بسم الله الرحمن الرحيم
প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি যিনি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান, পরম করুণাময়, ক্ষমাশীল আবার যিনি শাস্তিদানেও কঠোর। তিনিই আমাদের শান্তি ও সুকূনের উৎস। আমাদের সুনিশ্চিত প্রত্যাবর্তন তার কাছেই। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই।
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর প্রতি দরুদ ও সালাম, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। এই সম্মানিত রাসূলই(সাঃ) আমাদের দ্বীন শিক্ষা দিয়েছেন। শিখিয়েছেন ইজ্জত ও সম্মানের সবক। তিনিই আমাদের শিখিয়েছেন কিভাবে সালেহীনদের পথে চলা যায়। আর আমরা শিখেছি এই পথের বিরোধী দ্বীনের দুশমনদের চ্যালেঞ্জ করতে।
তিনি আমাদের কাফের মুরতাদদের চাটুকারিতা করার শিক্ষা দিয়ে যান নি। এই হলেন মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ(সাঃ), নবীদের সরদার আর সারা জাহানের ঈমানদারদের অবিসংবাদিত নেতা। আল্লাহ তার মেহনতকে কবুল করুন আর তার কবুল করুন তার অনুসারী মহান সাহাবাদের(রাঃ)।
এই শক্তিশালী ঈমানের অধিকারী অসাধারণ মানুষগুলো ঈমানের জন্য কতই না ত্যাগ করতেন আর কোন ছাড়াছাড়ি করেন নি। যে ব্যক্তিই সরল পথ থেকে মুখ ফিরিয়েছে সাহাবারাও ঐ ব্যক্তিকে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন, চাই ঐ ব্যক্তি তাদের নিকটাত্মীয়ই হোক না কেন।
এই মহান সাহাবায়ে রাসূলেরা দুনিয়াব্যপী এই দ্বীনের প্রতি তাদের আনুগত্যের প্রমাণ রেখে গেছেন।
তারা জনপদের পর জনপদ, এক দেশের পর আরেক দেশ জয় করেছেন শুধু এর অধিবাসীদেরকে তাওহীদের পতাকাতলে সমবেত করার জন্য। মানবজাতিকে বিশ্বজগতের রব এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে ডাকার জন্য তারা নিজেদের রক্ত ও ঘাম ঝড়িয়েছেন।
আম্মা বাআ’দ। প্রিয় ভাইয়েরা, আমি আল-মু’তায বিল্লাহ ফারিস ইবন আহমাদ ইবন জামা’আন ইবন আলি আল সুওয়াইল আল-হাসানি আল-যাহরানি আল-আযদি। আজ আমি ঘোষণা করছি যে, সৌদি রাজতন্ত্রী জাতীয়তা আমার পদতলে।
আমি কোন সৌদি নই আর আমি এই ধরণের জাতীয়তাবাদী পরিচয়কে স্বীকার করি না। আমি মুসলিম উম্মাহর একজন মুসলিম ব্যক্তি। এই আমার পরিচয়।
আমি সীরাত ও ইতিহাস পড়েছি কিন্তু কোথাও এই রকম “জাতীয়তা”(Nationality) জাতীয় বিষয় পাই নি।
অতীতে যে কোন মুসলিম ব্যক্তি তার ইচ্ছেমত দারুল ইসলামের যেকোন ভূমিতে যখন ইচ্ছে তখন ভ্রমণ করতে পারত। কোন পাসপোর্ট ভিসার অতিরিক্ত বিষয় তাকে বাধা দিত না।
মুসলিমদের কোন নির্দিষ্ট দেশও থাকত না যাকে সে পূজা করবে(যেমনটা আজকের জাতীয়তাবাদীরা করছে)। বংশসূত্রে আমার পরিবার এসেছে যাহরান গোত্রের অন্তর্ভুক্ত বনী হাসান থেকে। এই গোত্র আরবদের মাঝে সুপরিচিত। যাহরান গোত্র এসেছে আল-আযাদ থেকে।
তাই স্পষ্টতই আমি সৌদি রাজপরিবারের কোন বংশধর নই। সৌদি রাজপরিবারের কোন অধিকার নেই এভাবে জাতীয়তাবাদের নামে নিজেদের পারিবারিক উপাধি সাধারণ মানুষের ওপর আরোপ করার।
এই দেশ সৌদের সম্পত্তি নয়, এই ভূমির মানুষেরা সৌদি রাজপরিবারের দাস নয়।
পুরো দুনিয়াতে মানুষেরা নিজেদের পরিচয় দেয় গোত্র, ভৌগলিক অবস্থান ও পারিবারিক উপাধিতে। অথচ এই সৌদি রাজতন্ত্র শাসিত পবিত্র ভূমিতে মানুষকে এই অত্যাচারী রাজপরিবারের পরিচয় কেন ধারণ করতে হবে? কেন এই দেশের নাম সৌদি(?) আরব হবে, কেন মানুষের জাতীয়তা হবে সৌদি?
