মুক্তির পথ

হাকিমুল উম্মাহ শায়খ আইমান

আজ আমি কথিত আরব বসন্ত নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি, যেটার ব্যাপারে অনেকেই দাবি করার চেষ্টা করেন যে, এটা হল দাওয়াত ও জিহাদের বিকল্প পদ্ধতি। এটা বলে থাকেন তাদের মনের বিভিন্ন গোপন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য।

তার মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্দেশ্য হল: যতক্ষণ পর্যন্ত জালিমদের শাসনব্যবস্থা এবং তাদের কার্যক্রম চলতে থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া, যেন জনরোষের এই স্রোতটিকে এ সকল আন্দোলনের মাধ্যমে দরকষাকষি ও আপোষকামিতার দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া যায়। যেন নতুন করে আবার তাদেরই এজেন্টদের ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা যায়, যারা হবে অধিকতর গোড়া, আগ্রাসী ও নিকৃষ্ট।

আরব জনগণের সেই রোষের তুফান, যা তিউনিশিয়া থেকে শুরু হয়ে মিশর, লিবিয়া, ইয়েমেন ও সিরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে, আজ আট বছর পর তা কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে? কিভাবে শেষ হয়েছে? আর যে স্থানে গিয়ে উপনীত হয়েছে, তা থেকে উম্মাহকে উদ্ধার করার জন্য কিভাবে আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি?

অনেক বড় বড় কতগুলো প্রশ্ন! আমাদেরকে অত্যন্ত পরিচ্ছন্নতা ও দায়িত্বশীলতার সাথে এগুলোর জবাব দিতে হবে। উম্মাহকে তাদের বোঝা বহনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

সেই জনরোষের তুফান, যা আরব বসন্ত নামে পরিচিত, তা কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে? বিষয়টি আর স্পষ্ট করে বলার প্রয়োজন হয় না যে: তা শেষ হয়েছে পরাজয় ও ব্যর্থতার স্তরে গিয়ে।

ওই সকল লোকদের জন্য আফসোস! যারা জনগণের কাঁধের উপর চড়ে বসেছে এবং যাদের অনেকে আমাদের মুসলিম উম্মাহকে প্রতারিত, লাঞ্ছিত ও পোষ্য বানানোর জন্য ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী তাগুতী শক্তিকে ব্যবহার করেছে। আর এ ব্যাপারে দৃষ্টান্ত হিসাবে পেশ করেছে তিউনিশিয়ার হরকাতুন নাহযাকে, যেটা মূলত পুরাতন নষ্ট শাসনব্যবস্থারই নতুন রূপ। আর এরাই এখন মুক্তির দূত হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে।

ফলে মুসলিম জনগণকে ধোঁকা দিয়ে ‍তিউনিশিয়ায় দ্বিতীয়বার আবার সেই অরাজকতাকারী নষ্ট শাসনব্যবস্থাই ফিরে এসেছে, যা অধিকতর জঘন্য, অমানবিক এবং ইসলাম ও মুসলিমদের সাথে শত্রুতা পোষণকারী।

এই হরকাতুন নাহযাহ প্রতিটি অপরাধে অংশ গ্রহণ করেছে। তারপর চেহারা থেকে মুখোশ খুলে ফেলে নিজেদের প্রকৃত অবস্থা ঘোষণা দিয়ে বলে: এটা একটি ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলন।

মিশরে ইখওয়ানুল মুসলিমীন, সংলাপবাদী সালাফী ও অন্যান্য দলগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় কায়রোর ময়দানে এই বলে সেনাবাহিনীর ট্যাংকগুলোর প্রদর্শনী চলতে থাকে যে: এটাই জনগণের মুক্তির পথ। পক্ষান্তরে তার মূল উদ্দেশ্যটি পরিপূর্ণ গোপন রাখা হয়। আর তা হল এগুলো ময়দানে জড়ো করা হয়েছে সেই হুকুমদাতাদের অপেক্ষায়, যারা মিছিলকারীদের উপর আগুন বর্ষণ করতে আদেশ করবে। যেটাকে (মূল পরিকল্পনাকে) আমেরিকা দু’বছর পর সিসির হাতে করার জন্য বিলম্বিত করেছিল, ইখওয়ানুল মুসলিমীন যাকে নিজেদের লোক ভেবে বসেছিল।

