শায়খ আনওয়ার আল আওলাকি
আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন করা হয়েছে মুসলিমদের সাথে যুদ্ধরত দেশসমুহের বেসামরিক জনসাধারণকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলার শরিয়াহগত বৈধতা নিয়ে। বিষয়টি বিভ্রান্তির জালে আচ্ছন্ন।
অধিকন্তু বর্তমান সময়ের জিহাদে এটার গুরুত্ব ও সম্পৃক্ততার কারনে এ প্রশ্নের উত্তরে কুরআন, সুন্নাহর আলোকে এবং রাসুল (সা), তাঁর সাহাবী এবং পরবর্তিতে মুজাহিদিনদের জিহাদের বিভিন্ন কর্মপন্থা থেকে আমি এই প্রবন্ধটি লিখছি।
একই সাথে আমরা বর্তমান সময়ে জিহাদের বাস্তবতাটা দেখব এবং এতে সফল হওয়ার জন্য কোন পদ্ধতিতে যুদ্ধ চালিয়ে নেয়া দরকার তাও দেখার চেষ্টা করব। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মাসআলাগুলোর সার-সংক্ষেপ আমি তুলে ধরছি –
*উলামাগণ দারুল হারবের জনগনকে সামরিক এবং বেসামরিক লোক এ দু’ভাগে ভাগ করেছেন।
* সামরিক লোকদেরকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা করা যাবে সকল উলামায়ে কেরাম এই ব্যাপারে একমত। অন্যদিকে ‘বেসামরিক লোকজন’ দের বিষয়টি এই ব্যাপারে জটিলতার সৃষ্টি করেছে।
*নারী এবং শিশুদের ইচ্ছাকৃতভাবে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা যাবে না – এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরাম একমত।
* বৃদ্ধ, কৃষক, ব্যবসায়ী এবং দাসদের ব্যাপারে কি পদক্ষেপ নেয়া যায় এ ব্যপারে উলামায়ে কেরামের মধ্যে মতপার্থক্য আছে।
* কিন্তু যদি নারী, বৃদ্ধ, কৃষক, ব্যবসায়ী কিংবা দাসরা যদি মুসলিমদের বিপক্ষে যুদ্ধে শক্তিপ্রয়োগ করে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধ করে, অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করে কিংবা মতামত জ্ঞাপন করে বুদ্ধিভিত্তিক কোনো সাহায্য প্রদান করে- তবে তাদের উপর হামলা করা বৈধ হয়ে যায়।
*সামরিক আর বেসামরিক লোকজন যদি একত্রে মিশে থাকে তবে সেখানে হামলার ব্যাপারে অনুমতি আছে যদিও নারী, শিশু,বৃদ্ধ, কৃষক, ব্যবসায়ী কিংবা দাস নিহত হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে এ হামলা যেন সামরিক লোকদের সাথে যুদ্ধের নিয়্যতেই হয়।
* মুসলিমদের দ্বারা যুদ্ধাবস্থায় কোন বেসামরিক লোক যদি নিহত হয় তবে এর দায়ভার মুসলিমদের উপর বর্তাবে না। এর জন্য মুসলিমদের কোনো শাস্তি দেয়া যাবে না, হত্যার কোনো রক্তপণ দেয়া লাগবে না, এবং আল্লাহ্র দৃষ্টিতেও এখানে মুসলিমদের কোনো পাপ নেই।
*যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে কিংবা যুদ্ধাবস্থায় ভুলবশত কাফেরদের সাথে মুসলিমও মারা যায় তবে যে মুসলিমরা এ হত্যার সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের এজন্য কোনো পাপ হবে না কিন্তু কাফফারা আদায় করতে হবে। এই কাফফারা হোল দু’মাস সাওম পালন করা অথবা ষাট জন মিসকীনকে খাওয়ানো। রক্তপণ আদায় করতে হবে কিনা এ ব্যাপারে মতপার্থক্য রয়েছে।
*বেসামরিক লোকজন যদি যুদ্ধে বন্দী হয় তবে তাদের হত্যা করা উচিত না।
*কাফেররা আমাদের নীতিমালা আমাদের বিরুদ্ধে আমাদের বিপদে ফেলার জন্য ব্যবহার করবে-ইসলাম এই সুযোগ দেয় না।
*আলেমগণ যখন জিহাদের ফতোয়া দিবেন, সে ক্ষেত্রে চলমান জিহাদ বিবেচনা করে মুসলিমদের বিজয়কে সবসময় অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।
বেসামরিক লোকদের হত্যার নিষিদ্ধতার ব্যাপারে নিচে কয়েকটি হাদিস উদ্ধৃত করা হোল।
* উমার (রা) বর্ণনা করেন যে,
“রাসুল (সা) নারী এবং শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করেছেন।” [১]
*রাসুলুল্লাহ(সা) বলেছেন
“বৃদ্ধ, নারী কিংবা শিশুকে হত্যা করোনা।”[২]
*রাসুলুল্লাহ (সা) যুদ্ধের এক নিহত মহিলাকে দেখতে পেলেন এবং বললেন
