পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
কা‘ব বিন মালেক রাযি. এর
ঘটনা থেকে শিক্ষা
শায়খ আবু আব্দুল্লাহ উসামা রহ.
পরিবেশনায়
অর্পণ
যারা যুগের জাহিলিয়াতের কাছে নতিস্বীকার না করে আল্লাহ, আল্লাহর রাসূল ও আল্লাহর পথে জিহাদকে পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, স্বামী/স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন, উপার্জিত ধন-সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও ঘর-বাড়ীর চেয়ে অধিক ভলোবেসে সাহাবায়ে কেরামের মত মুসলিম হবার পথে এগিয়ে চলেছেন, তাঁদের বরকতময় হাতে।
সূচীপত্র
হযরত কা‘ব ইবনে মালিক রাযি. বর্ণিত হাদীসের শিক্ষা.. 7
উম্মাহর বর্তমান বেদনাময় চিত্র. 7
সাহাবায়ে কেরামগণের আদর্শই মুক্তির পথ. 8
হযরত কা‘ব বিন মালিক রাযি. এর শিক্ষণীয় ঘটনা. 8
আসুন! নিজের নফসের চিকিৎসা করি. 8
সৎ লোকদেরকে জিহাদ থেকে ফিরিয়ে রাখার জন্য নফসের চক্রান্ত. 9
বিলাসিতা ও নফসের ধোঁকা থেকে নির্ভয়তা. 10
বিষয়টি অনুধাবন করা প্রয়োজন. 10
এসব নির্বোধদের জন্য কি আমরা জান্নাত ছেড়ে দিব 12
ইলমের সাথে সাথে আমলও শিক্ষা দিন. 12
ইলমের ব্যাপারে সালাফদের রীতি. 13
জিহাদের পথের পবিত্র ধূলিকণা. 14
মুনাফিকরাই পিছনে রয়ে গিয়ে ছিল. 15
জিহাদ পরিত্যাগকারীর সমালোচনা করা বৈধ 16
স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গরম সহ্য করেছেন আর আমি …..?. 17
তোমাকে কোন জিনিস পিছনে রেখেছে?. 18
নিজের ভুল স্বীকার প্রভুর ক্রোধ থেকে বাঁচার উপায় 20
সত্যবাদী উলামাদের কর্মরীতি. 20
নফস তো মিথ্যার উপর উৎসাহিত করে থাকে.. 21
সত্য পথের একটি বড় বাঁধা সামাজিক চাপ. 22
হযরত কা‘ব রাযি. এর অবশিষ্ট দুই সাথীর আচরণ 22
শুধুমাত্র একটি যুদ্ধে না যাওয়ার কারণে সম্পর্ক ছিন্ন. 23
জনবল বৃদ্ধি নয়, ফরজ আদায়ই কাম্য. 23
ঈমান ও জিহাদের গভীর সম্পর্ক. 24
জিহাদ পরিত্যাগের পর ভালবাসার দাবীও সন্দেহপূর্ণ 25
স্ত্রীদের থেকে আলাদা হওয়ার নির্দেশ এবং হযরত কা‘ব রাযি. এর অনুপম আনুগত্য.. 25
বার্ধক্য সত্ত্বেও এত কঠিন পাকড়াও! 26
জিহাদ থেকে পশ্চাতে থেকে যাওয়ার কারণে অঝোর ধারায় কান্না. 27
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মজলিসে উপস্থিতি. 28
জিহাদের পথে অতিবাহিত একটি মুহূর্ত. 29
জিহাদের আয়াত সমূহ নিয়ে একটু ভাবুন. 30
কোথায় সা’দ ও মুসান্না রাযি. এর উত্তরসূরিরা?. 31
মুমিন ও মুনাফিকদের অবস্থানের বৈপরীত্য! 32
আমি জিহাদ থেকে পশ্চাতে বসে থাকা এবং মিথ্যা বলা, দুই গুনাহ একত্র করতে পারবো না. 33
নিজে বের হচ্ছিনা অন্যকেও বাধা দিচ্ছি.. 34
ঈমান, জিহাদ এবং সততা ঈমানদারদের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য. 35
মানুষের দেখাদেখি নিজের আখেরাত নষ্ট করবেন না. 36
জিহাদের মাসআলা মুজাহিদ ওলামাগণকে জিজ্ঞাসা করা উচিৎ 38
আগে জিহাদের ময়দানে আসুন পরে ফতওয়া দিন. 39
ভুল ফতোয়া দিয়ে কে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে.. 40
জিহাদে গড়িমসি করার উপর আল্লাহর ভর্ৎসনা. 40
গড়িমসির কারণ দুনিয়ার ভালোবাসা ও মৃত্যুকে অপছন্দ করা. 41
সাইয়্যেদুনা জাফর রাযি. এর কবিতা.. 43
সাইয়্যেদুনা আসেম বিন ছাবিত রাযি. এর কবিতা.. 44
নিজেদের পবিত্র ভূখণ্ডগুলোর আযাদীর জন্য জেগে উঠুন! 45
হযরত কা‘ব ইবনে মালিক রাযি. বর্ণিত হাদীসের শিক্ষা
সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলারই জন্য। আমরা তাঁরই প্রশংসা করি কেবল তাঁরই কাছে সাহায্য চাই এবং তাঁরই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। আমরা নিজেদের নফসের যাবতীয় অনিষ্ট এবং নিজেদের আমলসমূহের সকল খারাবী থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করি। যাকে আল্লাহ হেদায়েত দেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারেনা এবং যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন পথ প্রদর্শনকারী থাকে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা এবং রাসূল।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلا تَمُوتُنَّ إِلا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ
‘হে মুমিন গণ! তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় কর এবং তোমরা আত্মসমর্পণ কারী না হয়ে কোন অবস্থায় মৃত্যু বরণ কর না’ [1]
আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে – মুসলিম উম্মাহর বর্তমান দুরবস্থা। সকলেই জানেন যে, কাফেরদের আগ্রাসন, তাগুতের কর্তৃত্ব এবং পবিত্র ভূমিগুলোর উপর তাদের দখলদারিত্বের ফলে এ উম্মাহ আজ বিপদগ্রস্ত। ফিলিস্তিনের উপর নাসারা তারপর ইহুদীদের দখলদারিত্ব আট দশকের বেশী সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। এমনিভাবে আমেরিকার নেতৃত্বে পবিত্র ভূমি মক্কা মদিনার দেশে ক্রুসেডারদের দখলদারিত্বের দশ বছরের (শায়েখ যখন আলোচনা করেছিলেন তখন কার কথা) অধিককাল অতিবাহিত হয়ে গেছে! لا حولَ ولا قوَّةَ إلَّا باللهِ
এতসব সীমাহীন মুসীবত ও বিপদ-আপদ সত্ত্বেও মানুষ এখনো পর্যন্ত উদাসীন হয়ে আছে এবং দ্বীনের সাহায্যের জন্য কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সুতরাং আমরা আল্লাহরই কাছে ফরিয়াদ করি আর শক্তি ও সামর্থ্যের মালিক তো শুধু আল্লাহ তাআলাই।
অপরদিকে অপব্যাখ্যাকারীর সংখ্যাও অনেক বেড়ে গেছে। যারা অসংখ্য মনগড়া দলীল দিয়ে জিহাদ ছেড়ে বসে থাকা বৈধ করে নিয়েছে। ফলস্বরূপ, সত্য দ্বীনের কটাক্ষ করা হচ্ছে এবং দয়াময় রহমানের শরীয়াহকে জীবনাচার থেকে দূর করে দেয়া হয়েছে। বান্দাদের উপর তাদের রবের জীবন-বিধান কোথাও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। মানুষের জীবনাচার শরীয়াহর বিধান থেকে মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এ লাঞ্ছনা ও অপমানকে দূর করার ক্ষেত্রে নবী কারীম সা-এর. মানহাজ ও কর্মপদ্ধতি থেকে হাজার মাইল দূরে পড়ে রয়েছে।
সাহাবায়ে কেরামগণের আদর্শই মুক্তির পথ
সুতরাং দ্বীন বিজয়ের সঠিক কর্মপদ্ধতি বুঝার সর্বোত্তম উপায় হল, আমরা আমাদের আসলাফদের বরকতময় যুগের স্মৃতিগুলো আলোচনা করবো এবং দেখবো যে, সাহাবায়ে কেরাম রাযি. এর জীবনাচার কেমন ছিল? তাহলে ইনশাআল্লাহ সত্য মিথ্যা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
হযরত কা‘ব বিন মালিক রাযি. এর শিক্ষণীয় ঘটনা
আমি সাহাবায়ে কেরাম রাযি. এর পূণ্যময় সীরাতের মাঝে গভীর ভাবে লক্ষ্য করেছি। তখন এ বিষয়ে দৃষ্টান্ত হিসাবে হযরত কা‘ব বিন মালিক রাযি. এর হাদিসকে অধিক সুস্পষ্ট পেয়েছি। এ হাদিসটি সহীহাইন (বুখারী ও মুসলিম) ছাড়াও হাদিসের অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। এ সুদীর্ঘ হাদিসে এই মহান সাহাবী রাযি. নিজের মানবীয় স্বভাব ও দুর্বলতার কথা অকপটে স্বীকার করেছেন। মিথ্যা কসমকারীদের মত কোন ধরণের অনর্থক ও বানোয়াট কাহিনীর আশ্রয় নেন নি। সুতরাং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার ক্রোধ সেসব বানোয়াট ও মিথ্যা প্রলাপকারীর উপরই পতিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাদের ব্যাপারে এমন কঠোর শব্দ ব্যবহার করেছেন যা অন্য কারো ব্যাপারে ব্যবহার করেন নি।
আসুন আমরা সত্য ও স্পষ্ট ভাষণের মূর্ত প্রতীক এ শব্দগুলো একটু দেখি। তাহলে আমরা সেসব লোকদের স্বভাব প্রকৃতি বুঝতে পারব যারা জিহাদ ছেড়ে বসে আছে। সাথে সাথে আত্মসংশোধনের চেষ্টা করতে পারব এবং মুজাহিদীন, আলেম-উলামা ও নিজেদেরকে উপদেশ দিতে পারব। আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করি যে, তিনি যেন আমাদেরকে এর উপর সর্বোত্তম আমলের তাওফীক দান করেন!
কা‘ব বিন মালিক রাযি. এ হাদীস তাবুক যুদ্ধের প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন। তিনি এ যুদ্ধে ‘যাচ্ছি করে’ আর যেতে পারেননি। অথচ তিনি পূর্ববর্তী অগ্রগামী আনসারদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং সেই মহান লোকদের একজন ছিলেন যারা ‘বাইয়াতে আকাবা’ এর দিন রাসূলুল্লাহ সা-এর. বরকতময় হাতে বাইআত করার সৌভাগ্য লাভ করে ছিলেন। এটা সেই মহান বাইআত যার উপর ভিত্তি করে আল্লাহর অনুগ্রহে মদীনা মুনাওয়ারায় ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। আমরাও তো সেই বরকতময় ফলসমূহের একটি ফল।
হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সকল যুদ্ধ করেছেন তার মধ্যে তাবুকের যুদ্ধেই আমি তাঁর পিছনে রয়ে গিয়ে ছিলাম (অংশ গ্রহণ করতে পারিনি)। তবে বদর যুদ্ধেও শরীক হতে পারিনি। কিন্তু বদর যুদ্ধে যারা শরীক হয়নি তাঁদেরকে তিনি তিরস্কার করেন নি। অর্থাৎ, তিনি বীর বাহাদুর ছিলেন। বদর ব্যতীত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে সকল যুদ্ধে শরীক ছিলেন, এবং তিনি তাদের একজন ছিলেন, যারা রণাঙ্গনে বীরত্বের সাথে লড়াই করত এবং দ্বীনের জন্য স্বীয় কুরবানি পেশ করত।
সৎ লোকদেরকে জিহাদ থেকে ফিরিয়ে রাখার জন্য নফসের চক্রান্ত
তবে মানুষ, মানুষই। কখনো শয়তান পথভ্রষ্ট করে আবার কোন কোন ক্ষেত্রে সে নিজে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তার নফস তাকে প্রতারণায় ফেলে দেয়। সাইয়্যেদুনা কা‘ব বিন মালিক রাযি. এই বিষয়টিকে স্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন সময় যুদ্ধের ডাক দিলেন যখন গরমের মৌসুম যৌবনকাল অতিক্রম করছিল। এবং লোকেরা অধিকাংশ সময় খেজুর বৃক্ষের ছায়ায় সময় কাটাত। খেজুর পরিপক্ব হয়ে পাকতে শুরু করেছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমি এই ঠাণ্ডা ছায়া এবং ফলের প্রতি বেশ আকৃষ্ট ছিলাম।’এই হল মানবীয় আত্মার সেই ভয়ানক প্রতারণা যার উপস্থিতি আমরা ঐ মহান ব্যক্তিদের মাঝেও দেখতে পাই (রাযিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন)। সুতরাং যদি এ মহান ব্যক্তিদের মাঝে (জিহাদ থেকে) পিছিয়ে থাকার ব্যাপারে নফসানি প্রতারণা কাজ করতে পারে যাদের ঈমানের সাক্ষ্য স্বয়ং আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন, তাহলে আজকে কিছু ভালো মানুষ জিহাদ না করলে কেনই বা আশ্চর্য লাগবে?
