নের্তৃবৃন্দের প্রতি নাসিহা

শায়খ আতিয়াতুল্লাহ আল লিবি

আমি নিজেকে এবং আমার ভাইকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি আমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা, কারণ তিনি আমাদেরকে তার ইবাদতে নিয়োজিত করেছেন এবং আমাদেরকে বানিয়েছেন তার পথের মুজাহিদ, তাঁর দ্বীনের সাহায্যকারী ও তাঁর কালিমা বুলন্দকারী। এমন কঠিন সময়ে, যখন অধিকাংশ মানুষের উপর দুনিয়া ও তার ফিৎনাসমূহ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে।

প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে প্রবৃত্তি পূজা এবং জীবিত ও মৃত তাগুতদের পূজা। তাই এই মহা নিয়ামতের জন্য আল্লাহর প্রশংসা করছি এবং তার নিকট প্রার্থনা করি, তিনি আমাদেরকে তার করিয়া আদায় করার তাওফীক দান করুন এবং তার স্মরণ, তার কৃতজ্ঞতা ও উত্তমভাবে তার ইবাদত করতে সাহায্য করুন।

তারপর স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি সেই গুরু দায়িত্বের কথা, যার মাধ্যমে আল্লাহর আমাদেরকে এবং আপনাদেরকে পরীক্ষা করছেন। নিশ্চয়ই এটি একটি আমানত। যেমনটা নবী ﷺ আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন।

এটা কিয়ামতের দিন লাঞ্ছনা ও অনুশোচনা, তবে যে তা যথাযথভাবে গ্রহণ করেছে এবং তার দায়িত্ব আদায় করেছে, সে ব্যতীত। আর বান্দা কখনো এই দায়িত্ব আদায় করতে পারবে না, তবে যদি আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন ও তাওফীক দান করেন, তাকে সঠিক পথপ্রদর্শন করেন ও শোধরে দেন, তাকে দান করেন তাকওয়া এবং সম্মুখে ও পশ্চাতে তার ভয়, দান করেন দৃঢ় বিশ্বাস ও শক্তি এবং সাহায্য করেন এই কর্তৃত্ব ও দায়িত্বকে ইবাদত ও নৈকট্য লাভের মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করার জন্য, তবেই কেবল সে পারবে।

আর এর পন্থা হল আল্লাহর ইবাদতে কঠোর পরিশ্রম করা, তার কাছে মুখাপেক্ষী হওয়া, তার সামনে অসহায়ত্ব প্রকাশ করা, তার জন্য বিনয়ী হওয়া এবং প্রকাশ্যে ও গোপনে সর্বসাধ্যে তার ইবাদতে স্থির থাক। সাথে সাথে বিনয় অবলম্বন, নফস দমন ও নফসের মন্দ প্ররোচনার ব্যাপারে ভয় ও আশঙ্কায় থাকা। আর এর জন্য সহায়ক বিষয় হচ্ছে, আল্লাহকে অধিক স্মরণ করা, অধিক দু’আ করা, রাত্রিজাগরণ করা, নফল রোজা রাখা, নেককার লোক ও পরহেজগার আলেমদের সাথে উঠা-বসা করা, তাদেরকে নিকটবর্তী করা এবং পরকালকামীদেরকে নিজের একান্ত সঙ্গী, সাথী ও সহযোগী বানানো। দুনিয়াদার, অহংকার প্রদর্শনকারী, দাম্ভিক, দূরাচারী, ও কম আমানতদার লোকদের থেকে দূরে থাকা।

সম্মানিত ভাই।

এই কয়েকটি লাইন আপনাদের উদ্দেশ্যে লিখছি, আল্লাহর আদেশ পালনের চেষ্টা হিসাবে। তিনি আমাদেরকে আদেশ করেছেন পরস্পরের কল্যাণ কামনা করতে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিতে, পরস্পরকে ধৈর্য্যের উপদেশ দিতে, কল্যাণ ও তাকওয়ার কাজে একে অন্যকে সহযোগীতা করতে, মুসলমানদের জন্য ও দায়িত্বশীলদের জন্য কল্যাণ কামনা করতে, সৎকাজের আদেশ করতে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করতে, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে এবং ইলম ও আল্লাহ তা’আলা যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার নিয়ামত দান করেছেন, তার যাকাত আদায় করতে।

কোন সন্দেহ নেই, আমরা সবাই একই নৌকার যাত্রী। যেমন হাদিসে এসেছে, ইমাম বুখারী তার সহীহে এবং ইমাম তিরমিযি তার সুনানে নুমান ইবনে বশীর রা: থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি রাসূল ﷺ থেকে বর্ণনা করেন,

রাসূল  বলেন: যারা আল্লাহর সীমাসমূহের উপর প্রতিষ্ঠিত আর যারা তাতে পতিত তাদের দৃষ্টান্ত হল এমন এক সম্প্রদায়যারা লটারীতে একটি নৌকায় আরোহন করেছে। তাই কেউ উপর তলায় জায়গা পেয়েছেকেউ নিচ তলায় জায়গা পেয়েছে। ফলে নিচ তলার লোকদের পানি আনতে হলে উপর তলার লোকদের উপর দিয়ে অতিক্রম করতে হত। তাই তারা বললঅমরা আমাদের অংশে ছিদ্র করে নিবউপরওয়ালাদেরকে আর কষ্ট দিব না। এখন যদি উপর তলার লোকেরা তাদেরকে আপন কর্মে ছেড়ে দেয়তাহলে তো সকলেই ধ্বংস হবে। আর যদি অদের হস্ত চেপে ধরেতাহলে তারাও মুক্তি পাবে এবং সকলেই মুক্তি পাবে

নিঃসন্দেহে আমাদের জিহাদী উম্মতের চলার পথে সর্বদাই তারা আমাদের পক্ষ থেকে পথপ্রদর্শন ও শোধরে দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে। কারণ বিচ্যুতির পথ অনেক। আর আমাদের কেউই তা থেকে নিরাপদ নই। একমাত্র যে সর্বদা মহান আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করে এবং ভিতরে-বাহিরে, প্রকাশ্যে-গোপনে সর্বদা তার সাহায্য প্রার্থনা করে সেই মুক্ত।

আল্লাহ তা’আলা বলেন:

وَمَن يَعْتَصِم بِٱللَّهِ فَقَدْ هُدِىَ إِلَىٰ صِرَٰطٍ مُّسْتَقِيمٍ

“যে ব্যক্তি আল্লাহর আশ্রয়কে মজবুতভাবে আকড়ে ধরে, তাকে সরল পথ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়”।

সূতরাং আল্লাহর নিরাপত্তা বাৰ্তীত কোন নিরাপত্তা নেই। যে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করে সে ছাড়া কেউ ফিৎনা থেকে মুক্তি পায় না-

