ইমাম সালাহউদ্দিন আইয়ুবি ও বাইতুল মাকদিস বিজয়

শায়খ আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি

ইতিহাসে মুসলিম ও ক্রুসেডারদের মধ্যকার হিত্তিনের যুদ্ধকে এক চুড়ান্ত যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই যুদ্ধে,
ইসলামের বিরুদ্ধে জড়ো হওয়া ক্রুসেডিয় শক্তিকে পরাজিত করে সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ ইসলামী বিশ্বের এক বিজয়ী নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন।
(ياسين سويد، حروب القدس في التاريخ الإسلامي والعربي، ص 94)

হিত্তিনের যুদ্ধের পর ক্রুসেড বাহিনী বায়তুল মাকদিসে শক্তি প্রদর্শনের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
এরই ধারাবাহিকতায় একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ক্রুসেডাররা গাজা এবং আসকালান সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

এরপর সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ বিলাদুশ শাম একত্রিকরণ এবং ৮৮ বছর ক্রুসেডারদের দখলে থাকা জেরুজালেমকে মুক্ত করার লক্ষ্যে উত্তর জেরুজালেমের দিকে বাহিনীকে মার্চ করার সিদ্ধান্ত নেন।

জেরুজালেম মুক্ত করার পূর্বে সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর দুর্দান্ত সামরিক পরিকল্পনা সমূহ।

সেই সামরিক পরিকল্পনায় সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর দুর্দান্ত যুদ্ধ শক্তি প্রদর্শিত হয়েছিল। যে পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি জেরুজালেমকে পুনরুদ্ধার করতে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে জিহাদে ঝাপিয়ে পড়েন। এই পরিকল্পনাটি গড়ে উঠেছিলো মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধের উপর ভিত্তি করে।
যার ফলে তিনি একটি শক্তিশালী ইসলামিক ফ্রন্ট গঠনে সক্ষম হয়েছিলেন। যে ফ্রন্টে মিশর, সিরিয়া ও ইরাকের একাংশ অংশগ্রহণ করেছিলেন।

তারপর এই ইসলামিক ফ্রন্ট ক্রুসেডারদের আপন ভূমিতে ক্রুসেডারদের উপর শক্তিশালী আঘাত হানতে থাকেন। যার ধারাবাহিকতায় হিত্তিনের যুদ্ধে ক্রুসেডাররা শোচনীয় পরাজয় বরণ করে।

তারপর সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ ক্রুসেডারদের অর্থনীতি এবং ক্ষমতাকে দূর্বল করার লক্ষ্যে সিরীয় উপকূলবর্তী অঞ্চলের দিকে রওয়ানা করেন।
সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ যদি হিত্তিনের যুদ্ধের পরপরই উপকুলীয় অন্ঞ্চল মুক্ত না করে জেরুজালেমের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করতেন তাহলে হয়তোবা তিনি অনায়াসে জেরুজালেমকে দখল করতে পারতেন।

তবে জেরুজালেমের পরিপূর্ন স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা বজায় রাখতে পারতেন না। কারণ পশ্চিম ইউরোপ তখন সিরীয় উপকূলে সৈন্য প্রেরণ করতো। যারা জেরুজালেম কে মুক্ত করতে সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর সাথে ভয়ংকর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হতো।
কারণ ইমামুদ্দিন ইস্পাহানির মতে, খৃষ্টানদের বাতিল বিশ্বাস অনুযায়ী জেরুজালেমে যিশু ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন। এখানেই তার দেহাবশেষ ও মূল ক্রুশটি অবস্থিত। আর এই শহরেই রয়েছে খৃষ্টানদের সবচে প্রাচীন গির্জা।

মিডিয়া মাত্রা
———
সশস্ত্র ইসলামি জনতা সালাহউদ্দীন আইয়ুবির সাথে হিত্তিনের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। সশস্ত্র ইসলামি বাহিনীর উপস্থিতি কে সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ উপকূলীয় এলাকা দখল করতে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন।