বুখারী ও মুসলিমের এ হাদিস সুস্পষ্টভাবে আমাদেরকে বলছে যে, ঐ মহান ব্যক্তিরাও (জিহাদ থেকে) পিছনে রয়ে গিয়েছিলেন, যারা আমাদের চেয়ে এবং আজকের ঐ ভালো লোকদের তুলনায় অনেক অনেক বেশী মর্যাদাবান ছিলেন।
হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, ‘লোকেরা (তাবুক যুদ্ধের) প্রস্তুতি গ্রহণ করতে লাগল। আমিও আমার প্রস্তুতির চিন্তা করলাম কিন্তু প্রথম দিন অতিবাহিত হয়ে গেল আমি কোন প্রস্তুতি নিলাম না। আমি মনে মনে ভাবলাম যে, আগামীকাল প্রস্তুতি নিয়ে নিব, কিন্তু পরের দিনও কোন প্রস্তুতি নিতে পারলাম না। অতঃপর আমি ভাবলাম যে, (কোন ব্যাপার না!) আমি এখনো সহজেই তাদের সাথে মিলিত হওয়ার সক্ষমতা রাখি।’
লক্ষ্য করুন! নফস কিভাবে মানুষকে প্রতারণায় ফেলে দেয়। যেহেতু তিনি জিহাদে অভ্যস্ত ছিলেন এজন্য নফস তাকে একথা বুঝিয়েছে যে, জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণ তো আপনার জন্য সাধারণ ব্যাপার, আপনি এখনো সহজেই বের হওয়ার সক্ষমতা রাখেন।
তিনি বলেন, ‘আমি এই (দোদুল্যমান) অবস্থায়ই ছিলাম, অপরদিকে বাহিনী রওয়ানা হয়ে গেছে। এবং মর্যাদা ও মহত্মের বাহক সে কাফেলা গন্তব্য অভিমুখে রওয়ানা হয়ে গেছে। যার সেনা প্রধান ছিলেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁর সফর সঙ্গী ছিলেন হযরত আবু বকর রাযি., হযরত উমর রাযি. এবং অন্যান্য মহান সাহাবীগণ।’ অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতে, এ সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ত্রিশ হাজারের কাছাকাছি ছিল।
এক্ষেত্রে সকল মুসলমানকে নফসের ধোঁকার ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে। কারণ দ্বীনের সাহায্য ছেড়ে কত লোকই না ঘরে বসে আছে। যাদেরকে নফস এই ধোঁকায় ফেলে রেখেছে যে, সে ইচ্ছা করলেই জিহাদে বের হতে পারবে। অথবা তার পিতা, তার অভিভাবক বা তার মুরব্বি চাইলেই সে বের হতে পারবে। কিন্তু এই মুহূর্তে বের না হওয়াই ইসলামের জন্য মাসলাহাত ও কল্যাণ।
অথচ এটা বাস্তব কথা নয়। শুধু তাদের ধারণা মাত্র। আর নিঃসন্দেহে সৎ ও পুণ্য কাজের ক্ষমতা এবং মন্দ কাজ থেকে বাঁচার তাওফিক শুধু আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই আসে।
বিলাসিতা ও নফসের ধোঁকা থেকে নির্ভয়তা
সুতরাং এ মহান ব্যক্তিকে তাঁর নফস ধোঁকায় ফেলে দিয়েছে। অথচ তিনি বহুবার নিজেকে যুদ্ধ এবং রণাঙ্গনে পরখ করে দেখেছেন। আর আনসারগণ তো এমনিতেও যুদ্ধবাজ লোক ছিলেন; যুদ্ধ-বিগ্রহের বৈশিষ্ট্য তাঁরা বংশ পরম্পরায় লাভ করেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁর নফস তাঁকে ধোঁকায় ফেলে দিল। অতএব, নিজেরাই চিন্তা করুন, যখন তাঁদের (সাহাবাদের) ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেছে, তাহলে সেসব লোকদের পরিণতি কি হতে পারে যারা কখনো আল্লাহর পথে লড়াইয়ের জন্য বের হয়নি? এমন লোকদের নফসের ধোঁকায় পড়ে থাকা কি আরও সহজ ব্যাপার নয়? তাদের (সাহাবীদের) জীবন তো এমনিতেও দুঃখ-কষ্টে ভরা ছিল! না বিদ্যুৎ ছিল, না ছিল অন্য কোন ভোগ সামগ্রী। শুধুমাত্র খেজুর পরিপক্ব হওয়ার উপক্রম ছিল। এ বিষয়টিই তাকে অলস বানিয়েছিল। জিহাদ থেকে বিরত রেখেছিল।
তাহলে সেসব লোক কিভাবে নফসের ফাঁদে পা দিয়ে নিশ্চিন্তে বসে থাকতে পারে যাদের কাছে ভোগ-বিলাসের সামগ্রী ভরপুর। এমনকি তারা বৈধতার সীমা পেরিয়ে বিলাসিতার সীমায় অনুপ্রবেশ করে ফেলেছে! একটু নিজের মনকে জিজ্ঞাসা করুন! কিভাবে সম্ভব যে, এমন লোক নফসের ধোঁকা থেকে বেঁচে যাবে। তবে আল্লাহ যাকে রক্ষা করতে চান তার কথা ভিন্ন।
মোট কথা, অন্য সকল সাহাবীগণ বের হয়ে পড়লেন। এবং হযরত কা‘ব রাযি. থেকে এই ত্রুটি হয়ে গেল। তিনি দ্বীনের সাহায্য থেকে পিছনে রয়ে গেলেন।
প্রচণ্ড গরমের মৌসুম ছিল, অন্য এক বর্ণনায় হযরত উমর রাযি. এই গরমের প্রচণ্ডতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন,
‘আমাদের কেউ যখন তার বাহনের নিকট যেত তখন তার কাছে মনে হত যে, বাতাসের প্রবাহ বন্ধ হওয়া এবং গরমের তীব্রতার কারণে তার গর্দান নিচের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।’
এমন মুহূর্তে অভ্যাস অনুযায়ী দুনিয়াদাররা ঐসব কথাই বলেছে যা আজও তারা বলে থাকে। কুরআনে হাকিম তাদের একথা বর্ণনা করেছে,
وَقَالُوا لا تَنْفِرُوا فِي الْحَرِّ
“এবং তারা বলতে লাগল যে, (এমন প্রচণ্ড) গরমে অভিযানে যেও না।“
কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাদের জবাবে এর চেয়ে বড় বাস্তবতা উল্লেখ করেছেন,
قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ أَشَدُّ حَرًّا لَوْ كَانُوا يَفْقَهُونَ
“বলে দিন, জাহান্নামের আগুন এর চেয়ে অধিক গরম! হায়! তারা যদি একথা বুঝত।“ [2]
এ দুনিয়াদাররা তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস শুনত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খুতবাতে উপস্থিত হত এবং ভাল করেই জানত যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি বলছেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সাথে তাদের ভাষায়ই কথা বলতেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তারপরও বলছেন যে, হায় যদি তারা একথার মর্ম বুঝত! কেন? কেননা, প্রকৃত বুঝ অন্তরের অনুধাবন এবং ভয়কে বলা হয়। এই প্রকৃত বুঝ থেকে তারা বঞ্চিত ছিল। বাহ্যিকভাবে তো একথাগুলোর পূর্ণজ্ঞান তাদের ছিল। কিন্তু যদি তারা প্রকৃত বুঝ রাখত, তাহলে একথা বিশ্বাস করত যে, জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার এই গরম এবং কষ্ট থেকে প্রচণ্ড তীব্র।
আজ আমাদের ভাইদেরকে কি বলা হয়? তাদের একথা বলা হয় যে, যখন তোমরা জিহাদের ময়দান থেকে ফিরে আসবে তখন ’বেত্রাঘাত’ তোমাদের জন্য অপেক্ষা করবে। এবং তাগুতী কয়েদ খানার চাবুকগুলো অনেক শক্ত হয়ে থাকে! তাদের কাছে বলা হয় যে, বিভিন্ন গোয়েন্দা এজেন্সি তোমাদের পিছনে লেগে থাকবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমরাও তাদেরকে এ কথাই বলবো যে,
قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ أَشَدُّ حَرًّا لَوْ كَانُوا يَفْقَهُونَ
অর্থাৎ, “জাহান্নামের আগুন এর চেয়ে প্রচণ্ড তীব্র গরম! হায় যদি তারা এ কথার বুঝ রাখত।“ [3]
আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করি যে, তিনি আমাদের সবাইকে সহীহ ইলম এবং বুঝ শক্তি দান করুন!
এসব নির্বোধদের জন্য কি আমরা জান্নাত ছেড়ে দিব
এ জীবন তো কয়েক দিনের খেলা মাত্র। সুতরাং আমরা কি এসব লোকদের কথার কারণে আমাদের পালনকর্তার জান্নাত ছেড়ে দিব? আল্লাহর কসম! এটা হতে পারেনা! যার এই বিশ্বাস আছে যে, মৃত্যুর সময় নির্ধারিত, সেটার আগপিছ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই এবং যার এই নিশ্চিত বিশ্বাস আছে যে, রিযিকের পরিমাণ নির্ধারিত। যার মাঝে কমবেশি করণের কোন সুযোগ নেই। সে এসব কথা কখনো মনে নিবেনা। এক হাদিসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যেদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. কে বললেন,
عن عبد الله بن عباس رضي الله عنهما قال: كنت خلف النبي صلى الله عليه وسلم فقال: (يا غُلامُ إنِّي أعلِّمُكَ كلِماتٍ، احفَظِ اللَّهَ يحفَظكَ، احفَظِ اللَّهَ تَجِدْهُ تجاهَكَ، إذا سأَلتَ فاسألِ اللَّهَ، وإذا استعَنتَ فاستَعِن باللَّهِ، واعلَم أنَّ الأمَّةَ لو اجتَمعت علَى أن ينفَعوكَ بشَيءٍ لم يَنفعوكَ إلَّا بشيءٍ قد كتبَهُ اللَّهُ لَكَ، وإن اجتَمَعوا على أن يضرُّوكَ بشَيءٍ لم يَضرُّوكَ إلَّا بشيءٍ قد كتبَهُ اللَّهُ عليكَ، رُفِعَتِ الأقلامُ وجفَّتِ الصُّحفُ).[رواه الترمذي]
‘হে বৎস! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিক্ষা দিচ্ছি, আল্লাহর বিধানাবলীর হেফাজত করো আল্লাহ তোমাকে হেফাজত করবেন। আল্লাহর হকসমূহের হেফাজত করো, তাঁকে তোমার সামনে পাবে। যখন কিছু চাইবে আল্লাহর কাছেই চাইবে! এবং যখন সাহায্য কামনা করবে আল্লাহ তাআলার কাছেই কামনা করবে! এবং মনে রেখ! যদি সকল মানবজাতি মিলেও তোমার কোন উপকার করতে চায় তাহলে তারা তোমার কোন উপকার করতে পারবেনা। তবে ততটুকুই পারবে যা আল্লাহ তোমার ব্যাপারে লিখে দিয়েছেন। এবং তারা সবাই মিলেও যদি তোমার ক্ষতি করতে চায় তাহলে তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। তবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে দিয়েছেন। কলম তুলে নেওয়া হয়েছে এবং লিখিত কাগজসমূহ শুকিয়ে গেছে।’[4]
ইলমের সাথে সাথে আমলও শিক্ষা দিন
এই হাদিস আজও মুসলিমদের শিক্ষা দেওয়া হয়। আজও এই শব্দেই পাঠ করা হয়। এটা আমাদের উপর আল্লাহ তাআলার বিশেষ অনুগ্রহ। কিন্তু মুসলিম যুব সমাজের দরকার এ হাদিসের শিক্ষার সাথে তার বাস্তব প্রশিক্ষণ। এবং দরকার لا اله الا الله এর দাবীকে প্রকাশ্যে ঘোষণার শিক্ষা দান। তবেই সমস্যার সমাধান চুড়ান্ত হবে। আর যদি ইলম মোতাবেক আমল না কর। তবে এই ইলম তোমার বিপক্ষে যাবে।
ইলমের দুইটি উদ্দেশ্য,
- ইলম অর্জন ।
- তার উপর আমল।
আমলের ফল হল, আল্লাহর ভয়। ইলমের ফল নবীর দেখানো পন্থায় আমল।
অবশেষে বাহিনী রওয়ানা হয়ে গেল। হযরত কা‘ব রাযি. বলেন,
‘আমি এখন তাদের সাথে গিয়ে মিলিত হতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু আমার জন্য তা আর সম্ভব হয়নি।’
ঐ মুহুর্তে তার অন্তর থেকে এই ‘আহ’ শব্দ বের হল,” يا ليتني فعلت” ‘হায় আমি যদি চলেই যেতাম!’ এ মহান ও মুবারক যুদ্ধ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সর্বশেষ যুদ্ধ ছিল। এই প্রেক্ষাপটের কারণে তাতে অংশগ্রহণের এ মহান সুযোগ তাঁর হাত ছাড়া হয়ে গেল। যার কারণে তিনি বলেন, ‘হায় যদি আমি চলেই যেতাম! ’
সুতরাং হে আল্লাহর বান্দাগণ! নিজের সুস্থতা, অবসর এবং যৌবনকে গনিমত মনে করুন। এই তো জান্নাতের ময়দান আপনাদের সামনে উন্মুক্ত পড়ে রয়েছে। এক সহীহ হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إنَّ أبْوابَ الجَنَّةِ تَحْتَ ظِلالِ السُّيُوفِ
‘নিশ্চয়ই জান্নাতের দরজাসমূহ তরবারির ছায়াতলে।’ [5]
যখন হযরত আবু মূসা আশআ‘রী রাযি. উপরে উল্লেখিত হাদিস বর্ণনা করলেন তখন এক ব্যক্তি সামনে অগ্রসর হয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু মূসা! আপনি কি নিজে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে একথা বলতে শুনেছেন?
একটু এই লোকদের বুঝের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন! তাঁরা ইলমকে শুধু আমলের জন্য অর্জন করতে চাইতেন, শুধু ইলমের আধিক্যের জন্য নয়। যাতে সেই ইলম তাদের বিপক্ষে না দাঁড়ায়। ইলমের সাথে আমল আবশ্যক, তাই হাদিসের সঠিকতার উপর নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি কি নিজে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে একথা বলতে শুনেছেন?’
হযরত আবু মূসা রাযি. বললেন, ‘হ্যাঁ’
এটা শুনে সেই ব্যক্তি তার সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে, বিদায়ী সালাম জানালো এবং নিজের তরবারির খাপ ভেঙ্গে ফেলে ময়দানে চলে গেল। এবং লড়াই করতে করতে শাহাদাতবরণ করল। আল্লাহ তাআলা তাঁদের উপর অগণিত করুণা বর্ষণ করুন। লক্ষ্য করুন! এই হল সাহাবায়ে কেরাম এবং আমাদের আসলাফদের কর্মনীতি।
হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, ” يا ليتني فعلت” ‘হায়! আমি যদি চলেই যেতাম’।
হে আল্লাহর বান্দাগণ! এখনও আপনাদের সুযোগ আছে, আপনারা জিহাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সত্যের সাহায্যে বেরিয়ে পড়ন। এমন যেন না হয় যে, একসময় আপনাকেও এই আফসোস করতে হয়, ‘হায়, আমি যদি চলেই যেতাম!’
এক বর্ণনায় রয়েছে যে, একজন নেককার আলেম মৃত্যু শয্যায় ছিলেন। তখন তাঁর চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। অথচ তিনি তাকওয়া এবং ইলমে মানুষের মাঝে শ্রেষ্ঠতর ব্যক্তি ছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসা কর হল, আপনি কেন কাঁদছেন? তখন তিনি তার পদযুগলের দিকে তাকিয়ে জবাব দিলেন, ‘এজন্য কাঁদছি যে, আমি যে এই কদম কখনো আল্লাহর পথে ধুলোমলিন করিনি।’
নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই হাদিস মুবারক তো আপনারা জেনে থাকবেন যার মাঝে তিনি বলেছেন,
«ما اغْبَرَّتْ قَدَمَا عَبْدٍ في سَبِيل الله فَتَمَسَّهُ النَّار».
‘যে বান্দার কদম আল্লাহর পথে ধূলিমলিন হবে, তাকে আগুন স্পর্শ করতে পারেনা।’[6]
আল্লাহু আকবার! এটা এমন ইবাদত, যার শুধু ধুলাবালি আপনাকে আগুন থেকে মুক্তি দান করতে পারে। তাহলে সে ব্যক্তির মর্যাদা কেমন হবে, যে নিজের জীবন ও ধন-সম্পদ সব কিছু নিয়ে বের হয়েছে এবং সবকিছু এ পথেই কুরবানি করে দিয়েছে?
নিঃসন্দেহে জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ আমল। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ আমলের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন,
رَجُلٌ خَرَجَ يُخَاطِرُ بنَفْسِهِ ومَالِهِ، فَلَمْ يَرْجِعْ بشيءٍ.
