সংশয়ঃ সাহাবী হাতিব বিন আবি বালতা’আ কাফিরদের সাহায্য করেছিলেন

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

তাওয়াগিতদের কুফর ঢেকে রাখার জন্য তাদের সর্বাধিক অনুগত সেনা মুরজিয়া সালাফিদের একটি নিকৃষ্ট যুক্তি/বিদ’আতি ব্যাখ্যা হলো-
“বদরি সাহাবি হাতিব ইবনে বালতা’আ রাদিঃ মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদের সাহায্য করেছেন (নাউজুবিল্লাহ) অথচ রাসুল সাঃ উনাকে কাফির বলেন নি তাই
আমেরিকা-ইজরায়েল ও অন্যান্য কাফিরদেরকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক উপায়ে সাহায্য করা সত্ত্বেও সৌদি ও অন্যান্য সমগোত্রীয় (মুরতাদ) শাসকগোষ্ঠী  কুফরে লিপ্ত নয়।”

সুবহান’আল্লাহ! নিজেদের মিথ্যা ইলাহ’র কুফরকে গোপন করার জন্য এসকল জ্ঞানপাপী নব্য মুরজিয়ারা সাহাবিদের গায়ে কুফরের কালিমা লেপনের ক্ষেত্রেও সংকোচবোধ করে না।

আল্লাহ তা’আলার লানত বর্ষিত হোক সাহাবিদের উপর অপবাদ আরোপকারী ও মিথ্যাবাদীদের উপর। আমিন।

বরং, একই সাথে আমরা বিপরীতটিই দেখব যে, হাতিব ইবনে বালতা’আ রাদিঃ’র ঘটনা নব্য মুরজিয়াদের দাবীকে মূলত মিথ্যা প্রতিপন্ন করে অর্থাৎ মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদের সাহায্য করা সুস্পষ্ট কুফর।

ইনশা’আল্লাহ আমরা সুস্পষ্ট দলীল সহকারে বিষয়টি পর্যালোচনা করব যাতে মুসলিম ভাই-বোনেরা আহলে হাদিস/সালাফি নাম দেখে বিভ্রান্ত হয়ে মুরজিয়াদের ফাঁদে পা না দেন।


এবং আল্লাহ তা’আলাই একমাত্র তাওফিকদাতা।
আলী (রাদিঃ) বর্ণনা করেন:

بَعَثَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَا وَالزُّبَيْرَ وَالْمِقْدَادَ فَقَالَ انْطَلِقُوا حَتَّى تَأْتُوا رَوْضَةَ خَاخٍ فَإِنَّ بِهَا ظَعِينَةً مَعَهَا كِتَابٌ فَخُذُوهُ مِنْهَا فَانْطَلَقْنَا تَعَادَى بِنَا خَيْلُنَا حَتَّى أَتَيْنَا الرَّوْضَةَ فَإِذَا نَحْنُ بِالظَّعِينَةِ فَقُلْنَا أَخْرِجِي الْكِتَابَ قَالَتْ مَا مَعِي مِنْ كِتَابٍ قُلْنَا لَتُخْرِجِنَّ الْكِتَابَ أَوْ لَنَقْلِبَنَّ الثِّيَابَ قَالَ فَأَخْرَجَتْ الْكِتَابَ مِنْ عِقَاصِهَا فَأَخَذْنَا الْكِتَابَ فَأَتَيْنَا بِهِ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِذَا فِيهِ مِنْ حَاطِبِ بْنِ أَبِي بَلْتَعَةَ إِلَى نَاسٍ مِنْ الْمُشْرِكِينَ بِمَكَّةَ يُخْبِرُهُمْ بِبَعْضِ أَمْرِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا حَاطِبُ مَا هَذَا قَالَ لَا تَعْجَلْ عَلَيَّ إِنِّي كُنْتُ امْرَأً مُلْصَقًا فِي قُرَيْشٍ وَلَمْ أَكُنْ مِنْ أَنْفُسِهَا وَكَانَ مَنْ كَانَ مَعَكَ مِنْ الْمُهَاجِرِينَ لَهُمْ قَرَابَاتٌ يَحْمُونَ أَهْلِيهِمْ بِمَكَّةَ فَأَحْبَبْتُ إِذْ فَاتَنِي ذَلِكَ مِنْ النَّسَبِ فِيهِمْ أَنْ أَتَّخِذَ فِيهِمْ يَدًا يَحْمُونَ بِهَا قَرَابَتِي وَمَا فَعَلْتُ ذَلِكَ كُفْرًا وَلَا ارْتِدَادًا عَنْ دِينِي وَلَا رِضًا بِالْكُفْرِ بَعْدَ الْإِسْلَامِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّهُ قَدْ صَدَقَكُمْ فَقَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ دَعْنِي أَضْرِبْ عُنُقَ هَذَا الْمُنَافِقِ فَقَالَ إِنَّهُ قَدْ شَهِدَ بَدْرًا وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّ اللَّهَ قَدْ اطَّلَعَ عَلَى أَهْلِ بَدْرٍ فَقَالَ اعْمَلُوا مَا شِئْتُمْ فَقَدْ غَفَرْتُ لَكُمْ-