لا عاصم اليوم من امر الله الا من رحم

আজ আল্লাহর থেকে রক্ষা করার কেউ নেই, কেবল সেই ছাড়া যার প্রতি আল্লাহ দয়া করবেন”।

একমাত্র সেই সফল হয়, যে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করে, সর্বদা আল্লাহর কাতারে ও তার অভিভাবকত্বে থাকে, তার আদেশ পালন করে এবং তার পবিত্র সত্তার ইবাদতে রত থাকে। একমাত্র এমন ব্যক্তিই প্রকৃত সাহায্য লাভ করে, এমন ব্যক্তিই তওফীক ও সঠিক পথের দিশা লাভ করে, তারই শেষ পরিণতি সফল হয়, তারই ধ্বংসের কোন ভয় নেই এবং সেই এমন ব্যবসা এর আশাবাদী, যা কখনো লোকসান হয় না।

আল্লাহ তা’আলা বলেন:

وَمَا ٱلنَّصْرُ إِلَّا مِنْ عِندِ ٱللَّهِ ٱلْعَزِيزِ ٱلْحَكِيمِ

“সাহায্য তো কেবল পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকেই”। (সূরা আলে ইমরান:১২৬)

وَمَا ٱلنَّصْرُ إِلَّا مِنْ عِندِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

“সাহায্য তো কেবল আত্মাহর পক্ষ থেকেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। (সুরা আনফাল:১০)

আরেক স্থানে বলেন:

وَمَا تَوْفِيقِىٓ إِلَّا بِٱللَّهِۚ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ

“আর আমি যা কিছু করতে পারি, তা কেবল আল্লাহর সাহায্যেই পারি। আমি তারই উপর নির্ভর করেছি এবং তারই দিকে রুজু হই”। (সূরা হুদ:৮৮)

আরেক স্থানে বলেন:

إِنَّ ٱلَّذِينَ يَتْلُونَ كِتَٰبَ ٱللَّهِ وَأَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنفَقُوا۟ مِمَّا رَزَقْنَٰهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً يَرْجُونَ تِجَٰرَةً لَّن تَبُورَ • لِيُوَفِّيَهُمْ أُجُورَهُمْ وَيَزِيدَهُم مِّن فَضْلِهِۦٓۚ إِنَّهُۥ غَفُورٌ شَكُورٌ

“যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, নামায কায়েম করে এবং আমি তাকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে (সৎকাজে ব্যয় করে গোপনে ও প্রকাশ্যে, তারা এমন ব্যবসায়ের আশাবাদী, যা কখনো লোকসান হয় না, যাতে আল্লাহ তাদেরকে তাদের পূর্ণ প্রতিফল দেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও বেশি দান করেন। নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল, অত্যন্ত গুণগ্রাহী”। (সূরা ফাতির; ২৯,৩০)

প্রিয় ভাই!

আমাদের সর্বদা একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস চিন্তা করা উচিত:

আমাদের কী লাভ হবে, যদি আমরা শত্রুদের উপর বিজয় লাভ করি, তাদেরকে পরাজিত করি, তাদেরকে ধ্বংস করে দেই এবং তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করি…আমরা সেই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করে ফেলি, যা আমাদের উদ্দেশ্য, ইসলামী রাষ্ট্র এবং এই লড়াইয়ে এই যুদ্ধে আমরাই বিজয় লাভ করি.. কিন্তু আল্লাহ আমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট থাকেন!! আমাদের অবাধ্যতার কারণে, আমাদের প্রকাশ্য ও গোপনীয় গুনাহের কারণে? অতঃপর পরকালে আমাদের শেষ পরিণতি এই হয় যে, আমরা আগুনে প্রবেশ করি?!! আল্লাহর আশ্রয় চাই।

নবী ﷺ কি বলেননি, “আল্লাহ পাপিষ্ঠ ব্যক্তির দ্বারাও এই দ্বীনকে সাহায্য করবেন?”

তাই গুরুত্বপূর্ণ কথা এবং স্থায়ী ও অত্যাবশ্যকীয় উপদেশ হল:

আমরা বাইরে ও অন্তকরণে, গোপনে ও প্রকাশ্যে সর্বদা আল্লাহর দ্বীন, তার শরীয়ত ও তার বিধানাবলীর উপর অটল থাকি, অতঃপর আমাদের পরিবার, অনুসারী, মা’মুর/প্রজা ও অধীনস্থ তথা যারাই আমাদের কর্তৃত্বাধীন আছে, তাদের মাঝেও আল্লাহর আদেশ প্রতিষ্ঠিত করি। আমরা আল্লাহর জন্যই দান করি; আল্লাহর জন্যই বারণ করি, আল্লাহর জন্যই ভালবাসি; আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করি, আল্লাহর জন্যই বন্ধুত্ব ও নৈকট্য গ্রহণ করি; আল্লাহর জন্যই শক্রতা ও দূরত্ব অবলম্বন করি এবং আল্লাহর জন্যই সন্তুষ্ট করি; আল্লাহর জন্যই ক্রোধান্বিত করি।

প্রিয় ভাই!

কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়যা আমাদের জন্য ওয়াজিব প্রায়:

তন্মধ্যে ১.

আমরা জোর প্রচেষ্টা চালাব, আমাদের অনুসারী ও আমাদের দলের সদস্যদের মাঝে ফিকহ, বিশুদ্ধ উপকারী ইলম, অনুধাবনশীল ইলম এবং ইসলামী সংস্কৃতির বিস্তার ঘটানোর। দ্বিনী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে। শরয়ী তালিমী কোর্স (দাওরায়ে শরিয়াহ) ও ইলমী হালাকা প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে। ইলম শিখার জন্য ছাত্র প্রেরণ করার মাধ্যমে, যাতে তারা ভবিষ্যতের আলিম হতে পারে।

আমাদের মসজিদগুলোতে, নামাযের স্থানে ও সামাজিক স্থানসমূহে দরস চালু করার মাধ্যমে। কিতাবাদীর প্রসারের (প্রকাশের) মাধ্যমে। অধ্যয়ন ও ইলম অর্জনের গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে এবং নেককার ও আমানতদার আহলে ইলমদের (উলামাদের) সাহচর্য গ্রহণ ও তাদেরকে প্রাধান্য দেওয়ার মাধ্যমে।

এই বিষয়গুলোই বাপকভাবে প্রয়োজন। কারণ উপকারী ইলম এবং অধিক সংখ্যক উলামা ও তালিবুল ইলমই এই উম্মাহ ও জামাতের নিরাপত্তার চাবিকাঠি।

অতঃপর বিশেষ করে আমরা মুজাহিদ, আমাদের জন্য যে ইলমটি জানা অত্যাবশ্যক এবং আমাদের অনুসারী ও মুজাহিদ জামাতের সদস্যদের মাঝে প্রসার করা অত্যাবশ্যক, তাহলো জিহাদের বিধি-বিধান (তথা যুদ্ধ ও হত্যার বিধি-বিধান)। কাদের সাথে যুদ্ধ করা ও কাদেরকে হত্যা করা আমাদের জন্য জায়েয এবং কাদেরকে হত্যা করা নাজায়েয। কোন্ মাল আমাদের জন্য গ্রহণ করা জায়েয, কোন্ মাল গ্রহণ করা না-জায়েয? এবং আমাদের প্রত্যেকের জন্য জিহাদ ও এতদসংশ্লিষ্ট অন্যান্য স্থানে কোন কাজটি করা জায়েয, কোনটি করা না-জায়েয? এসকল বিধানগুলো জানা অত্যাবশ্যক।

