আরবের জায়নিস্ট শাসকবর্গের স্বরূপ

হাকিমুল উম্মাহ শায়খ আইমান

আজ আমি আপনাদের সামনে ঐসব জায়নবাদী শাসকদের ব্যপারে কিছু বেদনাদায়ক সত্য কথা তুলে ধরবো-যারা ইসলামের কেন্দ্রভূমি, কুরআন নাযিলের পুণ্যভূমি, নবুওত ও খেলাফতের রাজধানী আরব উপদ্বীপের বিস্তীর্ণ অঞ্চল শাসন করে, আমাদেরই মতো নাম পরিচয়- লেবাসপোশাক ধারণ করে, কিন্তু চিন্তা, বিশ্বাস ও কর্মে এরা জায়নবাদীদের আদর্শ লালন করে।

প্রিয় মুসলিম উম্মাহ!
দিন যতই যাচ্ছিলো- ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদের চক্রান্ত ততই গভীর হচ্ছিলো।
এরই ধারাবাহিকতায় ক্রুসেডাররা আরব উপদ্বীপের শাসক হিসেবে সউদ পরিবারের আব্দুল আজিজকে ক্ষমতায় বসায়।

ক্ষমতায় এসেই সে একের পর এক গোলামী ও দালালীর চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে থাকে।
এমনকি উসমানী খিলাফতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বৃটিশদেরকে সহায়তা করে, উসমানিদের পরাজয় ও পতনে ভূমিকা রাখে।

আর উসমানী খেলাফতের পতনের মাধ্যমেই জায়নবাদীদের সামনে ফিলিস্তিনে তাদের ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ খুলে যায়।

এরপর আব্দুল আজিজের ছেলেপুলেরা পবিত্র আরব রাষ্ট্রটাকে তুলে দেয় আমেরিকার হাতে, সেই সঙ্গে আমেরিকা ইসলামের ভূমি থেকে মুসলমানরদের সম্পদ লুট করার, যেখানে খুশি সেখানে ঘাটি তৈরী করার এবং যেমন খুশি তেমন হুকুম চাপিয়ে দেওয়ার অধিকারও পেয়ে যায়।
অবশেষে আসে জমানার আবু রিগাল বাদশাহ ফাহাদের শাসনকাল।

ক্ষমতায় এসেই সে ইসরাইল রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ নেয়, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আরবের পূণ্যভূমিতে ক্রুসেডার বাহিনীকে প্রবেশ করার সুযোগ করে দেয়। সেই যে তারা প্রবেশ করেছে- আজো পর্যন্ত আর বের হয়নি।
এরপর তার ভাই আব্দুল্লাহ।

সে এসে সর্বধর্মীয় ঐক্যের দাওয়াত দিতে শুরু করে, তাওহীদের অনুসারী মুসলিমদের সাথে গাছপালা গরু-ছাগল আর ইট-পাথরের পুজারী মুশরিক ইহুদী খ্রিষ্টানদের কে মেলানোর অপচেষ্টা করে। এবং সেও তার সহোদরের মতোই ইসরাইলের প্রতি মৈত্রি ও স্বীকৃতি অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যাক্ত করে।

আর বর্তমান বাদশা সালমান- যার অভিষেক হয়েছে চল্লিশজনেরও বেশি আলেম-উলামা, মুজাহিদ-বিপ্লবীদেরকে হত্যার মধ্য দিয়ে।

আর তার ছেলে মুহাম্মাদ নিজেই নিজেদের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছে। সম্পূর্ণ নির্লজ্জ বেহায়ার মতো সারা পৃথিবীর সামনে নিজেদের জায়নবাদী চেহারা প্রকাশ করে দিয়েছে।

আরবের পবিত্র মাটিতে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার বিস্তার করেছে। হকপন্থী-দরবারী নির্বিশেষে আলেম উলামাকে গ্রেফতার করেছে এবং প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে বলেছে- “ইসরাইল নামক রাষ্ট্রটির বেচে থাকার পূর্ণ অধিকার আছে।”

এই ছিল মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিশেষ করে আরবদের বিরুদ্ধে সউদ পরিবারের ঘটানো অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ।

