জিহাদ থেকে নিবৃত-কারীদের প্রসঙ্গে

শায়খ হারিস আন-নাজ্জারি

ডাউনলোড

আল্লাহ তা’আলা তার প্রিয় কিতাবে জিহাদের ভূমিতে জিহাদ থেকে নিবৃত-কারীদের বিষয়ে সতর্ক করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা এ প্রকারের নিকৃষ্ট মানুষদের সম্পর্কে ইরশাদ করেন:

لَوْ خَرَجُوا فِيكُمْ مَا زَادُوكُمْ إِلَّا خَبَالًا وَلَأَوْضَعُوا خِلَالَكُمْ يَبْغُونَكُمُ الْفِتْنَةَ وَفِيكُمْ سَمَّاعُونَ لَهُمْ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمِينَ

অর্থ: ওরা যদি তোমাদের সঙ্গে বের হত, তবে তোমাদের কেবল অনিষ্টই বৃদ্ধি করত, এবং তোমাদের মধ্যে ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের অভ্যন্তরে ছোটাছুটি করে বেড়াত আর তোমাদের মধ্যে তাদের জন্য কথা শোনার লোক (গুপ্তচর) আছে বস্তুত: আল্লাহ যালিমদের ভালভাবেই জানেন। [সুরা তাওবা ৯:৪৭]

ইমাম ইবনে কাসীর রহ. তাঁর তাফসীর গ্রন্থে(উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায়) বলেন,

لَوْ خَرَجُوا فِيكُمْ مَا زَادُوكُمْ إِلَّا خَبَالًا

“তারা তোমাদের সাথে বের হলে তোমাদের অনিষ্টই বৃদ্ধি করত”

যেহেতু তারা কাপুরুষ ও অপদস্থ তাই তারা এমনটা করতো।

مَا زَادُوكُمْ إِلَّا خَبَالًا

এখানে ‘খবালা’ অর্থ অনিষ্ট, বিভ্রান্তি। সুতরাং (জিহাদে বাধাদানকারীগণ)মুজাহিদদের সাথে বের হওয়াটা মুজাহিদদের অনিষ্টই বৃদ্ধি করে। তারা মূলত বিভ্রান্ত্রি সৃষ্টিকারী জাতি, তাই তারা মুজাহিদদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টায় থাকে।

(উক্ত আয়াতের পরের অংশে) আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَلَأَوْضَعُوا خِلَالَكُمْ يَبْغُونَكُمُ الْفِتْنَةَ

“তারা তোমাদের মধ্যে ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের অভ্যন্তরে ছোটাছুটি করে বেড়াত”।

অর্থাৎ তারা তোমাদের মাঝে পরনিন্দা , শত্রুতা ও ফিতনা নিয়ে ছুটাছুটি করে বেড়াত। তারা তোমাদের মাঝে পরনিন্দা করে বেড়াত এবং মানুষের মাঝে ফিতনা সৃষ্টি জন্য ছোটাছুটি করত। গিবত, পরনিন্দা ও ফিতনার মাধ্যমে মুজাহিদদের মাঝেও ফ্যাসাদ সৃষ্টির চেষ্টা করত। আমরা আল্লাহর নিকট এদের থেকে আশ্রয় কামনা করছি।

(তার পরের অংশে) আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَفِيكُمْ سَمَّاعُونَ لَهُمْ

অর্থ: তোমাদের মধ্যে তাদের জন্য কথা শোনার লোক (গুপ্তচর)রয়েছে।

এখানে (তোমাদের মাঝে)কিছু মুমিন রয়েছে যারা তাদের জন্য কথা শোনে। ইবনে কাসীর রহ. বলেন, অর্থাৎ এ সব মুমিন তাদের আনুগত্য করে এবং তাদের কথাকে পছন্দ করে। তাদের প্রকৃত অবস্থা না জেনে অনেক সময় তাদের কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়। পরবর্তীতে তাদের পরামর্শ গ্রহণ করা হলে তা মুমিনদের মাঝে অনিষ্ট ছড়ায় এবং কঠিন ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে। এ ধরনের লোকদের কারণে এ ধরণের অনিষ্ট সৃষ্টি হয়।

উস্তাদ আব্দুল্লাহ আল-আ’দম বলেন:  জিহাদের ময়দান সাধারণত এ প্রকারের নিবৃত-কারী থেকে মুক্ত হয়না। (এ-প্রকারের লোক সাধারণত) আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে পরীক্ষা স্বরূপ। তারা তাদের বিষ-বাষ্প এবং মস্তিষ্ক নি:সৃত নাপাক চিন্তাধারা জিহাদের ময়দানে ছড়িয়ে দেয়- জিহাদের ময়দান থেকে মানুষকে নিবৃত-করণ এবং গুজব সৃষ্টির লক্ষ্যে। এ ছাড়াও এরাই ঘৃণা ছড়ায় সবার মাঝে বিশেষ করে আমীর ও তার অধীনস্থদের মাঝে।

