হিজরতের পথে মৃত্যুর ফযিলত

শায়খ হারিস আন-নাজ্জারি

ডাউনলোড

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

من فَصَلَ في سبيل الله فمات فهو شهيد اخرجه أبو داؤد (1/391) 

অর্থঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে সে শহীদ। (আবু দাউদ)

অর্থাৎ যে ব্যক্তি জিহাদের জন্য বের হয়েছে, অতঃপর যে কোনভাবে সে মারা যায়, তবে সে শহীদ। আর শহীদ ইনশা আল্লাহ (আল্লাহ চাহেন তো) জান্নাতে যাবে।

এ প্রসঙ্গে শহীদ আব্দুল্লাহ আযযাম রহ. এর একটি আলোচনা রয়েছে, “আল জিহাদু ফিকহুন ওয়া ইজতিহাদুন” এই অধ্যায়ের অধীনে। সেখানে তিনি “হিজরতের পথে মৃত্যুর ফযিলত” এই শিরোনামেই আলোচনা করেছেন।

শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম রহ. বলেন, ‘যখন তোমরা আল্লাহর রাস্তায় বের হবে তখন তোমাদের নিদ্রা এবং জাগ্রত থাকা সবই সাওয়াবের কাজ। যার আলোচনা হাদিসেও এসেছে। মোটকথা উল্লেখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, খাওয়া-দাওয়াও সওয়াবের কাজ, বিনোদন করাও সওয়াবের কাজ, ক্রিরা – কৌতুক করাও সওয়াবের কাজ, এমনকি ঘুমানোও সওয়াবের কাজ।

সুবহানাল্লাহ! নিদ্রা ও জাগ্রত থাকা, ক্রিরা – কৌতুক ও অন্যান্য কাজ – সবকিছুতেই সওয়াব রয়েছে। তোমার সব কাজই সওয়াবের হবে, যতক্ষণ তুমি আল্লাহর রাস্তায় থাকবে। এমতাবস্থায় মারা গেলে তুমি শহীদ। যেভাবেই মারা যাও না কেন। চাই ডাইরিয়া হয়ে মারা যাও, বা অন্য কোন অসুস্থতার কারণে মারা যাও। শারীরিক প্রশিক্ষণে গিয়ে মারা যাও, অথবা কোন উঁচু স্থান থেকে পড়ে মাথা চূর্ণ হয়ে মারা যাও, তাহলেও তুমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ। এমনিভাবে তোমার কোন ভাইয়ের বন্দুক থেকে গুলি বের হয়ে তোমার গায়ে লেগে মারা গেলেও তুমি শহীদ। অথবা তোমার গুলিই ভুলে তোমার গায়ে লেগে তুমি নিহত হলে তাহলেও তুমি শহীদ। সহীহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

من وضع رجله في الركاب فاصلا  فوقصته دابته فمات -أي رمته دابته فمات- أو لدغته هامة -أفعى- فمات أو مات بأي حتف مات فهو شهيد وان له الجنة [حديث حسن رواه أبو داوود وأورده الشيخ ناصر الدين الألباني في صحيح الجامع الصغير بمثله في رقم(6413)

অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার পা কে (সওয়ার হওয়ার জন্য) ঘোড়ার রিকাবে রাখল অতঃপর ঘোড়া তাকে পা দিয়ে পিষে ফেলল অথবা সে বিষাক্ত কোন সাপ বা বিচ্ছুর দংশনে মারা গেল অথবা যেকোন আঘাতে সে মৃত্যুবরণ করল – মোটকথা যেভাবেই মার যাক, সে শহীদ। আর তার জন্য রয়েছে জান্নাত। (আবু দাউদ)

তুমি আল্লাহর রাস্তায় বেরিয়ে যাওয়ার পর এখন আর কোন পার্থক্য নেই যে, তুমি কিভাবে মারা গেলে। সাধারণ মৃত্যু ও শহীদ হওয়া সবগুলোই তোমার জন্য বরাবর। প্রতিদান একই, আর তা হল শাহাদাত। আল্লাহ তা’আলার অনুগ্রহে আমরা তাঁর নিকট এই শাহাদাত প্রার্থনা করছি।

