বিদআতি ও বিরোধীদের সাথে আচরণনীতি (১)

শায়খ খালিদ বাতারফি

প্রথমত; বিদআতিদের সাথে আচরণবিধির প্রথম মূলনীতি হল- সৎ লোকেরা কোন বিদআতে পতিত হলে তার ওজর গ্রহণ করা। অর্থাৎ হয়তো তিনি ইজতিহাদি ভুল করেছেন অথবা অজ্ঞতার কারণে বিদআতে লিপ্ত হয়েছেন। আর কথার ক্ষেত্রে যতখানি সম্ভব উত্তম ব্যাখ্যা গ্রহণ করা। 

অর্থাৎ কথার যদি অনেকগুলো অর্থ হবার সম্ভাবনা থাকে, তখন এই ধরণের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে – যাদের শ্রেষ্ঠত্ব ও সততা রয়েছে এবং এই ব্যাপারে তারা পরিচিত – যদি তারা উলামা না হন – তবুও আমরা তাদের কথাগুলোর উত্তম সম্ভাবনা গ্রহণ করবো। 

এর একটি উত্তম উদাহরণ হলেন শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ। তিনি ইমাম জুনাইদ রহিমাহুল্লাহ’র একটি কথা উল্লেখ করেছিলেন, যেটির মাঝে ভুল ছিল এবং সেটি সঠিক হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। অতঃপর তিনি কথাটির উত্তম সম্ভাবনাটি গ্রহণ করলেন। 

এমনিভাবে ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আল জাওজিয়্যাহ’র ‘মাদারিজুস সালিকিন’ কিতাবটি রয়েছে। এটি মূলত ইমাম আবু যাকারিয়া আলহারভি-র কথার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ। ইমাম আবু যাকারিয়া আলহারভি-র কথার মাঝে অস্পষ্টতা ও দুর্বোধ্যতা ছিল।  এই কিতাবে বিভিন্ন মাকামাহ বা বক্তৃতা ছিল। 

অতঃপর ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আল জাওজিয়্যাহ এই কিতাবের বক্তব্যগুলোর উত্তম সম্ভাবনাকে তুলে ধরেছেন। আর এটাই সকল সালাফদের আচরণ ও স্বভাব। যদি আমরা উলামাদের কথার মন্দ সম্ভাবনা গ্রহণ করি, তাহলে কেউই বাকি থাকবে না। অর্থাৎ (প্রত্যেকেরই) এমন কিছু কথা আছে, যা বুঝা যায়না অথবা তা একাধিক অর্থ হবার সম্ভাবনা রাখে। এক আলিম একভাবে বলেন তো আরেকজন অন্যভাবে বলেন। যেমনটি কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাহ’তেও রয়েছে। মুহকাম ও মুতাশাবিহ। 

এমনিভাবে উলামাদের কথার ক্ষেত্রেও এমনটি হয়ে থাকে। সেখানে কিছু রয়েছে মুজমাল তথা সংক্ষিপ্ত, আবার কিছু রয়েছে মুফাসসাল তথা বিস্তারিত। এমনকি শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ’র ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ ‘সুফি’দের কথাই ধরা যাক। তারা শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ’র কিছু মুজমাল কথাকে নিল এবং এর দ্বারা তারা তাদের মানহাজ সঠিক হওয়ার এবং তাদের কিছু বিদআতের শরীয়তসম্মত হওয়ার দলীল পেশ করলো, যেগুলোতে তারা লিপ্ত। 

এখন আপনি শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ’র কাজগুলো নিয়ে দেখুন, তিনি কী এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেছেন? আপনি তারা (‘সুফি’রা) যা উল্লেখ করেছে তার পুরোপুরি ভিন্ন পাবেন।

তাই সকল উলামাদের জন্য এই নীতি। তাদের কিছু কথা আছে মুতলাক বা সাধারণ, আবার কিছু কথা আছে মুকাইয়াদ তথা শর্তযুক্ত। কিতাবুল্লাহ, সুন্নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উলামাদের কথা – সবক্ষেত্রেই এই নীতি প্রযোজ্য। চাই তারা সাহাবা হন অথবা তাবেইন অথবা তাদের পরবর্তীগণ। 

এ কারণেই বিদআতি ও বিরোধীদের সাথে আচরণবিধির ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রথমত আমাদেরকে এই ব্যক্তির অবস্থা দেখতে হবে। সে কি কুখ্যাত বা কুমতলবকারী অথবা খারাবির জন্য পরিচিত? এবং আহলুস সুন্নাহ’র মানহাজের সাথে শত্রুতা পোষণকারী? সে কি রাফেজি অথবা রাফেজিদের মত? এমন হলে আমরা তাদের কথার ক্ষেত্রে জাহেরি বা প্রকাশ্য অর্থটি গ্রহণ করবো। 