“সে তো যোদ্ধা নয়।” [৩]
যেসব কাফেররা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধাবস্থায় আছে আমাদের আলেমগণ তাদেরকে ‘মুকাতিলাহ’ এবং ‘গায়রে মুকাতিলাহ’ পরিভাষা দুটো ব্যবহার করে আলাদা ভাগে ভাগ করে থাকেন। যার অনুবাদ করলে দাঁড়ায় সামরিক আর বেসামরিক জনসাধারণ।
কাফেরদের নারী এবং শিশুদের ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা যাবে না- এ ব্যাপারে আলেমগনের ইজমা আছে।
তবে এখানে “ইচ্ছাকৃতভাবে” এই শব্দটি ব্যখ্যা করা প্রয়োজন কারণ এখানে বুঝার ঘাটতি থাকার কারণে নানা ধরণের বিভ্রান্তির জন্ম নেয় যেটা আজকে আমরা চারপাশে লক্ষ্য করছি।
এখানে যেটা বুঝানো হয়েছে তা হলো হত্যার জন্য নারী এবং শিশুদের আলাদা করে বেছে নেয়া যাবে না; নারী এবং শিশু যুদ্ধে বন্দি হলে তাদের হত্যা করা উচিত নয় এবং যুদ্ধাবস্থায় ও যদি তাদের সামরিক বাহিনীদের থেকে আলাদা করা সম্ভব হয় তবে তা করা উচিত।
কিন্তু তার মানে এই না যে, পুরুষ-নারী-শিশু সবাই একত্রে মিশে থাকলে তাদের উপর হামলা ইসলামে নিষিদ্ধ। এই ধারণা খুবই বিপদজনক এবং জিহাদের জন্য ক্ষতিকর এবং এই ব্যাপারে সতর্ক থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ।
মুসলিমদের সাথে যুদ্ধরত কাফেরদের মাঝে নারী-শিশু মিশে আছে বলে তাদের উপর হামলা করা বন্ধ করা খুবই কঠিন কাজ যা বর্তমান জিহাদের সীমাকে খুবই সংকীর্ণ করে ফেলে; একই সাথে এভাবে যুদ্ধ করা অসম্ভব এবং শত্রুদের তুলনায় মুসলিমরা অনেক অসুবিধাজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে পড়ে।
শত্রুপক্ষের বাড়িঘর আক্রমণ এবং তাদের শহর অবরোধ করা সম্পর্কে আলেমদের অভিমতসমুহ দেখলে আমরা বিষয়টি যথাযথভাবে বুঝতে সক্ষম হব।
রাসুলুল্লাহ (সা) এর সময়ে ‘বায়াত’ নামক এক ধরনের যুদ্ধ পদ্ধতি ছিল। এটা ছিল রাতের অন্ধকারে শত্রুপক্ষের উপর হামলা করা। আক্রমণকারীরা অতর্কিতভাবে শত্রুদের বাড়িঘরে কিংবা তাবুতে হামলা করত এবং লড়াইয়ে লিপ্ত হত।
এ কারণে ঘরে কিংবা তাবুতে অবস্থানরত নারী-পুরুষ- শিশু নির্বিশেষে নিহত হত কারণ এর মাঝে নারী-পুরুষ-শিশু পার্থক্য করা খুবই কঠিন। এখন, এ ধরণের যুদ্ধ কি ইসলাম অনুমোদন করে?
‘বায়াত’ যুদ্ধে নারী-শিশুরা যে হামলার শিকার হচ্ছে এ ব্যপারে রাসুলুল্লাহ(সা) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। একটি সহিহ বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন
“তারা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত”।
অর্থাৎ হত্যার অনুমতির ব্যাপারে যুদ্ধরত পুরুষদের উপর যে হুকুম তাদের ক্ষেত্রেও অনুরূপ। রাসুলুল্লাহ (সা) তাঁর সাহাবীদের এই ধরনের যুদ্ধের অনুমতি প্রদান করেছেন যেখানে পুরো পরিবারই নিহত হচ্ছে।
সালামাহ(রা) বলেছেন
‘আমি নিজে নয়টি পরিবারের সকল লোককে হত্যা করেছি।‘[৪]
ইমাম আহমদ কে ‘বায়াত’ এর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি বলেন
“এবং রোমানদের বিরুদ্ধে বায়াত ছাড়া কি কোনো যুদ্ধ হয়েছিল?’ [৫]
অর্থ্যৎ ইমাম আহমদ শুধু বায়াত এর সমর্থন করছেন শুধু তাই নয়,তিনি আরও বলছেন যে মুসলিমরা রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রায়শ যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছে তা হল ‘বায়াত’।
যে দেশগুলো আজ মুসলিমদের সাথে যুদ্ধাবস্থায় আছে সেখানকার কোনো জনবহুল এলাকায় বোমা নিক্ষেপ কিংবা বিস্ফোরণ আর ‘বায়াত’ এর মাঝে কার্যত কোন পার্থক্য নেই।
যেমনি ভাবে সাহাবারা এবং পরবর্তীতে তাঁদের অনুসারীদের জন্য নারী-পুরুষ-শিশু আলাদা করতে না পারা সত্তেও এই ‘বায়াত’ যুদ্ধের অনুমতি ছিল তবে কেন আমরা কাফেরদের (মুসলিমদের সাথে যুদ্ধরত) দেশের কোন জনবহুল এলাকায় বোমা নিক্ষেপ নিষিদ্ধ করব?