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে যুবাইরকে এবং মিকদাদকে এই বলে প্রেরণ করলেন, তোমরা ‘রওদাতা খাক’ এ পৌঁছা পর্যন্ত যেতেই থাকবে। তোমরা সেখানে গিয়ে একজন বৃদ্ধাকে দেখতে পাবে যার সাথে একটি পত্র আছে। তোমরা সেটি তার কাছ থেকে নিয়ে আসবে।

আমাদের ঘোড়া আমাদেরকে নিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে লাগল ফলে আমরা রওয়দাতে এসে পৌঁছলাম।

আমরা সেখানে একজন বৃদ্ধাকে দেখতে পেলাম। আমরা তাকে বললাম, চিঠি বের করো। সে বলল, আমার কাছে কোন চিঠি নেই। আমরা বললাম, তুমি কি চিঠি বের করবে নাকি আমরা তোমার কাপড়-চোপড় খুলে ফেলব?

তিনি বলেন: অতঃপর সে তার বেণী বাঁধা ফিতা থেকে চিঠি বের করলো। আমরা চিঠিটি নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এলাম।

আমরা দেখতে পেলাম চিঠিটি প্রেরণ করা হয়েছে হাতিব বিন আবী বালতা’আর পক্ষ থেকে মক্কার কয়েকজন মুশরিকদের নিকট। তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কিছু বিষয় তাদেরকে অবগত করানো হয়েছে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: হাতিব এটা কি?

হাতিব বললেন:


“আমার (ফায়সালার) ব্যাপারে তাড়াহুড়া করবেন না।
আমি কুরাইশদের সাথে একজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ছিলাম। তবে তাদের বংশের মধ্য থেকে ছিলাম না। আর আপনার সাথে যে সব মুহাজিরগণ আছেন তাদের রয়েছে নিকটাত্মীয় যারা মক্কায় তাদের পরিবার পরিজনের রক্ষণাবেক্ষণ করে।
তাই আমার কাছে ভালো মনে হয়েছিল যে, যখন আমার সাথে তাদের বংশীয় সম্পর্ক নেই, তাদের মাঝে আমার একটি কর্তৃত্ব থাকবে যার ফলে তারা আমার নিকটাত্মীয়দেরকে হেফাজত করবে।
আমি তো এটি কুফরী হিসাবে অথবা দ্বীন ত্যাগ করতে বা ইসলামের পর পুনরায় কুফরের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে করিনি।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “সে সত্য বলেছে।”উমর (রাদিঃ) বললেন: “আমাকে অনুমতি দিন, আমি এই মুনাফিকের গর্দান দ্বি-খন্ডিত করে ফেলি।’
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “সে তো বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। আর নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা বদরী সাহাবিদের বিষয়ে অবগত আছেন।
আল্লাহ তা’আলা বলে দিয়েছেন: তোমরা যা ইচ্ছা করো কেননা আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।”

[সনদ: সহীহ, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং:৬০০, খন্ড:২, পৃষ্ঠা:৩৭, এছাড়া বুখারী মুসলিম সহ অন্যান্য হাদীসের কিতাবেও হাদীসটি বর্ণিত আছে]

ঘটনাটি যা প্রমাণ করে…


উপরোক্ত ঘটনাটি কয়েকভাবে প্রমাণ করে যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কাফেরদেরকে সাহায্য করার মূল হুকুম হলো তা কুফর ও রিদ্দাহ।

