পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যই। আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর কাছে সাহায্য চাই এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাই। আমরা নিজেদের নফস হতে এবং আমাদের কর্মের খারাপ ফলাফল হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।
যাকে আল্লাহ পথ দেখান তাকে কেউ পথচ্যূত করতে পারে না, এবং যাকে আল্লাহ পথচ্যূত করেন তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক ও তাঁর কোন অংশীদার নেই, এবং আমি সাক্ষ দিচ্ছি যে মুহাম্মদ তাঁর বান্দা এবং রাসুল। তাঁর, তাঁর পরিবার এবং তাঁর সাহাবীদের উপর শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত শান্তি ও কল্যান বর্ষিত হোক।
শুরু করছি:
হে আল্লাহ আমরা আপনার কাছে অন্যের সামনে আমাদের শক্তি-সামর্থে, আমাদের দুর্বলতায় ফরিয়াদ জানাই। আমরা আপনার কাছে আমাদের মুখোমুখি হওয়া বহু দু:খে এবং আমাদের ভোগ করা সকল যন্ত্রনায় আপনার কাছে ফরিয়াদ জানাই। মুসলিম উম্মাহ আজ দু:খের মধ্যে ডুবে আছে এবং আল্লাহ ছাড়া কোন শক্তি ও ক্ষমতা নেই।
উম্মাহ আজ রক্তের আধারে আটকে আছে এবং ডুবে যাচ্ছে, এবং আপনি যখন একে শত্রুর মুখের সামনে দেখেন তখন আপনার একটি প্রবাদ মনে পড়ে:
যদি আপনি তাইম গোত্রের একটি দাসকে দেখেন তাহলে আপনি চিন্তা করবেন যে তাদের মধ্যে দাস কারা।
বিষয়াদি ঠিক করা হয় যখন তাইমরা অনুপস্থিত থাকে, আর তাদের উপস্থিতিতে কেউ ঐসব নিয়ে তাদের কিছু জিজ্ঞেস করে না।
উম্মাহর এমন এক অবস্থায় এসে দাড়িয়েছে যে আপনি তার প্রশংসা করতে পারবেন না। এটা শত্রুর নিয়ন্ত্রনে আছে, এবং আপনি আমাদের জাতির মত আর কোন জাতি পাবেন না, যারা এত বেশী অপমানিত হয়েছে ও যন্ত্রনা সহ্য করেছে। এটা অনেক জখম ও দু:খ সহ্য করছে।
এর প্রতিটি অংশে আপনি পাবেন বিপর্যয়, দু:খ, বেদনা ও শাস্তি। এবং ব্যাপারটিকে অধিকতর খারাপ করে তুলেছে যে ব্যাপারটি, তা হচ্ছে উম্মাহ বিভিন্ন দল ও বিভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে।
এর মধ্যে কিছু দল অন্য দলদের পরাস্ত করে তাদের অধীনস্ত করেছে এবং শত্রুর শুধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখতে হয়। তাদের হয়ে তাদের কাজ করে দেওয়ার জন্য আমাদের উম্মায় যথেষ্ট লোক আছে।
কি আশ্চর্য! এটা কি সেই একই উম্মাহ যারা ইতিহাসে পাতা তাদের বীর ও কৃতীত্ব দিয়ে পূরণ করেছিল? এটা কি সেই একই উম্মাহ যারা সারা বিশ্বে পরিচিত ছিল এবং যারা শত্রুর অন্তর ভয় ও ত্রাস দিয়ে পূর্ণ করে দিত?
