এই পর্বে আছে – দারুল ইসলাম, দারুল হারব ও হারবির পরিচয়
ডাউনলোড
শায়খ আবু মুহাম্মাদ আল মাকদিসি
তাওহিদের গুরুত্বের কারণে এবং যেহেতু তাওহিদই আমাদের নিকট সর্বপ্রথম ও সার্বক্ষণিক, তাই আমরা আরেকবার এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যে, Continue reading
আদনানির মৃত্যু ও মুবাহালা নিয়ে খাওয়ারিজদের মিথ্যাচার ও অসার বক্তব্যের জবাব!
খাওয়ারিজদের কর্কশ চিৎকারে যাদের কানে তালা লেগে গিয়েছে কিংবা এছাড়াও খাওয়ারিজ গোষ্ঠী IS এর ব্যাপারে সংক্ষেপে ভালো ধারণা নিতে চাইলে এই লেখাটি অবশ্যপাঠ্য!
মুসলিম উম্মাহর বর্তমান পরিস্থিতি
ইমাম আনোয়ার আল আওলাকি (রহঃ)
ভূমিকা
বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক রসূলের উপর, তাঁর পরিবারের উপর, তাঁর সাহাবীদের উপর এবং তাদের উপর; যারা শেষ দিবস পর্যন্ত সত্য দ্বীনের অনুসরণ করে।
অতঃপর,
“আর তোমাদের কি হল যে তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করছো না…?”
[সূরা আন-নিসাঃ আয়াত ৭৫]
এই খুতবায় ইমাম আনওয়ার আল আওলাকি (আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন) শ্রোতাদের কুরআন ও হাদীসের আলোকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। অবমাননাকর এই পরিস্থিতি থেকে কিভাবে মুসলিম উম্মাহ পরিত্রাণ লাভ করতে পারবে, তিনি তার উপায়গুলো এখানে উল্লেখ করেছেন।
আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘আমাদের দ্বীনের মধ্যেই হচ্ছে আমাদের সম্মান’। সুতরাং আমাদেরকে এর দিকে ফিরে আসা উচিত, যদি আমরা পুনরায় (আমাদের ভূমিগুলো) ইসলামিক শরীয়াহ নিয়ে আসতে চাই।
এটি ইমাম আনওয়ার আল আওলাকী (আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন)- এর একটি খুতবার বঙ্গানুবাদ।
*****
শাইখের সংক্ষিপ্ত জীবনী
ইমাম আনওয়ার আল আওলাকি ২০০৯ সালের পহেলা মার্চ পাকিস্তানের ভাই-বোনদের উদ্দেশ্যে টেলি-কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘মুসলিম উম্মাহর বর্তমান পরিস্থিতি’ শিরোনামে এই খুতবাহটি দেন।
শাইখ আনওয়ার আল আওলাকি রহ. নিউ মেক্সিকোতে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর বাবা-মা ইয়েমেনী, সেখানেই তিনি ১১ বছর জীবন যাপন করেন এবং প্রাথমিক ইসলামিক শিক্ষা গ্রহন করেন। তিনি কলোরডো, ক্যালিফর্নিয়া এবং পরবর্তীতে ওয়াশিংটন ডি.সি. তে ইমাম হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। সেখানে তিনি দার আল-হিজরাহ ইসলামিক সেন্টার এর প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির মুসলিম আলেম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কলোরাডো ইউনিভার্সিটি থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ বি, এস করেন এবং সান ডিয়াগো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে এডুকেশন লিডারশিপের উপর এম.এ করেন এবং জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট এ ডক্টরেট করার সময় তাঁর উপর আমেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এছাড়াও তাঁর তিনটি সর্বোচ্চ ইসনাদে কুরআন আবৃত্তি করার, ৬টি হাদীসগ্রন্থ থেকে বর্ণনা করার এবং কুরআন, কুরআনের বিজ্ঞান, হাদীস, হাদীমের বিজ্ঞান, তাফসির, ফিকহ, উসুলে ফিকহ এবং আরবী ভাষার উপর দক্ষতা রয়েছে।
তাঁর অনেকগুলো জনপ্রিয় খুতবাহ আছে, যেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হচ্ছে ‘নবীদের জীবনি’, ‘আখিরাত’ এবং ‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনি’। আল্লাহ এই কাজগুলোর জন্য তাঁকে উত্তম পুরস্কার দান করুন।
আমরা এই বলে আমাদের ভূমিকা শেষ করতে চাই যে, যে কেউ একটি ভাল কথাকে ছড়িয়ে দিল, সে সেই ভাল কাজের পুরস্কারের অংশীদার হয়ে গেল, যদিও সেই ভাল কাজের পুরস্কারে কোন কমতি করা হবে না। আমরা সবাইকে আহবান করি, যেন তারা এই কাজগুলো অনেকের মাঝে ছড়িয়ে দেয়, যাতে অন্যরাও এর থেকে লাভবান হতে পারে। এখানে কোন কপিরাইট নেই, যত ইচ্ছা ছড়িয়ে দেয়াই উদ্দেশ্য।
********
প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
আমি এখন আপনাদের উদ্দেশ্যে ইয়েমেন থেকে বলছি, আর ইয়েমেন ও পাকিস্তানের মধ্যে বেশ সাদৃশ্য বিদ্যমান। এজন্য এক ভূখণ্ড নিয়ে বললে অনেকটা অন্যটি নিয়েও বলা হয়ে যায়। দুই দেশের জনগণেরই ইসলামের প্রতি প্রবল ভালবাসা ও গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান, দুই দেশই নিজেদের গণপ্রজাতন্ত্রী বলে দাবী করে, দুই দেশই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অশান্তির শিকার, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে দুই দেশই আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী, নিজেদের এলাকায় আমেরিকার ড্রোন হামলার ফলে দুই দেশই আমেরিকার কাছে নিজেদের সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমেরিকার সরবরাহ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে আর দুই দেশই জোচ্চোরদের দ্বারা শাসিত।
আসলে রিবাত থেকে কাবুল পর্যন্ত সর্বত্র দুর্বৃতরা জনগণের উপর নির্যাতনের শাসন চালিয়ে আমাদের ভূখণ্ডগুলোকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।
ভাই ও বোনেরা, ধৈর্যের সাথে আমার কথাগুলো শুনুন, আমি মনে করি মুসলিম হিসেবে আমাদের এক অপরকে আন্তরিকতার সাথে পরামর্শ দেওয়া উচিৎ, সততার সাথে এসব বিষয়ে আলোচনা করা উচিৎ। শুধুমাত্র মিষ্টি মিষ্টি কথা কারও কোন উপকারে আসবে না। কাজেই আমরা যদি পরিবর্তন চাই আমাদের বসে এ বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করা উচিৎ এবং খুঁজে বের করা উচিৎ যে আমাদের রোগটা কোন জায়গায়, সে রোগের লক্ষণগুলো কি কি, আর কিভাবে সে রোগ থেকে সেরে ওঠা যায়।
আমাদের অবশ্যই জাতীয়তাবাদ, গোত্রবাদ, ভিন্ন জাতি, ভিন্ন ভাষার কারণে সৃষ্ট বিভক্তি- এসব অসুস্থতা থেকে বেরিয়ে আসা উচিৎ যেগুলো আমাদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করে অথচ বাস্তবে এসব আমাদের এক উম্মাহ হিসেবে শক্তির কারণ হওয়া উচিৎ। আমাদের মাঝে বিদ্যমান এই বৈচিত্র্য, পটভূমির ভিন্নতা, জাতিগত ও ভাষাগত এইসব ভিন্নতা আমাদের শক্তির উৎস হওয়া উচিৎ, দুর্বলতার নয়।
