শুকনো খেজুর দিয়ে তৈরি গণতন্ত্রের মূর্তি!

হাকিমুল উম্মাহ শায়খ আইমান

ইখওয়ানুল মুসলিমিনের পরিণতি থেকে শিক্ষা

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

ক্রুসেডার, ধর্মনিরপেক্ষবাদী, আমেরিকাপন্থী সেনাবাহিনী, মুবারকের অবশিষ্ট থেকে যাওয়া অনুগত দল এবং ইসলামপন্থীদের একটি দল আরব উপসাগর অঞ্চলের অর্থ এবং আমেরিকার পরিকল্পনার সাহায্যে মুহাম্মদ মুরসি সরকারের পতন ঘটানোর জন্য একত্রিত হয়েছিল।

ক্রুসেডারদের নেতা (তাওয়াড্রোস) সরকার পতন পরবর্তী সভায় এই দিনটিকে ঐতিহাসিক একটি দ্বীন বলে উল্লেখ করেছিল। ক্রুসেডাররা মুহাম্মদ মুরসি সরকারের উচ্ছেদকে সমর্থন করেছিল কারণ এই উচ্ছেদ তাদের জন্য দক্ষিন মিশর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি কপটিক খ্রিষ্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে একটি পদক্ষেপ।

তিনি মুসলমান এবং খ্রিষ্টানদের মধ্যে পার্থক্য করেন না এবং তার রাষ্ট্র ধর্মীয় মতবাদ নয় বরং জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত- এই আশ্বাস মুহাম্মদ মুরসি বারংবার প্রদান করা সত্ত্বেও তার সরকারকে ক্রুসেডাররা বরদাস্ত করেনি। তারা এটা সহ্যই করতে পারছিল না যে, মিশর এমন একজন রাষ্ট্রপতি দ্বারা পরিচালিত হবে যে কিনা একটি ইসলামপন্থী দলের সাথে যুক্ত। তারা শুধুমাত্র একজন নির্ভেজাল সেকুলারিস্ট (ধর্মনিরপেক্ষবাদী, বস্তুবাদী) রাষ্ট্রপতি চায় যে আমেরিকার প্রতি অনুগত হবে। এর মাধ্যমে তারা আমেরিকা এবং যায়নিস্টদের ইহুদিবাদীদের সাথে মিলে মিশরকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে চায় ঠিক যেমনভাবে “আরব ঐক্য” এর সাবেক নেতা জামাল আব্দুল নাসের সুদানকে মিশর থেকে আলাদা করে দিয়েছিল।

আর ধর্মনিরপেক্ষবাদীদের নেতা মুহাম্মদ আল-বারাদি সরকার পতনের আনন্দে উদযাপনে এসে জাতীয় সংহতির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করতে গিয়ে মুবারক এবং তার অবশিষ্ট থেকে যাওয়া অনুগতদের অপরাধ মাফ করে দেয়ার প্রয়োজনীয়তা ঘোষণা করে। এই মুবারকপন্থীরাই মুহাম্মাদ মুরসি সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের এই আন্দোলনে অর্থায়ন করেছিল। আমেরিকার দালাল এবং আন্তর্জাতিক পদের জন্য লালায়িত এই আল-বারাদি হচ্ছে সেই লোক যে নিজের চাকরি ধরে রাখতে ইরাক আক্রমণে সমর্থন জানিয়েছিল।

শুকনো খেজুর দিয়ে তৈরি গণতন্ত্রের এই মূর্তি যেই ধর্মনিরপেক্ষবাদী ও বস্তুবাদী লোকেরা বানিয়েছিল সেই লোকেরাই গণতন্ত্র, নির্বাচন, আর ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ  হস্তান্তর এবং বোকাদের ধোঁকা দেয়ার উদ্দেশ্যে তাদের তৈরী অন্যান্য গল্প বেমালুম ভুলে গিয়ে নিজেদের তৈরী মূর্তি নিজেরাই খেয়ে ফেলে মুরসি সরকারকে উচ্ছেদ করেছে।(১) তাদের “অতি শ্রদ্ধেয় ও পবিত্র” ব্যালেট বক্সের মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় যেতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে ক্ষমতায় যাবার জন্য তারা আমেরিকাপন্থী সেনাবাহিনীর শরণাপন্ন হয়েছিল যেটাতে জাতীয়তাবাদী ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পাশাপাশি কিছু ইসলামী শরীয়তের আইনের আংশিক বাস্তবায়ন করার ক্ষীণ সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল মাত্র। তারা এটাও সহ্য করতে পারেনি। তাদের গণতন্ত্র এটাকে গ্রহণ করতে পারেনি। তাই তারা সামরিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ বেছে নিয়েছিল।

ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা মিশরকে কি প্রস্তাব দিচ্ছে?  তারা ইরাক ধ্বংসকারী মুহাম্মাদ আর-বারাদিকে মিশরে তার ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু করার প্রস্তাব দিচ্ছে। আমেরিকার ইরাক আক্রমণের পর হ্যান্স ব্লিক্স আণবিক শক্তির এজেন্সি (Atomic Energy Agency)  থেকে পদত্যাগ করেন কিন্তু মুহাম্মাদ আল-বারাদি  এই অভিমান এবং আত্মসম্মান দেখাতে ইচ্ছুক ছিলেন না। তিনি শেষ দিন পর্যন্ত তার পদে বহাল থেকে এর সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে ইচ্ছুক ছিলেন। আর যখন এজেন্সিতে তার সময়কাল শেষ হয় তখন তারা তাকে মিসরে আরেকটি মিশনে পাঠায়। এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে এই যে , তারা মুবারক বিরোধী অভিজানে ইখওয়ানই( যারা নিজেদেরকে গণতান্ত্রিক মতবাদের বেড়াজালে বন্দী করে ফেলেছে) তাকে জনসমর্থন প্রদান করে। ফলে বিগত দিনের রোপিত  বৃক্ষের ফসল তারা আজ ঘরে তুলেছে। কবি মুতানাবি বলেছেনঃ

(আরবী কবিতা)

মিশরে হাস্যরসের অভাব নেই তবে এই হাসির অন্তরালে রয়েছে কান্না

এছাড়া ধর্মনেরপেক্ষবাদীরা মিশরকে আর জি প্রস্তাব করছে? তারা নাসেরিয়া মতবাদের উত্তরাধিকারী হামিদন সাবাহিকে পেশ করেছে যেন সে ১৯৫৬ এর পরাজয় এবং ১৯৬৭ এর বিপর্যয়, অত্যাচারের নির্বাসন, সিগাওয়ীর পদচিহ্ন, গোয়েন্দাবাহিনীর দুর্নীতি, আব্দেল হাকিম আমের, বারলেন্তি আব্দুল হামিদ ও ওয়ারদা আল-জাযাইরিয়ার অনৈতিকতা এবং শামস বাদরান ও হামযা আল বাসিউনির অত্যাচারের পুনরাবৃত্তি করতে পারে। আরও হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে এই এখওয়ানই সংসদ নির্বাচনে হামদিন সাবাহির সাথে জোট গঠন করেছিল।

ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা মিশরের কাছে আরও পেশ করেছে মুবারকের ভৃত্য এবং চাটুকার আমর মুসাকে যে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত শুধু নিজের পেশায় পদোন্নতি চায়।

ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা আরও প্রস্তাব করেছে ওয়াফদ পার্টিকে যারা ১৯৪৪ এর ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটিশ বাহিনীর ক্ষমতায় চড়ে এসেছিল আর আজ ২০১৩ তে আমেরিকার সেনাবাহিনীর দাপটে চড়ে এসেছে।

আর এই আমেরিকাপন্থী সেনাবাহিনী তৈরিই করা হয়েছে আমেরিকার সাহায্য, প্রশিক্ষণ এবং হস্তক্ষেপ দ্বারা। নিজেদের আদেশ বাস্তবায়ন, স্বার্থ সংরক্ষণ এবং আমেরিকার অভিভাবকত্বাধীন ইসরায়েলের নিরাপত্তার স্বার্থে আমেরিকার এই সেনাবাহিনীর কমান্ডারদের কিনে নিয়েছে।