এটা কি সেই একই উম্মাহ যার শাসক বৃষ্টি মেঘকে বলত যে, “তোমার যেখানে ইচ্ছা সেখানেই বৃষ্টি বর্ষন কর, কারন আমি আগে-পরে তোমার ফলনের শুল্ক হতে লাভবান হবই।”
এখন আপনি দেখছেন যে উম্মাহ তার ধর্ম ও তার সম্মানের কারণ হতে সরে গিয়েছে, এবং দিন দিন এটি আরো দূর্বল ও আরো অপমানিত হচ্ছে।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) উম্মাহর এই আপতিত হওয়া অবস্থার কথা আবু দাউদের হাদিসে বর্ণনা করেছেন, “যদি তোমরা ব্যবসা কর এবং কৃষিকাজে জড়িয়ে পড়ে তাতে সন্তুষ্ট হয়ে জিহাদ ছেড়ে দাও তবে আল্লাহ তোমাদের অবমাননা ও পরাধীনতার মাধ্যমে শাস্তি দিবেন যা তিনি অব্যাহত রাখবেন যতদিন না তোমরা আবার দ্বীনে পথে ফিরে আস।”
আমাদের ভালবাসার মানুষটি (ﷺ) আমাদেরকে এই অসুখ এবং এর ঔষুধের কথা জানিয়ে দিয়েছেন যা হচ্ছে দ্বীনে প্রত্যাবর্তন। তাই আমরা কখনোই আমাদের উম্মাহ হতে এই পরাধীনতা ও অবমাননা দূর করতে পারব না আল্লাহর পথে জিহাদ ছাড়া।
আমাদের নিজেদের দুনিয়াবি ব্যাপার হতে এমন ভাবে ব্যাস্ত থাকা বন্ধ করতে হবে যা আমাদের আল্লাহর দ্বীনের প্রতি আমাদের কর্তব্য পালনে দেয় না। এইভাবেই এই উম্মাহকে তাদের দূর্বলতা থেকে মুক্তি পেতে হলে তাদের অবশ্যই নিজ দ্বীনে ফিরে যেতে হবে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ নিযুক্ত হতে হবে।
এটা করার মাধ্যমেই আল্লাহর নির্দেশ পালন করা হবে এবং আল্লাহর সামনে আমাদের পেশ করার মত ওছিলা হবে। এটা আল্লাহর শত্রুদের ক্রোধান্বিত করে তুলবে, যা হচ্ছে আল্লাহর পর আমাদের প্রথম উপায় উম্মাহকে অবমাননায় ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য।
ভাইয়েরা, কিভাবে আমরা পিছিয়ে পড়ায় সন্তুষ্ট থাকতে পারি যখন আল্লাহ বলেন, “হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কি হল, যখন আল্লাহর পথে বের হবার জন্যে তোমাদের বলা হয়, তখন মাটি জড়িয়ে ধর, তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে?” (আত–তাওবাহ:৩৮)
ভাইয়েরা, কিভাবে আমরা পিছিয়ে পড়ায় সন্তুষ্ট থাকতে পারি যখন আল্লাহ বলেন, “তোমরা বের হয়ে পড় স্বল্প বা প্রচুর সরঞ্জামের সাথে এবং জেহাদ কর আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ও জান দিয়ে।” (আত–তাওবাহ:৪১)
কিভাবে আমরা পিছিয়ে পড়ায় সন্তুষ্ট থাকতে পারি যখন আল্লাহ বলেন,
“যদি বের না হও, তবে আল্লাহ তোমাদের মর্মন্তুদ আযাব দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। তোমরা তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না।” (আত–তাওবাহ:৩৯)
কিভাবে আমরা পিছিয়ে পড়ায় সন্তুষ্ট থাকতে পারি যখন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, “যে যুদ্ধ ছাড়া মারা যাবে অথবা যুদ্ধের পূর্ণ সংকল্প ছাড়া মারা যাবে সে মুনাফিকের ডালের উপর নিয়ে মারা গেল।”
কিভাবে আমরা পিছিয়ে পড়ায় সন্তুষ্ট থাকতে পারি যখন আল্লাহর শরীয়াহকে বাতিল করা হচ্ছে, এবং মানবরচিত শরীয়াহ এর স্থান নিয়ে নিচ্ছে? আমরা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই।
ভাইয়েরা কীভাবে আমরা পিছিয়ে পড়ায় সন্তুষ্ট থাকতে পারি যখন আমরা আমাদের ভাইদের নিহত হতে দেখছি। তাদের সম্মানহানী হচ্ছে, তাদের ঘরবারী ধ্বংস করা হচ্ছে, যখন মুসলিমরা পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে, যখন আল্লাহ তাদের ডাকছে,
