তাকফীরের ব্যাপারে কিছু প্রাথমিক দিকনির্দেশনা

শায়খ সুলাইমান আল উলওয়ান

ডাউনলোড

প্রশ্নঃ শায়খ! আল্লাহ্‌ আপনার উপর রহম করুন। সম্প্রতি আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, কিছু তালিবুল ইলম ও সাধারণ মানুষের মাধ্যমে তাকফির আল মু’আইয়্যান (ব্যক্তি বিশেষকে কাফির বলে ঘোষণা করা) ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এই তালিকায় এমন লোকও আছেন, যারা দ্বীনের উপর অটল থাকার ক্ষেত্রে হয়তো খুবই দুর্বল অথচ তাকফির করার ক্ষেত্রে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?

উত্তরঃ তাকফির করা ও এটা নিয়ে গবেষণা করা নিঃসন্দেহে অনেক বড় ও সাহসিকতার কাজ । এটি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে আমি আপনাকে এ বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ  মূলনীতি বলে দিচ্ছি-

১ম মূলনীতিঃ একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে তাকফির বিষয়ে যারা পড়ালেখা ও গবেষণা করেন, তারা সাধারণ কোন মানুষ নন। দ্বীনের বিষয়ে যাদের সূক্ষ্ম জ্ঞান রয়েছে এবং ইসলামী ফিকহে যারা পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন, তারাই সাধারণত তাকফির নিয়ে কাজ করে থাকেন। বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে কি?

২য় মূলনীতিঃ একজন ব্যক্তি ইয়াক্বীনের সাথে ইসলামে প্রবেশ করে থাকে এবং ইয়াক্বীনের সাথেই সে ইসলাম থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।

৩য় মূলনীতিঃ যে সকল কারণে একজন ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়, সেগুলো একটি অপরটি থেকে আলাদা। কিছু কিছু ঈমানভঙ্গকারী বিষয় কেবল আলেম-উলামারাই অনুধাবন করতে পারেন। কারণ এই বিষয়গুলো শুধু আলেম-উলামারাই ভালো বুঝেন। অন্যদিকে কিছু ঈমানভঙ্গকারী বিষয় রয়েছে যেগুলো সুস্পষ্ট, যেমনঃ শিরক, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ -কে অপবাদ দেওয়া। উম্মতের অধিকাংশই এই ঈমানভঙ্গকারী বিষয়গুলো সম্পর্কে জানেন। আর কিছু ঈমানভঙ্গকারী বিষয় রয়েছে, যেগুলো উম্মাহ সাধারণভাবে জানেই না। যাইহোক, প্রত্যেকের উচিত এই ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা।

যখন কোন ব্যক্তি  ‘তাকফির’-এর মূলনীতি ও ফিকহী জ্ঞান ছাড়া এই ব্যাপারে কাজ করা শুরু করে, এই বিষয় নিয়ে ব্যস্ত  হয়ে পড়ে, তখন সে অবশ্যই গুনাহের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে। পর্যাপ্ত জ্ঞান ছাড়া এ বিষয়ে কোন কথা বলা যাবে না। পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা থেকে বিশুদ্ধ প্রমাণ থাকার পরেই এ বিষয়ে কথা বলা যাবে।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

عن عبد الله بن عمر رضي الله عنهما أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال أيما رجل قال لأخيه يا كافر فقد باء بها أحدهما

“কেউ যদি তার ভাইকে “হে কাফির” বলে সম্বোধন করে, অথচ সে কাফির নয়; তাহলে তা ব্যক্তির (তাকফিরকারীর) দিকে ফিরে আসবে।”(বুখারী-৫৭৫৩, মুসলিম-৬০, তিরমিজী-২৬৩৭, আবু দাউদ-৪৬৮৭)

যদি আপনি কাউকে তাকফির করেন অর্থাৎ কাফির বলেন, অথচ সে কাফির নয়, তবে তাকফির আপনার উপর ফিরে আসবে। এই কারণেই তাকফিরের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া খুব জরুরী।

অনেকেই হয়তো ইসলামী ইলমের জগতে কেবল যাত্রা শুরু করেছেন অথবা কিছু না জেনেই বা অল্প জেনে তাকফিরের ব্যাপারগুলো নিয়ে মাথা ঘামানো শুরু করেন। কোন কোন ব্যক্তিকে দেখা যায় তাকফির করতে গিয়ে অন্যান্য আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে এড়িয়ে যাচ্ছেন। এই লোকদের মধ্যে এমন মানুষও দেখা যায় যারা অজু বা নামাজের নিয়মগুলোই ঠিকভাবে জানেন না। তাদেরকে যদি আপনি তালাক বিষয়ে কোন মাসআলা জিজ্ঞাসা করেন, দেখা যাবে তিনি তা জানেন না। দ্বীনের ভিত্তিগুলো যেমন-নামাজ, অজু, তালাক এসকল বিষয়ের চাইতেও তাকফির আরও বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, (কেননা তাকফিরের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জ্ঞান ছাড়া ভুল তাকফির করলে তা ব্যক্তির নিজের উপর আপতিত হয়) অথচ এই ব্যক্তিরা এগুলোকে সমমানের মনে করে। (যেহেতু নামাজ ফরজ তাই এর সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য বিষয়াবলী গুরুত্তের দিক থেকে এগিয়ে থাকবে। আর তাকফিরকে নামাজ,অজু ও তালাকের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ বলা হচ্ছে এর জ্ঞানগত দিক বিবেচনা করে। কারণ তাকফিরের ব্যপারে আলোচনার ক্ষেত্রে তুলনামূলক বেশি ও সূক্ষ্ম জ্ঞান এর প্রয়োজন হয়।) যদি আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করি যে , ‘একজন লোক তার স্ত্রীকে তিনবার তালাক দিলে সে ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান কী হবে?’ দেখা যাবে, সে হয়তো উত্তর জানে না। যদি সে তালাকের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মাসআলা না জানে, কীভাবে সে তাকফিরের মাসআলাগুলো জানে বলে আশা করা যায়। অথচ, তাকফির এগুলোর চাইতেও বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

(উত্তর দিয়েছেন শায়খ সুলাইমান আল উলওয়ান হাফিযাহুল্লাহ)

(Visited 880 times, 1 visits today)