আল্লাহ বলেন,
فَٱسْتَخَفَّ قَوْمَهُۥ فَأَطَاعُوهُ ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا۟ قَوْمًۭا فَـٰسِقِينَ [٤٣:٥٤
“এইভাবে সে তার স্বজাতিকে ধাপ্পা দিয়েছিল, ফলে তারা তাকে মেনে চলল। নিঃসন্দেহ তারা ছিল সীমালংঘনকারী জাতি। ” [আয-যুখরুফঃ ৫৪]
আমি এই কথিত সৌদি আরবের ভাইদের আহ্বান জানাই যে আপনারা এই অত্যাচারী রাজপরিবারের ধোঁকাবাজি থেকে নিজেদেরকে হিফাজত করুন। এই পরিবার এই দেশের জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছে, ধাপ্পা দিচ্ছে।
আমি এই দেশের দ্বীনি ভাইদের উদ্দেশে বলতে চাই, “হে আমার ভাইয়েরা! আপনারা নিজেদের সোনালী অতীতের কথা স্মরণ করুন। এই জালিম শাহীর বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। এই শাসকগোষ্ঠীই আপনাদের আর আপনাদের দ্বীনের সম্মানকে মানুষের সামনে খর্ব করছে।”
কবি বলেন,
” সে আমাদের ব্যংগ করছে কারণ আমরা সংখ্যায় স্বল্প
আমি তাকে বললাম, “সম্মানিতরা সংখ্যায় অল্পই হয়,
আমাদের ক্ষুদ্র দলকে ছোট করে দেখো না
আমরা তরুণ কিন্তু আমরা সম্মনকেই নিজেদের আকাঙ্ক্ষা বানিয়ে নিয়েছি
আমাদের স্বল্প সংখ্যায় কোন যায় আসে না
আমাদের প্রতিবেশীরা অন্যদের মত হীনমন্য নয়
আমরা হত্যা করাকে অভিশাপ মনে করি না যদি তা হয়
আমেরিকার ক্রুসেডার হত্যা,
আমরা মুজাহিদীনরা শহীদানের মৃত্যু কামনা করি
আমরা অকুতোভয়;
আর ঐ কাফেররা তো পুরো জীবনটাই মৃত্যুভয়ে কাটিয়ে দেয়,
আমরা তো শুধু তাদের সাথেই যুদ্ধ করি যাদের সাথে তা করা দরকার
আমাদের একজন নেতা মারা গেলে আরেকজন এসে যায়,
আমরা কোন সাহায্যকামীকে খালি হাতে ফেরত দেই না
আমাদেরকে যুদ্ধের ময়দানে কেউ প্রতিহত করতে পারবে না;
সবাই জানে দুশমনদের সাথে অতীতে আমরা কেমন ব্যবহার করেছি
আমাদের তরবারিগুলো সহস্রের হাতে হাতে পশ্চিম ও পূর্বে
এমন সব তলোয়ার যা কখনই খাপমুক্ত হবার পর বিজয়ী না হয়ে ফিরবে না”
অতএব, হে আরব উপদ্বীপের গোত্রসমূহ, মনে রেখ যে তোমাদের গৌরব কেবল আর কেবল মাত্র ইসলামই আনয়ন করেছিল। অথচ, এই স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী তাদের প্রকাশ্য কুফরের দ্বারা সম্মানিত এই দ্বীনেরই বিরুদ্ধাচরণ করে যাচ্ছে!! এই শাসকগোষ্ঠী বারংবার কাফের ক্রুসেডার রাষ্ট্রসমূহকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সাহায্য করেছে।