প্রথমত: বিষয়টি অবলোকন করার পর নবুয়্যাতের মেজাজধারী সাহাবী উমর (রাদিঃ) এর প্রতিক্রিয়া:

এক. তিনি বলেছিলেন: دَعْنِي أَضْرِبْ عُنُقَ هَذَا الْمُنَافِقِ আমাকে অনুমতি দিন আমি এই মুনাফিকের গর্দান দ্বি-খন্ডিত করে ফেলি।

দুই. স্বয়ং উমর (রাদিঃ) থেকে অপর একটি সহীহ রেওয়ায়েয়েত বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন:


فاخترطت سيفي و قلت: يا رسول الله أمكني منه فإنه قد كفر فاضرب عنقه)المستدرك على الصحيحين

অতঃপর আমি আমার তরবারী কোষমুক্ত করলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রাসূল আমাকে সুযোগ দিন, আমি তার গর্দান দ্বি-খন্ডিত করে ফেলি কেননা সে কুফরী করেছে।

[আল-মুসতাদরিক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং:৬৯৬৬, খন্ড:৪, পৃষ্ঠা:৮৭; আল-জাম‘য়ূ বাইনাস সহীহাইন, হাদীস নং:৮৫, খন্ড:১, পৃষ্ঠা:৬৫]


তিন. অপর একটি রেওয়ায়েতে এসেছে:


فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم: أليس قد شهد بدرا ؟ قالوا: بلى يا رسول الله قال عمر: بلى ولكنه قد نكث وظاهر أعداءك عليك- [ مسند أبي يعلى ]

অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: সে কি বদরে অংশগ্রহণ করেনি?
সাহাবারা (রাদিঃ) বললেন: হ্যাঁ, আল্লাহর রাসূল।
উমর (রাদিঃ) বললেন: হ্যাঁ, তবে সে ভঙ্গ করেছে, আপনার বিরুদ্ধে আপনার শত্রুদেরকে সাহায্য করেছে।

[ফাতহুল বারী, খন্ড:৪, পৃষ্ঠা:৬৩৪, মুসনাদু আবী ই‘য়লা, হাদীস নং:৩৯৭, খন্ড:১, পৃষ্ঠা:৩১৬]


এর থেকে স্পষ্টভাবে বুঝে আসে উমর (রাদিঃ) মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদেরকে সাহায্য করাকে কুফর ও রিদ্দাহ মনে করতেন।

কেননা বিষয়টি যদি কুফর ও রিদ্দাহ না হয়ে অন্য কোন অপরাধ হতো তাহলে তিনি হাতিব বিন আবী বালতা‘আ (রাদিঃ) কে কখনই হত্যা করতে উদ্যত হতেন না। এবং এটা তার জন্য বৈধও ছিলো না।

দ্বিতীয়ত: মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদেরকে সাহায্য করা কুফর ও রিদ্দাহ না হলে, উমর (রাদিঃ) যখন তাকে মুনাফিক বললেন, তিনি কুফরী করেছেন বললেন, তাঁর গর্দান উড়িয়ে দিতে চাইলেন তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিশ্চিত বলতেন, এমন অপরাধের কারণে কেন তুমি মুসলমান কাফের হয়ে গেছে বলছো, মুসলমানকে হত্যা করতে চাচ্ছো – যা কুফর বা রিদ্দাহ নয়।

কেননা কোন নবীর পক্ষে সম্ভবপর নয় তিনি কোন ভুল বা অন্যায় সামনা-সামনি দেখেও সে ব্যাপারে কিছু না বলে চুপ থাকবেন।

এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উমর (রাদিঃ) এর মতকে ভুল সাব্যস্ত না করে হাতিব বিন আবী বালতা‘আ (রাদিঃ) এর বিষয়টি উত্থাপিত করলেন। তার ক্ষেত্রে কেন এই হুকুম প্রযোজ্য হবে না তার কারণ বর্ণনা করলেন,

“সে তো বদরী সাহাবী, আল্লাহ তা’আলা তার পূর্বা-পর সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন, (অপর রেওয়ায়েতে এসেছে তিনি বলেছেন) এদের জন্য তো জান্নাত ওয়াজিব।’ যদি এমনটি না হতো তাহলে তিনি বলতেন, তুমি যে মত ব্যক্ত করছো সে মতটি কারো ক্ষেত্রেই সঠিক নয় [চাই সে বদরী হোক বা না হোক]।”

 

হাতিব বিন আবী বালতা‘আ (রাদিঃ) কি লিখেছিলেন সেই চিঠিতে?


হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) বর্ণনা করেন, চিঠির শব্দগুলো ছিল-

أما بعد يا معشر قريش فإن رسول الله صلى الله عليه و سلم جاءكم بجيش كالليل يسير كالسيل فوالله لو جاءكم وحده لنصره الله وأنجز له وعده فانظروا لأنفسكم والسلام

ওহে কুরাঈশ বাসী! আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সৈনিকদেরকে নিয়ে ধেয়ে আসছেন অন্ধকার রাত্রির ন্যায়, যার গতি হলো সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায়।
সুতরাং আল্লাহর শপথ তিনি যদি একাও তোমাদের বিরুদ্ধে আসেন অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা তাকে সাহায্য করবেন। তাকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবেন। সুতরাং তোমরা নিজেদের ব্যাপারটি ভেবে দেখ। শেষ করলাম।
[ফাতহুল বারী, খন্ড:৭, পৃষ্ঠা:৫২০]


ওকিদী (রহঃ) তার প্রসিদ্ধ কিতাব ‘আল-মাগাজী’তে ইকরিমা (রাদিঃ) এর একটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেন, সেই রেওয়ায়েত অনুযায়ী তার চিঠির বাক্যগুলো ছিল এই:

إنّ رَسُولَ اللّهِ قَدْ أَذّنَ فِي النّاسِ بِالْغَزْوِ وَلَا أَرَاهُ يُرِيدُ غَيْرَكُمْ وَقَدْ أَحْبَبْت أَنْ تَكُونَ لِي عِنْدَكُمْ يَدٌ بِكِتَابِي إلَيْكُمْ

আল্লাহর রাসূল মানুষের মাঝে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন। আমার মনে হচ্ছে এবার তাঁর উদ্দেশ্য হলো তোমরাই। আর আমি ভাল মনে করেছি এ চিঠি পাঠানোর মাধ্যমে তোমাদের কাছে আমার একটি মূল্যায়ন থাকুক।
[আল-মাগাযী, খন্ড:১, পৃষ্ঠা:৭৯৯]

 


একটি সংশয়: হাতিব বিন আবী বালতা‘আ (রাদিঃ) মক্কার মুশরিকদেরকে সাহায্য করার পদক্ষেপ নেবার পরও যেহুতু তার উপর কুফরের হুকুম সাব্যস্ত হচ্ছে না তাহলে অন্য কেউ যদি অন্য কোন ভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদেরকে সাহায্য করে তাহলে তার উপর কেন কুফর ও রিদ্দাহর হুকুম বর্তাবে?

যে কারণে হাতিব (রাদিঃ) এর উপর উপরোক্ত হুকুম বর্তায়নি:
‘মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদেরকে সাহায্য করা কুফর ও রিদ্দাহ’ এটি উম্মাতের ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত একটি মাসআলা এ ব্যাপারে কোন সন্দেহের আবকাশ নেই।

যদি এমনটি হয়ে থাকে তাহলে হাতিব (রাদিঃ) এর ক্ষেত্রে এ হুকুম প্রযোজ্য হলো না কেন?

এর উত্তরটি দু’ভাবে দেয়া যায়:


এক. তার উপরোক্ত কাজ মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদেরকে সাহায্যের অন্তর্ভূক্ত ছিল না।
হাতিব (রাদিঃ) না কাফেরদের পক্ষ নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন না তাদেরকে মাল দিয়ে সাহায্য করেছেন। কাফেরদেরকে এমন কোন তথ্য জানানোও তার উদ্দেশ্য ছিল না যা দ্বারা তারা লাভবান হবে।

তিনি তো মুশরিকদের বিরুদ্ধে পূর্ব থেকে যুদ্ধ চালিয়ে আসছিলেন এবং উক্ত যুদ্ধেও তাদের বিরুদ্ধেই বের হয়েছিলেন। সুতরাং তার এ কাজ সে পর্যায়ের ছিল না যাকে কুফরের অন্তর্ভূক্ত করা যায়। তবে তার এ কাজটি কুফরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। তাই উমর (রাদিঃ) তাঁকে মুনাফিক ভেবেছিলেন ও হত্যা করতে উদ্যত হয়ে ছিলেন।

দুই. তার উপরোক্ত কাজ মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদেরকে সাহায্যের অন্তর্ভূক্ত ছিল, তবে…..!!!

