আনসারদের ফজিলত

শায়খ হারিস আন-নাজ্জারি

ডাউনলোড

মানুষ বিভিন্ন নামকরণ করে, বিভিন্ন উপাধি দেয়। আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার পক্ষ থেকে কিছু নাম ও কিছু উপাধি আছে, যেগুলো আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন।

যেমন আল্লাহ নামকরণ করেছেন মুসলিমীন, মুমিনীন, আবিদীন, তাইবীন ইত্যাদি বলে। আরো নামকরণ করেছেন মুহাজিরীন, আনসার করে। বিশেষত: আনসার নামটি।

বুখারীর মধ্যে এসেছে, গাইলান ইবনে জারীর থেকে বর্ণিত,

“তিনি আনাস রা: কে জিজ্ঞাস করলেন: তোমরা বলতো, ‘আনসার’ নামটি তোমরা রেখেছিলে, নাকি আল্লাহ তোমাদের এই নাম রেখেছেন? আনাস রা: বললেন, বরং আল্লাহ আমাদের এই নাম রেখেছেন।”

তাই বুঝা গেল, আনসার নামটি, আনসার উপাধিটি আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া। সুতরাং যে আনসার হয়, তার বুঝতে হবে যে, এটা এমন একটি নাম, যা আল্লাহ তার জন্য নির্বাচন করেছেন।

এর মহান মর্যাদাটি বুঝা যায়, সর্বপ্রথম তার নামটি থেকে- ‘আল আনসার’। এছাড়াও কিতাব-সুন্নাহর অনেক বর্ণনা আনসারদের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে।

এবার আসুন, মুহাজিরুন ও আনসার শব্দদ্বয়ের ব্যাপারে কিতাব-সুন্নাহর কিছু আলোচনা দেখি:

উস্তাদ আদহাম তার কিতাবে বলেন:

গুরুত্বপূর্ণ একটি জ্ঞাতব্য: হে প্রিয় মুহাজির ভাই, যিনি আল্লাহর দ্বীনের সাহায্য করার আগ্রহ নিয়ে হিজরত করেছেন!

এটা যেন আপনার অন্তর থেকে কখনো হারিয়ে না যায়, যে আল্লাহ তা’আলার তাওফীকের পর প্রাথমিকভাবে আমাদের জিহাদ এই সকল আনসারদের মাধ্যমেই টিকে আছে। তাই তারা হলেন, জিহাদের প্রকৃত ভিত্তি। তারাই জিহাদের চাকা ঘুরার জন্য কার্যকরী জ্বালানি।

সুতরাং তাদের প্রতি সদয় আচরণ করা শরয়ী ওয়াজিব। আর যা ব্যতীত কোন ওয়াজিব আদায় সম্পন্ন হয় না, তাও ওয়াজিবই হয়।

জেনে রাখুন, হে আল্লাহর পথের মুহাজিরগণ! নিশ্চয়ই এসকল আনসার, আপনারা যাদের মেহমান হয়েছেন এবং যাদের নিকট আশ্রয় নিয়েছেন, এই দ্বীনকে সাহায্য করার আগ্রহ নিয়ে এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার আকাঙ্খা নিয়ে, নি:সন্দেহে তাদের পরিব্যপ্তি রয়েছে সেই আল্লাহ ওয়ালা দলটির সাথে, যারা রাসূলুল্লাহ সা: কে এবং তার মুহাজির সাহাবাদেরকে প্রথমবার সাহায্য করেছিলেন। (অত:পর  লেখক বলেন)

তাই আপনি পূর্ণ চেষ্টা করুন, যেন তাদের সুন্দর বিষয়গুলো গ্রহণ করেন, মন্দ বিষয়গুলো অতিক্রম করে যান, তাদের বিচ্যুতিগুলো এড়িয়ে যান, তাদের পদস্খলনগুলো ক্ষমা করেন এবং একে অপরকে তাদের সাথে কল্যাণজনক আচরণ করার উপদেশ দেন। কারণ প্রিয় মুস্তফা সা: এই আদেশ করেছেন।