‘ঐ ব্যক্তির আমল সর্বশ্রেষ্ঠ যে জিহাদ ফী সাবীলিল্লায় বের হয়ে নিজের জীবন ও ধন সম্পদকে আশংকায় ফেলে দিয়েছে এবং কোন কিছুই নিয়ে ফিরে আসেনি।‘ [7]
আজকে আমাদের অধিকাংশ ভাই আমাদেরকে বিপদ-আপদের ভয় দেখায়। কিন্তু জেনে রাখুন! প্রকৃত বিপদ তো কবরে। প্রকৃত ভয় তো জীবনের হিসাবের এবং শেষ বিচার দিনের যা নিশ্চিত প্রতিষ্ঠিত হবে! এমন যেন না হয় যে, দুনিয়ার এই বিপদ-আপদ থেকে বাঁচতে গিয়ে আপনি ঐ দিনের বিপদের মাঝে পড়ে গেলেন। আপনার জীবন আয়ু শেষ হয়ে গেল। অথবা অহেতুক কথাবার্তায় আপনার মূল্যবান সময় ফুরিয়ে গেল। দ্বীনের সাহায্য করা আপনার ভাগ্যে জুটল না।
আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্যাবলীর নিকটবর্তী হতে সর্তক করেছেন। মুনাফিকদের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল, আল্লাহর দ্বীনের সাহায্য না করে পিছনে বসে থাকা। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَجَاءَ الْمُعَذِّرُونَ مِنَ الْأَعْرَابِ لِيُؤْذَنَ لَهُمْ وَقَعَدَ الَّذِينَ كَذَبُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ
“আর ছলনাকারী বেদুঈন লোকেরা এলো, যাতে তাদের অব্যাহতি লাভ হতে পারে এবং নিবৃত্ত থাকতে পারে তারা যারা আল্লাহ ও রাসূলের সাথে মিথ্যা বলে ছিল। তাদের উপর শীঘ্রই আসবে বেদনাদায়ক আযাব যারা কাফের।“ [8]
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর এবং তার রাসূলের সাহায্য না করার অশুভ মনোভাব থেকে রক্ষা করুন। একটু ঐ আসলাফদের দিকে লক্ষ্য করুন! হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, ‘বাহিনী চলে যাওয়ার পর যখন আমি শহরে বের হতাম, তখন আমাকে সব চেয়ে বেশী এই বিষয়টি পেরেশান করত যে, শহরের অলিগলিতে ‘নিফাকে’ নিমজ্জিত মুনাফিক এবং অপারগ লোক ছাড়া অন্য কাউকে দেখতাম না।’
এই হল আমাদের আসলাফগণ! যখন সংবাদ আসল যে, রোমানরা মুসলমানদের উপর আক্রমণের ব্যাপারে ভাবছে। তখনো ইসলামী ভূখণ্ডে প্রবেশ করেনি। শুধু আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর এসেছে। তখন আমাদের নেতা ও পথপ্রদর্শক মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকদের মাঝে ঘোষণা দিলেন,
يا خيلَ اللهِ اركَبي
হে আল্লাহর পথের অশ্বারোহীগণ! অভিযানে বের হয়ে পড়।
তখন মুনাফিক এবং অপারগ ব্যক্তি ছাড়া কেউ বসে থাকেনি। আল্লাহর বান্দাগণ! যদি তোমরা নাজাতের প্রত্যাশী হও তাহলে ঐ মহান ব্যক্তিদের অনুসরণ করো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাথীদের অনুসরণ করো! আল্লাহ তাআলার বাণী,
مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ
‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন আল্লাহর রাসূল, এবং যারা তাঁর সাথী তাঁরা কাফিরদের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর এবং পরস্পরের প্রতি মেহেরবান, কোমল।’ [9]
পূর্ণ অনুসরণকেই অনুসরণ বলে, চাই সেই বিষয় আপনার পছন্দ হোক কিংবা অপছন্দ। যেমন উবাদা বিন সামিত রাযি. এর হাদিসে বর্ণিত আছে,
بايَعْنا رسولَ اللهِ صلَّى اللهُ عليهِ وسلَّم على السمعِ والطاعةِ، في اليُسْرِ والعُسْرِ، والمَنْشَطِ والمَكْرَهِ
আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এ মর্মে বাইআত করলাম যে, আমরা কথা শুনবো এবং আনুগত্য করবো চাই সচ্ছল অবস্থা হোক কিংবা অসচ্ছল অবস্থা এবং চাই (সেই বিষয়) আমাদের পছন্দ হোক কিংবা অপছন্দ। [10]
অতএব, লোকেরা জিহাদ অপছন্দ করলেও আপনার তা আদায় করা কর্তব্য। যেহেতু আপনার উপরও সে জিম্মাদারি আছে।
জিহাদ পরিত্যাগকারীর সমালোচনা করা বৈধ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাবুক পৌঁছলেন তখন বললেন,
ما فعل كعب
কা‘ব বিন মালিকের কি অবস্থা?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তার কথা উল্লেখ করলেন, তখন বনু সালামা গোত্রের একজন সাহাবী রাযি. বললেন, ‘তাকে তাঁর দামী কাপড় এবং আত্মতুষ্টি বিরত রেখেছে।’ সেই সাহাবী রাযি. হযরত কা‘ব বিন মালিক রাযি. এর নিন্দা করলেন। কেননা তিনি এই নাযুক মুহূর্তে দ্বীনের সাহায্য থেকে পিছনে রয়ে গেছেন। উক্ত সাহাবীর দৃষ্টিতে হযরত কা‘ব বিন মালিক রাযি. এর থেকে এমন ত্রুটি প্রকাশ পেয়েছে যা কোনভাবেই ইমানদারদের জন্য সঙ্গত নয়। তখন হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রাযি. হযরত কা‘ব বিন মালিক রাযি. এর আত্মপক্ষ অবলম্বন করে বললেন, ‘তুমি অত্যন্ত মন্দ কথা বলেছ, আল্লাহর কসম! আমরা তাঁর মাঝে শুধু কল্যাণকর দিকই দেখেছি।’
হাফেজ ইবনে হাজার রহ. বনু সালামা গোত্রের সাহাবীর কথার পর্যালোচনা করে বলেন, ‘আমি বলি যে, (এই কথা এ বিষয়ের দলীল যে) যে ব্যক্তি জিহাদ থেকে পিছনে বসে থাকবে তার সমালোচনা করা বৈধ হয়ে যায়। কেননা, দ্বীনের সাহায্য একটি মহান দায়িত্ব।’
আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করি, আমাদের প্রাণ এ অবস্থায় বের হোক যে, আমরা দ্বীনের সাহায্যের জিম্মাদারি আদায় করার কাজে রত এবং আমরা আমাদের মালিকের সাথে এ অবস্থায় মিলিত হই যে, তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট!
স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গরম সহ্য করেছেন আর আমি …..?
তখনও কথোপকথন চলছিল, ইতোমধ্যে এক সাদা পোশাক পরিহিত ব্যক্তিকে মরু প্রান্তর থেকে আসতে দেখা গেল। এ ব্যক্তি অনেক দূর থেকে আসছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দূর থেকে দেখেই বলেন, ‘এ আবু খাইছামা হবে।’
অতঃপর দেখা গেল, সে আবু খাইছামা আনসারী রাযি. ই ছিলেন। তিনি বাহিনী রওয়ানা হওয়ার পর চলা শুরু করেন। এবং একাকীই এসে উপস্থিত হন। তিনি মুনাফিকদের মাঝে থাকা পছন্দ করেননি। শয়তান এই মহান সাহাবীকে বাধা প্রদানের জন্যও অনেক চেষ্টা করেছে। ইবনে হাজার রহ. ফাতহুল বারীতে আবু খাইছামা রাযি. এর ঘটনা প্রসঙ্গে কোন কোন যুদ্ধাভিযান বিশারদের কথা বর্ণনা করেছেন যে, আবু খাইছামা রাযি. বর্ণনা করেনে, ‘আমি আমার গৃহে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম, বিছানার উপর পানির সিঞ্চন করা হয়েছে।’
আপনারা ভাল করেই জানেন যে, গরমের মৌসুমে বিছানার উপর পানির বিচ্ছুরণ কেমন আরামদায়ক অনুভূত হয়।
তিনি (আবু খাইছামা রাযি.) বলেন, ‘আমি দেখলাম, বিছানায় পানির বিচ্ছুরণ রয়েছে, এরপর আমার স্ত্রীর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলাম এবং বলে উঠলাম। আল্লাহর কসম! এটা কেমন ইনসাফ! আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্যের তাপ এবং গরম সহ্য করবেন আর আমি এখানে ছায়া ও আরাম আয়েশ ভোগ করব।’
ঈমানদারগণের প্রতি একটু লক্ষ্য করুন! দেখুন, তারা কি সঠিক আকীদা ও মজবুত বিশ্বাসের অধিকারী ছিলেন!
সুতরাং আবু খাইছামা রাযি. নিজের বাহন এবং অল্প কিছু খেজুর নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেলেন। এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে গিয়ে মিলিত হলেন।
লক্ষণীয় বিষয় হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি জন্য ঘর থেকে বের হয়ে ছিলেন? তিনি কি কালিমার সাহায্যের জন্য বের হননি? তাহলে আজকে আমাদের কি হয়ে গেল যে, আমরা ঐ কালিমার সাহায্য ছেড়ে পিছনে বসে রয়েছি। এবং ধারনা করছি যে, আমরা এই কালিমার সাহায্যের হক আদায় করে ফেলেছি। অথচ এই কালিমার শাসন আজ দুনিয়া থেকে মুছে গেছে।
তোমাকে কোন জিনিস পিছনে রেখেছে?
এখানে আমরা কা‘ব রাযি. এর হাদিসের কিছু শিক্ষণীয় বিষয়ের উপর চিন্তা ফিকির করবো কেননা, এ মুহূর্তে হাদিসের সকল শিক্ষণীয় বিষয়ের উপর আলোচনা করা আমাদের জন্য সম্ভব নয়। ইমাম নববী রহ. ইবনে হাজার রহ. এবং অন্যান্য হাদিস ব্যাখ্যাকারগণ এই হাদিসের উপর পূর্বেই যথেষ্ট আলোচনা করেছেন।
হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, ‘যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যাবর্তন করলেন তখন আমি অত্যন্ত দুঃখ ও প্রচণ্ড চিন্তায় পড়ে গেলাম এবং ভাবতে লাগলাম যে, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে কি বলবো? যখন আমি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত হলাম তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চেহারায় রাগ নিয়ে মুচকি হাসলেন।’
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত কা‘ব রাযি. এর প্রতি রাগান্বিত ছিলেন। ইবনে হাজার রহ. কতিপয় যুদ্ধাভিযান বিশারদদের কথা বর্ণনা করেছেন যে, হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন তখন আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমার থেকে কেন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন?
আল্লাহর কসম! আমি তো মুনাফিক নই, সন্দেহের মধ্যে পড়িনি এবং আমার অবস্থার মাঝেও কোন পরিবর্তন আসেনি।
দ্বীনের সাহায্যকে ছেড়ে দেওয়া কোন ছোট ব্যাপার ছিল না। হযরত কা‘ব রাযি. এর এ কথার উপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কম্পন সৃষ্টিকারী একটি কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন,? ماخلفك কোন জিনিস তোমাকে পিছিয়ে রেখেছে?
এ প্রশ্নটি আজও জিহাদ পরিত্যাগকারীদের করা চাই যে ‘তোমাদেরকে কোন জিনিস পিছনে বসিয়ে রেখেছে?’
আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নিকট প্রার্থনা করি, তিনি আমাদের আলেমদের বক্ষকে এই বিষয়টির জন্য উন্মুক্ত করে দিন। তারা যেন আমাদের আসলাফদের সীরাত থেকে সবক গ্রহণ করেন এবং উম্মাহকে জিহাদ ফরজে আইন হওয়ার ফতওয়া দেন!
উলামায়ে সালাফ সকলে এ বিষয়ে একমত যে, জিহাদ কোন কোন পরিস্থিতিতে ফরজে আইন হয়ে যায়। যার মধ্যে প্রথম পরিস্থিতি হল, শত্রুদের ইসলামী ভূখণ্ডে প্রবেশ করা। অথচ আজকে শত্রুরা ইসলামী ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে কয়েক দশক হয়ে গেছে, لا حولَ ولا قوَّةَ إلَّا باللهِ
দ্বীনের সাহায্য কে করবে? যদি আমরা প্রত্যেকেই ওজর পেশ করে বসে থাকি, তাহলে এ মহান দায়িত্ব কে আঞ্জাম দিবে? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার দ্বীনের উপর কি এভাবেই হামলা হতে থাকবে আর আমরা হামলার জবাব না দিয়ে বসে থাকবো? আমাদের কর্তব্য হলো, নিজেদের ত্রুটি বিচ্যুতি থেকে আমরা ফিরে আসবো এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার অনুগ্রহে হককে প্রতিষ্ঠিত করেই তবে ক্ষান্ত হব।
ভুলের ক্ষেত্রে মুমিনের রীতি গোঁড়ামি বা অহেতুক বাক্য খরচ নয়, বরং ভুল স্বীকার করে নেয়া।
হযরত কা‘ব রাযি. এর স্বীয় ত্রুটি স্পষ্টভাবে স্বীকারোক্তির মাঝে জ্ঞানী লোকদের জন্য শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর কসম! আমি যদি আপনার (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিবর্তে দুনিয়ার অন্য কোন ব্যক্তির সামনে বসতাম তাহলে আমি কোন ওজর পেশ করে তাঁর ক্রোধ থেকে বেচে যেতাম, কেননা, আমি বাকবিতণ্ডায় বেশ পটু।’
আজকেও অসংখ্য লোক দলীল-প্রমাণহীন আলোচনা করার অনেক দক্ষতা রাখে। কিতাবুল্লাহ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহর স্পষ্ট ভাষ্যকে আসল ও সঠিক অর্থ থেকে সরিয়ে দেয়। আর বলে, এখনোও জিহাদের সময় আসেনি। আমি জিজ্ঞাসা করি, যদি এখনও সময় না আসে তাহলে কবে আসবে?