তারপরও সালাহউদ্দিন আইয়ুবী রঃ মুসলিমদের প্রথম কিবলা নবীজির (সা) মিরাজে গমনের স্থানকে পুনরুদ্ধারের জন্য পরিচালিত জেরুজালেম অভিযানে মুসলিমদেরকে আরো বেশি স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহনের লক্ষ্যে, মূল অভিযানের পূর্বে মিডিয়া যুদ্ধ শুরু করেছিলেন।
তৎকালীন সম্ভাব্য প্রচারমাধ্যমের সহায়তায় তিনি ইসলামি বিশ্বের কোনায় কোনায় মুসলিমদেরকে জিহাদে বের হওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন।
(أحمد شامي، صلاح الدين والصليبيون، ص 209).

শক্তি বাড়াতে মিশরীয় বাহিনীকে তলব।
——
অন্যদিকে বিজিত শহরগুলোতে প্রভাব বাড়াতে এবং সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর সহায়তার জন্য আপন পুত্র উসমানকে বাহিনী সহ ডেকে পাঠান। উসমান তার পিতার সাথে আসকালানে এসে মিলিত হন। এতে করে সালাহউদ্দীন আইয়ুবী স্বস্তি এবং শক্তি দুটোই লাভ করেন।

অবরোধ এবং যুদ্ধ
——
মুসলিম বাহিনী শহরের উপকন্ঠে পৌঁছে সুসংগঠিত হওয়ার পূর্বেই ক্রুসেডার বাহিনী যুদ্ধ শুরু করে দেয়। ইসলামি বাহিনীর অকুতোভয় দুঃসাহসী একদল জানবাজ মুজাহিদকে জামালুদ্দিন শারবিন বিন হাসান রাযির নেতৃত্বে শহরের উপকন্ঠে পাঠানো হয়।
নগর রক্ষাকারী বাহিনীর একদল ক্রুসেডার জামালউদ্দিনের বাহিনীর উপর আক্রমণ চালিয়ে পরাজিত করে। এই লড়াইয়ে জামালুদ্দিন রঃ শাহাদাতের সুধা পান করে জান্নাতের বাসিন্দা হয়ে যান। ইন শা আল্লাহ।
أبو شامة المقدسي، كتاب الروضتين، 2/92).

 

চূড়ান্ত আক্রমণ
—–
সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ শহরে চূড়ান্ত আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। ইসলামি বাহিনী ক্রুসেডারদের দূর্গ রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি প্রবলভাবে মিনজানিকের গোলা বর্ষণ এবং মুষলধারে তীর বর্ষণ করতে থাকে। যাতে করে প্রতিরোধকারীরা তাদের অবস্থান থেকে সরে যায়। গোলাবর্ষণের সাথে সাথে একদল জানবাজ মুজাহিদ সীমানা প্রাচীরের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়।

১১৮৭ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সবচেয়ে বড় বাধা অতিক্রম করে নগর প্রাচীরের উপর ইসলামি বাহিনী চড়তে সক্ষম হয়। নগর প্রাচীরে উঠেই মুজাহিদগণ ইসলামি পতাকা উড্ডয়ন করেন।
কালিমার পতাকা উড়তে দেখে নগর রক্ষাকারী বাহিনী এ কথা বিশ্বাস করে নেয় যে, আর মুসলিম বাহিনী কে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। আসলে তারা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।
তবে তারা তাদের একগুঁয়েমি চালিয়ে গেল। লোকজন গীর্জায় জমা হয়ে প্রার্থনা করতে লাগলো। নিজেদের পাপের কথা স্বীকার করে, নিজেদেরকে পাথর দিয়ে আঘাত করতে থাকে। তারা আল্লাহর কাছে রহমতের আশা করতে থাকে। মুসলিমদের হাতে বন্দী হওয়া থেকে বাঁচতে পুরুষদেরকে উত্তেজিত করার লক্ষ্যে মহিলারা তাদের মেয়েদের মাথার চুল কর্তন করে দেয়।
يوسف النبهاني، مفرج الكروب، 2/213).