ইয়েমেনে জনগণের রোষ তুচ্ছমূল্যে বিক্রি হয়ে যায় উপসাগরীয় বাণিজ্যিক মার্কেটে। আর সকল পক্ষ দু’টি বিষয়ের উপর একমত হয়: এক. জনরোষ বিক্রির সর্বাধিক পরিমাণ মূল্য গ্রহণ করা হবে। দুই. আমেরিকাকে সুযোগ করে দেওয়া হবে, যেন জাযিরাতুল আরবের জনগণ ও মুজাহিদদের বিরুদ্ধে তাদের অপরাধকর্ম পরিচালনা করতে পারে।

লিবিয়ার আন্দোলন শেষ হয়েছে দেশের অর্ধেকের বেশি অঞ্চলের উপর আমেরিকার পুরাতন সেবাদাস হাফতারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।

আন্দোলনটি শেষ হয়েছে এক অনিশ্চিত অবস্থায়। এই অনিশ্চয়তার মাঝেই এখন লিবিয়ার দিনকাল যাচ্ছে। আর এই অনিশ্চয়তাকে কেন্দ্র করে অনেক পক্ষই লিবিয়ার মুসলিম উম্মাহকে এই ধোঁকা দিতে সচেষ্ট যে, লিবিয়া বিজয় হয়ে গেছে।

পরিতাপের বিষয় হল, এ সকল ধোঁকাবাজি হচ্ছে অপরাধের গুরুদের দিকনির্দেশনায়। আরো কঠিন পরিতাপের বিষয় হল: লিবিয়া যে শয়তানী চক্রান্তের মুখোমুখি হচ্ছে, তার কারণে লিবিয়ায় ইসলামের সাথে সম্পর্কিত গ্রুপগুলো পরস্পর তাওহিদের কালিমার অধীনে, শরয়ী শাসনের অধীনে এবং ‍মুমিনদের সাথে বন্ধুত্ব আর কাফেরদের সাথে শত্রুতার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না।

আর শামে মুসলিম জনগণের সেই আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে, যা এই স্লোগান দিতে দিতে আত্মপ্রকাশ করেছিল: “কায়িদুনা লিল আবাদ, সাইয়্যিদুনা মুহাম্মাদ” (অর্থাৎ আমাদের চিরস্থায়ী নেতা, আমাদের সরদার মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং “হাইহাতাল মাযাল্লাহ” (অর্থাৎ লাঞ্ছনার দিন শেষ) ।

এই আন্দোলনের ইতি ঘটে অবরুদ্ধ উত্তর পশ্চিম সিরিয়া কারো সন্তুষ্টিতে আর কারো অসন্তুষ্টিতে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী তুর্কি সালতানাতের অধীনে প্রবেশ করার মাধ্যমে। সেই ইসলামী গণবিপ্লবটির এমন সময় পতন ঘটে, যখন মুজাহিদ শক্তিগুলো দামেশক অভিমুখে যাত্রা করেছিল।

অনেকে ইবরাহিম আল-বদরির গ্রুপটির উপর অভিযোগ করে থাকে যে, জিহাদী শক্তিগুলোর অগ্রযাত্রা পিছিয়ে যাওয়ার কারণ এরাই। কিন্তু যেটি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় ও হৃদয়ের রক্তক্ষরণ করে, তা হল: ইবরাহিম আল-বদরির গ্রুপের কার্যক্রমগুলো পরবর্তীতে এত ব্যাপক মহামারীর আকার ধারণ করে যে, তখন সকলেই সকলের বিরুদ্ধে তা (তাকফির) করতে থাকে। একমাত্র যাদের প্রতি আল্লাহ রহম করেছেন, তারা ব্যতিত।

তারপর ঐ সকল লোকদেরকেও অভিযুক্ত ও দায়ী করা হতে থাকে, যারা নিজেদেরকে এই ফেৎনা থেকে পরিপূর্ণরূপে দূরে রেখেছিল।

আরো কঠিন পরিতাপের বিষয় হল, প্রগতিবাদীরা এ উত্তপ্ত আন্দোলনে অংশ নিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী তুর্কি গোয়েন্দা সংস্থার ছত্রছায়ায় অস্পষ্ট মরীচিকার ন্যায় কাল্পনিক ক্ষমতা, শাসন ও কর্তৃত্বের দু:স্বপ্ন দেখার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। অথচ ধর্ম ও দেশের উপর আগ্রাসী শত্রুরা এদের সকলকেই সমূলে উৎপাটন করার জন্য প্রতিযোগিতা করছে।

আরব বসন্ত যে পরিণতিতে এসে দাঁড়িয়েছে, তার বীভৎস চিত্র এটাই। তাহলে কেন এই পরিণতিতে এসে পৌঁছালো? কারণ অনেকগুলো। তবে আমি এখানে ছোট ও সংক্ষিপ্ত কয়েকটি কারণ উল্লেখ করব।