সুতরাং আজ আমি এমন কিছু বিষয়ে বক্তব্য রাখতে চাই যা হয় অনেকের কাছে স্পর্শকাতর বলে মনে হতে পারে, কিন্তু যেমনটা আমি বলেছিঃ আমি আমার বক্তব্য আন্তরিকতার সাথে পেশ করছি আর এই বক্তব্যকে আমি আমার ও আমার ভাই ও বোনদের জন্য উপদেশ হিসেবে নিতে চাই।
এই হল বর্তমানে আমাদের মুসলিম উম্মাহর পরিস্থিতি, আমরা এর পরিবর্তন চাই আর ইতিহাস বলে পরিবর্তন সর্বদাই তারুণ্যের হাত ধরে আসে, যখন আল্লাহ্ (আযযা ওয়া যাল) ইব্রাহীম (আঃ) এর সেই সময়ের কথা বলেছেন যখন তিনি মূর্তি ভাঙ্গার মত তাঁর জীবনের একটি পর্বতসম গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিলেন, কুরআনে আছে,
“কতক লোকে বললঃ আমরা এক যুবককে তাদের সম্পর্কে বিরুপ আলোচনা করতে শুনেছি আর তার নাম ছিল ইব্রাহীম।”
[সুরা আম্বিয়াঃ আয়াত ৬০]
সুতরাং ইব্রাহীম (আঃ) তখন তরুণ ছিলেন, আবার গুহার সেই তরুণদের কাহিনী যাদের নামে কুরআনে পুরো একটা সুরা নাজিল হয়েছে, সুরাহ আল কাহফ, তারাও তরুণ ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর শুরুর দিকের অনুসারীরাও ছিলেন তরুণ। সুতরাং তরুণরাই সবসময় পরিবর্তনের এই গুরুদায়িত্ব বহন করেছেন।
সুতরাং পরিবর্তনের এই সময়ে আপনার ভূমিকা ও আপনার সম্ভাবনাটুকু বুঝতে হলে আপনাকে আগে এটা ভালভাবে উপলব্ধি করতে হবে যে আসলে আপনি কে ও আপনি কোথায় আছেন।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমরা এমন এক সন্ধিক্ষণে আছে যখন ইসলামের পুনর্জাগরণ খুবই সন্নিকটে, আর এ কথার অবশ্যই প্রমাণ আছে, আমি শুধু উম্মাহর জন্য আমার ভাল আশা আকাঙ্খা আছে বলেই এ কথা বলছি না। রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর একটি সহীহ হাদিসে বলেছেন,
“প্রতি শতাব্দীতে(১০০ বছরে) আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) কাউকে (অথবা কিছু লোকজনকে) পাঠাবেন যারা এই দ্বীনকে পুনর্জীবিত করবে।”
আমরা যদি পেছনে ফিরে যাই আর দেখি যখন আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামী খিলাফতের পতন ঘটেছিল সেটা ছিল ১৯২৪ সালে। সে সময়ই সর্বশেষ ইসলামী খিলাফতের (অটোমান খিলাফত) সমাপ্ত হয়েছিল। সেই থেকে, আমরা আর খিলাফত পাইনি কিন্তু পশ্চিমাদের থেকে জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ধার করে নিয়েছি (সত্যি বলতে এটা ধার করা নয়, বরং আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া)।
সেই থেকে মুসলিম উম্মাহ এমন বিরূপ রাজনৈতিক পরিবেশে বসবাস করছে। যদি আমরা রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদিসটি এই অর্থে গ্রহণ করি যে আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) আমাদের জন্য দ্বীনের সেসব বিষয়ের পুনর্জাগরণ ঘটাবেন যেসব বিষয়ের পুনর্জাগরণ প্রয়োজন, তাহলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি হল হুকুমত বা রাষ্ট্রক্ষমতা। রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“ইসলামের ইবাদাতগুলো একে একে ভেঙ্গে পড়বে, সর্বপ্রথম ভেঙ্গে পড়বে ক্ষমতা আর সর্বশেষে সালাত।”
তো যদি আমরা রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদিসটি এই অর্থে গ্রহণ করি যে আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) আমাদের জন্য দ্বীনের সেসব বিষয়ের পুনর্জাগরণ ঘটাবেন যেসব বিষয়ের পুনর্জাগরণ প্রয়োজন, তাহলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি হল যেমনটা আমি বলেছি; হুকুমত বা রাষ্ট্রক্ষমতা।
যেহেতু এখন আমরা ১৯২৪ থেকে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত আছি, আমরা আশা করি যে সেই দিনটির ১০০ বছর পূর্তি হবে না যতক্ষণ না আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) আমাদের জন্য খিলাফতের রুপে ইসলামী হুকুমত ফিরিয়ে আনবেন। অর্থাৎ, ২০২৪ এর পূর্বেই বি ইযনিল্লাহ, অবশ্য অদেখা কোন কিছুই আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) ছাড়া আর কারও জানা নেই, কিন্তু আমরা এই হাদিস থেকে এই অর্থ নিতে পারি যে আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) আমাদের ইসলামী শাসন বিহীন অবস্থায় ১০০ বছরের বেশি রাখবেন না।
সুতরাং আমরা এক ইসলামী পুনর্জাগরণের সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছি, এক পুনর্জাগরণ যা শুধু আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং হুকুমত, জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ, এবং প্রত্যেক সে সব বিষয়ে ঘটবে যেসব বিষয়ে পুনর্জাগরণ প্রয়োজন। প্রতিনিয়ত মুসলিমরা এখন অধিক হারে এই বিষয়ে একমত হচ্ছে যে মুসলিম বিশ্বে পুনর্জাগরণ ও পরিবর্তন আনার জন্য জিহাদ আমাদের কার্যক্রমের অংশ হওয়া উচিৎ, আমাদের দখলদারি শত্রু এবং জালিম শাসকদের বিরুদ্ধেও লড়াই করা উচিৎ।
বর্তমানে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান, যাদের রয়েছে ইসলামের পথে তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষার দীর্ঘ ইতিহাস, বিশাল জনসংখ্যা এবং চমৎকার ভৌগলিক অবস্থান- তারাই আজ ইসলামের নতুন ইতিহাস রচনা করছে এবং করবে।
সুতরাং আপনাদের উপলব্ধি করা উচিৎ যে আপনারা কোথায় অবস্থান করছেন; আপনারা কেন্দ্রবিন্দুতে, মধ্যমঞ্চে অবস্থান করছেন, আপনাদের অবস্থান এমন জায়গায় যে ইতোমধ্যে হয়ত আপনারা উপলব্ধি করে ফেলেছেন যে বিশ্বের ঠিক এই জায়গাটাতেই ইতিহাস রচিত হয়েছে, আর সারা বিশ্ব মনোযোগ সহকারে দেখছে, এসব অস্থিতিশিলতা ও অশান্তি এরই প্রতিফলন। পরিবর্তনের অন্যতম একটি ফলাফল হল এই অশান্তি এবং অস্থিরতা, যা অনিচ্ছাকৃত এবং অবাঞ্ছিত কিন্তু অনিবার্য, তবে চূড়ান্ত ফলাফল এমন কিছু হবে যার জন্য আমাদের সকলের সংগ্রাম করা উচিৎ। আমরা এ কথা বলতে পারি না যে, ‘যেমনটা চলছে তেমনটাই চলুক, আমরা পরিবর্তন আনতে গিয়ে ভয়ঙ্কর কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি না করি’, কারণ বর্তমান পরিস্থিতি এমনিতেই খুবই ভয়ানক, এজন্য পরিবর্তন আবশ্যকীয়।
এখন, একজন মুসলিম হিসেবে আমরা জানি যে দুনিয়াতে আমাদের এই জীবনটা আসলে একটা পরীক্ষা, আর এই পৃথিবীতে জীবনটা হল ভাল ও মন্দের মাঝে দ্বন্দ্ব। মানবজাতির ইতিহাস এটাই। সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে হাশরের মহাবিচারের দিন পর্যন্ত, শুভ শক্তি আর অশুভ শক্তি উভয়ই বিদ্যমান থাকবে আর এদের মাঝে লড়াই চলতে থাকবে।
