক অস্ত্রশস্ত্র কেনা শুরু করেছে। অন্য কিছু যুবক সৌদি আরবে, আলজেরিয়াতে ঘটে যাওয়া ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশংকা করছে।
আর তারা এটাও বুঝে যে একটা বিরাট ফিতনা ও হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত হতে চলছে, বিশেষকরে যদি সরকার ইলম ও জিহাদের লোকদের দমন অব্যাহত রাখে। একারনে তারা নিজেদের জন্য অস্ত্রশস্ত্র কেনা অপরিহার্য মনে করছে-আগ্নেয়াস্ত্র থেকে বিস্ফোরক পর্যন্ত। এবং গৃহযুদ্ধ বা বিপ্লব বা এ ধরণের ঘটনার বিবেচনায়, তাদের এবং তাদের নিজেদের পরিবারগুলো কে রক্ষার জন্য অস্ত্রশস্ত্র ব্যাবহারের প্রশিক্ষণ নেয়াটাকে তারা নিজেদের জন্য আবশ্যক মনে করে।
এই যুবকদের প্রশ্নসমূহের উত্তর প্রদানকারীদের মধ্যে এবং তাদের উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় অংশিদারীদের মধ্যে রয়েছেন উলামা মাশায়েখ, যাঁদেরকে তারা তাঁদের জ্ঞানের কারনে বিশ্বাস করেন এবং যাঁরা আরবের এবং নিজেদের চারপাশের বাস্তবতার সাক্ষী। কিন্তু আপনি জানেন (আল্লাহ আপনাকে অনুগ্রহ করুন) তাদের বাড়ী ঘর অবরোধ করা হয়েছে এবং তাদের অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্দী করা হয়েছে। আর এমনটা করা হয় যখন তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়।
এমনকি সরকার এসব উলামাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও রচনা করেছে। যেমন তারা যখন শায়েখ আলী আল-খুদাইর, শায়খ নাসির আল-ফাহদ, এবং শায়খ আহমাদ আল-খালিদীকে গ্রেফতার করেছিল, তখন তারা এই মাশায়খদের সাথে অস্ত্র ও বিস্ফোরক পাওয়ার কথা প্রচার করেছিল! এবং এর পূর্বে সরকার তাদের বিরুদ্ধে ‘সৌদি সরকারকে উৎখাত করার জন্য মুওয়াহিদিন’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠার অভিযোগ এনেছিল।
এবং রিয়াদে বিস্ফোরণের পিছনে তাদের হাত রয়েছে- এমন অভিযোগ ও তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল, যদিও এই মাশায়খরা উভয় অভিযোগই প্রত্যাখ্যান করেছেন।
হে শায়খ! যুবকরা সন্দেহগ্রস্ত এবং একই সাথে ভীত। তাদের কি করা ফরজ তা জিজ্ঞাসা করতেও তারা ভয় পায়। এবং যদি তারা কাউকে প্রশ্ন করে তবে প্রশ্নের উত্তরে সে এড়িয়ে যায় অথবা সংক্ষেপে উত্তর দেয়।
গ্র্যান্ড উলামা কমিটির গ্রহণযোগ্যতা অনেক যুবকের কাছেই হ্রাস পেয়েছে এবং তারা গ্র্যান্ড উলামা কমিটির যেকোন সিদ্ধান্তকেই এমনভাবে দেখে যেন সিদ্ধান্তটি সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অথবা অন্য কোন মন্ত্রনালয়ের। একারনে আমরা আশা করি আপনি আমাদেরকে একটি ব্যাখ্যা দিবেন এবং উপদেশ দিবেন।

উত্তরঃ

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সব কিছুর প্রভু।
প্রশ্নটি অনেক বড়। আমি আশা করেছিলাম সৌদি সরকার যুবকদের এ পরিমানে চেপে ধরবে না যে তারা এইরকম প্রশ্ন করতে বাধ্য হবে। এবং আমি এর কাছাকাছি অনেক প্রশ্ন পেয়েছি। দুটি পবিত্র মসজিদ এবং এখানকার ইবাদতকারিদের দেখে আমি আশা করেছিলাম যে সরকার নিজেদের এই অবস্থয় ফেলবে না এবং তারা আমাদেরকে একাকি থাকতে দিবে যেভাবে আমরা তাদেরকে তাদেরমত থাকতে দিয়েছি।
কিন্তু সরকার শক্তি প্রদর্শন এবং আমাদের অপদস্থকরণ অব্যাহত রেখেছে এবং আমাদের প্রকাশ্য শত্রু হয়েছে এবং আরব উপদ্বীপ ও এর বাইরের মুজাহিদদের বিরুদ্ধে বিশ্বের কাফির তাগুতদের প্রকাশ্য সাহায্য করছে। তারা এটা করছে সন্ত্রাসবিরধী লড়াইয়ের নামে যদিও তারা নিজেরাই সন্ত্রাস ও অপরাধের হোতা।
প্রশ্নটির উত্তর দেয়ার জন্য নিচের ঘটনা গুলো উল্লেখ করা প্রয়োজনঃ