ব্যর্থতার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল: ‘আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা’ (তথা বন্ধুত্ব ও শত্রুতার) আকিদার ক্ষেত্রে শৈথিল্য করা, বরং অনেকক্ষেত্রে তা একেবারেই উপস্থিত না থাকা আর শরীয়ত থেকে বিচ্যুত এই অপরাধী ও জালিম শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে জিহাদের মনস্তাত্তিক ভিত্তি না থাকা।

ব্যর্থতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল: একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ধর্মনিরপেক্ষ সাংবিধানিক শাসনের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। তারা তাদের বিপ্লবের লক্ষ্য বাস্তবায়ন না করেই নির্বাচনে যুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। অথচ মুসলমানদের নিকট এই বিপ্লবের লক্ষ্য ছিল সুস্পষ্ট, যাতে কোন দর কষাকষির অবকাশ ছিল না। আর মুসলমানদের লক্ষ্যটা ছিল: শরীয়ত প্রতিষ্ঠিত করা।

তারা নিজেদের ধারণামতে শরয়ী শাসনের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য শরীয়ার বিপরীতে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের নিকট সমাধান কামনা করেছে, যার স্বাভাবিক ফলাফলই ছিল প্রভাব বিলুপ্ত হওয়া এবং শরয়ী শাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হওয়া।

ধর্মনিরপেক্ষ সাংবিধানিক শাসনের অধীনে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা এবং তার সদস্য হওয়ার ব্যাপারে দুর্বল দুর্বল দলিলের মাধ্যমে অনেক ফাতওয়াও জারি হয়েছে। যাতে শুধু কল্যাণ-অকল্যাণ, পরিস্থিতি, নমনীয়তা ও অনন্যোপায় অবস্থার বুলিগুলো আওড়ানো হয়েছে।

দু:খের বিষয় হল, যারা এসকল ফাতওয়াগুলো দিয়েছিলেন, তারা উম্মাহর নিকট এই বলে ক্ষমা প্রার্থনা করেননি যে, জনগণের রোষের আন্দোলন নষ্ট হওয়া, ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাওয়া এবং ব্যর্থতার অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ ছিলেন তারা।

তাদের থেকে কাম্য ছিল, তারা এই বীরত্বটুকু প্রদর্শন করবেন যে, উম্মাহর সামনে বের হয়ে একথা স্বীকার করবেন যে, তারাই উম্মাহকে ভ্রান্তি ও ধ্বংসের পথে চলতে উৎসাহিত করেছিলেন। কিন্তু তারা এখনো ক্ষমা প্রার্থনা করেননি, যদিও তাদের নিকট এর অনেক সুযোগ এসেছে। তাই আমার ধারণা, তারা পুনরায় একই রকম ব্যর্থতার শিকার হবেন।

ব্যর্থতার আরেকটি অন্যতম কারণ হল:

ধর্মনিরপেক্ষবাদী, ধর্মহীন ও পশ্চিমা নীতি-আদর্শের অনুসারীদের পিছনে অসহায়ের মত লেগে থাকা। আর জালিমদের সাথে এভাবে লেগে থাকার মূল উদ্দেশ্য ছিল তাদের নেতৃত্বের সাথে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা। মুসলিমরা মনে করেছিলো যে, তাদের সাথে জোট করে নেতৃত্বের অংশ হতে পারলে শক্তি ও সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এই উদ্দেশ্যে মুসলিমদের অনেকেই তাদের নিকট নমনীয় হওয়ার চেষ্টা করেছিলো এবং প্রয়োজনে শরীয়তবিরোধী বিষয়াবলীতে তাদের সাথে একাত্মতা পোষণ করেছিলো।

তারপর (যাদের সাথে একাত্মতা পোষণ করা হয়েছিল) এ সকল লোকের রুপ পাল্টে যায়, তারা ইহুদীবাদী ও আমেরিকাপন্থি সেনাবাহিনীর সাথে যোগদান করে। অতপর নিজেদের সেই প্রকৃত চেহারা প্রকাশ করে, যা ইসলাম অভিমুখী যেকোন পদক্ষেপ- চাই তা দুর্বল হোক বা শক্তিশালী হোক- তাকে প্রবলভাবে বাঁধা দেয়। আর তাদের লক্ষ্য ছিল যেকোনো ধরনের ইসলামী পদক্ষেপকে সমূলে উপড়ে ফেলা।

সুতরাং তারা ইসলামের ধ্বংসকে স্বাগত জানায়। আর স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বহুদলীয়তার যে শ্লোগান দিত, তা ভুলে যাওয়ার ভান ধরে।