সুতরাং ভাই ও বোনেরা, আপনাদের উচিৎ নিজেদের শক্তি ও সম্ভাবনাগুলো উপলব্ধি করা আর নিজেকে প্রশ্ন করা, আমি কি আল্লাহ্র কাছ থেকে সেই মহাপুরস্কার পাব যা আল্লাহ্ তাদের জন্য বরাদ্দ রেখেছেন যারা ইসলামকে পুনর্জীবিত করবে? নাকি আমি শুধুমাত্র একজন নিষ্ক্রিয় দর্শক হিসেবে চেয়ে চেয়ে দেখব যে আমার চারপাশের ভাইরা জান্নাতের সুউচ্চ মাকামগুলো বুকিং দিয়ে দিচ্ছে? কারণ যারা ইসলামকে পুনর্জীবিত করবে আর আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) এর জন্য নিজেদের জান-মাল, সময়, সহায়-সম্পত্তি সবকিছুই উৎসর্গ করবে, আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) তাদের মহাপুরস্কার দান করবেন।
এই উম্মাহর শুরু এবং শেষ হবে সর্বশ্রেষ্ঠ কারণ এটা এমন এক উম্মাহ যা মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দিয়ে শুরু হয়েছিল আর ঈসা (আলাইহি ওয়াস সালাতু ওয়াস সালাম) কে দিয়ে শেষ হবে। সুতরাং মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে যারা তাঁর পতাকাতলে লড়াই করেছিল তারা ছিল যেমন সর্বশ্রেষ্ঠ তেমনি যারা ঈসা (আলাইহি ওয়াস সালাতু ওয়াস সালাম) এর সাথে লড়াই করবে তারাও হবে সর্বশ্রেষ্ঠ। কিন্তু এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে হলে, কিছু অতি প্রয়োজনীয় বিষয়কে সঠিক ভাবে বুঝতে হবে। দেখুন, আমরা কিছু ভুল ধারণা ও ভুল বোঝাবুঝির শিকার যা আমাদের মাঝে বহুকাল ধরেই ছড়িয়েছে। সুতরাং এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো আমাদের ভালভাবে বুঝতে ও রপ্ত করতে হবে যদি আমরা সেই কাঙ্খিত পরিবর্তন আনতে চাই।
প্রথমতঃ ইসলাম একটি সামগ্রিক ও পরিপূর্ণ জীবন বিধান। ইসলাম শুধু সালাত ও সিয়াম পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, ইসলাম কোন নিষ্ক্রিয় ধর্ম নয় যা কেবল কিছু ব্যক্তিগত ইবাদাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, আর এরমকম যে ‘সৃষ্টিকর্তার বিষয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছেই সমর্পণ কর আর শাসকের বিষয় শাসকের কাছে’। মুসলিমদের অনেক বড় একটা অংশ দ্বীনের কিছু অংশ নিয়েই পরিতৃপ্ত রয়েছে; কিন্তু সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ, জিহাদ, উম্মাহকে আল্লাহ্র শাসনের দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য ইসলামী কার্যক্রম- এসবে তাদের কোন ভূমিকা, অবদান বা অংশগ্রহণ কোনটিই নেই।
একটা ভুল ধারণা বেশ প্রচলিত যে, আমাদের চারপাশে যা কিছু হচ্ছে এর অনেক কিছুতেই ইসলামের কিছু বলার বা করার নেই। এটা অনেকটা গির্জা ও রাষ্ট্রকে আলাদা করে দেওয়ার মতো। ভাই, যখন একদল অপরাধী, ভণ্ড, আল্লাহ্র শত্রুরা যখন উম্মাহর দায়িত্বভার দখল করে নেয় আর আল্লাহ্র আইন প্রত্যাখ্যান করে এবং তা মানবরচিত আইন দ্বারা প্রতিস্থাপিত করে, যখন তাদের সেনাবাহিনী ও পুলিশ তাদের প্রভু; ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের সাম্রাজ্যবাদী উদ্দেশ্য পূরণের জন্য মুসলিমদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে, যখন উম্মাহর ধন সম্পদ লুটপাট করা হয় আর অত্যাচার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে, আপনি কি মনে করেন ইসলামের এসব বিষয়ে কিছুই বলার নেই? আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহ্র ইবাদাতের জন্য, তাই আমাদের সকল কর্মকাণ্ড তাঁর আদেশ অনুযায়ী হওয়া উচিৎ, আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) বলেন,
“আর আল্লাহ্ যা নাজিল করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিচার ফয়সালা করে না, তারা কাফির”
[সূরা আল মায়িদাহ, ৫:৪৪]
আমাদের জীবনের প্রতিটি বিষয়েই ইসলামের দিক নির্দেশনা আছে, রাজনীতি, অর্থনীতি, আধ্যাত্মিক ও ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন; কুরআন হল আহকামে (নীতিমালা) পরিপূর্ণ আর রসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাহ ও। আমরা যেন না ভুলে যাই, যে রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন একধারে একজন রাষ্ট্রপ্রধান এবং মুজাহিদ। তিনি মসজিদে সালাত আদায় করেছেন, ছিলেন একজন শিক্ষক, একজন বিচারক, একজন পারিবারিক মানুষ, আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) এর অনুমতিক্রমে একজন আইন নির্ধারক ও ছিলেন, কারণ আমরা জানি যে যা কিছুই রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন তা ছিল আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) এর পক্ষ থেকেই। যখন এক সাহাবী রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে বললেন যে কুরাইশরা তাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করছে যে কিভাবে তিনি রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতিটি কথা লিখে রাখেন? রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,
“লিখে রাখ (তিনি নিজের জিহ্বার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন) সেই সত্ত্বার নামে বলছি যার হাতে আমার প্রাণ, এখান থেকে সত্য ব্যতিত আর কিছুই বের হয় না”।
দ্বিতীয়তঃ সুতরাং এ থেকে আমরা দ্বিতীয় বিষয়ের ধারণা পেতে পারি যে, আমাদের কঠোর পরিশ্রম ও সংগ্রাম করা উচিৎ এই পৃথিবীতে আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) এর শাসন ফিরিয়ে আনার জন্য। যদি আমরা বিশ্বাস করি যে ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান তাহলে আমাদের আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) এর শাসন ফিরিয়ে আনা উচিৎ, আমাদের উচিৎ নিজেদের জীবনে শরিয়াহ ফিরিয়ে আনা, আমাদের উচিৎ সেই ইসলামী খিলাফত ফিরিয়ে আনা। এসব কোন ঐচ্ছিক বিষয় নয়, বরং এসব আমাদের উপর বাধ্যতামূলক, এই জমিনে আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) এর শাসন ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করা উচিৎ।
“শাসন আল্লাহ্রই, আর আল্লাহ্ তোমাদের আদেশ করেছেন যে তোমরা তাঁর ছাড়া আর কারও ইবাদাত করবে না।”
[সূরা ইউসুফঃ ১২:৪০]