এই সেনাবাহিনীকে মুবারক ইসলামপন্থী আন্দোলন দমনের উপায় হিসাবে ব্যবহার করেছে।

এই সেনাবাহিনীর আদালত মুসলমানদের বিরুদ্ধে ১০০ এর বেশী মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে।

উপরন্তু এরা আমেরিকার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণকারী।

উপরন্তু এরা আমেরিকাকে সেনা ঘাঁটি, গুদামঘর, পেট্রোল সরবরাহ এবং তাদের প্রশিক্ষণে সাহায্য করে।

    এমনকি এরা আমেরিকা ও তার মিত্রদেরকে অপারেশন ব্রাইট স্টার – যা কিনা সমুদ্র থেকে কায়রো আক্রমণ- করার প্রশিক্ষণ দেয় যাতে করে মিশরে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা হলে তা উৎখাত করতে তা সাহায্য করতে পারে।

     মিশরীয় সেনাবাহিনীর বিমানবন্দর থেকে আফগানিস্তান এবং ইরাক অভিমুখে ক্রুসেডারদের যুদ্ধবিমানগুলো হামলা করতে রওয়ানা হয়।

    আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ক্রুসেডে মিশরীয় সেনাবাহিনীর কিছু দল অংশ নিয়েছিল।

    এরাই গাযা অবরোধ করে আছে এবং চোরাচালানের সুরঙ্গগুলো ধ্বংস করে  দেয়।

    আর পর্দার আড়াল থেকে স্থানীয়-আঞ্চলিক রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে এই মিশরীয় সেনাবাহিনীকেই আমেরিকা ব্যবহার করে। ঠিক যেমনভাবে তারা পাকিস্তান আর তুরস্কের সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে। আর একান্ত বাধ্য হলেই এই সেনাবাহিনী পর্দার অন্তরাল থেকে বেরিয়ে এসে স্থানীয় রাজনীতিতে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করা শুরু করে যেমনটা সাম্প্রতিক মুরসি সরকার উচ্ছেদের ক্ষেত্রে হয়েছে।

আর মুবারকের অনুগতরাই মুহাম্মাদ মুরসির বিরুদ্ধে এই অভিযানের অর্থায়ন করেছে যার নেতৃত্বে ছিল আমিরাতের আহমেদ শাফিক। তাদের মধ্যে রয়েছে সব আমলের মুখপাত্র, অত্যাচারীদের কণ্ঠস্বর, অত্যাচারিদের কলম এবং শিং আব্দুল মাজিদ মাহমুদ। খুব দ্রুতই সে তার নোংরা ষড়যন্ত্র পুনরায় বাস্তবায়নে তৎপর হয়ে উঠেছে যা হোসনি মুবারকের সময় থেকেই সে করে আসছিল। তাকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা পরিচালনায় উন্নীত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রশিক্ষণ দিয়ে মুবারকের রাষ্ট্র নিরাপদ রাখার কাজে তাকে ব্যবহার করা হয়। মুবারক তার উপর সন্তুষ্ট ছিল এবং পাবলিক প্রসিকিউটর হওয়া পর্যন্ত সে তাকে পদোন্নতি দিতে থাকে।

 তাদের মধ্যে আরও রয়েছে আল-আযহারের শাইখ যাকে আমরা মুবারকের দুর্নীতিগ্রস্ত আমল থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছিলাম। আর তাই সে আমেরিকাপন্থীদের সামরিক অভ্যুথানকে সমর্থন জানাতে প্রস্তুত ছিল ঠিক যেমনভাবে সে মুবারককে সমর্থন করে এবং তার বিরুদ্ধে আন্দোলনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ফতোয়া দিতো।

(ইসলামপন্থীদের  আপোস)

দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইসলামপন্থী কাজের সাথে জড়িত একদল লোক এদের সাথে সহমত পোষণ করে। এরপর তারা একের পর এক আপোস করতেই থাকে।

    প্রথমে তারা গণতান্ত্রিক শাসনকে কুফর এবং শিরক বলে স্বীকার করেও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে সম্মত হয়।

    তারপর তারা আরও একধাপ নেমে এমন রাজনৈতিক দল গঠন করে যে দলের মূলনীতি ধর্মের ভিত্তিতে দল গঠনকে অনুমোদন দেয় না, তাই তারা তাদের দলের বৈশিষ্ট্যাবলী থেকে “ধর্মীয়” শব্দটিকে সরিয়ে দেয়।