ব্যর্থতার আরেকটি অন্যতম কারণ হল: শক্তিশালী হওয়ার পূর্বেই ক্ষমতার জন্য উত্তপ্ত প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন অঞ্চল, খনিজ সম্পদ, আবাসিক এলাকা, নগর, গ্রাম ইত্যাদির উপর প্রভাব বিস্তারে তাড়াহুড়া করা। এই প্রভাব বিস্তার করতে যেয়ে তারা যাতায়াতের স্থানে, চেকপোষ্টে ও বিভিন্ন পয়েন্টে জীবন বাজি রেখে হামলা করার নীতি পরিত্যাগ করতে পারেনি। প্রত্যেকেই চায়, অন্যের পূর্বে গনিমত হস্তগত করতে, এমন জায়গায় প্রভাব বিস্তার করতে, যা রক্ষা করতে পারবে না এবং নিজেদেরকে শক্তিবলে ক্ষমতা দখলকারী হিসাবে প্রকাশ করতে। আর এই কাজ করতে যেয়ে যদি মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয় তাতেও তারা পিছপা হয়নি।

এরপর অস্ত্র শত্রুদের দিকে তাক করার পরিবর্তে নিজ ভাইদের দিকে ঘুরে যায়। ফলে আল্লাহর চিরাচরিত নীতির প্রতিফলন ঘটে

وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا

অর্থাৎঃ

“তাছাড়া তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হয়ো না। যদি তা কর, তবে তোমরা কাপুরুষ হয়ে পড়বে”

এরপরে ফলাফল কী হল? ফলাফল এই হল যে, তারা ময়দানের অন্যান্য বাহিনীর আক্রমণ ও ধ্বংসের লক্ষ্যবস্তু হল। ফলে একটির পর একটি শহর ও অঞ্চলের পতন ঘটে এবং একের পর এক সংগঠনগুলোর বিনাস ঘটে।

আর শত্রুদের সাথে সংলাপ ও দরকষাকষি হতে থাকে ঐ সকল অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে, যেগুলোকে মুজাহিদগণ তাদের সুরক্ষা ও তাদের পরিবারের সুরক্ষার দিক লক্ষ্য করে রক্ষা করতে পারেননি।

যেখানে কথা ছিল, মুজাহিদগণ “ক্ষয় করা ও নি:শেষ করা”র অবিরাম যুদ্ধের মাধ্যমে শত্রুদেরকে নিজেদের ইচ্ছার উপর নিয়ে আসবেন, সেই নিপীড়িতদের ন্যায় যুদ্ধ করবেন, যারা উপর্যপুরী আক্রমণ করে আর পলায়ন করে, শত্রুরা তাদের নির্দিষ্ট অবস্থান জানতে পারে না, তাদের পক্ষে তাদেরকে বোমার লক্ষ্যবস্তু বানানো সম্ভব হয় না… সেখানে শত্রুগণই তাদেরকে নিজেদের ইচ্ছার উপর নিয়ে আসে। আর মুজাহিদদের বন্ধু দাবিদার আঞ্চলিক পক্ষগুলো অন্যদের সাথে সংলাপ করে, অতপর তাদের উপর যে বোঝা চাপানো হয়, তা মুজাহিদগণকেও কার্যকর করতে আহ্বান করে।

যেখানে কথা ছিল ‘নিপিড়ীতদের যুদ্ধ’ এবং ‘ক্ষয় করা ও নি:শেষ করা’র যুদ্ধ বন্ধ করার ব্যাপারে মুজাহিদগণের সাথে সংলাপ করার জন্য শত্রুপক্ষ, আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী ও মধ্যস্থতাকারীগণই ‍মুজাহিদগণের নিকট আসবে, সেখানে মুজাহিদগণই আন্তর্জাতিক পক্ষ ও শত্রুপক্ষের আদেশ-নিষেধগুলোকে স্বাগতম জানাচ্ছে, নিজেদের উপর চাপিয়ে দেওয়া শর্তগুলোকে মেনে নেওয়ার জন্য।

এ সবকিছুর একমাত্র কারণ হল, যেহেতু মুজাহিদ নেতৃবৃন্দ চোখ ধাঁধানো ক্ষমতার জীবনকে বেছে নিয়েছে আর শত্রুদের বিরুদ্ধে ‘ক্ষয় করা ও নি:শেষ করা’র যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ও দুর্বলদের মত ‍জীবন যাপন করার ব্যাপারে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছে।

আমি আমার সর্বাস্থানের মুসলিম ভাইদেরকে একটি ঐতিহাসিক উপকারী দৃষ্টান্ত স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, তা হল: মুজাহিদীনের সাথে পাকিস্তানের রাজনীতি। যেন এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, মুসলমানদের বিষয়াবলীতে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী রাষ্ট্রগুলোর অন্তর্ভূক্ত হওয়া কতটা ভয়ংকর!

