আল্লাহর রজ্জুকে আকড়ে ধরো!

শায়খ হারিস আন-নাজ্জারি

ডাউনলোড

কুরআনে কারীমের অনেক স্থানে আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদেরকে তথা মুহাম্মদ সা: এর অনুসারীদেরকে গুরুত্বের সাথে আদেশ করেছেন, জামাত আকড়ে থাকার প্রতি, অর্থাৎ মুসলমানদের জামাত এবং তাদেরকে  দ্বীনের মধ্যে বিচ্ছন্নতা সৃষ্টি করতে নিষেধ করেছেন। বিচ্ছিন্নতা ও বিভেদকে নিন্দা করেছেন।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:

“তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর রজ্জুকে আকড়ে ধর, পরস্পরে বিভেদ করো না।”

আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন,  “তোমরা ঐসকল লোকদের মত হয়ো না, যারা বিভেদ করেছে এবং তাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণ এসে যাওয়ার পরও ভিন্নমত অবলম্বন করেছে। ঐ সকল লোকদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি”।

মহা শাস্তি কাদের জন্য? যারা বিভেদ করেছে এবং সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পরও ভিন্ন মত অবলম্বন করেছে।

আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলা আরো বলেন,

“তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর, পরস্পর বিবাদ করো না, তাহলে তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের গাম্ভীর্য চলে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য ধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।”

আল্লাহর আনুগত্যের ও রাসূলুল্লাহ সা: এর আনুগত্যের আদেশ করেছেন, আর আদেশ করেছেন, যেন আমরা পরস্পর বিবাদ না করি এবং ধৈর্য ধারণ করি আল্লাহর আনুগত্যের উপর, রাসূলের আনুগত্যের উপর এবং পরস্পর বিবাদ না করার উপর।

তাই এটা কিছু পালন করার উপর ও কিছু পরিত্যাগ করার উপর ধৈর্য ধারণের আদেশ। অর্থাৎ কিছু পালন করবে আর কিছু পরিত্যাগ করবে।

“তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর, পরস্পর বিবাদ করো না, তাহলে তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের গাম্ভীর্য চলে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য ধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।”

ইবনে তাইমিয়া রহ: বলেন,

“যখন কোন কওম বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন তারা নষ্ট ও ধ্বংস হয়ে যায়। আর যখন কোন কওম ঐক্যবদ্ধ হয়, তখন তারা পরিশোধিত ও ক্ষমতাবান হয়। কারণ ঐক্য বা জামাতবদ্ধ থাকা হল রহমত, আর বিচ্ছিন্নতা আযাব।”

নবী সা: এর অনেক হাদীস রয়েছে ঐক্যবদ্ধ থাকার আবশ্যকীয়তা প্রসঙ্গে ও বিভেদ, বিচ্ছিন্নতা ও কাঁদা ছোড়া ছোড়ির ব্যাপারে সতর্ক করণ প্রসঙ্গে, যেমন পূর্ববর্তীরা অনেক আয়াত ও হাদীসের ব্যাপারে পরস্পর বিভক্ত হয়ে গেছে।

আমরা পূর্বে পাঁচটি মাধ্যমের ব্যাপারে আলোচনা প্রসঙ্গে সেই ব্যাপারে আলোচনা করেছি। যার বিষয় ছিল জামাত। এছাড়া কুরআনের আলোচনা প্রসঙ্গেও তা অতিবাহিত হয়েছে।

হাদীসসমূহের মধ্যে একটি হল, রাসূল সা: বলেছেন:

আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেন:

“আল্লাহ তোমাদের তিনটি বিষয়ের প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং তিনটি বিষয়ের প্রতি রাগান্বিত হন। তিনি তোমাদের প্রতি এতে সন্তুষ্ট হন যে, তোমরা তারই ইবাদত করবে, তার সাথে কাউকে শরীক করবে না, সকলে মিলে আল্লাহর রজ্জুকে আকড়ে ধরবে, পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হবে না, যাকে আল্লাহ তোমাদের দায়িত্বশীল বানান, তোমরা তার কল্যাণ কামনা করবে।

আর তোমাদের তিনটি বিষয়ের ব্যাপারে রাগান্বিত হন: অনর্থক কথাবার্তা, অতিরিক্ত প্রশ্ন ও সম্পদ নষ্ট করা।”