অতএব এগুলো নবী সা: এর অসিয়ত: তাদের প্রতি সদয় আচরণ করা ও তাদের ত্রুটিগুলো অতিক্রম করে যাওয়া (ক্ষমা করে দেওয়া)। এটা মুহাম্মদ সা: এর অসিয়ত। তিনি সকল মানুষকে অসিয়ত করলেন এবং মুহাজিরদেরকে অসিয়ত করলেন, আনসারদের সাথে কল্যাণের মুআমালা করার জন্য।

সহীহুল বুখারীতে ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সা: বলেন,

“মানুষ অনেক হবে, কিন্তু আনসার কম হবে, এমন অবস্থা হবে যে, তারা হবে, খাবারের মধ্যে লবণের মত। তাই তোমাদের মধ্যে যে দায়িত্বশীল হয়, তাতে কাউকে ক্ষতি করে অথবা কাউকে উপকার করে, সে যেন তাদের সুন্দর বিষয়গুলো গ্রহণ করে এবং তাদের মন্দগুলো অতিক্রম করে যায়।”

এটা আল্লাহর নবী সা: এর আদেশ।

তাদের প্রতি সদয় হওয়া ও আল্লাহ তাদেরকে যে মর্যাদা দিয়েছেন, তাদেরকে সেই যথোপযুক্ত মর্যাদা দেওয়ার কয়েকটি রুপ হল: তাদের সাথে চেহারায় হাসি ফুটিয়ে কথা বলা, তারা যে মহান কীর্তির স্বাক্ষর রেখেছেন তার মূল্যায়ন করা, তারা যে ইসলাম ও মুসলমানদেরকে সাহায্য করেছেন তার মূল্যায়ন করা এবং তাদেরকে বেশি সম্মান ও শ্রদ্ধা করা, তাদের সেই স্তর অনুযায়ী, তারা যার অধিকারী এবং যা তারা সর্বপ্রথম অর্জন করে নিয়েছেন।

তাদের প্রতি সদয় হওয়ার আরেকটি রূপ হল, (এখানে একটি খুব চমৎকার কথা, এটা উস্তাদ আদহামের কথা,) তাদের প্রতি সদয় আচরণ করার আরেকটি রূপ হল, তাদেরকে ভালবাসার সাথে দাওয়াত দেওয়া এবং পর্যায়ক্রমে দাওয়াত দেওয়া, তাদের প্রতি কোমল হওয়া, তাদের জন্য নম্রতার ডানা বিছিয়ে দেওয়া, তাদের মাঝে এরুপ মসৃণ হওয়া, যা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করবে এবং তাদের কথার জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোরতা না করা।

বিশেষত: এমন মাসায়েলসমূহের ব্যাপারে, যেগুলোতে মতবিরোধের সুযোগ আছে। তাই আনসারদের প্রতি দয়া ও নম্রতা একটি কাম্য ও কাঙ্খিত বিষয়। আর হিজরত ও নুসরাত সেই পর্যন্ত প্রসারিত একটি বিষয়! যা আল্লাহ চান।

ইবনে তাইমিয়া রহ: তাতারদের সাথে যুদ্ধের সময় সাধারণ মুসলিমদের প্রতি যে চিঠি লেখেছিলেন, তাতে উল্লেখ করেছেন (চমৎকার একটি কথা, এই যামানার সাথে মিল আছে চমৎকারভাবে, সুবহানাল্লাহ):

“নিশ্চয়ই আল্লাহ যার কল্যাণ চেয়েছেন তার প্রতি আল্লাহর সবচেয়ে বড় নিয়ামতগুলোর মধ্যে একটি হল, আল্লাহ সুবহানাহু তাকে এই যামানায় জীবন দান করেছেন।

যেই যামানায় দ্বীনকে নতুন করে জীবিত করা হবে এবং যখন মুসলমানদের নিশানাগুলোকে সুউচ্চ করা হবে, মুমিন ও মুজাহিদদের অবস্থাসমূহকে উন্নত করা হবে, ফলে তারা হবে প্রথম অগ্রগামীদের মত, তথা আনসার ও মুহাজিরদের মত।

তাই যারা এই যামানায় সেই দায়িত্ব পালন করবে, তারা হবে ঐসকল লোকদেরকে ইহসানের সহিত অনুসরণকারী, যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে এবং যাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন বসবাসের জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এটাই মহা সফলতা।”

সুতরাং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভূক্ত করুন!

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে তাওফীক ও সঠিকের দিশা দিন।

ওয়াস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহ।

(Visited 369 times, 1 visits today)