তৃতীয়তঃ আমাদের আকীদাহর তৃতীয় বিষয়টি হল আল ওয়ালা’ ওয়াল বারা’। আর এই আল ওয়ালা’ ওয়াল বারা’র মূলনীতি হল যে একজন মুসলিমকে আল্লাহ্, তাঁর রসূল ও মুমিনদের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে হবে এবং কাফিরদের সঙ্গ পরিত্যাগ করতে হবে। মানুষ বিভিন্ন গোষ্ঠী ও গোত্রে, জাতি ও উপজাতিতে বিভক্ত, কিন্তু কুরআন আমাদের কেবল মুমিন ও কাফির- এই দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করেছে। মুমিন বান্দারা গোষ্ঠী, গোত্র নির্বিশেষে সবাই এক অভিন্ন জাতি, যারা কাফিরদের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) বলেন,
“মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই”
[সূরা আল হুজুরাত, ৪৯:১০]
আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) আরও বলেন,
“এবং নিশ্চয়ই তোমরা হলে এক জাতি”
[সূরা আল আম্বিয়া’, ২১:৯২]
এবং “মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু”
[সূরা আত তাওবাহ, ৯:৭১]
এবং “আর যারা কুফরি করেছে তারা একে অপরের সাহায্যকারী। ”
[সূরা আল আনফাল, ৮:৭৩]
সুতরাং একজন ভারতীয় মুসলিম আপনার ভাই কিন্তু পাকিস্তানি হিন্দু নয়। এই বিশ্বাস আমাদের আকীদাহর কোন ঐচ্ছিক বিষয় নয়, বরং একজন মুসলিমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি আপনি এ বিষয়ক কুরআনের আয়াত ও হাদিসের প্রাচুর্য দেখেন তাহলে দেখবেন এগুলো এ বিষয়ের গুরুত্বের প্রতিই ইঙ্গিত করছে। উদাহরণস্বরূপঃ আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) বলেন,
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ তারা যে সত্য তোমাদের কাছে আগমন করেছে, তা অস্বীকার করছে। তারা রসূলকে ও তোমাদেরকে বহিস্কার করে এই অপরাধে যে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস রাখ। যদি তোমরা আমার সন্তুষ্টিলাভের জন্যে এবং আমার পথে জেহাদ করার জন্যে বের হয়ে থাক, তবে কেন তাদের প্রতি গোপনে বন্ধুত্বের পয়গাম প্রেরণ করছ? তোমরা যা গোপন কর এবং যা প্রকাশ কর, ত আমি খুব জানি। তোমাদের মধ্যে যে এটা করে, সে সরলপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়”
[সূরা আল মুমতাহিনা, ৬০:১]
এসব আল্লাহ্রই বাণী। আল্লাহ্ আমাদের আমেরিকার, ভারতের, যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলছেন, তাদের উদ্দেশ্যই হল যে যদি তারা আপনাদের উপর কর্তৃত্ব অর্জন করে তাহলে তারা আপনাদের শত্রুর মত মারবে আর আপনাদের বিরুদ্ধে হাত ও জবান ব্যবহার করবে আপনাদের ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে, আর তারা চায় আপনারাও কাফির হয়ে যান। তাদের কামনা এটাই, তারা চায় মুসলিমরা তাদের দ্বীনের কিছু অংশ ত্যাগ করুক, তারা শরীয়াহ পছন্দ করে না, তারা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ পছন্দ করে না, তারা আল ওয়ালা ওয়াল বারা পছন্দ করে না। তারা আমাদের দ্বীনের এসব অংশ পরিবর্তন করতে চায়, আমরা কি তাদের এটা করতে দেব?
এখন যদিও এই আয়াতে ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু আল্লাহ্ আমাদের অনির্দিষ্টভাবে তাদের ব্যাপারে সাবধান করেছেন কারণ সর্বজ্ঞানী আল্লাহ্ জানেন যে ভবিষ্যতে কি হবে। আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) জানেন যে আমাদের ইতিহাসের অনেক দীর্ঘ একটা সময় ধরে আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত থাকব। আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) বলেন,
“হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।”
[সূরা আল মায়িদাহ, ৫:৫১]
বর্তমানে আমাদের সরকার পশ্চিমাদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে, তারা পশ্চিমাদের হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করছে। কারাগার মুসলিম বন্দীতে পরিপূর্ণ, ইউএস এর হুকুম পালন করার জন্য এসব সরকার মুসলিমদের নিজ ভূমিতেই হত্যা করছে। আর আমেরিকার হাতের পুতুল সরকার এসব কিছুকে ন্যায়সঙ্গত প্রমাণ করার জন্য খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করাচ্ছে যে, দেশকে রক্ষার জন্য এসব করতেই হবে। কিন্তু এসব যুক্তি আল্লাহ্র কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ্ বলেন,
“সুতরাং তুমি দেখতে পাবে, যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, তারা কাফিরদের মধ্যে (বন্ধুত্বের জন্য) ছুটছে। তারা বলে, ‘আমরা আশঙ্কা করছি যে, ‘পাছে না আমরা কোন দুর্ঘটনায় পতিত হই’। অতঃপর হতে পারে আল্লাহ দান করবেন বিজয় কিংবা তাঁর পক্ষ থেকে এমন কিছু যার ফলে তারা তাদের অন্তরে যা লুকিয়ে রেখেছে, তাতে লজ্জিত হবে।”
[সুরা মায়েদা, ৫:৫২]
অর্থাৎ আল্লাহ্ মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াইরত জাতিকে শায়েস্তা করবেন, হয়তবা কোন দুর্যোগ বা কোন অর্থনৈতিক ধ্বস বা তাদের ঐক্যের মধ্যে ফাটল এবং এমন আরও অনেক কিছু, কারণ যেকোনো কিছুই আল্লাহ্র সৈন্য হিসেবে কাজ করতে পারে।
“আল্লাহ্র সৈন্যদের আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ চেনে না”
[সূরা আল মুদাছছির, ৭৪:৩১]।
আল্লাহ্ বলেন,
“ফলে তারা তাদের অন্তরে যা লুকিয়ে রেখেছে, তাতে লজ্জিত হবে।”
[সুরা মায়েদা, ৫:৫২]
তারা অনুশোচনা করবে যে তারা আমেরিকাকে সঙ্গ দিয়েছিল, তারা অনুশোচনা করবে যে তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, তারা এই দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জায়গাতেই অনুশোচনা করবে।
বর্তমানে আমেরিকাকে সাহায্য সহযোগিতা করার পেছনে কোন সরকারেরই কোন অজুহাত নেই, আর যে সরকারই এই কাজ করবে সে মুনাফিক আর তাকে হটানো আবশ্যক।
আমরা তাওয়াক্কুল এর কথা বলি, আল্লাহ্র উপর ভরসার কথা বলি কিন্তু আসলেই যদি আল্লাহ্র উপর আমরা ভরসা রাখতাম তাহলে আমরা আল্লাহ্র শত্রুদের সাথে শত্রুতা ঘোষণা করতাম আর কেবলমাত্র আল্লাহ্র সাহায্যের উপরই ভরসা রাখতাম। আর আমরা আল্লাহ্ প্রদত্ত সম্পদের উপরই ভরসা রাখতাম আর সেগুলো ব্যবহার করতাম।