ইসলামী রাষ্ট্র স্পেন আমাদের হাত ছাড়া হওয়ার পাঁচ শতাব্দীর বেশী হয়েছে। তবুও কি তা উদ্ধার করার সময় আসেনি। মূলত এসব লোক সর্বদা স্পষ্ট আয়াত ও হাদিসকে অস্পষ্ট অর্থের দিকে ফিরিয়ে বলে, এখনো জিহাদের সময় আসেনি।
তবে কি জিহাদের এসব আয়াত এবং বিধি বিধান এজন্য অবতীর্ণ হয়ে ছিল যে, এগুলোকে তার আসল ও সঠিক অর্থ থেকে সরিয়ে অস্পষ্ট এবং অর্থহীন করে দেয়া হবে? এটা তো সেই মহান ইবাদত যার মাধ্যমে সত্য পথ থেকে বিচ্যুত লোকদেরকে স্বীয় রবের ইবাদতে ফিরিয়ে আনা হবে। যেমন সহীহাইনের বর্ণনা রয়েছে,
أمرت أن أقاتل الناس حتى يشهدوا أن لا إله إلا الله، وأن محمداً رسول الله، ويقيموا الصلاة ويؤتوا الزكاة
‘আমাকে নির্দেশ করা হয়েছে যে, আমি লোকদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকব যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত প্রদান করবে।’[11]
যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রবের ইবাদত ব্যাপক করার জন্য কিতালের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। সেখানে আমরা কিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এ কর্মপদ্ধতি ছেড়ে দিয়ে লোকদেরকে ইবাদতের দিকে নিয়ে আসবো?! বিশেষ করে যখন ইসলামী ভূখণ্ডগুলোতে চলছে নাস্তিকতার সয়লাব। এবং প্রকাশ্যে অস্বীকার করা হচ্ছে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে।
সুতরাং এসব ব্যাপারে তর্ক বিতর্ক থেকে বিরত থাকুন এবং মানুষকে আপন অবস্থায় ছেড়ে দিয়ে সেসব আসলাফদের অনুসরণ করা উচিৎ যাদের নেতা ও সর্দার স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
নিজের ভুল স্বীকার প্রভুর ক্রোধ থেকে বাঁচার উপায়
হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কসম! যদি আমি আপনাকে ছাড়া অন্য কারো সামনে বসতাম তবে কোন ওজর পেশ করে তার ক্রোধ থেকে বেচে যেতাম। কেননা আমি কথাবার্তায় বেশ পটু। কিন্তু আল্লাহর শপথ! আমি জানি, যদি কোন মিথ্যা বলে দেই এবং আপনাকে সন্তুষ্ট করে দেইও, তবে আল্লাহ তাআলা আপনাকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অচিরেই আমার ব্যাপারে জানিয়ে দিবেন।’
আজকে যখন আপনার কাছে আপনার কোন ভাই জিজ্ঞেস করে যে, তুমি কেন জিহাদে বের হচ্ছনা। তখন আপনার নফস আপনাকে ধোঁকায় ফেলে দেয় এবং আপনি নিজের ভুল স্বীকারের পরিবর্তে সেই ভাইকে মিথ্যা বাহানা শুনিয়ে শুনিয়ে শান্ত করেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা ক্রোধের কারণে জনসাধারণকে আপনার ব্যাপারে অসন্তুষ্ট করে দিবেন এবং নিশ্চয়ই তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, ‘যদি আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মিথ্যা বলে দেই। এবং তিনি ঐ সময় আমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান। কিন্তু অচিরেই আল্লাহ তাআলা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আমার ব্যাপারে অসন্তুষ্টি করে দিবেন। আর যদি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে সত্য বলার কারণে তিনি আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হন, সেক্ষেত্রে আমার আশা হল যে, আল্লাহ তাআলা এর পরিণাম ভাল করে দিবেন।’
আজ থেকে প্রায় বিশ বৎসর পূর্বের কথা, যখন আমি আমাদের আলেম এবং মাশাইখগণের খিদমতে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে জিহাদে বের হওয়ার দাওয়াত দিতাম। সেই সময় রুশদের বিরুদ্ধে জিহাদের সূচনা হয়ে গিয়েছিল। সেসব আলেমদের মধ্যে অনেকেই এমন ছিলেন যারা জবাবে অসংখ্য ওজর-আপত্তি পেশ করত। তাদের মধ্যে অতি অল্প সংখ্যক এমন লোক ছিলেন যারা হযরত কা‘ব বিন মালিক রাযি. এর মানহাজ-রীতির নিকটবর্তী ছিলেন। আমি অধিকাংশ সময় তাঁদের কতকের এ বাক্য বর্ণনা করে থাকি, ‘হে উসামা! আল্লাহর প্রদত্ত পূণ্যময় এ পথে অবিচল থাকবে! যে পথে তুমি চলছো হকের পথ এবং সঠিক পথ। আমাদের ব্যাপার হলো, আমরা কখনো এ পথে চলে দেখিনি। এজন্যই এই পথকে ভয় পাই, কিন্তু আমরা কখনো তার বিরোধিতা করি না এবং সর্বদাই মানুষ অজানা বিষয়কে ভয় করে থাকে।’
মূলত এই উলামায়ে কেরামগণ জিহাদের ইবাদতের সাথে একেবারে অপরিচিত ছিলেন। কেননা ঐ সময়কাল অনেক দীর্ঘ হয়ে গেছে এজন্যই সমাজে জিহাদকারী লোকের খুব অভাব ছিল।
অতঃপর হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমার কোন ওজর ছিলনা।’
তিনি আল্লাহর কসম করে বলছেন, তার কোন ওজর ছিলনা। আজও যারা কা‘ব রাযি. এর মানহাজ ও নীতির নিকটবর্তী, তারা ওজর পেশ করার পরিবর্তে নিজের দুর্বলতা স্পষ্টভাবে স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমার কোন ওজর ছিলনা। আল্লাহর কসম! আমি ইতঃপূর্বে কখনই এত পরিমাণ সম্পদের অধিকারী ও শক্তিশালী ছিলাম না যখন আপনার (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে পিছনে রয়ে গিয়েছিলাম।’
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,أَمَّا هَذَا فَقَدْ صَدَقَ، ‘যতদূর বুঝি! সে সম্পূর্ণ সত্য বলেছে।’
নফস তো মিথ্যার উপর উৎসাহিত করে থাকে
হযরত কা‘ব বিন মালিক রাযি. এর উপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ যে, তিনি সত্য বলার উপর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।
কিন্তু তিনি নিজেই বলেন, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জিহাদের ময়দান থেকে ফিরে আসার সংবাদ পেলাম, তখন ‘আমি বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা বানাতে শুরু করে দিয়ে ছিলাম।’
হযরত কা‘ব রাযি. এর স্বীকারোক্তি মানবাত্মার স্বভাব জানার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আজকাল অধিকাংশ লোকের অবস্থা এই যে, তারা অন্যদের সামনে নিষ্পাপ সেজে বলে, আপনি প্রকৃত ব্যাপার জানেন না! আমার ব্যাপার জিহাদ থেকে পলায়ন নয়! বরং বাস্তবে যদি এ সময়ে জিহাদের গুরুত্ব থাকত তাহলে আমি অবশ্যই বেরিয়ে পড়তাম।
এই মহান সাহাবী যিনি অগ্রগামী সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সহীহাইনের উক্ত হাদিসে তাকে স্পষ্টভাবে এ স্বীকার করতে দেখা যায় যে, তিনিও সেই নফসানি আকর্ষণের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন। তাহলে আজকে আমাদের মত লোকদের অবস্থা কেমন হবে মানুষকে ঘায়েল করার জন্য নফসের অনেক অস্ত্র আছে। আর শয়তান তো বনী আদমের রগরেখায় চলাচল করে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তার অনিষ্ট থেকে তাঁর আশ্রয়ে রাখেন! কিন্তু আল্লাহ তাআলার তাওফিকে হযরত কা‘ব সততার প্রতিজ্ঞা করেছেন। যা পরিশেষে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার অনুগ্রহে তাঁর মুক্তির উপায় হয়েছে। যার আলোচনা আমরা ইনশাআল্লাহ সামনে করব।
সত্য পথের একটি বড় বাঁধা সামাজিক চাপ
হযরত কা‘ব রাযি. বলেন যে, ‘যখন আমি রাসূলের কাছ থেকে বের হলাম তখন আমার গোত্র বনু সালামার কিছু লোক এসে আমাকে তিরস্কার করতে লাগল।’তারা তাঁকে এ বলে তিরস্কার করছিল, তুমি ভুল স্বীকার করতে গেলে কেন? যদি তুমি কোন ওজর পেশ করতে তাহলে তোমার জন্য আল্লাহর রাসূলের ক্ষমা প্রার্থনা করাই যথেষ্ট হয়ে যেত।
তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে ক্রমাগত তিরস্কার করছিল, এমনকি এক পর্যায়ে আমি ইরাদা করে ফেললাম যে, দ্বিতীয় বার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে নিজের পিছনের কথাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করব।’
চিন্তা করুন! মানবীয় আত্মার এই স্বভাবজাত দুর্বলতা একজন সাহাবীর এখানেও স্থান করে নিয়েছে। সমাজ, পরিবার-পরিজন এবং আশ-পাশের চাপ এত কঠিন হয়ে থাকে যে, কখনো কখনো সাহাবায়ে কেরাম রাযি. এর মত নির্বাচিত ব্যক্তিগণও সাময়িক ভাবে এর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। সুতরাং ভাবা যেতে পারে যে, বর্তমানে এ চাপ কত কঠিন হবে যখন পরিস্থিতি একেবারে পাল্টে গেছে। লোকদের অধিকাংশই জিহাদ থেকে পশ্চাতে বসে আছে। তবে এ পরিস্থিতিতেও একটি দল এমন আছে যাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাঁর রাহে জিহাদের তাওফিক দান করেছেন। এটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার দয়া ও অনুগ্রহ। আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করি, তিনি আমাদের অবিচলতা দান করুন এবং এই নিয়ামত দানে সৌভাগ্যমণ্ডিত করুন। এমনকি যখন আমরা আমাদের মালিকের সাথে মিলিত হবো তখন তিনি আমাদের প্রতি যেন সন্তুষ্ট থাকেন।
হযরত কা‘ব রাযি. এর অবশিষ্ট দুই সাথীর আচরণ
হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, অতঃপর আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, অন্য কারো সাথেও কি এমন আচরণ হয়েছে যা আমার সাথে হয়েছে?
তখন তারা বলল, ‘হ্যাঁ! তোমার সাথে আরও দুজন লোক রয়েছে। তারাও তেমনি বলেছে যা তুমি বলেছ, ফলে তাদের তা-ই বলা হয়েছে যা তোমাকে বলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তারা দু’জন মুরারা ইবনে রাবী রাযি. এবং হিলাল ইবনে উমাইয়া রাযি.। যারা সত্যবাদী মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং বদর যুদ্ধে শরীক ছিলেন। এটা শুনে আমি প্রশান্তি লাভ করলাম এবং আমি আমার পূর্বের অবস্থানে অবিচল রইলাম।’
শুধুমাত্র একটি যুদ্ধে না যাওয়ার কারণে সম্পর্ক ছিন্ন
অতঃপর সম্পর্ক ছিন্ন এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়ার নির্দেশও এসে গেল। শুধু একটিবার দ্বীনের সাহায্য ত্যাগ করার কারণে। তিনি বলেন, ‘আমার জন্য সমগ্র পৃথিবী সম্পূর্ণ পাল্টে গেল, এটা আর সেই পৃথিবী থাকল না যাকে আমি চিনতাম। এবং আমার নিজ সত্ত্বা পর্যন্ত আমার জন্য অপরিচিত হয়ে গেল।’
আল্লাহর বান্দারা! একটু ভাবুন! এই জিহাদ পরিত্যাগ করার জন্য কে তাঁর থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করছে? মানবকুল সর্দার, রাসূলুল্লাহ সাঃ যদি কারো প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যান তাহলে আসমান জমিনের মালিকও তার উপর অসন্তুষ্ট হয়ে যান। এটা কত গুরুতর ব্যাপার!
জনবল বৃদ্ধি নয়, ফরজ আদায়ই কাম্য
ত্রিশ হাজারের বাহিনী থেকে মাত্র তিনজন পশ্চাতে থেকে যাওয়ায় কি জনবলের দিক থেকে কোন পার্থক্য সৃষ্টি করে? কিন্তু কথা আসলে অন্তরাত্মার, প্রকৃত ব্যাপার ঈমানের! এ অন্তর কিভাবে দ্বীনের সাহায্য ছেড়ে বসে থাকতে প্রস্তুত হয়ে গেল? তাদের পিছনে থেকে যাওয়া বাহিনীতে কোন প্রভাব ফেলবে কিনা, সেটা কোন বিষয় নয়।
প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহ তাআলা আপনার উপর একটি অতি গুরুত্ব পূর্ণ আমানত এবং ফরজ বিধান আরোপ করেছেন যা আদায় করা আপনার অবশ্য কর্তব্য।
সুতরাং তাঁর থেকে সম্পর্ক ছিন্নের নির্দেশ এসে গেল এবং পৃথিবী তার জন্য পাল্টে গেল, এমনকি আপন সত্ত্বাও তাঁর কাছে অপরিচিত হয়ে গেল।
তিনি বলেন, ‘আমার থেকে যখন মুসলমানদের সম্পর্ক ছিন্নের ব্যাপারটি দীর্ঘ হয়ে গেল তখন গাসসানের বাদশাহর পক্ষ থেকে এক দূত আমার কাছে এলো।’
আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন, গাসসানবাসীরা কাইলা বংশোদ্ভূত, বনী আউস, খাজরাজ এবং তাদের মাঝে বংশীয় সম্পর্ক ছিল। কারণ, তাদের মা এক ও অভিন্ন ছিল। সুতরাং গাসসানবাসীদের পর্যন্ত সংবাদ পৌঁছে গেলে, তাদের বাদশাহ এই সংবাদ পাঠাল, ‘আপনি আমাদের কাছে চলে আসুন। আমরা সম্পদ দিয়ে আপনার সহযোগিতা করব। লাঞ্ছনা ও অপমানের ভূমি ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসুন।’ তিনি বলেন, ‘কাফের মুশরিকরাও আমার ব্যাপারে ঘৃণ্য আশা করতে শুরু করেছিল।
জিহাদ পরিত্যাগকারীদের অবস্থা এমনি হয়ে থাকে। ঘাতক শাসকবর্গ ও আমলারাও তাদের কাছে মন্দ আশা করে। দ্বীনের সাহায্য থেকে তাদেরকে আরও দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ مِنْ أَوْلِيَاءَ ثُمَّ لا تُنْصَرُونَ
“তোমরা জালেমদের প্রতি ঝুঁকে পড় না। নতুবা তোমাদেরকে আগুন স্পর্শ করবে। “[12]
তিনি বলেন, আমি গাসসান বাদশাহর সেই পত্র চুলায় নিক্ষেপ করলাম।
যখন পরিস্থিতি তাঁর উপর সংকীর্ণ হয়ে গেল সেই সময়ের কথা বলেন, আমি আমার চাচাত ভাই আবু কাতাদা রাযি. এর বাগানে দেয়াল টপকে প্রবেশ করলাম। তিনি আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ ছিলেন। আমি তাকে বললাম, হে আবু কাতাদা! আমি তোমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, তুমি কি জানোনা যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ভালবাসি?
আল্লাহর বান্দারা! একটু ঈমান এবং জিহাদের পারস্পরিক সম্পর্কের ব্যাপারে চিন্তা করুন।
পৃথিবী তাঁর উপর সংকীর্ণ হয়ে গেল। নিজেকে তাঁর অপরিচিত মনে হল। এখন নিজের চাচাত ভাইয়ের পক্ষ থেকেও বিমুখতা প্রদর্শন। এমনিতেই যখন সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে নিয়েছেন, তখন কিভাবে সম্ভব যে, পৃথিবী তার জন্য প্রশস্ত থাকবে? কিভাবে তাঁর আত্মা নিশ্চিন্ত থাকবে?
তিনি চাচ্ছিলেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভালবাসার ব্যাপারে নিশ্চয়তা লাভ করবেন। এজন্য তিনি আবু কাতাদা রাযি. কে বললেন, হে আবু কাতাদা! আমি তোমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, তুমি কি জানোনা, আমি আল্লাহ ও তার রাসূল সাকে. ভালবাসি?
জিহাদ পরিত্যাগের পর ভালবাসার দাবীও সন্দেহপূর্ণ
আল্লাহু আকবার! দ্বীনের সাহায্য ছেড়ে পশ্চাতে বসে থাকা কত বড় অপরাধ। একটু চিন্তা করুন!