‘বায়াত’ এর ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের ইজমা(ঐক্যমত) থাকার বিষয়টি আমরা ইমাম আহমদের আরেকটি বক্তব্য থেকে জানতে পারি।
ইমাম আহমদ বলেন
“আমরা এমন কারো কথা জানিনা যিনি ’বায়াত’ কে নিরুৎসাহিত করেছেন’।[৬]
আমাদের আলোচনার সাথে সংশ্লিষ্ট আরেকটি উদাহরণ হলো যুদ্ধে ব্যবহৃত গুলতি (ভারী পাথর নিক্ষেপের যুদ্ধাস্ত্রবিশেষ) যা কাফেরদের শহরে হামলার জন্য ব্যবহৃত হত।
সিরাহ বর্ননাকারী আলেমগণ উল্লেখ করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা) তায়িফে (তায়িফে প্রচীর দিয়ে ঘেরা ছকীফ আক্রমনের সময়) গুলতি ব্যবহার করেছিলেন এবং আমর ইবনে আস(রা) ও মিশরের আলেক্সান্দ্রিয়ায় যুদ্ধের সময় এটা ব্যবহার করেন। গুলতির নিক্ষিপ্ত বস্তু(বড় বড় পাথর বা আগুনের গোলা কিংবা অন্য কোন বস্তু) নগরীতে আঘাত হানে এবং এতে নারী-পুরুষ কিংবা শিশুদের আলাদা করার কোনো সুযোগ থাকে না।
শত্রুদের বিপক্ষে এ ধরনের গুলতি ব্যবহারের ব্যপারে ইবনে রুশদের একটি বাক্য দ্বারা সারমর্মে পৌঁছানো যায়। তিনি বলেন
এই ব্যাপারে আলেমগণের ইজমা আছে যে কাফেরদের দুর্গে গুলতি দিয়ে আক্রমন করা বৈধ যদিও তাদের মাঝে নারী –শিশু থাকুক কিংবা না থাকুক। কারণ আমাদের নিকট দালিল আছে যেখান থেকে জানতে পারি রাসুল (সা) তায়িফে কাফেরদের বিরুদ্ধে গুলতি ব্যবহার করেছিলেন। [৭]
ইমাম শা’ফিঈ বলেন
“ আমাদের কাছে বর্ণনা আছে যে রাসুলুল্লাহ(সা) তায়িফে গুলতি ব্যবহার করেছেন। তাই নারী-শিশু তাদের সাথে অবস্থান করছে বলে আক্রমণ করার ব্যাপারে যদি নিষেধাজ্ঞা থাকত তবে রাসুল (সা) তা জানাতেন।
তায়িফের এই বর্ণনাসহ অন্যান্য বর্ণনাগুলো এখনও ভালোভাবে সংরক্ষিত আছে যা রাসুল (সা) এর সুন্নাহ এবং সিরাহ থেকে সকলেই জানে। রাসুলুল্লাহ(সা) এর সাহাবাগণ এবং তাঁদের অনুসারীরাও আমাদের আগে থেকেই কাফেরদের দুর্গে আক্রমন করতে এটা ব্যবহার করেছেন।
এরকম কোন বর্ণনা আমাদের কাছে নেই যা প্রমাণ করে যে তাঁরা নারী-শিশু কিংবা অন্য যে কেউ যাদের সাধারণত হত্যা করা উচিত নয় তাদের অবস্থান করার কারণে গুলতি কিংবা অন্য কোন রকম অস্ত্র দিয়ে নগর-দুর্গ আক্রমণ করা বন্ধ করেছেন ।
ইমাম আল মাউয়ারদি বলেনঃ
নারী-শিশুদের হত্যার ব্যপারে রাসুলুল্লাহ(সা) এর যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা যুদ্ধে বন্দীদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হবে কারন এরা যুদ্ধে প্রাপ্ত সম্পদ(গনীমাহ, booty)। কিন্তু যখন এই নারী-শিশু যুদ্ধরত এলাকায়(যুদ্ধের ময়দানে) অবস্থান করে তবে তাদের পুরুষদের সাথে তাদের উপরেও হামলা করা যাবে কারণ যুদ্ধের ময়দানে এ ধরনের আক্রমণ অনুমোদিত। [৮]
তাই প্রয়োজনে এই ধরনের গুলতি বেসামরিক লোকদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যাবে বলে আলেমগণ বলেছেন। ইমাম শাফিঈ বলেছেন যে যদি মুসলিমরা দুর্গের কিংবা শহর থেকে বেশ দূরত্বে অবস্থান করে তবে তাদের শুধু দুর্গের প্রাচীরে পাথর কিংবা আগুনের গোলা নিক্ষেপ করা উচিত; কাফেরদের বাড়িঘরের উপরে নয়।[৯]
তবে, যদি প্রাচীরের কাছাকাছি চলে আসে তখন তাদের বাড়িঘরের উপর লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা যাবে। ‘বায়াত’ এর মত এই গুলতির ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বেসামরিক লোকদের জীবন ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