    এরপর তৃতীয়বারের মতো আপোস করে তারা ইসরায়েলের সাথে চুক্তিকে সমর্থন জানায় এবং সেই চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তা না ভাঙ্গার অঙ্গীকার করে।

    চতুর্থবারের মতো আপোস  করে তারা ধর্মনেরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ এবং গণতন্ত্রের ভিত্তিতে রচিত ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে স্বীকৃতি দান করে।

    এরপর পঞ্চম বার আমেরিকাপন্থী সেনাবাহিনী, ধর্মনেরপেক্ষ-বস্তুবাদী লোকদের দল, ক্রুসেডার এবং মুবারকের অনুগতদের সাথে মিলিতভাবে তারা সেই গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিরুদ্ধেই অভ্যুথানে আংশ নেয় যেই গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে তারা নিজেদের প্রয়োজনের অজুহাত দেখিয়ে জিয়েয করে নিয়েছিল।

    এবং সবশেষে তারা আমেরিকাপন্থী সেনাবাহিনীর স্বার্থে তাদের গর্বের সেই সংবিধানকে গলা চেপে ধরতে সাহায্য করেছে।

এই ইসলামপন্থীদের উদাহরণ ঐ ব্যক্তির মতো, যে কি না তার মৃত্যুপথযাত্রি সন্তানকে বাঁচাতে ঔষধ কিনার জন্য কিংবা তার জীর্ণশীর্ণ ভাঙ্গা ঘরটিকে মেরামত করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে মদের ব্যবসা করতে চায়। পরে আমরা আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম যে, সেই ব্যক্তি নিজের সন্তানকে হত্যার কাজেই অংশগ্রহণ করছে এবং নিজের ঘর নিজেই ধবংস করছে। সবশেষে সে তার মদের ব্যবসা ঠিকই করে যাচ্ছে! যেন তার দাবিগুলো প্রয়োজনের খাতিরে নয় বরং আজুহাত দেখিয়ে মন্দ কাজটি চালিয়ে যাওয়ার স্বার্থেই ছিল!

ইখওয়ানের মুরসি সরকার মূলত আক্রমণের শিকার হয়নি, কারণ এটি হলো ইখওয়ানের সরকার, বরং আক্রমণ হয়েছে যে কোন ধরনের ইসলামী চিন্তাধারার উপর। ইখওয়ান সরকার আমেরিকা ও ধর্মনিরপেক্ষবাদীদের সন্তুষ্ট করার জন্য সব রকম চেষ্টাই করেছে। কিন্তু তারা আমেরিকা ও ধর্মনিরপেক্ষবাদীদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি, তাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতেও ব্যর্থ হয়েছে। কারণ আমেরিকা ও সেকুলাররা (ধর্মনিরপেক্ষ-বস্তুবাদী লোকেরা) ভুলে যায় নি ইখওয়ানের  সেই শ্লোগান, “জিহাদ আমার পথ; আল্লাহর রাস্তায় শাহাদাতই আমার চির আকাঙ্ক্ষা”। ইখওয়ান তাদের সেই শ্লোগান পরিত্যাগ করে নতুন শ্লোগান দিয়েছে, “গণতন্ত্র হচ্ছে সমাধান”, কিন্তু ক্রুসেডার ও ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা তাদের আগের সেই শ্লোগানটি ভুলতে পারে নি।

যা ঘটেছে তা হচ্ছে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যে কখনোই ইসলামী শরীয়তের প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় তার অকাট্য প্রমাণ। আর ঘটে যাওয়া এই ব্যর্থতার মতো বিশাল এবং কদর্য ব্যর্থতা আগে কখনো ঘটেনি। এটি আলজেরিয়া এবং ফিলিস্তিনের চেয়েও বৃহৎ এবং নিকৃষ্ট ব্যর্থতা। এবার ইখওয়ানের মানুষেরা সরকারের প্রধান পর্যন্ত যেতে পেরছিল, অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিই তাদের ছিল এবং তারাই শুরা কাউন্সিল গঠন করেছিল। কিন্তু এত কিছুর পরেও তাদেরকে জোরপূর্বক ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়। তাই মুরসি সরকারের সমর্থনের প্রতি আমি পরামর্শ দিতে চাইঃ