এরা জিহাদের ক্ষেত্রে এক দিকে যেমন কৌশলের ক্ষেত্রে বাধা দেয়, অন্যদিকে স্বীয় বিষ-বাষ্প (মুজাহিদদের মাঝে) ছড়ায়। অনেক গোয়েন্দা ও গুপ্তচর রয়েছে যাদের লক্ষ্যই এটি যে- মুসলমানদের মাঝে ফাটল সৃষ্টি করা এবং আমীর ও সাধারণ সৈন্যদের অন্তরে পারস্পরিক ক্রোধ প্রজ্বলিত করা।

তিনি বলেন, তারা এটি করে থাকে প্রচার মিডিয়ার মাধ্যমে। তারা ঘৃণিত জাতীয়তাবাদের অগ্নি প্রজ্বলিত করে। (তারা বলে)অমুকের সন্তান, অমুক গোত্রের, অমুক এলাকার, অমুক শহরের, এভাবে তারা (জাতীয়তাবাদ) প্রচার করতে থাকে।

তিনি (আরও)বলেন, ঘৃণিত জাতীয়তাবাদের অগ্নি প্রজ্বলন এবং তার গিঁটকে মজবুত করণ – এ ধরনের জাতীয়তাবাদকে আমরা কুফরি মনে করি। তারা বিভিন্নভাবে প্রোপাগান্ডা চালায় এবং দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করে বেড়ায়। যে সব সাধারণ ভুলত্রুটি থেকে মানুষ মুক্ত নয়, সে গুলোকেও তারা ব্যাপক প্রচার চালায়। তারপর সবগুলো ভুলকে একত্রিত করে বলে, এমন এমন পাওয়া গেছে। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে অপদস্থ করুন।

তিনি আরও বলেন, “তারা আল্লাহর জন্য জিহাদে আসা নবাগতদেরকে এগুলো বড় করে দেখায়”। তারা নবাগত ভাইকে আগে আগে বুঝায় যে অমুক এক্ষেত্রে এমন, অমুক আমির অনেক বিষয়ে ভুলে রয়েছেন। একবার ভেবে দেখুন ভাইটির তখন কি অবস্থা হয়? দেখা যায় তার মাঝে অযথায় উৎকণ্ঠা ও ভয় সৃষ্টি হয়। এসমস্ত চিন্তা ভাবনা এবং প্রচার প্রচারণার কারণে নবাগত ভাইটি জিহাদ ও মুজাহিদদেরকে ছেড়ে পালিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, এমনটা যে করবে সে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জালেম। কেননা আল্লাহর রাহে বাধা প্রদান করা সবচেয়ে বড় গুনাহ। ইবনে হাজম রহ. বলেন, “কুফরির পর মুসলমানদেরকে ইসলামের জন্য কাফেরদের সাথে জিহাদ করা থেকে বাধা দেয়ার মত আর কোন বড় গুনাহ নেই”।

সুতরাং আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যে এগিয়ে আসা নবাগত মুজাহিদদের জন্য আবশ্যক হল এদের থেকে সাবধান থাকা এবং এদের থেকে যে কোন পর্যায়ের সতর্কতা অবলম্বন করা। জিহাদের এসব শত্রুদের প্রচারকৃত প্রোপাগান্ডা থেকে নিজেদের দূরে রাখা। তিনি আরও বলেন, “সুতরাং তোমার জন্য যে ফন্দি পাতা হচ্ছে, তার ব্যাপারে সতর্ক থাক”

(উস্তাদ আব্দুল্লাহ আল-আ’দমের উপদেশমূলক কথা এখানেই শেষ)।

তোমার জন্য যে ফাঁদ পাতা হচ্ছে তার ব্যাপারে সতর্ক থাক এবং তোমার ভবিষ্যৎ চলার পথে যে সমস্ত সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি হবে তা সম্পর্কেও ধারণা রাখতে হবে। সত্যকে জানতে পারলে সত্য-পন্থীদেরও জানতে পারবে। আর তোমাকে যেন (তাদের) নামসমূহ ও মানুষের অন্তরে এ নামের বিশাল প্রভাব – এ বিষয়টি ধোঁকা না দেয়।

এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ জিহাদের ময়দানে এধরণের নিবৃত-কারীর সম্মুখীন তুমি হবেই, এরাই হল ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী দল।

আল্লাহ তা’আলার নিকট আমরা প্রার্থনা করি তিনি যেন মুসলমানদেরকে এদের অনিষ্টতা থেকে রক্ষা করেন। আমীন।

আল্লাহ তা’আলা আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।

وجزاكم الله خيرًا، والسلام عليكم ورحمة الله وبركاته

(Visited 200 times, 1 visits today)