পাকিস্তান, আফগান মুজাহিদগণের পক্ষে যে পরিমাণ ভূমিকা রেখেছিল, তুরস্ক বা উপসাগরীয় দেশগুলো মুজাহিদগণের পক্ষে তার দশভাগের একভাগও রাখেনি। কিন্তু রাশিয়ার বিরুদ্ধে জিহাদ শেষ হওয়ার পর পাকিস্তান আরব মুহাজির ও অন্যান্য মুহাজিরদের সাথে কী আচরণ করেছিল?!

তারপর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ক্রুসেড যুদ্ধের সময় দ্বিতীয়বার ইমারতে ইসলামিয়ার সাথে এবং আরব ও অন্যান্য মুহাজিরদের সাথে কী আচরণ করেছিল? উত্তর পরিস্কার। আমি ভুল বুঝাতে চাচ্ছি না, কারো দ্বীনদারির সনদ দিচ্ছি না বা কারো পক্ষে সাফাইও গাচ্ছি না। আমি বাস্তবতা পাঠ করে শুনাচ্ছি, ঠিক যেভাবে তা ঘটেছে। যেন আমরা বুঝতে পারি যে, এই সংকটময় অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণের পথ কী?

কথিত আরব বসন্তের বিপ্লবগুলো ব্যর্থ হওয়ার আরেকটি অন্যতম কারণ হল: এই বাস্তবতা ভুলে যাওয়া যে, এ পথ অনেক দীর্ঘ ও দুর্গম। এতে বাতিল ও তাগুতের সাথে সহাবস্থান করা সম্ভব নয়। এ পথের জন্য প্রয়োজন বিরাট কুরবানী। এতে হিজরত, দেশান্তর, হত্যা ও বন্দিত্বের জন্য প্রস্তুত থাকা অত্যাবশ্যক।

যে সকল জামাত তাদের অনুসারীদেরকে সামান্য বাহ্যিক দ্বীনদারির সাথে বিলাসিতা, উচ্চপদ ও অধিক লাভের সংস্কৃতির মধ্যে গড়ে তুলেছে, সে সকল জামাতের পথ বিজয়ের পথ নয়। এরাই তাদের অনুসারীদেরকে স্বেচ্ছাচারি তাগুতদের সাথে সংলাপ ও সমঝোতার মানসিকতা দিয়ে গড়ে তুলেছে।

যেসকল জামাত তাদের অনুসারীদেরকে এই ধ্যান-ধারণা দিয়ে প্রতিপালিত করেছিল যে, তারা তাগুতদের সাথে সহাবস্থান করে এবং তাদের সংবিধান, আইন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার অধীনে কাজ করে ইসলামকে সাহায্য করে ফেলবে, বিজয়ী করে ফেলবে, পরিতাপের বিষয়! ঐ সকল জামাতই তাদের ব্যর্থতার আবরণ উম্মোচন করেছে এবং তাগুতদের ভ্রান্তি, পথভ্রষ্টতা ও অপরাধসমূহের মোকাবেলা ও প্রতিরোধ করতে নিজেদের পদ্ধতির অক্ষমতা প্রমাণ করেছে।

যে সকল দল তাদের যুবকদেরকে তাগুতদের থেকে সম্পর্কচ্ছেদ না করার উপর গড়ে তুলেছে, তারা তাদেরকে দ্বীন-দুনিয়ার ব্যর্থতার দিকেই পরিচালিত করেছে।

তাগুতদের সাথে সহাবস্থানের একটি উদাহরণ হল: যে ধারণাটা (বিশেষ করে জাযীরাতুল আরবের) কতিপয় দায়িগণ ছড়াচ্ছেন, যে ক্ষমতাসীন তাগুতদের সাথে সন্ধি করাই তাদের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করার চেয়ে অধিক উপকারী। অতপর তাদের কেউ কেউ এই সহাবস্থানের জন্য বিভিন্ন স্তরে কাজও শুরু করে দিয়েছেন, তথা জিহাদ বন্ধের দাওয়াত থেকে শুরু করে মুজাহিদদের দুর্নাম করা, শাসকের আনুগত্যের দিকে আহ্বান করা-এমনকি শাসক যদি ইবলিশ শয়তানও হয়, কাউকে কাউকে এমন লোকদের নিকট আত্মসমর্পণের জন্য ধোঁকা দেওয়া, যাদের প্রতিশ্রুতি বা যিম্মার কোন মূল্য নেই।