(মুরসি সরকারের সমর্থকদের প্রতি উপদেশ)

শুরুতেই বুঝতে হবে যে, নির্বাচন এবং গণতন্ত্রের কোন বৈধতা বা ন্যায্যতা নেই। ন্যায্যতা আছে শরীয়তের মাঝে। শরীয়তের বাইরে সবকিছুই বেআইনি। আর যারা শরীয়তের বিধি-নিষেধের প্রতি অনুগত তারাই ন্যায্যতার অধিকার দাবিদার। আপনাদের উচিত শরীয়তের ন্যায্যতা মেনে চলা ও তা প্রতিরক্ষা করা এবং অন্যান্য সকল সংবিধান এবং আইনের উপর শরীয়তকে প্রাধান্য দেয়া। বর্তমান মিশর এমন একটি জাতীয়তাবাদী ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র যা জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সাইকেস-পাইকট এবং লর্ড কিচেনারের বেধে দেওয়া সীমান্তে বিশ্বাস করে এবং শরীয়ত, ইসলামী ভ্রাতৃত্ব এবং মুসলিম ভুমির ঐক্যকে অস্বীকার করে। এমন একটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হিসাবে মুরসিকে নির্বাচিত করার মাঝে কোন ন্যায্যতা বা বৈধতা নেই। আপনার সংবিধানিক, সংসদীয় কিংবা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনসহ সকল ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জয়লাভ করা সত্ত্বেও তারা আপনাদের গ্রহণ না করে আপনাদের উৎখাত করেছে। আপনারা শরীয়তের বাস্তবায়ন ত্যাগ করে নাগরিকত্ব, জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র, মানবরচিত আইন গ্রহণ করেছেন এবং মানবসৃষ্ট বিচার ব্যবস্থাকে মহিমান্বিত করেছেন। কিন্তু এতদসত্ত্বেও তারা আপনাদের গ্রহণ করেনি। আপনারা সকল আন্তর্জাতিক চুক্তিকে শ্রদ্ধা দেখাতে সম্মত হয়েছেন, ইসরায়েল এবং আমেরিকার সাথে চুক্তিগুলো মেনে নিয়েছেন, কিন্তু তবুও তারা আপনাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। আপনারা ভুলে গিয়েছিলেন যে, গণতন্ত্র হলো পশ্চিমাদের এক বিশেষ সুবিধা বা সেবা প্রধানকারী ব্যবস্থা এবং এতে ইসলামপন্থীদের কোনো প্রবেশাধিকার নেই। আপনি যতই ছাড়া দিন না কেন যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি আদর্শ, কর্মপন্থা, রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে পশ্চিমাদের দাসে পরিণত হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তারা আপনাদের গণতন্ত্রের ফল ভোগ করতে দিবে না । আপনারা এই বিরোধের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে গেছেনঃ

    প্রথমত, আদর্শিক দিক থেকে এই চলমান দ্বন্দ্বের প্রকৃতঃ একটি হচ্ছে কুফর এবং ঈমানের মধ্যে যুদ্ধ। এ হচ্ছে, সর্বশক্তিমান আল্লাহর শসনের প্রতি অনুগত্য এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য সকল ইলাহের প্রতি অনুগত্যের মাঝে যুদ্ধ। এটি জাতীয়তাবাদী কিছু রাজনৈতিক দলের মধ্যকার বিরোধ নয়।

     দ্বিতীয়ত, দ্বন্দ্বের প্রকৃত যে রূপ বুঝতে আপনারা ব্যর্থ হয়েছেনঃ এটি প্রতিযোগিতারত কিছু জাতীয় রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিরোধ নয়, বরং এটি হচ্ছে এমন এক যুদ্ধ যার একপক্ষে রয়েছে ইসলাম এবং অপর পক্ষে রয়েছে ক্রুসেডার খ্রীষ্টানরা এবং যায়নিস্টবাদী ইহুদীরা।