গুলতি যে গোলা নিক্ষেপ করে তা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভেদী কোনো অস্ত্র না তাই মুসলিমদের সাথে যুদ্ধরত জাতিসমুহের শহরে বোমা বিস্ফোরণ কিংবা নিক্ষেপ করার সাথে এর কোনো পার্থক্য নেই।
তাই উপরোক্ত দুটি দালিল থেকে এটা পরিস্কার যে, মুসলিমদের সাথে যুদ্ধরত দেশের জনসাধারনের উপর মুসলিমদের বোমা বিস্ফোরণ, রাইফেল বা বন্দুক কিংবা অন্য কোনো উপায়ে হামলা করা জায়েজ যদিও তা তাদের বেসামরিক লোকদের মৃত্যুর কারণ হোক না কেন।
লক্ষ্য করবেন, ‘শত্রুরা আমাদের সাথে যে আচরণ করবে আমরাও সে আচরন করব’, এই ব্যাপারে এখনো আমি কোন দালিল উপস্থাপন করিনি।
পশ্চিমা বিশ্ব মুসলিমদের উপর যে হামলা চালিয়েছে এই দলিল নিয়ে আসলে তাদের জনসাধারনের পক্ষে যারা আজ তর্ক করছে তাদের কথা বলার কোনো সুযোগই থাকবে না।
মূল দলিলগুলোর দিকে নজর দেয়া গুরুত্বপূর্ণ যেগুলোর উপর ভিত্তি করে আমাদের মূলধারার (ক্লাসিকাল, পুর্বের) আলেমগণ জিহাদের ব্যাপারে ফতোয়া প্রদান করেছেন তবেই আমরা বুঝতে পারব বর্তমান সময়ের আলেমদের তুলনায় কেন তারা ভিন্ন উপসংহারে এসে উপনীত হয়েছিলেন।
ইমাম আবু জাকারিয়া আল আনসারি বলেনঃ
কাফেরদের দুর্গ আক্রমণের উদ্দেশ্যে গুলতি ব্যবহার করা যাবে যদিও তা বেসামরিক লোকদের উপর আঘাত হানে যেন তারা জিহাদকে থমকে দিতে এদের(বেসামরিক) ব্যবহার করতে না পারে অথবা তাদের(বেসামরিক) দিয়ে দুর্গ রক্ষার ছলচাতুরী করতে না পারে। [১০]
ইমাম নববী বলেন,
কোন শহর কিংবা দুর্গে যদি কোনো মুসলিম, মুসলিম যুদ্ধবন্দী, ব্যবসায়ী, কিংবা শান্তি চুক্তিবদ্ধ কাফের থাকে কিংবা উপরে উল্লিখিতদের কোনো দল থাকে তবে সেখানে গুলতি কিংবা অনুরূপ কোনো কিছু দিয়ে কি আঘাত হানা যাবে?
ফিকহের মাযহাবসমুহ এ ব্যপারে কয়েকটি মত দিয়েছে।
প্রথমত, যদি তাদের আক্রমণ করার প্রয়োজন না হয় তবে এ ব্যাপারে শক্তিশালী মত হচ্ছে আক্রমণ না করা। তবে, তা নিষিদ্ধ করা হয় নি। এর কারণ হল অবিশ্বাসীদের মধ্যে একজন মুসলিম থাকার কারনে যেন জিহাদ থেমে না যায়। যদি কোনো ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা থাকে অথবা তাদের দুর্গে প্রবেশের অন্য কোন উপায় না থাকে তবে নিঃসন্দেহে তাদের উপর আক্রমন করা বৈধ।
মাজহাবের দ্বিতীয় মত অনুযায়ী কোন ধরনের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করার দরকার নেই। যদি তাদের আক্রমনের ফলে কোন মুসলিম মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তবে তাদের আক্রমন করা উচিত হবে না, আর আশঙ্কা না থাকলে সেখানেও দুইটি মত আছে।
তৃতীয় মত যা আল-শামিল এর লেখক উল্লেখ করেছেন তা হল যদি সেখানে মুসলিমদের সংখ্যা তাদের সমান হয় তবে তাদের আক্রমন করা আমাদের উচিত হবে না। কিন্তু মুসলিমদের সংখ্যা যদি কম হয় তবে আমরা তাদের আক্রমন করতে পারব, কারণ সেক্ষেত্রে সিংহভাগ ক্ষতি মুসলিমদের হবে না।
এ ব্যাপারে মাজহাবের অবস্থান যা আল-মুখতাসার এ উল্লেখ করা আছে তা হল, তাদের আক্রমন করা বৈধ যদিও সেখানকার মুসলিমদের ক্ষতি হয়, কারণ আমাদের পক্ষের মুসলিমদের পবিত্রতা সেখানকার মুসলিমদের চেয়ে বেশি। যদি কোন মুসলিম নিহত হয় তবে সে শহীদ হবে। [১১]
ইমাম ইবনে কুদামাহ আল মাক্বদিসি বলেন,
‘যদি তারা (শত্রুরা) যুদ্ধে নারী শিশু বা অন্য কাউকে তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তবে যোদ্ধাদের মারার উদ্দেশ্যে তাদের লক্ষ্য করে আঘাত করা বৈধ। এর কারণ রাসূল (সাঃ) তাদের মধ্যে নারী-শিশু থাকা সত্ত্বেও গুলতি ব্যবহার করেছিলেন।