আমাদের অন্তরের নূর কি এর কারণে নয়? এটা কিভাবে সম্ভব হতে পারে যে, আমরা দ্বীনের সাহায্য ছেড়ে মহিলাদের সাথে বসে থাকবো। আবার এ কল্পনাও করতে থাকবো যে, আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ভালবাসি? হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, ‘তিনি আমাকে কোন জবাব দিলেন না।’
কেননা, সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা ছিল। সম্পর্ক ছিন্নের ব্যাপার এত কঠিন ছিল যে, তিনি এই ঘটনার শুরুতে বলেন, ‘আমি তাকে সালাম দিলাম কিন্তু তিনি আমার সালামের জবাব পর্যন্ত দিলেন না।’
অথচ তিনি তাঁর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু আল্লাহর সাহায্য ত্যাগকারীর উপর শাস্তি বাস্তবায়নকারী নির্দেশকে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। অবশ্য এরপরে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে স্বীয় রহমত দ্বারা ঢেকে নিয়েছেন। তাদের তাওবা কবুল করেছেন এবং তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, ‘আমি তাকে দ্বিতীয় বার কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ভালবাসি? তিনি তখনও কোন জবাব দিলেন না। অতঃপর আমি তৃতীয় বার কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি জানোনা, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ভালবাসি? তখন তিনি জবাব দিলেন, ‘আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ই ভাল জানেন।’ হযরত কা‘ব রাযি. বলেন যে, ‘একথা শুনে আমি সেখান থেকে ফিরে এলাম আর আমার চোখ থেকে অশ্রু ঝরছিল।’
তিনি কান্না শুরু করলেন। কারণ, মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি ঈমান এবং তাঁদের ভালবাসা। অথচ এ ব্যাপারে তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সাথীও সত্যায়ণ করতে অস্বীকার করল। তাহলে আর কি মূল্য থাকে এ জীবনের? হযরত আবু কাতাদা রাযি. হযরত কা‘ব রাযি. এর কথাকে না সত্যায়ণ করলেন না অস্বীকার করলেন। বরং বললেন, ‘আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ই ভাল জানেন।’
স্ত্রীদের থেকে আলাদা হওয়ার নির্দেশ এবং হযরত কা‘ব রাযি. এর অনুপম আনুগত্য
এরপর হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, যখন আমাদের উপর এ বয়কট অবস্থার চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয়ে গেল তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বার্তাবাহক এসে বলল, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা তোমাদের বিবিদের থেকে আলাদা হয়ে যাও! ’
আল্লাহর বান্দাগণ! চিন্তা করুন! দুনিয়াবি দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু তার ঘর এবং তার স্ত্রী হয়ে থাকে। এখন তাঁর জীবনসঙ্গিনী স্ত্রী কে ও আলাদা হওয়ার নির্দেশ এসে গেল। কিন্তু এ কঠিন নির্দেশের সামনে হযরত কা‘ব রাযি. এর মাথা ঝুঁকিয়ে দেয়া এ বাস্তবতা স্পষ্ট করে যে, জীবিত আত্মার উপর যদি কখনও উদাসীনতার পর্দাও পড়ে যায় তখন সাথে সাথে তার স্মৃতি জেগে উঠে এবং সে সত্যের দিকে ফিরে আসে। দ্বীনের সাহায্যকে পরিত্যাগের অপরাধবোধ তীব্রভাবে অনুভব করতে থাকে। সুতরাং হযরত কা‘ব রাযি. আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তালাক দিয়ে দিব না কি করব? অর্থাৎ, তিনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সন্তুষ্টির জন্য নিজের স্ত্রীকে তালাক দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। বার্তা বাহক জবাব দিল, ‘না! তার নিকটে যাওয়ার অনুমতি নেই।’
সুতরাং হযরত কা‘ব রাযি তাঁর স্ত্রীকে বললেন, ‘তুমি তোমার পরিবারের নিকট চলে যাও, যতক্ষণ না আল্লাহ তাআলা আমাদের এ ব্যাপারে কোন ফায়সালা করে দেন।’
আল্লাহ তাআলার কালাম এবং তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুবারক সুন্নাতের ভিত্তিতেই আমরা নিজেদের স্ত্রীদেরকে হালাল জেনেছি। আমাদের রব তাদেরকে আমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ তাআলার বাণী,
وَمِنْ آَيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لايَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
‘এবং তাঁর নিদর্শনাবলী থেকে একটি এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন। যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তিতে থাকতে পারো।’ [13]
এই স্ত্রী তোমার জন্য আল্লাহ তাআলার একটি বিশেষ অনুগ্রহ। কারণ তার গঠন-প্রকৃতি ও বন্ধনে রয়েছে একধরণের স্বস্তি প্রশান্তি ও ভালোবাসা। সুতরাং কিভাবে তুমি সে দ্বীনের সাহায্য ত্যাগ করতে পার যার মাধ্যমে তোমার উপর সব নেয়ামত বর্ষিত হয় এবং কিভাবে তোমার রবের দ্বীনের সাহায্য ত্যাগ করতে পার যিনি তোমাকে শূন্য থেকে অস্তিত্বে নিয়ে এসেছেন!
বার্ধক্য সত্ত্বেও এত কঠিন পাকড়াও!
হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, তিন হাজারের মাঝে আমি সবচেয়ে জোয়ান ছিলাম, আমার অপর দুই সাথী তো একেবারে বেহাল হয়ে নিজের ঘরে বসে বসে ক্রন্দন করছিলেন।’
জীবিত অন্তরাত্মা সম্পন্ন লোকদের যখন স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় তখন তারা জাগ্রত হয়ে যায়। এ জন্যই তারা চল্লিশ দিন পর্যন্ত ক্রন্দন করেছেন। অতঃপর তাদের নিকট বার্তা পাঠানো হয় যে, স্ত্রীদের থেকে পৃথক হয়ে যাও।
তখন হযরত হেলাল ইবনে উমাইয়্যা রাযি. এর স্ত্রী রাসূলাল্লাহ সা, এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! হেলাল তো অত্যন্ত বৃদ্ধ মানুষ, আপনি কি অপছন্দ করবেন যদি আমি তার খেদমত করি?
হে আল্লাহর বান্দারা! চিন্তা করুন, তিনি বয়োবৃদ্ধ ছিলেন এবং বয়সের ভারে ছিলেন দুর্বল। কিন্তু এই বার্ধক্য সত্ত্বেও যখন তিনি জিহাদের ময়দান থেকে পশ্চাতে ছিলেন তখন তাঁকে পরিপূর্ণ শাস্তি দেয়া হয়েছে। কেননা তিনি এই সক্ষমতা তো রাখতেন, ময়দানে বের হয়ে, ইসলামী বাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধি করবেন এবং মুজাহিদীনদের মাল-সামগ্রীর হেফাজত করবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর স্ত্রীকে জবাবে বললেন, ‘খেদমত অপছন্দ করিনা, তবে সে যেন তোমার কাছে না আসে।’ তখন তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম! তার মাঝে তো (বার্ধক্যের কারণে) পূর্ব থেকে এমন কোন চাহিদা নেই।’
হে তরুণ ভায়েরা! একটু চিন্তা করুন। হে আল্লাহর বান্দাগণ! আপনাদের এমন কি উত্তর আছে, যার কারণে দ্বীনের সাহায্য ছেড়ে বসে আছেন? এখানে এত বয়োবৃদ্ধ আল্লাহর রাসূলের সাহাবীদেরকে কোন ছাড় দেয়া হয়নি। অথচ আল্লাহ আপনাদেরকে সুস্থতা, দৃষ্টিশক্তি, বিবেক এবং সম্পদ, সকল নিয়ামত দ্বারা ভরপুর করে রেখেছেন!
আপনারা দুনিয়াবি ধান্ধার জন্য সারা দুনিয়া চষে বেড়াতে পারেন, তাহলে কি নিজের স্রষ্টা ও মালিকের সাহায্যের জন্য ঘর থেকে বের হতে পারবেন না? হঠাৎ মৃত্যু আসার আগেই নিজের সুস্থতা, সম্পদ এবং জীবনকে গনিমত মনে করুন।
জিহাদ থেকে পশ্চাতে থেকে যাওয়ার কারণে অঝোর ধারায় কান্না
এরপর হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, হযরত হিলাল রাযি. এর স্ত্রী নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললেন, ‘আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রাসূল! যেদিন থেকে তাঁর এ ঘটনা ঘটেছে, সেদিন থেকেই তিনি ঘরে বসে অনবরত ক্রন্দন করছেন।’
অন্যায় ও পাপকর্ম পরিশুদ্ধ আত্মাকে হত্যা করে। আর চোখের পানি পাপ রাশিকে ধুয়ে ফেলে। তাবুক যুদ্ধের যাত্রাকালে কিছু গরীব সাহাবী রাসূলের কাছে আসলেন এবং যুদ্ধে যাবার জন্য বাহনের আবদার করলেন। কিন্তু রাসূলের কাছে এমন কোন বাহন ছিল না, যাতে তাদেরকে আরোহণ করাবেন। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাদের কাছে ওজর পেশ করলেন, তখন তারা কাঁদতে কাঁদতে ফিরে গেলেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাঁর কিতাবে তাদের অবস্থা বর্ণনা করে বলেন,
تَوَلَّوْا وَأَعْيُنُهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ حَزَنًا أَلَّا يَجِدُوا مَا يُنْفِقُونَ
‘উহারা অশ্রু বিগলিত চোখে ফিরে গেল এ দুঃখে যে তাদের কাছে আল্লাহর পথে খরচ করার জন্য কিছু ছিলনা।’
শুধু এক যুদ্ধে চেষ্টা সত্ত্বেও যেতে না পেরে যদি সাহাবীদের এই অবস্থা সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাহলে সে ব্যক্তির কত বেশী কাঁদা উচিৎ যার দুটি পা কবরে চলে গেছে। কিন্তু সে না কখনো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার পথে কোন যুদ্ধে শামিল হয়েছে, না মুসলমানদের বিপদ আপদে অশ্রু ঝরিয়েছে। না এসব বিপদ আপদের কারণে কখনো তার চেহারার রং পরিবর্তন হয়েছে! لا حولَ ولا قوَّةَ إلَّا باللهِ
হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, আমি এই অবস্থায়ই ছিলাম, ইতোমধ্যে এক ব্যক্তিকে উচ্চ আওয়াজে বলতে শুনলাম, يَا كَعْبُ بْنَ مَالِكٍ أَبْشِرْ، হে কা‘ব! সুসংবাদ গ্রহণ কর।
যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর তাঁদের তাওবা কবুলে আয়াত নাযিল হল তখন সাথে সাথে এক সাহাবী রাযি. সালা’ পাহাড়ে আরোহণ করলেন এবং সুউচ্চ কণ্ঠে হযরত কা‘ব রাযি. কে এই সুসংবাদ দিতে লাগলেন যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর তওবা কবুল করে নিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি তাওবা কবুলের আনন্দে অশ্রু বিগলিত হয়ে সেজদায় পড়ে গেলাম।’ অন্য এক সাহাবী রাযি. তাঁর দিকে ঘোড়া ছুটলেন এবং অন্যরা সুসংবাদ দেওয়ার জন্য দৌড়ে আসলেন। এই ছিল সাহাবায়ে কেরাম রাযি. এর নিজের ভাইয়ের তাওবা কবুল হওয়ার আনন্দের প্রকাশ!
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মজলিসে উপস্থিতি
তিনি বলেন, ‘যখন সে সুসংবাদদাতা আমার কাছে পৌঁছল, ‘যার আওয়াজ আমি শুনেছিলাম’ তখন তাকে আমার কাপড় দুটি খুলে দিয়ে দিলাম এবং এক প্রতিবেশী থেকে পোশাক ধার নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত হলাম। আল্লাহর কসম! সেদিন আমি এই এক পোশাক ছাড়া অন্য কোন বস্তুর মালিক ছিলাম না।’
একটু লক্ষ্য করুন নিজেদের আসলাফদের দিকে!
হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, ‘লোকেরা দলে দলে আমাকে মুবারকবাদ জানাচ্ছিল। সর্বপ্রথম তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ রাযি. তীব্র গতিতে অগ্রসর হলেন এবং আমার সাথে মুসাফা করে আমাকে মুবারকবাদ জানালেন।’
হযরত কা‘ব রাযি. সাইয়্যেদুনা তালহা রাযি. এর এ আচরণ সারা জীবন ভুলতে পারেন নি। অতঃপর তিনি বলেন, আমি উপস্থিত হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সালাম করলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চেহারা মুবারক খুশিতে ঝলমল করছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! তাওবা কবুলের বিষয়টি আপনার পক্ষ থেকে, নাকি মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষে থেকে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘না, বরং মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে।’
হযরত কা‘ব রাযি. আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার তাওবা এটা ব্যতীত পূর্ণ হবেনা যে, আমি নিজের সমুদয় সম্পদ থেকে রিক্তহস্ত হবো এবং এগুলো আল্লাহর রাহে সাদাকা করে দেব।’
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এক তৃতীয়াংশ সম্পদ সাদাকা করা তোমার জন্য যথেষ্ট।’
এই ঘটনা থেকে সাহাবায়ে কেরাম রাযি. এর জীবনে জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর গুরুত্ব আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে যায়। হযরত কা‘ব রাযি. প্রায় সব যুদ্ধে শরীক হয়ে ছিলেন। শুধুমাত্র একবার পিছনে থেকে গিয়ে ছিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি কাফফারা স্বরূপ সমস্ত সম্পদ সাদাকা করে দিতে চেয়েছেন।
আজ আপনার সমুদয় সম্পদও চাওয়া হচ্ছেনা। অথচ তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলারই সম্পদ! সুতরাং সুযোগের এইমুহুর্ত গুলোকে গনিমত মনে করে আল্লাহর রহে বেরিয়ে পড়ুন, – মৃত্যু আসার পূর্বেই সুযোগ গ্রহণ করুন। অতীত জীবনে ধোঁকায় পড়ে ছিলেন-এ অনুভূতি হওয়ার পূর্বেই আল্লাহর রাস্তায় বেরিয়ে পড়ুন।
জিহাদের পথে অতিবাহিত একটি মুহূর্ত
সহীহ হাদিসে রয়েছে যে, নবীয়ে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
قِيامُ ساعةٍ في الصَّفِّ للقتالِ في سبيلِ اللهِ خيرٌ من قيامِ سِتِّينِ سَنَةً
আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধের কাতারে এক মুহূর্ত অবস্থান করা ষাট বছর ইবাদতের চেয়ে উত্তম। [14]
হে তরুণ! দ্বীনের সাহায্যে ইহুদী, খৃস্টান ও তাদের এজেন্টদের বিরুদ্ধে কিছু সময় জিহাদের ময়দানে যেতে পার। আল্লাহর মেহেরবানিতে এখনও পথ খোলা। প্রশিক্ষণ প্রস্তুতিও সহজ। অথচ তুমি বসে আছ। এর চেয়ে নির্বুদ্ধিতা আর হতে পারে?
এই ফজিলত তো ফরজে কেফায়া অবস্থায়। অথচ আজকে জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ প্রত্যেক সক্ষম মুসলমানের উপর ফরজে আইন হয়ে রয়েছে।
অপর এক হাদিসে এসেছে
,رباطُ شَهرٍ خيرٌ من صيامِ دَهرٍ
‘এক মাস রিবাত করা (ইসলামী ভূখণ্ডের সীমানা পাহারা দেয়া) সারা জীবন রোজা রাখার চেয়ে উত্তম।’ [15]
সুতরাং এই ফজিলতসমূহ আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অনেক বড় দয়া ও অনুগ্রহ। শুধুমাত্র নির্বোধরাই এই ফজিলত থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
এরপর হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, ‘আমি আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি খায়বারে প্রাপ্ত গণিমত রেখে দিচ্ছি (এবং অবশিষ্ট সম্পদ সাদাকা করে দিচ্ছি) এবং আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ আমাকে সত্য বলার কারণে মুক্তি দিয়েছেন। এজন্য আমার তাওবা কবুল হওয়ার দাবী এটাও যে, আমি ভবিষ্যতে সর্বদা সত্যের উপর অবিচল থাকবো।’
এখানে তিনি নিজের উপর আল্লাহ তাআলার এই অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করছেন যে, আল্লাহ তাআলা তাঁকে সত্য বলার তাওফিক দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে এটা তাঁর প্রতি আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তাআলার মহান অনুগ্রহ ছিল এবং এই সততাই তাঁকে ধ্বংস এবং রববাদীর গর্ত থেকে রক্ষা করেছে। যার মাঝে অন্যরা পড়ে গিয়েছে। এইসব মিথ্যা প্রলাপকারীদের ব্যাপারে তো আল্লাহ তাআলা এমন কঠিন শব্দ ব্যবহার করেছেন যা অন্য কারো জন্য ব্যবহার করেননি। কেননা, এরা দ্বীনের সাহায্য ছেড়ে পিছনে বসেছিল। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সূরা তাওবার আয়াতসমূহ অবতীর্ণ করে তাদের অবস্থা, তাদের গুণাবলী কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছেন। এবং তাদের নিফাক, কপটতার গোপন রহস্য প্রকাশ করে দিয়েছেন। তাই এ সূরাকে চিন্তা-ফিকিরের সাথে পড়া চাই!