এক্ষেত্রে কিছু বাপক ও সামগ্রিক মূলনীতি মুজাহিদদেরকে মেনে চলতে হয়। আর এর পূর্ণ বিশ্লেষণ জানা থাকে উলামাদের। কারণ সাধারণ মুজাহিদদের জনা সকল বিশ্লেষণ বা অধিকাংশগুলো জানাও সম্ভব নয়।

নিঃসন্দেহে জিহাদী সফর যত দীর্ঘ হয়, তাতে এমন কিছু লোকও প্রবেশ করে, যারা জিহাদের প্রকৃত লোক নয়; বরং তাদের বেশি প্রয়োজন পথপ্রদর্শন, সংশোধন, তদারকি ও পর্যবেক্ষণের। আর এই স্তরেই এখন আমরা। কারণ বর্তমানে আমরা মুজাহিদদের মাঝে অধিক ভুল-বিচ্যুতি লক্ষ্য করছি, অজ্ঞতার কারণে অথবা মুজাহিদদের কাতারে বিভিন্ন দল ও শ্রেণীর এমনসব লোকদের অনুপ্রবেশের কারণে, যারা সহীহ ইসলামী দীক্ষা পায়নি এবং যাদের মাঝে এখনো জাহেলী বৈশিষ্ট্য, চারিত্রিক ত্রুটি-বিচ্যুতি ও দ্বীনদারির ঘাটতি রয়ে গেছে। আহলে ইলমদের ভাষায় যারা হচ্ছে ‘ফুজ্জার’ (পাপী বা গুনাহগার), কিন্তু তারা জিহাদ করছে!!

তাই এটা আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, আমরা এখন জিহাদী সংগঠনগুলোর বাপারে বিকৃতি, বিচ্যুতি ও ধ্বংসের আশঙ্কা করবো। আল্লাহ তা’আলার নিকটই মুক্তি ও পরিত্রাণ কামনা করছি। তাই এখন উক্ত মাসআলাগুলোর গভীর বিশ্লেষণ আবশ্যক হয়ে পড়েছে।

তাই বলছি; আবশ্যকীয় ইলমের যে সকল শাখাগুলো আমাদের জন্য জানা ও মুজাহিদদের মাঝে প্রচার করা এবং তাকে যথার্থ ফিকহ, দৃঢ় প্রজ্ঞা ও পরিপূর্ণ দায়িত্বের সাথে উপস্থাপন করা আবশ্যক তার মধ্যে একটি হচ্ছে:

মুসলমানদের রক্তের পবিত্রতার গুরুত্বের ইলম ও তার বড়ত্বের কথা অন্তরে প্রোথিত করা। কারণ একজন মুমিনকে হত্যা করা কবীরা গুনাহ সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুনাহ। শরয়ী দলিলের আলোকে বুঝা যায়, সম্ভবত আল্লাহর সাথে কুফর ও শিরকের পরে এটাই সবচেয়ে বড় গুনাহ। কারণ কিতাব-সুন্নায় এর ধমকিগুলো সবচেয়ে ভয়ংকর। একারণে যে এতে পতিত হয়েছে তার সফল হওয়ার আশা একেবারে ক্ষীণ।

যেমন নবী ﷺ বলেছেন: “মুমিন ততক্ষণ পর্যন্ত তার দ্বীনের তাবুতে থাকে, যতক্ষণ সে কোন হারাম রক্ত প্রবাহিত করে না”। বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী। একথা বলা যাবে না যে, এটা তো প্রত্যেক মুজাহিদই জানে; কারণ বাস্তবতা তার সমর্থন দিচ্ছে না, বিশেষ করে উপজাতীয় অঞ্চলগুলোতে, আফগানিস্তানের অধিকাংশ এলাকাগুলোতে এবং পাকিস্তানের উপজাতীয় এলাকাগুলোতে। কারণ উপজাতীয় লোকদের মাঝে ঝগড়া-বিবাদের সময় অবাধে রক্তপাত করা এবং হত্যা ও প্রতিশোধের সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে প্রচলিত। যাতে সাধারণত: আল্লাহর আদেশের তোয়াক্কা হয় না এবং সত্যিকারার্থে তা মানা হয় না। হ্যাঁ, যারা মজবুত দ্বীনদার ও দৃঢ়ভাবে তাওহীদের অনুসারী তারা মেনে চলেন। তবে তাদের সংখ্যা খুব কম।

মোটকথা মুজাহিদদের কাতারসমূহে কার্যগতভাবে এই ইলমটি (অর্থাৎ মুসলমানের রক্তের উচ্চ সম্মান এবং তার হক তথা তার রক্ত, সম্পদ ও ইজ্জতের উচ্চ সম্মানের ইলমটি) প্রসার করা অ্যামাদের উপর আবশ্যক। ইলম প্রচারের সকল উপায় অবলম্বন করে এটা করা উচিত।

আমাদের আর্মির ও দায়িত্বশীলদের উপর আবশ্যক, আমরা অনুসারীদেরকে এ থেকে বাঁধা দিব, তাদেরকে তদারকি করব এবং আমাদের নিজেদের মাঝে শরীয়ত বাস্তবায়ন করব… আল্লাহর বিধানাবলী মেনে চলা, আল্লাহর ইবাদতে অটল থাকা এবং যে অবাধ্য হয় তার উপর শাস্তি প্রয়োগ করার মাধ্যমে।

আর যদি আমরা এটা না করি, আমাদের সামাজিক অবস্থান ধরে রাখার প্রতি ঝুকে পড়ি, একজন আরেকজনের সাথে সুন্দরভাবে (তাল মিলিয়ে) চলি, আমিরগণ মা’মুর বা অনুসারীদেরকে ও অধীনস্ত আমিরদেরকে তদারকি করতে, তাদের ভালো কাজের আদেশ ও অন্যায় থেকে নিষেধ করতে, তাদেরকে আল্লাহর আনুগত্যে উৎসাহিত করতে এবং আল্লাহর শরীয়তের উপর দৃঢ় করতে দুর্বলতা প্রদর্শন করি, তাহলে নিশ্চিত আমরা ব্যর্থ হব, সীমালঙ্ঘনকারী হব। আমাদের পরিণতি হবে ধ্বংস। আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি এ থেকে। হে আল্লাহ! আমরা তোমার অসন্তুষ্টি থেকে তোমারই আশ্রয় প্রার্থনা করি।

এমতাবস্থায় আপনাদের ব্যাপারে আমি, আমাদের নেতৃবৃন্দ ও আমাদের ভাইরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমরা যেকোন শরীয়ত লঙ্ঘনকারী থেকে সম্পর্কমুক্ত। আমরা সেই ব্যক্তিকেই ভালবাসি, সেই ব্যক্তির সাথেই বন্ধুত্ব করি, সেই ব্যক্তিরই নৈকট্য কামনা করি এবং সেই ব্যক্তির প্রতিই সন্তুষ্টি পোষণ করি, যে আল্লাহর বন্ধু, তার অনুগত, তার অভিমুখী, তার প্রতিই মনোযোগী, তার কৃতজ্ঞতা আদায়কারী এবং তাকে অধিক স্মরণকারী।