[১] সৌদি সরকার হচ্ছে কিছু হক্ব ও কিছু বাতিলের মিশ্রন। এর হক্ব বিষয়গুলো মৌখিক দাবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। যেমন তাদের পতাকায় তাওহিদের চিহ্ন এবং তাদের দাবি যে তারা একটি সালাফি ইসলামি রাষ্ট্র এবং তারা শারিয়াহ বাস্তবায়ন করে এবং অন্যান্য দাবিসমূহ, যেগুলোর ব্যাপারে আমরা আশা করেছিলাম তারা সত্য বলেছিল এবং এ দাবি গুলো এখনো অনেক মুসলমানদের প্রতারিত করে চলছে।
আর এ সরকারের বাতিল বিষয়সমূহ বস্তুগত বাস্তবতায়, দৈনন্দিন কাজকর্ম ও ঘটনাবলীতে অনেকটা স্পষ্ট। এই বাস্তব ঘটনাবলিই মৌখিক দাবির মোকাবিলায় সৌদি সরকারের প্রকৃত অবস্থার স্পষ্ট প্রমান। এ সরকারের মিথ্যাচারের প্রমান পাওয়া যেতে পারে নিচের ঘটনাবলীতেঃ
[১] ক) এটা এমন একটা সরকার যারা জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান অনুযায়ী শাসন করে না বরং তারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে শাসন করে এবং বাকি ক্ষেত্রগুলোতে করে না। এ সরকার আল্লাহর কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস করে এবং কিছু অংশে অবিশ্বাস করে। সৌদি আইন ব্যবস্থা পর্যালোচনা করলে এ বিষয়টি সহজেই যে কোন ব্যক্তির চোখে পড়বে।
আর এটা অনেক শারিয়াহ নুসুসি দলিলের সাথে সাংঘর্ষিক; যে দলিলগুলো জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য কুরআন এবং সুন্নাহ শরণাপন্ন হওয়ার আবশ্যকতা নির্দেশ করে। যেমন আল্লাহর বাণীঃ
“সুতরাং যে কোন বিষয়ে তোমরা যদি মতভেদ কর, তবে বিষয়টিকে ফিরিয়ে নাও আল্লাহ এবং রসুলের দিকে, যদি তোমরা সত্যই আল্লাহ এবং আখিরাতে বিশ্বাস কর। ইহাই অধিকতর কল্যাণকর এবং চুড়ান্ত বিবেচনায় উপযুক্ত”।
সুতরাং আল্লাহর বানীঃ “…যে কোন বিষয়ে …” – এটি সাধারন অর্থবোধক, যেটা মানুষ মতভেদ করতে পারে এমন যেকোনো বিষয়কে নির্দেশ করে।
[১] খ) এটি একটি অপরিণত সরকার, দীর্ঘদিন ধরে যার শক্ত ধারণা এই যে, এটি এর টিকে থাকার জন্য নিজের উপর কিংবা এর জনসাধারনের উপর নির্ভর করতে পারে না। একারণেই অতীতে আল-সউদ তাদের হাত পেতেছিল ব্রিটিশদের নিকট- আর এমনটি করেছিল মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাবের অনুসারীদের ইখওয়ান আন্দোলনের উপর নিয়ন্ত্রন এবং রাজত্ব শক্তিশালী করার জন্য – অবস্থা এমন ছিল যে সৌদি সরকারের প্রতিষ্ঠাতা ব্রিটিশদের নিকট থেকে বেতন পেতেন যে তথ্যটি তার একজন নাতি পরিস্কার ভাবে বলে গেছেন।
আর আজকে আব্দুল আজিজের ছেলেদের নেতৃত্বে সরকার নিজেকে আমেরিকার কোলের মধ্যে সম্পূর্ণ ভাবে নিক্ষেপ করেছে, আমেরিকার নীতি অনুযায়ী চলছে, আমেরিকার প্রত্যেকটা আশা-আকাংক্ষা পুরণ করছে, এই বিনিময়ে যে আমেরিকা সৌদি রাজত্বকে রক্ষা করবে, একে পরিত্যাগ করবে না অথবা পরিবর্তনের চেষ্টা করবে না।
যদি এরা (সৌদি সরকার) এদের ইসলামের দাবিতে আন্তরিক হত এবং ভূখণ্ডের রক্ষকের দাবিতেও তবে এরা নিজেদের ধার্মিক জনসাধারণ এবং ব্যাপক বস্তুগত সম্পদ কাজে লাগিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বাহিনী সমুহের একটা তৈরি করতে পারত- ক্ষমতা ও দৃঢ় ঈমান সম্পন্ন একটা বাহিনী, যারা আমেরিকানদের অন্তরে আতংক সৃষ্টি করতে সক্ষম হত।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা এর কিছুই করতে পারেনি। এ সরকারের অবস্থা অন্য আরেকটি আরব সরকারের মতই। জনগণের পক্ষ হতে সরকার পরিবর্তনের প্রচেষ্টা অথবা বিরোধিতা মোকাবিলায় একটি বাহিনী প্রস্তুত করার চাইতে বেশি কিছুই এ সরকার করেনি। এ সরকারের অবস্থা যেনঃ “আমার বিরুদ্ধে সিংহ, কিন্তু যুদ্ধে উট পাখি।”
