জিহাদ যখন আমেরিকার জন্য!
শায়খ নাসির আল ফাহদ (আল্লাহ তাঁর মুক্তি ত্বরান্বিত করুন)
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, এবং শান্তি ও কল্যাণ বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূল(সা), তাঁর পরিবার, তাঁর সাহাবা এবং তাদের উপর যারা তাঁদের অনুসরণ করেন।
সম্প্রতি আমরা ইরাকে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে জিহাদ এবং সশস্ত্র প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির খবর পেয়েছি।
তাছাড়া এই সশস্ত্র প্রতিরোধ সম্পর্কে সৌদি আরব নামক রাষ্ট্রের অবস্থান দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে গেছে এবং তারা যে ক্রুসেডারদের প্রতিরোধে যে কোন ধরনের সাহায্যকে অপরাধ সাব্যস্ত করছে, সে সম্পর্কেও আমরা অবগত হয়েছি।
এবং এই ডকুমেন্টে আমি জিহাদ বা জিহাদে সাহায্যের বৈধতা সম্পর্কে কোন প্রমান পেশ করবনা; কারন সেটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।
বরঞ্চ আমি রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে পূর্ববর্তী আফগান জিহাদ এবং আমেরিকানদের বিরুদ্ধে বর্তমানে আফগানিস্তান ও ইরাকে চলমান জিহাদে, সৌদি আরবের ভুমিকা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে, এই রাষ্ট্রটির মুনাফিকি/ভণ্ডামি তুলে ধরব।
প্রথমত, (৮০’র দশকে) রাশিয়া আফগানিস্তানে একটি বিশাল সামরিক অভিযান পরিচালনা করে এবং সে সময় শুধু আফগান ভুমিগুলোই তাদের আক্রমণের শিকার হয়। আক্রমণের পর তারা আফগানিস্তানে তাদের অনুগত একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করে।
পক্ষান্তরে, আমেরিকা ২০০১ সালে আফগানিস্তানে একটি বিশাল সামরিক অভিযান পরিচালনা করে,যেখানে তারা আফগান ভুমির পাশাপাশি ২০০৩ সালে ইরাকেও দখলদারিত্ব চালায়। এবং আমেরিকা উভয় ভূমিতে তাদের অনুগত সরকার প্রতিষ্ঠা করে।
আশ্চর্যজনক বিষয় হল, সৌদি আরব আফগানিস্তানে তৎকালীন রাশিয়ানদের অনুগত সরকারকে স্বীকৃতি না দিলেও, বর্তমানে ইরাক-আফগানিস্তানে আমেরিকানদের প্রতিষ্ঠিত পুতুল সরকারকে ঠিকই স্বীকৃতি দিয়েছে।
দ্বিতীয়ত, সৌদি সরকার ৮০’র দশকে রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আফগান মুজাহিদদের উৎসাহ প্রদান এবং সার্বিক সহযোগিতা করলেও, ইরাকের মুজাহিদদের সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে তাদেরকে সাহায্য করার বিরুদ্ধে সতর্ক করে।
উপরন্তু, তারা মুজাহিদদের সাহায্য করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে এমনকি তা যদি মুজাহিদদের জন্য দু’আ কুনুতও হয়!!
তৃতীয়ত, সৌদি সরকার উলামা-মাশায়েখদের রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে চলমান আফগান জিহাদে যোগদান এবং এর পক্ষে ফতোয়া প্রদানের অনুমতি দিলেও, বর্তমান ইরাক জিহাদ সম্পর্কে যেকোন ফতোয়াকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। বরং তারা উলামাদেরকে বাধ্য করেছে ইরাক জিহাদ এবং এতে অংশগ্রহনের বিরুদ্ধে রায় দিতে।
চতুর্থত, সৌদী সরকার আফগানিস্তানে জিহাদে যাওয়ার জন্য তরুণদেরকে সহায়তা করেছিল। তাঁদের যাতায়াতের খরচ প্রায় ৭৫ ভাগ কমিয়ে দিয়েছিল পর্যন্ত। অথচ ইরাকের জিহাদের ক্ষেত্রে এই আইন পরিবর্তিত হয়ে যায়। বরং যারা যেতে চেয়েছেন, তাঁরা সরকারের কুনজরে পড়ে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে যেতে হয়েছে।
পঞ্চমত, সৌদী সরকার তৎকালীন আফগানিস্তানের জিহাদের নেতৃবৃন্দের সাথে যথেষ্ট অতিথিপরায়ণ আচরণ করে এবং তাদের ভূমিতে এসে বক্তব্য প্রদানের সুযোগ দেয়।
অথচ, ইরাকের জিহাদের ক্ষেত্রে তারা ক্রুসেডারদের সাথে মিলে মুজাহিদ নেতৃবৃন্দকে ঘায়েল করতে সোচ্চার হয়েছে।
পরিশেষে, সংক্ষিপ্ত এই তুলনামূলক আলোচনা থেকে সার্বিকভাবে আমরা এই উপসংহারে পৌছাতে পারিঃ
যখন আমেরিকার শত্রুদের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের জিহাদ চলছিল এবং আমেরিকার স্বার্থোদ্ধার (বিপক্ষ পরাশক্তি রাশিয়ার পরাজয়) হচ্ছিল তখন তা সৌদী সরকারের দৃষ্টিতে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ হিসেবে বিবেচিত হয়ছিল।
এবং শায়খদের জন্য এটা প্রযোজ্য ছিল যে, তাঁরা এই ব্যাপারে ফতওয়া দিতে পারবেন, মাল দিয়ে এবং নৈতিকভাবে সাহায্য করতে পারবেন। এবং তরুণদের মধ্যে যারা এতে অংশগ্রহণ করেছেন তাদেরকে প্রয়োজনীয় বিষয়াদি দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। এমনকি, তাদেরকে মুজাহিদ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়েছিল!