আর আমরা সেই ব্যক্তিকে ঘৃণা করি, তার থেকে দূরত্ব অবলম্বন করি এবং তার থেকে বেঁচে থাকি, যে এর বিপরীত। চাই সে যে-ই হোক না কেন।

এর কাছাকাছি আরেকটি বিষয় হল:

আমরা ইস্তেশহাদী অভিযান ও যে সমস্ত অভিযানে ফুকাহায়ে কেরামের ভাষায় মানবঢাল ব্যবহার করা হয় তার বিস্তারিত ফিকহ, তার সীমারেখা ও মূলনীতিসমূহের প্রতি গুরুত্ব দিব, আমাদের সদস্যদের সামনে তার ব্যাখ্যা করব, বিশেষ করে আমাদের সদস্যদের দুই শ্রেণীর লোকদের সামনে তার ব্যাখ্যা করব: সামরিক কার্যনির্বাহি নেতৃবৃন্দের সামনে (যারা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও অভিযান পরিচালনার দায়িত্বশীল) এবং কার্যকরকারী মুজাহিদদের সামনে, অর্থাৎ ফিদায়ীদের সামনে। আমরা অনেকবার ফিদায়ীদের থেকে অমনোযোগীতা, অজ্ঞতা ও গাফলতি দেখতে পেয়েছি। কখনো ফিদায়ী হয় কমবয়সী যুবক, যে উল্লেখযোগ্য কোন ইলম বা দ্বীনী তারবিয়াত অর্জন করেনি।

তার চেয়েও ভয়ংকর বিষয় হল, কখনো তাকে দ্বীনী ভ্রান্ত বিষয়টিই শিখিয়ে দেওয়া হয় (আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি)। সে তা শিখে তাই বাস্তবায়ন করে। যেমন কিছু মুজাহিদই তাকে একথা শিখায় যে, এই মহা সড়কে যে লোকগুলো (সাধারণ জনগণ) আছে, তারা মুনাফিক, তারা হকের ব্যাপারে এবং মুজাহিদদের সাহায্য করা থেকে চুপ করে আছে। তারা তাগুত ও মুরতাদদের সাথে। তারা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট… এজাতীয় আরো কথা!! এজন্য তাদের কেউ নিহত হলে তার প্রতি ভক্ষেপ করো না। তাদের রক্তের জন্য তোমার কোন হিসাব হবে না!

নিঃসন্দেহে একথাগুলো ব্যাপকভাবে বলা মারাত্মক ভুল, স্পষ্ট পথভ্রষ্টতা ও মহা ফাসাদ। কারণ মহাসড়কে, বাজারে ও সাধারণ মুসলিম শহরগুলোতে যে সকল সাধারণ জনগণ আছে, যাদেরকে তাগুতরা শাসন করছে, মৌলিকভাবে তাদের উপর ইসলামের হুকুমই আরোপ করা হয়।

এছাড়া তাদের মাঝে বহুলোকের মিশ্রণ রয়েছে। তাদের মধ্যে নেককারও আছে, বদকারও আছে। হ্যাঁ, কখনো তাদের মাঝে কাফের ও মুরতাদও পাওয়া যায়। একারণেই তো নির্দিষ্ট করে উক্ত লোকটিকে পাওয়া গেলে তার রক্ত হালাল। কিন্তু সামগ্রীকভাবে আমাদের শহরগুলোতে ও সাধারণ মুসলিম দেশগুলোতে যারা আছে, তাদের ব্যাপারে তো অকাট্যভাবে মুসলিম হওয়ার হুকুমই আরোপ করা হয়। কিতাব-সুন্নাহর দলিলসমূহের আলোকে এবং মুসলমানদের মাঝে প্রচলিত মাযহাবসমূহের ফিকহের আলোকে। এই মাসআলার বিশল আলোচনা কিতাবাদীর যথাযথ স্থানে রয়েছে। যে এর বিপরীত বলবে, নির্ঘাত সে সীমালঙ্ঘন করেছে, পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং ‘আহলে ইলমদের থেকে ভিন্ন পথ অবলম্বন করেছে।

তাই সাধারণ জনগণ মুসলমান, যদিও তাদের মধ্যে পাপ-পঙ্কিলতা, ত্রুটি-বিচ্যুতি ও জিহাদ হতে বসে থাকাসহ অন্যান্য সমস্যাবলী রয়েছে। তাই যে কোন ভ্রুক্ষেপ না করেই ইচ্ছাকৃত ভাবে জেনে শুনে তাদেরকে হত্যা করতে শুরু করে এই ধারণা করে যে, তারা এমন এমন..পূর্বে যেগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, যে ব্যাক্তি এরূপ করবে সে পথভ্রষ্ট, ইলম ও ফিকহের সীমাবহির্ভূত, হারামে লিপ্ত, আল্লাহ তা’আলার ক্রোধ, অসন্তুষ্টি ও শাস্তিতে পতিত এবং অচিরেই আল্লাহ সুবহানাহু তার উপর ব্যার্থতা চাপিয়ে দিবেন এবং তার উপর শত্রুদেরকে ক্ষমতাশালী করবেন। (নাউজুবিল্লাহ মিন যালিক)

সম্মানিত ভাই!

যদি উপরোল্লেখিত বিষয়গুলোর কোনটি আপনাদের অধীনস্ত কোন মুজাহিদের কর্মপন্থা হয়, তাহলে আশা রাখি, আপনারা শরয়ী ইলমের চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদেরকে শোধরাবেন। এটি একটি বিকল্পহীন দায়িত্ব, যা এক্ষুণি পালন করা আবশ্যক। সর্বোচ্চ দ্রুতগতিতে তাদের হাতকে নিবৃত্ত করা আবশ্যক। অন্যথায় আমি আপনাদেরকে এর ভয়াবহতা ও মন্দ পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করছি। তাই এক্ষুণি সংশোধনের জন্য অগ্রসর হউন।

এটাকেই আপনাদের সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য বিষয় বানান। আল্লাহ আপনাদের অবস্থার সংশোধন করুন এবং আপনাদেরকে সাহায্য করুন-

يا أيها الذين آمنوا إن تنصروا الله ينصركم ويثبت أقدامكم

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ় করবেন”।

অতঃপর দ্বীন ও দুনিয়ার সকল মাপকাঠিতেই এটা দেখার বিষয় যে, সেই রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও সংস্কার আন্দোলন কিভাবে সফল হতে পারে, যার অনুসারী ও দায়িত্বশীলগণ সাধারণ জনগণের কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করে না? তাদেরকে আকৃষ্ট ও অন্তর্ভূক্ত করার চেষ্টা করে না?