[১] গ) এ সরকার বর্ণভিত্তিক, জাতীয়তা ভিত্তিক (আঞ্চলিকতার উপর)। এ সরকার অন্য জাতির সাথে এই অঞ্চলভিত্তিক জাতীয়তার সম্পর্কের ভিত্তিতে জোট বাধে এবং বিরোধিতা করে। এ সরকার আল্লাহর বান্দাদের অধিকার ও দায়িত্ব সমূহ সৌদি জাতীয়তা ও সৌদি ভূখণ্ডের সীমানার উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করে। এর অধিকার ও কর্তব্য নির্ধারণের ভিত্তি আক্বিদাহ ও দ্বীন নয়। একই কথা প্রযোজ্য অন্য আরব রাষ্ট্রগুলোর ব্যাপারেও।
আর এটি একটি স্পষ্ট কুফর বা কুফর বাওয়াহ।
“সৌদি স্থায়ী ফাতওয়া কমিটি” (আল-লাজনাহ আদ-দায়ীমাহ) তাদের একটি ফতওয়াতে বলেছেঃ
“যে কেউ ইহুদী, খ্রিস্টান, এবং অন্য অবিশ্বাসীদের জাতীয়তা ব্যতীত আর কিছু দিয়ে মুসলমানদের থেকে আলাদা করে না এবং তাদের সকল বিসয়সমুহ এক করে ফেলে, সে একজন কাফির।”
এবং ফতোয়াটিতে তারা সত্য বলেছেন কিন্তু সম্মানিতদের নিকট আমাদের প্রশ্ন হলঃ সৌদি সরকার কি এরকম নয়? আপনারা ফতোয়াটিতে যেমন বলেছেন, সৌদি সরকার কি তার তুলনায় ভিন্ন রকম?
ব্যাপারটা কি এমন নয় যে কাফির, যিন্দিক সৌদি জাতীয়তা এবং রাষ্ট্রের সাথে যুক্ত থাকার কারনে- নির্দিষ্ট অধিকার, সুবিধা, আনুকূল্য পেয়ে থাকেন যা সৌদি আরবের বাইরের একজন শায়খুল ইসলামও পান না?
একাকী অবিবাহিত নারীদের সমস্যা এর চুড়ায় পৌঁছেছে কিন্তু এ স্বত্ত্বেও সৌদি আইন অনুযায়ী একজন সৌদি মহিলা, সৌদি আরবের বাইরের একজন পুরুষ, যার দীন ও চরিত্র সম্পর্কে ঐ মহিলা সন্তুষ্ট, তাকে বিয়ে করতে পারে না।
একইভাবে একজন সৌদি পুরুষ ও সৌদি আরবের বাইরের একজন মহিলাকে বিয়ে করতে পারে না যতক্ষন পর্যন্ত না সে একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত পৌছায় এবং আরও কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পুরন করে এবং রাজ কতৃপক্ষের বিশেষ অনুমতি লাভ করে, যদিও এসব শর্তের সমর্থনে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন প্রমাণ নেই।
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্য বলেছেন যখন তিনি বলেছেন, “তোমরা যদি বিয়ে না কর তবে জমিনে ফিতনা এবং ব্যাপক ভাবে বিস্তৃত মন্দ দেখা দিবে।”
[১] ঘ) মুসলিম উম্মাহ বর্তমানে যে সব গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার মুখোমুখি সেগুলোর ব্যাপারে সৌদি সরকার তার সেনা বাহিনী সাথে নিয়ে সত্যিকার অর্থে অথবা ভনিতা করেও কোন সমর্থন দেখায়নি।
আমাকে একটা ইসলামি জিহাদি আন্দোলন দেখান যারা মুসলিমদের ভূখণ্ডে ইসলামি জীবন ব্যবস্থা কায়েম করতে চেয়েছে এবং তাগুতের অত্যাচার দূর করতে চেয়েছে এবং এই কাজে তাদেরকে, সৌদি সরকার অথবা এর আর্মি সমর্থন করেছে (সাধারন সৌদি মুসলিমরা ব্যতিত)। শত শত মুসলিমদের তাদের নিজেদের ভূখণ্ডে হত্যা করা হয়েছে… তাদের জমিজমা অন্যায়ভাবে নেওয়া হয়েছে এবং তাদের অধিকার হরণ করা হয়েছে।
এসব কিছুর প্রতি সৌদি সরকার ও এর আর্মির অবস্থান কিরুপ ছিল? ? কিচ্ছু না তারা সর্বোচ্চ যা করতে পারত তা হল মাশায়খদের ওইসব নির্যাতিত মুসলিমদের জন্য দুয়া করার অনুমতি প্রদান…অথবা সাধারন মুসলিমদের রাগ প্রশমিত করার জন্য আর্থিক সাহায্যের জন্য টাকা সংগ্রহ করে, অতঃপর সেই টাকা মুসলিমদের হত্যাকারী রাষ্ট্রসমূহের সরকারের কাছে পাঠানো।
যেমনটা ঘটেছিল যখন চেচনিয়ার মুসলিমদের জন্য সৌদি মুসলিমদের দেওয়া টাকা ঘাতক রাশিয়ান সরকারের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল যাতে এই ঘাতকরা মুসলিমদের উপর যে নিষ্ঠুরতা ও হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছিল তা আরও বাড়াতে পারে!