“আর তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর পথে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর;
এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও।” (আন–নিসাঃ ৭৫)
কীভাবে আমরা পিছিয়ে পড়ায় সন্তুষ্ট থাকতে পারি যখন আমরা দেখছি যে ইসলামের ভূমি একটির পর একটি দখল করা হচ্ছে, একটির পর একটি শত্রুর হাতে পড়ছে।
আলেমরা স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, জিহাদ ব্যাক্তিগতভাবে ফরজ হয় তিনটি অবস্থায়, তাদের একটি হচ্ছে, যখন শত্রুরা মুসলমানদের কোন একটি এলাকায় আক্রমণ করে। শিশুরা তাদের পিতামাতার অনুমতি ছাড়া জিহাদের জন্য বের হয়ে যাবে, তারা স্পষ্টভাবে বলেছেন যে এই অবস্থায় চাকররা তার মনিবদের অনুমতি ছাড়া, এবং দেনাদার পাওনাদারের অনুমতি ছাড়া এবং যারই যুদ্ধ করার সামর্থ আছে সে যেন সর্বাত্বকভাবে যুদ্ধ করে।
যারা মুসলিমদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত, তাদের কি কোন সন্দেহ আছে যে জিহাদ সকল সমর্থ ব্যাক্তির উপর ফরজ হয়েছে? উম্মাহর জন্য সবচেয়ে বড় দু:খের বিষয় হচ্ছে, আমরা দেখছি যে শত্রুরা আমাদের ভূমিতে চারদিকে তান্ডব করছে যখন আমরা বিতর্ক করার জন্য কনফারেন্স আয়োজন করছি যে, জিহাদ কি ব্যাক্তিগত না সাম্প্রদায়িক ফরজ!
বছর যায় আর আসে, আর আমাদের জমি করায়ত্ত হয়েছে, আমাদের সম্মানহানী হয়েছে, এবং আমরা এখনো “জিহাদের কিতাব” এর প্রথম পৃষ্ঠায় আছি, বিতর্ক করছি যে জিহাদ এখনো ব্যাক্তিগত ফরজ হয়েছে কিনা, নাকি এখনো এটি একটি সাম্প্রদায়িক ফরজ রয়েছে।
ভাইয়েরা! আপনি যা করতে পারেন তাই করেন, আপনাদের ভাইদের রক্ষা করুন। এবং এরপর জিহাদের বিধানের ব্যপারে আপনার যা ইচ্ছা হয় বলুন!
এবং আরো খারাপ ব্যাপার হচ্ছে যে, একজন মুসলিমদের বলছে যে জিহাদ হচ্ছে সাম্প্রদায়িকভাবে ফরজ এবং এই দায়িত্ব পালনে বাধা দিচ্ছে, আমরা দেখি যে, সে কখনো জিহাদের মাঠও দেখেনি টেলিভিশন ছাড়া। সে কিভাবে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য?
আমার ভাইয়েরা! যদি এটা সাম্প্রদায়িক ফরজও হত এটা তারপরও আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় ইবাদত।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (আল্লাহ তার উপর করুণা করুন) বলেন,
“যেই গুনাহর মধ্যে নিমজ্জিত, তার নিরাময়ের জন্য সবচেয়ে ভাল ঔষধ হচ্ছে আল্লাহর পথে জিহাদ।”
মহিমান্বিত আল্লাহ বলেন,
“মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন–সম্পদ ও জীবনপণ করে জেহাদ করবে।
এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ। তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং এমন জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বসবাসের জান্নাতে উত্তম বাসগৃহে। এটা মহাসাফল্য।
এবং আরও একটি অনুগ্রহ দিবেন, যা তোমরা পছন্দ কর। আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং আসন্ন বিজয়। মুমিনদেরকে এর সুসংবাদ দান করুন।” (আল–ছফ:১০–১৩)
ভাই! কি তোমাকে পিছিয়ে থাকতে বাধ্য করছে? তুমি কি পিছিয়ে থাকছো কারন তুমি তোমার পরিবার ও মাতৃভূমিকে ছেড়ে যেতে ঘৃণা কর?