অতপর এই ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের পরিণতি এই হয় যে, তাগুতরা সেই সকল লোকদেরকেই গ্রেফতার করে, যারা ধারণা করেছিল যে, সন্ধি ও সমঝোতা করার মাঝেই কল্যাণ।

ব্যর্থতার আরেকটি অন্যতম কারণ হল, এমন কিছু দল, যারা ইসলামের কাজের দাবি করত এবং এই বিপ্লব থেকে উপকৃত হওয়ার চেষ্টা করত, কিন্তু তারা ঐ সকল লোকদের ফাতওয়ার অনুসরণ করে, যারা মুসলমানদের জন্য আমেরিকান সেনাবাহিনীর অন্তর্ভূক্ত হয়ে অন্য মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকে জায়েয সাব্যস্ত করে। যারা মনে করে, আন্দোলন-বিপ্লব আল্লাহর যিকর থেকে অমনোযোগী করে ফেলে এবং যারা শাসকদের পবিত্রতা বর্ণনা করে। যারা মনে করে, আঞ্চলিক রাষ্ট্রনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মুসলিম ও অমুসলিমদের মাঝে যৌথ চুক্তির ভিত্তিতে, তাই শরীয়ত সর্বোচ্চ কর্তৃত্ববান হওয়া জরুরী নয়, সর্বোচ্চ কর্তৃত্বশীল হবে নির্বাচন, দেশীয় প্রথা ও গণতন্ত্র।

এ সকল ভ্রান্ত ও শরীয়তবিরোধী চিন্তা-চেতনাগুলোই ছিল পরাজয়ের একেকটি বীজ আর তার আহ্বানকারীরাই জনরোষকে বিপথগামী করেছে। কারণ তারা উম্মতকে দাওয়াত ও জিহাদের পথে পরিচালিত করার ব্যাপারে ছিল দুর্বল। আর দু:খের বিষয় হল, যে বিষয়টি এ সকল গ্রুপগুলোর মাঝে সম্পর্কের যোগসূত্র সৃষ্টি করে, তা হল: তারা সকলেই পশ্চিমা শাসনব্যবস্থার কাছে মানসিক ও আদর্শিকভাবে পরাজিত ছিল।

ব্যর্থতার আরেকটি কারণ হল, নিজ অনুসারীদেরকে এই ধারণা দেওয়া যে, শান্তিপূর্ণ উপায়েও ইসলামের বিজয় আনা সম্ভব। অথচ এটা জীবনের স্বাভাবিক নীতি ও ঐতিহাসিক বাস্তবতার সম্পূর্ণ বিপরীত। আর এ সকল কিছুর পূর্বে, এটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার নীতিরও বিপরীত, যা আমরা আল-কুরআনুল কারীম ও পবিত্র সুন্নাহ থেকে জেনেছি।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:

وَلَا يَزَالُونَ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّىٰ يَرُدُّوكُمْ عَن دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُوا [٢:٢١٧]

“তারা অবিরত তোমাদের বিরুদ্ধে ‍যুদ্ধ চালিয়েই যাবে, যতক্ষণ না তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়।” (সূরা বাক্বারাঃ ২১৭)

আরেক স্থানে বলেন:

وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ  [٨:٣٩]

“তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাক, যতক্ষণ না ফেৎনা নির্মূল হয় এবং দ্বীন সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়।” (সূরা আনফালঃ ৩৯)

তাই যেকোন আন্দোলন ও বিপ্লব সফল হওয়ার জন্য এবং পূর্বের নেযামের মূল উৎপাটন করার জন্য অবশ্যই স্বশস্ত্র সংঘাত প্রয়োজন। অন্যথায় পুর্বের নেযামই দ্বিতীয়বার আরো ভয়ংকর, বীভৎস ও নিকৃষ্ট রূপ ধারণ করে ফিরে আসবে।

এ আন্দোলনগুলো ব্যর্থ হওয়ার আরেকটি কারণ হল: রিয়াল ও ডলারের সালাফীগণ, যারা শাসকের আনুগত্য করে যায়, চাই শাসক টেলিভিশনের সামনে নিয়মিত যিনা করুক না কেন, এমনকি চাই শাসক আমেরিকা ও ইসরাঈলের কাছে দেশ ও জনগণকে বিক্রি করে দেক না কেন, চাই শাসক ক্রুশ, পাথর, গরু ও গাছের উপাসকদের সাথে মিলে এক ধর্মের দিকে আহ্বান করুক না কেন বা চাই সে অস্ত্রশক্তিবলে জনগণের উপর পাপাচার চাপিয়ে দেক না কেন।