একই ধরনের দালালী ও গোলামীর ইতিহাস আছে উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোরও। যেখানে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের অনুগত একাধিক বিভক্ত রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছে।

বৃটিশ সাম্রাজ্য প্রভাব হারানোর পর এই (আরব) রাষ্ট্রগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয় আমেরিকা, যেন মুসলমানদের সম্পদ লুটের সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা যায়।

তারা তাদেরই হাতের পুতুল আলী আব্দুল্লাহ সালেহকে ইয়েমেনের ক্ষমতায় বসায়, তার পতনের পর ক্ষমতায় আনে আব্দু রব্বিহি আল আমরিকিকে যে কিনা শিয়া হুথিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজধানী সানার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। আর এর ফলে জাজীরাতুল আরব পুরোটাই মার্কিন নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।

এখানেই ওদের পঞ্চম নৌবহরের অবস্হান, এখান থেকেই পরিচালিত হয় আঞ্চলিক কর্তৃত্ব ও আধিপত্য। এখানকার বিমানঘাটিগুলো থেকেই ওদের জঙ্গী বিমানগুলো উড়ে গিয়ে বোমা ফেলে আফগানে ইরাকে ইয়েমেনে আর শামে….

আর জাজীরাতুল আরবের মুসলিমরা এই শিয়া মার্কিন জোটের কারণে উত্তর দক্ষিণ এবং পূর্বদিকে শিয়াদের দিক থেকেও অবরোধের হুমকিতে পড়ে গেছে, কারণ এইসব অঞ্চলগুলোতে তাদের ঘিরে রেখেছে হুথি-সাফাবী শিয়া পন্থীরা।

অবশেষে মার্কিনীরা যখন ইসলামের বিরুদ্ধে নির্লজ্জ শত্রুতায় আর কোন রাখঢাক রাখার প্রয়োজন নেই বলে সিদ্ধান্ত নিল- তখন দৃশ্যপটে নিয়ে আসলো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাধ্যমে তারা মার্কিন দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করার মধ্য দিয়ে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের এক নতুন অধ্যায়ের সুচনা করলো।

আর মিশরে সিসি, রিয়াদে মুহাম্মাদ বিন সালমান এবং আমিরাতে মুহাম্মাদ বিন জায়েদের মতো জায়নবাদী গোলামদেরকে দেশে দেশে শাসনক্ষমতায় বসিয়ে দিল।

এহেন দুর্যোগময় দুর্দিনে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র অঞ্চলের অধীবাসীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই-
বলুন, এ সমস্যা সমাধানের উপায় কী?
এই ফিতনা দমনের উপায় কী?
এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলার পথ কী?

পথ বড়ই দীর্ঘ ও দূর্গম। এবং এই অভিযাত্রায় প্রয়োজন বিপুল ধৈর্য ও অটল মনোবল, সীমাহীন ত্যাগ তিতিক্ষা ও কুরবানী…

খুব লম্বা কথায় না গিয়ে তিনটি মাত্র শব্দে আমি সমাধানের উপায় বাতলে দিচ্ছি-
⦁ হিজরত
⦁ জিহাদ এবং
⦁ ঐক্য।

হিজরতের ব্যাপারে বলতে হয়-
এটা আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের সুপ্রাচীন সুন্নাহ এবং জিহাদের অনিবার্য পূর্বশর্ত। সুতরাং এ অঞ্চলের আলিম ওলামা ও তালিবানে ইলমের কর্তব্য হল অপেক্ষাকৃত নিরাপদ অঞ্চলে হিজরত করা- যেন তারা সেখানে বসে মাশওয়ারা পরামর্শ করতে পারেন এবং জায়নবাদী আরব শাসক ও তাদের মনিবদের বিরুদ্ধে জিহাদকে সংগঠিত করতে পারেন। সংগ্রাম ও বিপ্লবের প্ল্যান-প্রোগ্রাম ঠিক করতে পারেন।

আর এ কাজের জন্য সর্বোত্তম ভূমি হল জিহাদভূমি। বিপ্লবের পরিকল্পনা গ্রহণ-বাস্তবায়ন এবং সুসংগঠনে জিহাদভূমিই সর্বাপেক্ষা নিরাপদ ও উপযোগী।

