হক হকের জায়গায়, সম্মান সম্মানের জায়গায়!

উস্তাদ আবু আনওয়ার আল হিন্দি

একজন মুসলিমের, একজন মুওয়াহিদের আনুগত্য সর্বপ্রথম আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সল্লালল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি – আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল সল্লালল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহর প্রতি।

আর মানুষের মধ্যে মু’মিন মূওয়াহিদ তাদেরকেই অন্তরঙ বন্ধু হিসেবে গ্রহন করবে যারা এই দুটি বিষয় – ক্বুর’আন ও সুন্নাহকে আকড়ে ধরে, এবং এগুলোর উপর আমল করে – যারা কুফর বিত ত্বগুত ও ইমান বিল্লাহর হাক্ক আদায় করে – যারা আল ওয়ালা আল বারার হাক্ক আদায় করে। একই সাথে তারা শত্রু হিসেবে গ্রহন করবে শয়তানকে,সকল তাওয়াগীতকে এবং ত্বগুতের সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় সৈন্যদের।

তারা শত্রু হিসেবে গ্রহন করবে ওই সকল লোককে যারা ত্বগুতের আনুগত্য করে, ত্বগুতের আনুগত্যের দিকে আহবান করে, ত্বগুতকে বৈধতা দেয়, ত্বগুতের জন্য অজুহাত তৈরি করে, ত্বগুতের জন্য আল্লাহর দ্বীনের অপব্যাখ্যা করে, এবং ত্বগুত বর্জন করা থেকে ত্বগুতকে প্রত্যাখ্যান করা থেকে মুসলিমদের দূরে সরিয়ে রাখতে চায়।

এমন সকল লোকের প্রতি সম্পর্ক ছিন্ন করা মু’মিন-মুওয়াহিদের দায়িত্ব। হোক সে আআদের কারো বাবা, মা, সন্তান, সহোদর, স্ত্রী, স্বামী, বন্ধু, উস্তাদ, প্রতিবেশী কিংবা শায়খ। আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের উপর অবশ্যই আল্লাহর দ্বীনের দাবি প্রাধান্য পাবে।

পরম উপকারী অন্তরং সুহৃদ যদি ত্বগুতের প্রতি আহবানকারী হয়, যদি আল্লাহর দ্বীনের সাথে খিয়ানতকারী হয়, আল্লাহর শত্রুদের বন্ধু হিসেবে গ্রহনকারী হয় – তবে আমাদের তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে এবং তাকে শত্রু হিসেবে গ্রহন করতে হবে। কারন ব্যক্তির প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা, আমার রবের প্রতি আমার দাসত্বের চেয়ে অধিক প্রাধান্য পেতে পারে না।

ব্যক্তির প্রতি আমার সহমর্মিতা আমাকে কখনো আমার দায়িত্ব ভুলিয়ে দিতে পারে না। হোক সে আওয়ামের কোন একজন কিংবা একজন বিন বায, একজন ইবন উসাইমীন, কিংবা ফজলুল হক আমিনি কিংবা আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর কিংবা অন্য কেউ। ব্যক্তির প্রতি সম্মান কখনও হাক্বের উপর প্রাধ্যন পাবে না। হাক্ব হাক্বের জায়গায়, সম্মান সম্মানের জায়গায়। আর এটাই মিল্লাতু ইব্রাহীম, এটাই সরল ও সুস্পষ্ট পথ।

তোমাদের জন্যে ইব্রাহীম ও তাঁর সঙ্গীগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে। তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলঃ তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার এবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের মানি না। তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা থাকবে।

[সূরা মুমতাহিনা, ৪]

আমাদের বন্ধুত্ব ও শত্রুত্ব, আনুগত্য ও বিদ্রোহের ভিত্তি হবে শারীয়াহ এবং একমাত্র শারীয়াহ। কোন জাতি-বর্ন, ভাষা, মাযহাব, মাসলাক এখানে বিবেচ্য হবে না।

ব্যক্তিগত অনুরাগ বিরাগ, ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্য কিংবা সংকট, ব্যক্তিগত কৃতজ্ঞতা, অন্তরঙ্গতা, সখ্য, দুর্বলতা, ঋণগ্রস্থতা কিংবা আত্মীয়তা এখানে শারীয়াহর মাপকাঠির উপর প্রাধান্য পাবে না।

শারীয়াহই আমাদের জন্য নির্ধারন করে দেবে, কাদেরকে আমরা বন্ধু হিসেবে গ্রহন করবো আর কাদেরকে আমরা শতুর হিসেবে গ্রহন করবো। আর আমাদের কাছে এটা পরিশকার এবং যেমনটা আল্লাহ যার কাছ থেকে দৃষ্টি শক্তি ছিনিয়ে নেন নি এমন সবার কাছে পরিষ্কার – বর্তমান দুনিয়াতে হাক্কের সর্বাধিক নিকটবর্তী, ক্বুর’আন ও সুন্নাহর সর্বাধিক পাবন্দি করছেন মুজাহিদিন ফি সাবিলিল্লাহ।

দুঃখজনক বিষয় হল বর্তমানে সাধারণের পাশাপাশি নিজেদের “জিহাদি মানহাজের” বলে দাবি করা অনেকেই এবং যারা আওয়ামের চোখে “জিহাদী মানহাজের” ভাই বলে পরিচিত এমন অনেকই এই মূলনীতি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন।

আর সব কিছুর আগে শারীয়াহর ভিত্তিতে আল ওয়ালা ওয়াল বারা, তাওহীদের দাবি, মিল্লাতু ইব্রাহীমের দাবি বুঝতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।