এই উম্মাহ দুর্বল নয়, এই উম্মাহ শক্তিশালী। এই উম্মাহ জনশক্তি, উর্বর ভূমি ও তেল এবং আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) প্রদত্ত গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থানের দিক দিয়ে সমৃদ্ধশালী। আমাদের উঠে দাঁড়াতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, আর আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) এর কিতাব ও রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাহ অনুসরণ করতে হবে।
আমাদের প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের দরকার নেই, দরকার নেই আমেরিকা কিংবা জাতিসংঘের। যদি আমরা আল্লাহ্র উপর ভরসা রাখি তিনিই আমাদের জন্য যথেষ্ট হবেন।
রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কাতে একা ছিলেন আর আল্লাহ্ তাকে রক্ষা করেছিলেন। তাকে মদীনাতে ঘেরাও করা হয়েছিল আর আল্লাহ্ তাকে বিজয় দান করেছেন। তাঁর পূর্বে ছিলেন মুসা (আলাইহি ওয়াস সালাতু ওয়াসসালাম), যিনি তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করেছেন, ফিরাউনের বাহিনী, আর আল্লাহ্ তাকে বিজয় দান করেছেন। আবু বকর (রদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) মুরাতদদের সাথে লড়াই করেছিলেন এবং জয়ী হয়েছিলেন, এরপর তিনি তৎকালীন বিশ্বের দুই পরাশক্তি রোমান সাম্রাজ্য ও পারস্য সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধেও লড়েছিলেন, একটার পর একটা করে নয়, উপর্যুপরি লড়েছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন।
আমরা দুর্বল নই, আমরা শক্তিশালী। কিন্তু আমাদের ঈমান দুর্বল। এটাই মূল সমস্যা।
রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“তোমাদের কারও ঈমান ততক্ষণ পরিপূর্ণ হবে না যতক্ষণ সে আল্লাহ্র জন্যই ভালবাসবে, আল্লাহ্র জন্যই ঘৃণা করবে, আল্লাহ্র জন্যই দান করবে আর আল্লাহ্র জন্যই বিরত থাকবে”।
যখন একজন মুমিন বান্দা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে তার অন্তর কেবল আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) এর সন্তুষ্টিই চায়, তা হল সত্যিকারের ঈমান। সুতরাং আপনি আল্লাহ্র জন্যই ভালবাসবেন, এজন্য নয় যে সে আপনার সাথে ভাল ব্যবহার করছে, এজন্য নয় যে আপনি তাঁর থেকে কিছু দুনিয়াবী ফায়দা হাসিল করতে পারছেন, বরং এজন্য যে সে একজন মুসলিম, সে একজন বিশ্বাসী, সে আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) এর নিকটবর্তী, সুতরাং আপনি তাকে আল্লাহ্র জন্যই ভালবাসবেন।
আর যখন আপনি আল্লাহ্র জন্য ঘৃণা করবেন, এজন্য ঘৃণা করবেন না যে সে আপনার বিরুদ্ধে, এজন্য নয় যে সে আপনার ক্ষতিসাধন করেছে, এজন্য নয় যে সে আপনার কিছু দুনিয়াবি ক্ষতি করেছে, বরং আপনি তাকে এজন্য ঘৃণা করবেন যে এই ব্যক্তি আল্লাহ্র আদেশ নিষেধের তোয়াক্কা করে না।
আপনি যখন আল্লাহ্র জন্য দান করবেন, এজন্য করবেন না যে আপনি এর বিনিময়ে তাঁর থেকে কিছু দুনিয়াবী ফায়দা হাসিল করতে পারবেন, বরং আল্লাহ্র জন্য দান করবেন, এজন্য যে সে অভাবী, দরিদ্র, এজন্য যে আপনি এর বিনিময়ে আল্লাহ্র কাছ থেকে পুরষ্কারের প্রত্যাশা করেন।
আর যখন আপনি বিরত থাকবেন, আল্লাহ্র জন্যই বিরত থাকবেন। এটাই ঈমানের প্রকৃত উঁচু স্তর। যতক্ষণ না আপনি সে স্তরে পৌঁছতে পারছেন, আপনি প্রকৃত ঈমানের অধিকারী হতে পারবেন না। এই দুনিয়ার প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি হবে আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) এর সন্তুষ্টির উপর নির্ভরশীল। যে চশমা চোখে দিয়ে আপনি দেখবেন সেই চশমায় সেটাই আপনার কাছে সন্তোষজনক হবে যেটা আল্লাহ্র কাছ সন্তোষজনক আর সেটাই অসন্তোষজনক হবে যেটা আল্লাহ্র কাছে অসন্তোষজনক। আমাদের কয়জন এই স্তরে আছি? আমাদের উচিৎ সেই স্তরে পৌঁছাবার জন্য সংগ্রাম করা।
চতুর্থতঃ চতুর্থ বিষয়টি এমন একটি বিষয় যে ব্যাপারে মানুষ কথা বলতে পছন্দ করে না; আর তা হল জিহাদ; বিশেষ করে সশস্ত্র জিহাদ। জিহাদ কিয়ামতে পর্যন্ত জারি থাকবে। এটাই রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ওয়াদা, জিহাদ আগেও ছিল, আজও আছে, আগামীতেও থাকবে। এটা এমন এক বিষয় যা না পশ্চিমারা শুনতে চায়, না আমাদের সরকার। কিন্তু এটা ইসলামেরই একটা অংশ, কুরআনের শত শত আয়াত এ ব্যাপারে বলছে, রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এ বিষয়ে শত শত হাদিস ও রয়েছে র আমরা সেসব উড়িয়ে দিতে পারি না।
মুসলিম হিসেবে আমরা আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) ও রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা কিছু চান তাই অনুসরণ করে চলব। কারণ যে দুনিয়ায় আমরা বাস করছি তা হল আখিরাতে যাওয়ার একটা সেতু। আমরা দুনিয়ার জন্য বাঁচি না, কারণ দুনিয়াতে কিই বা আছে? এই দুনিয়ার জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত, আমাদের দেওয়ার মত জিনিস এই দুনিয়াতে খুব অল্পই আছে। একজন মুসলিম, যে জান্নাত ও জাহান্নামের ব্যাপারে জানে, তাঁর কখনোই উচিৎ না এই দুনিয়ার সীমিত ভোগবিলাসের ডুবে থাকা, দুনিয়ার জন্য বাঁচা। তাদের কথা তো বাদ দিন যারা জিহাদের অর্থ ঘুরিয়ে দেয় এর থেকে সশস্ত্র লড়াইকে বাদ দেওয়ার জন্য, তাদের কথা বাদ দিন যারা বলে এখন জিহাদের সময় নয় কারণ আমরা দুর্বল, আপনাকে দেওয়া আল্লাহ্র দায়িত্বগুলো পালন করুন নিজের জন্যই। আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) বলেন,
“আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করতে থাকুন, আপনি নিজের সত্তা ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ের যিম্মাদার নন (অন্নরা যা বলে তা ভুলে যান)! আর আপনি মুসলমানদেরকে (জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর জন্য) উৎসাহিত করতে থাকুন। শীঘ্রই আল্লাহ কাফিরদের শক্তি-সামর্থ খর্ব করে দেবেন। আর আল্লাহ শক্তি-সামর্থের দিক দিয়ে অত্যন্ত কঠোর এবং কঠিন শাস্তিদাতা”
[সূরা আন নিসা, ৪:৮৪]
সুতরাং আল্লাহ্ বলেন ‘কাফিরদের শক্তি সামর্থ্য’; তাদের সেনাবাহিনী, আক্রমন; আপনি দেখবেন যে তারা আমাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সর্বশক্তি নিয়ে আসে, তাদের শক্তিশালী যুদ্ধবিমান, সমুদ্রে তাদের যুদ্ধজাহাজ, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি অস্ত্রে সজ্জিত তাদের সৈন্য আর তাদের অত্যাধুনিক মিসাইল, এসবই শক্তি সামর্থ্য!