জিহাদের আয়াত সমূহ নিয়ে একটু ভাবুন
আপনাদের প্রত্যেকেই যেন কুরআনে হাকিম, বিশেষত জিহাদ ও যুদ্ধের আয়াতের সাথে কিছু সময় অতিবাহিত করে। তখন যেন লক্ষ্য করে, সে কি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তরিকার উপর আছে, নাকি তার তরিকা থেকে দূরে সরে জিহাদ ত্যাগকারীদের কাছে চলে গেছে এবং সর্বাবস্থায় নেক কাজের তাওফিক এবং মন্দ কাজ থেকে বাঁচার তাওফিক তো আল্লাহ তাআলারই পক্ষে হয়।
আল্লাহ তাআলা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য থেকে সর্তক করে বলেন,
وَإِذَا أُنْزِلَتْ سُورَةٌ أَنْ آَمِنُوا بِاللَّهِ وَجَاهِدُوا مَعَ رَسُولِهِ اسْتَأْذَنَكَ أُولُو الطَّوْلِ مِنْهُمْ وَقَالُوا ذَرْنَا نَكُنْ مَعَ الْقَاعِدِينَ
‘এবং যখন কোন সূরা অবতীর্ণ হয় এ মর্মে যে, আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন করো এবং তাঁর রাসূলের সঙ্গে জিহাদ কর তখন তাদের বিত্তবান লোকেরা আপনার কাছে (জিহাদে না যাওয়ার) অনুমতি চায় এবং বলে, আমাদেরকে ওজরগ্রস্তদের সাথে থাকতে দিন।’ [16]
বিত্তবান ভাইয়েরা! যাদের আল্লাহ তাআলা সম্পদ, সুস্থতা, শক্তি, বিবেক, দৃষ্টিশক্তি তথা সকল নিয়ামত দ্বারা ভূষিত করেছেন, তাদের উচিৎ জিহাদ ত্যাগকারীদের দলভুক্ত না হওয়া।
এরপর আল্লাহ তাআলা বলেন,
رَضُوا بِأَنْ يَكُونُوا مَعَ الْخَوَالِفِ وَطُبِعَ عَلَى قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لا يَفْقَهُونَ
“তারা পেছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথে থেকে যেতে পেরে আনন্দিত হয়েছে।“ [17]
এ সকল লোকেরা মহিলাদের সাথে বসে থাকতে পেরে সন্তুষ্ট হয়ে গেছে। অথচ মহিলাদের দায়িত্বে জিহাদ নাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মোবারকবাণী অনুযায়ী তাদের দায়িত্বে এমন জিহাদ রয়েছে যাতে অস্ত্র ব্যবহার লাগেনা অর্থাৎ, হজ্জ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের থেকে শুধুমাত্র ইসলামের উপর বাইয়াত নিয়ে ছিলেন। মহিলা এবং গোলামদের থেকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র ইসলামের উপর বাইয়াত নিতেন। পক্ষান্তরে স্বাধীন পুরুষদের থেকে ইসলাম এবং জিহাদ উভয়ের উপর বাইয়াত নিতেন। সুতরাং আপনিও যদি নিজের ঘরে বসে থাকেন তাহলে আপনার আর মহিলাদের মাঝে পার্থক্য কোথায়?
কোথায় সা’দ ও মুসান্না রাযি. এর উত্তরসূরিরা?
আরব ভূখণ্ডের প্রতিরক্ষার জন্য এবং সা’দ মুসান্নার উত্তরসূরিদের রক্ষার জন্য আমরা ইহুদী-খৃস্টানদের জাজিরাতুল আরবে নিয়ে এসেছি। এমনকি তাদের নারীদেরকেও নিয়ে এসেছি। তবে কি জাজিরাতুল আরবে কোন পুরুষ নেই? আল্লাহর শপথ! জাহিলিয়্যাতের যুগেও আমাদের পূর্বপুরুষরা এমন লাঞ্ছনা সহ্য করেনি। কিন্তু আজ আমরা সহ্য করে বসে আছি। অথচ আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ মহান দ্বীন ও সিরাতে মুস্তাক্বীম দ্বারা সম্মানিত করেছেন। উম্মাহর এ করুণ পরিণতি আল্লাহর কাছেই পেশ করছি। لا حولَ ولا قوَّةَ إلَّا باللهِ
মুমিন ও মুনাফিকদের অবস্থানের বৈপরীত্য!
মুনাফিকদের এ সকল বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করার দ্বারা আমাদের উদ্দেশ্য হলো, যেন আমরা তা থেকে বেঁচে থাকতে পারি। কুরআন হাকিমের মাঝে তাদের এই অবস্থা ‘রিযা’ সন্তুষ্টি শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করা হয়েছে। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন,
رَضُوا بِأَنْ يَكُونُوا مَعَ الْخَوَالِفِ وَطُبِعَ عَلَى قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لا يَفْقَهُونَ
“তারা পেছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথে থেকে যেতে পেরে আনন্দিত হয়েছে। এবং মোহর এতে দেওয়া হয়েছে তাদের অন্তরসমূহের উপর বস্তুত: তারা বোঝে না।“ [18]
অতঃপর সত্যিকার ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেন,
لَكِنِ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آَمَنُوا مَعَهُ جَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ وَأُولَئِكَ لَهُمُ الْخَيْرَاتُ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
“কিন্তু রাসূল এবং সেসব লোক যারা ঈমান এনেছে, তাঁর সাথে তারা যুদ্ধ করেছে নিজেদের জান ও মালের দ্বারা। তাদেরই জন্য নির্ধারিত রয়েছে কল্যাণসমূহ এবং তারাই মুক্তির লক্ষ্যে উপনীত হয়েছে।“ [19]
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জিহাদকারীদের সফলতা এবং তাদের পথ পদ্ধতিকে সঠিক হওয়ার সাক্ষী দিচ্ছেন। সুতরাং আপনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আসলাফদের অনুসারী হয়ে থাকলে আপনার পথও এটাই। যা উজ্জ্বল ও সুস্পষ্ট। এখানে মুমিনদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, পশ্চাতে উপবিষ্টদের সাথে বসে থাকার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যাওয়া।
অতঃপর আল্লাহ তাআলা সঠিক পথ বর্ণনা করে বলেন,
لَكِنِ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آَمَنُوا
‘কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং যারা তাঁর সাথে ঈমান এনেছে।’ [20]
অর্থাৎ, যদি আপনি মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আসলাফদের সত্যিকার অনুসরণকারী হন, তাহলে তাদের পথ জেনে নিন তারা নিজেদের সম্পদ ও জীবন দিয়ে জিহাদ করেছেন।
‘তারা নিজেদের সম্পদ, জীবন সহ জিহাদ করেছেন।’ [21]
পক্ষান্তরে মুনাফিকরা পশ্চাতে বসে রয়েছে, তাদের নফস তাদেরকে প্রতারণায় ডুবিয়ে রেখেছে এবং তারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের সাথে মিথ্যা বলেছে।
আমি জিহাদ থেকে পশ্চাতে বসে থাকা এবং মিথ্যা বলা, দুই গুনাহ একত্র করতে পারবো না
হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, তিনি এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলার নিকট কৃতজ্ঞ যে, তার সাথে সে আচরণ করা হয়নি যা মুনাফিকদের সাথে করা হয়েছে। যদি তিনিও অন্যদের মত মিথ্যা বলতেন তাহলে ধ্বংস হয়ে যেতেন।
ইতোপূর্বে যখন তাকে বলা হয়েছিল যে, কোন বাহানা পেশ করো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ক্ষমা দ্বারা তোমার ক্ষমা লাভ হয়ে যাবে। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমি জিহাদ থেকে পশ্চাতে বসে থাকা এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে মিথ্যা বলা, দুই গুনাহ একত্র করতে পারবো না।
এটা সেসব লোকদের জন্য চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্র, যারা শুধু জিহাদ থেকে পশ্চাতে বসে থাকিনি। বরং এর সাথে সরলমনা আল্লাহর বান্দাদেরকে জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ থেকে বাধা প্রদানের মত জঘন্য কাজ করছে! এরা নিজেরাও কৃপণতা করছে আবার অন্যদেরকে কৃপণতার দাওয়াত দিচ্ছে। এগুলো এমন ভয়ানক বৈশিষ্ট্য যার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা কঠোর নিন্দা করেছেন। মহান আল্লাহ তাআলার বাণী,
الَّذِينَ يَبْخَلُونَ وَيَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبُخْلِ
‘যারা (নিজেরাও) কার্পণ্য করে এবং অন্যদেরকে কার্পণ্যের নির্দেশ দেয়।’
কৃপণতা একটি বিপদ। যদি আপনি কৃপণতা কিংবা কাপুরুষতার রোগে আক্রান্ত হোন তাহলে আল্লাহ তাআলার কাছে নিজের গুনাহের ক্ষমা প্রার্থনা করুন। কিন্তু প্রশ্ন হলও এই, আপনি অন্যদেরকেও কার্পণ্যের হুকুম দেন কেন? লোকদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে না দিয়ে আপনার কি লাভ হবে? লোকেরা নিজেদের ‘দ্বীন’ রক্ষায় অগ্রসর না হলে আপনার কোন স্বার্থ হাসিল হবে? আসল কথা হচ্ছে, এই যুগটাই হল শয়তানের ছড়ানো সংশয় ও কুমন্ত্রণার। এদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّمَا ذَلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَاءَهُ فَلا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
‘প্রকৃত পক্ষে এই ব্যক্তি শয়তান, সে মুমিনদেরকে তার বন্ধুদের ভয় দেখায়। তাই তোমরা তাদের ভয় না করে আমাকে ভয় কর। যদি তোমরা মুমিন হেয় থাকো।’ [22]
আজও যদি মুষ্টিমেয় কয়েক হাজার লোক আল্লাহর রাহে খাঁটি নিয়তে জিহাদে বের হয় তাহলে আল্লাহর অনুগ্রহে জিহাদের প্রয়োজনীয়তা পূর্ণ হতে পারে। এবং এ কথা আমি মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ায় এই পথে এবং ময়দানে বিশ বছরের অধিক অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি। নিশ্চয় যাবতীয় অনুগ্রহ ও দয়া আল্লাহ তাআলারই পক্ষ থেকে।
নিজে বের হচ্ছিনা অন্যকেও বাধা দিচ্ছি
আজকের সমস্যা গুলোর মাঝে একটি জটিল সমস্যা হল, অনেক লোক ভিত্তিহীন ওজর আপত্তি পেশ করে। মূলত শয়তানই তাদের মস্তিষ্কে এসব অলিক কল্পনা ঢেলে দেয় এবং সেগুলোকে সুসজ্জিত করে দেখায়। এ জাতীয় লোককে সব সময় আপনি এক ধরনের বাহানা পেশ করতে দেখবেন। যেমন কখনো আপনাকে বলবে, যদি সবাই জিহাদে বেরিয়ে যায় তাহলে দ্বীনের অন্য কাজগুলো কে করবে। ফলস্বরূপ সাধারণ জনগণ এ সকল সংশয়ের শিকার হয়ে বসে থাকে। এ লোকেরা তাদের গুনাহের বোঝা বহন করেও মনে মনে ভাবতে থাকে যে, তারা নিজের উপর আরোপিত দ্বীনের নুসরাতের ফরজ দায়িত্ব আদায় করে ফেলেছে। অতএব, হে আল্লাহর বান্দারা! জিহাদ থেকে পশ্চাতে বসে থাকার সাথে জিহাদে বাধা প্রদান এবং এ পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার গুণাহ থেকে সাবধান হোন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
قَدْ يَعْلَمُ اللَّهُ الْمُعَوِّقِينَ مِنْكُمْ وَالْقَائِلِينَ لِإِخْوَانِهِمْ هَلُمَّ إِلَيْنَا وَلا يَأْتُونَ الْبَأْسَ إِلا قَلِيلًا
‘আল্লাহ তোমাদের মধ্যকার সেসব লোকদেরকে খুব ভাল করে জানেন যারা (তার পথে) প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।’[23]
সুতরাং আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তাআলা আমাদের অবস্থা সম্পর্কে ভালভাবে অবগত আছেন। অতএব, নিজের নফসের পরীক্ষা গ্রহণ করুন! সে কোথাও আপনাকে ধোঁকা দিচ্ছেনা তো। যেমন সাইয়্যেদুনা কা‘ব রাযি. এবং তার সাথীদের নফস তাদেরকে ধোঁকা দিয়েছিল।
হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলারই জন্য যিনি আমাকে সত্যের দিকে পরিচালিত করেছেন এবং আমাকে এ অনুগ্রহে ভূষিত করেছেন। ইসলাম গ্রহণের পর আমার প্রতি আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ হল, আমি মিথ্যা থেকে বেঁচে গেছি। নতুবা আমিও সেসব লোকদের মত ধ্বংস হয়ে যেতাম যারা মিথ্যা বলেছে এবং আল্লাহ তাআলা তাদের নিন্দা বর্ণনায় এমন কঠোর শব্দ ব্যবহার করেছেন যা অন্য কারো ক্ষেত্রে করেন নি।’
মিথ্যা বাহানা সৃষ্টি কারীদেরকে আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত কঠোর ভাবে শাস্তি দিয়ে থাকেন, সুতরাং ইরশাদ হয়েছে,
سَيَحْلِفُونَ بِاللَّهِ لَكُمْ إِذَا انْقَلَبْتُمْ إِلَيْهِمْ لِتُعْرِضُوا عَنْهُمْ فَأَعْرِضُوا عَنْهُمْ إِنَّهُمْ رِجْسٌ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
يَحْلِفُونَ لَكُمْ لِتَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنْ تَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنَّ اللَّهَ لا يَرْضَى عَنِ الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ
“যখন তোমরা তাদের কাছে (যুদ্ধ শেষে) ফিরে যাবে তখন তোমাদের সামনে আল্লাহর নামে শপথ করবে যাতে তোমরা তাদের থেকে পাশ কেটে যাও। সুতরাং তোমরা তাদেরকে পাশ কেটে যাও, নিঃসন্দেহে তারা অপবিত্র এবং তাদের ঠিকানা জাহান্নাম তাদের কর্মের প্রতিফলস্বরূপ। এরা তোমাদের সামনে শপথ করবে যাতে তোমরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাও। তোমরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেও আল্লাহ তো অবাধ্য সম্প্রদায়ের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন না।“ [24]
এই হাদিসে কা‘ব বিন মালেক রাযি. নিজের ভুল স্বীকার করেছেন। অতএব নিজেকে যাচাই করার এবং আত্ম সংশোধন করে সঠিক পথে ফিরে আসার ক্ষেত্রে তিনি আমাদের আদর্শ। তিনি আমাদের মাপকাঠি।
ঈমান, জিহাদ এবং সততা ঈমানদারদের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য
সামনে আল্লাহ তাআলা উম্মাহর আসলাফদের আদর্শ বর্ণনা করে বলেন,
لَكِنِ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آَمَنُوا مَعَهُ جَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ وَأُولَئِكَ لَهُمُ الْخَيْرَاتُ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
“কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং যারা তাঁর সাথে ঈমান এনেছে, তাঁরা জিহাদ করেছে।“ [25]
ঐ সময় জিহাদ থেকে শুধুমাত্র সেই মরুবাসী বেদুইনরাই পিছনে থাকত যাদের দ্বীনের কোন বুঝ ছিল না। কিন্তু তারা নিজেদের ব্যাপারে ধারণা রাখতো যে, তারা মুমিন। সুতরাং যখন তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে অনুগ্রহ প্রকাশের ছলে বলল, আমরা ঈমান নিয়ে এসেছি। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন,
قَالَتِ الْأَعْرَابُ آَمَنَّا قُلْ لَمْ تُؤْمِنُوا وَلَكِنْ قُولُوا أَسْلَمْنَا وَلَمَّا يَدْخُلِ الْإِيمَانُ فِي قُلُوبِكُمْ وَإِنْ تُطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ لا يَلِتْكُمْ مِنْ أَعْمَالِكُمْ شَيْئًا إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
“মরুবাসীরা বলে যে, আমরা ঈমান নিয়ে এসেছি। বলে দিন, তোমরা ঈমান আনয়ন করনি। বরং বলও, আমরা (বাহ্যিক ভাবে) অনুগত হয়েছ। অথচ এখনো তোমাদের অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি।“ [26]
পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের গুণাবলি এবং তাদের অবস্থা বর্ণনা করে বলেন,
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آَمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ
“মুমিন তো সেসব লোক, যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর ঈমান আনয়ন করে অতঃপর কোন সংশয়ে পড়েনা এবং আল্লাহর পথে নিজের সম্পদ ও জীবন দিয়ে জিহাদ করে। তারাই ঈমানে সত্যবাদী।“ [27]
আল্লাহু আকবার! বিবেকবানদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। যদি কেউ মুমিন হতে চায়, তবে তো আল্লাহ তাআলা তার সামনে তার ঈমানের বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট করে দিয়েছে। তা হচ্ছে, আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি সংশয়হীন ঈমান ও বিশ্বাস এবং সম্পদ ও জীবন দিয়ে তাঁর পথে জিহাদ। জিহাদের পরই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সততার কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এটাই সেই বৈশিষ্ট্য যার বদৌলতে হযরত কা‘ব রাযি. এর মুক্তি লাভ হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুবারক বাণী,
فإن الصدق يهدي إلى البر،وإنَّ البرَّ يهدي إلى الجنةِ وإنه يعني الرجلَ ليصدقُ ويتحرى الصدقَ حتى يُكتبَ عندَ اللهِ صدِّيقًا
নিশ্চয় সত্য কথা মানুষকে সৎকর্মের দিকে নিয়ে যায়। আর সৎকর্ম তাকে জান্নাতে নিয়ে যায়। মানুষ যখন সত্য কথা বলতে থাকে এবং সত্য বলতে সন্ধানী হয়। তখন, এক সময় সে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী বলে গণ্য হয়। [28]
অতএব, সততার হাতল মজবুত ভাবে আঁকড়ে ধরুন! এবং অবাধ্যতা ও পাপাচার থেকে দূরে থাকুন! দয়াময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি আমাদেরকে সততার বৈশিষ্ট্য দান করুন। এবং আমাদেরকে সত্যবাদীদের দলভুক্ত করুন!