এর কারণ হল, যদি এই কারণে মুসলিমরা তাদের আক্রমন না করে তবে তা জিহাদে সমস্যার সৃষ্টি করবে। কারণ, শত্রুরা যখনই মুসলিমদের হুমকির সম্মুখীন হবে তখনই তারা এইটাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবে।
যুদ্ধের সময়ে যেকোনো মূহুর্তেই আঘাত করা বৈধ।যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের জন্যই অপেক্ষা করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। রাসূল (স) আঘাত হানার সময় যুদ্ধ শুরু হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকেননি। ‘[১২]
ইমাম ইবনে কুদামাহ আল মাক্বদিসি আরও বলেন,
‘আলী ইবনে আবি তালিব হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল(সাঃ) আত-তাইফের অধিবাসীদের বিরুদ্ধে গুলতি ব্যবহার করেছিলেন।
শত্রুকে পানি দিয়ে ভাসিয়ে দেওয়ার কৌশলটিও একই ধাঁচের। যদি তাদের মাঝে মুসলিম অধিবাসী থাকে এবং এসকল কৌশল ব্যবহার না করেই জয়লাভ করা যায় তবে সেগুলো ব্যবহার না করাই উচিত হবে। কারণ এতে অপ্রয়োজনীয় রক্তপাত হবে।
কিন্তু যদি এই কৌশল গুলো ছাড়া জয়লাভ করা না যায় সেক্ষেত্রে এসকল কৌশল ব্যবহার করা বৈধ। কারণ এগুলোকে নিষেধ করলে তা প্রকারান্তরে জিহাদকেই নিষ্ক্রিয় করে দিবে।‘ [১৩]
জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি যে অন্যান্য বিষয়গুলোর চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ তা তুলে ধরার জন্যই আমাদের প্রাথমিক যুগের আলেমদের কিছু উদ্ধৃতি তুলে ধরা হলো।
এর মাধ্যমে এও প্রমাণিত হয় যে, যে সকল বিষয় জিহাদকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার ঝুঁকির সম্মুখীন করে তার সবকিছুই রহিত হয়ে যাবে।
অনেক আধুনিক আলেমরা কিছু অপরিবর্তনীয় নীতিমালার অবতারণা করেছেন যা অনুসরণ করতে গেলে জিহাদ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে কিংবা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত নীতি নৈতিকতাহীন শত্রুদের বিপক্ষে মুসলিমরা অসুবিধাজনক অবস্থানের মুখোমুখি হবে।
জিহাদের ব্যাপারে বর্তমানকালের আলেমদের কিছু নিষেধাজ্ঞা নিম্নরুপঃ
- রাজা বা প্রেসিডেন্টের/ খলিফার নির্দেশ ছাড়া জিহাদ করা যাবে না।
• আত্মঘাতী হামলা বৈধ না।
• অবিশ্বাসী নারী-শিশুর মৃত্যুর কারণ হতে পারে এমন সকল অভিযান অবৈধ।
প্রথম নিষেধাজ্ঞাটিই জিহাদ থামিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কারণ বর্তমানকালের কোনো রাজা বা রাষ্ট্রপতি(যারা নিজেরাই মুরতাদ) জিহাদের অনুমতি দিবে না। তারা শুধু সেসকল যুদ্ধের অনুমতি দিবে যেগুলো তাদের নিরাপত্তা দিবে এবং তাদের ব্যক্তিগতভাবে লাভবান করবে।
আল্লাহ্র রাস্তায়, ইসলামের উন্নতির জন্য কিংবা মুসলিমদের প্রতিরক্ষার জন্য যুদ্ধের ব্যাপারে তারা খুব একটা আগ্রহী নয়। বাকি দুটো নিষেধাজ্ঞা এখনকার মুজাহিদীনদের জন্য সম্ভাব্য অধিকাংশ কৌশলকেই অবৈধ করে দেয়।
ইমাম ইবনু রুশদ বলেন যে,
নারী-শিশুর উপস্থিতি নির্বিশেষে শত্রুর দুর্গে গুলতি ব্যবহার করার ব্যাপারে ফিকহশাস্ত্রবিদদের মধ্যে ইজমা রয়েছে।
ইমাম আল-শাফিঈ বলেন,
এটাই মুসলিমদের এবং মুহাম্মাদ (স) এর সাহাবিদের অনুসৃত পন্থা ছিল। কাফিরদের দুর্গ আক্রমণের ব্যাপারে এমন কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না যেখানে নারী-শিশু বা অন্য কারো নিহত হওয়া ঠেকাতে গুলতি বা এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা নিষেধ করা হয়েছে।
ইমাম আহমাদ বলেছেন,
“রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বায়াত ছাড়া আর কী?”