সুতরাং কিভাবে আমরা তাদের শক্তির মোকাবিলা করব? আলোচনার মাধ্যমে? হাল ছেরে দেওয়ার মাধ্যমে? তাদের সামনে মাথা নত করার মাধ্যমে? আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) কুরআনে আমাদের এই উত্তরটা দিয়ে দিয়েছেন,
“আল্লাহ্র রাহে লড়াই করতে থাকুন, এভাবেই আল্লাহ্ কাফিরদের শক্তি প্রতিহত করবেন, আর আল্লাহ শক্তি-সামর্থের দিক দিয়ে অত্যন্ত কঠোর এবং কঠিন শাস্তিদাতা”
[সূরা আন নিসা, ৪:৮৪]
ভাই ও বোনেরা, যদি আমরা কুরআনে ফিরে যাই আমরা সঠিক উত্তরটি খুঁজে পাব কিন্তু সমস্যা হল যে আমরা নিজেদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করছি, নিজেদের নফসের অনুসরণ করছি, আমরা তাই অনুসরণ করছি যেটাকে আমরা ঠিক-বেঠিক মনে করি, এটা দেখি না যে আল্লাহ্ কোনটাকে ঠিক আর কোনটাকে ভুল বলছেন।
ভাই ও বোনেরা, যদি আমরা আজ লড়াই না করি, তাহলে কখন করব? মুসলিম ভূমিগুলো দখল করা হচ্ছে, নির্যাতন-নিপীড়নের মাত্রা দিনে দিনে বেড়েই চলছে, কুরআনের আইন প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে, জিহাদের জন্য এর চেয়ে উত্তম সময় আর কি হতে পারে?
“আর তোমাদের কি হল যে, তোমরা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও।”
[সুরা আন-নিসাঃ ৪:৭৫]
রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের রোগের কথা বলে দিয়েছেন, আবার এর প্রতিকারের উপায়ও বলে দিয়েছেন।
“যদি তোমরা ‘ঈনা’ (এক প্রকার ব্যবসায়িক লেনদেন) নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়, কৃষিকাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়, গরুর লেজ ধরে পড়ে থাক (অর্থাৎ কেবল দুনিয়া নিয়ে পড়ে থাক), আর আল্লাহ্র রাহে জিহাদ করা থেকে বিরত থাক, তাহলে আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) তোমাদের উপর জিল্লতি (অপমান) চাপিয়ে দেবেন আর এই জিল্লতি ততক্ষন থাকবে যতক্ষণ না তোমরা প্রকৃত দ্বীনে ফিরে আসছ”।
এই হাদিসটি নিয়ে একটু চিন্তা করুন। এই হাদিসটি আমাদের পরিস্থিতির ব্যাপারে বলছে। আমরা দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত, আমরা গরুর লেজ ধরে পড়ে আছি আর আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করা ত্যাগ করেছি আর এজন্যই আমরা আজ অপমানিত হচ্ছি, আর আমাদের উপর থেকে এই অপমানের দাগ উঠে যাবে না; এই দাগ প্রযুক্তির দ্বারা উঠবে না, এই দাগ ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার মাধ্যমে উঠবে না। আমি এ কথা বলছি না যে, আমাদের দুনিয়াবি জ্ঞান অর্জন করা উচিৎ নয়, বরং আমি বলতে চাই যে মুক্তির জন্য আমাদের এই দুনিয়াবি জ্ঞানের উপর নির্ভর করা উচিৎ নয়। আমাদের এটা মনে করা উচিৎ নয় যে এই দুনিয়াবি জ্ঞানই আমাদের অবস্থা পরিবর্তনের একমাত্র পথ। কারণ অবস্থা পরিবর্তনের একমাত্র পথ হল আল্লাহ্র দ্বীনে ফিরে যাওয়া।
সুতরাং পরিশেষে আমি আপনাদের এই বিষয়গুলোর কথা মনে করিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করতে চাই।
প্রথমতঃ ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।
দ্বিতীয়তঃ আমাদের এই জমিনে আল্লাহ্র শাসন ফিরিয়ে আনতে হবে, আমাদের শরীয়াহ ফিরিয়ে আনতে হবে।
তৃতীয়তঃ আমাদের আল ওয়ালা’ ওয়াল বারা’র এই ধারনাটি অন্তরে দৃঢ়ভাবে গেঁথে নিতে হবে।
চতুর্থতঃ জিহাদই একমাত্র সমাধান আর এই জিহাদ কিয়ামত পর্যন্ত চলবে।
আমি মহান আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) এর কাছে দুআ করি যেন আমরা যা কিছু শ্রবণ করলাম তা থেকে যেন আমরা উপকৃত হই, যেন আল্লাহ্ আমাদের ক্ষমা করে দেন, যেন আল্লাহ্ এই উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করেন, আর বিজয় দান করেন। আমরা আল্লাহ্র কাছে দুআ করি যেন তিনি আমাদের জান্নাত নসীব করেন আর জাহান্নাম থেকে আমরা তাঁর কাছেই আশ্রয় চাই।
রাব্বানা ‘আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানা, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানা, ওয়া ক্বিনা আযাবান্নার। ওয়া সালিলাহ ‘আলা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদ ওয়া ‘আলা আলিহি ওয়া সাহবিহি ওয়া সালাম তাসলিমান কছিরা।
ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
********
প্রশ্নোত্তর পর্বঃ
প্রশ্নঃ যেমনটা আপনি বলেছেন যে জিহাদ হল মুসলিমদের সমস্যাগুলোর প্রধান সমাধান, কিন্তু আমরা দেখতে পাই যে আফগানিস্তানের জনগণ ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে কিন্তু তারপরও সেখানে অনেক সমস্যা বিদ্যমান। কেন?
ইমাম আনোয়ার আল আওলাকীঃ জাযাক আল্লাহু খাইর বোন এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির জন্য যে, আমরা অবাক হয়ে যাই যে কিভাবে মানুষ লড়াই করছে কিন্তু তারা জয়ী হচ্ছে না বা বিজয় ছিনিয়ে আনছে না। এখন এটি একটি বেশ বিস্তারিত আলোচনার বিষয় যে ইসলামে বিজয়ের সংজ্ঞা কি। ইসলাম বিজয় বলতে ঠিক কি বোঝায়? এবং আমি সংক্ষিপ্ত আকারে এখানে কিছু বিষয় তুলে ধরব, যেন অন্যরাও প্রশ্ন করার সুযোগ পায়। কিন্তু আমি যেমনটা বলেছিলাম যে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রয়োজন। সবার প্রথমে বলতে চাই, আল্লাহ্ আমাদের বিজয় ততক্ষণ দান করেন না যতক্ষণ না আমরা এর জন্য সংগ্রাম করি। আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) চান আমরা চেষ্টা করে যাই, তিনি চান যে আমরা সবরকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই আর আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) আমাদের বিজয় আটকে রাখেন যদি আমাদের মধ্যে কোন ভুল ত্রুটি থাকে। রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আল্লাহ্ বদর যুদ্ধে বিজয় দান করেছিলেন কিন্তু তিনি এবং তাঁর সাহাবীরা যারা ছিলেন শ্রেষ্ঠ প্রজন্ম, তারা উহুদ যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন।