মানুষের দেখাদেখি নিজের আখেরাত নষ্ট করবেন না
আমি আমার সকল মুসলমান ভাইকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই হাদিস দ্বারা নসিহত করবো,
لا تكونوا إمَّعةً تقولون إن أحسَن النَّاسُ أحسنَّا وإن ظلموا ظلمنا
তোমরা অন্ধ অনুসারী হয়ে এমন বলা শুরু করনা, যদি মানুষ ভাল হয় তাহলে আমরাও ভাল হয়ে যাব আর যদি মানুষ মন্দ চরিত্রের অধিকারী হয় তাহলে আমরাও মন্দ চরিত্র গ্রহণ করবো।’ [29]
কেয়ামতের দিন আপনাকে একাকী উঠানো হবে। কবরে আপনি একাকী থাকবেন এবং আল্লাহর দরবারে হিসাবের জন্যও আপনাকে একাকী সম্মুখীন হতে হবে। ঐ সময় যখন আপনাকে দ্বীনের নুসরাতের জন্য জিজ্ঞাসা করা হবে তখন আপনি কি জবাব দিবেন?
আল্লাহ তাআলার বাণী,
إِنَّمَا السَّبِيلُ عَلَى الَّذِينَ يَسْتَأْذِنُونَكَ وَهُمْ أَغْنِيَاءُ رَضُوا بِأَنْ يَكُونُوا مَعَ الْخَوَالِفِ وَطَبَعَ اللَّهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لا يَعْلَمُونَ
“তিরস্কার তো সেসব লোককে করা হবে যারা সম্পদশালী হয়েও আপনার কাছে অনুমতি চায়। তার এতে সন্তুষ্ট হয়ে গেছে যে, পশ্চাতে উপবিষ্টদের সাথে বসে থাকবে এবং আল্লাহ তাদের অন্তঃকরণে মহর এঁটে দিয়েছেন ফলে তারা বোধ শক্তি রাখে না।“ [30]
আজ উম্মাহর বিপদ হলো তারা আজ কয়েক দশক ধরে জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ ছেড়ে বসে আছে। হে আল্লাহর বান্দাগণ! আল্লাহর পথে বেরিয়ে পড়ুন। নেক ও পূণ্যের কাজে প্রতিযোগিতার সাথে এগিয়ে চলুন। অন্ধকার রাত্রির মত ফেতনা ছড়িয়ে পড়েছে। অতএব সুযোগকে গনিমত হিসাবে গ্রহণ করুন। জান্নাতের খোলা দরজার দিকে দ্রুত বেগে ছুটে চলুন। নবীজি কি চমৎকার করে বলেছেন,
إنَّ السيفَ محَّاءُ الخطايا،
‘নিশ্চয় তরবারি পাপসমুহ মুছে দেয়।’
শহীদের সব কিছু ক্ষমা করে দেওয়া হয় ঋণ ছাড়া। সুতরাং সেই মহা মানবের অনুসরণ করুন। যাকে প্রেরণ করা হয়েছে আমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার জন্যে। আমাদের ইলমের উৎস কি তাঁর ইলমের ঝরণা ধারা নয়? জিবরাইল আ. তাঁর কাছে কোন ভাষায় ওহী নিয়ে আসতেন? সুস্পষ্ট আরবি ভাষায়ই তো নিয়ে আসতেন। আল্লাহ কি আমাদেরকে আরবি বোঝার শক্তি দান করেন নি? তবে তাঁর কাছে আর কি ওজর পেশ করব।
সহীহাইনের হাদিসে চিরসত্য ও সত্যায়িত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কসম খেয়ে বলেছেন,
والَّذي نفسي بيدِه لولا أنْ أشُقَّ على المسلِمين ما قعَدْتُ خَلفَ سَريَّةٍ تغزو في سبيلِ اللهِ
ঐ সত্তার শপথ! যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ। যদি মুসলমানদের উপর (প্রতিটি যুদ্ধে যাওয়া) কষ্টকর মনে না করতাম। তবে আমি আল্লাহর রাস্তায় প্রেরিত কোন সেনাদল থেকে কখনই পিছে থাকতাম না। [31]
আপনি কি এই সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন কথা বোঝার যোগ্যতা রাখেন না? সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার কসম করে বলেছেন যে, উম্মাহর জন্য কষ্ট মনে না করলে, তিনি কখনো আল্লাহর রাহে কোন যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে থাকতেন না। অথচ আজ উম্মাহর অবস্থা হল, যেন তারা জিহাদের চেয়েও কোন শ্রেষ্ঠ কাজে ব্যস্ত রয়েছে!
অতীতে যখনই কোন রণক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে উলামায়ে কেরাম জিহাদ ফরজ হওয়ার ফতওয়া প্রদান করেছেন। রাশিয়া যখন আফগানিস্তানে হামলা করে বসে, তখন উম্মাহর উলামাদের একটি বিরাট সংখ্যা জিহাদ ফরজ হওয়ার ফতওয়া প্রকাশ করেছে। এরপর আপনার নিকট বের না হওয়ার কি প্রমাণ রয়েছে? কি দলীল আপনার কাছে রয়েছে? এটা শুধু নফসের ধোঁকা! নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো একথা বলেছেন যে, ‘ঐ সত্তার কসম যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ! যদি মুসলমানদের উপর প্রতিটি যুদ্ধে যাওয়া কষ্টকর মনে না করতাম, তাহলে আমি আল্লাহর পথে কোন যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে থাকতাম না।’
এটা কিভাবে সম্ভব যে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুহব্বত-ভালবাসা এবং আনুগত্যের দাবী করবে কিন্তু আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য কখনো বের হবেনা
জিহাদের মাসআলা মুজাহিদ ওলামাগণকে জিজ্ঞাসা করা উচিৎ
এ যুগে যখন জিহাদ ফরজে আইন হয়ে রয়েছে। তখন কিভাবে আমরা এমন আলেম থেকে জিহাদের বুঝ পেতে পারি যে নিজেই হাত গুটিয়ে বসে আছে? শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. একজন আলেমে রাব্বানী এবং মুজাহিদ ফী সাবীলিল্লাহ ছিলেন। তিনি স্বয়ং তাতারিদের বিরুদ্ধে জিহাদে অংশ গ্রহণ করেছেন। তিনি ফিকহুল জিহাদ (বা জিহাদের মাসআলা অনুধাবন) প্রসঙ্গে বলেন,
الواجب أن يُعتبر في أمور الجهاد برأي أهل الدين الصحيح الذين لهم خبرة بما عليه أهل الدنيا دون أهل الدنيا الذين يغلب عليهم النظر في ظاهر الدين؛ فلا يؤخذ برأيهم ولا برأي أهل الدين الذين لا خبرة لهم في الدنيا
‘আবশ্যকীয় কর্তব্য হল যে, জিহাদের বিষয়ে কেবল সেই সত্যিকার আলেমদের মতামতকে গ্রহণ করা হবে যারা দুনিয়াদারদের সমসাময়িক অবস্থা সম্পর্কে সম্যক অভিজ্ঞতা রাখে। সেই সকল দুনিয়াদার লোকদের (বুদ্ধিজীবী) মতামত গ্রহণ করা হবে না, যারা দ্বীনের ব্যাপারে ভাসাভাসা জ্ঞান রাখে এবং সেসব আলেমের মতামতও গ্রহণ করা হবে না। যারা দ্বীনের বুঝ রাখে। কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে কোন ধারনা রাখে না।’ [32]
আপনাদের সামনে এর একটি সহজ উদাহরণ পেশ করছি, শুধু তর্কের খাতিরে কিছু তর্কবাজ আলেম বলে, ‘বর্তমানে আমরা আমেরিকা ও তার সেনাবাহিনীর সাথে মোকাবেলার সামর্থ্য রাখি না। তাই বর্তমানে জিহাদ ফরজ না।’ এমন ফতোয়া দেওয়ার কারণ হচ্ছে, সে মুফতি হওয়ার আবশ্যকীয় শর্তাবলীর ধারে কাছেও নেই। একজন মুফতির অপরিহার্য শর্ত হলো, দ্বীনের গভীর বুঝ থাকার সাথে সাথে সমসাময়িক পরিস্থিতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা রাখা। একথা বিজ্ঞ আলেমগণ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। যেমন ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহ. তার জগত বিখ্যাত গ্রন্থ “اعلام الموقعين ” এ বলেন,
‘মুফতি এবং বিচারকদের জন্য আবশ্যক হলো, তারা প্রকৃত ঘটনা নিরীক্ষণ করবেন। ঘটনার বিভিন্ন আলামত ও লক্ষণ অনুসন্ধান, এরপর তা যাচাই করে ঘটনার ফলাফল বের করা। অতঃপর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হল, তার সেই অবস্থা ও ঘটনা প্রসঙ্গে ফিকহুল ওয়াজিব জানা থাকা, অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সেই বিধান সম্পর্কে জ্ঞান থাকা যা এই ঘটনার উপর প্রয়োগ হবে। মোটকথা, এসব বিষয়ের উপস্থিতির পরই তিনি ফতওয়া দিবেন।’
আগে জিহাদের ময়দানে আসুন পরে ফতওয়া দিন
আপনি বর্তমানে চলমান লড়াইসমূহে কখনো অংশগ্রহণ করেননি। আপনি জানেন না কিভাবে কাফেরদের দাপট চূর্ণ করতে হয়। কিভাবে পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নকে কিছু হালকা অস্ত্র দিয়ে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে অল্প সংখ্যক আল্লাহ বিশ্বাসী যারা আল্লাহর উপর ভরসা করে। আল্লাহর কাছে যা আছে তা সবকিছু থেকে শ্রেষ্ঠ বলে বিশ্বাস করে এবং তারা বিশ্বাস করে, আল্লাহর সাথে তাদের মিলিত হতে হবে।
সুতরাং এসকল লোক ফতোয়ার অত্যাবশ্যকীয় শর্তাবলীর পূর্ণতা ছাড়াই ফতোয়া দিয়ে যাচ্ছে। এরা আপনাকে বলবে, যুবকদের সংখ্যা কম। আমরা অস্ত্রের ব্যবহার ভালভাবে জানিনা। এবং আমাদের কাছে পর্যাপ্ত অস্ত্রও নেই। হে আল্লাহর বান্দারা! এসকল মাসআালায় তো আপনাদের মতামতের কোন গ্রহণযোগ্যতাই নেই! ফতওয়া দেওয়া তো অনেক ভারী দায়িত্ব। কিন্তু জিহাদের মূল রহস্য জানা ও কোন ধরনের কার্যত অভিজ্ঞতা ছাড়াই জিহাদের বিষয়ে ফতোয়া দিচ্ছেন?