হিজরতের এই আমল মুহাজিরের সামনে চিন্তার নতুন নতুন দিগন্ত খুলে দেয় এবং আন্দোলনের এমন সব প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি করে দেয়- তাগুতের নিয়ন্ত্রণে বসবাস করা কারো পক্ষে যেগুলো কল্পনাও করা সম্ভব না।

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَمَن يُهَاجِرْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يَجِدْ فِي الْأَرْضِ مُرَاغَمًا كَثِيرًا وَسَعَةً
“আর যারা হিজরত করবে আল্লাহর রাস্তায়- তারা পৃথিবীর বুকে পেয়ে যাবে (শত্রুকে পরাস্ত করার) অনেক স্থান এবং স্বচ্ছলতা” (সুরা নিসা: ১০০)

একজন হিজরতকারী মুজাহিদ যেভাবে তাগুতকে আঘাত করার পরিকল্পনা করতে পারে-তাগুতের শৃঙ্খলে থাকা কোনো ব্যক্তি সেটা ভাবতেও পারে না।

এ কারণেই নয়-এগারোর সেই বরকতময় হামলা তাগুতের বিস্তৃত আয়তনের খোলা জেলখানার অধীবাসীদেরকে প্রচন্ডরকম বিস্মিত করেছিল- তারা কোনদিন কল্পনাও করে উঠতে পারেনি যে সুপারপাওয়ার আমেরিকার উপর এমন আঘাত হানার সামর্থ্য মুসলমানদের আছে।

কারণ তারা তো বেড়েই ওঠেছে এই ভাবনার উপর- “আমরা দুর্বল, অসহায়। সম্বলহীন করবার মতো আমাদের কিছুই নেই”।

হীনম্যন্যতার এই দর্শনের উপরেই তারা বেড়ে ওঠেছে, এই দর্শনের উপরই তারা জীবন কাটিয়ে দিয়েছে।

তাগুত একেকটা মিথ্যা নাটক সাজিয়ে তাদের উপর দোষ চাপিয়ে দেয় আর অমনি তারা সমস্বরে জপতে শুরু করে- “আমরা শান্তিবাদী, অস্ত্রের সাথে- যুদ্ধের সাথে আমাদের দূরতম সম্পর্কও নেই”…

পক্ষান্তরে শায়েখ উসামা ও তার সঙ্গীরা নিপীড়িত সম্বলহীনদের হয়ে সুপারপাওয়ার রাশিয়া ও আমেরিকার বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছেন। আর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে জেনেছেন হালকা অস্ত্রে, স্বল্প সামর্থ্যে কি করে এমন বড় শত্রুকে ঘায়েল করতে হয়।

সেখানকার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞান, নিপুণ ও নিখুত প্ল্যান আর দ্বীপ্ত চেতনা ও আত্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে শত্রুর বাণিজ্যিক বিমানকে তাদেরই বিরুদ্ধে মারাত্নক মারণাস্ত্রে পরিণত করেছেন- যার একটা গিয়ে আঘাত হেনেছিল তাদের প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনে, আরেকটা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিল তাদের সমস্ত অর্থনীতির মেরুদন্ড টুইনটাওয়ারকে আর আরেকটা আঘাত হানতে যাচ্ছিল হোয়াইটহাউসে।

আর এটা ছিল আন্দোলনের ইতিহাসে যুগান্তকারী পরিকল্পনা, অভাবনীয় পদক্ষেপ। এবং এটা এসেছিল একজন হিজরতকারী মুজাহিদের কাছ থেকে।

সত্যিই!

এ ধরনের চিন্তা ও পরিকল্পনা তাগুতের হাতে শৃঙ্খলিত অবরুদ্ধ একজন ব্যক্তির পক্ষে অকল্পনীয়ই বটে।

এভাবেই হিজরত মুহাজিরদের সামনে চিন্তা ও কর্মের নতুন নতুন সব দিগন্ত খুলে দেয়। তাগুতের খোলা জেলখানায় বাস করা লোকদের পক্ষে যার কল্পনাও করা সম্ভব হয় না।

শায়েখ উসামা (রহ:) আফগানিস্তানে থাকতে বলতেন- আমরা এখানে স্বাধীনতার নির্মল নিশ্বাস বুকভরে টেনে নেই, কথা বলার স্বাধীনতা প্রাণভরে উপভোগ করি..