এখানে উস্তাদ আব্দুল্লাহ আল আ’দম বলেন: সালফে সালেহীনগণ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বের হওয়ার পর কিভাবে তাঁর সাথে সাক্ষাত করবেন, সে ব্যাপারে কোন পরওয়া করতেন না, চাই তারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হউক বা সাধারণভাবে মারা যাক। কারণ আল্লাহর রাস্তায় যেভাবেই মারা যাক তাদের কাছে ফলাফল একটাই। আর তা হল আল্লাহর সন্তুষ্টি, উত্তম রিযিক এবং চিরস্থায়ী উত্তম স্থানে প্রবেশ করা, যা পেয়ে তারা সন্তুষ্ট থাকবে।

ইবনে কাসির রহ. এবং ইমাম কুরতুবি রহ. তাদের তাফসীরে উল্লেখ করেছেন যে, একজন সম্মানিত সাহাবী হযরত ফুজালা ইবনে উবাইদ আল-আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু জিহাদে বের হয়ে দুটি জানাজার সাথে সমুদ্র তীরে উপস্থিত হলেন। তাদের একজন মিনজানিকের আঘাতে নিহত হয়েছে। অপরজন সাধারণভাবে মৃত্যু বরণ করেছেন। হযরত ফুজালা ইবনে উবাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু সাধারণভাবে মৃত্যুবরণ কারীর কবরের নিকট বসলেন। তখন তাকে বলা হল আপনি শহীদকে ছেড়ে সাধারণ মৃত ব্যক্তির কবরের পাশে কেন অবস্থান করছেন? শহীদের কবরের পাশে কেন বসলেন না? অর্থাৎ লোকেরা শহীদের কবর ছেড়ে সাধারণ মৃত ব্যক্তির কবরের পাশে অবস্থান করাটা অপছন্দ করল!

তো এর উত্তরে তিনি বললেন, ”আমি এ বিষয়ে কোন পরওয়া করিনা যে, আমি  এই দুই কবরের কোনটি থেকে পুনরুত্থিত হব” (অর্থাৎ আমি যদি মৃত হতাম তাহলে আমার নিকট এর কোন পার্থক্য থাকত না যে, আমি কি শহীদ হলাম? নাকি সাধারণভাবে মৃত্যু বরণ করলাম। কেন তিনি এই উত্তর দিয়েছেন? এর কারণ হিসেবে তিনি নিম্নোক্ত আয়াত পেশ করেছেন:

وَالَّذِينَ هَاجَرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ قُتِلُوا أَوْ مَاتُوا لَيَرْزُقَنَّهُمُ اللَّهُ رِزْقًا حَسَنًا وَإِنَّ اللَّهَ لَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِين * لَيُدْخِلَنَّهُمْ مُدْخَلًا يَرْضَوْنَهُ

যারা আল্লাহর পথে গৃহ ত্যাগ করেছে, এরপর নিহত হয়েছে অথবা মরে গেছে; আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যই উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবেন এবং আল্লাহ সর্বোৎকৃষ্ট রিযিক দাতা। (৫৮) তাদেরকে অবশ্যই এমন এক স্থানে পৌছাবেন, যাকে তারা পছন্দ করবে এবং আল্লাহ জ্ঞানময়, সহনশীল। (৫৯) (সূরা হাজ্জ – ৫৮-৫৯)

সুতরাং হে আল্লাহর বান্দা! যখন তোমাকে এমন স্থানে প্রবেশ করানো হবে যাতে তুমি সন্তুষ্ট হবে এবং সেখানে তোমাকে উত্তম রিযিক দেয়া হবে – এরপরে তোমার আর কি চাওয়ার আছে? আল্লাহর শপথ আমি এটা পরওয়া করিনা যে, আমি কোন কবর থেকে উত্থিত হব।

এই হল আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুবরণ কারীর ফযিলত। যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের উদ্দেশ্যে হিজরত করেছে। অথবা সহীহ অভিমত অনুযায়ী যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বের হয়েছে, অতঃপর সে যেভাবেই মারা যাক, তাকে শহীদ বলে গণ্য করা হবে, এবং আল্লাহ তা’আলার নিকট তাদের জন্য রয়েছে উত্তম রিযিক।

আমরা আল্লাহ তা’আলার নিকট দু’আ করি, তিনি যেন আমাদেরকে তার আনুগত্য কারার তাওফিক দান করেন এবং আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। আমীন।

والسلام عليكم ورحمة الله وبركاته

(Visited 162 times, 1 visits today)