কিভাবে তাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও আন্দোলনের সফলতা আশা করা যায়, যখন জনগণ তাদেরকে ঘৃণা করে, প্রতিদিন তাদের থেকে পলায়ন করে? আর তাদের অবস্থার ভাষা এই প্রবাদবচনের মত: “وجدناهم اخبر تقله” “যাচাই করে দেখ, ঘৃণা করবে”। (অর্থাৎ তাদের প্রকৃত অবস্থা জানলে তাদের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হবে) কিভাবে মানুষের সেই রাজনৈতিক ব্যবস্থা সফল হতে পারে, যার ব্যাপারে মানুষের বিশ্বাস ও বক্তব্য হল:

إن تريد إلا أن تكون جبار في الأرض وما تريد أن تكون من المصلحين

“তুমি তো কেবল দেশে ক্ষমতাশালী হতে চাও, তুমি তো শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী হতে চাও না”।

যখন এরূপ মত ব্যক্তকারীদের সংখ্যা বেড়ে যাবে, মানুষের মাঝে এই ধারণা প্রসার লাভ করবে আর এই ব্যক্তির কাজ-কর্মও তার সমর্থন দিবে, তার থেকে ভুলের প্রতিবিধান আর দয়া, ভালবাসা ও অনুগ্রহ পাওয়া যাবে না, তখন!

এমনটা কিভাবে হবে, অথচ রাসূল্লাহ ﷺ, যিনি আল্লাহর নিকট সমস্ত মানুষ অপেক্ষা সম্মানিত তার ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা বলছেন:

وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ ٱلْقَلْبِ لَٱنفَضُّوا۟ مِنْ حَوْلِكَۖ

“তুমি যদি রূঢ় প্রকৃতির ও কঠোর হৃদয় হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে বিক্ষিপ্ত হয়ে যেত।”

তাই কোন সন্দেহ নেই, মুজাহিদ নেতৃবৃন্দের উপর আবশ্যকীয় দায়িত্ব, তারা নিজ অনুসারীদেরকে তালিম ও তারবিয়া দিবে এবং প্রথমে নিজেরা এই গুণে গুণান্বিত হবে, তাদেরকে মানুষের উপর স্নেহশীল, দয়াশীল ও সহজকারী হওয়ার, তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও সমস্যাবলীর উপর ধৈর্য্যশীল হওয়ার, নম্রতা, কোমলতা ও ধীরস্থীরতার সাথে তাদের সংশোধন প্রয়াসী হওয়ার এবং নিকৃষ্টতম পন্থায় তাদেরকে হত্যা ও শাস্তি প্রদানে তড়িৎপ্রবণ না হওয়ার দীক্ষা দিবে।

রাসূল ﷺ যখনই কোন সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করতেন বা কাউকে কোন দল বা সেনাবাহিনীর আমির বানাতেন, তাকেই এই উপদেশগুলো দিতেন, যা অনেক হাদিসে এসেছে:

“يسروا ولا تعسروا وبشروا ولا تنفروا “

সহজ করবে; কঠিন করবে না, সুসংবাদ দিবে; বিতশ্রদ্ধ করবে না”।

আমরা কি এ বিষয়গুলো চিন্তা করেছি? এর মর্ম উপলব্ধি করেছি ও তার উপর আমল করেছি?

তন্মধ্যে ২.

আমাদের উপর অবশ্য কর্তব্য, মুজাহিদদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে বিভিন্ন রকমের সীমালঙ্ঘন থেকে হেফাজত করা। বিশেষ করে মানুষের উপর কুফরের হুকুম আরোপ করার ব্যাপারে। কারণ দ্বীনের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন একটি মারাত্মক বিপদ। মুজাহিদগণ যেসকল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, এটা হচ্ছে তার মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট রোগ। এর কিছু অভিজ্ঞতাও রয়েছে, যা উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। যেকোন ধরণের সীমালঙ্ঘনই একটি মরণব্যাধি, যেকোন ধর্মের জনা ভয়ংকর। যেমন নবী করীম ﷺ বলেছেন: “তোমরা দ্বীনের মধ্যে সীমালঙ্ঘন করা থেকে বেঁচে থাক, কারণ তোমাদের পূর্বে যারা ছিল, দ্বীনের মধ্যে সীমালঙ্নই তাদেরকে ধ্বংস করেছে”। বর্ণনা করেছেন আহমাদ, নাসায়ী ও অন্যান্য ইমামগণ। তিনি অন্য হাদিসে বলেছেন: “মুতানাত্তিউনরা (সীমালঙ্ঘনকারীরা) ধ্বংস হোক”। তিন বার বলেছেন। বর্ণনা করেছেন ইমাম মুসলিম।

এটা দ্বীনের মধ্যে যেকোন ধরণের সীমালঙ্ঘনের বাপারে। আর যখন এই সীমালঙ্ঘন মুসলমানদেরকে তাকফীর করা, এ ব্যাপারে দুঃসাহসিকতা দেখানো ও এর ভয়াবহতাকে খাটো করার মাধ্যমে হয়, তখন তো এটা আরো বেশি ধ্বংসাত্মক ক্ষতিকারক ও বিনাশী হয়। আল্লাহ আমাদেরকে, আপনাদেরকে এবং আমাদের সকল ভাইদেরকে এর থেকে হেফাজত করুন।

আমরা বর্তমানে কিছু মুজাহিদদের ব্যাপারে শুনছি, তারা অন্যান্য মুজাহিদদেরকে বা যেমন পূর্বে উল্লেখ করা হল, সাধারণ মুসলিম জনসাধারণকে তাকফীর করছে, তাই আমাদের উচিত, সর্বাত্মকভাবে এর থেকে বেঁচে থাকা এবং সর্বশক্তি দিয়ে মুজাহিদদেরকে এব্যাপারে সঠিক মানহাজের দীক্ষা দেওয়া। আমি এ বিষয়ে অনেকগুলো অভিজ্ঞতা লাভ করেছি, তার কিছু সারাংশ আপনাদের জন্য তুলে ধরবো। আশা করি তা উপকারী হবে।  তা হচ্ছে:

আমাদের ভাইদেরকে নিজেদের দোষগুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়ার, তার সংশোধন করার ও আত্মশুদ্ধি অর্জন করার এবং মানুষের দোষ-ত্রুটির প্রতি দৃষ্টি দেওয়া থেকে দূরে থাকার দীক্ষা দিবেন। তাদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে নিরাপত্তা ও মুক্তি কামনা এবং দ্বীনের মধ্যে ইলম ছাড়া ফাতওয়া প্রদানের ভয়াবহতার দীক্ষা দিবেন। যার মধ্যে গুরুতর হল, উপযুক্ত ইলম ও কারণ ছাড়া মুসলমানদেরকে তাকফীর করার জনা সামনে বাড়া। তারা যেন উত্তম দ্বীনদারী ও পরহেজগারীর ব্যাপারে সুপ্রসিদ্ধ উলামা ও ফুকাহাদের জন্য এ দায়িত্ব ছেড়ে দেন। তাই উলামা ছাড়া সাধারাণ মুজাহিদদেরকে এ ধরণের যেকোন মাসআলা বলতে পুরোপুরি নিষেধ করা হবে। আমিরদের জন্য আবশ্যিক দায়িত্ব হল, তারা যেন সাধারণ মুজাহিদদেরকে, যাদের কাফের হওয়ার হুকুমটি ইজতিহাদী, তাদের ব্যাপারে অমুক লোক কাফের..অমুক লোক কাফের.. বলতে শুনলে রাগান্বিত হন এবং তাদেরকে এব্যাপারে কথা বলা থেকে নিষেধ করেন।