যখন আল্লাহ বলেন,
“বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র তোমাদের অর্জিত ধন–সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান–যাকে তোমরা পছন্দ কর–আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর রাহে জেহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।” (আত–তাওবাহ:২৪)
নাবিগাহ আল-জা’দি একটি বহি আক্রমণের জন্য যাচ্ছিলেন, এবং তিনি তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর পরিস্থিতি এই কবিতার লাইন দিয়ে প্রকাশ করেন,
“আল্লাহর কসম, সে রাত পার করেছে বসে থেকে, আমার কথা চিন্তা করতে করতে, একে অপরের কথা চিন্তা করছে আর অশ্রু ঝড়ছে।
হে আমার শ্বশুরের কন্যা, আল্লাহর কিতাব আমাকে সূদুরে নিয়ে এসেছে, আমি কি আল্লাহকে জোরপূর্বক তাঁর কৃতকাজ থেকে বিরত রাখব?
যদি আমি চলে আসি, খোদা আমাকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। যদি আমি আমার প্রভুর সাথে মিলিত হই, তবে অন্য কারো খোঁজ কর।
আমি না খোঁড়া, না বধির যাতে আমাকে ক্ষমা করা হবে।
না আমি অসুস্হতায় কাতর না আমি অক্ষম।”
কিভাবে তুমি তোমার স্ত্রী এবং সন্তানদের সাথে জীবন উপভোগ কর যখন তুমি তোমার ভাইদের পরিনতি দেখছ? তুমি কি তাদের দেখে দু:খবোধ কর না? তুমি কি তাদের জন্য তা কামনা কর না যা তোমার কাছে আছে? যদি তুমি তাদের পরিস্থিতিতে থাকতে তুমি কি পছন্দ করতে যদি তারাও পিছিয়ে থাকতো যেমনটা আজ তুমি আছো?
ভাই! আর কতক্ষন তোমরা পেছনে দাঁড়িয়ে থাকবে, আর উম্মাহকে ব্যর্থ করবে যখন শত্রুদের স্পর্ধা আরো বেশী বেশী বাড়ছে? প্রতিবার তারা যতবেশী সীমালঙ্ঘন করছে ততবেশী আমরা পশ্চাদপসারন করছি। যেন আমরা শয়তান ও তার দোসরদের মোকাবিলা করতে দ্বিধা করছি? হয়ত এটা মুজাহিদীনদের বিপক্ষে শত্রুদের শক্তি, এবং তাদের বিরুদ্ধে শত্রুদের একত্রীকরণ যা তোমার বসে থাকার কারন। তুমি দেখছ যে পুরো বিশ্ব তাদের একসাথে আক্রমণ করছে।
এমন লোকও আছে যারা দাবী করে যে তারা আমাদেরই একজন কিন্তু তারা শত্রুদের পহ্মে অবস্থান করছে, যখন অন্যরা পাশে থেকে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদি এটা হয় তোমার বসে থাকার কারন,
তাহলে চিন্তা কর: আল্লাহর রাসুল (ﷺ) কি বিজয়প্রাপ্ত হয়েছে এবং তাঁর সাহাবারা কি পূর্ব ও পশ্চিম বিজয় করেছে তীব্র যুদ্ধ ছাড়া সে সীমা পর্যন্ত যে তারা তাদের সাথে সবসময় অস্ত্র বহন করত এমনকি যখন তারা ঘুমিয়ে থাকত তখনও, এতই ভয় তারা পেত যে তারা নিজ ঘরেও নিরাপদ বোধ করতেন না, এবং এমনকি যখন তারা নিজেদের উপশম করতে বাইরে যেতেন তখনও?
হয়ত কারন তুমি মুজাহিদীনদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষমতাকরন ও শক্ত অবরোধ দেখেছ। যদি এটাই তোমার কারন হয় বের না হওয়ার যেখানে তোমার বিশ্বাস এই যে, আল্লাহ যিনি হচ্ছে যোগানদাতা, যিনি ক্ষমতার মালিক, এবং সর্বশক্তিশালী?