বিজয়ী বেশে মাসজিদুল আকসায় সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর প্রবেশ।
——–
২৭ রজব ৫৮৩ হিজরী, জুমাবারে সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ মাসজিদুল আকসায় প্রবেশ করেন।
সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ ক্রুসেডারদের অস্ত্র সমর্পণের পরেই বায়তুল মাকদিসে প্রবেশ করেছিলেন।

এটি একটি স্মরণীয় দিন ছিলো। এদিন নগর প্রাচীরের উপর কালিমার পতাকা পতপত করে উড়তে দেখা যায়।
সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ ১২দিন জেরুজালেম অবরোধ করে ছিলেন। সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ ২৭ রজবে বায়তুল মাকদিসে প্রবেশ করেন।
তিনি শহর ছেড়ে যাওয়া ক্রুসেডারদের কাছ থেকে ফিদিয়া আদায় করা এবং গণনা করার জন্য শহরের প্রতিটি ফটকে সেনাবাহিনীর একজন করে আমির বসানো হয়। দেখা যায় সেদিন শহরে নারী শিশু বাদ দিয়ে ষাট হাজার মানুষ (খৃষ্টান) উপস্থিত ছিল।
ياسين سويد، حروب القدس في التاريخ الإسلامي، ص 106)

এপ্রসঙ্গে ইবনুল আসীর রঃ বলেন, “এদিন আসকালান, গাজা, দারুম, রামাল্লা থেকে এত পরিমাণ লোক এসেছিলো যে রাস্তা-ঘাট, বাজার, গীর্জা সব জায়গায় লোকে লোকারণ্য হয়ে গিয়েছিল। তিল ধারণের ঠাইটুকু ছিলো না।”

জেরুজালেমের স্থিতিশীলতা ফিরে আসার পর সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ ঘোষণা করেন, যারা ক্রুসেডারদের দখলদারিত্বের পূর্বে এই শহরে বসবাস করতো তারা যেন ফিরে আসে।

ক্রুসেডাররা এ পবিত্র নগরী দখল করার পর মসজিদগুলিকে নাইটক্লাব, ঘোড়ার আস্তাবল ইত্যদিতে পরিণত করে। সালাহউদ্দীন আইয়ুবী এই নগরীকে বিজয় করার পর মসজিদগুলো কে পাক পবিত্র করার আদেশ দেন। পুনরায় নামাজের উপযুক্ত করে তোলেন। তিনি মসজিদুল আকসার জন্য ইমাম নিযুক্ত করেন এবং তাতে একটি মিম্বার স্থাপন করেন। মসজিদে খৃষ্টান রা যে সমস্ত চিত্রাংকন করেছিলেন তা তিনি মুছে দিয়েছিলেন।
তিনি জেরুজালেমের অধিবাসী, যারা শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিল তাদেরকে ফিরিয়ে এনেছিলেন।
(ياسين سويد، حروب القدس في التاريخ الإسلامي، ص 108).

ইতিহাস কোন বিজয়ীকে মুসলিমদের থেকে বেশি দয়ালু দেখাতে পারবে না।
সালাহউদ্দীন তার ওয়াদা পূরণ করেছিলেন। যারা শহর ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলো তাদেরকে যেতে দিয়েছিলেন।

তিনি শহরের প্রতিটি ফটকে একজন করে আমির বসিয়েছিলেন, যারা বের হয়ে যেতে চায় তাদের কাছ থেকে ফিদিয়া আদায় করার জন্য। যে ফিদিয়া দিবে সে বের হতে পারবে। সালাহউদ্দীন আইয়ুবী প্রতিটি খৃষ্টান কেই নিরাপত্তা দিয়েছিলেন।
দেখা গেছে অধিকাংশ লোকই ফিদিয়া দিতে পারেনি। এভাবে চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। কিন্তু কোন ধনী খৃষ্টান দরিদ্র খৃষ্টান বন্দীর মুক্তি পণ আদায়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে নি।

ইতিমধ্যে পাদ্রী হিরাক্লিয়াস বায়তুল মাকদিসের কোষাগার চুরি করে সবার অগোচরে শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়।
(عبد الله الغامدي، صلاح الدين والصليبيون، ص 216).