অনিচ্ছাকৃতভাবে নারী-শিশু মারা গেলেও কাফিরদের ভূমি আক্রমণের ক্ষেত্রে রাসূল (স) এর কৌশল এমনই ছিল।
খুলাফায়ে রাশিদিন, উমাইয়, আব্বাসীয় এবং আইয়্যুবী খলিফা, স্পেইনের মুসলিম এবং মামলুকরাও রোমানদের সাথে যুদ্ধে এই কৌশল অবলম্বন করত।
উসমানিরাও কাফিরদের শহর-নগর অবরোধের সময় এই পন্থা কাজে লাগাত।
তাহলে কীভাবে আমরা ১৪০০ বছরের যুদ্ধ কৌশল জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে আজকের যুগে জিহাদের নতুন নিয়ম বানাতে পারি?
মুসলিমরা যা করেনি তা হলো তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বা আত্মসমর্পণ করার পর বন্দী অবস্থায় তাদের হত্যা করেনি। এই বিষয়ে পরিস্কার ধারণা রাখা এই যুগে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, বেসামরিক লোকের মৃত্যু ঠেকাতে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভাব্য লক্ষ্যে আক্রমণ চালানো বন্ধ হয়ে যাবে। আর শুধুমাত্র সুরক্ষিত সামরিক লক্ষ্যে আক্রমণ করাটা আমাদের মুজাহিদীন ভাইদের সমস্যায় ফেলে দিবে। উপরোক্ত প্রমাণ অনুযায়ী যে সকল যুদ্ধ কৌশল বৈধঃ
.
• মুসলিমদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত দেশসমূহের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিস্ফোরক ব্যবহার করা বৈধ। বিস্ফোরক দ্রব্যের প্রভাব গুলতির সাথে তুলনীয়। গুলতি দিয়ে ছোঁড়া মিসাইলগুলো ছিল প্রধানত পাথর।
এই পাথরের আঘাতে বা এর বিক্ষিপ্ত অংশের আঘাতে শত্রুরা আক্রান্ত হত। কখনো কখনো গুলতির মিসাইল হিসাবে দাহ্য পদার্থে পূর্ণ পাত্র ব্যবহার করা হত যা শত্রুদের আগুনে পুড়িয়ে মারত। কিছু সংখ্যক আলেম বিস্ফোরক এর ব্যবহার কে শত্রুর বিরুদ্ধে আগুনের ব্যবহারের সমতুল্য বলেছেন, কিন্তু তা পুরোপুরি সঠিক নয়।[১৪]
এটা সত্য যে বিস্ফোরক প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে তবে বেশিরভাগ মৃত্যুই হয় ছোড়া পাথরের বিক্ষিপ্ত অংশ এবং বিস্ফোরনের কম্পনে।
বিস্ফোরণের তাপের ফলে সবচেয়ে কম সংখ্যক মানুষ হতাহত হয়। প্রায় সব বিস্ফোরকের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটে। মৃত্যুর কারণ তাপ হোক কিংবা ছোড়া পাথরের বিক্ষিপ্ত অংশ হোক আইনগত দিক থেকে বিস্ফোরক এর ব্যবহার গুলতি ব্যবহারের অনুরূপ।
• বিভিন্ন অপারেশানে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যাবহারের অনুমতি রয়েছে যেমনটা মুম্বাই হামলায় ব্যবহার করা হয়েছিল সাধারণ জনগনকে লক্ষ্য করে। এটি উপরে আলোচিত বায়াত কৌশলের অনুরুপ। যে গুলি করবে সে ভীড়ের মধ্যে এলোপাতাড়ি ভাবে গুলি করতে পারবে তবে লক্ষ্য যদি পরিস্কার থাকে অবশ্যই তাকে নারী এবং শিশু হত্যা এড়িয়ে যেতে হবে।
• জনবহুল স্থানগুলোতে বিষাক্ত গ্যাস কিংবা রাসায়নিক পদার্থ এবং বায়োলজিকাল অস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে এবং শত্রুর বিরুদ্ধে ব্যাপক কার্যকারিতার বিবেচনায় এদের ব্যবহারের পক্ষে জোর সমর্থন দেওয়া হয়েছে।
এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের গুরুত্ব এবং অনুমোদনযোগ্যতার উপর ভিত্তি করে পূর্ববর্তী আলেমগণরা যা বলেছেনঃ
ইমাম আল মাওয়ারদি বলেন,
রাসূল(সাঃ) মক্কা বিজয়ের পর আত-তাইফ অবরোধ করার সময় গুলতি ব্যবহার করেছিলেন।