আল্লাহর রাসুল (ﷺ) তাঁর সাহাবীদের হিজরতের নির্দেশ দেন যখন তাঁর কাছে তাদের থাকতে দেওয়ার মত কোন জায়গা ছিল না মসজিদ ছাড়া। মানুষ তাদের অনেকজনকে মাটিতে পড়ে যেতে দেখতেন, মনে করতেন তারা উন্মাদ, যখন এটা ছিল তাদের হ্মুধা ও নিরতিশয় ক্লান্তি।
চিন্তা করো যখন আল্লাহর রাসুল ঘর থেকে বের হতেন শুধু ক্ষুধার কারনে, দুটি পাথর তার পেটের সাথে বেঁধে তীব্র হ্মুধার কারনে। চিন্তা কর যখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একদল সেন্য প্রেরণ করতেন এক বস্তা খেজুর ব্যতীত অন্য কোন খাবার ছাড়া কেননা তিনি আর কিছু পাননি।
যদি মুজাহিদীনদের এরকম কিছু করতে হয় তবে তাদের প্রথম বিরোধিতাকারী হবে তাদের যাজকসম্প্রদায় ও টেলিভিশনের আলেমগণ, যারা তাদের বেপরোয়া, অক্ষম ও শত্রুর মোকাবিলায় তাড়াহুড়াকারী বলে ডাকবেন।
ভাই, তুমি কি পেছনে দাঁড়িয়ে আছ কারন তুমি মনে করছ যে তুমি উম্মাহর কোন প্রয়োজন পূরণ করছ অথবা তুমি যেখানে আছ সেখানে থেকে কোন ভাল কাজ করছ?
আমরাও বিশ্বাস করি যে তুমি কোন ভাল কাজ করছ ইনশাল্লাহ। কিন্তু তুমি কি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা ব্যতীত উচ্চতর কিছু করতে পারবা? একটি বিশুদ্ধ হাদিস অনুসারে, রাসুলুল্লাহকে (ﷺ) জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন একটি ভাল কাজ উল্লেখ করতে যা জিহাদের সমপর্যায়ের।
তিনি বললেন যে তিনি পারবেন না। তারপর তিনি বললেন যে, একজন মুজাহিদ বের হয়ে গিয়ে ফিরে না আসা পর্যন্ত কি তুমি ক্লান্তি ছাড়া সালাত আদায় করতে এবং না ভেঙে রোজা রাখতে পারবে?
“তোমরা কি হাজীদের পানি সরবরাহ ও মসজিদুল–হারাম আবাদকরণকে সেই লোকের সমান মনে কর, যে ঈমান রাখে আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি এবং যুদ্ধ করেছে আল্লাহর রাহে, এরা আল্লাহর দৃষ্টিতে সমান নয়, আর আল্লাহ জালেম লোকদের হেদায়েত করেন না।” (আত–তাওবাহ:১৯)
হ্যা ভাই তুমি নেক আমল করছ, কিন্তু আল্লাহ এটা তোমার উপর ফরজ করে দিয়েছেন যে তুমি তোমার বোনদের ইজ্জত এবং ইসলামী ভূমি রক্ষা করবে। চল বের হই এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, এই আশায় যে আল্লাহ আমাদের পূর্বে পিছিয়ে পড়ার গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
ভাই, তুমি কি শরীয়াহকে ও দ্বীনকে রহ্মা করার চেয়ে উত্তম কোন আমল করতে পার যখন এমন সময় চলছে যে শত্রুরা হচ্ছে অনেক এবং সাহায্যকারী হচ্ছে অল্প? আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তোমার সম্পদ নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার এবং নামমাত্র মূল্যে তোমার আত্বা বিকিয়ে দেওয়ার চেয়ে ভাল কোন কিছু কি আছে?
এবং আল্লাহর সাথে করা সওদা পূরণ করা যেখানে তিনি বলেন,
“আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহেঃ অতঃপর মারে ও মরে।” (আত–তাওবাহ:১১১)
ভাই হয়ত তোমার জিহাদে বের না হওয়ার কারন হচ্ছে যে, তুমি হয়ত যে কোন মুজাহিদ ভূল করেছে এবং সীমালঙ্ঘন করেছে। আল্লাহর কিতাব ও রাসুলুল্লাহর (ﷺ) সুন্নাহতে কি এমন কোন প্রমান আছে যে, ভূল করা হচ্ছে আল্লাহর পথে জিহাদ হতে বিরত থাকার একটি বৈধ অজুহাত?