যদি ধরেও নেয়া হয় তার এ কাজ মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদেরকে সাহায্যের অন্তর্ভূক্ত ছিল, তথাপি এটা দ্বারা এ প্রমাণ পেশ করা সম্ভব নয় যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদেরকে সাহায্য কুফর ও রিদ্দাহ নয়।
.
কেননা সে ক্ষেত্রে তার উপর হুকুম না বর্তানোর কারণ হলো তার মাঝে الكفر موانع বিদ্যমান ছিল (এমন কিছু বিষয়, কোন ব্যক্তির থেকে যদি কুফর প্রকাশ পায় আর তার কোন একটিও ঐ ব্যক্তির মাঝে বিদ্যমান থাকে তাহলে কুফরের বিধান তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না)।

[ক] তার জানা ছিল না এতটুকু কাজও কুফরের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে।

যেমনটি তিনি নিজেই বলেন:

وَمَا فَعَلْتُ ذَلِكَ كُفْرًا وَلَا ارْتِدَادًا عَنْ دِينِي وَلَا رِضًا بِالْكُفْرِ بَعْدَ الْإِسْلَامِ
আমি তো এটি কুফরী হিসাবে অথবা দ্বীন ত্যাগ করতে বা ইসলামের পর পুনরায় কুফরের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে করিনি।

অপর একটি সহীহ রেওয়ায়েতে এসেছে,

যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কেন এমনটি করলে? প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন:


أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لَنَاصِحٌ لِلَّهِ وَرَسُولِهِ ،
“আল্লাহর শপথ আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ব্যাপারে কল্যাণকামী।”

 

[খ] তিনি এ ক্ষেত্রে মুওাউয়িল ছিলেন, তার ইজতিহাদ ছিল এর দ্বারা মুসলমানদের কোন ক্ষতি হবে না, তাই এই সাহায্য কুফরের অন্তর্ভূক্ত হবে না।
তিনি বলেন:


فَكَتَبْتُ كِتَابًا لاَ يَضُرُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ شَيْئًا
“আমি তো এমন চিঠি লিখেছি যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কোন ক্ষতি করবে না।”
[আল-মুসতাদরিক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং:৬৯৬৬, খন্ড:৪, পৃষ্ঠা:৮৭; আল-জাম‘য়ূ বাইনাস সহীহাইন, হাদীস নং:৮৫, খন্ড:১, পৃষ্ঠা:৬৫]

(পাঠক আপনি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করুন! আমাদের উপর চেপে থাকা মুরতাদ শাসকগোষ্ঠীর কারণে লক্ষ লক্ষ মুসলিমের জীবন, সম্পদ, সম্ভ্রম নষ্ট হয়েছে। কীভাবে তাদের সাথে হাতিব রাদিঃ এর তুলনা হতে পারে!!!)

অপর রেওয়ায়েতে এসেছে তিনি বলেছেন:


قَدْ عَلِمْتُ أَنَّ اللَّهَ مُظْهِرٌ رَسُولَهُ وَمُتِمٌّ لَهُ أَمْرَهُ
আর আমি জানি নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তার রাসূলকে সাহায্য করবেন, এবং তার বিষয়টিকে পূর্ণতা দান করবেন। [মুসনাদে আহমাদ, খন্ড:২৩, পৃষ্ঠা:৯১ ]

হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন:

فإنه صنع ذلك متأولا أن لا ضرر فيه
তিনি এমনটি করেছিলেন এই ব্যাখ্যা করে (মনে করে) যে তাতে কোন সমস্যা নেই। [ফাতহুল বারী, খন্ড:৮, পৃষ্ঠা:৬৩৪]

এ ছাড়াও উপরোক্ত হাতিব (রাদিঃ) এর ঘটনাটিকে ইমাম বুখারী (রহঃ) যে অধ্যায়ে নিয়ে এসেছেন তা হলো: [ما جاء في المتأولين] তাবীলকারীদের ব্যাপারে বর্ণিত হাদীস। যা প্রমাণ করে তিনি তাকে মুওাউয়িলদের অন্তর্ভূক্ত মনে করতেন।

আর তার পরিবার-পরিজন মুশরিকদের মাঝেই ছিল, তিনি কুরাঈশ বংশের না হওয়ার কারণে তার এমন কোন নিকটাত্মীয় ছিল না যারা তাদের দেখাশোনা করবে।