শত্রুদের অসতর্ক অবস্থায় তাদের উপর(তারা যে সকল শহর বা গ্রামে থাকে) অতর্কিতে হামলা করার অনুমতি আছে যেমনটা রাসূল(সাঃ) করেছিলেন বানি মুস্তালিকদের বিরুদ্ধে।শত্রুদের উপর রাতের বেলায় হামলা করা, তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া, তাদের দিকে আগুন নিক্ষেপ করা,সাপ এবং বিছা নিক্ষেপ করাও বৈধ। তাদেরকে ভিতরে রেখে তাদের বাড়ি ঘর ধ্বংস করে ফেলা, পানির তোড়ে ভাসিয়ে দেওয়া,তাদের পানির সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া, এবং যা যা তাদের ধ্বংসের কারণ হতে পারে তার সবই করার অনুমতি রয়েছে।
তাদের উপর ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যেতে হবে এতে হয়ত তাদের নারী ও শিশুদের মৃত্যু হতে পারে তবে শুধু এ থেকে বিরত থাকতে গিয়ে অর্থাৎ শুধুমাত্র এই কারণে তাদের উপর আক্রমণ চালানো বন্ধ করা যাবেনা।
এর কারণ হল রাসূল(সাঃ) নারী এবং শিশুদের কারণে বনি মুস্তালাক অথবা আল-তায়েফ এর উপর আক্রমণ পরিচালনা বন্ধ রাখেননি। তবে রাসূল(সাঃ) নারী এবং শিশুদের কে ইচ্ছাকৃত ভাবে হত্যার করার নির্দেশ দেননি। নারী এবং শিশুদের গণিমতের মাল হিসেবে পাওয়া গেলেও হত্যা করা যাবেনা। শুধুমাত্র যখন তারা দারুল-হারবে বসবাস করবে তখন তাদের দিকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করা হালাল এবং তাদের ক্ষেত্রেও পুরুষদের মতো একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। ‘[১৫]
ইমাম আল-সারাখসি (একজন হানাফী আলেম) শারহ-আল-সিয়ারুল কাবির থেকে মুহাম্মদ ইবন আল-হাসান এর একটি উদ্ধৃতি দেনঃ
আগুন দিয়ে অবিশ্বাসীদের ভবন পুড়িয়ে ফেলা,তাদেরকে পানি দিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া,তাদের পানিতে রক্ত বর্জ্য এবং বিষ মিশানো যতক্ষন পর্যন্ত না পানি দূষিত হচ্ছে -এসব মুসলিমদের জন্য অনুমোদিত।
কারণ আল্লাহ আমাদের আদেশ করেছেন তাদের কাবু করতে এবং তাদের শক্তিমত্তাকে অকার্যকর করে দিতে ।
এযাবৎ যুদ্ধের যত গুলো কৌশলের কথা বলা হল এর সব গুলোই তাদের কে দুর্বল করে তুলবে এবং এর ফলে আল্লাহর আদেশ পালিত হবে এবং আল্লাহ কে অমান্য করা হবেনা। এই সব কৌশল শত্রুকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং এগুলো হল পুরস্কার প্রাপ্তির একটা উপায়।
আল্লাহ্ বলেন,‘ তাদের এমন পদক্ষেপ যা কাফেরদের মনে ক্রোধের কারণ হয় আর শত্রুদের পক্ষ থেকে তারা যা কিছু প্রাপ্ত হয়-তার প্রত্যেকটির পরিবর্তে তাদের জন্য লিখিত হয়ে নেক আমল।‘[৯:১২০]
কোনো মুসলিম বন্দি , শান্তি চুক্তিতে আবদ্ধ কোনো জাতির নাগরিক, নারী-শিশু-বৃদ্ধ কেউ আছে এটা জানা থাকার পরেও উপরে বর্ণিত কোনো পদ্ধতিই নিষিদ্ধ হয়ে যায় না। কারণ এক্ষেত্রে একই সাথে তাদের ক্ষয়-ক্ষতি এড়ানো এবং কাফিরদের অবদমিত করার নির্দেশ পালন করা সম্ভব নয়। আর যা এড়ানো সম্ভব নয় তা মাফ করে দেওয়া হবে।
ইমাম ইবনু ফারহুন (মালিকি মাযহাবের আলেম) বলেন,
‘শত্রুকে সকল উপায়ে মোকাবিলা করতে হবে। তাদের থেকে ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে যদি অন্য কোনো উপায় না থাকে তবে আগুন দিয়ে হলেও মোকাবিলা করতে হবে। তাদের থেকে ক্ষতির আশঙ্কা না থাকলে সেক্ষেত্রে দুটি মত রয়েছে। তবে ভেতরে মুসলিমরা থাকলেও তাদের জাহাজ এবং দুর্গ গুলতি দিয়ে আঘাত করা আমাদের জন্য বৈধ।এবং এ ব্যাপারে তর্কের কোনো অবকাশ নেই।‘[১৬]
ইমাম আল-খারশি (মালিকি মাযহাবের আলেম) বলেন,