এখানে কথা বলতে ও সত্যপ্রচার করতে আমরা বাধাহীন, শরীয়ার সীমারেখা ছাড়া আমাদের উপর আর কোন বাধা নেই।

আর এ ব্যাপারে শায়েখ উসামা (রহ:) আমাদেরকে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন যে, তিনি জাজীরাতুল আরবের একাধিক আলেম ও দায়ীকে বারবার হিজরত ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে বলেছেন। হিজরত করতে তাগিদ দিয়েছেন। কিন্তু তাদের প্রায় সবাই তার কাছে এই ওজর পেশ করতো যে, ধাপে ধাপে উম্মাহ, সমাজ ও শাসন ব্যাবস্থাকে সংশোধন করার জন্য তাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে।

তখন শায়েখ তাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন- এসব পরিকল্পনা সফলতার মুখ দেখার আগেই সউদ পরিবার তা ব্যার্থ করে দিবে।
সত্যিই, তাই হয়েছে। ঐসব দায়ীদের সঙ্গে সউদ পরিবার গাদ্দারী ও বেইমানী করে তাদেরকে বন্দী করেছে। আর মুহাম্মাদ বিন সালমান এসে তো শাসকপন্থী আলেমদেরকেও গ্রেফতার এবং নাজেহাল করে ছেড়েছে।

তো এই ছিল হিজরতের ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত কিছু কথা-

আর জিহাদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো-

আমাদের সকল সেক্টরেই বহুমুখী তৎপরতায় তাগুতের বিরুদ্ধে জিহাদে নামতে হবে, এর মধ্যে প্রথমেই আসে (তাওহীদের) দাওয়াহ, প্রচার-প্রসার, হক কথা বলা ও মিডিয়ার মাধ্যমে জিহাদে অংশগ্রহণ।

সুতরাং আরবের আত্মমর্যাদাশীল সচেতন মুসলিমদের উপর এখন পবিত্র ফরজ দায়িত্ব হল চেতনার যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া। বর্তমান সময়ে উম্মাহর বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধগুলোর বাস্তবতা ও সঠিক পরিস্থিতি জানিয়ে উম্মাহর মাঝে জাগরণ ও রেনেঁসা তৈরী করা।

আর এই পবিত্র ফরজ সর্বপ্রথমেই অর্পিত হয় উম্মাহর মুখলিস আলিম-ওলামা ও তালিবুল ইলমদের কাঁধে।

সুতরাং
তাঁরা যেন নিজেদের দায়িত্ব ও উম্মাহর প্রতি কর্তব্যের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করেন।
তাঁরা যেন সত্যপ্রকাশে কোন ধরনের দ্বিধা না করেন,
তাঁরা যেন বাতিলের মুখোশ উন্মোচনে ভয় না করেন,

আর যারা মনে করেন যে তারা চাপের মধ্যে আছেন, কঠিন পরিস্থিতিতে আছেন- তাঁরা যেন সেখান থেকে হিজরত করেন- যেন উচ্চকণ্ঠে দ্বিধাহীন চিত্তে তাঁরা উম্মাহর সামনে সত্য উচ্চারণ করতে পারেন।

দাওয়াহ, প্রচার এবং সত্যকে সুস্পষ্ট করে দেওয়ার পর আসে অস্ত্র ও শাহাদাতের মাধ্যমে ময়দানের লড়াইয়ে সশস্ত্র বিপ্লবে আঘাতে আঘাতে শত্রুকে পর্যদুস্ত করার পর্ব।

আর এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মুজাহিদিনদেরকে মার্কিন ও ইসরাইলি টার্গেটগুলোকে বাছাই করে হামলা করতে হবে।

কারণ মার্কিন মনিবের পতন মানেই হল সউদ পরিবার, জায়েদ পরিবার ও তাদের সমশ্রেণীর গোলামদের মরণ।