আমাকে বলুন-মাত্র একবার হলেও সৌদি সরকার ও এর আর্মি কখনও আল্লাহর জন্য রাগ প্রদর্শন করেছে। হিন্দুরা ভারতে এবং কাশ্মিরে বছরের পর বছর ধরে মুসলমানদের হত্যা করছে। এরপরও সৌদি সরকার ভারতের সাথে পূর্ণাঙ্গ কূটনীতিক সম্পর্ক এবং অন্যান্য সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছে। রাশিয়ান ক্রুসেডারদের হাতে অনেক বছর যাবত চেচনিয়ার মুসলমানরা নিহত হচ্ছে…এরপরও সৌদি সরকার রাশিয়ানদের সাথে পূর্ণাঙ্গ কূটনীতিক সম্পর্ক চালু রেখেছে।
ফিলিপাইনে মুসলমানরা বছরের পর বছর ধরে ফিলিপাইনের ক্রুসেডারদের হাতে মারা যাচ্ছে। কিন্তু সৌদি সরকার ফিলিপাইনের সাথে পূর্ণাঙ্গ কূটনীতিক সম্পর্ক চালু রেখেছে। এমনকি সৌদি সরকার তাদের কাছ থেকে সহযোগিতাও চায়, যেন কোন অপরাধই তারা করেনি! এমনকি কম্যুনিস্ট চীনের সাথেও সৌদি সরকারের ভাল কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং বন্ধুত্ব রয়েছে।
এরকম উদাহরণ আরও অনেক রয়েছে… ইসলাম ও মুসলিমদের সাথে লড়াইরত অনেক রাষ্ট্র রয়েছে। এদের মধ্যে থেকে একটি রাষ্ট্র দেখান যার সাথে সৌদি সরকার সম্পর্কচ্ছেদ করেছে, ঐ রাষ্ট্রের ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করার কারণে। নাই, এমন কোন উদাহরণ নাই।
এটা এমন একটা সরকার যা আল্লাহর জন্য রাগ প্রদর্শন করে না, একবারের জন্যও না… একবারের জন্যও আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব ও শত্রুতা দেখায় না! এ সরকারকে কিভাবে ইসলামিক বলা যাবে? কিভাবে?
কিভাবে এই বাস্তব ঘটনা গুলোর সাথে তাদের কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী শাসন করার দাবির বৈপরীত্য দূর করা সম্ভব?
[১] ঙ) উম্মাহর বিরুদ্ধে, ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে কোন যুদ্ধে উম্মাহর শত্রুদের সাথে পরিস্কার মিত্রতা এ সরকার কখনও গোপন করেনি… যেমন দেখুন আমেরিকাকে, যা সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের নামে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে এক ভয়ঙ্কর লড়াই চালাচ্ছে… তারা মুসলিমদের ভুমি আক্রমন ও দখল করছে…
এসত্ত্বেও আমেরিকা এ সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের ছাড় এবং সব ধরনের সমর্থন ও সাহায্য-সহযোগিতা পাচ্ছে… এমনকি সৌদি সরকার মুসলিমদেরকে মসজিদে আমেরিকানদের বিরুদ্ধে দুয়া করতে নিষেধ করেছে। আর আরব উপদ্বীপে আমেরিকার সামরিক ঘাটির খবর আমাদের থেকে দূরে নয়!