আর যদি ব্যক্তি সৎ ও মর্যাদাবান লোক হয়, সে তার ইসলামের খেদমতের কারণে পরিচিত হয় এবং কিতাবুল্লাহ, সুন্নাহ ও সালফে সালেহিনদের সম্মানের কারণে পরিচিত হয় তবে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে আমরা সংশয়পূর্ণ কথার উত্তম সম্ভাবনাটি/অর্থটি গ্রহণ করবো।

অর্থাৎ আমরা প্রথমে ব্যক্তির অবস্থা জানবো এবং যদি তার থেকে কয়েক ধরণের অর্থ হয় এমন কোন কথা প্রকাশ পায়, তবে তার অবস্থা অনুযায়ী অর্থ গ্রহণ করবো। এটি হচ্ছে প্রথম মূলনীতি। 

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ বলেন- 

“সালাফ ও খালাফদের অনেক মুজতাহিদগণ এমন কথা বলেছেন বা কাজ করেছেন, যা মূলত বিদআত। তারা জানতেন না যে – এটি বিদআত। এটা অনেক ক্ষেত্রে একারণে হয়েছে যে, তারা হয়তো ‘জয়িফ হাদিস’কে ‘সহিহ হাদিস’ ভেবেছিলেন। অথবা কোন আয়াতের কারণে – সে আয়াত থেকে তারা এমন কিছু বুঝেছেন, যা আসলে উক্ত আয়াত বর্ণনা করে না। অথবা তার (কোন মাসআলায়) রায় বা সিদ্ধান্ত প্রদানের কারণে, উক্ত মাসআলায় নুসুস তার কাছে পৌঁছেনি। আর যখন ব্যক্তি তার রবকে ভয় করে, তখন সে যথাসম্ভব আল্লাহ তায়ালার এই কথার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে- 

رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا

“অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না”। (সূরা বাকারা ২:২৮৬)

এবং সহিহ বর্ণনায় এসেছে- আল্লাহ তায়ালা বলেন- “আমি এটি করেছি” অর্থাৎ কেউ যদি ভুলে যায় কিংবা ভুল করে অতঃপর আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ কবে বলে যে, হে আল্লাহ! আপনি আমাদের ভুলের কারণে অপরাধী হিসেবে পাকড়াও করবেন না। তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে অপরাধী হিসেবে গণ্য করবেন না। এ ব্যাপারে অন্য জায়গায় আলোচনা রয়েছে।” এটি একটি ফাতওয়া থেকে সংগৃহীত হয়েছে। 

ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ কিছু সৎ ও মর্যাদাবান ব্যক্তির জন্য ওজর পেশ করেছেন, যারা সূফীদের সামা ও নাচে লিপ্ত হয়েছেন। এগুলো এমন কিছু বিষয়, যার ব্যাপারে সুফিরা দলীল দেন যে, ইবনে তাইমিয়াহ এই এই বলেছেন। না, আসলে বিষয়টি এমন নয়। তিনি বিদআতে লিপ্ত কতিপয় সৎ ও মর্যাদাবান ব্যক্তির বিদআতের ক্ষেত্রকে শিথিলভাবে দেখেছেন। 

ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ বলেন – 

“যে সকল সত্যবাদী, মুখলিস ও সৎ ব্যক্তি – বিভিন্ন ব্যাখ্যা করে এই অনর্থক কাজে লিপ্ত হয়েছেন, তাদের ভালো কাজসমূহ ইজতিহাদি অবস্থানের কারণে এই ধরনের গুনাহ ও ভুলকে ঢেকে দিবে। আর তাদের ভুল ও বিচ্যুতির ব্যাপারে এই উম্মাহর সকল নেককারদের পথ ও অবস্থান এমনটাই”। 

এ ব্যাপারে তিনি রহিমাহুল্লাহ আল্লাহ তায়ালার এই বাণীগুলোকে দলীল হিসেবে পেশ করেছেন-

﴿وَالَّذِي جَاءَ بِالصِّدْقِ وَصَدَّقَ بِهِ أُولَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ (33) لَهُم مَّا يَشَاءُونَ عِندَ رَبِّهِمْ ۚ ذَٰلِكَ جَزَاءُ الْمُحْسِنِينَ (34) لِيُكَفِّرَ اللَّهُ عَنْهُمْ أَسْوَأَ الَّذِي عَمِلُوا وَيَجْزِيَهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ الَّذِي كَانُوا يَعْمَلُونَ (35)﴾