নাকি এগুলো আসলে দুটো জিনিস তোমাদের উপর ফরজ করে দেয়, একটা হচ্ছে জিহাদ আরেকটা হচ্ছে নিজ ভাইদের উপদেশ। বল আমার ভাইয়েরা, কোন কিছু কি ভূল না করে ছাড়া করা যায়? বিশ্বে বিচরণকারী শ্রেষ্ঠ সৈন্যদল, মুহাম্মদের (ﷺ) দল কি কোন ভূল করেনি?
উহূদের যুদ্ধে ইবন উবাই এক তৃতীয়াংশ সেনাবাহিনী নিয়ে পশ্চাদগমন করে, আল্লাহর রাসুলকে (ﷺ) ও তাঁর সঙ্গীদেরকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একা রেখে চলে যায়। কেউ কি বলতে পারে যে আল্লাহর রাসুলের (ﷺ) মাধ্যমে জিহাদ করা ঠিক ছিল না কারন তাঁর সেনায় কিছু মুনাফিক ছিলেন?
তাবুকের যুদ্ধে একদল মুনাফিক আল্লাহর রাসুলকে (ﷺ) হত্যা করতে চেয়েছিলেন। তাই কেউ কিভাবে এই কথা বলে যে, “কিভাবে আমরা এমন এক নেতার নেতৃত্বে জিহাদ করব যার নিজ সেন্য তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে?”
উসামা বিন যাইদ (রা:) বিধান বুঝতে ভূল করেন এবং একজন ব্যাক্তিকে হত্যা করেন যদিও সে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলেছিল। কিন্তু আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কিছু করেননি, শুধু বলেছেন, “তুমি কি করবে যদি তার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কে কিয়ামতের দিন সামনে পেশ করা হবে?”
তিনি কি তাকে সরিয়ে দিয়েছেন, তাকে সরানোর হুকুম দিয়েছেন, তার সাথে একসাথে জিহাদ করা বন্ধ করে দিয়েছেন, নাকি তার ভূল মানুষের কাছে উন্মোচিত করে বক্তৃতা দিয়েছেন?
বরং এক সময়কার একজন সাধারণ সেনাবাহিনীর পদাতিক সৈন্য, তিনি পরবর্তীতে শুরুর দিককার সাহাবাদের এক সৈন্যদলের কমান্ডার ছিলেন। আল্লাহ তাঁদের সবার উপর সন্তুষ্ট হলেন। একবার খালিদ ইবন ওয়ালিদ (আল্লাহ তাঁর উপর সন্তুষ্ট হোক) একটি গোত্রের উপর হানা দিয়েছিলেন।
যখন তারা ইসলাম গ্রহন তখন তারা বলে যে আমরা সেবীয়ান হয়েছি (ধর্মান্তরীত) এবং তারা ঠিকভাবে বলতে পারেননি যে তারা মুসলিম হয়েছেন। খালিদ তারা যা বোঝাতে চেয়েছেন তা বোঝেননি এবং তাদের হত্যা ও বন্দী করা শুরু করেন।
যখন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এটা শোনেন তখন তিনি কিছু না করে শুধু হাত তুলে বলেন, “হে আল্লাহ! নিশ্চই আমি খালিদ যা করেছে তা থেকে পবিত্র।”
এই ঘটনাটি কি রাসুলুল্লাহকে (ﷺ) খালিদকে “আল্লাহর তরবারীগুলোর একটি তরবারী” ডাকতে বিরত রেখেছিল? আল্লাহর রাসুলের (ﷺ) সেনায় এমন লোকজন ছিলেন যারা একে অপরকে হত্যা করতেন এবং তাদের গনিমত চুরি করতেন এবং মদপান করতেন।
হুদাইফাহ বিন ইয়ামানের পিতা এমনকি দূর্ঘটনাবশত উহূদের যুদ্ধে নিহত হন। আপনি এমন কোন সেনাবাহিনীর অপেক্ষায় আছেন যারা এর চেয়েও পবিত্র?
ভাই, দ্বীনের মধ্যে আসল দূর্ঘটনা হচ্ছে, আমরা মুজাহিদীনদের সকল দোষ খুঁজে বেড়িয়েছি, তাঁদের ব্যাপারে কথা বলেছি তাদের প্রচার মাধ্যমগুলোতে উন্মোচন করেছি, কিন্তু আমরা ইসলামের জন্য তাঁরা যতটুকু করেছে তার সিকি পরিমানও করিনি।