[১] চ) এটা এমন একটা সরকার যারা আল্লাহর পথে জিহাদ কে সমূলে শেষ করেছে। এ সরকারের শব্দ ভাণ্ডার ও চিন্তা-ভাবনা থেকে জিহাদ মুছে ফেলা হয়েছে। পক্ষান্তরে, এ সরকার এর নিজের লোকদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছে, তাদের দমন করছে, উলামাদের বন্দী করা হয়েছে। এবং এ সরকার একটি আর্মি তৈরি করেছে যার একমাত্র উদ্দেশ্য সিংহাসন ও সরকারের রাজত্বের সংরক্ষন।
[১] ছ) এ সরকার জাতিসংঘ ও অন্যদের থেকে উদ্গত বিভিন্ন সংস্থা, সংবিধান, জোট, এবং চুক্তিতে প্রবেশ করেছে-যে গুলোর প্রত্যেকটাই আল্লাহর শারিয়াহর স্পষ্ট বিরোধী।
[১] জ) এ সরকার অনেক টিভি চ্যানেল পোষে এবং অর্থায়ন করে। এ টিভি চ্যানেল গুলো অনৈতিকতা ও কুফর প্রচার করে। একইভাবে এ সরকারের অধীনে এবং এর আর্থিক সাহায্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক পত্রিকা এবং ম্যাগাজিন চলছে। এগুলো কুফর, নাস্তিকতা, এবং ধর্মনিরপেক্ষতা প্রচার করছে এবং এগুলো লোকজনের কাছে সুপরিচিত।
সুতরাং এ প্রচার মাধ্যম গুলোর এবং এগুলো যা প্রচার করছে তার জন্য সরকারই দায়ী। যখন সৌদি রাজা কে অপমান করা হয় অথবা তার মর্যাদা কে প্রশ্ন বিদ্ধ করা হয়, তখন এ সরকার দায়ী ব্যাক্তিকে চিহ্নিত করে খুঁজে বের করে এবং তাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্যাতন, বন্দিকরণ, এবং শাস্তি দেয়া হয়, এমনকি হত্যা পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু যখন প্রকাশ্য দিবালোকে আল্লাহকে অপমান করা হয়- যেমনটা করা হয়েছে সৌদি জিন্দিক তুর্কি আল-হামদ লিখিত গল্প “আল কারাদিব”- এ।
যাতে বলা হয়ছেঃ “সুতরাং আল্লাহ এবং শয়তান হল একই আবিষ্কারের দুই রূপ”- তাকে কোন ধরণের অভিযোগ বা জবাবদিহিতা ছাড়া তার ইচ্ছামত মুক্তভাবে চলতে দেয়া হয়েছে দেশ জুড়ে… এমনকি তার লিখিত কুফর এবং ভ্রান্ত মতবাদে পূর্ণ বই রাষ্ট্রীয় অনুমোদনে প্রকাশ করা হয়!!
আপনি চিন্তা করুন যদি বলা হতঃ “ফাহাদ অথবা ক্রাউন প্রিন্স এবং শয়তান হল একই আবিষ্কারের দুই রুপ”, তবে কি লেখক এক রাতও তার বাড়িতে ঘুমাতে পারত? অথবা ঐ লেখকের বই প্রকাশ ও বিপণনের অনুমতি দেয়া হত?
এটাই কি তাদের দাবীকৃত তাওহীদী রাষ্ট্র? শাসনকারী রাজা কি মর্যাদায় আল্লাহর চাইতে বড় এবং উচ্চতর? এবং যদি বলা হয়, হতেও পারে রাজা, আল্লাহকে অপমান করার ঘটনাগুলো জানেনা।
এর জবাব হচ্ছেঃ তবে কিভাবে তারা এমন সবাইকে জানে, যারা তাদের রাজা অথবা কোন প্রিন্সের ব্যাপারে কথা বলে, এমনকি যদিও তার কথা গোপনে টেলিফোনেও হয়… কিন্তু যা লিখে ছাপানোর পর বিলি করা হয় তার ব্যাপারে তারা (সরকার) কিভাবে অজ্ঞ থাকে?
আল্লাহ তাদের সম্পর্কে সত্য বলেছেন যখন তিনি বলেছেনঃ
“মানুষের মধ্যে এমনও রয়েছে যারা আল্লাহর পাশাপাশি অন্যদেরকে আল্লাহর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে নেয়, তাদেরকে সেভাবে ভালবাসে যেভাবে আল্লাহকে ভালবাসে। এবং যারা বিশ্বাসী তাদের আল্লাহর জন্য অধিক ভালবাসা রয়েছে এবং যদি অত্যাচারীরা দেখত যখন তারা আযাব প্রত্যক্ষ করবে, যে সকল ক্ষমতা আল্লাহর এবং আল্লাহ শাস্তি দানে অতি কঠোর।”
এবং আল্লাহ বলেছেনঃ
“তোমাদের কি হল যে তোমরা আল্লাহকে শ্রদ্ধা ভক্তি কর না, যখন তিনি তোমাদের ধাপে ধাপে সৃষ্টি করেছেন?”
[১] ঝ) সৌদি শাসক এবং প্রিন্সরা উম্মাহর সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করার প্রক্রিয়ায় মুল ভুমিকা পালন করে। একারনে এ সম্পদের একটি অংশ শাসক এবং প্রিন্সদের পকেটে এবং পেটে ঢুকে যার মাধ্যমে তারা নিজেদের কামনা বাসনা ইচ্ছামত পুরন করতে পারে… এবং তারা প্রশ্ন ও জবাবদিহিতার উর্দ্ধে, যত বেশি পরিমাণই তারা খরচ করুক না কেন… এবং তারা এ জিজ্ঞাসার উর্দ্ধেঃ “তুমি এটা কোথায় পেলে?”