সার কথা হলোঃ
খৃষ্টানদের দুঃসাহসিকতা এবং লজ্জাজনক অবস্থানের পরেও সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন করেছিলেন।
খৃস্টান ঐতিহাসিক লেন পোল সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ এর প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন, “খৃষ্টান পাদ্রীদের মুসলিম শাসকদের কাছ থেকে মহানুভবতা শেখা উচিত।”
(صلاح الدين والصليبيون، ص 216).

ইতিহাসে সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ ও অন্যান্য মুসলিম শাসকগণ মহানুভবতার এক অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।
যখন সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ এর হাতে হাজার হাজার ক্রুসেডার বন্দী, যারা মুক্তি পণ দিতে সক্ষম নয়।

সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ এর কাছে তার ভাই আল মালিকুল আদিল, এক হাজার ক্রুসেডার বন্দীদের মালিকানা চেয়ে আবেদন করেন, যেন তিনি (আল মালিকুল আদিল) এই বন্দীদেরকে মুক্ত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেন। সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ তার আবেদন মন্জুর করলেন।
আল মালিকুল আদিলের এই মানবিক কাজ পাদ্রীদের বিবেককে নাড়া দিয়েছিলো।
অতঃপর এই পাদ্রীগণ সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর কাছে গিয়ে অনুরূপ আবেদন করলে তিনি তাদের কথাও রাখেন।

এরপর সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ তার রক্ষীদেরকে বায়তুল মাকদিসের রাস্তায় একথা ঘোষণা করতে বলেন, যারা বার্ধক্যের কারনে মুক্তিপণ দিতে অক্ষম তারা যেন তার কাছে আসে।
এরপর তিনি রঃ মহানুভবতা প্রদর্শনপূর্বক, সূর্যোদয় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অসংখ্য ক্রুসেডারকে মুক্ত করে দেন।
(صلاح الدين والصليبيون، ص 216).

বিরার শাসক, সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ এর কাছে ৫০০ এর অধিক আর্মেনিয়ান বন্দীর মুক্তির আবেদন জানান। তিনি সালাহউদ্দীন আইয়ুবীকে বলেন ‘তারা তার দেশের নাগরিক, যারা বায়তুল মাকদিসে ইবাদতের জন্য এসেছিলো।’
সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ তার আবেদনও কবুল করেন।

অনুরূপ আমির মুজাফফর এক হাজারের অধিক আর্মেনিয়ান বন্দীর মুক্তির সুপারিশ করলে, সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ তার সুপারিশও কবুল করেন।
مفرج الكروب) 2/215)

মুসলিমরাও মহানুভবতা, উদারতা দেখাতে কখনোই কার্পন্য করেননি।
শুধু যে সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ উদারতা আর মহানুভবতা দেখিয়েছেন এমন নয়। তার ভাই আল মালিকুল আদিলসহ বড় বড় মুসলিম কমান্ডারগণও ইতিহাসের পাতায় মহানুভবতার অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।