অর্থঃ “যারা সত্য নিয়ে আগমন করছে এবং সত্যকে সত্য মেনে নিয়েছে; তারাই তো খোদাভীরু। (33) তাদের জন্যে পালনকর্তার কাছে তাই রয়েছে, যা তারা চাইবে। এটা সৎকর্মীদের পুরস্কার। (34) যাতে আল্লাহ তাদের মন্দ কর্মসমূহ মার্জনা করেন এবং তাদের উত্তম কর্মের পুরস্কার তাদেরকে দান করেন”। (সূরা যুমার ৩৯:৩৩-৩৫)

তিনি রহিমাহুল্লাহ সূফীদের সামা ও অনর্থক সাহচর্যের আলোচনার পর – দেখুন বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ – বলেন – 

“এই শ্রেণীর মাঝে যদিও আল্লাহর বন্ধুত্ব, তাকওয়া, মুহাব্বাত ও আল্লাহর নৈকট্য রয়েছে। (তবুও) এগুলোর কারণে তারা ওই লোকদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হবেন না, যারা দুনিয়ার বিবেচনায় বা মর্যাদায় এদের সমান নয়। সুতরাং তারা এ সকল ক্ষেত্রে ফিতনার বিরুদ্ধে লড়াইকারী আকাবির সালাফ, নেশার উদ্রেককারী পানীয়কে হালাল সাব্যস্তকারী সালাফ, রিবায়ে ফজল ও মুতআ’কে হালাল সাব্যস্তকারী, এবং হাশিশকে হালাল সাব্যস্তকারী সালাফদের চেয়ে অধিক শ্রেষ্ঠ নন। যাদের ব্যাপারে আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রহিমাহুল্লাহ বলেছেন- ইসলামে এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন, যাদের সুন্দর পদক্ষেপ ও পুন্যময় ভূমিকা রয়েছে, তথাপি তাদের থেকে স্খলন ও ভ্রান্তি প্রকাশ পেয়েছে। তাদের এই স্খলন ও ভ্রান্তির ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করা হবে না”।

অর্থাৎ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ বলেন—

“এই শ্রেণীর ব্যক্তিগণ – যারা সামা ও অনর্থক সাহচর্যে পতিত হয়েছেন – তারা যুদ্ধরতদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নন। সাহাবা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুদের মাঝেও এমন উদাহরণ রয়েছে। তারা (যারা সামা ও অনর্থক সাহচর্যে পতিত হয়েছেন) কতিপয় নেশা জাতীয় পানীয় হালাল মনে করে তাদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ নন। যেমন সাহাবী কুদামা ইবনে মাজউন রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এমন একটি কাজ করলেন এই আয়াতকে তাবিল করে – 

لَيْسَ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جُنَاحٌ فِيمَا طَعِمُوا إِذَا مَا اتَّقَوا وَّآمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ ثُمَّ اتَّقَوا وَّآمَنُوا ثُمَّ اتَّقَوا وَّأَحْسَنُوا ۗ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

“অর্থঃ যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তারা পূর্বে যা ভক্ষণ করেছে, সে জন্য তাদের কোন গুনাহ নেই যখন ভবিষ্যতের জন্যে সংযত হয়েছে, বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করেছে। এরপর সংযত থাকে এবং বিশ্বাস স্থাপন করে। এরপর সংযত থাকে এবং সৎকর্ম করে। আল্লাহ সৎকর্মীদেরকে ভালবাসেন”। (সূরা মায়েদা ৫:৯৩) 

অতঃপর তিনি বলেন- আমরা এদের অন্তর্ভুক্ত। এরপর তিনি মদ পান করলেন”।

কিন্তু আপনারা খেয়াল করুন এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুম তার সাথে কি আচরণ করেছিলেন? উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু সাহাবাদের থেকে আহলে শুরা’কে একত্র করলেন ও এই ব্যাপারে তাদের সাথে মাশওয়ারা করলেন। কুদামাহ ইবনে মাজউন ও অন্যান্য সাহাবাদের ব্যাপারে, যারা এই আয়াতের তাবিল করে মদ পান করলেন। 

উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু আহলে শুরা জমা করলেন। জিজ্ঞাসা করলেন আপনাদের রায় কি? তারা বললেন- (খেয়াল করুন কিভাবে বলছেন) আমরা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবো, তাদের উপর তাৎক্ষনিক হুকুম প্রয়োগ করা না হোক! হারামকে হালাল মনে করা হারাম!” 