এবং উম্মাহর সম্পদের একটা বড় অংশ উম্মাহর শত্রুদের পকেটে এবং স্বার্থ পূরনে ঢালা হয়… আর অসহায়, অত্যাচারিত মানুষগুলো যারা কোন কিছু করতে পারে না, তাদেরকে অপচয়ী, অত্যাচারী তাগুতদের টেবিলে উচ্ছিষ্ট থাকা খাবারের উপর ছেড়ে দেয়া হয়!

সুতরাং, সৌদি সরকারের এই সবগুলো রুপ একসাথে (এবং আরও অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো উল্লেখ করা হয় নাই) আমাদের এ সিদ্ধান্তে নিয়ে আসে যে, সৌদি সরকার একটি কাফির সরকার।

ইসলাম হচ্ছে পর্বতের এক উপত্যকায় আর আল-সউদের সরকার রয়েছে পর্বতের অন্য উপত্যকায়।

যে কেউ আল্লাহর দ্বীন সম্পর্কে জানে এবং এ সরকার ও এর সমর্থকদের বাস্তবতার কথা জানে, তার এ ব্যাপারে সন্দেহ থাকা মানায় না। এবং আমরা সৌদি সরকার সম্পর্কে যা বলি, এর অত্যাচারী আর্মি সম্পর্কেও একই কথা বলি।
কারণ, অন্যান্য আরব দেশগুলোর আর্মিদের মত এ আর্মিরও একমাত্র উদ্দেশ্য তাগুতদের সাহায্য করা এবং এদের সিংহাসন এবং স্বার্থ সংরক্ষন করা। সুতরাং এটা এমন একটা আর্মি যা শাসনকারী তাগুতের নির্দেশ মত চলে এবং এ আর্মির বন্ধুত্ব ও শত্রুতার ভিত্তি ও হল তাগুত শাসক।
তাগুত শাসক যাদের সাথে শান্তি স্থাপন করে, এই আর্মিও তাদের সাথে শান্তি স্থাপন করে যদিও যাদের সাথে শান্তি স্থাপন করা হয়েছে তারা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াইরত কাফিরও হয়। এবং তাগুত যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, এই আর্মিও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যদিও যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হয়, সে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল মানুষও হয়।
এটা অজ্ঞাত যে এই আর্মি আল্লাহর পথে একবারের জন্য হলেও যুদ্ধ করেছে! যদিও অনেকগুলো যুদ্ধক্ষেত্র রয়েছে…। একারনে এই ধরণের একটা আর্মিকে ইসলামি আর্মি বলা অসম্ভব, যদিও এর অধিকাংশ সৈন্য এবং কমান্ডাররা সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং একারণে তাদের মধ্যকার কেউ কেউ রেহাই পেতে পারে।
কিন্তু সামগ্রিকভাবে এই আর্মির গঠন এবং উদ্দেশ্যর বিচারে এই আর্মিকে ইসলামি বলা অসম্ভব। অথবা একথা বলাও অসম্ভব যে এই আর্মি আল্লাহর পথে লড়াই করে আল্লাহর কালিমাকে সুউচ্চ করার জন্য।
[২] সৌদি সরকার সম্পর্কে দেয়া এ ফতোয়াটি সাধারনভাবে প্রযোজ্য। এবং ফতোয়াটি ইহা নির্দেশ করে না যে সৌদি সরকারের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শনকারী প্রত্যেকেই অথবা এর প্রত্যেক সমর্থকই আবশ্যকভাবে কাফির। এর কারণ হচ্ছে অনেকের এ সরকার সম্পর্কে ভুল ধারনা রয়েছে। এই ভুল ধারণাগুলি প্রচার করেন কিছু মাশায়েখ এবং সরকারের এজেন্টরা।
একারণে এ ফতওয়াটি কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির উপর প্রয়োগ করার জন্য আবশ্যক হচ্ছে ‘কাউকে কাফির ঘোষণার’ শর্তসমুহ পুরণ হওয়া এবং ‘কাউকে কাফির ঘোষণার’ প্রতিরোধী কারণগুলো অনুপস্থিত থাকা। সরকারের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শনকারী অনেকেই এ সরকার সম্পর্কে পূর্বে বর্ণিত বাস্তবতা গুলো সম্পর্কে অজ্ঞ। অনেকেই সরকারের বাস্তবতা গুলো সম্পর্কে জানেন কিন্তু বিশ্বাস করেন না।
এবং অনেকেই সরকারের এ বাস্তবতা গুলো সম্পর্কে জানেন কিন্তু এটা জানেন না যে এগুলো একজন কে ইসলামের বাইরে নিয়ে যায়। অনেকেই জানেন যে এই কাজ গুলো একজন কে ইসলাম থেকে বের করে দেয়, তথাপি তারা আপনাকে বলবেঃ
“আমি আমাদের মহান শায়খদের অনুসরণ করি, তারা আমার এবং আপনার চেয়ে বেশি জানেন এবং তারা আমাকে একটি ফতোয়া দিয়েছেন যেটা আপনার ফতোয়া এবং ব্যাখ্যা থেকে ভিন্ন।”