এ আন্দোলনগুলো ব্যর্থ হওয়াই, আকিদা ও সম্মানের ব্যাপারে আত্মমর্যাদাহীন এবং দ্বীন নিয়ে ব্যবসাকারী এই সুবিধাবাদী দলটির প্রকৃত চেহারা উম্মোচন করে দিয়েছে এবং এটা প্রকাশ করে দিয়েছে যে, তারা হল তাগুতগোষ্ঠী ও অপরাধের গুরুদের সাহায্যকারী।

তাহলে সংক্ষিপ্ত কথায় মুক্তির উপায় কী? মুক্তির উপায় হল, উল্লেখিত ব্যর্থতার উপকরণগুলো থেকে বেঁচে থাকা। অর্থাৎ সংক্ষেপে:

উম্মাহর অন্তরে আকিদার ভিত্তিকে মজবুত করা, আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা (তথা বন্ধুত্ব ও শত্রুতা’র) আকিদা পুনর্জীবিত করা, শরীয়ার আইনের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী সংবিধানের অধীনে যেকোন ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়া বর্জন করা। সর্বপ্রথম শরীয়ার শাসন বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করতে হবে। অতপর যখন শরীয়া প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে, তখন উম্মাহ তাদের একনিষ্ঠ ও শ্রেষ্ঠ উলামাগণকে নিয়ে উম্মাহর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য শুরা মজলিস চালু করার জন্য কার্যকরী শরয়ী পন্থা অবলম্বন করবে।

বিজয় আসার আরেকটি মাধ্যম হল, প্রভাবশালী হয়ে যাওয়ার ধারণা বর্জন করা এবং অসহায়দের যুদ্ধ পদ্ধতির দিকে ফিরে আসা। মুজাহিদগণকে তাওহিদের কালিমার উপর ঐক্যবদ্ধ করা। যেন শত্রুদেরকে নি:শেষ করে দিয়ে মুসলমানগণ আমেরিকান এজেন্টগুলো থেকে মুক্ত হতে পারে। সেই এজেন্টগুলো থেকে, যারা আমেরিকান নীতিমালাকে নিজ নিজ দেশে কার্যকর করে রেখেছে, আমেরিকান জোটে অংশগ্রহণ করছে, আমেরিকানদের পতাকাতলে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, ইসরাঈলের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করছে।

বিজয়ের আরেকটি উপকরণ হল:

সে সকল দুর্বল ও হীনমন্যদের ফাতওয়া ও মতামত প্রত্যাখ্যান করা, যারা শরীয়তকে জালিমদের নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে চায় সেসকল দুর্বল নেতৃত্ব থেকে সতর্ক থাকা, যারা উম্মাহকে প্রকৃত জুলুমকারীদের নিকট পরাজয় ও আত্মসমর্পণের দিকে পরিচালিত করে।

বিজয়ের আরেকটি উপায় হল:

উম্মাহকে একথা আত্মস্থ করানো যে, বিজয় কখনো শান্তিপূর্ণ মাধ্যমে, তাগুতদের সাথে সহাবস্থানের মাধ্যমে বা তাগুতী শাসনব্যবস্থার অধীনে কাজ করার মাধ্যমে আসে না। বরং বিজয় আসে, দাওয়াত, জিহাদ, যুদ্ধ, হিজরত, সবর ও কুরবানীর মাধ্যমে।

বিজয়ের আরেকটি মাধ্যম হল:

সে সকল ধর্ম ব্যবসায়ী দরবারী সালাফীদের মুখোশ উম্মোচন করা, যাদের উলুল আমর (তথা দায়িত্বশীল বা শাসক) হল টেলিভিশনে প্রকাশ্যে যিনাকারী, ইসরাঈলের সাথে জোটকারী এবং সকল ধর্মের ঐক্য সৃষ্টিকারী ব্যক্তি। এমনিভাবে আযহারী বুদ্ধিজীবি পরিষদ, ফাতওয়া পরিষদ ও ওয়াকফ মন্ত্রণালয়ে অবস্থানকারী সরকারের পাগড়ীগুলোরও মুখোশ উম্মোচন করা।

তাই আমাদের প্রয়োজন হাত ও জবানের মাধ্যমে এমন ব্যাপক লড়াই ও সর্বজনীন জিহাদ করা, যাতে থাকবে দাওয়াত এবং শরীয়া ভিত্তিক রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ড।

আমরা তো সে সকল সাফাবী রাফেযী দুশমনদের মোকাবেলা করছি, যারা পূর্ব-পশ্চিমে সাম্রাজ্য বিস্তার করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সে সকল আমেরিকান ও ইসরাঈলী দুশমনদের মোকাবেলা করছি, যারা ফিলিস্তীনের উপর আধিপত্য বিস্তার করে আছে এবং ইসলামী বিশ্বের হৃদপিণ্ড, তার উৎপত্তিস্থল ও তার পানিসমূহের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