তারা নানা ক্ষেত্রে আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে দিয়েছে। তারা ধীরে ধীরে এই আরব উপদ্বীপকে ক্রুসেডার ন্যাটো ও ইসরাইলের ইহুদীদের কাছে নত স্বীকার করাচ্ছে। তারা ঈমানদারদের ধাওয়া করছে, তাদের গ্রেফতার করছে।
আল্লাহ যা হালাল করেছেন তা তারা হারাম করছে, আর যা তিনি হারাম করেছেন তা করছে হালাল। এই সবগুলো বিষয় যুবক-বৃদ্ধ সবার কাছেই একেবারে সুস্পষ্ট।
হে আমরা ভাইয়েরা দেখুন, এই তাগূতী শাসকরা ইসলামকে ছেড়ে দেয় নি। তারা আমাদের সাথে যুদ্ধে রত আছে শুধু আমাদের এই দ্বীন ইসলামের জন্য। অথচ তারা দাবী করে, “আমরা দ্বীনের রক্ষক”।
এ কেমন দ্বীনের রক্ষক যে কাফেরদের মুসলিমদের বিরুদ্ধে সাহায্য করে? প্রকৃতপক্ষে এরা হল ইতিহাসের সেরা ধোঁকাবাজ চোরের দল। তারা এই ভূমির সম্পদ ভোগদখল করে খাচ্ছে। এর প্রাচূর্যকে এরাই শেষ করে দিচ্ছে। এর অর্থনীতিকে এরাই ধ্বংস করে দিচ্ছে। এরাই নিশেঃষ করে ফেলছে এই ভূমির প্রাকৃতিক সম্পদগুলো।
এই শাসক ও তার ক্রুসেডার মনিবরা দুনিয়ার মানুষের চরিত্র বিনষ্টকারী আকিদা, আখলাক আর সংস্কৃতির প্রসার ঘটাচ্ছে। তাদের অসংখ্য জঘন্য ঘৃণিত কর্মকাণ্ডের ভেতর এগুলো তো সামান্যই কিছু উদাহরণ।
হে জাজিরাতুল আরবের সিংহেরা, আর কতদিন এভাবে আতংকগ্রস্ত, ভীত অবস্থায় দিনাতিপাত করবে? হে ইসলামের বীরেরা! তোমরাই তো আল্লাহর রাসূল(সাঃ) আর তার মুহাজির আনসার সাহাবাদের উত্তরসূরী।
আমি সৌদি রাজবংশের উদ্দেশে বলতে চাই, এটা আশা করো না যে আমরা তোমাদের প্রতি দয়া দেখাব যখন কিনা তোমরা আমাদের অনবরত বিরুদ্ধাচরণ করেই যাচ্ছ। মহান আল্লাহ জানেন যে, আমরা তোমাদের পছন্দ করি না।
আমাদেরকে অপছন্দ করার জন্য তোমাদের আমরা দোষ দেই না। একজন আরেকজনকে ঘৃণা করার কারণ থাকে। আমরা সবসমই তোমাদের অপছন্দ করেছি কারণ তোমরাও তাই কর।
আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন। আমরা তারই ওপরই তাওয়াক্কুল করছি। সকল শক্তি ও ক্ষমতা মহান পরাক্রমশালী আল্লাহর। আল্লাহর রাসূল(সাঃ) এর ওপর দরুদ ও সালাম।