এই সকল কারনে সরকার এবং তাগুত শাসকের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শনকারী কোন ব্যক্তির উপর এ ফতোয়াটি প্রয়োগ করতে গেলে এইসব বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে।
[৩] সৌদি সরকারের উপর দেয়া ফতোয়াটি অন্য জায়গায় প্রয়োগ করা যাবে না যেমন সমগ্র সৌদি সমাজ অথবা এখানকার বিভিন্ন সংস্থার উপর প্রয়োগ করা যাবে না। কারন সৌদি সমাজ হল মুসলিমদের সমাজ এবং মানুষরা বেশিরভাগই ধার্মিক এবং তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে। আর সমস্ত প্রশংসা শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য।

[৪] সৌদি সরকার সম্পর্কে জ্ঞানী লোকদের মাঝে বিরাজমান ভুলগুলোর কিছু সংখ্যক কারণ রয়েছেঃ

ক) একটি ভুল হল অনেক মাশায়েখ এবং দ্বীনের দিকে আহ্বানকারীরা সরকারের শুধু ভাল দিক গুলোই দেখেন এবং তারা সরকার থেকে এসবের বাইরে অন্য কিছু দেখতে চান না এবং শুনতেও চান না… এ কারনেই যখন তাদের কোন একজন কথা বলেন, আপনি তাকে বলতে শুনবেনঃ “ওয়ালিউল-আমর: আল্লাহ তাকে রক্ষা করুন-মসজিদ নির্মাণের জন্য, কুরআন ছাপানোর জন্য এবং কুরআন হেফজ করার জন্য স্কুল নির্মাণের আদেশ দিয়েছেন… এবং তিনি অমুক অমুক বই ছাপানোর আদেশ দিয়েছেন নিজের ব্যাক্তিগত খরচে।”
এবং তিনি একাধিকবার বলবেনঃ “আমরা কুরআন এবং সুন্নাহ অনুযায়ী শাসন পরিচালনা করি… এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর কেননা তিনি আমাদের এরকম একজন ইমাম এবং রাজা দিয়েছেন।”
এবং এসব অসচেতন লোকেরা নিজেরা বিপথগামী হয়েছে এবং অন্যদের বিপথগামী করছে। এ সরকার যে পূর্বে উল্লেখিত কাজগুলোর বেশি কিছু করতে পারে না তা এসব অসচেতনদের নজর এড়িয়ে যায়। এসব লোকেরা এ সরকারের যেসব কাজের কথা উল্লেখ করেন সেই কাজগুলো অনেক মুরতাদ ধর্ম নিরপেক্ষ আরব সরকার ও করে থাকে, অথবা সেই কাজগুলোর চাইতে বেশি কাজও।
খ) আরেকটি ভুল হল অনেক সৌদি মাশায়খ এবং দীনের দিকে আহ্বানকারীরা সৌদি সরকারের সাথে অন্য আরব দেশগুলোর সরকারের এবং এসব সরকার কর্তৃক ধর্মীয় নির্যাতনের তুলনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে সৌদি সরকার ঐসব সরকারের চাইতে হাজার গুন ভাল।
এখান থেকে তারা সৌদি সরকারের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান, এমনকি সরকারের সাথে সম্পর্ক বাড়াতেও পারেন। এভাবে তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হন এবং অন্যদের পথভ্রষ্ট করেন।
আমরা স্বীকার করি, সৌদি সরকারের পূর্বে উল্লেখিত ভুলগুলো থাকলেও এ সরকার অনেক আরব দেশের সরকারের চাইতে ভাল… কিন্তু এ ব্যাপারটা আমাদেরকে একটি কাফির সরকারের সাথে যুক্ত হতে বা কাফির সরকার নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার অনুমোদন দেয় না, যদিও এ সরকারের কুফর, অন্য আরব সরকারগুলোর কুফরের তুলনায় সবচেয়ে কমও হয়।
সত্যিকার অর্থে এখানে তুলনা হচ্ছে একটি কুফর এবং এর চাইতে বড় আরেকটি কুফরের মধ্যে অথবা একটি বৃহত্তর কুফর এবং এ কুফরের চাইতে বড় কুফরের মধ্যে… এবং তুলনার বিষয়টি এর (অর্থাৎ কুফরের) বাইরে যায় না।
গ) আরেকটি ভুল হল, এমন অনেক মাশায়েখ এবং দীনের দিকে আহ্বানকারী আছেন যারা সৌদি আরবের বাইরে থাকেন এবং হজ্জ্বের আবশ্যকতা সম্পাদনের জন্য এবং পবিত্র হারামাইনের প্রতি বিশেষ অনুভূতি থাকার কারণে, সরকারের অপরাধগুলো এবং এর কুফর সম্পর্কে চুপ থাকাটাকেই বেছে নেন… এবং হয়ত তারা ছাড় দিবেন এবং অতিরঞ্জন করবেন…
সুতরাং তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হন এবং অন্যদের পথভ্রষ্ট করেন… আর কোন দৃঢ়তা এবং ক্ষমতা নাই আল্লাহর ব্যতীত।

[৫] সুতরাং যদি বলা হয়ঃ সৌদি সরকারের কুফরী কি এ সরকারের বিরুদ্ধাচারন আবশ্যক করে? (অর্থাৎ এর বিরুদ্ধে লড়াই করে একে উৎখাত করা কি আবশ্যক?)