‘ আমাদের দাওয়াত গ্রহণ না করলে সম্ভাব্য সকল উপায়ে শত্রুর মোকাবিলা করা বৈধ। তাদের পানি সরবরাহ আটকে দিয়ে তৃষ্ণায় মেরে ফেলা, পানির তোড়ে ডুবিয়ে দেওয়া, তলোয়ার, ছুরি দিয়ে আঘাত করে কিংবা গুলতি এবং অন্যান্য অস্ত্র দিয়ে মেরে ফেলা বৈধ।‘ [১৭]
ইমাম আল-শাফি‘ঈ বলেন,
‘শত্রুপক্ষ পাহাড়, দুর্গ, গিরিখাত, কিংবা কাঁটাযুক্ত গাছের নিচে বা অন্য কোনো আশ্রয় গ্রহণ করলে তাদের গুলতি, আগুন, বিছে, সাপ এবং ক্ষতিকারক সবকিছু দিয়েই আঘাত করা বৈধ। তাদের ডুবিয়ে মারার উদ্দেশ্যে বা কাদায় আটকে ফেলার উদ্দেশ্যে পানির স্রোতে ভাসিয়ে দেওয়াও বৈধ।
সেখানে নারী-শিশু বা ধর্মীয় যাজকেরা থাকুক বা না থাকুক এতে কিছু আসে যায় না। কারণ, সেই ভূমি ইসলাম দ্বারা সুরক্ষিত নয় বা ইসলামের সাথে কোনো চুক্তিতে আবদ্ধ নয়। তাদের ফলের গাছ এবং অন্যান্য বৃক্ষ, বাড়িঘর এবং তাদের মালিকানাধীন জড় যেকোনো বস্তুই ধ্বংস করা অনুমোদিত।‘ [১৮]
ইমাম আল-বাহুতি (একজন হাম্বালি মাযহাবের আলেম) বলেন,’
তাদেরকে (কাফিরদের) আগুন, সাপ, বিছে, গুলতি দিয়ে আঘাত করা, সুড়ঙ্গ ধোঁয়ায় পূর্ণ করা, বন্যার তোড়ে ডুবিয়ে দেওয়া এবং তাদের দুর্গ ও বাড়িঘর ধ্বংস করা বৈধ। তবে আগুন ব্যবহার না করেই তাদের হারানো গেলে আগুন ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত।‘ [১৯]
ইমাম আল-শাওকানি বলেন,
আল্লাহ অবিশ্বাসীদের হত্যা করার আদেশ দিয়েছেন এবং এর জন্য কোন পদ্ধতি সুনির্দিষ্ট করে দেননি। কি করা যাবে আর কি করা যাবেনা এই বিষয়ে আল্লাহ আমাদের কোন আদেশ দেননি।
সুতরাং তাদের কে যে কোন উপায়ে হত্যা করতে কোন রকম বাধা নেই সেটা গুলির মাধ্যমে হোক ছুরিকাঘাতে হোক,পানিতে ডুবিয়ে হোক, তাদের ভবন গুলো তাদের উপর ধসিয়ে দিয়ে হোক কিংবা তাদের কে উঁচু স্থান থেকে ফেলে দিয়ে হোক না কেন।‘ [২০]
আলেমদের এই বক্তব্যগুলো থেকে দেখা যাচ্ছে বিষ প্রয়োগ বা মানুষ হত্যার অন্যান্য পদ্ধতি গুলো যে সকল অবিশ্বাসীরা আমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে। এর পাশাপাশি তাদের বক্তব্যগুলোতে আরো অনেক অন্তর্নিহিত তাৎপর্য রয়েছে যা থেকে একজন বিশ্বাসী লাভবান হতে পারে।
মুজাহিদীনদের উচিত মুসলিমদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত দেশগুলো বিশেষ করে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে যেমন- ইউ এস ই, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স প্রভৃতিকে লক্ষ্য করে বিস্ফোরক, বিষ, আগ্নেয়াস্ত্র এবং অন্যান্য সকল উপায়ে আক্রমণ চালানো এবং তাদের সর্বোচ্চ ক্ষতি করা। আমাদের এই সময়ে আল্লাহ্র ইবাদাত করার এটি একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়।
রেফারেন্স সমূহঃ
[১] বুখারি ও মুসলিম
[২] গ্রহণযোগ্য সনদ সহ আবু দাউদ কর্তৃক বর্ণিত
[৩] আবু দাউদ এবং আল-হাকিম কর্তৃক বর্ণতি, সহীহ
[৪] মু‘জিম আল-তাবারানি
[৫]আল-মুগনি, ইবনু আল-কুদামাহ
[৬] প্রাগুক্ত
[৭] বিদায়াত আল-মুজতাহিদ
[৮] আল-উম্ম
[৯] প্রাগুক্ত
[১০] আসনা আল-মাতালিব
[১১] রাওদাত আল-তালিবিন
[১২] আল-শারহ আল-কাবির
[১৩] আল-কাফি
[১৪] আলেমরা এই দলিল ব্যবহার করছেন যে রাসুল(স) আগুন দিয়ে শত্রুকে শাস্তি দেওয়া নিষেধ করেছেন। (সহীহ)
[১৫] আল-হাওল আল-কাবির
[১৬] তাবসিরাত আল-হুকাম
[১৭]শারহ খালিল
[১৮] আল-উম্ম
[১৯] কাশফ আল- ক্বিনা
[২০] আল সায়ল আল-জাররার