তাই তিনি তাদের ব্যাপারে আশংকাগ্রস্ত ছিলেন যে তারা না এদের কোন ক্ষতি করে বসে। তাই তিনি নিজে নিজে এমন এক পদ্ধতি বেছে নিতে চেয়েছিলেন, যার দ্বারা দ্বীনেরও কোন ক্ষতি হবে না আর তার পরিবারেরও কিছুটা লাভ হবে।

যেমনটি তিনি উল্লেখ করেছেন:


وَلَكِنْ كُنْتُ غَرِيبًا فِي أَهْلِ مَكَّةَ ، وَكَانَ أَهْلِي بَيْنَ ظَهْرَانَيْهِمْ فَخِفْتُ عَلَيْهِمْ ، فَكَتَبْتُ كِتَابًا لاَ يَضُرُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ شَيْئًا ، وَعَسَى أَنْ تَكُونَ فِيهِ مَنْفَعَةٌ لأَهْلِي

আমি ছিলাম মক্কাবাসীদের মাঝে আগন্তুক এক ব্যক্তি। আমার পরিবার তাদের মাঝেই বসবাস করতো, আর আমি ছিলাম তাদের ব্যাপারে আশংকাগ্রস্ত তাই আমি এমন চিঠি লিখেছি যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য কোন ক্ষতির কারণ হবে না।
আর আমার আশা ছিল এর দ্বারা আমার পরিবার হয়তো কিছুটা উপকৃত হবে।

[আল-মুসতাদরিক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং:৬৯৬৬, খন্ড:৪, পৃষ্ঠা:৮৭; আল-জাম‘য়ূ বাইনাস সহীহাইন, হাদীস নং:৮৫, খন্ড:১, পৃষ্ঠা:৬৫]

 

[গ] তার জীবনের পূর্বা-পর সকল গুনাহ ক্ষমা করা হয়েছিল:
.
তিনি ছিলেন বদরী সাহাবীদের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ তা’আলা যাদের জীবনের পূর্বা-পর সকল গুনাহ পূর্ব থেকেই ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, যারা ছিলেন নিশ্চিত জান্নাতী। তিনি স্বয়ং প্রতিটি জিহাদে জান-মাল দ্বারা কাফেরদের বিরুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এমনকি উক্ত জিহাদটিতেও তিনি মক্কার মুশরিকদের বিরুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে বের হয়েছিলেন।

আর তিনি জানতেন মুসলমান ও কাফেরদের মাঝে চলমান লড়াইয়ে যে বা যারা কাফেরদের পক্ষ অবলম্বন করবে, কাফেরদের বিধান ও তার বিধান একই হবে। কিন্তু তিনি কখনই এমনটি ভাবেননি যে তার এই কাজটিকেও সেই হুকুমের অন্তর্ভূক্ত করা হবে, সাহাবায়ে কেরাম তাকে মুরতাদ ভেবে তার উপর রিদ্দাহর হুকুম বলবৎ করতে উদ্যত হবেন।

তাই তিনি বলেছিলেন: ‘আমার (ফায়সালার) ব্যাপারে তাড়াহুড়া করবেন না।’ তিনি আরো বলেন: ‘আমি এটি কুফরী মনে করে অথবা দ্বীন ত্যাগ করতে বা ইসলামের পর পুনরায় কুফরের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে করিনি।’’

নির্দেশনা:

আমরা একটু লক্ষ্য করি, হাতিব বিন আবী বালতা‘আ (রাদিঃ) কাফেরদেরকে এমন কি সাহায্য করেছিলেন? শুধুমাত্র একটি তথ্য জানাতে চেয়েছিলেন যা তার দৃষ্টিতে মুসলমানদের জন্য কোন ক্ষতির কারণ ছিল না।

তথাপি তার ব্যাপারে উমর (রাদিঃ) এর মত নববী মেজাজের অধিকারী সাহাবীর অবস্থান কি ছিল?

তাহলে যারা কুফর ও ইসলামের মাঝে চলমান লড়াইয়ে সরাসরি কাফেরদের সাথে সম্মুখসারিতে অবস্থান করে, দ্বীনের মধ্যে তাদের বিধান কি হতে পারে?

(Visited 784 times, 1 visits today)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 2 =