আমরা সে সকল রাশিয়ান শত্রুদের মোকাবেলা করছি, যারা আমাদের দেশগুলোর উপর লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

আমরা ক্রুসেডীয় পৈশাচিকতার হোতা ফ্রান্সের মোকাবেলা করছি, নাস্তিক্যবাদী চায়না ও হিন্দু মুশরিকদের মোকাবেলা করছি এবং দালাল শাসকশ্রেণী ও তাদের শরীয়তবিরোধী ও শরীয়ত বহির্ভূত ভ্রান্ত শাসনব্যবস্থার মোকাবেলা করছি।

তাই আমাদের প্রয়োজন এই জিহাদী আন্দোলনে উম্মাহর সকল দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করা। আর মুজাহিদগণ হলেন উম্মাহর বর্ম ও তাদের আত্মা স্বরূপ। একনিষ্ঠ উলামাগণ হলেন তাদের নেতৃত্বদানকারী ও পথপ্রদর্শক। এটি একটি ব্যাপক যুদ্ধ, যার জন্য প্রয়োজন সকল একনিষ্ঠদের প্রচেষ্টাগুলোকে একত্রিত করা।

এ ‍যুদ্ধের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই তাওহীদের কালিমার অধীনে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

আমাদের জাতির প্রতিটি আত্মমর্যাদাশীল ও স্বাধীনচেতা লোকের প্রতি মুজাহিদগণ তাদের হস্ত প্রসারিত করে আছেন। আমরা আমাদের উম্মাহকে আহ্বান করছি, আপনারা সে সকল মিথ্যায় বিশ্বাস করবেন না, যা শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের সহকারী ও নৈকট্যশীল লোকেরা মুজাহিদদের সম্পর্কে প্রচার করছে।

তবে মুজাহিদগণ ভুলছাড়া নন। কিন্তু শত্রুদের পক্ষ থেকে তাদের ব্যাপারে যা কিছু বলা হচ্ছে, তার অধিকাংশই মিথ্যা রটনা।

তার মধ্যে একটি হল: ইসলামের দুশমন মিডিয়াগুলো আমাদেরকে ইবরাহিম আল-বদরী (তথা আবু বকর আল-বাগদাদী)র দলের সাথে মিলিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে। অথচ আমরা প্রথমে তাদেরকে সংশোধন করার চেষ্টা করেছি, তারপর যখন নিরাশ হয়েছি, তখন তাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করেছি। তারপর অব্যাহতভাবে তাদের মিথ্যাচার ও বিকৃতি উম্মোচন করে আসছি।

আমরা তাদেরকে শরীয়তের শাসন, শুরার নেযাম ও শাসকদের জবাবদিহিতার পথে আহ্বান করছি। কিন্তু তারা নববী খেলাফতের উপর মিথ্যারোপ করছে এবং এই দাবি করছে যে, নববী খেলাফতও তাকফীর, ধ্বংস সাধন ও অজ্ঞাত স্বল্প সংখ্যকের বাইআতের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল।

আমরা সেই কুরআনী নীতির অনুসরণ করি, যা স্পষ্টভাবে বলে যে, মুমিনদের একটি বৈশিষ্ট্য হল: তাদের কার্যাবলী তাদের পরস্পরের মাঝে পরামর্শের মাধ্যমে হয়। অথচ তারা উম্মাহর উদ্দেশ্যে বলছে: তোমাদের কার্যাবলী তোমাদের মাঝে পরামর্শের মাধ্যমে হবে। (আমাদের না)

আমরা তাদেরকে মুসলমানদের সম্মান ও নিরাপত্তা বাস্তবায়নের প্রতি আহ্বান করছি। অথচ তারা বলছে: যারা আমাদের সাথে বাইআত করবে না, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। আর যারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, তাদেরকে আমরা কাফের সাব্যস্ত করব।

পরিশেষে, আমরা নিজেদেরকে এবং সমস্ত মুসলিমদেরকে ফিরে দেখার প্রতি আহ্বান করছি, পরাজয় ও ব্যর্থতার পথ থেকে দূরে থাকার প্রতি আহ্বান করছি। এমন নতুন ধাপ শুরু করার আহ্বান করছি, যা সর্বদিক থেকে দাওয়াত ও জিহাদের উপর প্রতিষ্ঠিত হবে এবং যার মাধ্যমে উম্মাহ সিসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ হবে।

পরিশেষে সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের সরদার মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণের উপর।

ওয়াস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

(Visited 412 times, 1 visits today)