প্রকৃতপক্ষে: সালাউদ্দিন আইয়ুবী রঃ জেরুজালেমে ক্রুসেডারদের বন্দীদের প্রতি সহনশীলতা ও উদারতা প্রদর্শন করেছিলেনই, এছাড়াও তার উদারতা ও বিশালতা ক্রুসেডারদের স্ত্রী-কন্যাদের প্রতিও ছিলো, যাদের স্বামী ও পিতারা সালাউদ্দিনের সাথে যুদ্ধের সময় নিহত বা বন্দী হয়েছিল।
নিহত ও বন্দী ক্রুসেডারদের স্ত্রী-সন্তানরা কাঁদতে কাঁদতে সালাহউদ্দিনের সামনে জড়ো হয়েছিল।

সালাউদ্দিন আইয়ুবী রঃ তাদের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। এবং তাদের কাছে জানতে চান তারা কী চায়?
তারা তাঁকে বললো, যে তারা দয়া চায়।

অতঃপর, সালাহউদ্দিন তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছিলেন। যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিতদের সাথে তিনি দেখা-সাক্ষাতের অনুমতি দিয়েছিলেন।
অবশেষে তাদেরকে মুক্তি দিয়ে বলেছিলেন, তারা যেখানে যেতে চায় যেতে পারবে।

যাদের স্বামী ও পিতা মারা গিয়েছিলো; সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহ. তাঁর ব্যক্তিগত কোষাগার থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ, বসবাস এবং যে কোন প্রয়োজনে খরচ করার জন্য আদেশ করেছিলেন। এমন কি এই নারীরা সালাউদ্দিন আইয়ুবীরঃ এর জন্য দিল খুলে দুআ করেছিলো।

সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ পশ্চিমা শাসকদেরকে দেখিয়ে দিয়েছেন, কিভাবে শাসক হিসেবে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা যায় এবং কিভাবে ইসলামি নৈতিকতা ও মূল্যবোধকে বক্ষে ধারণ করতে হয়।

সিরীয়া তে সেনাবাহিনী পরিচালনা করার সময় ফ্রান্স, জার্মানী, ইতালি আর ইংরেজ ক্রুসেডাররা
সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর রঃ প্রশংসা করে বলতো, ‘তিনি একজন সত্যিকারের বীর।’
এবং তারা সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ এর চরিত্র এবং নৈতিকতা সম্পর্কে অসাধারণ কাহিনী রচনা করেছিল। তারা সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবীকে নিয়ে তাদের শহর, গ্রাম আর মজলিসগুলোতে ও আলোচনা করত।
(منير غندور، الوجيز في الشام أرض الأنبياء ومهد الأصفياء، ص 61).

তিনি ইসলামি ইতিহাসের এমন এক মহান ব্যক্তি ছিলেন, যিনি পুংখানুপুংখভাবে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর ক্ষমা, উদারতা, সহনশীলতা, মহানুভবতা আর প্রজ্ঞার অনুসরণ করতেন।

এক ইউরোপীয় ঐতিহাসিক তার স্মরণে লেখেন, সেই রক্তাক্ত এবং নিষ্ঠুর সময়ও তার চরিত্রে বিন্দুমাত্র চিড় ধরাতে পারেনি। আসলে তিনি একজন মহান শাসক। তিনিই গ্রেট সালাউদ্দিন।
(الوجيز في الشام أرض الأنبياء ومهد الأصفياء، ص 61).

১৩১৫ হিজরী মোতাবেক ১৮৯৯ ইসায়ীতে যখন জার্মান সম্রাট তার স্ত্রীসহ সিরীয়া সফর করেন তখন তিনি সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ এর কবর গুরুত্বের সাথে পরিদর্শন করেন। এবং সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ এর ভুয়সী প্রশংসা করেন।
আর সম্রাজ্ঞী আবেগতাড়িত হয়ে সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রঃ এর কবরে ফুল ছেটাতে থাকেন।

এই ঘটনাটি ইমাম সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর অসীম সাহসিকতা, সহনশীলতা আর চারিত্রিক দৃঢ়তার প্রমাণ বহন করে। কারণ তার শত্রুরাও তার সাহসিকতার স্বীকৃতি দেয়।

(Visited 1,747 times, 1 visits today)