কেন তারা পরাজিত হলেন? কারণ তাদের মাঝে কিছু অবাধ্যতা বিদ্যমান ছিল। তারা খন্দকের যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন আর তারা তাদের শক্তি সামর্থ্যের কারণে নয় বরং আল্লাহ্র ক্বদরের কারণে, আল্লাহ্র ফয়সালার কারণে। বাতাস আর ফেরেশতারা তাদের পক্ষে ছিল। কিন্তু তারা হুনায়ুনের যুদ্ধে পরাজিত হলেন, কেন? কারণ সেখানে সমস্যা ছিল, মুসলিমরা তাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে গর্ব করছিল, তারা বলছিল, “আজ আমরা পরাজিত হব না কারণ সংখ্যায় অনেক, আমরা ১২০০০”। সুতরাং তারা সংখ্যা নিয়ে গর্বিত ছিল, তারা হেরেছিল। আর আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) বলেন, “তোমরা তোমাদের সংখ্যা নিয়ে গর্বিত ছিলে কিন্তু তোমাদের এই সংখ্যা তোমাদের কোন কাজেই আসল না”। এছাড়াও আমাদের পরীক্ষা করে দেখতে চান যে আমরা কতটুকু দৃঢ়পদ। জুয আম্মার (আমপারার) সূরা আল বুরুজের সেই লোকজন, আল্লাহ্ আমাদের আগুনের গর্তের লোকের কাহিনী শুনিয়েছেন। এরা ছিল এক জাতি যারা মুসলিম হয়েছিল, কিন্তু তাদের রাজা তাদের দ্বীনত্যাগ করতে বাধ্য করতে চাইলেন আর তারা অস্বীকৃতি জানাল। সুতরাং সেই রাজা তাদের জন্য একটি গর্ত খুঁড়ল আর সেই গর্ত কাঠ দিয়ে পূর্ণ করে তাতে আগুন জ্বালিয়ে দিল আর তাদের এক এক করে সেই আগুনে নিক্ষেপ করতে লাগল যতক্ষণ না তারা পুড়ে মারা যায়। তারা জিতে নি, তাদের শেষ ব্যক্তিটি পর্যন্ত সবাইকে হত্যা করা হয়েছিল। পুরুষ, নারী ও শিশু সবাইকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, তারা জয়ী হয়নি। সেই রাজা জয়ী হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু আল্লাহ্ এ বিষয়ে কুরআনে কি বলেছেন? এই কাহিনী উল্লেখ করার পর আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) বলেছেন, “এটাই মহাসাফল্য।”
কেন এটাকে সফলতা বলা বল? কারণ তারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দৃঢ়পদ ছিল, তারা হাল ছাড়ে নি। যদি তারা হাল ছেড়ে দিত, তারা পরাজিত হত। তখন এটাকে ক্ষতি হিসেবে ধরা হত। সুতরাং বর্তমানে আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরাক, ইয়েমেন এবং সমগ্র মুসলিম বিশ্বের জনগণদের পরীক্ষা করছেন। আমরা সবাই পরীক্ষিত হচ্ছি কিন্তু এই পরীক্ষা ভিন্ন ভিন্ন রুপে আসছে। আফগানিস্তানে এই পরীক্ষা সরাসরি আক্রমণের রুপে এসেছে। অন্যান্য অঞ্চলে এটা দারিদ্রতা, পরোক্ষ দখলদারিত্ব রুপে এসেছে। সুতরাং সমগ্র মুসলিম উম্মাহ পরীক্ষিত হচ্ছে আর এখনও আমাদের বিজয় দান করা হয়নি কারণ আমরা এখনও নিজেদের ভুল ত্রুটির কারণে সেই বিজয় লাভের মত স্তরে উন্নীত হতে পারিনি, আর এটা আমাদের জন্য একটি ইশারা, যেন আমরা তওবাহ করি, যেন আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) এর কাছে ফিরে যাই, যেন আমাদের জীবন উন্নত করি।
আর আল্লাহ্ই সবচেয়ে ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ আমি একজন পুরুষ এবং আমি নিজে জিহাদ/ক্বিতালে অংশগ্রহণ করতে পারি কিন্তু আমার মা ও বোন কিভাবে ক্বিতালে/সশস্ত্র জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারবেন?
ইমাম আনোয়ার আল আওলাকীঃ আমার ওয়েবসাইটে আপনি আমার লেখা একটি পুস্তিকা পাবেন, এর নাম, “জিহাদে অংশগ্রহণের ৪৪ টি উপায়” যেখানে আমি কিছু পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছি যে কিভাবে আমরা জিহাদকে সমর্থন করতে পারি এমন কিছু উপায়ে যেগুলো ক্বিতাল (অর্থাৎ যুদ্ধের ময়দানে লড়াই করা) নয় আর আমার যতদূর মনে পড়ে সেসবের অধিকাংশ পদ্ধতি এমন যে বোনেরা এতে অংশ নিতে পারবে। সুতরাং আমি আপনাকে উৎসাহিত করছি যে আপনি জিহাদকে সমর্থনের এই ৪৪ টি উপায় দেখে নেবেন। আমার যেগুলোর কথা বেশি মনে পড়ছে আমি সেগুলো এখানে উল্লেখ করছি। একটি হল দাওয়াহ। আরও একটি হল সঠিক আক্বীদাহ পোষণ করা আর বর্তমান সময়ের চলমান সংঘাতের ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা থাকা, আর্থিক সহায়তা, পরবর্তী প্রজন্মকে (শিশুদের) শিক্ষাদান করা, ‘মিডিয়া জিহাদ’, ‘ইন্টারনেট জিহাদ’ এসবে অংশগ্রহণ করা। যেসব আলোচনা অনলাইনে এবং মিডিয়াতে হচ্ছে; এই মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমাদের লড়াই শুধু যুদ্ধের ময়দানে নয়, চিন্তা চেতনার ময়দানেও আমরা লড়াই করছি, আর এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক ক্ষেত্র যেখানে বোনেরা অংশগ্রহণ করতে পারবে।
প্রশ্নঃ আমাদের পাকিস্তানের লোকদের জন্য আপনি এই মুহূর্তে কিভাবে ক্বিতাল করার পরামর্শ দেবেন আর কি বাস্তব পদক্ষেপ (আমাদের গ্রহণ করা উচিৎ) কারণ এটা কোন ব্যক্তিগত ইবাদাত নয়, এটি একটি দলগত ইবাদাত যা সম্মিলিতভাবে করতে হবে। সুতরাং আপনি আমাদের কি পরামর্শ দেবেন আর আমাদের কি কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ?