সহীহ হাদিসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এক সাহাবী কোন এক সম্প্রদায়ের নিকট গেলেন। তাঁর মাথায় বড় ধরনের জখম ছিল এবং এ অবস্থায় তার স্বপ্নদোষ হয়। তিনি এই মাসআলার হুকুম জিজ্ঞাসা করলে ঐ লোকেরা বলল, তোমার জন্য গোসল করা আবশ্যক। তারা ফতওয়া দিল, অথচ এ বিষয়ে না তাদের শরয়ী জ্ঞান ছিল, না তারা অসুস্থের প্রতি লক্ষ্য করেছে। যখন সেই সাহাবী গোসল করলেন তখন সাথে সাথে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এ সংবাদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট পৌঁছলে তিনি বললেন, ‘قتلوه, قتلهم الله’ ‘তারা তো তাকে হত্যা করেছে, আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুন।’ [33]
ভুল ফতোয়া দিয়ে কে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তারা তাকে হত্যা করেছে, আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুন। তবে সেই ব্যক্তির অবস্থা কেমন হবে, যে ফতোয়া দিচ্ছে জিহাদ ফরজে আইন হয়নি। অথচ বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় আমাদের লক্ষ লক্ষ মা বোনদের ইজ্জত-আব্রু লুণ্ঠিত হয়েছে। চেচনিয়ায় আমাদের শত সহস্র ভাইকে পিষে ফেলা হয়েছে ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান দিয়ে। ইন্দোনেশিয়ায় আমাদের ভাইদের মসজিদে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। ফিলিস্তিনে আমাদের অসহায় নারী-শিশু ইহুদীদের হাতে নিকৃষ্ট মত নির্যাতনের শিকার আর সে বসে বসে ফতোয়া দিচ্ছে জিহাদের শর্ত পাওয়া যায়নি।
أنّ نظرت إلى الإسلام في بلد
تجـده كالطيـر مقصوصـا جناحـاه
আজ তুমি যে ভূখণ্ডেই ইসলামের খবর নেবে
সেখানেই পাবে তাকে ডানা কর্তিত পাখি রূপে।
জিহাদে গড়িমসি করার উপর আল্লাহর ভর্ৎসনা
আমি এ বরকতময় হাদিসের আলোচনা শেষ করব একটি আয়াত উল্লেখ করে। যেখানে আল্লাহ তাআলা কিছু সাহাবীদের ভর্ৎসনা করেছেন। যখন তারা জিহাদের ব্যাপারে গড়িমসি করছিলেন। অথচ মক্কায় নির্যাতিত অবস্থায় সাহাবায়ে কেরাম জিহাদের আবেদন করেছিলেন। কারণ, তারা ভালো করে জানতেন, কাফেরদের জবাব দিতে না পারলে তাদের নিঃস্ব করে ফেলবে।
তাদের আবেদন, এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে অপেক্ষা করতে বলেছেন এবং সংযত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এবং তাদের বলেন, আমি এখনো যুদ্ধের আদেশপ্রাপ্ত হয়নি।
অতঃপর যখন তাদের উপর জিহাদ ফরজ করা হল। তখন কিছু সাহাবী গড়িমসি করতে লাগলেন। তাই আল্লাহ তাআলা তাদের সম্বন্ধে বলেন,
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ قِيلَ لَهُمْ كُفُّوا أَيْدِيَكُمْ وَأَقِيمُوا الصَّلاةَ وَآَتُوا الزَّكَاةَ فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ إِذَا فَرِيقٌ مِنْهُمْ يَخْشَوْنَ النَّاسَ كَخَشْيَةِ اللَّهِ أَوْ أَشَدَّ خَشْيَةً وَقَالُوا رَبَّنَا لِمَ كَتَبْتَ عَلَيْنَا الْقِتَالَ لَوْلا أَخَّرْتَنَا إِلَى أَجَلٍ قَرِيبٍ قُلْ مَتَاعُ الدُّنْيَا قَلِيلٌ وَالْآَخِرَةُ خَيْرٌ لِمَنِ اتَّقَى وَلا تُظْلَمُونَ فَتِيلًا
“আপনি কি তাদের দেখেননি, যাদেরকে (জিহাদের আবেদন করার কারণে) বলা হয়েছিল, নিজেদের হস্ত সংযত রাখ। নামাজ কায়েম কর এবং যাকাত আদায় কর। পরবর্তীতে যখন তাদের উপর জিহাদ ফরজ করা হল। তখন তাদের একটি দল মানুষকে আল্লাহর মত ভয় করতে লাগল অথবা তার চেয়ে বেশী। আর বলতে লাগল, হে আমাদের রব! কেন আমাদের উপর জিহাদ ফরজ করলেন। কেন আমাদেরকে আরো কিছু কাল সময় দিলেন না।“ [34]
আল্লাহর বান্দাগণ! কিছু সাহাবায়ে কেরামের ব্যাপারে যদি এমন কঠিন তিরস্কার আসতে পারে, তাহলে আমাদের অবস্থা কেমন হবে? তাই আল্লাহকে ভয় করুন। নিজের হিসাব নিন। রাসূলের সোহবতপ্রাপ্ত লোকদের ব্যাপারে এমন ধমকি, তবে আমরা কিভাবে নিশ্চিন্তে বসে থাকতে পারি দ্বীনের সাহায্য ছেড়ে?
এটা নিশ্চিত নফসের ধোঁকা। পার্থিব জীবনের চাহিদা। তুমি কিসের আশা করছ। কিসের জন্যে বিলম্ব করছ। দুনিয়ার প্রয়োজন কখনো শেষ হয় না। বরং মানবীয় চাহিদা জীবনের চেয়েও দীর্ঘ হয়।
গড়িমসির কারণ দুনিয়ার ভালোবাসা ও মৃত্যুকে অপছন্দ করা
এরপর আল্লাহ তাআলা এই রোগের চিকিৎসা বর্ণনা করে বলেন,
قُلْ مَتَاعُ الدُّنْيَا قَلِيلٌ وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ لِمَنِ اتَّقَى وَلَا تُظْلَمُونَ فَتِيلًا
“বলুন, পার্থিব ভোগ বিলাস অতি অল্প। আর যে তাকওয়া অবলম্বন করে তার জন্য পরকালই উত্তম। এবং তোমাদের প্রতি সামান্য জুলুম করা হবেনা।’
আল্লাহ তাআলা তাদের সামনে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, জিহাদে গড়িমসির মূল কারণ হচ্ছে, নফসের কুমন্ত্রণা। যার সম্পর্ক এই নগণ্য ভোগ সামগ্রীর সাথে। এবং বলেন, এই ভোগ সামগ্রী বেশী নয়। অল্প কিছু মাত্র। এরপর তাদেরকে চিরস্থায়ী কল্যাণের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
অতঃপর আল্লাহ তাআলা সিদ্ধান্তমূলক ভঙ্গিতে তাদেরকে সর্তক করে দিয়েছেন যে,
أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِكُكُمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنْتُمْ فِي بُرُوجٍ مُشَيَّدَةٍ
‘তোমরা যেখানেই থাকনা কেন মৃত্যু তোমাদের আসবেই, যদিও তোমরা মজবুত দুর্গে অবস্থান কর না কেন।’ [35]
শয়তান তোমাকে ধোঁকা দিবে। তোমাকে তার বন্ধুদের ভয় দেখাবে। তোমাকে বলবে, জিহাদে গেলে মারা পড়বে। তাই বসে থাক। এর জবাবে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাকনা কেন মৃত্যু তোমাদের আসবেই, যদিও তোমরা মজবুত দুর্গে অবস্থান কর না কেন।’ আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করি, তিনি মুমিনদের বক্ষকে জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর জন্য উন্মুক্ত করে দিন এবং আমাদের সকলকে সব বিষয়ে নবীয়ে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মানহাজে চলার এবং তাঁর সকল সুন্নাতের অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন।
সাইয়্যেদুনা জাফর রাযি. এর কবিতা
পরিশেষে, আমি নিজেকে এবং সকল মুসলমানকে কতিপয় কবিতার মাধ্যমে উৎসাহিত করতে চাই, যাতে আমরা এই পথে পূর্ণ একাগ্রতার সাথে লেগে থাকি। সাহাবায়ে কেরাম রাযি. যুদ্ধের ময়দানে কবিতা আবৃতি করতেন। এগুলোর মাঝে হযরত জাফর রাযি. এর কয়েকটি কবিতা রয়েছে। তাঁর অন্তর এই কবিতা আবৃতি করে সেসব কিছুই দেখত যা হযরত আনাস বিন নাদার রাযি. উহুদের যুদ্ধে দেখেছেন। সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, হযরত আনাস রাযি. হযরত সাদ ইবনে মুয়াজ রাযি. কে বললেন,
واها لريح الجنة أجده دون أحد
‘হে সাদ! কি চমৎকার ……. এই তো জান্নাতের সুঘ্রাণ! আমি তা উহুদের পাদদেশ থেকে উপলব্ধি করছি।’ [36]
তিনি তখনও মদিনায়ই ছিলেন। কিন্তু ঈমানের দৃঢ়টা ছিল এমন যে, তিনি জান্নাতের সুঘ্রাণ শুকে ফেলেছেন। মুতার যুদ্ধে যখন লোকেরা যুদ্ধের রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়ল তখন তরবারির ঝন-ঝনানি এবং ধুলা-বালির অন্ধকারে হযরত জাফর রাযি. বিশ্বাসের নূরে নূরান্বিত হয়ে এই কবিতা গুলো আবৃতি করতে লাগলেন,
يا حبذا الجنة واقترابها
طيبة وبارد شرابها
والروم روم قد دنا عذابها
علي ان لاقيتها ضرابها
নয়নাভিরাম জান্নাত এবং তাঁর নৈকট্যের কথা আমি কি বলব এবং তার ঠাণ্ডা সুপেয় পানীয়ের কি বা বর্ণনা দিব
এখন রোমকদের উপর শাস্তি আপতিত হওয়ার সময় হয়ে গেছে
আমি তাদেরকে নির্ভয়ে ও নিঃসঙ্কোচে আক্রমণ করতেই থাকব অতঃপর
তাদেরকে খুঁজে খুঁজে প্রহার করতে থাকবো।
সাইয়্যেদুনা আসেম বিন ছাবিত রাযি. এর কবিতা
সাইয়্যেদুনা আসেম বনি ছাবিত ইবনে আকদাহ রাযি. যখন দাওয়াত ও তাবলীগের উদ্দেশ্যে হুযাইল গোত্রের শাখা বনী লাহইয়ানের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন বনু লাহইয়ানের লোকেরা তাঁকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। তাঁরা দশজন ছিলেন, এর বিপরীতে লাহইয়ানের লোকেরা প্রায় একশত ছিল। বনু লাহইয়ানের লোকেরা তাঁকে বলল, তোমরা নিজেদেরকে আমাদের কাছে সপে দাও,
হযরত আসেম রাযি. বললেন যে,
‘আমি নিজেকে কোন কাফেরের আশ্রয়ে দিতে পারি না।’
তারা তাঁকে জীবিত পাকড়াও করার চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু আসেম রাযি. অস্বীকার করতে থাকেন এবং কবিতা আবৃতি করতে থাকেন।
ما علتي وأنا جَلْدُ نابل * والقوس فيها وتر عنابل
تزل عن صفحتها المعابل * الموت حق والحياة باطل
إن لم أقاتلكم فأمي هابل
আমার যুদ্ধ করতে কি অন্তরায় আছে
অথচ আমি বীর বাহাদুর এবং সুদক্ষ তীরন্দাজ,
মৃত্যু সত্য এবং এই ক্ষণস্থায়ী জীবন মিথ্যা,
যদি আমি তোমাদের সাথে যুদ্ধ না করি তাহলে এই জীবন কিসের জন্য?
আল্লাহ তাআলা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই সকল সাহাবীদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান!
নিজেদের পবিত্র ভূখণ্ডগুলোর আযাদীর জন্য জেগে উঠুন!
আজ আমাদের পবিত্র ভূখণ্ডগুলো ইহুদী ও খৃষ্টানরা দখল করে আছে। বস্তুত যার অন্তরে ঈমানের হালকা ঝলকও বাকী রয়েছে, এই পরিস্থিতিতে সে নিশ্চিন্তে বসে থাকতে পারে না।
আমি আমার আলোচনার সমাপ্তি টানবো ইহুদী ও খৃষ্টানদের দ্বারা বেষ্টিত বাইতুল মুকাদ্দাস এবং বাইতুল্লাহ সম্পর্কিত এই কবিতা আবৃতির মাধ্যমে,
أهالي فلسطين احتسوا أكؤس الشجى *** وجرح حجاز فيك ما عاد يضمر
وليس بنو الإسلام إلا نجائب *** لفقدك أضنتها المصيبة ضمر
ولكنهم رغم الجراح يقينهم *** بعودة أمجاد الخلافة يكبر
وقد أقسموا بالله أن جهادهم *** سيمضي ولو كسرى تحدى وقيصر
ফিলিস্তিন কবে থেকে খুনের ঢোক গিলছে হিজাযের জখম তো এখনও আমাদের হৃদয়ে লেগে রয়েছে ইসলামের প্রতিটি সন্তান আত্মসম্মান ও আত্মমর্যাদার প্রতীক এবং এসব জখমের চিন্তা তাদের নিদ্রা হারাম করে রেখেছে
কিন্তু জখম স্বত্বেও খিলাফার পূণঃপ্রতিষ্ঠার উপর তাদের বিশ্বাস অটল অবিচল
তারা আল্লাহর নামে শপথ করে ফেলেছে যে,
তাদের জিহাদ অব্যাহত থাকবে চাই কিছরা চোখ রাঙিয়ে তাকাক কিংবা কায়ছার মোকাবেলায় এসে যাক।
আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করি যে, তিনি যেন আমাদের শহীদদের কবুল করে নেন!
আমাদেরকে যেন তাঁর পথে নিহত হওয়ার সৌভাগ্য দান করেন যাতে তাঁর কালিমা সুউচ্চ হয়!
এই উম্মাহকে যেন হেদায়েত ও কল্যাণের এমন একটি পরিবেশ দান করেন, যেখানে তার অবাধ্যরা অপমানিত হবে এবং তার অনুগত বান্দারা হবে সম্মানিত।
যে যুগে কল্যাণের আদেশ দেয়া হবে এবং অকল্যাণ ও মন্দ থেকে বাধা দেয়া হবে! নিশ্চয়ই তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
হে আল্লাহ! আমরা আপনার নিকট হেদায়েত, তাকওয়া এবং দুনিয়া থেকে অমুখাপেক্ষীতার ফরিয়াদ করছি!
হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান করুন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান করুন! আমীন
اللهم صل وسلم وبارك على سيدنا محمد، و على آله و صحبه أجمعين.
و آخر دعوانا أَنِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعالَمِين.
****************
وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ ﴿آلعمران: ١٦٩﴾
আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত। (৩: ১৬৯)
[1] সূরা আলে-ইমরান: ১০২
[2] সূরা তাওবা: ৮১
[3] সূরা তাওবা: ৮১
[4] সুনানে তিরমিযী: ২৪৪০
[5] মুসলিম
[6] বুখারী
[7] বুখারী
[8] সূরা তাওবা: ৯০
[9] সূরা আল ফাতহ: ২৯
[10] মুসলিম
[11] বুখারী
[12] সূরা হুদ: ১১৩
[13] সূরা রুম – ২১
[14] কানযুল উম্মাল-১০৬০৯
[15] কানযুল উম্মাল: ১০৫১২
[16] সূরা তাওবা: ৮৬
[17] সূরা তাওবা: ৮৭
[18] সূরা তাওবা: ৮৭
[19] সূরা তাওবা: ৮৮
[20] সূরা তাওবা: ৮৮
[21] সূরা তাওবা: ৮৮
[22] সূরা আলে-ইমরান: ১৭৫
[23] সূরা আহযাব: ১৮
[24] সূরা তাওবা – ৯৫, ৯৬
[25] সুরা তাওবা: ৮৮
[26] সূরা হুজুরাত: ১৪
[27] সূরা হুজুরাত: ১৫
[28] সহীহুল মুসলিম; বাবুল বির্রি ওযাস সিলাত ওয়াল আদাব, ৪৭২১
[29] সুনানুত তিরমিযী; কিতাবুল বির্রি ওয়াস সিলাতি. বাবু মাজাআ ফিল ইহসান ওয়াল আফও
[30] সূরা তাওবা – ৯৩
[31] সহীহুল বুখারী; কিতাবুল জিহাদ, মুসলিম; কিতাবুল ইমারাহ
[32] আল ফতওয়া আল কুবরা, কিতাবুল জিহাদ। খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৪০
[33] আবু দাউদ
[34] সূরা নিসা: ৭৭
[35] সূরা নিসা: ৭৮
[36] মুসলিম