পথভ্রস্ট খাওয়ারিজ আই এসের একটি অসার বক্তব্যের খন্ডন
শায়খ আবদুল্লাহ আল মুহাইসিনি
পথভ্রষ্ট খাওয়ারিজদের যুক্তি “IS হক্ব কারণ শত্রুরা তাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে!”
খন্ডন করছেন – শাইখ আব্দুল্লাহ আল-মুহাইসিনি হাফিজাহুল্লাহ
.
জামাতুল বাগদাদির সদস্য এবং সমর্থকরা বলেঃ
আইসিস যদি হক্বের উপর না থাকে, তাহলে কেন আল্লাহ-স শত্রু কুফফার আইসিসের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে। ওয়ারাকা বিন নাওফাল, রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলেছিলেনঃ “ তুমি যে ধরণের বাণী পেয়েছো, এ ধরণের বাণী যখনই কেউ পেয়েছে, তার সাথে শত্রুতা করা হয়েছে”
.
এই বিভ্রান্তির জবাবঃ
১। প্রথমত এরকম একটি বিভ্রান্তিকে হক্বপন্থি হওয়া বা মানহাজের সঠিক কিম্বা ভুল হবার স্বপক্ষে দালীল হিসেবে উপস্থাপন করা প্রকৃতপক্ষে জামাতুল বাগদাদীর বিচ্যুতি, বিভ্রান্তি, খাহেশাতের অনুসরণ, এবং অসুস্থ হৃদয়সমূহের পরিচায়ক।আল্লাহ্* আযযা ওয়া জাল বলেছেনঃ
তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট, সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে, তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর।[আলে ইমরান, আয়াত ৭]
আইশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেছেনঃ
“যদি তুমি সেসব লোকেদের দেখতে পাও যারা মুতাশাবীহাত [সংশয়পূর্ণ রূপক আয়াত] অনুসরণ করে, তাহলে বুঝবে এরাই সেসব লোক যাদের ব্যাপারে আল্লাহ্* আমাদের সতর্ক করেছেন।“
কুর’আন-সুন্নাহ এবং সালাফদের মানহাজের ভিত্তিতে কে হক্বপন্থী আর কে বাতিলপন্থী তা বিচার করা হয়। জামাতুল বাগদাদির বাতিল হওয়া শারীয়াহ দ্বারা প্রমাণিত, তাই এধরণের হাজার “প্রমাণ” তাদের কাজে আসবে না।
২। দ্বিতীয়ত, শত্রুতা কখনো সত্য বা মিথ্যার প্রমাণ, পরিচায়ক বা মাপকাঠি হতে পারে না। যদি শত্রু সংখ্যা কারো সত্য হবার প্রমাণ হতো, তাহলে তো গাদ্দাফি বিরাট হক্বপন্থী ছিল। সারা পৃথিবী তার বিরুদ্ধে শত্রুতার ঘোষণা করেছিলম এবং তাকে উৎখাত করেছিল।
এরকম আরো অনেক উদাহরণ আছে, এরকম আরো অনেক দল আর ব্যক্তি আছে যাদের বিরুদ্ধে অনেক শত্রু একত্রিত হয়েছিল, কিন্তু সেটা তাদের হক্বপন্থি বানিয়ে দেয় নি। সুতরাং যাদের বিরুদ্ধে শত্রুতা ঘোষণা করা হয় তারা সবাই হক্বপন্থি না। তবে সকল হক্বপন্থিকে নিঃসন্দেহে শত্রুতার মুখোমুখি হতে হয়।
৩। তৃতীয়ত, ওয়ারাকা বিন নাওফালের বক্তব্যের অর্থ এই না যে, নিজেকে হক্ব প্রমাণ করার জন্য একজন ব্যক্তির উচিৎ সবার সাথে শত্রুতা শুরু করা। একমাত্র আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কথার অনুসরণের মাধ্যমে কারো সত্যের উপর থাকা প্রমাণিত হয়।
পবিত্র রক্তকে সম্মান করা, এবং মুসলিমদের উপর তাকফির করা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমেই সত্যের উপর চলার প্রমাণ পাওয়া যায়। খন্দকের যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ হুযাইফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছিলেনঃ
“তাদেরকে [শত্রুদের] উসকে দিয়ো না।“
তার মানে কি রাসূলুল্লাহ ﷺ সত্যের উপর ছিলেন না?! [জামাতুল বাগদাদির যুক্তি অনুযায়ী – অর্থাৎ হক্বের মাপকাঠি হল শত্রু সংখ্যার আধিক্য] কারণ তিনি শত্রুদের নিষ্ক্রিয় করতে চেয়েছিলেন? নাকি যখন তিনি ﷺ মাদীনার ইহুদীদের সাথে চুক্তি করেছিলেন, তখন তিনি ﷺ সত্যের উপর ছিলেন না? রাসূলুল্লাহ ﷺ কি সত্য থেকে অনেক দূরে ছিলেন?! নাউযুবিল্লাহ।
৪। বাতিল কখনো বাতিলের মোকাবেলা করতে পারে না। সমগ্র পশ্চিমা বিশ্ব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছিল, এবং গোটা বিশ্ব তাদের সমর্থন দিয়েছিল। জার্মানির বিরুদ্ধে পৃথিবী কাঁপানো এই যুদ্ধে কোটি কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও এর অর্থ এই না যে জার্মানি হক্বের উপর ছিল, বা জার্মানির মানহাজ বিশুদ্ধ ছিল।
৫। পঞ্চমত, মুজাহিদিন শত্রুর মুখোমুখি হচ্ছেন। তাদের সবদিক থেকে আক্রমণ করা হচ্ছে, আর জামাতুল বাগদাদী মুজাহিদনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, আর মুজাহিদিন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। কিন্তু তাদের আচরণ এবং মানহাজ জামাতুল বাগদাদির আচরণ এবং মানহাজ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
৬। যদি জামাতুল বাগদাদির এই যুক্তিকে আমরা মেনে নেই, তাহলে এই যুক্তি অনুযায়ী তো অবশ্যই আল-ক্বাইদা ও তালিবান হক্বের উপর আছে। কারণ সমগ্র বিশ্ব তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।
সুতরাং, জামাতুল বাগদাদীর এই যুক্তি অনুযায়ী নিঃসন্দেহে আল-ক্বাইদা এবং তালিবান হক্বের উপর আছে। কিন্তু জামাতুল বাগদাদী আর আল-ক্বাইদার আক্বিদা ও মানহাজ তো ভিন্ন। জামাতুল বাগদাদীর মতে আল-ক্বাইদার মানহাজ বাতিল। তাহলে এটা কিভাবে সম্ভব হয়?
৭। সপ্তমত, এরকম ভুল যুক্তির বদলে আমরা বরং এই বলি যেঃ
এই উম্মাহ এবং উলেমা কোন বিষয়ের বিবেচনা করেন, সেটাকে কুর’আন ও সুন্নাহ-র আলোকে মিথ্যা প্রমাণ করা যায় নাকি তার ভিত্তিতে।
অর্থাৎ যদি কুর’আন ও সুন্নাহর আলোকে মিথ্যা না প্রমাণ করা যায় তবে সেটা হক্ব বলে পরিগণিত হবে। আর জামাতুল বাগদাদীর বাতিল হওয়া বিভিন্ন দিক থেকে, বিভিন্ন ভাবে প্রমাণিত, এবং এ বিষয়ে উম্মাহ এবং আলেমগণ একমত।
[শাইখের বক্তব্য সমাপ্ত]