আমি বলিঃ হ্যাঁ। শারিয়াহ দৃষ্টিকোণ থেকে এ সরকারের বিরুদ্ধাচারণ ওয়াজিব। কিন্তু বাস্তব দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিরুদ্ধচারণের জন্য নির্দিষ্ট শর্তাবলী, বিভিন্ন পর্যায় বা ধাপ এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির দরকার রয়েছে এবং আমি মনে করি না যে এসব শর্তাবলী, ধাপ সমূহ এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহনের পূর্বে লড়াই শুরু করা উচিত। এবং শর্তাবলীর একটি হলঃ কাফির সরকারের বিরুদ্ধাচারনের ধারণাটা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের মাঝে দৃঢ়ভাবে বিদ্যমান থাকা।
এসব শর্তাবলী, ধাপ সমূহ এবং প্রস্তুতি শেষ হওয়ার পূর্বে, কুফর ও বে-ইনসাফির উপর অটল থাকা শাসক তাগুতদের মধ্যকার যাদের ফিতনা জমিন এবং মানুষের জন্য হুমকি স্বরূপ, তাদের হত্যা করতে ব্যাক্তিগতভাবে কোন মুসলিমের উপর শারিয়াহ অনুযায়ী কোন বাধা নাই, তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যাতে বৃহত্তর ফিতনার উদ্ভব না হয়।
কুফর ও বে-ইনসাফির উপর অটল থাকা শাসক তাগুতদের কাউকে হত্যা করে, জনসাধারনের পথ থেকে তাকে সরানো, লড়াই শুরু করা এবং সম্পূর্ণ সরকারকে তার বিশেষ সংস্থা গুলো সহ উৎখাতের চাইতে সহজ।

[৬] সুতরাং, যদি বলা হয়ঃ গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ, আর্মি, খবর প্রদানকারী, সরকারের এজেন্টদের প্রতি অবস্থান কিরুপ?

আমি বলিঃ গোয়েন্দা সংস্থা এবং খবর প্রদানকারী এজেন্টরা তাগুতের পক্ষে কাজ করা কুকুরের ন্যায় দারোয়ান। তাদের কাজই হল তাগুত এবং তার শাসন-নির্যাতন প্রতিরক্ষা করা। আমি নির্দিষ্ট শর্তাবলী, ধাপ সমুহ এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ব্যতীত এসব সংস্থার বিরুদ্ধাচারনের উপদেশ দেই না, তবে ব্যতিক্রম সে যার ফিতনা দ্বারা জমিন এবং জনসাধারণ মারাত্মক ভাবে আক্রান্ত।
সাময়িক সার্বিক বিরুদ্ধাচারন না করার কারণ হচ্ছে বিশেষকরে ভূখণ্ড সমুহে যেমন সৌদি আরবে সংঘাতের সীমারেখা বৃদ্ধির আশংকা এবং শান্তিপূর্ণ সাধারন মানুষদের ভীত সন্ত্রস্ত করে তোলার আশংকা।
আত্মরক্ষার ক্ষেত্রটিও ব্যতিক্রম। সুতরাং তারা যদি আপনাকে ধরতে আসে, হে মুজাহিদ ভাই, এবং আপনাকে হত্যা করতে চায় অথবা বন্দী করে নির্যাতন করে দ্বীন থেকে বের করে দিতে চায়, তবে সর্বাত্মকভাবে তাদের মোকাবিলা করুন। পরিস্কার অন্তর নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে লড়ুন এবং তাদের মুখোমুখি হন, পালিয়ে যাবেন না।
এবং আপনি আপনার নিজেকে এবং আপনার দ্বীন এবং সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে যদি তাদের হাতে নিহত হন, তবে আপনি জান্নাতের অধিবাসিদের একজন। আর তারা আপানাকে হত্যা করে অথবা বন্দী করে অথবা নির্যাতনের মাধ্যমে দ্বীন থেকে বের করার চেষ্টার মাধমে তাগুতের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যদি আপনার হাতে নিহত হয় , তবে তারা জাহান্নামের অধিবাসী, সহীহ হাদিসে এটা বর্ণিত হয়েছে।
এটাই হচ্ছে উত্তর, আপনার প্রশ্নের এবং যে সব ভাই এর প্রশ্ন, আপনার প্রশ্নের কাছাকাছি। এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সমস্ত কিছুর প্রভু।
(Visited 494 times, 1 visits today)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 2 =