এই তিনটি জিনিসের মধ্যে একটি, যেটি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে এবং আল্লাহ আমাদের জন্য তা পছন্দ করেন তা হচ্ছে আল্লাহর রজ্জুকে আকড়ে ধরা, বিচ্ছিন্ন না হওয়া।

বিচ্ছিন্ন না হওয়া ও সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকা ইসলামের মূলনীতিসমূহের অন্তর্ভূক্ত।

ইমাম নববী রহ: মুসলিমের শরাহয় বলেন:

“এখানে মুসলমানদেরকে জামাতের সাথে লেগে থাকা ও একজন আরেকজনের সাথে সম্প্রীতি রক্ষা করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর এটি হচ্ছে ইসলামের মূলনীতিসমূহের মধ্যে একটি।”

ঐক্য ও সম্প্রীতি রক্ষা করা এবং বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতা বর্জন করাকে এখানে ইসলামের মূলনীতিসমূহের মধ্যে একটি মূলনীতি বলা হল, যার উপর ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়।

বিচ্ছিন্নতার নিন্দাবাদের ব্যাপারে আরেকটি হাদীস হল রাসূলুল্লাহর বাণী- তোমরা অবশ্যই জামাতের সাথে থাকবে:

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা: এর হাদীস, তিনি ওমর ইবনুল খাত্তাব রা: থেকে বর্ণনা করেন রাসূল সা: বলেন:

“তোমরা অবশ্যই জামাতের সাথে থাকবে এবং বিচ্ছিন্নতা থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ শয়তান একজনের সাথে থাকে, সে দু’জনের থেকে দূরে থাকে।

যে জান্নাতের বালাখানা চায়, সে যেন সর্বদা জামাতের সাথে থাকে।”

হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম তিরমিযী রহ:।

জামাতের অর্থ কি?

এর অর্থ পাঁচটি মাধ্যমের আলোচনার মাঝে অতিবাহিত হয়েছে।

সেখানে জামাতের তত্ত্বগত অর্থ ও বাহ্যিক অর্থ উভয়টি আলোচনা হয়েছে। অর্থাৎ এক অর্থ হচ্ছে আমিরুল মুমিনীনের সাথে থাকা, আরেক অর্থ হচ্ছে সুন্নাহকে আকড়ে থাকা, তথা রাসূলুল্লাহ সা: যে আদর্শের উপর ছিলেন তার উপর অটল থাকা।

ইমাম আওযায়ী রহ: বলেন,

বলা হয়ে থাকে, রাসূলুল্লাহ সা: এর সাহাবাগণ ও যারা তাদেরকে যথাযথভাবে অনুসরণ করেছেন তাঁরা সকলে পাঁচটি নীতির উপর ছিলেন: সর্বদা জামাতের সাথে থাকা, সুন্নাহর অনুসরণ করা, মসজিদ আবাদ করা, কুরআন তিলাওয়াত করা ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।

উস্তাদ আব্দুল্লাহ আলআদহাম বলেছেন:

জেনে রাখুন! মুজাহিদদের মাঝে বিবেদ, ঝগড়া, মতভেদ ও বিচ্ছিন্নতা এই দ্বীনের শত্রুদের জন্য মূল্যবান মূতির মত।

তিনি বলেন,

তারা কত দীর্ঘ সময় ধরে এর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, যেমনিভাবে চিতা বাঘ বকরির জন্য অপেক্ষা করে! তাদের উদ্দেশ্য ও আশা বাস্তবায়নের জন্য।

নিশ্চয়ই চিতা সেই বকরিটিকেই খায়, যেটি সবার শেষে থাকে।

আমরা আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করি, আল্লাহ আমাদেরকে তার আনুগত্য করার তাওফীক দান করুন এবং তার অবাধ্যতা থেকে হেফাজত করুন! নিশ্চয়ই তিনি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান।

আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি আল্লাহ আমাদেরকে তার ইবাদত করার তাওফীক দান করুন ও তার অবাধ্যতার বিষয়গুলোকে আমাদের থেকে দূরে রাখুন! আমীন!

ওয়াস সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।

(Visited 318 times, 1 visits today)