যখন আমরা এটা করতে পারব, তখন সু-সংবাদ গ্রহণ করতে পারেন সফলতার ইংশাআল্লাহ।

মুজাহিদদেরকে রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণিত এই হাদিসটির অর্থ বোঝান: “ঐ ব্যক্তির জন্য সু-সংবাদ, যার নিজের দোষ (এর চিন্তা) তাকে অন্যের দোষ (চর্চা) থেকে বিরত রেখেছে”। ইবনে হাজার (রহ:) বুলুগুল মারামে বলেন: হাদিসটি ইমাম বাজ্জার রহঃ উত্তম সনদে বর্ণনা করেছেন।

আরো শোনান যে, রাসূল ﷺ বলেছেন: “মুসলিম হল, যার হাত ও যবান থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ থাকে”। বর্ণনা করেছেন বুখারী ও মুসলিম।

আরো শুনান, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “মুজাহিদ হল, যে আল্লাহর ব্যাপারে নিজ নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করে আর মুহাজির হল, যে ঐ সকল বিষয় থেকে বিরত থাকে, যা থেকে আল্লাহ নিষেধ করেছেন”।

আরো রয়েছে মুআয ইবনে আনাস আলজুহানী রা: এর হাদিস। তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে এত এত জিহাদ করেছি। একবার লোকেরা মানুষের বাড়ি-ঘর সংকীর্ণ করে তুলল এবং রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে দিল, তখন আল্লাহর নবী ﷺ একজন ঘোষক পাঠালেন, যেন সে মানুষের মধ্যে এ ঘোষণা দেয়: “যে কারো বাড়ি সংকীর্ণ করে, কোন রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে দেয়, তার কোন জিহাদ নেই”। বর্ণনা করেছেন আবু দাউদ, আহমাদ ও অন্যান্য ইমামগণ। কোন কোন সূত্রে এই হাদিসের শব্দের মধ্যে রয়েছে: “অথবা যে কোন মুমিনকে কষ্ট দেয়, তার কোন জিহাদ নেই”।

তন্মধ্যে ৩.

মুজাহিদ নেতৃবৃন্দের উপর আবশ্যক হল, তারা সর্বাত্মক ও কঠোরভাবে সর্বদা চেষ্টা করবেন নিজেদেরকে ও অনুসারীদেরকে ঐ সকল আপদ ও ব্যাধি থেকে হেফাজত করতে, যেগুলো মুজাহিদদের মাঝে এসে থাকে। যা অনেক। তবে তার মধ্যে কয়েকটি হল: আত্মতৃপ্তি, আত্মগর্ব, অহংকার, সৃষ্টির উপর বড়ত্ব দেখানো ও তাদের উপর জুলুম করা। কারণ এগুলো হল ঈমান নষ্টকারী রোগ ও ধ্বংসের কারণ। এর থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

কারণ মুজাহিদগণ যদি আত্ম পর্যালোচনা ও উপকারী ইলমের বর্ম পরিধান না করেন, তাহলে পথের দীর্ঘতা ও নিঃসঙ্গতায় এবং তাতে যে শক্তি, প্রভাব ও বিজয় অর্জিত হয়, কখনো যে অসহযোগীতার সম্মুখীন হতে হয়, উম্মাহর এমন সন্তানদের থেকে, যাদেরকে সাহায্যকারীই মনে করা হত এবং জিহাদের পথে চলার কারণে যে অধিক সংখ্যক দুশমন ও প্রতিপক্ষের সম্মুখীন হতে হয়, তার কারণে এই সকল ব্যধিগুলো বিভিন্ন পন্থায় তার মাঝে এসে যাবে এবং বিভিন্ন কৌশল ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে তার মাঝে শয়তানের প্রবেশ করা সহজ হয়ে যাবে। ফলে শয়তান তাকে ধরে ফেলবে এবং তার একাকীত্ব ও সহায়হীনতার সুযোগে তার উপর আরাম করে বসবে। ফলে সে পড়ে যাবে মহা অনিষ্টের মধ্যে এবং শয়তান তার জিহাদকে ব্যার্থ করতে সফল হয়ে যাবে।

নবী ﷺ আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, শয়তান আদম সন্তানের জন্য আল্লাহর পথের সামনে বিভিন্ন সূরতে বসে থাকে। সে তার দ্বীন, হিজরত ও জিহাদকে নষ্ট করে দিতে চেষ্টা করে।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: “নিশ্চয়ই শয়তান আদম সন্তানের জন্য তার সকল পথে বসে থাকে। তার জন্য ইসলামের পথে বসে তাকে বলে, তুমি ইসলাম গ্রহণ করবে আর তোমার পিতৃপুরুষ ও পূর্বপুরুষের ধর্ম পরিত্যাগ করবে? তখন সে তার অবাধ্যতা করে ইসলাম গ্রহণ করে ফেলে। অতঃপর তার জন্য হিজরতে পথে বসে তাকে বলে, তুমি হিজরত করবে আর তোমার দেশ ও তোমার আকাশকে ছেড়ে যাবে? নিশ্চিত জেনে, দীর্ঘতায় হিজরতকারীর দৃষ্টান্ত হল ঘোড়ার মত। তখন সে তার অবাধ্যতা করে হিজরত করে ফেলে। অতঃপর শয়তান তার জন্য জিহাদের পথে বসে তাকে বলে, তুমি জিহাদ করবে, তা তো জান ও মালের ক্ষতি করা? তুমি যুদ্ধ করবে, নিহত হবে, তখন তোমার স্ত্রীকে অন্য কেউ বিবাহ করে ফেলবে, তোমার সম্পদ বন্টন করে ফেলা হবে? তখন সে তার অবাধ্যতা করে জিহাদে চলে যায়।

রাসূল ﷺ বলেন: যে এমন করে, আল্লাহর উপর দায়িত্ব হয়ে যায় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো। (অর্থাৎ আল্লাহ নিজের দায়িত্ব বানিয়ে নেন)। যে নিহত হয়, আল্লাহর উপর দায়িত্ব হয়ে যায় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো। যদি ডুবে মারা যায়, তাহলেও আল্লাহর উপর দায়িত্ব হয়ে যায় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো। অথবা যার সওয়ারী তার ঘাঢ় ভেঙ্গে ফেলে, তার ব্যাপারেও আল্লাহর উপর দায়িত্ব হয়ে যায় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো”। বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমাদ, নাসায়ী ও অন্যান্য ইমামগণ।

আর এর কারণ, যা পূর্বে বলেছি, দ্বীনী ফিকহের ঘাটতি। তাই এর চিকিৎসাও দ্বীনী ফিকহ ও বুঝ অর্জন, সঠিক ইসলামী তারবিয়াহ গ্রহণ ও আত্মশুদ্ধির প্রতি মনোযোগ দেওয়া। অত:পর আমিরদের মধ্যে যারা আমানতদার, নেককার, পরহেজগার, ভারসামাপূর্ণ মেজাজ ও ভারসাম্যপূর্ণ আখলাকের অধিকারী, ধৈর্য্য, সহনশীলতা ও বদান্যতার অধিকারী, যারা শুধু আল্লাহর জন্য বিলায়, কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতার আশা করে না, যারা তাদের জনগণের উপর স্নেহশীল, সৃষ্টিজীবের প্রতি দয়াশীল, যাদের প্রতি আল্লাহও দয়া করবেন, তাদেরকে দায়িত্বশীল বানানো।