ইমাম আনোয়ার আল আওলাকীঃ পাকিস্তানের ভাইদের জন্য আমার পরামর্শ হবে যে, আপনারা আফগানিস্তানে আপনাদের ভাইদের জনবল ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করুন। বর্তমানে মুসলিম উম্মাহ যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে লড়ছে তার একটি হল আফগানিস্তানের যুদ্ধ যা পাকিস্তানেও ছড়িয়ে পড়ছে, আর অপরটি হল ইরাকের যুদ্ধ। যারা সশরীরে সেসব যুদ্ধক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম তারা অংশগ্রহণ করুন, আর যারা এতে সক্ষম নন তারা অন্যান্য সকল সম্ভাব্য উপায়ে অংশগ্রহণ করুন। আমরা এমন পরিস্থিতির ব্যাপারে কথা বলছি যখন এই সহায়তা বাধ্যতামূলক, ঐচ্ছিক বা সুপারিশ নির্ভর নয়, আর যখন কোন কিছু বাধ্যতামূলক হয় তখন এতে অংশ না নেওয়াটা গুনাহ ও ত্রুটির কারণ হয়ে দাঁড়ায়; আর যেমনটা শায়খ আবদুল্লাহ আযযাম এই ইস্যুতে একটি বই লিখেছেন, যে বর্তমানে সশস্ত্র লড়াই, ক্বিতাল সকল মুসলিমদের জন্য ফরয (আবশ্যিক) যতদিন না তারা দখল হয়ে যাওয়া মুসলিম ভূমিগুলো দখলদারি শক্তির হাত থেকে পুনরোদ্ধার না করছে।
প্রশ্নঃ আমার প্রশ্ন হল, বর্তমান বিশ্বে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো হল জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র, মুসলিমরা আজ বিভক্ত। আর ইসলামের শত্রুরা আমাদের এক এক করে আক্রমণ করছে। বাস্তবে এমন পরিস্থিতিতে, কোন নির্দিষ্ট একটি দেশে ক্বিতালের ব্যাপারে, তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার প্রয়োজনীয় শক্তি-সামর্থ্য নেই। সুতরাং এসব শর্তাধীনে এই দৃষ্টান্ত খাটে না। সুতরাং আপনাদের মত মুসলিম বুদ্ধিজীবি ও আলেমদের কি কি বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ, আমাদের প্রয়োজন মুসলিমদের এক পতাকাতলে আনা যেন আমরা এই ঐক্যবদ্ধ শত্রুদের কড়া জবার দিতে পারি।
ইমাম আনোয়ার আল আওলাকীঃ জাযাক আল্লাহু খাইর এই বিষয়টি উল্লেখ করার জন্য। অবশ্যই এক উম্মাহ হিসেবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিৎ কিন্তু প্রশ্ন হল ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত কি আমরা লড়াই বন্ধ রাখব? ইস্যু হল যে এটা বর্তমানে একটা জরুরী অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুসলিম ভূমিগুলো এক এক করে দখল করে নেওয়া হচ্ছে আর আমরা শুধু আমাদের ভূমিই না, আমাদের পরিচয়ও হারাচ্ছি। এখন মুসলিমদের চিন্তা চেতনায় পরিবর্তন আনার জন্যও আমাদের যুদ্ধ করতে হচ্ছে। পশ্চিমারা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার এই তথাকথিত মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে খরচ করছে মুসলিমদের সেসব চিন্তা চেতনা পরিবর্তন করার জন্য যেগুলো তারা পছন্দ করে না। তারা এক ক্ষমাপরায়ণ ইসলাম নিয়ে আসতে চায়, এক নিরীহ ইসলাম; এক ইসলাম যা তাদের অনুমতি দেবে আমাদের অঞ্চলে তাদের সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের সকল প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবার।
সুতরাং প্রশ্ন হল যে, আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া পর্যন্ত লড়াই না করে বসে থাকার কোন অবকাশ বা অবসর নেই। আমি বিশ্বাস করি যে আমরা এমপ্ন এক পরিস্থিতে আছি যে আমাদের যা আছে তা নিয়েই আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে, লড়াই করতে হবে। আমি আরও কিছু যোগ করতে চাই এখানে, যদিও আমরা এখন বিভক্ত এবং এক উম্মাহ হিসেবে আমরা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি কিন্তু তারপরও; এত কম জনশক্তি নিয়েও আফগানিস্তান, ইরাক, চেচনিয়া, সোমালিয়া এসব জায়গায় আমাদের যে ভাইরা লড়াই করে যাচ্ছে তারা টিকে আছে এবং কিছু কিছু পরিস্থিতিতে তারা জিতছেও। এটা এক নিদর্শন যে আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) তাদের সাহায্য করছেন আর যদি আমরা উঠে দাঁড়াই তাহলে আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) আমাদের বিজয় দান করবেন।
যদিও এতে সময় লাগতে পারে, কিন্তু এ কথা নিশ্চিত যে তারা টিকে আছে আর পশ্চিমারা তাদের থামাতে বা পরাজিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে, আর এই বিষয়টি ইঙ্গিত দেয় যে এই উম্মাহ, সংখ্যায় খুব কম আর শক্তি-সামর্থ্যে সীমিত হলেও অনেক কিছুই করতে পারে।
আর আল্লাহ্ই সবচেয়ে ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ আমি আশা করি যে আপনার মত যোগ্যতাসম্পন্ন একজন আলেম এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে পারবেন যে পাকিস্তানে অনেক গ্রুপ আছে যারা স্কুলে বোম্বিং করছে, সুয়াতে ১৯১ তা স্কুলে বোম্বিং করা হয়েছে, আরা তারা এটাকে জিহাদ বলছে, কিন্তু তারা নিজদের সহকর্মীদেরও হত্যা করেছে আর এখানে অনেক রক্তপাত হয়েছে। সুতরাং আমাদের আসলেই জানা দরকার যে জিহাদ কি, আর তা কেবল একজন কেন্দ্রীয় নেতার অধীনেই হওয়া উচিৎ, আপনি ছোট ছোট দল তৈরি করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করতে পারেন না। সুতরাং আপনি যদি এ বিষয়ে কিছু আলোকপাত করতেন।
ইমাম আনোয়ার আল আওলাকীঃ আমি এখানে দুটো পয়েন্ট নিয়ে কথা বলব। প্রথমত, যখনই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ সংঘটিত হবে, সেখানে আপনি পশ্চিমাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার উপস্থিতি দেখতে পাবেন। সুয়াতে কি হচ্ছে এ ব্যাপারে আমি কিছু পরেছি তার অধিকাংশই পাশ্চাত্য মিডিয়া আর আমার জন্য এর উপর ভিত্তি করে রায় দেওয়া কঠিন। অবশ্যই গল্পের যে অংশটা এই পশ্চিমারা বলছে যে, এসব স্কুল হল মেয়েদের স্কুল আর সেই সন্ত্রাসীরা নারী শিক্ষার বিরোধী। কিন্তু তারপর আমি আরও একটা রিপোর্ট পড়লাম (যা সম্ভবত ঐ অঞ্চল থেকে এসেছে) জাতে বলা আছে যে ঐ স্কুলগুলো সরকারি সেনাদের বাঙ্কার হিসেবে ব্যবহৃত হয়; কিন্তু যাই হোক, আমার জন্য এত দূরে অবস্থান করে, এ সম্বন্ধে সঠিক ও বিস্তারিত তথ্য না জেনেই এই বিষয়ে মন্তব্য করা সঠিক হবে না, যাই হোক না কেন, সাধারণভাবে বলতে গেলে মুজাহিদিনদের সমর্থন করা আর আমাদের ভূমিতে পশ্চিমা হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়াই করা আমাদের দায়িত্ব।
আমাদের উচিৎ নিজেদের মুসলিম পরিচয় তুলে ধরা, এক অনন্য ও পৃথক পরিচয় যা অন্য কারও মন মর্জি দ্বারা প্রভাবিত নয়; আর আমাদের ভূমিগুলোতে আল্লাহ্ (আযযা ওয়া জাল) এর শাসন ফিরিয়ে আনাও আমাদের কর্তব্য। এখন অবশ্যই আমরা একেবারে নিখুঁত ভাবে এই কর্তব্য পালন করতে পারব না। আমরা রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবীদের থেকে ১৪০০ বছর দূরে অবস্থান করছি। সুতরাং আমাদের ভুল ত্রুটি থাকবেই, সকল মুসলিম জামাতেরই ভুল ত্রুটি রয়েছে, এবং আমাদের নিজেদের প্রত্যেকের মধ্যেও ভুল ত্রুটি রয়েছে।
অতএব আমরা যা কিছুই করব তা নিখুঁত হবে না কিন্তু আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে যেন আমার নিজেদের উন্নয়ন ঘটাতে পারি, শিখতে পারি, এবং শায়খগণ, দ্বীনি ইলমের ছাত্রছাত্রী এবং আলেম ওলামাগণের উচিৎ মুজাহিদদের নসীহা, উপদেশ ও শিক্ষা দেওয়া যে কিভাবে তারা উন্নত হতে পারবে, এবং কিভাবে আরও ভাল করতে পারবে। কিন্তু আমরা দেখি কিছু আলেমদের জিহাদের ময়দান থেকে দূরে থাকতে, মুজাহিদদের নসীহা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে, তখন আমাদের তরুণ মুজাহিদদের দোষারোপ করা উচিৎ না যখন তারা ভুল করে। এটা আলেমদের জন্য বাধ্যতামূলক তাদের ভাইদের শিক্ষা ও নসীহা দেওয়া, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা আর শরীয়াহর বিষয়ে ভাল পড়াশোনা ও পরিস্থিতির ব্যাপারে ভাল ধারণার ভিত্তিতে সদুপদেশ দেওয়া।
******