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ বলেন- 

“যে ব্যক্তি সর্বসম্মত হারামকে হালাল করলো, অথবা সর্বসম্মত হালালকে হারাম করলো অথবা সর্বসম্মত কোন শরঈ বিধানকে পরিবর্তন করলো, সে ফকিহদের ঐক্যমত্যে – কাফের ও মুরতাদ। এই কথাটি মুজমাল বা সংক্ষিপ্ত। কিন্তু যখন আমরা নির্দিষ্টভাবে তাকফির করতে যাবো, তখন বিষয়টি বিভিন্ন রকম হবে”।

অতঃপর তারা বললেন, “আমরা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবো। যদি তারা এটিকে হালাল বলেন তবে আমরা তাদেরকে হত্যা করবো। আর যদি হারাম বলেন, আমরা তাদেরকে বেত্রাঘাত করবো”। 

অর্থাৎ তারা উক্ত কাজ থেকে ফিরে এলে তাদেরকে বেত্রাঘাত করা হবে। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করার পর তারা বলল, “মদ তো হারাম…”।

তাদের এই স্বীকারোক্তির পর তাদের বেত্রাঘাত করা হল এবং বিষয়টি চুকে গেল। তাদের ভুল জানিয়ে দেওয়া হল ও তাদের কাছেও স্পষ্ট করে দেওয়া হল। 

(صَبِيغُ بْنُ عَسَلٍ) সাবীগ ইবনে আসালের বিষয়টি এমন ছিল। এই ব্যক্তি কিছু বক্তব্য প্রচার করেছিল, যা সরাসরি হকের বিরোধী। তিনি বলেন, “যদি ঈসা আলাইহিস সালাম পুনরায় ফিরে আসে তাহলে তো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবার আগমন করা অধিক যুক্তিসংগত”।

(صَبِيغُ بْنُ عَسَلٍ) সাবীগ ইবনে আসালের সাহাবী হওয়ার ব্যাপারে ইখতিলাফ রয়েছে। তিনি জুঝামা গোত্রের লোক। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে তাকে পাঠানো হল। তিনি তাকে চাবুকাঘাত করলেন। অতঃপর সে যে কথা বলেছিল, তা পরিত্যাগ করলো। পরে তাকে ইরাকে পাঠানো হল। সে ছিল মিসরের অধিবাসী, আর তাকে পাঠানো হল ইরাকে! 

যখন খারেজিরা আত্মপ্রকাশ করলো, তখন এমন অনেক কথা বলতে লাগলো – যা সাবিগ ইবনে আসাল বলতো। তখন কিছু লোক এসে তাকে বলল, “মানুষ তো খারিজি হয়ে গেছে। তারা তুমি পূর্বে যা বলতে, সেটাই বলছে”। তখন তিনি বললেন, “না, আল্লাহর কসম! আমি কখনোই এই নেককার লোকের বিরুদ্ধে বের হবো না”। তিনি উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে উদ্দেশ্য নিয়েছেন। 

এমনিভাবে কোন কোন বিষয় ইসলাম শক্তিশালী থাকা অবস্থায় যেমন থাকে, ইসলামের দুর্বলতার সময়ে সেটা ভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন আমাদের বর্তমান অবস্থা। 

সুতরাং মুসলিমদের মাঝে সমাজবদ্ধতা, প্রীতি ও সৌহার্দ-ই মাকসাদ। অর্থাৎ আমরা মানুষের জন্য ওজর গ্রহণ করবো। তাদেরকে ব্যাখ্যার মাধ্যমে শিথিলতা দিব। নিছক প্রবৃত্তির স্বার্থে নয়, বরং সংঘবদ্ধ করার লক্ষ্যে। তারা নেককার, সত্যবাদী ও মুখলিস লোক। হয়তো তারা তাবিল করেছেন, কেননা তারা মনে করতেন এতে ইসলামের স্বার্থ রয়েছে। সুতরাং আমরাও তাদের ক্ষেত্রে শিথিলতার পথ গ্রহণ করব যাতে করে আমাদের মধ্যে মতানৈক্য না থাকে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার শত্রুদের বিরুদ্ধে আমরা সকলে মিলে জয়ী হব ইনশা আল্লাহ। 

এটি হচ্ছে প্রথম উসুল বা মূলনীতি। 

 

[এই পুস্তিকাটি ‘জামাআত কায়িদাতুল জিহাদ ফি জাজিরাতুল আরব’ (AQAP) এর আমীর শাইখ খালিদ বাতারফি হাফিযাহুল্লাহ’র অনবদ্য সিরিজ দরস أصول التعامل مع أهل البدع والمخالفين  এর প্রথম দরসের বাংলা অনুবাদ। এটির অন্যান্য দরসগুলো ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ প্রকাশিত হবে ইনশা আল্লাহ।]

 

*********

(Visited 142 times, 1 visits today)