আর ঐক্যের গুরুত্ব আমি মনে করিনা আপনাদের কারো অজানা আছে। কারণ, আজকের এই যুদ্ধ এই সংগ্রাম কারো ব্যাক্তিগত যুদ্ধ, একক কোনো সংগ্রাম নয়।

বরং এটা সুদীর্ঘকাল যাবৎ চলে আসা উম্মাহর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ক্রুসেডযুদ্ধেরই একটি পর্ব। এই ধারাবাহিক ক্রুসেডের বর্তমান পর্বের সুচনা মার্কিনীদের এই সাম্প্রতিক চলমান হামলার মাধ্যমে যেটাকে জর্জ বুশ প্রকাশ্যে ক্রুসেড হিসেবে ঘোষণা করেছিল।

আশা করি আপনারা এটাও মনে রাখবেন যে আমাদের এই সংগ্রাম সুনির্দিষ্ট কোনো অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়, কোনো নির্দিষ্ট শহর বা রাষ্ট্র; কোনো নির্দিষ্ট বংশ বা গোত্রের সাথে সম্পৃক্ত নয়।

বরং এ যুদ্ধ গোটা উম্মাহর সম্মিলিত শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে পুরো উম্মাহর যুদ্ধ।

সুতরাং আপনাদের কর্তব্য হল নিজেদের কাতারগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করা, নিজস্ব শক্তিগুলোকে সংঘবদ্ধ করা, সকল মিত্রদেরকে সুসংগঠিত করা, তাওহিদ ও কালেমার পতাকাতলে সকলে সমবেত হওয়া, আর তারপরে সকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে- পরস্পরের সহযোগী হয়ে, উম্মাহকে সঙ্গে নিয়ে, কাধে কাধ মিলিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে এক সুদৃঢ়, সুদীর্ঘ ও অবিরাম সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়া।

কথা শেষ করবার আগে আমি জোরদারভাবে আমাদের সম্মানিত উলামায়ে কেরাম এবং মুখলিস তালিবুল ইলমদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই-

আপনাদের দায়িত্বের পরিধি অনেক বড়, আপনাদের কর্তব্যও অনেক বেশি।

আপনারা ভুলে যাবেন না যে, মার্কিনপন্থী তাগুত সংস্থাগুলো দালাল শ্রেণীর পথভ্রষ্ট ধর্মব্যাবসায়ী, তাগুতের পদলেহী- দুনিয়ার পদলোভী নামধারী আলেমদেরকে নিয়ে বিরাট এক বাহিনী তৈরী করে ফেলেছে। এদের কাজই হলো সংশয় সৃষ্টি করে বেড়ানো।

এদের ফিতনা আর ভ্রষ্টতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারেন কেবলমাত্র ঐ সকল হকপন্থী উলামায়ে কেরাম এবং মুখলিস তালিবানে ইলম, যারা কিতাব-সুন্নার দলীল-আদিল্লা সুবিদিত বাস্তবতা এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমাণের আলোকে দরবারী আলেমদের মিথ্যা, ধোঁকা ও প্রতারণার প্রাসাদকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবেন।

সুতরাং আল্লাহ তা’আলা আহলে ইলমের কাছ থেকে যে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন তার বাস্তবায়নের জন্য আপনারা প্রস্তুত হোন। আপনাদের প্রতি উম্মাহর সুধারণাকে বাস্তবে রূপদান করুন।
নিজেদের দায়িত্ব থেকে গাফেল হয়ে বসে থাকবেননা। এমনটা হলে আল্লাহ আপনাদের জায়গায় ভিন্ন কোন প্রজন্মকে প্রতিস্থাপন করবেন।

﴿وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللَّهِ ۖ ثُمَّ تُوَفَّىٰ كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ [٢:٢٨١]﴾
“আর তোমরা ভয় করো সেই দিনকে- যেদিন তোমরা আল্লাহর কাছে ফিরে যাবে, তারপর প্রত্যেক ব্যক্তিকেই পরিপূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে তার কৃতকর্মের- এবং তাদেরকে জুলুম করা হবেনা” (সুরা আল বাকারা: ২৮১)

জাজীরাতুল আরবে অবস্থানরত প্রিয় মুসলিম উম্মাহ!