আল্লাহ তা’আলা বলেন:

إِنَّمَا ٱلْمُؤْمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا۟ وَجَٰهَدُوا۟ بِأَمْوَٰلِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِۚ أُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّٰدِقُونَ (16) قُلْ أَتُعَلِّمُونَ ٱللَّهَ بِدِينِكُمْ وَٱللَّهُ يَعْلَمُ مَا فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِۚ وَٱللَّهُ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمٌ (17) يَمُنُّونَ عَلَيْكَ أَنْ أَسْلَمُوا۟ۖ قُل لَّا تَمُنُّوا۟ عَلَىَّ إِسْلَٰمَكُمۖ بَلِ ٱللَّهُ يَمُنُّ عَلَيْكُمْ أَنْ هَدَىٰكُمْ لِلْإِيمَٰنِ إِن كُنتُمْ صَٰدِقِينَ (18)

মুমিন তো তারা, যারা আল্লাহ ও তার রাসূলকে অন্তর দিয়ে স্বীকার করেছে, তারপর কোনও সন্দেহে পড়েনি এবং তাদের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। তারাই তো সত্যবাদী। (হে রাসূল! ওই গ্রাম্য লোকদেরকে) বলুন, তোমরা কি আল্লাহকে তোমাদের ঈমান সম্পর্কে অবগত করছ? অথচ আল্লাহ যা-কিছু আকাশমন্ডলীতে ও যা-কিছু পৃথিবীতে আছে, সবই জানেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞাত।

তারা ইসলাম গ্রহণ করে তোমার উপকার করেছে বলে মনে করে। তাদেরকে বলে দাও, তোমরা তোমাদের ইসলাম দ্বারা আমাকে উপকার করেছ বলে মনে করো না; বরং তোমরা যদি বাস্তবিকই (নিজেদের দাবিতে) সত্যবাদী হও, তবে (জেনে রেখ) আল্লাহই তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তোমাদেরকে ঈমানের হেদায়াত দান করেছে।

বস্তুত আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর যাবতীয় বিষয় জানেন। আর তোমরা যা-কিছু করছ, আল্লাহ তা ভালভাবে দেখছেন”। (সূরা হুজরাত: ১৫-১৮)

এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ তাআলা ঈমানের বৈশিষ্ট্যকে সীমাবদ্ধ করেছেন ঐ সকল লোকদের মাঝে, যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে, অতঃপর তাদের থেকে কোন সন্দেহ পাওয়া যায়নি এবং তারা এক আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে নিজেদের সম্পদ ও জীবন ব্যয় করে। তারপর আল্লাহ তাআলা এই আয়াতগুলোর আলোচ্য ব্যক্তিদেরকে ভৎসর্না ও ধমকি প্রদান করেছেন (তারা ছিল কিছু গ্রাম্য লোক)। কারণ তারা আত্মতৃপ্তির সাথে দাবি করেছিল এবং নিজেদের ব্যাপারে বলছিল যে, তারা ঈমান এনেছে, অথচ তারা পূর্বোক্ত গুণগুলোতে গুণান্বিত হয়নি। আল্লাহ তাআলা তাদের আরো নিন্দা করলেন যে, তারা নিজেদের ইসলামের দ্বারা রাসূল ও মুমিনদের উপর অনুগ্রহ প্রকাশ করছিল। তাই আল্লাহ তা’আলা রাসূল কে আদেশ করেন, তাদেরকে নিজেদের ইসলামের দ্বারা অনুগ্রহ প্রকাশ করতে নিষেধ করতে এবং জানিয়ে দিলেন যে, অনুগ্রহ কেবল আল্লাহরই।

প্রকৃত মুমিনদের গুণাবলী উল্লেখ করার পর মৌখিক দাবির উপর আত্মতৃপ্ত হওয়ার নিন্দা করা এবং অনুগ্রহ প্রকাশ ও প্রকাশকারীদের নিন্দা করার মাঝে এই রোগটির আশঙ্কা, ঈমানের সাথে তার বৈপরীত্ব ও মুমিনের বৈশিষ্টোর সাথে তার অসামঞ্জসাতার ইঙ্গিত রয়েছে। আল্লাহই ভাল জানেন।

তন্মধ্যে ৪.

মুজাহিদ নেতৃবৃন্দের আবশ্যকীয় দায়িত্ব হল, তারা মুজাহিদদের কাতারসমূহকে নিশ্চিদ্র করা, তাদের মাঝে সম্প্রীতি স্থাপন করা, তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং তাদের একজনের সাথে আরেকজনের ভালবাসা স্থাপন করার চেষ্টা করবেন যেকোন শরয়ী পন্থায়, চাই তা কথা হোক বা কাজ হোক। তাদেরকে সেইভাবে গঠন করবেন, যেমন নবী করীম ﷺ বলেছেন: “পারস্পরিক ভালবাসা, দয়া ও অনুগ্রহের ক্ষেত্রে মুমিনদের দৃষ্টান্ত হল একটি দেহ, যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয়, তখন তার জন্য সমস্ত শরীর জ্বর ও অনিদ্রায় ভোগে। বর্ণনা করেছেন বুখারী ও মুসলিম।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلَّذِينَ يُقَٰتِلُونَ فِى سَبِيلِهِۦ صَفًّا كَأَنَّهُم بُنْيَٰنٌ مَّرْصُوصٌ

“নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ সকল লোকদেরকে ভালবাসেন, যারা তার পথে এমনভাবে কাতারবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে, যেন তারা শিশাঢালা প্রাচীর”।

তাহলে আল্লাহ তা’আলা এটাকে ভালবাসেন, এটা পছন্দ করেন এবং এর আদেশ করে। সুতরাং আমাদের উপর আবশ্যক হল, এটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা।

আর এটা হবে মুমিনদের মাঝে ভালবাসা সৃষ্টির বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করার মাধ্যমে এবং তার বিপরীত মতভিন্নতা, বিচ্ছিন্নতা, বিভেদ, শক্রতা, অভিশম্পাত ও ছিদ্রান্বেষণের উপকরণগুলো বন্ধ করার মাধ্যমে।

আর আমরা তো জানি, আমাদের পবিত্র শরীয়ত পারস্পরিক ভালবাসা সৃষ্টির বিশদ উপায়সমূহের মধ্যে অনেক বাক্যও শিখিয়েছে এবং পারস্পরিক সম্পর্কচ্ছেদ, দোষচর্চা, শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টির সর্বপ্রকার উপকরণ থেকে সতর্ক করেছে বিস্তারিতভাবে, ব্যাপক ও সাধারণভাবে। এটা আল্লাহ প্রদত্ত মহান শরীয়তের সৌন্দর্য্যাবলীরই অংশ। এব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা অনেক দীর্ঘ হবে। তাই তা যথাস্থানে আহলে ইলমের কিতাবসমূহে দেখা যেতে পারে। যেমন সুলুক, আখলাক ও ফাযায়েলের কিতাবসমূহ এবং হাদিস ও হাদিসের ব্যাখ্যাগ্রন্থসমূহ।

আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল ﷺ বলেন: “তোমরা কুধারণা থেকে বেঁচে থাক। কারণ কুধারণা হল সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা। তোমরা খোটাখোটি করো না, দোষ তালাশ করো না, পরস্পরে বিবাদ করো না, পরস্পরে হিংসা করো না, পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ রেখো না এবং একে অপরের গীবত করো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা ও পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও, যেমন তোমাদেরকে আল্লাহ আদেশ করেছেন। এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না, তাকে ছেড়ে দিবে না এবং তাকে অবজ্ঞা করবে না। তাকওয়া এখানে। তাকওয়া এখানে। তাকওয়া এখানে। এই বলে তিনি তাঁর বুকের দিকে ইশারা করেন। কোন মুসলিমের নিকৃষ্ট হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার ভাইকে তুচ্ছ করে। মুসলিমের প্রতিটি বস্তু অন্য মুসলিমের উপর হারাম তথা তার রক্ত, তার ইজ্জত ও তার সম্পদ”। বর্ণনা করেছেন ইমাম মালেক, বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ ও তিরমিযি। শব্দ মুসলিমের। যা ইমাম মুনযিরির আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব কিতাবে এসেছে।

মোটকথা, মুজাহিদ নেতৃবৃন্দের এর প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

এ স্থানে এই ব্যাপারে মুজাহিদদের মাঝে প্রত্যক্ষমান কিছু ভুল-ত্রুটির স্বরূপ উল্লেখ করা মন্দ হবে না, যাতে তার প্রকৃত রূপ ও তার প্রতিকারের ব্যাপারে পরিপূর্ণ সচেতন হওয়া যায় এবং যাতে আমরা তা কার্যত বাস্তবায়ন করতে পারি। কারণ ইলমের উদ্দেশ্যই হচ্ছে আমল। সেগুলোর মধ্যে একটি হল:  কিছু আমিরগণ এতে সন্তুষ্ট হয় যে, তার অনুসারী ও সৈন্যগণ অন্যান্য আমির ও মুজাহিদদের সম্মানে আঘাত হানুক। তারা তাদেরকে এ থেকে নিষেধ করেন না। বরং কখনো তারা এর উপর উৎসাহ ও সাহস দেন। কোন বিরোধের কারণে অথবা অন্য আমিরের সাথে বিদ্বেষ থাকার কারণে অথবা তার উপর প্রভাবশালী হওয়া ও তাকে তুচ্ছ করার ইচ্ছায়।

এটি একটি ব্যাধি, প্রত্যেকের নিজেরই এর চিকিৎসা করার দায়িত্ব। এক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের দায়িত্ব, তাদের নেতৃত্বাধীন তাদের অধীনস্তদেরকে পর্যবেক্ষণ করা, চিকিৎসা করা, বোঝানো এবং শাস্তি দেওয়া এবং আমিরদের উচিত তাদের অনুসারীদের মাঝে অন্যান্য আমির ও মুজাহিদদের ব্যাপারে কোন কথা শুনতে পেলে তাদেরকে নিষেধ করা। তাদেরকে গীবত, অপবাদ, মুসলমানদের সম্মানের ব্যাপারে যবান চর্চা করা এবং যবানের সকল অপচর্চা থেকে ও অহেতুক কথাবার্তা থেকে বিরত রাখা।

আর আমির এগুলো কিভাবে করবেন, যদি তিনি স্বীয় দ্বীনের ব্যাপারে বুঝমান, আল্লাহর পরিচয় লাভকারী, মুত্তাকী, আল্লাহর জন্য আত্মসমালোচনাকারী ও তার জন্য একনিষ্ঠ না হন?!

মুজাহিদদের সংগঠন ও দলসমূহের মধ্যে এটা অনেক বেশি হয় যে, তারা নিজেদের দলের, নিজেদের আমিরদের ও নিজেদের কাজ-কর্মের প্রশংসা করেন এবং তা নিয়ে পরস্পরের সাথে গর্ব করতে থাকেন আর অন্যদেরকে তুচ্ছ করেন এবং তাদের ব্যাপারে এমন কটুক্তি করতে থাকেন যে, তারা কাজ করে না, তারা কিছুই করেনি। আমরা কাজ করেছি। আমরা অনেক বীরত্বের স্বাক্ষর রেখেছি, অনেক অভিযান পরিচালনা করেছি।

এতে কয়েক প্রকার আত্মিক ব্যধির সংমিশ্রণ রয়েছে। আল্লাহ তা’আলার নিকট মুক্তি ও নিরাপত্তা কামনা করছি। জিহাদী নেতৃবৃন্দের অবশ্য দায়িত্ব, এ সবগুলোর সংশোধন করা । বিনয়, ইখলাস ও মন্দ পরিণতির ভয় সৃষ্টির মাধ্যমে। আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট। তিনি উত্তম কর্মবিধায়ক।

কুধারণা। কুধারণা কি জিনিস আপনি জানেন? এটা মুজাহিদদের মাঝে অনেক বেশি। এটা তাদেরকে একজন আরেকজনের সমালোচনা করা ও একজন আরেকজনের উপর অপবাদ দেওয়া পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। একজন আরেকজনের ব্যাপারে অভিযোগ করে যে, তার এই এই উদ্দেশ্য। আরেকজন তার ভাইয়ের একটি কথা বা কাজকে এমন দুনিয়াবী ব্যাখ্যা করে, যার ভিত্তি হচ্ছে নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নামা, প্রভাবশালী হওয়া এবং ক্ষমতা ও সম্মান অর্জন করা।

একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়, সে শত্রুর গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। এধরণের আরো অনেক, যা গুণে শেষ করা যাবে না প্রায় । এটা চরম আশঙ্কাজনক বিষয় ।

তাই জিহাদী নেতৃবৃন্দের আবশ্যক, তারা যেন একজন মুসলিমের অন্য মুসলিম ভাইয়ের প্রতি সুধারণা রাখার। ব্যাপারে সকল মানুষের জন্য আদর্শ হন এবং এই উন্নত চরিত্র ও মহান বৈশিষ্ট্য তার অনুসারী ও সৈনিকদেরকেও শিক্ষা দান করেন। আমরা আল্লাহর তা’আলার নিকট প্রার্থনা করি, আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাদেরকে পূর্ণাঙ্গ ঈমান নসীব করুন, আমাদেরকে নেক আমলের তাওফীক দান করুন, আমাদেরকে আমাদের জিহাদ ও হিজরত সংরক্ষণ করার তাওফীক দান করুন, তার দয়া, অনুগ্রহ ও মহানুভবতায় আমাদের জন্য তা পরিপূর্ণ করে দিন। নিশ্চয়ই তিনি নেয়ামত ও অনুগ্রহের মালিক। তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তিনি ছাড়া কোন রব নেই। সবশেষে সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। রহমত বর্ষিত হোক মুহাম্মদ ﷺ তার পরিবারবর্গ ও তার সমস্ত সাহাবীদের উপর।

ওয়াসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।

যুলহিজ্জাহ১৪৩১ হিঃ।

(Visited 504 times, 1 visits today)