আর বর্তমানে যখন আফগানিস্তান ও ইরাকের জিহাদ হচ্ছে আমেরিকার বিপক্ষে এবং আমেরিকার স্বার্থের বিপক্ষে, তখন তা গণ্য হচ্ছে ‘সন্ত্রাসবাদ’ এবং ‘উগ্রপন্থা’ হিসেবে। এর সাথে জড়িত মানুষদের খুজে বের করে খুন করা হচ্ছে। আর যে কেউই তাদের পক্ষে ফতওয়া দিয়ে সাহায্য করছে, অথবা সম্পদ দিয়ে সাহায্য করছে- তাদেরকে কারাগারে বন্দি করা হচ্ছে।
যারা লোকবল দিয়ে সাহায্য করছে তাঁদের কথা না হয় বাদই দিলাম। শায়খদের কোনো সুযোগ নেই যে, তাঁরা এই বিষয়ে ফতওয়া দিতে পারবেন। বরং তাঁদের এই রায় দিতে হচ্ছে যাতে কেউ ইরাক না যেতে পারে এবং সেখানে যা হচ্ছে তা সন্ত্রাসবাদ, জিহাদ নয়।
সুতরাং বিষয়টি খুব পরিস্কার যেঃ সৌদী সরকার আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ অথবা আল্লাহর রাস্তায় অন্য কিছু করতে জানে না। বরং তারা শুধু জানে আমেরিকার জন্য জিহাদ! তাই, ক্রুসেডাররা যা করার অনুমতি দেয় তারাও তাই করার অনুমতি দিবে এবং সাহায্য করবে।
আর ক্রুসেডাররা যা করার অনুমতি দেয় না তারাও তা করতে দিবে না! আর আল্লাহ তা’আলা তাঁর বিষয়াদি সঠিকভাবেই নিয়ন্ত্রণ করছেন, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।
(পাদটিকাঃ সুতরাং অতীতে আফগান মুজাহিদিনদের সাহায্য করার কারণ ছিল এতে আমেরিকার কার্যসিদ্ধি হচ্ছে, অর্থাৎ তৎকালীন আরেক পরাশক্তি রাশিয়ার পতন হতে যাচ্ছিল আফগান মুজাহিদিনদের হাতে।
যেভাবে আশির দশকে (রিগ্যানের সময়কালে) সৌদি সরকার বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সাহায্য করেছে। এতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিজেই বিষয়টা প্রকাশ করে তাদেরকে বিব্রত করেছে। কারণ সেখানে চলা বিপ্লব আমেরিকার জন্য উপকারী ছিল।)
শায়খের পরিচিতিঃ আরবের একজন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, যিনি জামিয়া মুহাম্মাদ, রিয়াদ থেকে শারিয়াহ’র উপর জ্ঞান অর্জন শেষে ১৯৯৪ ঈসায়ি পর্যন্ত উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় (মক্কা) এ আকিদা বিভাগের ডিন ছিলেন, অতঃপর ১৯৯৪ এ তাগুত সৌদি কর্তৃক কারাবন্দী হন। ১৯৯৭ এ কারামুক্ত হওয়ার তিনি উম্মুল কু’রা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ছেড়ে আল-বুরাইদায় অবস্থিত “আশ-শুয়াইবি মাদ্রাসায়’ শিক্ষকতা শুরু করেন।
তিনি প্রথিতযশা আলেম হামুদ বিন উক্কলা আশ শুয়াইবি (রহঃ), আলি আল খুদাইর (হাফিঃ), সুলাইমান বিন নাসির আল উলওয়ান (হাফিঃ) অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
শায়খ নাসির আল ফাহদ অত্যন্ত মেধাবী ও প্রখর একজন আলেম। তিনি হাদিসের ৯টি কিতাব সম্পূর্ণ মুখস্থ করেছেন। এছাড়াও, শারিয়াহ’র মূলনীতির উপর লিখিত ২০টির উপর বই তিনি মুখস্থ করেছেন। শায়খ ৬৫টির উপর বই লিখেছেন।
আমেরিকার গোলামীতে লিপ্ত সৌদি সরকারের রিদ্দাহ ও অত্যাচারের ব্যাপারে শারিয়াহ’র আলোকে স্পস্ট অবস্থান গ্রহণ করায় জালিম সৌদি সরকার ২০০৩ এর মে মাসে শায়খকে বন্দী করে। এখন পর্যন্ত শায়খ বন্দী অবস্থায়ই আছেন। আল্লাহ তা’আলা শায়খকে অটল রাখুন এবং সম্মানজনক মুক্তির ব্যবস্থা করে দিন। আমিন।