যদি বিপ্লবের শুরুতে আপনারা ইসলামের পক্ষে সকল কর্মীকে একত্রে করে শরীয়ত বাস্তবায়নের দাবি জানাতেন, ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতেন, দুর্নীতিগ্রস্ত বিচার বিভাগ, আমেরিকাপন্থী সেনাবাহিনী এবং মুবারকের অনুগতদের নির্মূল করার দাবি জানাতেন এবং এই দাবিগুলোর প্রেক্ষিতে জনগণকে একত্রিত করে দাবি আদায় হবার পূর্ব পর্যন্ত বিপ্লব চালিয়ে যাতেন তাহলে আপনারা কি হারাতেন? কিছুই হারাতেন না। বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতেন এবং ইসলামী আকীদার উপর অবিচল থাকতেন।

তারা আপনাদের কি করতে পারতো?

১. তারা আপনাদের রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে বিরত রাখতো? সেটা তো তারা এখন করেছে।

২. আমেরিকা আপনাদের উপর রেগে যেত? সেটাও তো এখন হয়ে গেছে।

৩. তারা কি আপনাদের গ্রেফতার করতো? এখন তো তারা আপনাদের গ্রেফতার করছেই।

৪. তারা কি আপনাদের রক্তপাত ঘটাতো? এখন তো তারা আপনাদের রক্তপাত ঘটানোর পাশাপাশি আপনাদের সদর দফতর এবং মসজিগুলোকেও ধ্বংস করে দিচ্ছে।

৫. আপনাদের কি অন্যান্য দেশের সমর্থন হারাতেন? এখন তো সবগুলো দেশেই আপনাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

৬. সেনাবাহিনী কি আপনাদের সাথে বৈরতা দেখাতো? তারা তো এখন আপনাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জোরপূর্বক আপনাদের উৎখাত করেছে।

(পরিশেষে উপলদ্ধি ও আহবান)

আমি কারও দুর্দশা দেখে আনন্দে উল্লাসিত হয়ে এই কথাগুলো বলছি না। আল্লাহ মাফ করুন। আমি শুধু রোগের দাওয়াই বা ঔষধ দেয়ার জন্য রোগের বর্ণনা দিচ্ছি।

আন্তরিকভাবে ইসলামের বিজয় চান এমন প্রত্যেক সম্মানিত মুসলমানকে আমি তাওহীদের বানীকে ঘিরে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানাচ্ছি। আমি প্রত্যেক ইখওয়ানিকে (ইখওয়ানিকে দলের অনুসারীদেরকে) এমন সকল উপায় এবং পন্থা বর্জন করার আহবান জানাচ্ছি যা শরীয়ত পরিপন্থী। আমি সকলকে একটি আম (সাধারণ ও সর্বজনীন) দাওয়াহ কার্যক্রমের অংশ হতে আহবান জানাচ্ছি যা শরীয়তকে শাসিতের বদলে শাসকের, অজ্ঞাবহের পরিবর্তে আদেশদাতার এবং আনুসারীর বদলে নেতার স্থান দিবে। আমি সমগ্র উম্মাহকে ইসরাইলের সাথে সকল প্রকারের আত্মসমর্পণ ও শান্তিচুক্তি ছিন্ন করার এবং আমেরিকার সাথে সকল নিরাপত্তা চুক্তি ছিন্ন করার আহবান জানাচ্ছি। আমি সকল কোরআনের সৈনিকদের কোরআনের জন্য যুদ্ধ লড়াই আহবান জানাচ্ছি যেটার প্রতি শহীদ (ইনশাআল্লাহ) ইমাম হাসান (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) আহবান জানিয়েছিলেন।

……………………………………………………………………………………………

(১) সীরাত গ্রন্থে উমর(রাঃ) এর একটি ঘটনা পাওয়া যায়। কয়েকজন উপস্থিত ব্যক্তির সামনে তিনি একবার হেসে উঠেন। তখন বাকিরা উনার হাসার কারণ জুজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ

“আমার মনে পড়েছে, জাহিলিয়াতের সময় আমার খেজুর দিয়ে তৈরী মূর্তি ছিল। একদিন আমার এত ক্ষুধা লাগে যে আমি সেটা খেয়ে ফেলি।’’

(Visited 237 times, 1 visits today)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 + 12 =