যদিও দীর্ঘদিন ধরেই এই অসুখ বিদ্যমান কিন্তু সম্প্রতি আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইদের প্রতিক্রিয়া থেকে তা পুর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে অধিক স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। আমাদের “জিহাদী মানহাজের” ভাইরা শায়খ আব্দুর রাহমান, আতাউর রাহমান সানি, সিদ্দিকুল ইসলাম সহ এই ভুমীর মুওয়াহিদিনের কথা ভুলে গেছেন – যারা এই ভূমিতে “আল্লাহর ইবাদাত ও ত্বগুতকে বর্জন”-এর দাওয়াহ দিয়েছিলেন তাদের রক্তের দাবি ভুলে গেছেন।

তগুতের কারাগারে বন্দী বিভিন্ন তানযীমের শত শত ভাইদের কথা ভুলে গিয়েছেন। তাদের নির্যাতিত মা বোন স্ত্রীদের কথা ভুলে গেছেন।

আল্লাহর রাস্তায় সস্তায় জীবন বিলিয়ে দেওয়া মিশর, লিবিয়া, আলজেরিয়া, আফগানিস্তান, শিশান, বসনিয়া, ইরাক, শাম, ইয়েমেনের মুজাহিদিনের কতাহ তারা ভুলে গেছেন, ত্বগুতের কারাগারে বন্দী শায়খুল মাশায়েখ উমর আব্দুর রাহমান, শায়খ আবু হামযা, শায়খ নাসির আল ফাহাদ, শায়খ সুলাইমান আল ‘উলওয়ান, শায়খ ওয়ালিদ সিনানি, শায়খ খালিদ শেইখ মুহাম্মাদ, শায়খ আবু যুবাইদা, শায়খ হারুন ইজহার, শায়খ জসীমুদ্দীন রাহমানীদের কথা তাদের কাছে হালকা হয়ে গেছে। শায়খ ফারিস আয যাহরানি, শায়খ ইউসুফ আল উয়ায়রি, শায়খ হামুদ বিন উক্বলা আশ-শু’আইবি, শায়খ আব্দুর রশীদ গাজীদের রক্তের কথা তারা ভুলে গেছেন।

আর তাই তাদের কাছে এই সব কিছু ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে একজন আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর। এই একজনের মৃত্যুতে তারা শোকে মুহ্যমান হয়ে তাকে দ্বীনের হাক্ক পূরনকারী আখ্যায়িত করছে অথচ এই মযলুমদের উপর যে যুলুম করা হয় তা যে করা হয় আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরদের মতো ব্যক্তিদের ব্যাখ্যা ও ফাতাওয়ার ভিত্তিতে তা তারা ভুলে যাচ্ছেন। ওয়ালা হাওলা ওয়ালা ক্বু’আতা ইল্লাহ বিল্লাহ।

অথচ আমরা মুজাহিদিনকে আমাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহন করেছি। যে যুলুম শায়খ আব্দুর রাহমান রাহিমাহুল্লাহর সাথে হয়েছে তা কি আমি বা আপনি ক্ষমা করতে পারি? যে খিয়ানত আল্লাহর দ্বীনের সাথে করা হয়েছে তা কি আমি বা আপনি ক্ষমা করতে পারি? বিশ্বব্যাপী যে মুজাহিদিনকে খাওয়ারিজ বলে চিত্রায়ীত করা হয়েছে – তাদের উপর করা যুলুম কি আমি বা আপনি আমাদের ব্যক্তিগত লাভ ক্ষতির হিসেবে মিলিয়ে মিটিয়ে দিতে পারি?

অথচ আমরা মুজাহিদিনকে আমাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহন করেছি।

আমরা কি পারি তাকে অনুসরনীয় হিসবে গ্রহন করতে যে ত্বগুতের আনুগত্যের দিকে আহবান করে? যে ত্বগুতের আনুগত্যকে ওয়াজিব বলে, যে ত্বগতের শাসন আর খিলাফাতের মধ্যে পার্থক্য দেখে না? যে এই কুফরী সংবিধানকে ইসলামসম্মত বলে? যে বলে এসব শাসক বৈধ শাসক, এসব রাস্ট্র দারুল ইসলাম আর মুজাহিদিনরা হল বিভ্রান্ত, গোমরাহ, অবিবেচক, হঠকারী ও যুল খুওয়াইসারা উত্তরসূরি, অথচ আমরা মুজাহিদিনকে বন্ধু হিসেবে গ্রহন করেছি।

হাক্ব হাক্বের জায়গায়, সম্মান সম্মানের জায়গায়

আমি আমার ভাইদের প্রতি আহবান জানাই, শায়খ আবু ফিরাস আস সুরি রাহিমাহুল্লাহর এই কথাটি নিয়ে ব্যাপকভাবে চিন্তা করার জন্য। এবং এই মূলনীতিটি এবং তার বাস্তবায়ন নিয়ে চিন্তা করার জন্য। এবং মিল্লাতু ইব্রাহীম ও তাঁর দাবিকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরার জন্য এবং তিরস্কারকারীর তিরস্কারের পরওয়া না করার জন্য।

হানাফি-সালাফি, আযহারি-মাদানি-দেওবন্দি, মাসলাক-মাযহাব দিয়ে আমরা হাক্কের বিচার করি না। আমরা হাক্ককে পরিমাপ করি শারীয়াহর পাল্লায় আর তাই আমরা মুজাহিদিনকে আমাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহন করেছি, আর আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে আমরা আমাদের বিবেচনাকে আবেগের তোড়ে ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছুক নই। এটাই মিল্লাতু ইব্রাহীম, এটাই সরল পথ, এটাই আমাদের মানহাজ।

সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আল দাহুক আল-ক্বাত্তাল ইমামুল মুজাহিদিন নাবীউর মারহামা, নাবীউল মালহামা মুহাম্মাদ আল আরাবী সল্লালল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর

(Visited 373 times, 1 visits today)