সমগ্র আরব উপদ্বীপের উপর ক্রুসেডাররা আধিপত্য বিস্তার করেছে। যাদের সামরিক ও গোয়েন্দাঘাটির ভূমিকা পালন করছে মুসলিম উম্মাহর প্রণকেন্দ্রে বিষফোড়ারূপী ইসরাইল। অন্যদিকে আবার আরবের চারদিক থেকে ইরানী শিয়াপন্থীদের ক্রমবর্ধমান শক্তির হুমকি দিনদিন বেড়ে চলছে। এমনকি মক্কা মদীনা দখল করারও পায়তারা করছে ওরা। ওদের মুখোমুখি হলে হয়তো সউদ পরিবার লেজ গুটিয়ে পালাবে, তাই তোমাদেরকে বলি- তোমরা কতটুকু প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছো?

কবিতা
———–
ও আরবের পথিক, সুদূর কাফেলার অভিযাত্রী
দূর্গম মরুপ্রান্তরে যারা ছুটে চলো দিনরাত্রি
আরবের পথে ছুটে চলা ওরে সওদাগরের দল
বয়ে নিয়ে যেতে পারবে কি এই আমার চোখের জল?

ওখানে এখনো হৃদয়ে যাদের আছে ঈমানের ছটা
পৌছে দিওগো আমার শঙ্কা, হৃদয়ের কথকতা।
শত্রুরা সব এসে গেছে কাছে, আঁধার নেমেছে কালো
জানিনা তোমরা এখনো কেন যে এতটাই অগোছালো!

তোমাদের বুঝি মনের ভেতরে এতটুকু ভয় নাই?
প্রস্তুতি ছাড়া নি:শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছো তাই?
তোমাদের প্রতি বিদ্বেষে যারা ফেলে প্রতি নি:শ্বাস,
হৃদয়ে যাদের আল্লার প্রতি নাই কোন বিশ্বাস,

প্রতিদিন যারা তোমাদের সাথে বাধায় নতুন যুদ্ধ,
লোকে ঘুমালেও যারা জেগে থাকে প্রাণপণ অনিরুদ্ধ।
আপন জমিতে চাষাবাদ করা ওদের নয়কো মুখ্য,
তোমাদের মাটি লুটে নিতে ওরা আশায় বেধেছে বক্ষ।

খুব কাছাকাছি এসে গেছে ওরা তোমাদের সীমানার।
তোমাদের আকাশে জমে গেছে মেঘ-ঘন ঘোর আধিয়ার।
এমন বজ্রনিনাদে যে আজ যুদ্ধ দামা বাজে,
এখনো তোমরা ঘুমিয়ে যে আছো সাজোনিকো রণসাজে,

এখনি সময়, প্রস্তুতি নাও- লড়ে যাও আমরণ..
হৃদয়ে হৃদয়ে যেন বয়ে যায় সুশীতল সমীরণ।
বড় ভয় হয়, প্রাণের সায়রে জেগে ওঠে অভিমান,
গাফলতে-ঘুমে না জানি হারায় সবটুকু সম্মান।

জেগে উঠে যদি শঙ্কায় পড়ো তবু নাই কোনো ভয়,
জেগে ওঠলেই শঙ্কার পর আসবে আবারো জয়।
আর যদি তবু ঘুমিয়েই থকো জাগতে তোমাকে হবে,
আঘাতে হাভাতে শঙ্কায় আর ধ্বংসের উদ্ভবে,
অতীতের যত গৌরব, যত অম্লান ইতিহাস,
ভয় হয় এই মরণঘুমেই ঘটে নাকি তার নাশ…..

এরচেয়ে বড় কী বিপদ আর, বলো হে আপনজন
নিজভূমি ছেড়ে যদি নিতে হয় সূদূরে নির্বাসন।
ডাক দিয়ে যাই, যদি তোমাদের কাজে লাগে কথাদুটো,
তবে না ধন্য, এখনি সময় জেগে ওঠো জেগে ওঠো…

ওয়া আখিরু দাওয়ানা আনিল হামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামিন।
সালাত সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় নবীজীর প্রতি, তার পরিবার পরিজনের প্রতি, এবং তার সাহাবীগণের প্রতি।

ওয়াস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু….

(Visited 891 times, 1 visits today)